আমাদের ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত
আমাদের ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত
“আমি সদাপ্রভুতে আনন্দ করিব, আমার ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হইব।”—হবক্কূক ৩:১৮.
১. সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৯ সালে বাবিলনের পতনের আগে দানিয়েল কোন্ দর্শন দেখেছিলেন?
সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৯ সালে বাবিলনের পতনের প্রায় দশ বছরেরও কিছু আগে, বৃদ্ধ ভাববাদী দানিয়েল একটা দর্শন দেখেছিলেন। এই দর্শনে তিনি দেখেছিলেন যে জগতের বিভিন্ন ঘটনা, যিহোবার শত্রু ও তাঁর মনোনীত রাজা যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে এক চরম যুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছে। দানিয়েল কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন: ‘আমি ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম, . . . আর সেই দর্শনে চমৎকৃত হইলাম।’—দানিয়েল ৮:২৭.
২. দর্শনে দানিয়েল কোন্ যুদ্ধ দেখতে পান এবং আমরা কেমন মনে করি যখন আমরা বুঝতে পারি যে এই যুদ্ধ খুব কাছে?
২ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা সেই সময়ের খুবই কাছে বাস করছি যখন এই যুদ্ধ শুরু হবে! আমরা কেমন মনে করি যখন আমরা বুঝতে পারি যে দানিয়েল দর্শনে যে যুদ্ধ দেখেছিলেন অর্থাৎ হর্মাগিদোনের যুদ্ধ খুব কাছে? আমরা কীভাবে সাড়া দিই যখন আমরা বুঝতে পারি যে হবক্কূকের বইয়ের ২ অধ্যায়ে যে দুষ্টতার কথা বলা হয়েছে তা এখন এতই ছড়িয়ে পড়েছে যে ঈশ্বরের শত্রুদের ধ্বংস অবধারিত? সম্ভবত আমাদের অনুভূতিও হবক্কূকের মতোই হবে, যেমন তা তার ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
হবক্কূক ঈশ্বরের করুণা প্রার্থনা করেন
৩. হবক্কূক কার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন আর এই কথাগুলো আমাদের মনে কীভাবে ছাপ ফেলে?
৩ হবক্কূক ৩ অধ্যায়টা হল একটা প্রার্থনা। ১ পদে এটাকে স্তোত্র অর্থাৎ দুঃখ অথবা বিলাপের এক গীতও বলা হয়। ভাববাদী যেভাবে প্রার্থনা করেছেন তাতে মনে হয় যেন তিনি নিজের জন্যই প্রার্থনা করছিলেন। কিন্তু আসলে, হবক্কূক ঈশ্বরের মনোনীত জাতির জন্য প্রার্থনা করছিলেন। আজকের দিনে তার এই প্রার্থনা ঈশ্বরের লোকেদের বেলায় খাটে যারা রাজ্যের সুখবর প্রচার করার কাজ করছেন। এই কথা মনে রেখে যখন আমরা হবক্কূক ৩ অধ্যায় পড়ি, তখন এর কথাগুলো আমাদেরকে খারাপ খবরের পূর্বাভাস দেয় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আনন্দও দেয়। হবক্কূকের প্রার্থনা অথবা স্তোত্র, আমাদেরকে ত্রাণেশ্বরে আনন্দ করার দৃঢ় কারণ জোগায়।
৪. হবক্কূক কেন ভয় পেয়েছিলেন আর ঈশ্বর তাঁর কোন্ পরাক্রমী শক্তিকে আবার দেখাবেন বলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?
