সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যীশু খ্রীষ্ট যেভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারেন

যীশু খ্রীষ্ট যেভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারেন

যীশু খ্রীষ্ট যেভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারেন

 যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন তিনি লোকেদের সাহায্য করার জন্য অনেক ভাল কাজ করেছিলেন। আর একথা খুবই সত্যি কারণ যীশুর জীবনের অসংখ্য ঘটনা সম্বন্ধে বলার পর একজন চাক্ষুষ সাক্ষি বলেন: “যীশু আরও অনেক কর্ম্ম করিয়াছিলেন; সে সকল যদি এক এক করিয়া লেখা যায়, তবে আমার বোধ হয়, লিখিতে লিখিতে এত গ্রন্থ হইয়া উঠে যে, জগতেও তাহা ধরে না।” (যোহন ২১:২৫) সত্যিই যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তিনি অনেক কিছু করেছিলেন কিন্তু আমাদের মনে হয়তো এখন প্রশ্ন আসতে পারে: ‘যীশু এখন স্বর্গে আছেন আর তাহলে স্বর্গ থেকে তিনি কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারেন? এখনও কি আমরা যীশুর করুণা থেকে উপকার পেতে পারি?’

এর উত্তর শুনে সত্যিই আমাদের মন ভরে যায়, আমরা সান্ত্বনা পাই। বাইবেল আমাদেরকে বলে যে খ্রীষ্ট “স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন, যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন।” (ইব্রীয় ৯:২৪) আমাদের জন্য কী করতে তিনি স্বর্গে গিয়েছেন? প্রেরিত পৌল বলেছেন যে “[খ্রীষ্ট] ছাগদের ও গোবৎসদের রক্তের গুণে নয়, কিন্তু নিজ রক্তের গুণে—একবারে পবিত্র স্থানে [“স্বর্গেই”] প্রবেশ করিয়াছেন, ও [আমাদের জন্য] অনন্তকালীয় মুক্তি উপার্জ্জন করিয়াছেন।”—ইব্রীয় ৯:১২; ১ যোহন ২:২.

এটা কতই না আনন্দের খবর! স্বর্গে গিয়ে যীশু লোকেদের জন্য ভাল ভাল কাজ করা বন্ধ করে দেননি বরং সেখান থেকে তিনি মানুষের জন্য আরও বেশি কিছু করতে পারছেন। কারণ ঈশ্বর তাঁর করুণা দেখিয়ে যীশুকে “সেবক” অর্থাৎ মহাযাজক করেছেন যিনি “স্বর্গে, মহিমা-সিংহাসনের দক্ষিণে, উপবিষ্ট হইয়াছেন।”—ইব্রীয় ৮:১, ২.

“সেবক”

তাই আমরা দেখি যে যীশু স্বর্গে থেকেও মানুষের জন্য একজন সেবক হয়ে কাজ করবেন। তিনি প্রাচীনকালের ইস্রায়েলের মহাযাজকদের মতোই ঈশ্বরের উপাসকদের জন্য কাজ করবেন। মহাযাজক কোন্‌ কাজ করত? পৌল বলেন যে “প্রত্যেক মহাযাজক উপহার ও বলি উৎসর্গ করিতে নিযুক্ত হন, অতএব ইহাঁরও [স্বর্গে আরোহিত যীশু খ্রীষ্টের] অবশ্য কিছু উৎসর্জ্জনীয় আছে।”—ইব্রীয় ৮:৩.

বলি উৎসর্গ করার ব্যাপারে যীশু প্রাচীনকালের মহাযাজকদের থেকে আরও বড় কিছু করেছিলেন। “ছাগদের ও বৃষদের রক্ত . . . যদি” প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের অনেকখানি আধ্যাত্মিক শুদ্ধতা দিতে পারত, তাহলে “খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে কত অধিক নিশ্চয় শুচি না করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পার!”—ইব্রীয় ৯:১৩, ১৪.

