সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নম্রতা—এমন এক গুণ যা শান্তি বাড়ায়

নম্রতা—এমন এক গুণ যা শান্তি বাড়ায়

নম্রতাএমন এক গুণ যা শান্তি বাড়ায়

পৃথিবীর সবাই যদি নম্র হতো, তাহলে চারিদিকের পরিবেশ আর জীবন কত সুন্দরই না হতো। লোকেরা অন্যের কাছ থেকে খুব বেশি দাবি করত না, পরিবারে অশান্তি থাকত না, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এত বেশি প্রতিযোগিতা থাকত না আর এক জাতি আরেক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত না। আপনি কি এইরকম এক পরিবেশে থাকতে চান?

 যিহোবা ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তিনি এই পৃথিবীকে একেবারে নতুন করে দেবেন। সেই সময়ে পৃথিবীতে শুধু নম্র লোকেরাই থাকবে আর তখন নম্রতাকে দুর্বলতা নয় বরং এক শক্তি এবং ভাল গুণ বলে দেখা হবে। ঈশ্বরের দাসেরা এখন থেকেই সেই সময়ের জন্যে তৈরি হচ্ছেন। (২ পিতর ৩:১৩) আসলে তারা এখনই নম্রতা গড়ে তুলছেন। কেন? বিশেষ করে এইজন্য যে যিহোবা তাদের কাছ থেকে এটা চান। তাঁর ভাববাদী মীখা লিখেছিলেন: “হে মনুষ্য, যাহা ভাল, তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুতঃ ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?”—মীখা ৬:৮.

নম্রতার বিভিন্ন মানে রয়েছে যেমন, অহংকার অথবা দম্ভ না করা এবং নিজের ক্ষমতা, কৃতিত্ব ও ধনসম্পদ নিয়ে গর্ব না করা। একটা বইয়ে নম্রতার মানে দেওয়া হয়েছে “সীমার মধ্যে থাকা।” একজন নম্র লোক ভাল ব্যবহার করে তার সীমার ভিতরে থাকেন। শুধু তাই নয়, তিনি মানেন যে তিনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন না এবং সবকিছু করার ক্ষমতাও তার নেই। তিনি জানেন যে এমন অনেক কিছু আছে, যা করার অধিকার তার নেই। তাই কোন সন্দেহ নেই যে নম্র লোকেদের সবাই পছন্দ করে। ইংরেজ কবি জোসেফ এডিসন লিখেছিলেন, “নম্রতার চেয়ে সুন্দর গুণ আর কিছুই নেই।”

অসিদ্ধ মানুষেরা নম্রতা নিয়ে জন্মায় না। আমাদের এই গুণ গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হয়। ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে বেশ কিছু ঘটনার কথা বলা আছে, যেগুলো থেকে আমরা নম্রতা দেখানোর নানা উপায়গুলো দেখতে পাই আর তা আমাদেরকে নম্র হতে সাহায্য করে।

দুজন নম্র রাজা

দায়ূদ যিহোবার একজন বিশ্বস্ত দাস ছিলেন আর তাকে যখন ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়েছিল তখন তিনি যুবক ছিলেন। পরে রাজা শৌল দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। শৌল দায়ূদকে এমনভাবে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিলেন যে জীবন বাঁচানোর জন্য দায়ূদকে বনেজঙ্গলে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল।—১ শমূয়েল ১৬:১, ১১-১৩; ১৯:৯, ১০; ২৬:২, ৩.

কিন্তু, এইরকম অবস্থায়ও দায়ূদ জানতেন যে তার জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি যা করছেন তারও একটা সীমা আছে। একবার জঙ্গলে দায়ূদ, রাজা শৌলকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছিলেন আর অবীশয় তাকে দেখতে পেয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু দায়ূদ তাকে বাধা দেন। দায়ূদ বলেছিলেন: “আমি যে সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করি, সদাপ্রভু এমন না করুন।” (১ শমূয়েল ২৬:৮-১১) দায়ূদ জানতেন যে শৌলকে রাজার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অধিকার তার নেই। এভাবেই দায়ূদ তার সীমার মধ্যে থেকে নম্রতা দেখিয়েছিলেন ও সেই মতো কাজ করেছিলেন। তার মতো ঈশ্বরের আজকের দিনের দাসেরাও জানেন যে ‘সদাপ্রভুর’ চোখে এমন কিছু কাজ আছে যা তারা করতে পারেন না, এমনকি এর সঙ্গে তাদের বাঁচা মরার প্রশ্ন জড়িত থাকলেও।—প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯; ২১:২৫.

