সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আজকে সান্ত্বনার খুব দরকার!

আজকে সান্ত্বনার খুব দরকার!

আজকে সান্ত্বনার খুব দরকার!

“দেখ, উপদ্রুত লোকদের অশ্রুপাত হইতেছে, কিন্তু তাহাদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই; উপদ্রবী লোকদের হস্তে বল আছে, কিন্তু উপদ্রুত লোকদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই।”উপদেশক ৪:১.

 আপনি কি সান্ত্বনা পেতে চান? আপনার জীবনে কি এমন কোন সময় এসেছে যখন হতাশার কালো মেঘ পেরিয়ে সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য আপনি আকুল হয়ে উঠেছেন? আপনি কি কখনও মরিয়া হয়ে ভেবেছেন যে আপনার দুঃখকে লাঘব করার জন্য কাউকে আপনার চাই?

জীবনে চলার পথে কোন না কোন সময়ে আমাদের সবারই ভীষণভাবে সান্ত্বনা ও উৎসাহের দরকার পড়ে। কারণ আমাদের জীবনে কখনও না কখনও এমন কিছু না কিছু ঘটে যায়, যা আমাদেরকে দুঃখ দেয়। এইরকম সময়ে আমরা চাই যে অন্যেরা আমাদের দুঃখ বুঝুক, আমাদের ভালবাসা দেখাক ও আমাদের সাহস দিক। কিছু লোকেরা দুঃখিত কারণ তাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে, অন্যেরা এইজন্য দুঃখ করেন যে জীবনে তারা সেই সমস্ত কিছু পাননি যা পাওয়ার স্বপ্ন তারা দেখেছিলেন। আবার কিছুজন দুঃখিত কারণ তাদের হয়তো কোন কঠিন অসুখ আছে।

শুধু তাই নয়, আমাদের দিনে যেসব ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে, তার জন্যও অনেক লোকেদের সান্ত্বনা ও আশার খুবই দরকার। শুধু গত শতাব্দীতেই, দশ কোটির বেশি মানুষ যুদ্ধে মারা গেছে। * আর তাদের প্রিয়জনেরা—বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান—আজও তাদের মনে করে চোখের জল ফেলে। তাদের এমন একজনের দরকার যে তাদের সান্ত্বনা দেবে। আজকে, একশ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে বাস করছে। পৃথিবীর অর্ধেক মানুষেরা ভাল মতো চিকিৎসা করাতে ও দরকারি ওষুধপত্র কিনতে পারে না। বড় বড় শহরে দূষণ বেড়েই চলেছে আর শহরের রাস্তাগুলোতে কোটি কোটি বেওয়ারিশ বাচ্চারা ঘুরে বেড়ায়, এদের অনেকেই ড্রাগ নিতে শুরু করে আর কিছু মেয়েরা পেটের দায়ে শরীর বিক্রি করে। লক্ষ লক্ষ লোক ঘরছাড়া হয়ে শরণার্থী শিবিরগুলোতে কোনরকমে বেঁচে থাকে।

সংখ্যা যাই হোক না কেন, এই সংখ্যা সেই লোকেদের দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার কথা বলতে পারে না। যেমন স্ভেতলানার কথাই ভেবে দেখুন, যে বল্কান অঞ্চলে থাকত। সে খুব গরিব পরিবারে জন্মেছিল। * সে বলে, ‘অভাবের জন্য আমার বাবামা আমাকে ভিক্ষা করে বা চুরি করে পয়সা আনতে বলত। আমাদের ঘরে নীতি বলে কোন জিনিস ছিল না আর ঘরের লোকেরা এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিল যে তারা আমাকেও রেহাই দেয়নি। এইসময় আমি একটা হোটেলে কাজ পাই কিন্তু আমার মা আমার টাকা নিয়ে নিত। মা বলেছিল যে যদি কখনও আমি এই কাজ ছেড়ে দিই, তাহলে সে আত্মহত্যা করবে। ফলে পতিতা হয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। কিছুদিন পরে আমি গর্ভবতী হই এবং গর্ভপাত করাই। তাই মাত্র ১৫ বছর বয়সেই আমাকে ৩০ বছরের মহিলার মতো দেখাত।’

লাটভিয়ার যুবক লাইমেনিস তার জীবনে ঘটে যাওয়া দুঃখের কাহিনী শুনাতে গিয়ে বলেন, পরিস্থিতি তাকে এতটাই নিরাশ করে দিয়েছিল যে তার সামনে কোন আশা ছিল না। ২৯ বছর বয়সে তিনি মোটরগাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েন আর এর ফলে তার শরীর কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পঙ্গু হয়ে যায়। হতাশায় তিনি মদ খেতে শুরু করেন। পাঁচ বছর পর তার জীবন একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল কারণ তখন তিনি মাতাল আর তার সামনে শুধু অন্ধকারই পড়ে ছিল। এখন তিনি সান্ত্বনা পেতে চান কিন্তু কোথা থেকে তিনি তা পেতে পারেন?