এছাড়াও অন্য মহাযাজকদের তুলনায় যীশু একজন অসাধারণ সেবক কারণ তিনি অমরত্ব পেয়েছেন। প্রাচীন ইস্রায়েলে “উহারা অনেক যাজক হইয়া আসিতেছে, কারণ মৃত্যু উহাদিগকে চিরকাল থাকিতে দেয় না।” কিন্তু যীশুর সম্বন্ধে কী বলা যায়? পৌল লিখেছিলেন “তিনি ‘অনন্তকাল’ থাকেন, তাই তাঁহার যাজকত্ব অপরিবর্ত্তনীয়। এই জন্য, যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন, কারণ তাহাদের নিমিত্ত অনুরোধ করণার্থে তিনি সতত জীবিত আছেন।” (ইব্রীয় ৭:২৩-২৫; রোমীয় ৬:৯) হ্যাঁ, স্বর্গে ঈশ্বরের দক্ষিণে আমাদের জন্য একজন সেবক আছেন যিনি ‘আমাদের অনুরোধ করণার্থে সতত জীবিত আছেন।’ তাহলে এখন একবার ভেবে দেখুন যে আজকে আমাদের জন্য এর মানে কী বোঝায়!

যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন সাহায্য পাওয়ার জন্য অনেক অনেক লোকেরা তাঁর কাছে এসে ভীড় করত, কখনও কখনও এই লোকেরা অনেক দূর দূরান্ত থেকেও যীশুর কাছে আসত। (মথি ৪:২৪, ২৫) কিন্তু, স্বর্গে তিনি সমস্ত জাতির লোকেদের জন্য আছেন যারা খুব সহজেই তার কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। সবচেয়ে উঁচু স্থান স্বর্গ থেকে সেবক হিসেবে সবসময়ই সবাইকে সাহায্য করার জন্য তিনি আছেন।

যীশু কোন্‌ ধরনের মহাযাজক?

সুসমাচারের বই যীশু খ্রীষ্টের যে ছবি আমাদের দেয় তাতে কোন সন্দেহ নেই যে তিনি লোকেদের অনেক সাহায্য করেছিলেন ও তাদেরকে অনেক করুণা দেখিয়েছিলেন। তিনি কত ত্যাগস্বীকার করেছিলেন! বেশ কয়েকবার তিনি এবং তাঁর শিষ্যরা যখন বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন তখন লোকেরা তাদের কাছে এসেছিল। কিন্তু লোকেরা তাদের চুপচাপ ও শান্তভাবে একটু বিশ্রাম নেওয়ায়ও বাধা দিচ্ছে একথা মনে করার বদলে যারা তাঁর সাহায্য চেয়েছিলেন তাদের প্রতি তিনি “করুণাবিষ্ট হইলেন।” যদি কোন পাপী লোক সত্যিই সাহায্য চাইত তিনি ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত হওয়া সত্ত্বেও ‘তাহাদিগকে সদয় ভাবে গ্রহণ করিতেন।’ আর তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি তাঁর খাওয়া বাদ দেওয়ার জন্যও তৈরি ছিলেন।—মার্ক ৬:৩১-৩৪; লূক ৯:১১-১৭; যোহন ৪:৪-৬, ৩১-৩৪.

লোকেদের দেখে যীশুর এতই করুণা হতো যে তিনি তাদের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটানোর জন্য কাজ করতেন। (মথি ৯:৩৫-৩৮; মার্ক ৬:৩৫-৪৪) এছাড়াও তিনি তাদেরকে চির শান্তি এবং সান্ত্বনা খুঁজে পেতে শিখিয়েছিলেন। (যোহন ৪:৭-৩০, ৩৯-৪২) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যীশু লোকেদের যেভাবে ডেকেছিলেন তা কত আন্তরিক ছিল: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।”—মথি ১১:২৮, ২৯.

লোকেদেরকে যীশু এত ভালবেসেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত পাপী মানুষের জন্য তিনি তাঁর জীবন বলি দিয়েছিলেন। (রোমীয় ৫:৬-৮) তাই পৌল যুক্তি দেখিয়েছিলেন: “যিনি [যিহোবা ঈশ্বর] নিজ পুত্ত্রের প্রতি মমতা করিলেন না, কিন্তু আমাদের সকলের নিমিত্ত তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন, তিনি কি তাঁহার সমস্তই আমাদিগকে অনুগ্রহ-পুর্ব্বক দান করিবেন না? . . . খ্রীষ্ট যীশু ত মরিলেন, বরং উত্থাপিতও হইলেন; আর তিনিই ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন।”.—রোমীয় ৮:৩২-৩৪.

