সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিশ্বব্যাপী এক নৈতিক অবক্ষয়

বিশ্বব্যাপী এক নৈতিক অবক্ষয়

বিশ্বব্যাপী এক নৈতিক অবক্ষয়

“প্রতারণা সমস্ত জায়গায়,” ডেভিড ক্যালাহান বলেন, যিনি প্রতারক সংস্কৃতি (ইংরেজি) নামক সাম্প্রতিক বইটি লিখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিনি “হাইস্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা প্রতারণা,” গানবাজনা ও চলচ্চিত্রের “বেআইনী পুনঃপ্রকাশ,” “কর্মক্ষেত্রে চুরি,” “স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিরাট প্রতারণা” এবং খেলাধুলায় স্টেরইডের ব্যবহার সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। তিনি উপসংহারে বলেন: “সমস্ত ধরনের নীতিগত ও আইনগত অসৎ আচরণকে একত্র করুন, তা হলে দেখতে পাবেন যে, গুরুতর মাত্রার নৈতিক সংকট রয়েছে।”

দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছিল যে, হারিকেন ক্যাটরিনা যা ২০০৫ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত এনেছিল, তা “আধুনিক ইতিহাসে প্রতারণার, ষড়যন্ত্রের ও হতভম্ব করার মতো আমলাতান্ত্রিক আনাড়ি কাজের সবচেয়ে অসাধারণ এক উদাহরণ তুলে ধরে।” যুক্তরাষ্ট্রের একজন সংসদ সদস্য বলেছিলেন: “নির্লজ্জ প্রতারণা, ষড়যন্ত্রের দুঃসাহস, অপচয়ের মাত্রা—কেবল অবাক করার মতোই বিষয়।”

এটা ঠিক যে, নিঃস্বার্থ মানব দয়ার অনেক উদাহরণও রয়েছে। (প্রেরিত ২৭:৩; ২৮:২) কিন্তু, প্রায়ই আমরা এই কথাগুলো শুনে থাকি: “এর মধ্যে আমার জন্য কী রয়েছে? এতে আমার কী লাভ হবে?” সর্বত্র এক আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থান্বেষী মনোভাব বিদ্যমান রয়েছে বলে মনে হয়।

অতীতে, স্বার্থপর ও নির্লজ্জ অনৈতিকতাকে সভ্যতার পতনের এক কারণ হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে, যেমন রোমীয় সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। বর্তমানে যা ঘটছে, তা কি আরও তাৎপর্যপূর্ণ কোনোকিছুর পূর্বাভাস হতে পারে? জগতের প্রতিটা অংশ কি এখন ‘অধর্ম্মের বৃদ্ধির’ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যে-সম্বন্ধে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, এটা এই সমগ্র বিধিব্যবস্থার শেষের চিহ্ন হবে?—মথি ২৪:৩-৮, ১২-১৪; ২ তীমথিয় ৩:১-৫.

বিশ্বব্যাপী অধঃপতন

২০০৬ সালের ২২শে জুনের আফ্রিকা নিউজ, উগান্ডার একটা অঞ্চলের এক বস্তিতে “যৌন নিপীড়ন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ে দলগত আলোচনার” বিষয়ে রিপোর্ট করে বলেছিল যে, “বাবামার অবহেলার কারণেই সেই এলাকায় পতিতাবৃত্তি ও নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।” সেই সংবাদপত্র বলেছিল: “কোয়াম্‌পে পুলিশ স্টেশনের শিশু ও পরিবার সুরক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মি. ডাবানজি সালংগো শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন ও ঘরোয়া দৌরাত্ম্যের হার চরম মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন।”

ভারতের একজন ডাক্তারের মতানুসারে, “সমাজ এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারাচ্ছে।” সেখানকার একজন চলচ্চিত্র পরিচালক বলেছিলেন যে, “ক্রমবর্ধমান মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও ব্যাপক মাত্রায় বাছবিচারহীনভাবে যৌনসম্পর্কের মিশ্রণ হল আরেকটা লক্ষণ যে, ভারত ‘পাশ্চাত্যের দুরাচারের মধ্যে’ নিমজ্জিত হচ্ছে।”