কিংবা এঞ্জির কথা দেখুন। তার স্বামীর তিন বার ব্রেন অপারেশন হয়েছিল আর তাই প্রথম প্রথম তার কিছু কিছু অঙ্গ পঙ্গু হয়ে যায়। তৃতীয় অপারেশনের পাঁচ বছর পর, এক সাংঘাতিক দুর্ঘটনা ঘটায় তিনি মাথায় খুব গভীর আঘাত পান। আর এতে তিনি মারা যেতেও পারতেন। তার স্ত্রী যখন ইমারজেন্সি রুমে ঢুকে স্বামীকে অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখেন, তিনি যেন পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এখন তাকে একলা তার পরিবারের দেখাশোনা করতে হবে ভেবে তার মাথায় যেন পাহাড় ভেঙে পড়েছিল। তিনি এখন কোথা থেকে সাহায্য ও সান্ত্বনা পাবেন?

কিছু বছর আগে শীতের সেই দিনটা প্যাটের জন্য অন্য দিনগুলোর মতোই সাধারণ একটা দিন ছিল। কিন্তু পরের তিন দিনে যা ঘটেছিল তা প্যাটের মনে নেই। পরে তার স্বামী বলেছিল যে তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয় আর তারপর তার হার্ট আ্যটাক হয়। তার হৃদস্পন্দন খুব বেড়ে যায় আর পরে তা একেবারেই থেমে যায়। তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। প্যাট বলেন, “আমার হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু আমার মস্তিস্ক তখনও কাজ করছিল।” ডাক্তারদের চেষ্টায় তিনি কোনরকমে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। চিকিৎসা চলাকালে তার যা মনে হয়েছিল সে সম্বন্ধে তিনি বলেন: “নানারকম ডাক্তারী পরীক্ষার কথা শুনে আমি খুব ভয় পেতাম, বিশেষ করে যখন তারা আমার হৃদস্পন্দনকে বাড়াতেন কমাতেন আর কখনও তা একেবারে বন্ধ করে দিতেন।” এই কষ্টের সময়ে কী তাকে সান্ত্বনা ও স্বস্তি দিতে পারত?

এক মোটরগাড়ি দুর্ঘটনায় জো ও রেবেকা তাদের ১৯ বছরের ছেলেকে হারিয়েছিলেন। তারা বলেন, ‘ছেলের মৃত্যু আমাদের সুখের সংসারকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছিল, আমরা আগে আর কখনও এত বড় দুঃখের মুখোমুখি হইনি। এর আগে যখন অন্য কোন ঘরে কেউ মারা যেত তখন তাদের শোক আমরাও ভাগ করে নিয়েছি কিন্তু আমরা জানতাম না যে নিজের কাউকে হারানোর যন্ত্রণা কত অসহ্য। আমাদের ছেলে মারা যাওয়ার পরই আমরা তা বুঝেছিলাম। তাহলে যখন কেউ এই ‘অসহ্য যন্ত্রণা,’ প্রিয়জনকে হারানোর এই ব্যথা ভোগ করেন তখন তারা কোথা থেকে সান্ত্বনা পেতে পারেন?

এই লোকেরা ও অন্য আরও লক্ষ লক্ষ লোকেরা সত্যি করেই সান্ত্বনা পেয়েছেন। তারা কোথা থেকে সান্ত্বনা পেয়েছেন আর আপনিও কোথা থেকে তা পেতে পারেন সেটা জানার জন্য পরের প্রবন্ধটা পড়ুন।

[পাদটীকাগুলো]

^ এই সমস্ত যুদ্ধগুলোতে আসলে কত জন সৈনিক ও কত জন সাধারণ নাগরিক মারা গেছে, তা আজ পর্যন্ত ঠিক করে জানা যায় না। যেমন, ১৯৯৮ সালের আমেরিকার যুদ্ধের তথ্য (ইংরেজি) বই শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্বন্ধে বলে: “কিছু লোক বলেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (সৈনিক ও সাধারণ নাগরিক মিলিয়ে) ৫ কোটি লোক মারা গিয়েছিল। কিন্তু, যারা এই সম্বন্ধে বেশি খোঁজ-খবর করেছেন তারা মনে করেন যে আসল সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি—এই সংখ্যা হয়তো দশ কোটি।”

^ নাম বদলে দেওয়া হয়েছে।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

UNITED NATIONS/PHOTO BY J. K. ISAAC

UN PHOTO ১৪৬১৫০ BY O. MONSEN