সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মুম্বইয়ের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে তারা বেঁচে গিয়েছিল

মুম্বইয়ের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে তারা বেঁচে গিয়েছিল

মুম্বইয়ের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে তারা বেঁচে গিয়েছিল

ভারতের সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক

মুম্বই শহরে দ্রুত বেড়ে চলা ১ কোটি ৮০ লক্ষের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। প্রতিদিন, এই জনসংখ্যার ষাট থেকে সত্তর লক্ষ অধিবাসী দ্রুত ও ঘন ঘন চলা লোকাল ট্রেনগুলোতে করে তাদের কর্মস্থলে, স্কুল-কলেজে, দোকানপাটে অথবা স্থানীয় দর্শনীয় স্থানগুলোতে যায়। অফিসটাইমে লোকে ঠাসাঠাসি নয়টা বগিযুক্ত প্রত্যেকটা ট্রেন, যেটা সাধারণত ১,৭১০ জন যাত্রীকে নিয়ে যেতে পারে, তাতে প্রায় ৫,০০০ যাত্রী যাতায়াত করে। ২০০৬ সালের ১১ই জুলাই এমনই এক অফিসটাইমে সন্ত্রাসীরা মুম্বইয়ের ট্রেনগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। ১৫ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে, ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে জুড়ে বিভিন্ন ট্রেনের ওপর সাতটা বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল আর এর ফলে ২০০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছিল।

মুম্বই ও এর শহরতলিগুলোতে যিহোবার সাক্ষিদের ২২টা মণ্ডলী থেকে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি এই ট্রেনগুলোর নিয়মিত যাত্রী আর যে-ট্রেনগুলোর ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল তারা সেই ট্রেনগুলোতে ছিল। আনন্দের বিষয় যে, তাদের মধ্যে কেউই জীবন হারায়নি কিন্তু কয়েকজন আহত হয়েছিল। আনিটা কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রেনটা খুব ভিড় ছিল, তাই তিনি ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামরার দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন যাতে সহজেই নেমে যেতে পারেন। ট্রেন যখন দ্রুতগতিতে ছুটছিল, তখন হঠাৎ করে এক ভয়ংকর বিস্ফোরণ হয় আর তার কামরাটা কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। তিনি যখন দরজায় হেলান দিয়ে বাইরে তার ডান দিকে তাকান, তখন তিনি দেখতে পান যে, পাশের কামরার ধাতবপাতটা ফেটে গিয়ে ট্রেনের মূল কাঠামো থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে ঝুলছে। মানুষের দেহ ও দেহের অংশগুলোকে ফাঁকা জায়গা দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে রেললাইনের ওপর পড়তে দেখে তিনি মর্মাহত হন। যে-সময়টা তার কাছে খুবই দীর্ঘ বলে মনে হয়েছিল—সেটা আসলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ছিল—যে-সময়ের মধ্যে ট্রেনটা থেমে গিয়েছিল। অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে তিনিও রেললাইনের ওপর লাফ দেন এবং দৌঁড়ে পালান। আনিটা তার সেলফোনে তার স্বামী জনকে ফোন করেন এবং ভাল যে, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন কারণ উদ্বিগ্ন হয়ে সবাই একে অপরকে ফোন করছিল বলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই শহরের সমস্ত ফোন লাইন জ্যাম হয়ে যায়। তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলার আগে পর্যন্ত তিনি তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিলেন। এরপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তার স্বামীকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন এবং তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার স্বামীকে আসতে বলেন। তিনি যখন তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন বৃষ্টি পড়তে শুরু করে, ফলে যে-প্রমাণগুলো তদন্তকারীদের সাহায্যে আসত তার অনেকটাই ধুয়ে যায়।

