“জাগিয়া থাক”
“জাগিয়া থাক”
“অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।”—মথি ২৪:৪২.
১. অনেকদিন ধরে যিহোবার সেবা করে আসছেন এমন বয়স্ক ভাইবোনেরা আজ কী মনে করেন? একটা উদাহরণ দিন।
আমাদের অনেক বয়স্ক ভাইবোনেরা যারা অনেক দিন ধরে যিহোবার সেবা করে আসছেন, সেই সময়ে সত্য শিখেছিলেন যখন তারা যুবক ছিলেন। নিজেদের অস্বীকার করে তারা তাদের সম্পূর্ণ জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিলেন। ঠিক সেই বণিকের মতো যিনি একটা মহামূল্য মুক্তো দেখতে পেয়ে তার সমস্তকিছু বিক্রি করে সেটা কিনেছিলেন। (মথি ১৩:৪৫, ৪৬; মার্ক ৮:৩৪) পৃথিবীতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য যত তাড়াতাড়ি পূর্ণ হবে বলে তারা আশা করেছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে তারা কী মনে করেন? এর জন্য তাদের একটুও আফশোস নেই! আসলে তারা ভাই এ. এইচ. ম্যাকমিলানের সঙ্গে একমত, যিনি প্রায় ৬০ বছর ধরে ঈশ্বরকে সেবা করার পর বলেছিলেন: “আমি আমার বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য আগের চেয়ে এখন আরও বেশি দৃঢ়সংকল্প। এই বিশ্বাসের জন্য আমার জীবন সার্থক হয়েছে। এখনও তা আমাকে নির্ভীকভাবে ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে সাহায্য করছে।”
২. (ক) যীশু তাঁর শিষ্যদের ঠিক সময়ে কোন্ পরামর্শ দিয়েছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন্ কোন্ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব?
২ আর আপনি কী মনে করেন? আপনার বয়স যাই হোক না কেন, যীশুর এই কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করুন: “অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।” (মথি ২৪:৪২) এই সহজ কথার মধ্যে একটা গভীর সত্য রয়েছে। আমরা জানি না ঠিক কোন্ দিন প্রভু এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বিচার করতে আসবেন আর আমাদের তা জানার দরকারও নেই। কিন্তু আমাদের এমনভাবে জীবনযাপন করা দরকার যাতে তিনি যখন আসবেন, তখন যেন আমাদের আফশোস করতে না হয়। তাহলে এখন এই বিষয়ে বাইবেলে আমরা কোন্ উদাহরণগুলো পাই যা আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করবে? জেগে থাকা যে দরকার তা যীশু কীভাবে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন? আর আজকে আমরা কোন্ প্রমাণই বা দেখতে পাই যা দেখায় যে আমরা এই অধার্মিক জগতের শেষ কালে বাস করছি?
যে উদাহরণ সর্তক করে
৩. আজকে অনেক লোকেরা কোন্ কোন্ দিক দিয়ে নোহের দিনের লোকেদের মতো?
৩ আজকে লোকেরা অনেক দিক দিয়ে নোহের দিনের লোকেদের মতো। সেই সময়ে পুরো পৃথিবী দৌরাত্ম্যে ছেয়ে গিয়েছিল আর লোকেদের চিন্তাভাবনা “নিরন্তর কেবল মন্দ” ছিল। (আদিপুস্তক ৬:৫) বেশির ভাগ লোকই জীবনের রোজকার কাজকর্মের মধ্যে ডুবে ছিল। তাই, যিহোবা মহা জলপ্লাবন নিয়ে আসার আগে লোকেদের একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন যেন তারা মন ফিরায়। এইজন্য তিনি নোহকে প্রচার করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং নোহ ৪০, ৫০ কিংবা তারও বেশি সময় ধরে প্রচার করেছিলেন। আর তাই তাকে “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” বলা হয়েছে। (২ পিতর ২:৫) কিন্তু লোকেরা নোহের সর্তকবাণীতে একেবারেই কান দেয়নি। তারা জেগে ওঠেনি। আর এর ফলে যিহোবার বিচারের হাত থেকে শুধু নোহ ও তার পরিবারই রক্ষা পেয়েছিলেন।—মথি ২৪:৩৭-৩৯.
৪. কোন্ অর্থে বলা যায় যে নোহের প্রচার কাজ সফল হয়েছিল আর কীভাবে আপনার প্রচার কাজের বিষয়েও এই একই কথা বলা যায়?
