আপনি কি যীশুর মতো কাজ করতে চান?
আপনি কি যীশুর মতো কাজ করতে চান?
“যীশু . . . বিস্তর লোক দেখিয়া তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা পালক-বিহীন মেষপালের ন্যায় ছিল; আর তিনি তাহাদিগকে . . . শিক্ষা দিতে লাগিলেন।”—মার্ক ৬:৩৪.
১. কেন লোকেদের মধ্যে অনেক ভাল গুণ দেখতে পাওয়া যায়?
ইতিহাস জুড়ে, অনেক লোকেরাই অনেক ভাল গুণ দেখিয়েছেন। কেন তা আপনি জানেন। যিহোবা ঈশ্বরের প্রেম, দয়া, উদারতা ও আরও অন্যান্য গুণ রয়েছে, যে গুণগুলোকে আমরা শ্রদ্ধা করি। মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তাই আমরা বুঝতে পারি যে কেন অনেকেই প্রেম, দয়া, করুণা ও ঈশ্বরের অন্যান্য গুণগুলো দেখান আর অনেকেই তাদের বিবেক যা বলে সেই মতো কাজ করেন। (আদিপুস্তক ১:২৬; রোমীয় ২:১৪, ১৫) আবার আপনি হয়তো এও দেখতে পান যে কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে আরও সহজেই ও বেশি করে এই গুণগুলো দেখান।
২. লোকেরা কোন্ ভাল কাজগুলো করেন আর ভাবেন যে তারা যীশুর মতোই কাজ করছেন?
২ আপনি হয়তো এমন অনেক লোকেদের চেনেন যারা অসুস্থদের দেখতে যান অথবা তাদের সেবাযত্ন করেন, পঙ্গু ব্যক্তিদেরকে দয়া দেখিয়ে তাদের জন্য কিছু করতে চান অথবা গরিব লোকেদের অকাতরে দান করেন। এছাড়া সেই লোকেদের কথাও ভেবে দেখুন যারা তাদের সারাটা জীবন কুষ্ঠ হাসপাতালে অথবা অনাথ আশ্রমে সেবা করে কাটিয়ে দেন, যারা হাসপাতালে বা বিভিন্ন সেবাসদনে গিয়ে কাজ করেন কিংবা গৃহহীন অথবা শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য মনপ্রাণ উৎসর্গ করেন। তাদের কেউ কেউ হয়তো মনে করেন যে তারা যীশুর মতোই কাজ করছেন, যিনি খ্রীষ্টানদের জন্য আদর্শ রেখে গেছেন। আমরা সুসমাচারের বইয়ে পড়ি যে খ্রীষ্ট অসুস্থ লোকেদের সুস্থ করেছিলেন ও ক্ষুধার্ত লোকেদের খাইয়েছিলেন। (মার্ক ১:৩৪; ৮:১-৯; লূক ৪:৪০) যীশু যে প্রেম, দরদ এবং দয়া দেখিয়েছিলেন তার থেকে আমরা ‘খ্রীষ্টের মনকে’ দেখতে পাই, যিনি আসলে তাঁর স্বর্গীয় পিতার মতোই কাজ করতেন।—১ করিন্থীয় ২:১৬.
৩. যীশু কেন ভাল কাজগুলো করেছিলেন তা বোঝার জন্য আমাদের কোন্ বিষয়টা দেখা দরকার?