ক্লডিয়াস নামে আরেকজন যিহোবার সাক্ষি, সাধারণ সময়ের একটু আগে তার অফিস ছাড়েন। তিনি চার্চগেট স্টেশন, যেটা শহরের ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে-র শেষ স্টেশন, সেখান থেকে বিকেল ৫:১৮ মিনিটের ট্রেনেতে চড়েন আর প্রথম শ্রেণীর একটা কামরায় ঢোকেন। এক ঘন্টার পথ ভাইয়ান্দার স্টেশনের দিকে যাত্রা করার জন্য যখন তিনি বসার জায়গা খুঁজছিলেন, তখন তিনি যিহোবার সাক্ষিদের নিকটবর্তী একটা মণ্ডলীর একজন ভাই জোসেফকে দেখতে পান। দিনের খবরাখবর বলতে বলতে দ্রুত সময় কেটে যায়। এরপর, সারাদিনের কাজের পর ক্লান্ত থাকায়, জোসেফ একটু ঘুমিয়ে পড়েন। ট্রেনে খুব ভিড় থাকায় ক্লডিয়াস তার গন্তব্য স্টেশন আসার আগের স্টেশনেই সিট থেকে উঠে পড়েন ও দরজার দিকে এগোতে থাকেন। ক্লডিয়াস সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার সময়, জোসেফ জেগে ওঠেন এবং ক্লডিয়াসকে বিদায় জানানোর জন্য সিটে হেলান দেন। সিটের হাতলটা ধরে, ক্লডিয়াস তার সঙ্গে কথা বলার জন্য ঝোঁকেন। সম্ভবত সেটাই ক্লডিয়াসের জীবন বাঁচিয়েছিল। হঠাৎ করে, প্রচণ্ড শব্দ হয়। কামরাটা ভীষণভাবে কেঁপে ওঠে, ধোঁয়ায় ভরে যায় এবং একেবারে অন্ধকার হয়ে যায়। ক্লডিয়াস সিটের সারিগুলোর মাঝের মেঝেতে সজোরে ছিটকে পড়েন এবং যদিও তার কানে তালা লেগে গিয়েছিল বলে মনে হয়েছিল, তবুও তার কানে একটা শব্দ ধ্বনিত হচ্ছিল। আগে তিনি যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেখানে একটা বড় ফুটো হয়ে গিয়েছিল। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিয়মিত যাত্রীরা হয় রেললাইনের ওপর ছিটকে পড়েছিল নতুবা মেঝেতে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। সাতটা বিস্ফোরণের মধ্যে পঞ্চম বিস্ফোরণ থেকে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন, যেটা সেই আতঙ্কজনক মঙ্গলবারে রেল ব্যবস্থাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

সমস্ত কাপড়চোপড়ে রক্তমাখা অবস্থায় ক্লডিয়াসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এই রক্ত আসলে অন্যান্য দুর্ভাগা যাত্রীদের ছিল। তিনি তেমন গুরুতরভাবে আহত হননি—তার কানের পর্দা ফেটে গিয়েছিল, একটা হাতের কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছিল এবং মাথার চুল ঝলসে গিয়েছিল। হাসপাতালে জোসেফ ও তার স্ত্রী আ্যঞ্জেলার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল, আ্যঞ্জেলা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত পাশের কামরায় ছিলেন এবং অক্ষত অবস্থায় ছিলেন। জোসেফের ডান চোখে চোট লেগেছিল এবং তিনি শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই তিন জন সাক্ষি বেঁচে যাওয়ার কারণে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। ক্লডিয়াস মন্তব্য করেছিলেন যে, জ্ঞান ফিরে আসার পর যে-কথাটা তার প্রথমে মনে হয়েছিল সেটা হল, ‘এই বিধিব্যবস্থায় টাকাপয়সা ও বস্তুগত সম্পদের পিছনে ছোটা কতই না অর্থহীন, যখন কি না একজন ব্যক্তি এক নিমেষে তার জীবন হারিয়ে ফেলতে পারে!’ তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যেটা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়!

অল্প সময়ের মধ্যেই, মুম্বই শহরে প্রচণ্ড বন্যা, দাঙ্গা ও এরপর এই বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল। কিন্তু, সেখানে ১,৭০০ জনেরও বেশি সাক্ষির এক উত্তম, উদ্যোগী মনোভার রয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে তাদের প্রতিবেশীদের কাছে এক নতুন জগৎ সম্বন্ধীয় অপূর্ব আশার বিষয়ে জানায়, যেখানে সমস্ত দৌরাত্ম্য এক অতীতের বিষয় হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪. (g ৬/০৭)

[২৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

আগে তিনি যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেখানে একটা বড় ফুটো হয়ে গিয়েছিল

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আনিটা

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ক্লডিয়াস

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

জোসেফ ও আ্যঞ্জেলা

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Sebastian D’Souza/AFP/Getty Images