৪ নোহের প্রচার কাজ কী সফল হয়েছিল? কতজন তার কথা শুনেছিল তা দেখে বিচার করবেন না যেন। লোকেরা শুনুক আর না-ই শুনুক নোহের প্রচার কাজের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছিল। কেন? কারণ তা লোকেদের বেছে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছিল যে তারা যিহোবাকে সেবা করবে কী করবে না। আপনার এলাকা সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনার এলাকায় যদি খুব কম লোকেরাই আপনার কথা শুনে থাকে তাহলেও আপনার প্রচার কাজের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। কেন? কারণ আপনি প্রচার করে ঈশ্বরের সতর্কবাণী লোকেদের কাছে ঘোষণা করছেন আর এভাবেই আপনি যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে যে আজ্ঞা দিয়েছিলেন তা পালন করছেন।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.
ঈশ্বরের ভাববাদীদের কথায় কান না দেওয়া
৫. (ক) হবক্কূকের দিনে যিহূদার অবস্থা কেমন ছিল এবং লোকেরা তার ভবিষ্যদ্বাণীতে কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? (খ) যিহূদার লোকেরা কীভাবে যিহোবার ভাববাদীদের বিরোধিতা করেছিল?
৫ জলপ্লাবনের কয়েকশ বছর পর, যিহূদা রাজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। প্রতিমাপূজা, অবিচার, অত্যাচার আর এমনকি হত্যাও সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। এইজন্য যিহোবা হবক্কূককে দিয়ে লোকেদেরকে সতর্ক করেছিলেন যে তারা যদি খারাপ পথ থেকে মন না ফেরায়, তাহলে তারা কলদীয় বা বাবিলনীয়দের হাতে চরম দুর্দশা ভোগ করবে। (হবক্কূক ১:৫-৭) কিন্তু লোকেরা তাতে কান দেয়নি। হতে পারে তারা নিজেদের যুক্তি দেখিয়েছিল, ‘একশ বছরেরও বেশি আগে, ভাববাদী যিশাইয় একই সতর্কবাণী ঘোষণা করেছিলেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেইরকম কিছুই ঘটেনি!’ (যিশাইয় ৩৯:৬, ৭) ভবিষ্যদ্বক্তাদের কথা তারা তো শোনেইনি বরং যিহূদার অনেক অধ্যক্ষ তাদের বিরোধিতা করেছিল। এমনকি এক সময় তারা ভাববাদী যিরমিয়কে মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছিল, তবে অহীকাম তাতে হস্তক্ষেপ করায় তারা তা পারেনি। আর পরে অন্য একটা ভবিষ্যদ্বাণী শুনে রেগে গিয়ে রাজা যিহোয়াকীম ভাববাদী ঊরিয়কে হত্যা করেছিলেন।—যিরমিয় ২৬:২১-২৪.
৬. যিহোবা কীভাবে হবক্কূককে শক্তিশালী করেছিলেন?
৬ ঈশ্বর যিরমিয়কে যিহূদার ৭০ বছর জনশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকার যে কথা ভবিষ্যদ্বাণী করতে বলেছিলেন, তা লোকেদের কাছে খুবই অপ্রিয় ও কঠোর ছিল আর হবক্কূকের বার্তাও যিরমিয়ের চেয়ে কোন অংশেই কম কঠিন ছিল না। (যিরমিয় ২৫:৮-১১) তাই, আমরা হবক্কূকের কষ্টের কথা বুঝি যখন তিনি কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, কত কাল আমি আর্ত্তনাদ করিব, আর তুমি শুনিবে না? আমি দৌরাত্ম্যের বিষয়ে তোমার কাছে কাঁদিতেছি, আর তুমি নিস্তার করিতেছ না।” (হবক্কূক ১:২) যিহোবা দয়ার সঙ্গে এই কথাগুলো বলে হবক্কূকের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন যাতে তার বিশ্বাস মজবুত হয়েছিল: “এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, ও তাহা পরিনামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হকক্কূক ২:৩) অতএব অন্যায় ও অত্যাচার শেষ করার জন্য যিহোবার একটা ‘নিরূপিত কাল’ ছিল। তা আসতে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে হলেও, হবক্কূকের উৎসাহ হারিয়ে নিরাশ হয়ে পড়ার কোন কারণ ছিল না। বরং তার আরও জরুরি মনোভাব নিয়ে “অপেক্ষা” করার দরকার ছিল। কারণ যিহোবার দিন বিলম্ব করবে না!