একজন মহাযাজক যিনি সমবেদনা দেখাতে পারেন

যীশু যখন মানুষ ছিলেন তাঁর খিদে পেত, পিপাসা পেত, তিনি ক্লান্ত হতেন, যন্ত্রণা ও ব্যথা পেতেন এমনকি তিনি মারাও গিয়েছিলেন। তিনি এত বেশি দুঃখ ও চাপ সহ্য করেছিলেন যে দুঃখী মানুষের জন্য মহাযাজক হিসেবে তিনিই সবচেয়ে ভালভাবে কাজ করতে পারতেন। পৌল লিখেছিলেন: “সর্ব্ববিষয়ে আপন ভ্রাতৃগণের তুল্য হওয়া [যীশুর] উচিত ছিল, যেন তিনি প্রজাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার নিমিত্ত ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কার্য্যে দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাযাজক হন। কেননা তিনি আপনি পরীক্ষিত হইয়া দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া পরীক্ষিতগণের সাহায্য করিতে পারেন।”—ইব্রীয় ২:১৭, ১৮; ১৩:৮.

যীশু দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি লোকেদের ঈশ্বরের কাছে আসতে সাহায্য করতে পারেন ও তা করার ইচ্ছাও তাঁর আছে। কিন্তু এর মানে কি এই যে তাঁকে এক কঠোর এবং দয়ামায়াহীন ঈশ্বরকে রাজি করাতে হয়েছিল, যিনি ক্ষমা করতে চান না? কখনোই না, কারণ বাইবেল আমাদেরকে আশ্বাস দেয় যে ‘যিহোবা [হলেন] মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্‌।’ আর বাইবেল আমাদের এও বলে যে: “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্ম্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্ম্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।” (গীতসংহিতা ৮৬:৫; ১ যোহন ১:৯) আসলে, যীশুর ভালবাসায় ভরা কথা এবং কাজ তাঁর পিতার দয়া, করুণা এবং প্রেমকেই দেখায়।—যোহন ৫:১৯; ৮:২৮; ১৪:৯, ১০.

অনুতপ্ত পাপীদের যীশু কীভাবে শান্তি দিয়েছিলেন? তারা যখন মন থেকে ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করত তখন যীশু তাদেরকে আনন্দ ও তৃপ্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলেন। খ্রীষ্টান ভাইবোনদের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পৌল বিষয়টাকে এভাবে বলেছিলেন: “ভাল, আমরা এক মহান্‌ মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্ত্র; অতএব আইস, আমরা ধর্ম্মপ্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়রূপে ধারণ করি। কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে। অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।”—ইব্রীয় ৪:১৪-১৬.

“উপযোগী উপকারার্থে”

কিন্তু যখন আমরা এমন কোন সমস্যায় পড়ি, যা হয়তো আমরা মোকাবিলা করতে পারব না বলে আমাদের মনে হয় তখন আমরা কী করতে পারি? যেমন কোন কঠিন অসুখ, নিজেকে দোষী মনে করার বোঝা বয়ে বেড়ানো, একেবারেই ভেঙে পড়া বা হতাশা? আমরা সেই ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে পারি যার ওপর যীশু নিজে সবসময় নির্ভর করেছিলেন আর তা হল প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগ। উদাহরণ হিসেবে, তাঁর মৃত্যুর রাতে “তিনি . . . আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন; আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল।” (লূক ২২:৪৪) হ্যাঁ, যীশু জানেন যে অন্তর থেকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার অনুভূতি কেমন। তিনি “প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে তাঁহারই নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন, যিনি মৃত্যু হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ, এবং আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইলেন।”—ইব্রীয় ৫:৭.