৩ কিন্তু আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে আজকে যে লোকেরা যীশুর ভালবাসা ও দয়াকে বোঝেন, যারা তাঁর মতো কাজ করতে চান তারা খ্রীষ্টের মনের একটা বড় দিককে খেয়ালই করেন না? মার্ক ৬ অধ্যায়টা একটু ভালভাবে দেখলে আমরা কিন্তু এই বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারি। আমরা সেখানে পড়ি যে লোকেরা অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে সুস্থ করার আশায় যীশুর কাছে নিয়ে এসেছিল। ওই ঘটনা থেকে আমরা এও জানতে পাই যে হাজার হাজার লোকেরা যারা তাঁর কাছে এসেছিল তাদেরকে ক্ষুধার্ত দেখে যীশু অলৌকিকভাবে তাদেরকে খাইয়েছিলেন। (মার্ক ৬:৩৫-৪৪, ৫৪-৫৬) অসুস্থদের সুস্থ করে এবং ক্ষুধার্ত লোকেদের খাইয়ে যীশু লোকেদের জন্য তাঁর ভালবাসা ও দয়া দেখিয়েছিলেন কিন্তু তিনি কি শুধু এটুকুই করেছিলেন? আর যিহোবাকে অনুকরণ করে যীশু যেভাবে লোকেদের প্রেম, দয়া ও করুণা দেখিয়েছিলেন আমরা কীভাবে সবচেয়ে ভালভাবে তা দেখাতে পারি?
আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটানো
৪. মার্ক ৬:৩০-৩৪ পদের ঘটনা কোন্ পরিবেশে ঘটেছিল?
৪ যীশু কেন লোকেদের জন্য করুণাবিষ্ট হয়েছিলেন তার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল যে তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা ছিল। আর শারীরিক চাহিদার চেয়ে আধ্যাত্মিক চাহিদাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল। মার্ক ৬:৩০-৩৪ পদের ঘটনাটার কথা চিন্তা করুন। ঘটনাটা ঘটেছিল গালীল সাগরের তীরে, সা.কা. ৩২ সালের নিস্তারপর্বের কাছাকাছি সময়ে। প্রেরিতেরা উত্তেজনা বোধ করছিলেন আর সেটাই স্বাভাবিক। কারণ সবেমাত্র এক বিরাট ভ্রমণ শেষ করে তারা যীশুর কাছে এসেছিলেন, কোন সন্দেহ নেই যে তারা তাদের অভিজ্ঞতাগুলো যীশুর কাছে বলার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু অনেক অনেক লোক সেখানে এসে জমা হয়। ভীড় এত বেশি ছিল যে যীশু ও তাঁর প্রেরিতেরা না খেতে পেরেছিলেন, না বিশ্রাম নিতে পেরেছিলেন। তাই যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।” (মার্ক ৬:৩১) হয়তো কফরনাহূমের কাছ থেকে একটা নৌকায় চড়ে তারা গালীল সাগরের ওপারে এক নিরিবিলি জায়গায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লোকেরা তীর দিয়ে হেঁটে নৌকার আগেই সেখানে পৌঁছে যায়। এই লোকেদের দেখে যীশু কী করেছিলেন? তাদের একটু নিরিবিলিতে সময় কাটানোর উপায়ও নেই ভেবে তিনি কি বিরক্ত হয়েছিলেন? একেবারেই না!
৫. যে লোকেরা তাঁর কাছে এসেছিলেন তাদের দেখে যীশু কেমন অনুভব করেছিলেন আর তিনি তাদের জন্য কী করেছিলেন?
৫ এই হাজার হাজার লোকেদের দেখে যীশুর দয়া হয়েছিল কারণ তাদের মধ্যে অনেক অসুস্থ লোকেরাও ছিল যারা তাঁর জন্য অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করে ছিল। (মথি ১৪:১৪; মার্ক ৬:৪৪) কেন যীশুর সেই লোকেদের ওপর দয়া হয়েছিল আর তিনি কী করেছিলেন সে বিষয়ে বলতে গিয়ে মার্ক লিখেছিলেন: “যীশু . . . বিস্তর লোক দেখিয়া তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা পালক-বিহীন মেষপালের ন্যায় ছিল; আর তিনি তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগিলেন।” (মার্ক ৬:৩৪) যীশু শুধু সেই লোকদের বড় এক ভীড়কেই দেখেননি। তিনি আলাদা আলাদাভাবে এক একজন লোককে দেখেছিলেন যাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা ছিল। তারা ছিন্নভিন্ন মেষেদের মতো ছিল, যাদেরকে সবুজ ঘাসের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অথবা যাদেরকে রক্ষা করার জন্য কোন মেষপালক ছিল না। যীশু জানতেন যে অন্ধ ধর্মীয় নেতারা যাদের আসলে এই লোকেদের পালক হওয়ার কথা ছিল, তারা এই সাধারণ লোকেদের ঘৃণা করত, তাদের নিচু চোখে দেখত ও তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদার দিকে ফিরেও তাকাতো না। (যিহিষ্কেল ৩৪:২-৪; যোহন ৭:৪৭-৪৯) কিন্তু যীশু তাদের সঙ্গে অন্যরকম ব্যবহার করেছিলেন, তিনি তাদের জন্য এমন কিছু করেছিলেন যাতে তাদের মঙ্গল হয়। তিনি তাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলেন।
৬, ৭. (ক) যীশু লোকেদের কোন্ চাহিদাকে প্রথমে মিটিয়েছিলেন বলে সুসমাচারের বইগুলো বলে? (খ) লোকেদের কাছে প্রচার করা ও তাদের শিক্ষা দেওয়ার সময় যীশুর মনে কোন্ বিষয়টা ছিল?
