সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা কি নৈতিকভাবে অন্যায়?

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা কি নৈতিকভাবে অন্যায়?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা কি নৈতিকভাবে অন্যায়?

আপনি কী মনে করেন? বিবাহিত লোকেদের পক্ষে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা কি অন্যায়? আপনার উত্তর হয়তো আপনার ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করতে পারে। ক্যাথলিক গির্জা শিক্ষা দেয় যে, সন্তান উৎপাদন রোধ করার জন্য করা যেকোনো প্রচেষ্টাই “সহজাতভাবে মন্দ।” ক্যাথলিক মতবাদ এই ধারণাকে সমর্থন করে যে, বিবাহিত সঙ্গীদের মধ্যেকার প্রতিটা যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। তাই, ক্যাথলিক গির্জা অনুসারে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা “নৈতিক দিক দিয়ে গ্রহণযোগ্য নয়।”

অনেক লোকের পক্ষে এই দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেওয়া কঠিন। এই বিষয়ের ওপর পিটস্‌বার্গ পোস্ট-গেজেট এর একটা প্রবন্ধ মন্তব্য করে যে, “যুক্তরাষ্ট্রের তিন চতুর্থাংশেরও বেশি ক্যাথলিক বলে যে, গির্জার উচিত কৃত্রিম জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া। . . . আর লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিদিনই এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে থাকে।” তাদের মধ্যে লিন্ডা নামে তিন সন্তানের এক মা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা স্বচ্ছন্দে স্বীকার করেন কিন্তু বলেন: “আমার বিবেক অনুযায়ী আমি আসলে মনে করি না যে, আমি পাপ করছি।”

এই বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?

জীবন খুবই মূল্যবান

ঈশ্বর একটা সন্তানের জীবনকে খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করেন, এমনকি যখন সেটি বৃদ্ধির একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন: “তুমি মাতৃগর্ব্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে। . . . তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৩, ১৬) গর্ভধারণের সঙ্গে সঙ্গেই একটা নতুন জীবনের শুরু হয় আর মোশির ব্যবস্থা ইঙ্গিত করে যে, এক অজাত শিশুর ক্ষতি করার জন্য একজন ব্যক্তিকে জবাবদিহি করতে হতো। বস্তুতপক্ষে, যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩ (NW) পদ নির্দিষ্ট করে বলে যে, দুজন পুরুষরের মধ্যে বিবাদের কারণে যদি একজন গর্ভবতী মহিলা অথবা তার অজাত সন্তানের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটত, তা হলে সেই বিষয়টা নিযুক্ত বিচারকদের কাছে নিয়ে আসতে হতো। তাদেরকে পরিস্থিতিগুলো এবং স্বেচ্ছাকৃত অপরাধের মাত্রাকে বিবেচনা করতে হতো কিন্তু এর জন্য শাস্তি হতে পারত “প্রাণের পরিশোধে প্রাণ” অর্থাৎ জীবনের বিনিময়ে জীবন।”

সেই নীতিগুলো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কারণ জন্ম নিয়ন্ত্রণের কিছু পদ্ধতিকে গর্ভপাত করা হচ্ছে বলে মনে হয়। এই ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো জীবনের প্রতি সম্মান দেখানোর ঐশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু, বেশির ভাগ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দ্বারা গর্ভপাত করা হয় না। জন্ম নিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতিগুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে কী বলা যায়?

বাইবেলের কোথাও খ্রিস্টানদেরকে সন্তান উৎপাদনের বিষয়ে আজ্ঞা দেওয়া হয়নি। ঈশ্বর প্রথম মানব দম্পতি ও নোহের পরিবারকে বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ . . . কর।” কিন্তু, খ্রিস্টানদের কাছে এই আজ্ঞা পুনরাবৃত্তি করা হয়নি। (আদিপুস্তক ১:২৮; ৯:১) তাই, বিবাহিত দম্পতিরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারে যে, তারা পরিবার বড় করবে কি না, কত জন সন্তান নেবে এবং কখন তারা সন্তান নেবে। একইভাবে, শাস্ত্র জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারকেও নিন্দা করে না। তা হলে, বাইবেলের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন স্বামী ও স্ত্রী গর্ভপাত করা হয় না এমন কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করবে কি না, তা প্রকৃতপক্ষে তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তা সত্ত্বেও, কেন ক্যাথলিক গির্জা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করাকে নিন্দা করে?