রাজা দায়ূদের পুত্র শলোমনও যুবক বয়সে নম্রতা দেখিয়েছিলেন, তবে কিছুটা অন্যরকমভাবে। শলোমনকে যখন রাজা করা হয়েছিল, তখন তার মনে হয়েছিল যে রাজার গুরু দায়িত্ব পালন করার মতো যোগ্যতা তার নেই। তাই তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি আমার পিতা দায়ূদের পদে আপনার এই দাসকে রাজা করিলে; কিন্তু আমি ক্ষুদ্র বালকমাত্র, বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে জানি না।” এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে শলোমন জানতেন, রাজা হওয়ার মতো ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা তার নেই। তিনি নম্রতা দেখিয়েছিলেন, অহংকার বা দম্ভ করেননি। শলোমন যিহোবার কাছে বুদ্ধি চেয়েছিলেন আর যিহোবা তাকে তা দিয়েছিলেন।—১ রাজাবলি ৩:৪-১২.

মশীহ এবং যিনি তাঁর পথ তৈরি করেছিলেন

শলোমনের দিন থেকে ১,০০০ বছরেরও বেশি পরে যোহন বাপ্তাইজক মশীহ বা অভিষিক্ত ব্যক্তির পথ তৈরি করার কাজ করেছিলেন। অভিষিক্ত ব্যক্তির পথ তৈরি করার কাজ করে যোহন বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করেছিলেন। তিনি যদি চাইতেন, তাহলে তিনি তার এই বিশেষ সুযোগের জন্য অহংকার করতে পারতেন। শুধু তাই নয়, তিনি লোকেদের কাছ থেকে সম্মান আদায় করতে পারতেন কারণ মশীহ তার আত্মীয় ছিলেন। কিন্তু, তা না করে যোহন বাপ্তাইজক লোকেদের বলেছিলেন যে তিনি এমনকি যীশুর জুতোর ফিতে খোলারও যোগ্য নন। আর যীশু যখন যর্দন নদীতে তার কাছে বাপ্তিস্ম নিতে এসেছিলেন, তখন যোহন তাঁকে বলেছিলেন: “আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাইজিত হওয়া আবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন?” এর থেকে বোঝা যায় যে যোহন অহংকারী ছিলেন না বরং নম্র ছিলেন।—মথি ৩:১৪: মালাখি ৪:৫, ৬; লূক ১:১৩-১৭; যোহন ১:২৬, ২৭.

যীশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে শুরু করেছিলেন। যীশু এই কাজ প্রতিদিন ও সবসময় করতেন। যদিও যীশু একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন, তবুও তিনি বলেছিলেন: “আমি আপনা হইতে কিছুই করিতে পারি না; . . . আমি আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি না, কিন্তু আমার প্রেরণকর্ত্তার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি।” এছাড়াও যীশু মানুষের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার চেষ্টা করেননি বরং তিনি তাঁর সমস্ত কাজের জন্য যিহোবাকেই গৌরব দিয়েছিলেন। (যোহন ৫:৩০, ৪১-৪৪) কত নম্রতাই না তিনি দেখিয়েছিলেন!

অতএব, এটা স্পষ্ট যে যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা যেমন দায়ূদ, শলোমন, যোহন বাপ্তাইজক আর এমনকি সিদ্ধ পুরুষ যীশু খ্রীষ্ট নম্রতা দেখিয়েছিলেন। তারা অহংকার করেননি, দম্ভ করেননি অথবা গর্বও করেননি কিন্তু তারা সবসময় তাদের সীমার মধ্যে ছিলেন। তাদের উদাহরণ থেকে আমরা দেখতে পাই যে কেন আজকে যিহোবার দাসদের নম্রতা গড়ে তোলা ও তা দেখানো উচিত। কিন্তু নম্রতা গড়ে তোলার আরও অনেক কারণ আমাদের আছে।

আজ আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ে বাস করছি। এই অবস্থায় সত্য খ্রীষ্টানেরা যদি নম্র হন, তাহলে তাদের জন্য তা খুবই ভাল হবে। আর তাহলে এই অশান্তিতে ভরা পৃথিবীতেও তারা যিহোবা ও লোকেদের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে পারবে ও তারা নিজেরা শান্তি পাবে।

যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি

যিহোবার সঙ্গে একমাত্র তখনই আমরা শান্তিতে থাকতে পারব, যদি আমরা সত্যে তাঁর উপাসনা করি ও তিনি যে নিয়মগুলো দিয়েছেন তা মেনে চলি। আমাদের আদি পিতামাতা আদম ও হবা যখন ঈশ্বরের দেওয়া সীমার বাইরে পা রেখেছিল তখন তারাই ছিল প্রথম মানুষ যারা নম্রতা দেখাতে পারেনি। আর এর ফলে তারা শুধু যিহোবার সঙ্গে তাদের ভাল সম্পর্কই হারায়নি, তারা তাদের ঘর, তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও তাদের জীবন হারিয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৫, ১৬-১৯) নম্র না হওয়ায় তাদের কত চরম মূল্যই না দিতে হয়েছিল!

