পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালন-পালন
আপনার কিশোর বয়সি সন্তানকে যেভাবে শাসন করবেন
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
আপনার ঘরের নিয়ম হল, রাত ৯টার পর সেলফোন বন্ধ করে দেওয়া কিন্তু এই সপ্তাহে দু-দু বার আপনি আপনার মেয়েকে মাঝরাতে টেক্সটিং করার সময় ধরে ফেলেছেন। রাত ১০টার মধ্যে আপনার ছেলের ঘরে ফেরার কথা কিন্তু গত রাতে সে আবারও ১১টার পরে ঘরে ফিরেছে।
এটা ঠিক যে, আপনার সন্তান ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু প্রথমে আপনার জানা দরকার যে, কেন সে আপনার দেওয়া আইনগুলো ভঙ্গ করে বলে মনে হয়। এর একটা ভালো দিক কী হতে পারে? আপনি হয়তো বাইরে থেকে যেটাকে বিদ্রোহ বলে মনে করছেন, আসলে বিষয়টা তত গুরুতর না-ও হতে পারে।
যে-কারণে এটা হয়ে থাকে
যখন সীমারেখা স্পষ্ট নয়। কিছু কিশোর-কিশোরীরা নিয়মগুলো ভাঙে কারণ তারা দেখতে চায় যে, এটা না মানলে কী হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাবা-মা যদি বলে, কোনো একটা দোষ করলে তাকে নির্দিষ্ট কোনো শাস্তি দেওয়া হবে, তখন একজন কিশোর বা কিশোরী এটা দেখতে চায় যে, বাবা-মা আসলেই তাকে সেই শাস্তি দেয় কি না। এইরকম কিশোর-কিশোরীদের সম্বন্ধে কি বলা যাবে যে, তারা খুবই বিদ্রোহী হয়ে যাচ্ছে? হয়তো-বা না। আসলে, নিয়ম ভাঙার শাস্তি যা হবে বলা হয়েছিল, যখন বাবা-মারা তা দেয় না অথবা যখন সীমারেখা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয় না, তখন কিশোর-কিশোরীরা নিয়ম মানার বিষয়টাকে ততটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না।
কঠোর নিয়মকানুন। কিছু বাবা-মা তাদের কিশোর বয়সি সন্তানদের অজস্র নিয়মকানুন দিয়ে বেঁধে রাখতে চায়। যখন তারা অবাধ্য হয়, তখন বাবা-মারা রেগে গিয়ে এমনকী আরও নিয়মকানুন চাপিয়ে দেয়। অথচ প্রায়ই, তা বিষয়টাকে আরও জটিল করে তোলে। বাবা-মা/কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্কের উন্নতি (ইংরেজি) বইটি ব্যাখ্যা করে: ‘আপনি যত বেশি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন, তারা তত আপনার বিরোধিতা করবে। এইভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, ঠিক যেন নরম পাউরুটিতে ঠান্ডা মাখন লাগানোর মতো। পাউরুটি ছিঁড়ে যাবে কিন্তু মাখন লাগবে না।’
উপযুক্ত শাসন সাহায্য করতে পারে। শাসন করার মানে শুধু “শাস্তি” দেওয়া নয় কিন্তু প্রাথমিকভাবে এর অর্থ হল শেখানো। তাই, কীভাবে আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ম মেনে চলতে শেখাতে পারেন?
আপনি যা করতে পারেন
নিয়মগুলো স্পষ্টভাবে জানান। একেবারে সঠিক ভাবে বলুন যে, তাদের কাছ থেকে কী চাওয়া হচ্ছে এবং অবাধ্য হলে এর পরিণতি কী হবে।—বাইবেলের নীতি: গালাতীয় ৬:৭.
পরামর্শ: আপনার ঘরের নিয়মকানুনের একটা তালিকা তৈরি করুন। এরপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি অনেক বেশি নিয়ম তৈরি করেছি? আমি কি অনেক কম নিয়ম তৈরি করেছি? এমন কিছু নিয়ম কি আছে, যেগুলোর আর প্রয়োজন নেই? আমার সন্তান যদি দেখিয়ে থাকে যে তার দায়িত্ববোধ রয়েছে, তবে কি আমার সেই অনুযায়ী রদবদল করা উচিত?’
সামঞ্জস্য বজায় রাখুন। কিশোর-কিশোরীরা হয়তো পার্থক্যটা বুঝে উঠতে পারে না, যখন গত সপ্তাহে কোনো দোষ করার পর আপনি তাদেরকে কিছু বলেননি অথচ এই সপ্তাহে সেই একই দোষের জন্য তাদের শাস্তি দিলেন।—বাইবেলের নীতি: মথি ৫:৩৭.
পরামর্শ: আপনার সন্তান যে-“অপরাধ” করেছে, সেটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সন্তান সময়মতো ঘরে আসার নিয়ম ভাঙে, তবে আরও আগে ঘরে ফেরার বিধি-নিষেধ জারি করা এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শাস্তি হতে পারে।
মেনে নিতে ইচ্ছুক হন। যখন তারা প্রমাণ করে যে তারা আরও স্বাধীনতা পাওয়ার যোগ্য, তখন তাদের তা দেওয়ার দ্বারা দেখান যে, আপনি এমন একজন বাবা অথবা মা, যিনি মেনে নিতে ইচ্ছুক।—বাইবেলের নীতি: ফিলিপীয় ৪:৫, NW.
পরামর্শ: আপনার সন্তানদের সঙ্গে বসে নিয়মগুলো আলোচনা করুন। কোনো নিয়ম ভাঙলে তার পরিণতি কী হবে, তা হয়তো তাকেই নির্ণয় করতে বলতে পারেন। পরিণতি কী হবে সেটা বেছে নেওয়ার সঙ্গে যদি তারা নিজেরা যুক্ত থাকে, তবে সন্তানেরা সহজেই সেই নিয়ম মেনে নেবে।
ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তানদেরকে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত নয় বরং তাদের সাহায্য করা, যাতে তারা সুস্থ বিবেক অর্থাৎ কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ সেই সম্পর্কে সঠিক বিচার করতে পারার ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। (“ইতিবাচক গুণগুলো গড়ে তুলুন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)—বাইবেলের নীতি: ১ পিতর ৩:১৬, ইজি-টু-রিড ভারসন।
পরামর্শ: সাহায্যের জন্য বাইবেলের পরামর্শ নিন। এটি “বিজ্ঞতার আচরণ সম্বন্ধে” শেখার সবচেয়ে ভালো উৎস এবং এর থেকে যে-প্রজ্ঞা পাওয়া যায়, তার দ্বারা “অবোধদিগকে চতুরতা প্রদান করা যায়, যুবক জ্ঞান ও পরিণামদর্শিতা” পায়।—হিতোপদেশ ১:১-৪. ◼ (g১৩-E ০৫)