বেইজিংয়ের চিন যৌনবিদ্যা সংগঠনের মহাসচিব হু প্যাচিং বলেছিলেন: “আগে সমাজের মধ্যে আমাদের ন্যায় ও অন্যায়বোধ ছিল। এখন আমরা যা চাই, তা-ই করতে পারি।” চায়না টুডে পত্রিকার একটা প্রবন্ধ এভাবে বলে: “বিয়ের বাইরে যৌনসম্পর্ক করার প্রতি সমাজ আরও বেশি প্রশ্রয়ী হয়ে উঠছে।”

“মনে হচ্ছে যেন প্রত্যেকে তাদের কাপড় খুলে নিয়ে যৌনতাকে কোনোকিছু বিক্রয় করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে” সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ইয়র্কশাইয়ার পোস্ট বলে। “প্রায় এক প্রজন্ম আগেও এই ধরনের কাজগুলো দেখে এমন অনেক লোক ক্রুদ্ধ হতো, যাদের নীতিবোধ ছিল। আজকে আমরা কল্পনাসাধ্য প্রতিটা দিক থেকে যৌন চিত্রগুলো দ্বারা জর্জরিত আর পর্নোগ্রাফি . . . সমাজে ব্যাপকভাবে গৃহীত।” সেই সংবাদপত্র আরও বলেছিল: “যে-বিষয়বস্তু আগে কেবল ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে পাঠকদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হতো, সেগুলো এখন পরিবারগতভাবে দেখা স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে আর পর্নোগ্রাফি বিরোধী প্রচারকদের মতানুসারে তা প্রায়ই সরাসরি ছোট ছেলেমেয়েদের লক্ষ্যবস্তু করে।”

দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন বলেছিল: “[কিছু কিশোর-কিশোরী] [তাদের যৌন অভিজ্ঞতাগুলো] সম্বন্ধে এতটাই নির্দ্বিধায় কথা বলে থাকে, যেন তারা হয়তো রেস্তরাঁয় দুপুরের খাদ্যতালিকার বিষয় নিয়ে কথা বলছে।” একটি পত্রিকা, যা ৮ থেকে ১২ বছর বয়সি ছেলেমেয়ে রয়েছে এমন বাবামাদের জন্য নির্দেশনা জুগিয়ে থাকে (টুইনস্‌ নিউজ), সেটি বলে, “ছোট ছেলেমেয়েদের মতো কাঁচা হাতে একজন অল্পবয়স্ক মেয়ে এক হৃদয়বিদারক বার্তা লিখেছিল: ‘আমার মা আমাকে বাইরে গিয়ে ছেলেদের সঙ্গে ডেটিং করতে ও যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে চাপ দিচ্ছে। আমার বয়স মাত্র ১২ বছর . . . দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন!’”

সময় কতই না পালটে গিয়েছে! কানাডার টরেন্টো স্টার বলেছিল যে, কিছুদিন আগেও “সমকামী পুরুষ অথবা মহিলাদের খোলাখুলিভাবে স্বামী-স্ত্রীরূপে সহবাস করার ধারণাটাই, নীতিবোধ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্রুদ্ধ করে তুলত।” অথচ, ওটাওয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ইতিহাসের একজন শিক্ষক বারবারা ফ্রিম্যান বলেন: “লোকেরা এখন বলে থাকে, ‘ব্যক্তিগত জীবন হল একান্ত নিজস্ব বিষয়। আমরা চাই না যে, অন্য লোকেরা তাতে হস্তক্ষেপ করুক।’”

স্পষ্টতই, গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে খুব দ্রুত নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে। কী এই আমূল পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করেছে? ব্যক্তিগতভাবে আপনি সেগুলো সম্বন্ধে কেমন বোধ করেন? আর পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেয়? (g ৪/০৭)