৭. সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে কেন যিহোবা যিরূশালেমকে ধ্বংস করবেন বলে স্থির করেছিলেন?
৭ যিহোবা হবক্কূককে এই কথাগুলো বলার ২০ বছর পর, যিহূদার রাজধানী যিরূশালেম ধ্বংস হয়েছিল। পরে এটাকে আবারও গড়ে তোলা হয়েছিল এবং হবক্কূককে যে অন্যায় কাজগুলো কষ্ট দিয়েছিল সেগুলোকে দূর করা হয়েছিল। কিন্তু সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে ওই নগরের লোকেরা আবারও অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছিল ও যিহোবা তাদের ধ্বংস করবেন বলে স্থির করেছিলেন। দয়া দেখিয়ে যিহোবা ধার্মিকদের রক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। এবার তিনি সবচেয়ে মহান ভাববাদী যীশু খ্রীষ্টকে দিয়ে সতর্কবার্তা ঘোষণা করিয়েছিলেন। সা.কা. ৩৩ সালে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্ঠিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক।”—লূক ২১:২০, ২১.
৮. (ক) যীশুর মৃত্যুর পর যতই সময় গড়িয়ে গিয়েছিল, কিছু খ্রীষ্টানরা হয়তো কী ভেবেছিলেন? (খ) যিরূশালেম সম্বন্ধে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে ফলেছিল?
৮ যতই বছর গড়িয়ে যেতে থাকে, যিরূশালেমের কিছু খ্রীষ্টানেরা হয়তো অবাক হয়ে ভেবেছিলেন যে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক কখন পূর্ণ হবে। সত্যিই তাদের মধ্যে কেউ কেউ কোনরকম সন্দেহ না করে যে বড় বড় ত্যাগস্বীকার করেছিলেন, তা চিন্তা করুন। জেগে থাকার ব্যাপারে স্থিরসংকল্প হওয়ায় তারা হয়তো লাভজনক ব্যাবসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাই অপেক্ষা করতে করতে তারা কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন? তারা কি ভেবেছিলেন যে তারা অযথাই সময় নষ্ট করছেন বা তারা কি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে যীশুর কথাগুলো তাদের সময়ের জন্য নয় বরং আগামী যুগে ঘটবে? সা.কা. ৬৬ সালে রোমীয় সৈন্যরা যখন যিরূশালেমকে ঘিরে ফেলেছিল, তখন যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী ফলতে শুরু করেছিল। যারা জেগেছিলেন তারা চিহ্ন দেখে বুঝতে পেরে নগর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ও যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
জেগে থাকা যে জরুরি তা দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া
৯, ১০. (ক) যে দাসেরা তাদের প্রভুর বিবাহভোজ থেকে ফিরে আসার অপেক্ষা করেছিল তাদের বিষয়ে বলা যীশুর দৃষ্টান্তকে আপনি সংক্ষেপে কীভাবে বলবেন? (খ) প্রভুর জন্য দাসদের অপেক্ষা করা হয়তো কেন কঠিন ছিল? (গ) দাসদের ধৈর্য ধরা ভাল ছিল কেন?
৯ জেগে থাকা যে কতটা জরুরি তা বোঝাতে গিয়ে যীশু তাঁর শিষ্যদের একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। এই দৃষ্টান্তে তিনি তাঁর শিষ্যদের সেই দাসদের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন যারা তাদের প্রভুর বিবাহভোজ থেকে ফিরে আসার অপেক্ষা করছিলেন। তারা জানতেন যে তিনি রাতেই ফিরবেন কিন্তু ঠিক কোন্ প্রহরে? প্রথম প্রহরে? দ্বিতীয় প্রহরে নাকি তৃতীয় প্রহরে? তারা তা জানতেন না। যীশু বলেছিলেন: “যদি দ্বিতীয় প্রহরে কিম্বা যদি তৃতীয় প্রহরে আসিয়া [প্রভু] সেইরূপ [জাগিয়া থাকিতে] দেখেন, তবে তাহারা ধন্য।” (লূক ১২:৩৫-৩৮) এই দাসেরা কত অধীর হয়েই না অপেক্ষা করেছিলেন তা একবার কল্পনা করুন। যখনই তারা কোন শব্দ শুনেছেন বা কোন ছায়া দেখেছেন সঙ্গে সঙ্গে তারা ভেবেছেন: ‘আমাদের প্রভু বুঝি এলেন?’
