সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চুকার হাওয়াইয়ে এক আগন্তুক

চুকার হাওয়াইয়ে এক আগন্তুক

চুকার হাওয়াইয়ে এক আগন্তুক

আমি ও আমার বন্ধুরা হাওয়াইয়ের মাওয়ি দ্বীপ পরিদর্শন করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বিশেষভাবে আমরা হালেয়াকালা আগ্নেয়গিরির চূড়া থেকে সূর্যোদয় দেখতে চেয়েছিলাম, যে-চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,০৫৫ মিটার উঁচু। আমাদের বলা হয়েছিল যে, এটা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। একমাত্র অসুবিধা ছিল যে, আমরা যেখানে ছিলাম সেই কাপালুয়া থেকে গাড়ি চালিয়ে দ্বীপ অতিক্রম করার জন্য আমাদের রাত দুটোয় ঘুম থেকে উঠতে হয়েছিল। এরপর আমাদের গাড়িতে করে খাড়া পাহাড়ে আরোহণ করতে হয়েছিল। আমরা মনে করেছিলাম যে, এমন এক অসময়ে কেবল আমরাই গাড়ি চালিয়ে যাব। কিন্তু একেবারেই তা নয়! আমরা এমন যানবাহনের একটা লাইনের অংশ হয়েছিলাম, যেগুলো ধীরে ধীরে বাঁকানো পথ দিয়ে চূড়ার দিকে উঠে যাচ্ছিল। আমরা যখন চূড়ায় পৌঁছেছিলাম, তখনও বেশ ঠাণ্ডা ছিল। কিন্তু, আমরা নিজেদের উষ্ণ রাখার জন্য কম্বল নিয়ে গিয়েছিলাম।

প্রায় ছটায় সূর্যোদয়ের জন্য শত শত লোক ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছিল। সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল এবং এই বিস্ময়কর দৃশ্য ধরে রাখার জন্য ক্যামেরাগুলো স্থির ছিল। কিন্তু, আশ্চর্য এক ঘটনা ঘটে! একেবারে চূড়ান্ত মুহূর্তে বিশাল এক খণ্ড মেঘকে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের দিকে আসতে দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি আর তা আমাদেরকে সেই ঐতিহাসিক ছবিগুলো তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে! কিন্তু, প্রশান্ত মহাসাগরের কাছাকাছি পাহাড়গুলোতে সবসময়ই মেঘ থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই, আমাদের হতাশাকে দমন করতে হয়েছিল এবং উদিত সূর্যের তাপে সেই মেঘগুলো ধীরে ধীরে সরে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এরপর, আরেকটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটে! আমরা ধীরে ধীরে আমাদের সামনে এঁকেবেঁকে চলা হাঁটার পথ সম্বন্বিত আগ্নেয়গিরির শুষ্ক জ্বালামুখের এক মনোরম দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলাম। আমাদেরকে পুরোপুরি হতাশ হতে হয়নি।

হঠাৎ আমরা এক অদ্ভূত শব্দ—“চুকার, চুকার” বলে মুরগির ডাকের মতো স্পষ্ট শব্দ—শুনতে পাই। এরপর আমরা এর উৎস দেখতে পাই। এটা ছিল তিতিরজাতীয় পাখির পরিবার থেকে আসা একটা চমৎকার ইউরেশীয় পাখি চুকার, যেটার ল্যাটিন নাম হল আ্যলেকটোরিস চুকার। এটা প্রজননকালের বেশির ভাগ সময়ই মাটিতে কাটায়, যেখানে এটা বাসা তৈরি করে। এটা উড়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত না হয়ে বরং দৌড়ে পালানো বেছে নেয়।

এই ধরনের পাখি চমৎকার মাওয়ি দ্বীপে কীভাবে এল? স্পষ্টতই চুকারগুলোকে অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। উত্তর আমেরিকা মহাদেশে এগুলোকে শিকারের উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে ছাড়া হয়। আমরা এই লাজুক পাখিকে অন্ততপক্ষে অনেক কাছ থেকে দেখতে পেরেছিলাম বলে নিজেদেরকে বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত বলে মনে করেছিলাম।—নিবেদিত। (g ২/০৭)