সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবারের জন্য সাহায্য | বিয়ে

মতপার্থক্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা

মতপার্থক্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

আপনি খেলাধূলা ভালোবাসেন কিন্তু আপনার সাথি পড়তে ভালোবাসেন। আপনি খুঁটিনাটি বিষয়ে খেয়াল রাখেন এবং সব কিছু গুছিয়ে রাখেন কিন্তু আপনার সাথি একটু অগোছালো। আপনি লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ভালোবাসেন কিন্তু আপনার সাথি একান্তে থাকতে পছন্দ করেন।

আপনি মনে মনে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য! বিয়ের আগে এগুলো কেন চোখে পড়েনি?’

হতে পারে, বিয়ের আগে একটু হলেও এই পার্থক্যগুলো আপনার চোখে পড়েছিল। কিন্তু, সেইসময় আপনি হয়তো সহজেই মানিয়ে নিয়েছিলেন। আর এখন বিয়ের পর, এই গুণটা আরও বেশি করে গড়ে তোলা উচিত। এই প্রবন্ধ আপনাকে তা করতে সাহায্য করবে। তবে আসুন, প্রথমে আমরা এমন কয়েকটা বিষয় আলোচনা করি, যেগুলো নিয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হতে পারে।

আপনার যা জানা উচিত

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্যকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। ডেটিং করার অন্যতম উদ্দেশ্য হল, কোন কোন বিষয়ে দু-জনের মিল রয়েছে, তা নির্ধারণ করা। তাই, সেইসময় কোনো গুরুতর পার্থক্য চোখে পড়লে অনেকে সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা এমন বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় না, যেখানে কোনো দিনও তাদের মতের মিল হবে না। কিন্তু, সেইসমস্ত মতপার্থক্যের বিষয়ে কী বলা যায়, যেগুলো ততটা গুরুতর নয়, বিবাহিত জীবনে যেগুলোকে এড়ানো যায় না?

দু-জন ব্যক্তি কখনোই একরকম হয় না। তাই, এটা খুবই স্বাভাবিক যে, নিম্নোক্ত এক বা একাধিক কারণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে:

পছন্দ-অপছন্দ। আ্যনা a নামে এক স্ত্রী জানান, “ছোটোবেলা থেকেই আমার স্বামীর পাহাড়-পর্বতে ওঠার এবং বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস রয়েছে কিন্তু আমার আবার এসব ভালো লাগে না।”

স্বভাব। ব্রায়েন নামে এক স্বামী বলেন, “আমার স্ত্রী যত রাত পর্যন্তই জেগে থাকুক না কেন, সে ভোর ৫-টার সময় ঘুম থেকে উঠে যেতে পারে কিন্তু আমার সাত-আট ঘন্টা ঘুম না হলে মেজাজ ঠিক থাকে না।”

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আপনি হয়তো চাপা স্বভাবের কিন্তু আপনার সাথি হয়তো মন খুলে কথা বলতে ভালোবাসেন। ডেভিড জানান, “আমি ছোটোবেলা থেকেই নিজের সমস্যার কথা কাউকে বলতাম না কিন্তু আমার স্ত্রী এমন এক পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছে, যেখানে সবাই সমস্ত বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে।”

মতপার্থক্য থাকা উপকারজনক হতে পারে। হেলেনা নামে একজন স্ত্রী বলেন, “আমি যেভাবে কাজ করি, সেটা হয়তো ঠিক কিন্তু সেটাই একমাত্র উপায় নয়।”

আপনি যা করতে পারেন

সহযোগিতা করুন। আ্যডামের কথায়, “আমার স্ত্রী ক্যারানের খেলাধূলার প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। তা সত্ত্বেও, আমি যখন খেলা দেখতে যাই, তখন প্রায়ই সে আমার সঙ্গে যায় আর আমার পাশে বসে হাততালি দেয়। অন্যদিকে, ক্যারান আবার আর্ট মিউজিয়ামে যেতে ভালোবাসে। তাই, আমিও তার সঙ্গে সেখানে যাই আর সে যতক্ষণ সেখানে থাকতে চায়, তার সঙ্গে থাকি। যেহেতু আমার স্ত্রী আর্ট ভালোবাসে, তাই আমিও যতটা পারি, সেই বিষয়ে আগ্রহ দেখাই।”—বাইবেলের নীতি: ১ করিন্থীয় ১০:২৪.

আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করুন। কিছু কিছু বিষয়ে আপনার সাথির দৃষ্টিভঙ্গি আপনার চেয়ে ভিন্ন হওয়ার অর্থ এই নয় যে, সেটা ভুল। আ্যলিক্সের অভিজ্ঞতা এই বিষয়টা প্রমাণ করে। তিনি বলেন, “আগে আমি ভাবতাম, কোনো কিছু করার জন্য মাত্র একটাই সঠিক উপায় আছে। কিন্তু, বিয়ের পর আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়। আমি বুঝতে পেরেছি, একটা কাজ বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে আর প্রত্যেকটা উপায়ই সঠিক।”—বাইবেলের নীতি: ১ পিতর ৫:৫.

বাস্তববাদী হোন। দু-জনের মধ্যে মিল থাকার অর্থ এই নয়, আপনাদের একই রকমের হতে হবে। আর তাই, কিছু কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকার অর্থ এই নয় যে, আপনারা বিয়ে করে ভুল করেছেন। বিবাহবিচ্ছেদের বিরুদ্ধে মামলা (ইংরেজি) নামক বইটা বলে: “অনেকে এই বলে অজুহাত দেখায়, ‘আমি প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।’” তবে এই বই আরও বলে, “আপনারা যখন আনন্দের সঙ্গে একেক দিন কাটান, তখন তা দেখায় যে, আপনাদের মধ্যে সহজাত পার্থক্যগুলো থাকা সত্ত্বেও আপনারা একে অন্যকে ভালোবাসতে পারেন।” তাই, ‘যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণও থাকে’ তবুও ‘পরস্পর সহনশীল হইবার’ চেষ্টা করুন।—কলসীয় ৩:১৩.

এটা করে দেখুন: আপনি কী পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন, সেগুলো লিখুন আর দেখুন কোন কোন বিষয়ে আপনার সাথির সঙ্গে আপনার মিল আছে। এরপর, কোন কোন বিষয়ে অমিল রয়েছে বলে আপনার মনে হয়, তা লিখুন। আপনি হয়তো দেখবেন, যে যে বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো ততটা গুরুতর নয়। এ ছাড়া, এই তালিকা থেকে আপনি এই বিষয়টা বুঝতে পারবেন যে, কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি আপনার সাথির প্রতি আরও সহিষ্ণু হতে পারেন অথবা তাকে আরও সহযোগিতা করতে পারেন। কেনাথ নামে একজন ব্যক্তি বলেন, “আমার স্ত্রী যখন আমার সঙ্গে সহযোগিতা করে, তখন আমার খুব ভালো লাগে আর আমি যখন তা করি, তখন তারও খুব ভালো লাগে। তা করতে গিয়ে আমাকে যদি আত্মত্যাগ করতে হয়, আমি করি কারণ তার মুখে হাসি দেখলে আমার হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে।”—বাইবেলের নীতি: ফিলিপীয় ৪:৫. ◼ (g15-E 12)

a এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।