১০ প্রভু যদি দ্বিতীয় প্রহরে অর্থাৎ রাত প্রায় নটা থেকে বারোটার মধ্যে আসতেন, তাহলে কী হতো? সমস্ত দাস কি তাকে স্বাগত জানানোর জন্য জেগে থাকবেন এমনকি যদিও তাদের কিছুজন ভোরবেলা থেকে কঠোর পরিশ্রম করছেন? কী হতো যদি প্রভু রাতের তৃতীয় প্রহরে আসতেন অর্থাৎ মাঝরাত থেকে ভোর প্রায় তিনটের মধ্যে? কিছু দাস কি নিরাশ হয়ে পড়বেন বা প্রভুর আসতে দেরি হচ্ছে মনে করে অসন্তুষ্ট হবেন? * যাদেরকে প্রভু এসে জেগে থাকতে দেখবেন শুধু তাদেরকে সুখী বলা হবে। হিতোপদেশ ১৩:১২ পদের কথাগুলো নিঃসন্দেহে তাদের প্রতি খাটবে: “আশাসিদ্ধির বিলম্ব হৃদয়ের পীড়াজনক; কিন্তু বাঞ্ছার সিদ্ধি জীবনবৃক্ষ।”
১১. প্রার্থনা কীভাবে আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করতে পারে?
১১ বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে হওয়ার সময়, কী যীশুর শিষ্যদেরকে জেগে থাকতে সাহায্য করেছিল? গ্রেপ্তার হওয়ার অল্প সময় আগে যীশু যখন গেৎশিমানী বাগানে ছিলেন, তখন তিনি তাঁর তিনজন প্রেরিতকে বলেছিলেন: “জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।” (মথি ২৬:৪১) বেশ কিছু বছর পর, পিতর যিনি সেই রাতে সেখানে ছিলেন তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদের একই পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; অতএব সংযমশীল হও, এবং প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক।” (১ পিতর ৪:৭) অতএব অন্তর থেকে করা প্রার্থনা আমাদের খ্রীষ্টীয় জীবনের এক অঙ্গ হয়ে উঠবে। সত্যিই, আমাদের সবসময় যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা দরকার যেন তিনি আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করেন।—রোমীয় ১২:১২; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৭.
১২. অনুমান করা এবং জেগে থাকা কীভাবে দুটো আলাদা বিষয়?
১২ খেয়াল করুন যে পিতরও বলেছিলেন: “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট।” কতটা নিকটে? কোন মানুষই দিনক্ষণ একেবারে ঠিক ঠিক মতো বলতে পারে না। (মথি ২৪:৩৬) কিন্তু বাইবেল আমাদের শেষের জন্য অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা শেষ কবে আসবে তা অনুমান করতে শুরু করে দেব কারণ বাইবেল আমাদের তা করতে বলে না আর অনুমান করা ও অপেক্ষা করা দুটো আলাদা বিষয়। (২ তীমথিয় ৪:৩, ৪; তীত ৩:৯ পদগুলোর সঙ্গে তুলনা করুন।) একটা উপায় কী যার মাধ্যমে আমরা শেষের জন্য অপেক্ষা করতে পারি? শেষ যে কাছে তার প্রমাণ ভালভাবে লক্ষ্য করে আমরা তা করতে পারি। তাই আসুন আমরা এখন আবারও এমন ছটা প্রমাণ দেখি যা দেখায় যে আমরা এই অধার্মিক জগতের একেবারে শেষ কালে বাস করছি।
ছটা প্রমাণ যা বিশ্বাস জন্মায়
১৩. দ্বিতীয় তীমথিময় ৩ অধ্যায়ে লেখা পৌলের ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে আপনাকে দেখায় যে আমরা ‘শেষ কালে’ বাস করছি?
১৩ আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে প্রেরিত পৌল ‘শেষ কাল’ সম্বন্ধে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা হুবহু পূর্ণ হচ্ছে। পৌল লিখেছিলেন: “শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে; তুমি এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) আমরা কি আমাদের দিনে এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হতে দেখছি না? যারা বাস্তবকে চোখ মেলে দেখেন না তারাই শুধু এটাকে অস্বীকার করবেন! *
১৪. দিয়াবল সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য ১২:৯ পদের কথা কীভাবে আজকে পূর্ণ হচ্ছে আর খুব তাড়াতাড়ি তার কী হতে চলেছে?
