সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘হে ঈশ্বর, তোমার দীপ্তি প্রেরণ কর’

‘হে ঈশ্বর, তোমার দীপ্তি প্রেরণ কর’

‘হে ঈশ্বর, তোমার দীপ্তি প্রেরণ কর’

“তোমার দীপ্তি ও তোমার সত্য প্রেরণ কর; তাহারাই আমার পথপ্রদর্শক হউক।”—গীতসংহিতা ৪৩:৩.

১. যিহোবা কীভাবে তাঁর উদ্দেশ্যগুলো জানান?

 যিহোবা যেভাবে তাঁর দাসদেরকে তাঁর উদ্দেশ্যগুলো জানিয়েছেন, তা দেখায় যে তিনি তাদের জন্য চিন্তা করেন। তিনি সমস্ত সত্য একবারে প্রকাশ করে আমাদেরকে ধাঁধার মধ্যে ফেলে দেওয়ার বদলে ধীরে ধীরে সত্যের দীপ্তি ছড়িয়ে দেন। জীবনের পথে আমাদের পথ চলাকে এমন একজন পথিকের পথ চলার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যিনি এক লম্বা পথ পাড়ি দিচ্ছেন। তিনি খুব ভোরবেলাতে চলতে শুরু করেন যখন আশেপাশের প্রায় কোনকিছুই ভাল করে দেখা যায় না। পূবের আকাশে যখন সূর্য ধীরে ধীরে উঁকি দিতে থাকে, তখন ওই পথিক আশেপাশের কিছু কিছু জিনিস দেখতে পান। বাকি সবকিছু তার কাছে অস্পষ্ট মনে হয়। কিন্তু, সূর্য যখন মাথার ওপর থেকে কিরণ দেয় তখন তিনি দূরের জিনিসও খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পান। ঈশ্বরের দেওয়া আধ্যাত্মিক দীপ্তির বেলায়ও একই কথা খাটে। তিনি আমাদেরকে সব বিষয় একবারে বুঝতে না দিয়ে ধীরে ধীরে বুঝতে দেন। ঈশ্বরের পুত্র, যীশু খ্রীষ্টও তাঁর মতো করে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের দীপ্তি ধীরে ধীরে জুগিয়েছিলেন। আসুন আমরা দেখি যে প্রাচীনকালে যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের জ্ঞানের দীপ্তি জুগিয়েছিলেন আর আজকে তিনি কীভাবে তা জোগান।

২. প্রাচীনকালে যিহোবা কীভাবে জ্ঞানের দীপ্তি দিয়েছিলেন?

সম্ভবত কোরহের সন্তানরা ৪৩ গীত লিখেছিলেন। যেহেতু তারা লেবীয় ছিলেন, তাই লোকেদেরকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা শেখানোর বিশেষ সুযোগ তাদের ছিল। (মালাখি ২:৭) কিন্তু, যিহোবাই ছিলেন তাদের মহান শিক্ষক আর জ্ঞানের জন্য তারা তাঁর দিকেই তাকাতেন কারণ তিনিই হলেন সমস্ত জ্ঞানের আধার। (যিশাইয় ৩০:২০) এই গীতরচকেরা প্রার্থনা করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, . . . তোমার দীপ্তি ও তোমার সত্য প্রেরণ কর। তাহারাই আমার পথপ্রদর্শক হউক।” (গীতসংহিতা ৪৩:১, ৩) ইস্রায়েলীয়রা যত দিন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, তত দিন যিহোবা তাদেরকে তাঁর পথ সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন। কয়েকশ বছর পর, যিহোবা তাদেরকে বিশেষ দীপ্তি ও সত্য দিয়ে দয়া দেখিয়েছিলেন। আর যিহোবা ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে তা করেছিলেন।

৩. যীশুর শিক্ষা যিহুদিদের সম্বন্ধে কী জানিয়েছিল?

ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট মানুষ হয়ে যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন তিনি “জগতের জ্যোতি” ছিলেন। (যোহন ৮:১২) তিনি লোকেদের ‘দৃষ্টান্ত দ্বারা অনেক উপদেশ’ অর্থাৎ নতুন নতুন বিষয় শিখিয়েছিলেন। (মার্ক ৪:২) তিনি পন্তীয় পীলাতকে বলেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) এটা রোমীয়দের আর অবশ্যই জাতীয়তাবাদী যিহুদিদের কাছে একটা নতুন বিষয় ছিল কারণ তারা মনে করত যে মশীহ রোমীয় সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে ইস্রায়েলকে এর আগের গৌরব ফিরিয়ে দেবেন। যীশু যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া দীপ্তি প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু তাঁর কথায় যিহুদি শাসকরা খুশি হননি কারণ তারা “ঈশ্বরের কাছে গৌরব অপেক্ষা . . . বরং মনুষ্যদের কাছে গৌরব অধিক ভাল বাসিত।” (যোহন ১২:৪২, ৪৩) অনেক লোকেরাই ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা আধ্যাত্মিক দীপ্তি ও সত্যকে গ্রহণ না করে মানুষের তৈরি রীতিনীতি মেনে চলাকে বেছে নিয়েছিল।—গীতসংহিতা ৪৩:৩; মথি ১৩:১৫.

৪. কীভাবে আমরা জানি যে যীশুর শিষ্যদের বোঝার ক্ষমতা বেড়েই চলবে?

কিন্তু, কিছু ভাল মনের পুরুষ ও নারীরা খুশি মনে যীশুর শেখানো সত্যকে নিজের করে নিয়েছিলেন। তারা ধীরে ধীরে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো বুঝতে পেরেছিলেন। যদিও তাদের শিক্ষক খুব শীঘ্রিই মারা যাবেন, তবুও তাদের তখনও অনেক কিছু শেখার ছিল। তাই যীশু তাদের বলেছিলেন: “তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সে সকল সহ্য করিতে পার না।” (যোহন ১৬:১২) হ্যাঁ, শিষ্যদের ঈশ্বরের সত্য বোঝার ক্ষমতা বেড়েই চলবে।

দীপ্তি আরও উজ্জ্বল হতে থাকে

৫. প্রথম শতাব্দীতে কোন্‌ প্রশ্ন উঠেছিল আর এটা মীমাংসা করার দায়িত্ব কাদের ছিল?

যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর, ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা দীপ্তি আগের চেয়ে আরও উজ্জ্বল হয়েছিল। পিতরকে দেওয়া এক দর্শনে যিহোবা দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে অছিন্নত্বক পরজাতীয়রা এখন থেকে খ্রীষ্টের শিষ্য হতে পারবেন। (প্রেরিত ১০:৯-১৭) দর্শনে এই নতুন সত্য জানানো হয়েছিল! তাই পরে একটা প্রশ্ন উঠেছিল: যিহোবা কি চান যে পরজাতীয়রা খ্রীষ্টান হওয়ার পর ত্বকছেদ করবে? দর্শনে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি আর তাই এই বিষয়টা নিয়ে খ্রীষ্টানদের মধ্যে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছিল। এটা মীমাংসা করার দরকার ছিল, তা না হলে তাদের মধ্যে যে একতা ছিল তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এইজন্য যিরূশালেমে “এই বিষয় আলোচনা করিবার জন্য প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ সমবেত হইলেন।”—প্রেরিত ১৫:১, ২, ৬.

৬. ত্বকচ্ছেদ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রেরিতেরা ও প্রাচীনবর্গ কীভাবে কাজ করেছিলেন?

