সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এই জগৎ কোন দিকে যাচ্ছে?

এই জগৎ কোন দিকে যাচ্ছে?

এই জগৎ কোন দিকে যাচ্ছে?

বাইবেল বর্তমান নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়ে অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং এটাকে এভাবে বর্ণনা করেছে: “শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, . . . পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, . . . প্রচণ্ড, সদ্‌বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে।”—২ তীমথিয় ৩:১-৫.

আপনি হয়তো একমত যে, বাইবেলের এই ভবিষ্যদ্বাণী হল আজকের জগৎ সম্বন্ধে এক নিভুল বর্ণনা। অথচ, এটি প্রায় ২,০০০ বছর আগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল! ভবিষ্যদ্বাণীটি এই কথাগুলো দিয়ে শুরু হয়: “শেষ কালে।” ‘শেষ কাল’ অভিব্যক্তিটির অর্থ কী?

কীসের ‘শেষ কাল’?

‘শেষ কাল’ শব্দগুলো অনেক সাধারণ এক অভিব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষাতেই এই অভিব্যক্তিটি শত শত বইয়ের শিরোনামের অংশ হয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, নিরপরাধতার শেষকাল—যুদ্ধরত আমেরিকা, ১৯১৭-১৯১৮ (ইংরেজি) নামক সাম্প্রতিক এক বইয়ের কথা বিবেচনা করুন। সেই বইয়ের ভূমিকা স্পষ্ট করে দেয় যে, “শেষকাল” শব্দটি ব্যবহার করার দ্বারা বইটি একটা নির্দিষ্ট সময়কে নির্দেশ করে, যে-সময়ে নৈতিকতার চরম অবনতি ঘটে।

“১৯১৪ সালে” ভূমিকা ব্যাখ্যা করে, “সেই দেশ এর ইতিহাসের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিল।” বস্তুতপক্ষে, ১৯১৪ সালে বিশ্বব্যাপী এমন এক যুদ্ধ হয়েছিল, যা আগে কখনো হয়নি। বইটি বলে: “এটা ছিল সর্বাত্মক যুদ্ধ, যা সৈন্যদের বিরুদ্ধে সৈন্যদের নয় বরং জাতির বিরুদ্ধে জাতির দ্বন্দ্ব।” আমরা যেমন দেখব, এই যুদ্ধ সেই সময়ে শুরু হয়েছিল, যেটাকে বাইবেল ‘শেষ কাল’ বলে অভিহিত করে।

এই জগৎ সত্যিকারভাবে শেষ হয়ে যাওয়ার আগে যে ‘শেষ কাল’ নামক একটা নির্দিষ্ট সময় ভোগ করবে, সেটাই হল বাইবেলের শিক্ষা। বস্তুতপক্ষে, বাইবেল বলে যে, একসময়ে বিদ্যমান একটা জগৎ ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত অথবা শেষ হয়ে গিয়েছে ও ব্যাখ্যা করে: “তখনকার জগৎ জলে আপ্লাবিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল।” কোন সময়ে তা ঘটেছিল আর সেই জগৎ কী ছিল, যা শেষ হয়ে গিয়েছিল? এটা ছিল “ভক্তিহীনদের” প্রাচীন ‘জগৎ,’ যা নোহের সময়ে বিদ্যমান ছিল। একইভাবে, আজকের জগৎও শেষ হয়ে যাবে। তা সত্ত্বেও, যারা ঈশ্বরের সেবা করে, তারা সেই শেষ থেকে রক্ষা পাবে, যেমনটা নোহ ও তার পরিবার পেয়েছিল।—২ পিতর ২:৫; ৩:৬; আদিপুস্তক ৭:২১-২৪; ১ যোহন ২:১৭.

শেষ সম্বন্ধে যিশু যা বলেছিলেন

যিশু খ্রিস্টও ‘নোহের সময়ের’ কথা বলেছিলেন, যখন “বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।” জলপ্লাবনের আগে—সেই জগৎ শেষ হওয়ার ঠিক আগে—যেরকম অবস্থা ছিল, সেটাকে তিনি এমন অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা সেই সময়ে বিরাজমান হবে, যেটাকে তিনি “যুগান্ত” হিসেবে শনাক্ত করেছেন। (মথি ২৪:৩, ৩৭-৩৯) অন্যান্য বাইবেল অনুবাদ এই অভিব্যক্তিগুলো ব্যবহার করে যেমন, ‘জগতের শেষ পরিণাম’ অথবা ‘এযুগের শেষ পরিণতি।’—বাংলা জুবিলী বাইবেল, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন।