৪ যেমন আমরা ইতিমধ্যেই শুনেছি, হবক্কূকের সময়ে যিহূদার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ঈশ্বর এই অবস্থা চলতে দেবেন না। যিহোবা কাজ করবেন, যেমন অতীতে তিনি করেছিলেন। তাই এতে অবাক হবার কিছু নেই যে ভাববাদী আর্তনাদ করেছিলেন: ‘হে সদাপ্রভু, আমি তোমার বার্ত্তা শুনিলাম, হে সদাপ্রভু, তোমার কর্ম্মে আমি ভীত হইলাম।’ এই কথাগুলো বলে তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? ‘যিহোবার সম্বন্ধে বার্ত্তা’ ছিল ঈশ্বরের পরাক্রমী কাজগুলোর লিখিত ইতিহাস, যেমন লোহিত সমুদ্রে, প্রান্তরে এবং যিরীহোতে তিনি করেছিলেন। এই কাজগুলো সম্বন্ধে হবক্কূক ভালভাবেই জানতেন আর তাই এতে তিনি ভয় পেয়েছিলেন কারণ তিনি জানতেন যে ঈশ্বর আবার তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁর পরাক্রমী শক্তিকে ব্যবহার করবেন। আজকে আমরা যখন লোকেদের দুষ্টতা দেখি, আমরাও বুঝতে পারি যে যিহোবা প্রাচীনকালের মতো আমাদের দিনেও তাঁর পরাক্রমী কাজ করবেন। তাতে কি আমরা ভয় পাব? নিশ্চয়ই! কিন্তু তবুও, আমরা সাহসের সঙ্গে হবক্কূকের মতো প্রার্থনা করব: “বৎসর-সমূহের মধ্যে তোমার কর্ম্ম সজীব কর, বৎসর-সমূহের মধ্যে জ্ঞাত কর; কোপের সময়ে করুণা স্মরণ কর।” (হবক্কূক ৩:২) “বৎসর-সমূহের মধ্যে” অর্থাৎ ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে, তিনি যেন তাঁর অলৌকিক ক্ষমতাকে আবার দেখান। আর সেই সময়, তিনি যেন যারা তাঁকে ভালবাসেন তাদের প্রতি করুণা দেখাতে ভুলে না যান!
যিহোবা এগিয়ে চলেন!
৫. কীভাবে ‘ঈশ্বর তৈমন হইতে আসিয়াছেন’ আর হর্মাগিদোনের সময়ের জন্য এটা কী বোঝায়?
৫ যিহোবা যখন আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন তখন কী ঘটবে? হবক্কূক ৩:৩, ৪ পদে আমরা উত্তর পাই। প্রথমে, ভাববাদী বলেন: “ঈশ্বর তৈমন হইতে আসিতেছেন, পারণ পর্ব্বত হইতে পবিত্রতম আসিতেছেন।” মোশির দিনে, তৈমন ও পারণ ছিল প্রান্তরে অবস্থিত রাস্তা যেখান দিয়ে ইস্রায়েল থেকে কনানে যাওয়া যেত। বিরাট ইস্রায়েল জাতি যখন ওই দীর্ঘ পথ ধরে চলছিল, তখন মনে হয়েছিল যেন যিহোবা নিজেই তাদেরকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আর কোন কিছুই তাঁকে থামাতে পারবে না। মোশি তার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু সীনয় হইতে আসিলেন, সেয়ীর হইতে তাহাদের প্রতি উদিত হইলেন; পারণ পর্ব্বত হইতে আপন তেজ প্রকাশ করিলেন, অযুত অযুত পবিত্রের [দূতেদের] নিকট হইতে আসিলেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩৩:২) হর্মাগিদোনে যিহোবা যখন তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হবেন, তখন সেখানেও তিনি তাঁর সেই পরাক্রমী শক্তি দেখাবেন।
৬. বিচক্ষণ খ্রীষ্টানেরা যিহোবার গৌরব ছাড়াও আর কী দেখেন?