৬ লূক যখন এই একই ঘটনা লিখেছিলেন সেখানে বিষয়গুলোকে কীভাবে সাজানো হয়েছে ও এর থেকে আমরা কী বুঝতে পারি তা দেখুন। লূক একজন ডাক্তার ছিলেন আর অন্যদের শারীরিক সুস্থতার দিকে তাঁর বেশি নজর ছিল। “লোকেরা . . . তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিল, আর তিনি তাহাদিগকে সদয় ভাবে গ্রহণ করিয়া তাহাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় কথা কহিলেন, এব যাহাদের সুস্থ হইবার প্রয়োজন ছিল, তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (লূক ৯:১১; কলসীয় ৪:১৪) যদিও সমস্ত অলৌকিক ঘটনা লেখার সময় এমনটা লেখা হয়নি কিন্তু এই সময় লূক প্রথমে কোন্ বিষয়টাকে লিখেছিলেন? তিনি লিখেছিলেন যে যীশু লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন।
৭ মার্ক ৬:৩৪ পদে যে বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এখানেও সেই বিষয়ই লেখা হয়েছিল। ওই পদ পরিষ্কারভাবে দেখায় যে কীভাবে যীশু লোকেদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। তিনি লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো মিটিয়েছিলেন। তাঁর প্রচার কাজের প্রথম দিকে যীশু বলেছিলেন: “অন্য অন্য নগরে আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি।” (লূক ৪:৪৩) কিন্তু, তাই বলে আমরা যদি মনে করি যে যীশু প্রচার কাজকে, রাজ্যের বার্তা ঘোষণাকে নিছক কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন ও তিনি যন্ত্রের মতো প্রচার করেছিলেন, তাহলে আমরা ভুল করব। কিন্তু, লোকেদেরকে তিনি এতটাই ভালবাসতেন, তাদের করুণ অবস্থা দেখে তিনি এতটাই দুঃখিত হয়েছিলেন যে তিনি তাদেরকে সুসমাচার শুনিয়েছিলেন। অসুস্থ, ভূতে পাওয়া, গরিব অথবা ক্ষুধার্ত লোকেদের চির মঙ্গল যীশু করেছিলেন কারণ তিনি তাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের সত্য সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন, তার ওপর বিশ্বাস আনতে সাহায্য করেছিলেন আর তার জন্য ভালবাসা গড়ে তুলতে শিখিয়েছিলেন। কারণ রাজ্যই ছিল সেই মাধ্যম যা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করবে ও মানুষদের জন্য চিরকালীন আশীর্বাদ আনবে।
৮. প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজ যীশুর জীবনে কোন্ স্থানে ছিল?