জগৎ শেষ হওয়ার ঠিক আগে পৃথিবীতে জীবন কেমন হবে, সেই সম্বন্ধে যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যুদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন: “জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে।” ইতিহাসবেত্তারা লক্ষ করেছে যে, এটা ১৯১৪ সালের শুরুতে ঘটেছিল। তাই, পূর্বে উল্লেখিত বইটির ভূমিকা ১৯১৪ সাল সম্বন্ধে বলে যে, এই সাল ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ শুরুকে চিহ্নিত করে, “যা সৈন্যদের বিরুদ্ধে সৈন্যদের নয় বরং জাতির বিরুদ্ধে জাতির।”

তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশু আরও বলেছিলেন: “স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হইবে। কিন্তু এ সকলই যাতনার আরম্ভ মাত্র।” তিনি আরও বলে চলেন যে, অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে “অধর্ম্মের বৃদ্ধি” হবে। (মথি ২৪:৭-১৪) নিশ্চিতভাবেই, আমাদের দিনে আমরা তা ঘটতে দেখছি। আজকের নৈতিক অবক্ষয় এতটাই চরম যে, এটা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীকে পরিপূর্ণ করছে!

এইরকম অধঃপতিত এক সময়ে আমাদের জীবনযাপন কেমন হওয়া উচিত? প্রেরিত পৌল রোমের খ্রিস্টানদেরকে নৈতিক অধঃপতন সম্বন্ধে কী লিখেছিলেন, তা লক্ষ করুন। তিনি এই বলে লোকেদের “জঘন্য রিপুর” বিষয়টা উল্লেখ করেছেন: “তাহাদের স্ত্রীলোকেরা স্বাভাবিক ব্যবহারের পরিবর্ত্তে স্বভাবের বিপরীত ব্যবহার করিয়াছে। আর পুরুষেরাও তদ্রূপ স্বাভাবিক স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ করিয়া পরস্পর কামানলে প্রজ্বলিত হইয়াছে, পুরুষ পুরুষে কুৎসিত ক্রিয়া সম্পন্ন করিয়াছে।”—রোমীয় ১:২৬, ২৭.

ইতিহাসবেত্তারা বলে যে, সেই সময়ে মানবসমাজ যখন আগের চেয়ে আরও বেশি নৈতিক অধঃপতনের গভীরে গিয়ে পৌঁছেছিল, তখন “খ্রিষ্টানদের ছোট ছোট দলগুলো তাদের ধার্মিকতা এবং শিষ্টাচারের কারণে যেন সুখাভিলাষী পৌত্তলিক সমাজের চোখে কাঁটার মত বিঁধছিল।” তাই, আমাদের একটু থেমে নিজেকে এটা জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমার ও যাদেরকে আমি সঙ্গী হিসেবে বেছে নিই, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যারা অনৈতিক কাজ করে চলে, তাদের বিপরীতে আমরা কি ভিন্ন ও নৈতিকভাবে ন্যায়নিষ্ঠ বজায়কারী হিসেবে উল্লেখযোগ্য?’—১ পিতর ৪:৩, ৪.

আমাদের সংগ্রাম

বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমাদের চারপাশে অনৈতিকতা সত্ত্বেও আমাদের ‘অনিন্দনীয় ও অমায়িক হইতে, এই কালের সেই কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক সন্তান হইতে’ হবে। তা করার জন্য আমাদের ‘জীবনের বাক্য ধরিয়া রাখিতে’ হবে। (ফিলিপীয় ২:১৫, ১৬) বাইবেলের এই উক্তি, কীভাবে খ্রিস্টানরা নৈতিক কলুষতা থেকে নিষ্কলঙ্ক থাকতে পারে, সেটার চাবিকাঠি প্রদান করে আর তা হল তাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষাগুলো ধরে রাখতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে যে, এটির নৈতিক মানগুলো সর্বোত্তম জীবনযাপনকে চিত্রিত করে।

“এই যুগের দেব” শয়তান দিয়াবল লোকেদের মন জয় করার চেষ্টা করছে। (২ করিন্থীয় ৪:৪) বাইবেল আমাদের বলে যে, সে “দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে।” তার অনুচরেরাও একইরকম করে থাকে, যারা তার মতো কাজ করে তার সেবা করে থাকে। (২ করিন্থীয় ১১:১৪, ১৫) তারা স্বাধীনতার ও ফূর্তি করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করে কিন্তু বাইবেল যেমন বলে, তারা “আপনারা ক্ষয়ের দাস।”—২ পিতর ২:১৯.