৬ হবক্কূক আরও বলেন: “আকাশমণ্ডল [যিহোবার] প্রভায় সমাচ্ছন্ন, পৃথিবী তাঁহার প্রশংসায় পরিপূর্ণ। তাহার তেজ দীপ্তির তুল্য।” কী চমৎকার এক দৃশ্য! এটা সত্যি যে মানুষ ঈশ্বরকে দেখে বেঁচে থাকতে পারে না। (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০) কিন্তু তবুও, বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা যখন তাঁর চমৎকারিত্বের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, তখন তাদের হৃদয়ের চোখ ধাঁধিয়ে ওঠে। (ইফিষীয় ১:১৮) আর বিচক্ষণ খ্রীষ্টানেরা যিহোবার গৌরব ছাড়াও আরও বেশি কিছু দেখতে পান। হবক্কূক ৩:৪ পদ এই বলে শেষ হয়: “তাঁহার হস্ত হইতে কিরণ নির্গত হয়; ঐ স্থান তাঁহার পরাক্রমের অন্তরাল।” হ্যাঁ, আমরা দেখতে পাই যে শক্তি ও ক্ষমতার দক্ষিণ হাত ব্যবহার করে যিহোবা কাজ করার জন্য তৈরি।
৭. বিদ্রোহীদের জন্য ঈশ্বরের জয়যাত্রার মানে কী?
৭ ঈশ্বরের জয়যাত্রার মানে বিদ্রোহীদের ধ্বংস। হবক্কূক ৩:৫ পদ বলে: “তাঁহার অগ্রে অগ্রে মহামারী চলে, তাঁহার পদচিহ্ন দিয়া জ্বলদঙ্গার গমন করে।” সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সালে, ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশের একেবারে সীমানার কাছে এসে পৌঁছেছিল, তখন অনেকেই বিদ্রোহ করেছিল, অনৈতিকতা ও প্রতিমাপূজায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে, ঈশ্বর মহামারী এনেছিলেন আর এতে ২০,০০০ জন মারা গিয়েছিল। (গণনাপুস্তক ২৫:১-৯) নিকট ভবিষ্যতে, যিহোবা যখন ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধে’ এগিয়ে যাবেন তখন যারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে তারা তাদের পাপের জন্য একইরকম ফল ভোগ করবে। এমনকি কেউ কেউ হয়তো সত্যিকারের মহামারীতে মারা যাবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬.
৮. হবক্কূক ৩:৬ পদ অনুসারে ঈশ্বরের শত্রুদের জন্য সামনে কী রয়েছে?
৮ এখন যিহোবার সক্রিয় সৈন্যবাহিনীদের সম্বন্ধে ভাববাদীর স্পষ্ট বর্ণনা শুনুন। হবক্কূক ৩:৬ পদে আমরা পড়ি: “তিনি [যিহোবা ঈশ্বর] দাঁড়াইয়া পৃথিবীকে পরিমাণ করিলেন, তিনি দৃক্পাত করিয়া জাতিগণকে ত্রাসতাড়িত করিলেন; সনাতন পর্ব্বত সকল খণ্ডবিখণ্ড হইল, চিরন্তন গিরিমালা নত হইল; অনাদিকাল অবধি তাঁহার গতি।” যিহোবা প্রথমে ‘দাঁড়ান,’ যেমন একজন সেনাপতি প্রথমে যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। তাঁর শত্রুরা ভয়ে কেঁপে ওঠে। তারা দেখতে পায় কে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আর তাই ভয় পেয়ে বিচলিত হয়। যীশু বলেছিলেন যে এই সময়, “পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে।” (মথি ২৪:৩০) অনেক দেরিতে তারা বুঝবে যে যিহোবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউই দাঁড়াতে পারে না। মনুষ্য সংগঠনগুলো—এমনকি যেগুলোকে “সনাতন পর্ব্বত” এবং ‘চিরন্তন গিরিমালার’ মতো স্থায়ী বলে মনে হয় সেগুলোও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। প্রাচীনকালে ঈশ্বর যেমন করেছিলেন এটা সেইরকমই ঈশ্বরের ‘অনাদিকাল অবধি গতির’ মতো হবে।
৯, ১০. হবক্কূক ৩:৭-১১ পদের কথাগুলো আমাদের কী মনে করিয়ে দেয়?