৮ যীশুর পৃথিবীতে আসার একটা মূল কারণ ছিল এই রাজ্য সম্বন্ধে সবার কাছে প্রচার করা। পৃথিবীতে তাঁর প্রচার কাজের একেবারে শেষ মুহূর্তে যীশু পীলাতকে বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেহ সত্যের, সে আমার রব শুনে।” (যোহন ১৮:৩৭) আগের দুটো প্রবন্ধে আমরা দেখেছি যে যীশু একজন দরদি ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন, তাঁর কাছে সহজে যাওয়া যেত, তিনি অন্যের অবস্থাকে বুঝতেন, তাঁর ওপর ভরসা করা যেত আর সবচেয়ে বড় বিষয় হল তিনি লোকেদের ভালবাসতেন। তাই আমরা যদি সত্যি সত্যিই খ্রীষ্টের মন জানতে চাই, তাহলে তাঁর ব্যক্তিত্বের ওই দিকগুলোকে আমাদের উপলব্ধি করা দরকার। আর সেইসঙ্গে এই বিষয়টাও বোঝা সমানভাবে জরুরি যে খ্রীষ্টের মন বলতে প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজকে প্রথমে রাখা বোঝায় আর যীশুর জীবনেও এটাই প্রথমে ছিল।
তিনি অন্যদেরকে প্রচার করতে বলেছিলেন
৯. আর কাদের প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজকে প্রথমে রাখতে হয়েছিল?
৯ প্রেম ও করুণা দেখিয়ে প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়ার কাজকে প্রথমে রাখা শুধু যীশুর একার জন্য ছিল না। তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন যে তারা যেন তাঁকে অনুকরণ করেন, তাঁর মনোভাব, তিনি যে বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখেন ও তিনি যেভাবে কাজ করেন তারাও যেন সেইরকমই করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যীশু তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে মনোনীত করার পর, তাদের কী করতে হয়েছিল? মার্ক ৩:১৪, ১৫ পদ আমাদের জানায়: “তিনি বারো জনকে নিযুক্ত করিলেন, যেন তাঁহারা তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে থাকেন, ও যেন তিনি তাঁহাদিগকে প্রচার করিবার জন্য প্রেরণ করেন, এবং যেন তাঁহারা ভূত ছাড়াইবার ক্ষমতা প্রাপ্ত হন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন যে প্রেরিতদের তিনি কোন্ বিষয়টা প্রথমে রাখতে বলেছিলেন?
১০, ১১. (ক) প্রেরিতদেরকে প্রচারে পাঠানোর সময় যীশু তাদেরকে কী বলেছিলেন? (খ) প্রেরিতদেরকে পাঠানোর সময়ে কোন্ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল?
১০ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যীশু ১২ জনকে অন্যদের সুস্থ করার ও ভূত ছাড়ানোর ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (মথি ১০:১; লূক ৯:১) এরপর তিনি তাদেরকে “ইস্রায়েল-কূলের হারান মেষগণের কাছে” পাঠিয়েছিলেন। কেন? যীশু তাদেরকে বলেছিলেন: “তোমরা যাইতে যাইতে এই কথা প্রচার কর, ‘স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’। পীড়িতদিগকে সুস্থ করিও, মৃতদিগকে উত্থাপন করিও, কুষ্ঠীদিগকে শুচী করিও, ভূতদিগকে ছাড়াইও।” (মথি ১০:৫-৮; লূক ৯:২) আসলে, তারা কী করেছিলেন? “পরে তাঁহারা প্রস্থান করিয়া [১] এই কথা প্রচার করিলেন যে, লোকেরা মন ফিরাউক। আর [২] তাঁহারা অনেক ভূত ছাড়াইলেন, ও অনেক পীড়িত লোককে তৈল মাখাইয়া তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন।”—মার্ক ৬:১২, ১৩.
১১ এটা সত্যি যে প্রত্যেকটা ঘটনাতে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়নি, তাই আমরা কি ধরে নেব যে শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টা তাহলে গুরুত্বপূর্ণ নয়? (লূক ১০:১-৯) কিন্তু আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে অনেক জায়গাতেই অলৌকিক কাজের কথা বলার আগে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ের কথাই ভেবে দেখুন যেটা সম্বন্ধে আমরা এখন আলোচনা করছি। ১২ জন প্রেরিতকে পাঠানোর কিছুক্ষণ আগে লোকেদের অবস্থা দেখে যীশু দুঃখিত হয়েছিলেন। আমরা পড়ি: “যীশু সমস্ত নগরে ও গ্রামে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার ব্যাধি আরোগ্য করিলেন। কিন্তু বিস্তর লোক দেখিয়া তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল। তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন।”—মথি ৯:৩৫-৩৮.