মনুষ্য প্রজ্ঞা বনাম ঐশিক প্রজ্ঞা

ক্যাথলিক সম্বন্ধীয় বইগুলো ব্যাখ্যা করে যে, সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দীতেই নামধারী খ্রিস্টানরা প্রথমে স্টোয়িক নীতি গ্রহণ করে, যে-নীতি অনুসারে বৈবাহিক যৌনসম্পর্কের একমাত্র বৈধ উদ্দেশ্য ছিল সন্তান উৎপাদন করা। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গির পিছনে যুক্তিটা ছিল দার্শনিক, বাইবেলের ওপর ভিত্তি করে নয়। এটা ঐশিক প্রজ্ঞার ওপর নয় বরং মনুষ্য প্রজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এই দর্শনবিদ্যা শত শত বছর ধরে বিদ্যমান ছিল আর বিভিন্ন ক্যাথলিক ঈশ্বরতত্ত্ববিদ এটাকে সম্প্রসারিত করেছিল। * যাই হোক, এই শিক্ষার যুক্তিযুক্ত ফলাফল ছিল এই ধারণা যে, শুধুমাত্র আনন্দের জন্য যৌনসম্পর্ক করা পাপ আর তাই যে-যৌনসম্পর্কগুলো সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, তা অনৈতিক। কিন্তু, শাস্ত্র তা শিক্ষা দেয় না।

কাব্যিক ভাষা ব্যবহার করে বাইবেলের হিতোপদেশ বই সেই আনন্দ সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে উপযুক্ত যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে লাভ করা যেতে পারে: “তুমি নিজ জলাশয়ের জল পান কর, নিজ কূপের স্রোতোজল পান কর। . . . তোমার উনুই ধন্য হউক, তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর। সে প্রেমিকা হরিণী ও কমনীয়া বাতপ্রমীবৎ; তাহারই কুচযুগ দ্বারা তুমি সর্ব্বদা আপ্যায়িত হও, তাহার প্রেমে তুমি সতত মোহিত থাক।”—হিতোপদেশ ৫:১৫, ১৮, ১৯.

স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যৌনসম্পর্ক ঈশ্বরদত্ত একটা উপহার। কিন্তু, সন্তান উৎপাদন করাই এর একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। যৌনসম্পর্ক এক বিবাহিত দম্পতিকে পরস্পরের প্রতি কোমলতা ও অনুরাগ প্রকাশ করারও সুযোগ করে দেয়। তাই, একটা দম্পতি যদি কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে রোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার আর কারোরই তাদের বিচার করা উচিত নয়।—রোমীয় ১৪:৪, ১০-১৩. (g ৯/০৭)

আপনি কি ভেবে দেখেছেন?

◼ স্বামী ও স্ত্রীর যৌনসম্পর্কের মধ্যে কি কোনো পাপ রয়েছে?—হিতোপদেশ ৫:১৫, ১৮, ১৯.

◼ খ্রিস্টানরা যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে, তা হলে তাদের কী মনে রাখা উচিত?—যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩, NW.

◼ যে-বিবাহিত দম্পতিরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে, তাদেরকে অন্যদের কীভাবে দেখা উচিত?—রোমীয় ১৪:৪, ১০-১৩.

[পাদটীকা]

^ ত্রয়োদশ শতাব্দীতেই গ্রেগরি নবম সেই আইন পাশ করেন, যেটাকে নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া “জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিরুদ্ধে পোপের দ্বারা প্রণীত প্রথম সর্বজনীন আইন” বলে অভিহিত করে।

[১১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

ঈশ্বর প্রথম মানব দম্পতি ও নোহের পরিবারকে বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ . . . কর।” কিন্তু, খ্রিস্টানদের কাছে এই আজ্ঞা পুনরাবৃত্তি করা হয়নি