৯ যিহোবা তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে ‘ক্রুদ্ধ’ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর মহাযুদ্ধে কী কী অস্ত্র ব্যবহার করবেন? ভাববাদী যেভাবে সেই যুদ্ধাস্ত্রগুলোর বর্ণনা দেয় তা শুনুন: “তোমার ধনুক একেবারে অনাবৃত, বাক্যমূলক দণ্ড সকল শপথ দ্বারা স্থিরীকৃত। তুমি ভূতলকে বিদীর্ণ করিয়া নদনদীময় করিলে। পর্ব্বতগণ তোমাকে দেখিয়া কাঁপিয়া উঠিল, প্রচণ্ড জলরাশি বহিয়া গেল, বারিধি আপন রব উদীর্ণ করিল, আপন হস্তদ্বয় উচ্চে উঠাইল। সূর্য্য ও চন্দ্র স্ব স্ব বাসস্থানে দাঁড়াইয়া থাকিল,—তোমার দ্রুতগামী বাণ-সমূহের দীপ্তিতে, তোমার বজ্ররূপ বড়শার তেজে।”—হবক্কূক ৩:৭-১১.
১০ যিহোশূয়ের দিনে, যিহোবা সূর্য ও চন্দ্রকে স্থির করে দিয়ে তাঁর বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১০:১২-১৪) হবক্কূকের কথাগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে হর্মাগিদোনে যিহোবা এই একই ক্ষমতা দেখাবেন। সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে, পৃথিবীর গভীর জলরাশির ওপর যিহোবা তাঁর ক্ষমতাকে দেখিয়েছিলেন যখন তিনি ফরৌণের সৈন্যবাহিনীকে ধ্বংস করতে লোহিত সমুদ্রকে ব্যবহার করেছিলেন। এর চল্লিশ বছর পর, জর্দন নদীর কানায় কানায় ভরা জলও ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারেনি। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৩:১৫-১৭) ভাববাদিনী দবোরার সময়, প্রবল জলস্রোত ইস্রায়েলের শত্রু সীষরার অশ্বারোহীদের ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৫:২১) হর্মাগিদোনেও এই একই প্রবল জলস্রোত ও গভীর জলরাশি যিহোবার পরাক্রমী শক্তি হিসেবে কাজ করবে। মেঘগর্জন ও বিদ্যুৎও তাঁর হস্তগত, তা ঠিক যেন বাণে ভরা একটা বর্শা অথবা ধনুকের মতো।
১১. যিহোবা যখন তাঁর পরাক্রমী ক্ষমতাকে পুরোপুরি ব্যবহার করবেন তখন কী হবে?
১১ সত্যিই, এটা খুবই ভয়ানক এক দিন হবে যখন যিহোবা তাঁর পরাক্রমী ক্ষমতাকে পুরোপুরি ব্যবহার করবেন। হবক্কূকের কথাগুলো ইঙ্গিত করে যে রাত দিনে পরিণত হবে এবং দিন স্বাভাবিক দিনের চেয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। হর্মাগিদোন সম্বন্ধে এই অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণীর বর্ণনা আক্ষরিক অথবা রূপক যাই হোক না কেন, একটা বিষয় খুবই নিশ্চিত যে যিহোবা জয়ী হবেন আর কোন শত্রুই রেহাই পাবে না।
ঈশ্বরের লোকেদের জন্য পরিত্রাণ নিশ্চিত!
১২. ঈশ্বর তাঁর শত্রুদের কী করবেন আর কারা রক্ষা পাবে?