এই বিষয়ে ভ্রান্ত হবেন না। যারা ঈশ্বরের নৈতিক মানগুলোকে উপেক্ষা করে, তারা চরম পরিণতি ভোগ করবে। বাইবেলের গীতরচক লিখেছিলেন: “পরিত্রাণ দুষ্টগণ হইতে দূরবর্ত্তী, কারণ তাহারা [ঈশ্বরের] বিধি সকলের অন্বেষণ করে না।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৫৫; হিতোপদেশ ৫:২২, ২৩) এই বিষয়ে কি আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী? যদি হয়ে থাকি, তা হলে আসুন আমরা প্রশ্রয়ী অপপ্রচার থেকে আমাদের মন ও হৃদয়কে রক্ষা করি।

কিন্তু, অনেকে মূর্খের মতো যুক্তি দেখায় যে, ‘আমি যা করছি, তা যদি অবৈধ না হয়, তা হলে সেটা ঠিক আছে।’ কিন্তু তা সত্য নয়। আমাদের স্বর্গীয় পিতা প্রেমের সঙ্গে নৈতিক নির্দেশনা জুগিয়ে থাকেন আর তা আপনার জীবনকে একঘেঁয়ে ও সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার জন্য নয় বরং আপনাকে সুরক্ষা করার জন্য। তিনি ‘আপনার উপকারজনক শিক্ষা দান’ করেন। তিনি চান আপনি যেন বিপর্যয় এড়াতে ও এক সুখী জীবন উপভোগ করতে পারেন। বস্তুতপক্ষে, বাইবেল যেমন শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরকে সেবা করা “বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিজ্ঞাযুক্ত।” সেটা হল, “প্রকৃতরূপে জীবন” অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে অনন্তজীবন!—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮; ১ তীমথিয় ৪:৮; ৬:১৯.

তাই, বাইবেলের শিক্ষাগুলো মেনে চলার উপকারগুলোকে এমন দুঃখকষ্টের সঙ্গে তুলনা করুন, যা অবশেষে সেই ব্যক্তিদের ওপর আসে, যারা শিক্ষাগুলো মেনে চলতে ব্যর্থ হয়। ঈশ্বরের কথায় মনোযোগ দিয়ে তাঁর অনুগ্রহ লাভ করা সত্যিই সর্বোত্তম জীবনের পথ! “যে জন আমার কথা শুনে,” ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন, “সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।”—হিতোপদেশ ১:৩৩.

নৈতিকভাবে ন্যায়নিষ্ঠ এক সমাজ

বাইবেল বলে যে, এই জগৎ যখন বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তখন “দুষ্ট লোক আর” থাকবে না। এটি এও বলে: “সরলগণ [“ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিরা,” NW] দেশে বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১; হিতোপদেশ ২:২০-২২) তাই, আমাদের সৃষ্টিকর্তার উপকারজনক শিক্ষাগুলো মেনে চলতে প্রত্যাখ্যান করে এমন ব্যক্তিরাসহ বাকি সমস্ত অনৈতিকতা থেকে পৃথিবীকে পরিষ্কৃত করা হবে। সেই সময় ঈশ্বরের প্রেমিকগণ ধীরে ধীরে পৃথিবীব্যাপী এমন এক পার্থিব পরমদেশ গড়ে তুলবে, যা সেটার অনুরূপ যেখানে প্রথম মানব দম্পতিকে ঈশ্বর রেখেছিলেন।—আদিপুস্তক ২:৭-৯.

পরমদেশতুল্য সৌন্দর্যের এইরকম এক পরিচ্ছন্ন পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আনন্দ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। যে-ব্যক্তিরা এটা দেখার বিশেষ সুযোগ পাবে, তাদের মধ্যে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত কোটি কোটি ব্যক্তিরাও থাকবে। ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞায় আনন্দ করুন: “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪. (g ৪/০৭)

[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

একটা জগৎ যখন শেষ হয়ে গিয়েছিল, তখন সেখানে ঈশ্বরভয়শীল রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছিল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

এই জগৎ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হবে