প্রচ্ছদ বিষয়
মানসিক রোগ সম্বন্ধে আপনার যা জানা উচিত
“আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল,” ক্লডিয়া বলেন, যাকে সবেমাত্র বলা হয়েছে, তার বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার রয়েছে। “কোনো মানসিক রোগের সঙ্গে যে-লজ্জা জড়িয়ে থাকে, তা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন।”
“পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের অনেক সময় লেগেছিল,” ক্লডিয়ার স্বামী মার্ক বলেন। “কিন্তু আমি উপলব্ধি করেছিলাম, এখন আমাকে আমার স্ত্রীকে সমর্থন করার ওপর মনোযোগ দিতে হবে।”
আপনার অথবা আপনার কোনো প্রিয়জনের যদি মানসিক রোগ ধরা পড়ে, তাহলে আপনার কেমন লাগবে? আনন্দের বিষয় হল, মানসিক রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। আসুন আমরা কয়েকটা বিষয় পরীক্ষা করে দেখি, যেগুলো আমাদের মানসিক রোগকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। *
মানসিক রোগ সম্বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
“বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার লক্ষ লক্ষ লোক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় আর এটা তাদের প্রিয়জনদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রতি চার জনের মধ্যে এক জন তাদের জীবনের কোনো-না-কোনো সময়ে এর দ্বারা আক্রান্ত হবে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এই অসুস্থতার পিছনে একটা বড়ো কারণ হল অবসাদ। স্কিৎজোফ্রেনিয়া এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডার হল সবচেয়ে দুঃসহ ও ক্ষতিকর মানসিক রোগের মধ্যে অন্যতম। . . . যদিও অনেক লোক এতে আক্রান্ত হয়, তবুও লোকেরা মানসিক রোগকে গোপন করে রাখে, উপেক্ষা করে এবং এটাকে খারাপ চোখে দেখে।”—বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে, অনেক মানসিক রোগীই লজ্জার কারণে নিজেদের চিকিৎসা করাতে সংকোচবোধ করে।
ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অন মেন্টাল ইলনেস সংস্থার রিপোর্ট দেখায় যে, যদিও বেশিরভাগ মানসিক রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব, তবুও যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রায় ৫০ শতাংশ অল্পবয়সি, যাদের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ছিল, তারা কোনোরকম চিকিৎসা লাভ করেনি।
মানসিক রোগ সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা
মানসিক রোগ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক রোগ হল, একজন ব্যক্তির সুস্থভাবে চিন্তা করতে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সঠিকভাবে আচরণ করতে না পারা। এই অবস্থা প্রায়ই একজন ব্যক্তির অন্যদের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার এবং জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে।
মানসিক রোগ কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা অথবা চারিত্রিক ত্রুটির ফল নয়
ব্যক্তি-বিশেষ এবং অসুস্থতা ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে রোগের লক্ষণ হয়তো ভিন্ন হতে পারে। লিঙ্গ, বয়স, সংস্কৃতি, জাতি, ধর্ম অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই এতে আক্রান্ত হতে পারে। মানসিক রোগ কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা অথবা চারিত্রিক ত্রুটির ফল নয়। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যক্তি-বিশেষদের চিকিৎসা সম্ভব এবং তারা এক ফলপ্রসূ ও আনন্দময় জীবন কাটাতে পারে।
মানসিক রোগের চিকিৎসা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সফলভাবে অনেক মানসিক রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। তাই, প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল, কোনো অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে সম্পূর্ণ চেক আপ করানো।
কিন্তু, মানসিক রোগীরা কেবলমাত্র তখনই এই বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে উপকার লাভ করতে পারবে, যখন তারা উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করবে। এর জন্য হয়তো সেই রোগীকে নিজের মানসিক রোগ সম্বন্ধে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে অনিচ্ছাকে দূর করতে হবে। চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, এমন মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা, যারা তাদেরকে তাদের রোগ সম্বন্ধে বুঝতে, দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধান করতে এবং চিকিৎসা বন্ধ না করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে সাহায্য করতে পারেন। ডাক্তারের সঙ্গে এই ধরনের আলোচনার সময় পরিবারের কোনো সদস্য অথবা বন্ধু আশ্বাস ও সমর্থন জোগানোর ক্ষেত্রে এক বড়ো ভূমিকা পালন করতে পারেন।
অনেকে তাদের অবস্থাকে ভালোভাবে বোঝার এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করার পর, তাদের মানসিক রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আগে উল্লেখিত মার্ক বলেন, “আমার স্ত্রীর রোগ ধরা পড়ার আগে মানসিক রোগ সম্বন্ধে আমরা প্রায় কিছুই জানতাম না। কিন্তু, আমরা এক এক করে প্রতিটা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে এবং পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, আমরা নির্ভরযোগ্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সেইসঙ্গে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সমর্থন থেকে অনেক উপকার পেয়েছি।”
প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল, কোনো অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে সম্পূর্ণ চেক আপ করানো
ক্লডিয়াও এমনটা মনে করেন। তিনি স্বীকার করেন, “চিকিৎসার কারণে মনে হতো আমার সমস্ত স্বাধীনতা
হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, আমার অসুস্থতা যদিও আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছিল, তবুও আমি শিখেছি যে, আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হয় এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই, আমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যারা সাহায্য করেছে, তাদের কাছে থেকে সহযোগিতা লাভ করার মাধ্যমে, অন্যদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও উন্নত করার মাধ্যমে এবং এক এক করে সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করার মাধ্যমে আমি আমার মানসিক রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করি।”ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ
বাইবেল এমন কোনো ইঙ্গিত দেয় না যে, আধ্যাত্মিকতা রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। তবে, বিশ্বব্যাপী বহু পরিবার বাইবেলের শিক্ষা থেকে অনেক সান্ত্বনা ও শক্তি লাভ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়, আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা “ভগ্নচিত্তদের” ও “চূর্ণমনাদের” সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী।—গীতসংহিতা ৩৪:১৮.
বাইবেল যদিও স্বাস্থ্যের কোনো বই নয়, তবুও এটি আমাদের ব্যাবহারিক নির্দেশনা প্রদান করে, যা আমাদেরকে দুঃখজনক অনুভূতি এবং দুর্দশামূলক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, বাইবেল আমাদেরকে এক ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশা প্রদান করে, যখন পৃথিবীতে কোনো অসুস্থতা ও বেদনা আর থাকবে না। ঈশ্বরের বাক্য প্রতিজ্ঞা করে: “তৎকালে অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহ্বা আনন্দগান করিবে।”—যিশাইয় ৩৫:৫, ৬. (g১৪-E ১২)
^ অনু. 5 ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এই প্রবন্ধে ‘মানসিক রোগ’ বলতে বিভিন্ন মনোরোগ এবং আচরণগত অস্বাভাবিকতাকে বোঝানো হয়েছে।
^ অনু. 32 সচেতন থাক! পত্রিকা কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ করে না। খ্রিস্টানরা যে-চিকিৎসা পদ্ধতিই গ্রহণ করুক না কেন, তাদের এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত, তা যেন বাইবেলের নীতির বিরুদ্ধে না হয়।
^ অনু. 40 এ ছাড়া, ২০১৪ সালের মে মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “চাপ—এটার সঙ্গে মোকাবিলা করার উপায়” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।