আসুন আমরা আদম ও হবা যা করতে পারেনি তার থেকে শিখি কারণ ঈশ্বরের সত্য উপাসনা করার জন্য আমাদের সীমার মধ্যে থাকা দরকার। উদাহরণ হিসেবে, বাইবেল বলে যে “যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) যিহোবা আমাদেরকে এই সীমাগুলো এইজন্য দিয়েছেন কারণ তিনি জানেন যে এতে আমাদের ভাল হবে। আর তাই এই সীমার মধ্যে থাকা আমাদের জন্য প্রজ্ঞার কাজ হবে। (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) হিতোপদেশ ১১:২ পদ আমাদের বলে: “প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী।”

কোন ধর্মীয় সংগঠন যদি আমাদের বলে যে এই সীমাকে পার করেও আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে পারি, তাহলে কী? ওই সংগঠন আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে আমরা যদি নম্রতা দেখাই, তাহলে যিহোবার সঙ্গে আমরা এক ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব।

লোকেদের সঙ্গে শান্তি

নম্রতা লোকেদের সঙ্গেও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাবামায়েরা যখন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়েই খুশি থাকেন এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে জীবনে প্রথমে রাখেন, তখন তাদের ছেলেমেয়েরাও সাধারণত তাদের মতোই হতে শিখবে। আর এর ফলে ছেলেমেয়েরা তাদের যা আছে তা নিয়েই খুশি থাকবে, এমনকি তারা যদি তাদের সমস্ত পছন্দের জিনিস সবসময় নাও পায়। এভাবে তারা নম্র হতে শিখবে আর এর ফলে পারিবারিক জীবনে আরও শান্তি আসবে।

খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে যাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব রয়েছে তাদের বিশেষ করে নম্র হওয়া দরকার আর তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা উচিত নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খ্রীষ্টানদের বলা হয়েছে: “যা লিখিত আছে, তাহা অতিক্রম করিতে নাই।” (১ করিন্থীয় ৪:৬) এইজন্য মণ্ডলীর প্রাচীনেরা বোঝেন যে ভাইবোনদের ওপর তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তাই যখন আচার-ব্যবহার, পোশাক-আশাক, সাজগোজ অথবা আমোদ-প্রমোদের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার দরকার হয় তখন তারা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল থেকে কথা বলেন। (২ তীমথিয় ৩:১৪-১৭) মণ্ডলীর ভাইবোনেরা যখন দেখেন যে প্রাচীনেরা বাইবেলের নিয়ম মেনে সীমার মধ্যে থাকেন, তখন তারা তাদেরকে সম্মান করেন আর এতে মণ্ডলীতে সুন্দর, শান্তির পরিবেশ থাকে ও ভাইবোনদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

নিজের মনে শান্তি

যারা নম্র তাদের মনে শান্তি থাকে। একজন নম্র ব্যক্তির মনে কখনও খুব বেশি উচ্চাশা থাকে না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তার কোন লক্ষ্য থাকবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কেউ ঈশ্বরের সেবায় আরও দায়িত্ব পেতে চান, তাহলে তাকে ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আর যে সমস্ত বিশেষ সুযোগ তিনি পাবেন তার জন্য সমস্ত কৃতিত্ব যিহোবাকে দেবেন। তিনি সেটাকে নিজের কৃতিত্ব মনে করবেন না। আর এটা একজন নম্র ব্যক্তিকে “শান্তির ঈশ্বর” যিহোবার আরও কাছে নিয়ে আসে।—ফিলিপীয় ৪:৯.

মাঝে মাঝে আমাদের মনে হতে পারে যে লোকেরা আমাদের অবহেলা করছে। কিন্তু এই সময় সীমাকে পার করে অন্যদের চোখে নিজেকে বিশেষ কিছু করে তুলতে চাওয়ার চেয়ে নম্র থাকাই কি বুদ্ধির কাজ হবে না? নম্র লোকেরা অন্যদের কাছে নিজেকে বিশেষ কিছু করে তুলতে চান না। তাই তাদের মনে শান্তি থাকে যা তাদের শরীর ও মন সুস্থ রাখার জন্য খুবই জরুরি।

নম্রতা গড়ে তোলা এবং ধরে রাখা

আমাদের আদি পিতামাতা আদম ও হবা নম্রতা দেখাতে পারেনি আর এইজন্য এই খারাপ গুণটা তাদের সন্তানরাও পেয়েছে। কিন্তু, আমরা তাদের মতো সেই একই ভুল করা থেকে কীভাবে বাঁচতে পারি? আমরা কীভাবে এই সুন্দর গুণ নম্রতা গড়ে তুলতে পারি?