১২ যিহোবা কীভাবে তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করবেন সে সম্বন্ধে ভাববাদী আরও বর্ণনা করেন। হবক্কূক ৩:১২ পদে আমরা পড়ি: “তুমি ক্রোধে ভূতল দিয়া গমন করিলে, কোপে জাতিগণকে শস্যবৎ মর্দ্দন করিলে।” তাই বলে, যিহোবা এলোপাতাড়িভাবে সকলকে ধ্বংস করবেন না। কিছু মানুষ রক্ষা পাবে। হবক্কূক ৩:১৩ পদ জানায়: “তুমি যাত্রা করিলে,—আপন প্রজাগণের পরিত্রাণার্থে, আপন অভিষিক্ত লোকের পরিত্রাণার্থে।” হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের রক্ষা করবেন। তখন মহতী বাবিল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু আজকে, জাতিগুলো বিশুদ্ধ উপাসনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। শীঘ্রিই গোগ দেশীয় মাগোগের দল ঈশ্বরের দাসেদের আক্রমণ করবে। (যিহিষ্কেল ৩৮:১–৩৯:১৩; প্রকাশিত বাক্য ১৭:১-৫, ১৬-১৮) এই আক্রমণ কি সফল হবে? না! যিহোবা তখন ক্রুদ্ধভাবে তাঁর শত্রুদের, শস্য কলে যেমন শস্য মাড়ানো হয় তেমনি তাঁর পায়ের নিচে তাদেরকে মর্দন করবেন। কিন্তু যারা তাঁকে আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করেন তাদেরকে তিনি রক্ষা করবেন।—যোহন ৪:২৪.
১৩. হবক্কূক ৩:১৩ পদ কীভাবে পূর্ণ হবে?
১৩ এই কথাগুলো থেকে দুষ্টদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার কথা জানা যায়: “তুমি [যিহোবা] দুষ্টের গৃহের মস্তক চূর্ণ করিলে, কণ্ঠদেশ পর্য্যন্ত তাহার মূল অনাবৃত করিলে।” (হবক্কূক ৩:১৩) এই ‘গৃহ’ হল শয়তান দিয়াবলের পরিচালনায় গড়ে ওঠা দুষ্ট বিধিব্যবস্থা। এটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে। “মস্তক” অর্থাৎ ঈশ্বর-বিরোধী নেতাদের শেষ করে দেওয়া হবে। দুষ্ট বিধিব্যবস্থার পুরো কাঠামোকে সমূলে উপড়ে ফেলা হবে। এর আর কোন অস্তিত্বই থাকবে না। এটা কতই না স্বস্তির বিষয় হবে!
১৪-১৬. হবক্কূক ৩:১৪, ১৫ পদ অনুসারে যিহোবার লোক ও তাদের শত্রুদের কী হবে?
১৪ হর্মাগিদোনের যুদ্ধক্ষেত্রে যারা যিহোবার ‘অভিষিক্ত লোকেদের’ ধ্বংস করার চেষ্টা করবে তারা নিজেরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে। হবক্কূক ৩:১৪, ১৫ পদে ভাববাদী যিহোবাকে জানান: “তুমি তাহার যোদ্ধাদের মস্তক তাহারই দণ্ড দ্বারা বিদ্ধ করিলে; তাহারা ঘূর্ণ্যবায়ুর ন্যায় আমাকে ছিন্নভিন্ন করিতে আসিয়াছিল; তাহারা দুঃখীকে গোপনে গ্রাস করিতে আনন্দ করিত। তুমি আপন অশ্বগণ লইয়া সমুদ্র দিয়া গমন করিলে। সেই মহাজলরাশি দিয়া গমন করিলে।”
১৫ যখন হবক্কূক বলেন যে ‘যোদ্ধারা . . . ঘূর্ণ্যবায়ুর ন্যায় আমাকে ছিন্নভিন্ন করিতে আসিয়াছিল,’ তখন ভাববাদী যিহোবার অভিষিক্ত দাসেদের সম্বন্ধে বলছিলেন। পথের মধ্যে দস্যু যেমন ওঁত পেতে বসে থাকে, তেমনই জাতিগুলো ঈশ্বরের লোকেদের ধ্বংস করার জন্য হঠাৎ করে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। ঈশ্বরের এই শত্রুরা “আনন্দ” করবে এই ভেবে যে তাদের জয় সুনিশ্চিত। বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের তখন ‘দুঃখীর’ মতো দুর্বল দেখাবে। কিন্তু ঈশ্বর-বিরোধী এই বাহিনী যখন আক্রমণ শুরু করবে, তখন যিহোবা তাদেরকে এমনভাবে বিভ্রান্ত করবেন যে তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করবে। তারা তাদের অস্ত্র অর্থাৎ “দণ্ড” তাদের নিজেদের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে।
১৬ কিন্তু আরও কিছু ঘটবে। যিহোবা তাঁর শত্রুদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে মানুষদের চেয়েও শক্তিশালী আত্মিক বাহিনীকে ব্যবহার করবেন। যীশু খ্রীষ্টের নেতৃত্বে তাঁর স্বর্গীয় বাহিনীর ‘অশ্বদের’ নিয়ে বিজয়ী হিসেবে তিনি “সমুদ্র” এবং “মহাজলরাশি” অর্থাৎ শত্রুভাবাপন্ন মানুষের স্তূপের মধ্যে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১) আর তখনই দুষ্টদের চিরকালের জন্য পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। ঐশিক ন্যায়বিচার কত স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাবে!