যারা সভাতে উপস্থিত ছিলেন তারা কীভাবে জানতে পারবেন যে বিশ্বাসী পরজাতীয়দের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কী? সভা চালানোর জন্য যিহোবা কোন স্বর্গদূতকে পাঠাননি বা উপস্থিত ব্যক্তিদের তিনি কোন দর্শন দিয়েও সাহায্য করেননি। কিন্তু তাই বলে প্রেরিত ও প্রাচীনদের কোন নির্দেশনাই দেওয়া হয়নি এমনও নয়। তারা সেই যিহুদি খ্রীষ্টানদের দেওয়া সাক্ষ্য শুনেছিলেন, যারা দেখেছিলেন যে ঈশ্বর বিভিন্ন জাতির লোকেদের সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করছেন ও অছিন্নত্বক পরজাতীয়দের ওপর তাঁর পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেছেন। তারা নির্দেশনার জন্য শাস্ত্রও ঘেটেছিলেন। ফলে একটা শাস্ত্রপদ থেকে নতুন দীপ্তি পেয়ে শিষ্য যাকোব পরামর্শ দিয়েছিলেন। সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিচার-বিবেচনা করার পর তারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে এই বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা কী। যিহোবার অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য পরজাতীয়দের ত্বকচ্ছেদ করার দরকার নেই। প্রেরিতেরা ও প্রাচীনবর্গ এক মুহূর্তের জন্য সময় নষ্ট না করে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন, যাতে খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা এর থেকে সঠিক নির্দেশনা পেতে পারেন।—প্রেরিত ১৫:১২-২৯; ১৬:৪.

৭. প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা কীভাবে বেড়ে চলেছিল?

এই খ্রীষ্টানেরা সেই যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের মতো ছিলেন না, যারা তাদের পূর্বপুরুষদের রীতিনীতিগুলোতে জোঁকের মতো লেগে ছিলেন। পরজাতীয়দের জন্য যিহোবার উদ্দেশ্যের এই বিশেষ নতুন সিদ্ধান্ত জেনে বেশির ভাগ যিহুদি খ্রীষ্টানরা খুশি হয়েছিলেন। যদিও এটা মেনে নিতে গিয়ে এই যিহুদি খ্রীষ্টানদেরকে পরজাতীয়দের সম্বন্ধে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে হয়েছিল। যিহোবা তাদের এইরকম নম্র মনোভাবের জন্য আশীর্বাদ করেছিলেন আর এর ফলে “মণ্ডলীগণ বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইতে থাকিল, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল।”—প্রেরিত ১৫:৩১; ১৬:৫.

৮. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে প্রথম শতাব্দী শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আরও দীপ্তি আশা করা যেত? (খ) এই বিষয়ে কোন্‌ প্রশ্নগুলো আলোচনা করা হবে?

পুরো প্রথম শতাব্দী জুড়েই আধ্যাত্মিক দীপ্তি আরও উজ্জ্বল হতে থাকে। কিন্তু যিহোবা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদেরকে তাঁর উদ্দেশ্যের সমস্ত কথা জানাননি। প্রেরিত পৌল তার প্রথম শতাব্দীর বিশ্বাসী ভাইবোনদের বলেছিলেন: “এখন আমরা দর্পণে [ধাতব আয়নায়] অস্পষ্ট দেখিতেছি।” (১ করিন্থীয় ১৩:১২) এইরকম আয়নায় চেহারা ভালভাবে দেখা যেত না। একইভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিক দীপ্তিকে পুরোপুরি বোঝার ক্ষমতা কম ছিল। প্রেরিতরা মারা যাওয়ার পর, কিছু সময়ের জন্য এই দীপ্তি একেবারেই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আজকে এই বিংশ শতাব্দীতে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অনেক বেড়ে গেছে। (দানিয়েল ১২:৪) আজকে যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের জ্ঞানের দীপ্তি দিচ্ছেন? আর তিনি যখন আমাদেরকে বিভিন্ন শাস্ত্রপদ আরও ভালভাবে বোঝার ক্ষমতা দেন, তখনই বা আমাদের তা কীভাবে নেওয়া উচিত?

দীপ্তি ধীরে ধীরে আরও উজ্জ্বল হয়

৯. প্রাথমিক বাইবেল ছাত্ররা বাইবেল অধ্যয়নের জন্য কোন্‌ ব্যবহারিক পদ্ধতি কাজে লাগিয়েছিলেন?