যীশু খুব ভালভাবে জানেন যে মানুষেরা চায় যেন তাদের প্রার্থনার “উত্তর” দেওয়া হয় ও তাদের সবল করা হয়। (লূক ২২:৪৩) এছাড়াও তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “পিতার নিকটে যদি তোমরা কিছু যাচ্ঞা কর, তিনি আমার নামে তোমাদিগকে তাহা দিবেন। . . . যাচ্ঞা কর, তাহাতে পাইবে, যেন তোমাদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়।” (যোহন ১৬:২৩, ২৪) তাই আমরা পুরোপুরি আস্থা রেখে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি যে তিনি তাঁর পুত্ত্রকে তাঁর অধিকার ও আমাদের জন্য দেওয়া তাঁর মুক্তির মূল্যের উপকারকে কাজে লাগাতে দেবেন।—মথি ২৮:১৮.

আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে স্বর্গ থেকে যীশু সঠিক সময়ে আমাদের ঠিকভাবে সাহায্য করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা যদি কোন পাপ করে ফেলি আর তার জন্য মন থেকে অনুতপ্ত হই, তাহলে আমরা এই কথাগুলো থেকে সান্ত্বনা পেতে পারি যে “পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট।” (১ যোহন ২:১, ২) স্বর্গে, আমাদের সহায় আমাদের জন্য অনুরোধ করবেন যেন বাইবেল অনুসারে তাঁর নামে করা প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়।—যোহন ১৪:১৩, ১৪; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫.

খ্রীষ্টের সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া

কিন্তু শুধু তাঁর পুত্রের নামে ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ জানানোই সব নয়। কারণ মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান দিয়ে ‘খ্রীষ্ট’ মানুষের ‘অধিপতি [মালিক]’ হয়েছেন কারণ তিনি মানবজাতিকে ‘ক্রয় করিয়াছেন।’ (গালাতীয় ৩:১৩; ৪:৫; ২ পিতর ২:১) তাই খ্রীষ্টের অধিকারকে মেনে নিয়ে আর খুশি মনে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে, তিনি আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি। তিনি বলেন “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক।” (লূক ৯:২৩) ‘আপনাকে অস্বীকার করার’ মানে শুধু মুখে বলাই নয় যে আজ থেকে আমার মালিক যীশু খ্রীষ্ট, আমার ওপর তাঁর অধিকার আছে। কারণ খ্রীষ্ট “সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে।” (২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫) তাই মুক্তির মূল্যের জন্য আমরা যে কৃতজ্ঞ তা আমাদের চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম এবং আমাদের রোজকার জীবন দিয়ে দেখানো দরকার। ‘যীশু খ্রীষ্ট যিনি আমাদের নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন’, তাঁর কাছে আমাদের চিরদিনের ঋণ আমাদের মধ্যে তাঁর এবং তাঁর প্রেমময় পিতা যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তোলে। তাই আমাদের বিশ্বাসকে বাড়িয়ে চলা দরকার, যা আমাদের নিজেদের জন্য উপকারী ও যা আমাদের “সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী” করে তুলবে।—তীত ২:১৩, ১৪; যোহন ১৭:৩.

খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে আমরা উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাবার, উৎসাহ এবং নির্দেশনা পাই। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; ইব্রীয় ১০:২১-২৫) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কেউ আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ হন, তাহলে তারা “মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে [নিযুক্ত প্রাচীনদেরকে] আহ্বান করুক।” যাকোব আরও বলেন: “তাহাতে বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং প্রভু তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে।”—যাকোব ৫:১৩-১৫.