সবচেয়ে প্রথমে আমাদের এটা জানা দরকার যে নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা যিহোবার তুলনায় আমাদের জায়গা কোথায়। একটু ভেবে দেখুন যে ঈশ্বরের কাজের সঙ্গে আমাদের কোন্‌ কাজের তুলনা করা যায়? যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাস ইয়োবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? যদি তোমার বুদ্ধি থাকে, তবে বল।” (ইয়োব ৩৮:৪) ইয়োব কোন উত্তর দিতে পারেননি। ইয়োবের মতো আমাদের জ্ঞান, ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতাও কি অল্প নয়? তাই আমাদের দুর্বলতাগুলোকে মেনে নেওয়াই কি আমাদের জন্য ভাল নয়?

এছাড়াও বাইবেল আমাদের বলে: “পৃথিবী ও তাহার সমস্ত বস্তু সদাপ্রভুরই; জগৎ ও তন্নিবাসিগণ তাঁহার।” এর মানে ‘বনের সমস্ত জন্তু, সহস্র সহস্র পর্ব্বতীয় পশুও’ যিহোবারই। তাই শুধু যিহোবাই বলতে পারেন: “রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই।” (গীতসংহিতা ২৪:১; ৫০:১০; হগয় ২:৮) যিহোবার যা আছে তার সঙ্গে আমরা আমাদের কোন্‌ সম্পদের তুলনা করতে পারি? এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোকেরও তার সম্পদের জন্য অহংকার করার কোন কারণ নেই! তাই প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শ মানা কত বুদ্ধিমানের কাজ, যা তিনি ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় রোমের খ্রীষ্টানদের দিয়েছিলেন: “আমাকে যে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, তাহার গুণে আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী প্রত্যেক জনকে বলিতেছি, আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, কেহ তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক।”—রোমীয় ১২:৩.

ঈশ্বরের দাস হওয়ায় আমাদের নম্রতা গড়ে তোলা দরকার। এর জন্য আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা দরকার যে তিনি যেন আমাদের তাঁর আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করেন। (লূক ১১:১৩; গালাতীয় ৫:২২, ২৩) কেন? কারণ আমাদের এই গুণগুলো থাকলে আমরা সহজেই নম্র হতে পারব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা যদি লোকেদের ভালবাসি, তাহলে তা আমাদেরকে অহংকার অথবা গর্ব করার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। আর ইন্দ্রিয়দমন আমাদেরকে উদ্ধতভাবে কোন কিছু করার আগে চিন্তা করতে সাহায্য করবে।

তাই আসুন আমরা সাবধান থাকি! আর সবসময় খেয়াল রাখি যে আমরা আমাদের সীমার বাইরে পা রাখছি না। ওপরে যে দুজন রাজার কথা আমরা দেখেছি তারা সবসময় নম্রতা দেখাননি। রাজা দায়ূদ আগে পিছে না ভেবে তাড়াহুড়ো করে ইস্রায়েলের লোক গণনা করেছিলেন, যা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিল। রাজা শলোমনও নম্রতা দেখাতে পারেননি কারণ তিনি মিথ্যা উপাসনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন।—২ শমূয়েল ২৪:১-১০; ১ রাজাবলি ১১:১-১৩.

যতদিন পর্যন্ত এই দুষ্ট পৃথিবী থাকবে, ততদিন আমাদের নম্র থাকার জন্য সাবধান হতে হবে। আর আমাদের এই চেষ্টা বৃথা যাবে না। কারণ ঈশ্বরের নতুন জগতে শুধু সেই লোকেরাই থাকবে যারা নম্র। তারা নম্রতাকে দুর্বলতা নয় বরং তাদের শক্তি হিসেবে দেখবেন। সমস্ত লোকেরা এবং সমস্ত পরিবারগুলো নম্র হবে আর তার ফলে তাদের মধ্যে শান্তি থাকবে। সেই সময়ে জীবন কতই না সুন্দর হবে!

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু যা কিছু করেছিলেন তার সমস্ত কৃতিত্ব নম্রভাবে যিহোবাকে দিয়েছিলেন