সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা—“দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি”

ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা—“দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি”

ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা—“দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি”

“যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি কহিলেন, দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি। পরে তিনি কহিলেন, . . . এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”প্রকাশিত বাক্য ২১:৫.

১, ২. কেন লোকেরা ভবিষ্যতের বিষয় অনুমান করতে ও যারা তা জানে বলে দাবি করে তাদের কথা বিশ্বাস করতে ইতস্তত করে?

 ‘কাল কী হবে তা কে জানে?’ প্রায়ই লোকেরা একথা বলেন আর আপনিও হয়তো কখনও একথা বলেছেন বা ভেবেছেন। মানুষ ভবিষ্যতের কথা একেবারেই বলতে পারে না। তারা ঠিক করে বলতে পারে না যে সামনের মাসগুলোতে বা বছরগুলোতে কী ঘটতে চলেছে। এইজন্য তারা ভবিষ্যতের বিষয়ে অনুমান করতে চায় না আর তারা সেই সমস্ত লোকেদের কথা বিশ্বাস করতেও ইতস্তত করে, যারা দাবি করে যে তারা ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে।

ফোবস পত্রিকা সময় সম্বন্ধে একটা প্রবন্ধ ছাপিয়েছিল। এতে টেলিভিশন প্রযোজক রবার্ট ক্রিঞ্জলি লিখেছিলেন: “সময়ের কাছে আমাদের সবাইকেই হেরে যেতে হয় কিন্তু ভবিষ্যদ্বক্তারা যেন গো-হারা হারে। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনুমান করা এমন এক খেলা, যে খেলায় মানুষ প্রায় সবসময়ই হেরে যায়। . . . তবুও ভবিষ্যদ্বক্তারা একেবারেই হাল ছাড়ে না।”

৩, ৪. (ক) কিছু লোকেরা ২০০০ সাল সম্বন্ধে কী আশা করেন? (খ) বেশির ভাগ লোকেরা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কোন্‌ বাস্তব বিষয়কে স্বীকার করেন?

আপনি হয়তো দেখেছেন যে নতুন সহস্রাব্দকে ঘিরে লোকেরা অনেক জল্পনাকল্পনা করছে আর তা দেখে বোঝা যায় যে অনেক লোকেরাই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে। গত বছরের প্রথম দিকে কানাডার ম্যাকলিনস্‌ পত্রিকায় বলা হয়েছিল: “কানাডার বেশির ভাগ লোক আশা করে যে ২০০০ সাল সত্যি করেই কোন বড় ও নতুন পরিবর্তন শুরু করবে, যখন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।” ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ডুয়েড্‌নি বলেন: “২০০০ সালে পা রেখে আমরা খুবই ভয়ানক আর নিষ্ঠুর এক শতাব্দীর হাত থেকে রেহাই পাব।”

এই কথাকে কি আপনার অবাস্তব বলে মনে হয়? কানাডায় করা একটা সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছিল যে মাত্র ২২ শতাংশ লোক “মনে করেন যে ২০০০ সালের পর পৃথিবীতে নতুন নতুন ও বড় বড় পরিবর্তন হবে, আর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।” আসলে ওই সমীক্ষার অর্ধেক লোকই বলেন যে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে “আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ” হতে পারে। অতএব, এটা পরিষ্কার যে বেশির ভাগ লোকই মনে করে নতুন সহস্রাব্দ আমাদের সমস্যাগুলোকে দূর করতে পারবে না কিংবা সবকিছু নতুনও করতে পারবে না। ব্রিটেনের রয়াল সোসাইটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, স্যার মাইকেল আতিয়াহ্‌ লিখেছিলেন: “প্রযুক্তি এত তাড়াতাড়ি সবকিছু বদলে দিচ্ছে . . . যে কারণে মনে হয় যে একবিংশ শতাব্দীতে সারা পৃথিবীর সামনে অনেক বড় বড় ও কঠিন সমস্যা এসে খাঁড়া হবে। কিন্তু, এখনই পৃথিবীতে অনেক সমস্যা আছে যার কোন সমাধান আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে, প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পরিবেশ দূষণ বাড়ছে আর দরিদ্রতা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য আমাদের খুব তাড়াতাড়িই কিছু করা দরকার।”

৫. কে ঠিক করে আমাদের ভবিষ্যৎ বলতে পারেন?