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যক্তি যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার এক জেলে যখন শাস্তি ভোগ করছিলেন তখন মণ্ডলীর একজন প্রাচীনের কাছে কৃতজ্ঞতায় ভরা একটা চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি “সমস্ত যিহোবার সাক্ষিদের যারা যীশু খ্রীষ্ট যে ভাল কাজ শুরু করেছিলেন তা করে চলে লোকেদের ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যান” তাদের ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি লিখেছিলেন: “আপনার চিঠি পেয়ে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। আমার আধ্যাত্মিক সুস্থতার ব্যাপারে আপনাদের এতখানি চিন্তিত হতে দেখে আমার মন কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছে। এখন আমাকে যে কোন ভাবেই হোক অনুতপ্ত হয়ে যিহোবার ডাকে সাড়া দিতেই হবে। ২৭ বছর ধরে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, বার বার পাপের অন্ধকারে, প্রতারণায়, খারাপ কাজে, অনৈতিকতায় এবং মিথ্যা ধর্মের পথে গিয়েছি। কিন্তু যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমার মনে হয়েছে যে অবশেষে আমি বুঝি সত্যিই ঠিক রাস্তা খুঁজে পেয়েছি! আর এখন আমাকে এই ঠিক পথেই চলা শুরু করতে হবে।”

নিকট ভবিষ্যতে আরও সাহায্য

মন্দ জগতের এই অবস্থা পরিষ্কার দেখায় যে আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ে রয়েছি কারণ খুব শীঘ্রিই ‘মহাক্লেশ’ শুরু হয়ে যাবে। আর ঠিক এখনই সমস্ত জাতির, বংশের, প্রজাবৃন্দের ও ভাষার অনেক অনেক লোকেরা ‘মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করছে, ও শুক্লবর্ণ করছে।’ (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৩, ১৪; ২ তীমথিয় ৩:১-৫) যীশু খ্রীষ্ট আমাদের মুক্তি দেবেন একথা বিশ্বাস করে তারা তাদের পাপের ক্ষমা পাচ্ছেন এবং ঈশ্বরের খুব কাছে আসার জন্য সাহায্য পাচ্ছেন আর এইভাবে তারা ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠছেন।—যাকোব ২:২৩.

মেষশাবক যীশু খ্রীষ্ট “[মহাক্লেশ থেকে যারা রক্ষা পাবেন তাদেরকে] পালন করিবেন, এবং জীবন-জলের উনুইয়ের নিকটে গমন করাইবেন, আর ঈশ্বর ইহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৭) এরপর খ্রীষ্ট মহাযাজক হিসেবে তাঁর কাজ শেষ করবেন। তিনি ঈশ্বরের সমস্ত বন্ধুদের আধ্যাত্মিক, শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগতভাবে অর্থাৎ ‘জীবন-জলের উনুই’ থেকে পুরোপুরিভাবে উপকার পাওয়ার জন্য সাহায্য করবেন। সা.কা. ৩৩ সালে যীশু যে কাজ শুরু করেছিলেন আর স্বর্গে যাওয়ার পরও যে কাজ তিনি করে চলেছেন তা সেই সময় সম্পূর্ণ করা হবে।

তাই ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন এবং এখনও যা কিছু করে চলেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা দেখাতে কখনও ভুলে যাবেন না। প্রেরিত পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা প্রভুতে সর্ব্বদা আনন্দ কর; . . . কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।”—ফিলিপীয় ৪:৪, ৬, ৭.

স্বর্গে আমাদের সহায় যীশু খ্রীষ্টের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার একটা বিশেষ উপায় রয়েছে। ২০০০ সালের ১৯শে এপ্রিল বুধবার, সূর্যাস্তের পর সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিরা খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা করার জন্য একত্র হবেন। (লূক ২২:১৯) সেখানে এসে আপনি দেখাতে পারেন যে খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের জন্য আপনি সত্যিই কৃতজ্ঞ। সেখানে আসার এবং খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর কীভাবে আপনাকে রক্ষা করার ও আপনার চিরকালীন মঙ্গল করার ব্যবস্থা করেছেন তা শোনার জন্য আপনাকে আমরা সাদর আমন্ত্রণ জানাই। সেই বিশেষ সভার সময় ও জায়গা দয়া করে আপনার কাছাকাছি যিহোবার সাক্ষিদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিন।

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু জানেন যে অন্তর থেকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার অনুভূতি কেমন

[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমরা যে সমস্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি না সেগুলোর মোকাবিলা করতে খ্রীষ্ট আমাদের সাহায্য করবেন

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রেমময় প্রাচীনদের দিয়ে খ্রীষ্ট আমাদেরকে সাহায্য করেন