১৪ প্রকাশিত বাক্য ১২:৯ পদে শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের স্বর্গ থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল সেটা আজ আমরা পূর্ণ হতে দেখছি। সেখানে আমরা পড়ি: “সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, এবং তাহার দূতগণও তাহার সঙ্গে নিক্ষিপ্ত হইল।” এর ফলে সারা পৃথিবীতে মহা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সত্যিই, ১৯১৪ সাল থেকে মানবজাতি যেন প্রচণ্ড বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্বাণী আরেকটা বিষয় বলে যে দিয়াবলকে যখন পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন সে জানত যে “তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২) এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে শয়তান খ্রীষ্টের অভিষিক্ত ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) আমরা নিশ্চয়ই আমাদের দিনে তার আক্রমণের ফলগুলো স্পষ্টভাবে দেখেছি। * কিন্তু, খুব তাড়াতাড়ি শয়তানকে অগাধলোকে বন্দি করা হবে যাতে “সে জাতিবৃন্দকে আর ভ্রান্ত করিতে না পারে।”—প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩.
১৫. প্রকাশিত বাক্য ১৭:৯-১১ পদ থেকে আমরা কীভাবে প্রমাণ পাই যে আমরা শেষ কালে বাস করছি?
১৫ আমরা প্রকাশিত বাক্য ১৭:৯-১১ পদে অষ্টম ও শেষ “রাজা” সম্বন্ধে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল সেটাও আজকে পূর্ণ হতে দেখছি। এখানে প্রেরিত যোহন সাত জন রাজার কথা বলেন, যারা সাতটা বিশ্বশক্তিকে বোঝায়—মিশর, অশূর, বাবিলন, মাদীয়-পারসীক, গ্রিস, রোম এবং আ্যংলো-আমেরিকান যৌথ বিশ্বশক্তি। এছাড়াও তিনি “অষ্টম [রাজাকে]” দেখেন, যে “সেই সাতটীর একটী [সাত জনের মধ্যে থেকে আসে]।” এই অষ্টম রাজা অর্থাৎ যোহনের দর্শনের শেষ জন হল রাষ্ট্রসংঘ। যোহন বলেন যে এই অষ্টম রাজা “বিনাশে যায়” এবং এর পরে পৃথিবীতে আর কোন রাজার কথা বলা হয়নি। *
১৬. নবূখদ্নিৎসরের দেখা স্বপ্নের প্রতিমা দিয়ে যা বোঝানো হয়েছে তা কীভাবে দেখায় যে আমরা শেষ কালে বাস করছি?
১৬ নবূখদ্নিৎসরের দেখা স্বপ্নে প্রতিমার চরণ যে সময়কে বোঝায় আজ আমরা সেই সময়ে বাস করছি। মানুষের মতো দেখতে এই বিরাট প্রতিমার রহস্যময় স্বপ্নের অর্থ দানিয়েল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। (দানিয়েল ২:৩৬-৪৩) আলাদা আলাদা ধাতু দিয়ে তৈরি প্রতিমার চার অংশ বিভিন্ন বিশ্বশক্তিকে বোঝায়, এর মাথা (বাবিল সাম্রাজ্য) আর পায়ের পাতা এবং আঙ্গুল (যে সরকারগুলো আজকে শাসন করছে) তারা। ওই প্রতিমা দিয়ে যে সমস্ত বিশ্বশক্তিগুলোকে বোঝানো হয়েছে তার সবগুলোই এসে গেছে। আমরা এখন প্রতিমার চরণ দিয়ে যে সময়ের কথা বোঝানো হয়েছিল সেই সময়ে বাস করছি। এর পরে অন্য আর কোন শক্তি আসার কথা বলা হয়নি। *
১৭. রাজ্যের প্রচার কাজ কীভাবে প্রমাণ দেয় যে আমরা শেষ কালে বাস করছি?
১৭ যীশু বলেছিলেন যে শেষ কালে সারা পৃথিবীতে প্রচার কাজ হবে আর আজ আমরা যা পূর্ণ হতে দেখছি। যীশু বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪) এই ভবিষ্যদ্বাণী আজ আমাদের দিনে খুব বড় আকারে পূর্ণ হচ্ছে যা আগে কখনও হয়নি। এটা ঠিক যে এখনও পর্যন্ত এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে প্রচার করা হয়নি কিন্তু হয়তো যখন যিহোবার নিরূপিত সময় আসবে তখন সেখানেও কাজ করার জন্য দরজা খুলে যাবে। (১ করিন্থীয় ১৬:৯) তবুও, বাইবেল বলে না যে যিহোবা ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন যতদিন পর্যন্ত না পৃথিবীর প্রত্যেকটা লোকের কাছে সাক্ষ্য দেওয়া হবে। বরং, সুসমাচার প্রচার ততদিন করা হবে যতদিন পর্যন্ত না যিহোবা বলেন যথেষ্ট হয়েছে। এরপর শেষ আসবে।—মথি ১০:২৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
১৮. মহাক্লেশ যখন শুরু হবে, তখন কিছু অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কী হবে এবং এটা কীভাবে বোঝা যায়?