আজকের দিনে দীপ্তির প্রথম ঝলক দেখা যায় উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে। তখন এক দল খ্রীষ্টান পুরুষ ও নারী মন দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। তারা বাইবেল অধ্যয়নের জন্য একটা ব্যবহারিক পদ্ধতি কাজে লাগাতে শুরু করেছিলেন। কেউ একজন একটা প্রশ্ন করতেন আর অন্যরা সবাই এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ওই বিষয়ের সঙ্গে জড়িত বাইবেলের সমস্ত পদ পরীক্ষা করতেন। যখন একটা পদের সঙ্গে আরেকটা পদ মিলত না তখন এই আন্তরিক খ্রীষ্টানরা পদ দুটোকে মেলানোর জন্য আরও বেশি গবেষণা করতেন। বাইবেল ছাত্ররা (তখন যিহোবার সাক্ষিরা এই নামেই পরিচিত ছিলেন) তাদের দিনের ধর্মীয় নেতাদের থেকে একেবারেই আলাদা ছিলেন। তারা পরম্পরাগত রীতিনীতি বা মানুষের মনগড়া মতবাদকে তাদের পথপ্রদর্শক না করে পবিত্র শাস্ত্রকে তাদের পথ দেখাতে দিয়েছিলেন। বাইবেল থেকে সমস্ত প্রমাণ দেখার পর তারা যা পেতেন তা তারা লিখে রাখতেন। এইভাবে তারা বাইবেলের অনেক মৌলিক শিক্ষা বুঝতে পেরেছিলেন।

১০. চার্লস টেজ রাসেল কোন্‌ বই লিখেছিলেন যেটা বাইবেল অধ্যয়নে সাহায্য করেছিল?

১০ বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে চার্লস টেজ রাসেল ছিলেন বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য। তিনি শাস্ত্রের ওপর অধ্যয়ন (ইংরেজি) নামে ছয় খণ্ডের একটা বই লিখেছিলেন, যেটা বাইবেল অধ্যয়নে সাহায্য করেছিল। ভাই রাসেল সপ্তম খণ্ডও লিখতে চেয়েছিলেন, যেটাতে বাইবেলের যিহিষ্কেল ও প্রকাশিত বাক্য বইয়ের বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেছিলেন: ‘আমি যখন এই বইগুলোর মানে বুঝতে পারব, তখন আমি সপ্তম খণ্ডটা লিখব।’ তবে তিনি এরপর বলেছিলেন: “কিন্তু প্রভু যদি অন্য কাউকে বোঝার ক্ষমতা দেন, তাহলে তিনি এটা লিখতে পারেন।”

১১. আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো বোঝার সঙ্গে সময়ের কী সম্পর্ক রয়েছে?

১১ সি. টি. রাসেলের এই কথা থেকে একটা জরুরি বিষয় বোঝা যায় যে বাইবেলের কিছু অংশ বোঝার জন্য সময় দরকার। ঠিক যেমন একজন পথিক নির্দিষ্ট সময়ের আগে সূর্যকে ওঠার জন্য জোরাজুরি করতে পারে না, তেমনই ভাই রাসেল জানতেন যে প্রকাশিত বাক্য বইকে বোঝার জন্য জোর করে তিনি জ্ঞানের দীপ্তি পেতে পারেন না।

দীপ্তির ঝলক দেখা গিয়েছিল কিন্তু ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে

১২. (ক) কখন বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক ঠিক বোঝা যায়? (খ) কোন্‌ উদাহরণ দেখায় যে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আমরা কেবল ঈশ্বরের নিরূপিত সময়েই বুঝতে পারব? (পাদটীকা দেখুন।)