১২. যীশু ও তাঁর প্রেরিতদের আশ্চর্য কাজ লোকেদের সাহায্য করা ছাড়া আরও বেশি কী করেছিল?
১২ যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে থেকে প্রেরিতেরা নিশ্চয়ই খ্রীষ্টের মন কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে লোকেদের জন্য সত্যিকারের প্রেম ও করুণা দেখাতে চাইলে তাদের কাছে রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতে ও শিক্ষা দিতে হবে। তাদের ভাল কাজের সবচেয়ে বড় দিক ছিল সেটাই। কিন্তু এর সঙ্গেই অন্য ভাল কাজ যেমন, অসুস্থদের সুস্থ করা শুধু সেই অভাবী লোকেদের সাহায্যই করেনি, এটা আরও বেশি কিছু করেছিল। কারণ আপনি জানেন যে কেউ কেউ শুধু সুস্থ হওয়ার ও অলৌকিকভাবে জোগানো খাবার খেয়ে তাদের খিদে মেটানোর জন্যই যীশুর কাছে এসেছিল। (মথি ৪:২৪, ২৫; ৮:১৬; ৯:৩২, ৩৩; ১৪:৩৫, ৩৬; যোহন ৬:২৬) কিন্তু, শুধু শারীরিকভাবে সাহায্য করা ছাড়াও ওই কাজগুলো আসলে লোকেদের বুঝিয়েছিল যে যীশুই ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনিই “সেই ভাববাদী” যাঁর বিষয়ে মোশি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।—যোহন ৬:১৪; দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫.
১৩. দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৮ পদে ভাববাদী প্রধানত কোন্ কাজ করবেন বলে ভাববাণী করা হয়েছিল?
১৩ যীশু “সেই ভাববাদী” ছিলেন তা কেন এক বিশেষ বিষয় ছিল? যীশু খ্রীষ্ট প্রধানত কোন্ কাজ করবেন বলে ভাববাণী করা হয়েছিল? অলৌকিকভাবে সুস্থ করা অথবা করুণা দেখিয়ে ক্ষুধার্তদের খাওয়ানোই কি ‘ভাববাদীর’ প্রধান কাজ ছিল? দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৮ পদে ভাববাণী করা হয়েছিল: “আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার [মোশির] সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন।” তাই প্রেরিতেরা কোমল ও দরদি হতে শেখার সঙ্গে সঙ্গে এও জানতেন যে প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে তাদের খ্রীষ্টের মন দেখাতে হবে। আর সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি মঙ্গলজনক যা তারা অন্যদের জন্য করতে পারেন। আর এতে অসুস্থ ও গরিব লোকেরা চিরকালীন উপকার লাভ করতে পারবে, শুধু তাদের ছোট্ট জীবন বা এক দুবেলার খাবার নয়।—যোহন ৬:২৬-৩০.
আজকে খ্রীষ্টের মন গড়ে তুলুন
১৪. প্রচার করার সঙ্গে খ্রীষ্টের মন গড়ে তোলা কীভাবে জড়িত?
১৪ আমরা এমন মনে করব না যে শুধু প্রথম শতাব্দীতে অর্থাৎ যীশু ও তাঁর প্রাথমিক শিষ্যদেরই খ্রীষ্টের মন গড়ে তুলতে হতো যাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টের মন আমাদের আছে।” (১ করিন্থীয় ২:১৬) বরং আমরা খুব ভাল করে জানি যে সুসমাচার প্রচার করা এবং শিষ্য তৈরি করা আমাদের এক বড় দায়িত্ব। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) কিন্তু তবুও এই কাজ আমরা কেন করছি সেই বিষয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত। নিছক কর্তব্য হিসেবে এটাকে আমাদের দেখা উচিত না। ঈশ্বরের জন্য ভালবাসাই হল প্রচার করার মূল কারণ আর সত্যি সত্যিই আমরা যদি যীশুর মতো হতে চাই, তাহলে আমরা লোকেদের অবস্থা দেখে করুণাবিষ্ট হব আর প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজ করব।—মথি ২২:৩৭-৩৯.