১৮ যদিও মহাক্লেশ শুরু হওয়ার সময় খ্রীষ্টের প্রকৃত অভিষিক্ত ভাইদের কিছুজন পৃথিবীতে থাকবেন, তবুও আজ তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অবশিষ্টাংশ ভাইদের বেশির ভাগই বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন আর তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু যীশু যখন মহাক্লেশ সম্বন্ধে কথা বলছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “সেই দিনের সংখ্যা যদি কমাইয়া দেওয়া না যাইত, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে।” (মথি ২৪:২১, ২২) অতএব, এটা স্পষ্ট যে যখন মহাক্লেশ শুরু হবে সেইসময় খ্রীষ্টের কিছু ‘মনোনীত জন’ পৃথিবীতে থাকবেন। *
সামনে কী রয়েছে?
১৯, ২০. আগের চেয়ে এখন জেগে থাকা এবং অপেক্ষা করা কেন আমাদের জন্য আরও বেশি জরুরি?
১৯ ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? রোমাঞ্চকর সময় এখনও আসেনি। পৌল সতর্ক করেছিলেন যে “রাত্রিকালে যেমন চোর, তেমনি প্রভুর দিন আসিতেছে।” জগতের লোকেদের কথা বলতে গিয়ে পৌল বলেছিলেন: “লোকে যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে . . . আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়।” তাই পৌল তার পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৩, ৬) সত্যিই যারা শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মানুষের সংগঠনগুলোর ওপর ভরসা করেন তারা সত্য বিষয় থেকে তাদের চোখ সরিয়ে নেন। এই লোকেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন!
২০ এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংস কিছু না বলে কয়ে হুট করেই আসবে। তাই জেগে থাকুন ও যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করুন। ঈশ্বর নিজে হবক্কূককে বলেছিলেন: “তাহা . . . যথাকালে বিলম্ব করিবে না”! সত্যিই, আগে কখনও জেগে থাকা আমাদের জন্য এতটা জরুরি হয়ে পড়েনি।
[পাদটীকাগুলো]
^ প্রভু কিন্তু তার দাসদের বলেননি যে ঠিক কখন তিনি আসবেন। কারণ তিনি তাঁর যাওয়া আসার ব্যাপারে দাসদের কাছে বলতে বাধ্য ছিলেন না বা এই ব্যাপারে কোন কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজনও তাঁর ছিল না।
^ এই ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে আরও বেশি জানার জন্য ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ১১ অধ্যায় দেখুন।
^ আরও জানার জন্য ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত প্রকাশিত বাক্য—এর মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরেজি) বইয়ের ১৮০-৬ পৃষ্ঠা দেখুন।
^ প্রকাশিত বাক্য—এর মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! বইয়ের ২৫১-৪ পৃষ্ঠা দেখুন।
^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি) বইয়ের ৪ অধ্যায় দেখুন।
^ মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তে বলা হয়েছে যে মনুষ্য পুত্র মহাক্লেশের সময়ে আপন প্রতাপে আসবেন এবং বিচার করতে বসবেন। লোকেরা তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের সাহায্য করেছিল কী করেনি তার ওপর ভিত্তি করে খ্রীষ্ট তাদের বিচার করবেন। বিচারের সময়ের অনেক আগেই যদি খ্রীষ্টের সমস্ত ভাইরা পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতেন, তাহলে এই বিষয়ের ওপর বিচার করার কোন মানেই হতো না।—মথি ২৫:৩১-৪৬.
আপনার কি মনে আছে?
• বাইবেলের কোন্ উদাহরণগুলো আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করতে পারে?
• যীশু কীভাবে দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে জেগে থাকা আমাদের জন্য দরকার?
• কোন্ ছটা প্রমাণ দেখায় যে আমরা শেষ কালে বাস করছি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
এ. এইচ. ম্যাকমিলান প্রায় ষাট বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে সেই দাসদের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন যারা জেগেছিল