যিহোবার দিন আসছে!
১৭. (ক) আমরা কেন নিশ্চিত থাকতে পারি যে হবক্কূকের কথাগুলো পরিপূর্ণ হবেই? (খ) যিহোবার মহাদিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা কীভাবে হবক্কূকের মতো হতে পারি?
১৭ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে খুব শীঘ্রিই হবক্কূকের কথাগুলো পরিপূর্ণ হবে। তা বিলম্ব করবে না। আগে থেকে এই কথা জানতে পেরে আপনি কীভাবে সাড়া দেবেন? মনে রাখবেন হবক্কূক ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় কথাগুলো লিখেছিলেন। যিহোবা কাজ করবেনই করবেন আর যখন সেটা ঘটবে তখন পৃথিবীতে মহা ধ্বংসলীলা চলবে। তাই ভাববাদীর লেখা এই কথাগুলো শুনে অবাক হবার কিছু নেই: “আমি শুনিলাম, আমার অন্তর কাঁপিয়া উঠিল, সেই রবে আমার ওষ্ঠাধর বিকম্পিত হইল, আমার অস্থিতে পচন প্রবেশ করিল, আমি স্বস্থানে কম্পিত হইলাম, কারণ আমাকে বিশ্রাম করিতে হইবে, সঙ্কটের দিনের অপেক্ষায়, যখন আক্রমণকারী আসিবে লোকদের বিরুদ্ধে।” (হবক্কূক ৩:১৬) হবক্কূক খুবই বিচলিত হয়েছিলেন আর তা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তার বিশ্বাস কি কেঁপে গিয়েছিল? একেবারেই নয়! তিনি নীরবে যিহোবার দিনের অপেক্ষায় থাকতে ইচ্ছুক ছিলেন। (২ পিতর ৩:১১, ১২) আমাদের মনোভাবও কি এই একইরকম নয়? অবশ্যই! আমরা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি যে হবক্কূকের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হবেই। কিন্তু তা না আসা পর্যন্ত, আমাদেরকে ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে।
১৮. হবক্কূক যদিও জানতেন যে কষ্ট আসবে, তবুও তিনি কেমন মনোভাব দেখিয়েছিলেন?
১৮ যুদ্ধবিগ্রহ সবসময়েই কষ্ট নিয়ে আসে, এমনকি শেষ পর্যন্ত যারা জয়ী হন তাদের জন্যও। খাদ্যের আকাল দেখা দিতে পারে। সম্পত্তি নষ্ট হতে পারে। জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে যেতে পারে। আমাদের প্রতি যদি এইরকম ঘটে, তাহলে আমরা কেমন মনে করব? এই ব্যাপারে হবক্কূক এক উদাহরণযোগ্য মনোভাব দেখিয়েছিলেন কারণ তিনি বলেছিলেন: “যদিও ডুমুরবৃক্ষ পুষ্পিত হইবে না, দ্রাক্ষালতায় ফল ধরিবে না, জিতবৃক্ষ ফলদানে বঞ্চনা করিবে, ও ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হইবে না, খোঁয়াড় হইতে মেষপাল উচ্ছিন্ন হইবে, গোষ্ঠে গোরু থাকিবে না; তথাপি আমি সদাপ্রভুতে আনন্দ করিব, আমার ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হইব।” (হবক্কূক ৩:১৭, ১৮) হবক্কূক প্রকৃতই কষ্ট, সম্ভবত দুর্ভিক্ষ আশা করেছিলেন। তবুও, তিনি কখনও যিহোবা, যাঁর কাছ থেকে তার পরিত্রাণ আসবে তাঁকে সেবা করার আনন্দকে হারিয়ে ফেলেননি।
১৯. অনেক খ্রীষ্টানেরা কীরকম কষ্ট ভোগ করেন কিন্তু আমরা যদি যিহোবাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দিই, তাহলে আমরা কোন্ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি?