১২ যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর, প্রেরিতেরা মশীহের বিষয়ে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী বুঝেছিলেন, ঠিক তেমনই আজকে খ্রীষ্টানরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরই সেগুলো পুরোপুরি বোঝেন। (লূক ২৪:১৫, ২৭; প্রেরিত ১:১৫-২১; ৪:২৬, ২৭) প্রকাশিত বাক্য ভবিষ্যদ্বাণীর বই, তাই আমাদের আশা করা উচিত যে এতে যে ঘটনাগুলোর কথা লেখা আছে তা ঘটার পরই আমরা সেগুলো পুরোপুরি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে সি. টি. রাসেল প্রকাশিত বাক্য ১৭:৯-১১ পদে বলা সিন্দুর বর্ণ পশুর মানে ঠিকমতো বুঝতে পারেননি, কারণ পশু যে সংগঠনগুলোকে বুঝিয়েছে যেমন জাতিপুঞ্জ এবং রাষ্ট্রসংঘ সেগুলো তিনি মারা যাওয়ার পরে অস্তিত্বে এসেছিল। *

১৩. বাইবেলের কোন একটা বিষয়ের ওপর যখন দীপ্তির নতুন ঝলক দেখা যায়, তখন কী করা হয়?

১৩ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা যখন জানতে পেরেছিলেন যে অছিন্নত্বক পরজাতীয়রা তাদের মতো বিশ্বাসী হতে পারেন, তখন পরজাতীয় লোকেদের ত্বকচ্ছেদ করার দরকার আছে কি না সেই বিষয়ে এক নতুন প্রশ্ন উঠেছিল। আর এইজন্যই প্রেরিতেরা ও প্রাচীনবর্গ ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা নিয়ে আবারও শাস্ত্র পরীক্ষা করেছিলেন। আজকেও এইরকমই হয়। বাইবেলের একটা বিষয়ের ওপর যখন দীপ্তির নতুন ঝলক দেখা যায় তখন ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাস অর্থাৎ ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসদের’ ওই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত বিষয়গুলো আবারও পরীক্ষা করতে হয়, যা নিচে আজকালেই ঘটা একটা উদাহরণ দিয়ে দেখানো হল।—মথি ২৪:৪৫.

১৪-১৬. আত্মিক মন্দির সম্বন্ধে আমাদের নতুন ধারণা কীভাবে আমাদেরকে যিহিষ্কেল ৪০-৪৮ অধ্যায়ের দর্শন বুঝতে সাহায্য করে?

১৪ ১৯৭১ সালে “জাতিগণ জানিবে যে আমিই সদাপ্রভু”—কীভাবে? (ইংরেজি) বইয়ে যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণী বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই বইয়ের একটা অধ্যায়ে যিহিষ্কেলের দেখা মন্দিরের দর্শন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছিল। (যিহিষ্কেল ৪০-৪৮ অধ্যায়) সেই সময়ে নতুন জগতে মন্দিরের দর্শন কীভাবে পরিপূর্ণ হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।—২ পিতর ৩:১৩.

১৫ কিন্তু ১৯৭২ সালের ১লা ডিসেম্বরের প্রহরীদুর্গ-এ (ইংরেজি) দুটো প্রবন্ধ ছাপানো হয়েছিল, যেখানে ইব্রীয় ১০ অধ্যায়ে প্রেরিত পৌল যে মহান আত্মিক মন্দিরের কথা বলেছেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। আর এর ফলে যিহিষ্কেলের দর্শনের মন্দির সম্বন্ধে আমরা আরও ভাল করে বুঝেছিলাম। প্রহরীদুর্গ ব্যাখ্যা করেছিল যে আত্মিক মন্দিরের পবিত্র স্থান এবং ভেতরের প্রাঙ্গণ পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবস্থাকে বোঝায়। কয়েক বছর পর যখন আবারও যিহিষ্কেল বইয়ের ৪০-৪৮ অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল, তখন বোঝা গিয়েছিল যে আজকে যেহেতু আত্মিক মন্দির কাজ করছে, তাই যিহিষ্কেল তার দর্শনে যে মন্দির দেখেছিলেন সেটাও আজকে কাজ করছে। কিন্তু কীভাবে?