১৫. প্রচার কাজের পিছনে করুণা থাকা কেন দরকার?
১৫ এটা মানতেই হবে যে প্রচারে যারা আমাদের কথা শুনতে চান না, আমাদেরকে চলে যেতে বলেন অথবা আমাদের বিরোধিতা করেন তাদের অবস্থার জন্য করুণাবিষ্ট হওয়া সহজ নয়। কিন্তু, আমরা যদি লোকেদের জন্য আমাদের প্রেম ও করুণা হারিয়ে ফেলি, তাহলে প্রচার করার পিছনে আমাদের একটা বড় কারণকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি। তাহলে, কীভাবে আমরা অন্যদের জন্য করুণা দেখাতে পারি? আমরা লোকেদেরকে যীশুর মতো করে দেখতে চেষ্টা করতে পারি যে তারা ‘ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন, যেন পালকবিহীন মেষপাল।’ (মথি ৯:৩৬) আজকে অনেকের অবস্থাই কি এইরকম নয়? মিথ্যা ধর্মীয় নেতারা তাদেরকে অবহেলা করেছে এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তাদের অন্ধকারে রেখেছে। ফলে, তারা জানে না যে বাইবেল আমাদের কোন্ পথে নিয়ে যায় আর ঈশ্বরের রাজ্য খুব তাড়াতাড়ি এই পৃথিবীতে পরমদেশ নিয়ে আসবে। তারা রোজকার জীবনের দুঃখকষ্টগুলোর মুখোমুখি হয়—তারা দরিদ্রতা ভোগ করে, তাদের পরিবার ভেঙে যায়, তারা অসুস্থতা ভোগ করে ও মৃত্যু তাদের জীবনকে একেবারে শেষ করে দেয় কারণ তাদের কাছে কোন আশা নেই। তাদের যা দরকার সেগুলো আমাদের কাছে রয়েছে: তা হল স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার, যে সুসমাচার তাদের জীবন রক্ষা করবে!
১৬. আমরা কেন অন্যদেরকে সুসমাচার জানাতে চাই?
১৬ তাই আপনি যখন আপনার আশেপাশের লোকেদের আধ্যাত্মিক চাহিদার বিষয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনি কি তাদেরকে ঈশ্বর তাদের রক্ষা করতে চান তা জানানোর জন্য মন থেকে তাগিদ অনুভব করেন না? হ্যাঁ, আমাদের লোকেদেরকে করুণা দেখানো দরকার। আমরা যখন লোকেদেরকে যীশুর মতো করে দেখি, তাঁর মতো করে বুঝি, তখন তা আমাদের গলার স্বর, মুখের ভাব এবং আমাদের শেখানোর কায়দাতেই ফুটে উঠবে। আর তাহলেই আমরা আমাদের বার্তা নিয়ে সেই লোকেদের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারব যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত।”—প্রেরিত ১৩:৪৮.
১৭. (ক) কোন্ কাজগুলো করে আমরা অন্যদের প্রতি প্রেম ও করুণা দেখাতে পারি? (খ) ভাল কাজ করা ও প্রচার করা কেন একটা অন্যটার বিকল্প নয়?