১৯ এমনকি আজকে, দুষ্টদের বিরুদ্ধে যিহোবার যুদ্ধের আগেই অনেকে নিদারুণ কষ্টভোগ করছেন। যীশু অনেক আগে থেকেই জানিয়েছিলেন যে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প এবং রোগব্যাধি হবে রাজকীয় ক্ষমতায় তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন। (মথি ২৪:৩-১৪; লূক ২১:১০, ১১) যীশুর এই কথাগুলো পরিপূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন দেশে আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন। অন্যেরা হয়তো ভবিষ্যতে এইরকম কষ্ট ভোগ করবেন। শেষ আসার আগে আমাদের মধ্যে অনেকের জন্য হয়তো এমন ঘটতে পারে যে ‘ডুমুরবৃক্ষ পুষ্পিত হবে না।’ কিন্তু আমরা ভালভাবে জানি যে কেন এগুলো ঘটছে আর তা আমাদের শক্তি জোগায়। এছাড়াও, আমাদের সাহায্য আছে। যীশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:৩৩) এটা আমাদের আরামদায়ক জীবনের নিশ্চয়তা দেয় না কিন্তু এটা আমাদের এই আশ্বাস দেয় যে আমরা যদি যিহোবাকে আমাদের জীবনে প্রথমে স্থান দিই, তাহলে তিনি আমাদের যত্ন নেবেন।—গীতসংহিতা ৩৭:২৫.
২০. কষ্ট সত্ত্বেও আমরা কেন ভেঙে পড়ব না?
২০ তাই, অল্প সময়ের জন্য যে ধরনের কষ্টের মুখোমুখিই আমরা হই না কেন, আমরা ভেঙে পড়ব না অথবা যিহোবার রক্ষা করার ক্ষমতায় বিশ্বাস হারাবো না। আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং অন্যান্য জায়গায় আমাদের অনেক ভাইবোনদের নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয় কিন্তু তারা ‘সদাপ্রভুতেই আনন্দ করা’ চালিয়ে যান। আমরাও যেন তাদের মতো সেইরকম করি। মনে রাখবেন যে সার্বভৌম প্রভু যিহোবাই হলেন আমাদের ‘বলের’ উৎস। (হবক্কূক ৩:১৯) তিনি আমাদেরকে কখনোই নিরাশ করবেন না। হর্মাগিদোন আসবেই আসবে আর কোন সন্দেহ নেই যে এরপর নতুন জগৎও আসবে। (২ পিতর ৩:১৩) তখন “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমাবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (হবক্কূক ২:১৪) কিন্তু সেই সময় না আসা পর্যন্ত, আসুন আমরা হবক্কূকের উদাহরণ অনুসরণ করি। আসুন আমরা সবসময় ‘যিহোবাতে আনন্দ করি, আমাদের ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হই।’
আপনার কি মনে আছে?
• হবক্কূকের প্রার্থনা আমাদের ওপর কীভাবে ছাপ ফেলে?
• কেন যিহোবা এগিয়ে আসছেন?
• হবক্কূকের ভবিষ্যদ্বাণী পরিত্রাণ সম্বন্ধে কী বলে?
• কোন্ মনোভাব নিয়ে আমাদের যিহোবার মহাদিনের জন্য অপেক্ষা করা উচিত?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি জানেন যে হর্মাগিদোনে ঈশ্বর দুষ্টদের বিরুদ্ধে কাদের ব্যবহার করবেন?