১৬ যিহিষ্কেলের দর্শনে অযাজকীয় বংশের লোকেদের জন্য সেবা করার সময় যাজকদের মন্দিরের প্রাঙ্গণে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এতে কোন সন্দেহ নেই যে এই যাজকেরা “রাজকীয় যাজকবর্গ” অর্থাৎ যিহোবার অভিষিক্ত দাসদের বোঝায়। (১ পিতর ২:৯) কিন্তু তারা খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময় মন্দিরের প্রাঙ্গণে অর্থাৎ পৃথিবীতে সব সময়ের জন্য সেবা করে চলবেন না। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৪) তখন বেশির ভাগ সময়ই এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা আত্মিক মন্দিরের অতি পবিত্র স্থানে অর্থাৎ ‘স্বর্গে’ ঈশ্বরের সেবা করবেন। (ইব্রীয় ৯:২৪) যেহেতু যিহিষ্কেলের মন্দিরে যাজকদেরকে প্রাঙ্গণে এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়, তাই এই দর্শন অবশ্যই আজকে আমাদের দিনে পূর্ণ হচ্ছে যখন কিছু অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা পৃথিবীতে আছেন। ১৯৯৯ সালের ১লা মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় এই বিষয়ের ওপর আগের ধারণাকে সংশোধন করা হয়েছে। তাই এটা স্পষ্ট যে পুরো বিংশ শতাব্দী জুড়ে যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর আধ্যাত্মিক দীপ্তির নতুন ঝলক দেখা গেছে।

আপনার ধারণাকে সংশোধন করার জন্য তৈরি থাকুন

১৭. সত্যের জ্ঞান পাওয়ার পর আপনি আপনার আগের ধারণাকে কীভাবে সংশোধন করেছিলেন আর তা কীভাবে আপনার উপকার করেছে?

১৭ যিনি সত্যের জ্ঞান পেতে চান তাকে অবশ্যই “সমুদয় চিন্তাকে বন্দি করিয়া খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহ” হওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। (২ করিন্থীয় ১০:৫) তা করা সবসময় সহজ নয়, বিশেষ করে যখন কোন ধারণা আমাদের মনের একেবারে গভীরে গেঁথে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সত্য শেখার আগে আপনি হয়তো আপনার পরিবারের সঙ্গে কিছু ধর্মীয় উৎসব পালন করতেন। কিন্তু, বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার পর, আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই উৎসবগুলো আসলে মিথ্যা ধর্ম থেকে এসেছে। আর প্রথম প্রথম আপনি হয়তো বাইবেল থেকে শেখা বিষয়গুলো কাজে লাগাতে চাননি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত যখন ধর্মীয় অনুভূতির চেয়ে ঈশ্বরের জন্য আপনার ভালবাসা বেড়েছে, তখন আপনি সেই সমস্ত উৎসব পালন করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, যা ঈশ্বরকে খুশি করে না। যিহোবা কি আপনার সিদ্ধান্তকে আশীর্বাদ করেননি?—ইব্রীয় ১১:২৫ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।

১৮. বাইবেলের সত্য যখন স্পষ্ট করা হয় তখন আমাদের কীভাবে তা নেওয়া উচিত?

১৮ ঈশ্বরের পথে চলে আমরা সবসময় উপকার পাই। (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) তাই বাইবেলের একটা বিষয়ের ওপর যখন আমাদের ধারণাকে আরও স্পষ্ট করা হয়, আসুন আমরা সবাই সত্য আরও ভালভাবে বুঝতে পারার জন্য আনন্দ করি! আর এভাবে আমাদের জ্ঞান যখন বেড়ে চলে তখন তা প্রমাণ করে যে আমরা ঠিক পথে চলছি। এটা “ধার্ম্মিকদের পথ” যা ‘প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।’ (হিতোপদেশ ৪:১৮) এটা ঠিক যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের কিছু দিক এখনও আমাদের কাছে “অস্পষ্ট।” কিন্তু ঈশ্বরের নিরূপিত সময় যখন আসবে, তখন আমরা সত্যকে স্পষ্ট ও ঠিক করে বুঝতে পারব, যা দেখাবে যে আমরা ঈশ্বরের ‘পথে’ অটল রয়েছি। এখন আমরা যেন যিহোবা আমাদেরকে যে সত্যগুলো স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তার জন্য আনন্দ করি এবং যে সত্যগুলো এখনও স্পষ্ট করা হয়নি, তা বোঝার জন্য অপেক্ষা করি।

১৯. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে আমরা সত্যকে ভালবাসি?