১৭ অবশ্যই আমাদের সমস্ত আচার ব্যবহারের মধ্যেই প্রেম ও করুণা ফুটে ওঠা উচিত। আর তাই আমাদের অভাবী, অসুস্থ ও গরিব লোকেদেরকে দয়া দেখানো অর্থাৎ তাদের দুঃখকষ্ট লাঘব করার জন্য আমরা যতটুকু করতে পারি তা করা উচিত। এছাড়া যাদের প্রিয়জনেরা মারা গেছেন আমরা তাদের শোক কমানোর জন্য সান্ত্বনা দিতে পারি, তাদের জন্য কোন ভাল কাজ করতে পারি। (লূক ৭:১১-১৫; যোহন ১১:৩৩-৩৫) কিন্তু, প্রেম, দয়া ও করুণা দেখানোই আমাদের জন্য সব নয় যেমন কিছু কিছু মানবদরদি লোকেরা মনে করেন। কিন্তু এই গুণগুলোকেই কাজে লাগিয়ে যদি আমরা প্রচার করি ও শিক্ষা দিই তাহলে তা লোকেদের আরও বেশি ভাল করবে। মনে করে দেখুন যে যীশু যিহুদি ধর্মীয় নেতাদেরকে কী বলেছিলেন: “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা পোদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়া থাক; আর ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছ; কিন্তু এ সকল পালন করা, এবং ঐ সকলও পরিত্যাগ না করা, তোমাদের উচিত ছিল।” (মথি ২৩:২৩) যীশু মনে করেননি যে হয় তিনি লোকেদের শারীরিক চাহিদাগুলো মেটাবেন নয়তো আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো শিখিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করবেন। যীশু দুটোই করেছিলেন। তবুও শিক্ষা দেওয়ার কাজই তাঁর কাছে বেশি জরুরি ছিল কারণ এটা করেই তিনি লোকেদের জন্য চিরকালীন মঙ্গল করেছিলেন।—যোহন ২০:১৬.
১৮. খ্রীষ্টের মন নিয়ে চিন্তা করলে কী করার ইচ্ছা আমাদের হবে?
১৮ আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে যিহোবা আমাদের কাছে খ্রীষ্টের মন প্রকাশ করেছেন! সুসমাচারের লেখকেরা আমাদের জানিয়েছেন যে সর্বকালের সর্বমহান পুরুষ কীভাবে চিন্তা করতেন, কেমন অনুভব করতেন, কোন্ কোন্ গুণ তিনি দেখিয়েছিলেন, কী কী কাজ তিনি করেছিলেন ও কোন্ বিষয়টা তাঁর জীবনে প্রথমে ছিল। তাই এখন আমাদের ওপর এই দায়িত্ব এসে পড়ে যে আমরা বাইবেলে যীশুর বিষয়ে যা বলা হয়েছে তা পড়ি, ধ্যান করি ও নিজেরাও যীশুর মতো করে চলার চেষ্টা করি। ভেবে দেখুন যে আমরা যদি সত্যিই যীশুর মতো কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের প্রথমে তাঁর মতো চিন্তা করতে হবে, অনুভব করতে হবে ও তাঁর মতো করে বিষয়গুলোকে দেখতে হবে। আর অসিদ্ধ হওয়ায় আমাদের দিয়ে যতটুকু হয় তার সবটুকু করার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। তাই আসুন আমরা খ্রীষ্টের মন গড়ে তোলার ও আমাদের জীবনে তা দেখানোর জন্য সংকল্প নিই। আর যদি আমরা খ্রীষ্টের মন গড়ে তুলি তাহলে তার চেয়ে ভাল জীবন, তার চেয়ে ভালভাবে অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করা আর আমাদের ও অন্যদের জন্য তার চেয়ে ভালভাবে আমাদের দয়ালু ঈশ্বর যিহোবার কাছে আসা বোধ হয় আর কিছু হতে পারে না, কারণ খ্রীষ্ট তাঁর পিতাকে একেবারে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছিলেন।—২ করিন্থীয় ১:৩; ইব্রীয় ১:৩.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• অভাবী লোকেদের জন্য যীশু কী করেছিলেন সে বিষয়ে বাইবেল আমাদের কী বলে?
• শিষ্যদের শিক্ষা দেওয়ার সময় যীশু কোন্ বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন?
• কীভাবে আমরা আমাদের কাজের মধ্যে দিয়ে “খ্রীষ্টের মন” দেখাতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৩ পৃষ্ঠার পূর্ণ পৃষ্ঠা জুড়ে চিত্র]
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
সবচেয়ে ভাল কাজ কী যা খ্রীষ্টানেরা অন্যদের জন্য করতে পারেন?