১৯ আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে আমরা দীপ্তিকে ভালবাসি? নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য পড়ে, সম্ভব হলে রোজ। আপনি কি নিয়মিত বাইবেল পড়েন? প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! পত্রিকাগুলোও আমাদের জন্য প্রচুর পুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাবার জোগায়। শুধু তাই নয়, আমাদের উপকারের জন্য তৈরি করা ব্রোশার এবং অন্য প্রকাশনাগুলোর কথাও চিন্তা করুন। আর যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক (ইংরেজি)-এ রাজ্যের প্রচার কাজ সম্বন্ধে যে সমস্ত উৎসাহজনক রিপোর্ট দেওয়া হয় সেই বিষয়েই বা কী বলা যায়?

২০. যিহোবার কাছ থেকে আসা দীপ্তি ও সত্যের সঙ্গে আমাদের খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত থাকার কী সম্পর্ক রয়েছে?

২০ হ্যাঁ, গীতসংহিতা ৪৩:৩ পদে বলা প্রার্থনার উত্তর যিহোবা চমৎকারভাবে দিয়েছেন। ওই পদের শেষে আমরা পড়ি: “[তোমার দীপ্তি ও সত্য] তোমার পবিত্র গিরিতে ও তোমার আবাসে আমাকে উপস্থিত করুক।” আপনি কি লাখ লাখ লোকেদের একজন হতে চান যারা আজ যিহোবাকে উপাসনা করছেন? আমাদের সভাগুলোতে যে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেওয়া হয়, বিশেষ করে তার মাধ্যমেই যিহোবা আজকে জ্ঞানের দীপ্তি দেন। খ্রীষ্টীয় সভাগুলোর জন্য আমাদের উপলব্ধিকে আরও বাড়ানোর জন্য আমরা কী করতে পারি? আমরা আপনাদেরকে প্রার্থনা সহকারে পরের প্রবন্ধে এই বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য বলি।

[পাদটীকাগুলো]

^ সি. টি. রাসেল মারা যাওয়ার পর শাস্ত্রের ওপর অধ্যয়ন এর সপ্তম খণ্ড লেখা হয়েছিল যাতে যিহিষ্কেল এবং প্রকাশিত বাক্য বইয়ের বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই খণ্ডের কিছু কিছু জায়গায় ভাই রাসেলের ধারণাও লেখা হয়েছিল। কিন্তু ওই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মানে বোঝার সময় তখনও আসেনি আর তাই শাস্ত্রের ওপর অধ্যয়ন এর ওই খণ্ডে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, তা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যিহোবার অনুগ্রহ এবং জগতে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো দেখে খ্রীষ্টানরা ওই ভবিষ্যদ্বাণীর বইগুলোর মানে আরও ঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন।

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

• কেন যিহোবা ধীরে ধীরে তাঁর উদ্দেশ্যগুলো জানান?

• যিরূশালেমের প্রেরিতেরা এবং প্রাচীনবর্গ কীভাবে ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা মীমাংসা করেছিলেন?

• প্রাথমিক বাইবেল ছাত্ররা কোন্‌ পদ্ধতিতে বাইবেল অধ্যয়ন করতেন আর কেন এটা ব্যবহারিক ছিল?

• কীভাবে ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে আধ্যাত্মিক দীপ্তির ঝলক দেখা গেছে তা উদাহরণ দিয়ে বলুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

চার্লস টেজ রাসেল জানতেন যে প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ওপর দীপ্তির ঝলক ঈশ্বরের নিরূপিত সময়েই দেখা যাবে