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘মানুষ যখন কালকের কথা বলতেই পারে না তখন তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার কী, কাল যা হবে কালকে দেখা যাবে! কিন্তু, আমরা কি সত্যিই কাল নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে থাকতে পারি?’ না, পারি না! এটা ঠিক যে কাল কী হবে তা মানুষ ঠিক ঠিক করে বলতে পারে না কিন্তু তার মানে এই না যে কেউই পারেন না। তাহলে, কে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলতে পারেন আর কেনই বা আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল? এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আপনি চারটে বিশেষ ভবিষ্যদ্বাণী থেকে পেতে পারেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো এমন একটা বইয়ে লেখা আছে, যেটা সারা পৃথিবীর লোকেদের কাছে আছে। হাজার হাজার লোকেরা এটা পড়ে কিন্তু এটা যা বলে সে কথায় তারা মন দেয় না আর এই বই নিয়ে লোকেদের অনেক ভুল ধারণাও আছে। হ্যাঁ, সেই বইটা হল বাইবেল। বাইবেল সম্বন্ধে আপনার মতামত যাই হোক না কেন আর বাইবেল আপনি যতখানিই জানুন না কেন, এই চারটে ভবিষ্যদ্বাণীকে মন দিয়ে দেখা আপনার জন্য খুবই জরুরি। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে একথাও ঠিক করে বলা হয়েছে যে আপনার আর আপনার আপনজনদের ভবিষ্যৎ কতই না উজ্জ্বল হবে।

৬, ৭. যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী কখন লেখা হয়েছিল আর এই ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল?

প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী যিশাইয় ৬৫ অধ্যায়ে পাওয়া যায়। তা পড়ার আগে এটা কখন লেখা হয়েছিল এবং তখনকার লোকেদের কোন্‌ অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তা মনে রাখুন। এটা ঈশ্বরের ভাববাদী যিশাইয় যিহূদা রাজ্য ধ্বংসের একশ বছরের কিছু আগে লিখেছিলেন। আর সেটা তখন হয়েছিল যখন বাবিলনীয়রা যিহূদার রাজধানী যিরূশালেমকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল ও লোকেদেরকে বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল। যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করার একশ বছরেরও কিছু সময় পরে তা পূর্ণ হয়েছিল।—২ বংশাবলি ৩৬:১৫-২১.

এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হওয়ার আগে কী হয়েছিল, তা মনে করে দেখুন। ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে যিশাইয় ভাববাণী করেছিলেন যে পারস্যের এক রাজা বাবিলনকে পরাজিত করবেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, যিশাইয় এই রাজার জন্মের আগেই তার নাম বলে দিয়েছিলেন। (যিশাইয় ৪৫:১) ভবিষ্যদ্বাণীর কথা মতো কোরস বাবিলনকে অধিকার করে নেন ও যিহুদিদের ছেড়ে দেন এবং তারা সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে তাদের নিজেদের দেশে ফিরে আসে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হল যে যিশাইয় এই ফিরে আসার বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা আমরা যিশাইয় ৬৫ অধ্যায় পড়লে পাই। কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণীতে যিহুদিরা তাদের নিজেদের দেশে বাস করতে শুরু করার পর যে আশীর্বাদ পেয়েছিল সে বিষয়ে বিশেষ করে বলা আছে।

৮. যিশাইয় যিহুদিদের কীরকম ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলেছিলেন আর বিশেষভাবে কোন্‌ কথাগুলো আগ্রহজনক?

আসুন এখন আমরা যিশাইয় ৬৫:১৭-১৯ পদ পড়ি: “দেখ, আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না। কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর; কারণ দেখ, আমি যিরূশালেমকে উল্লাসভূমি ও তাহার প্রজাদিগকে আনন্দ-ভূমি করিয়া সৃষ্টি করি। আমি যিরূশালেমে উল্লাস করিব, আমার প্রজাগণে আমোদ করিব; এবং তাহার মধ্যে রোদনের শব্দ কি ক্রন্দনের শব্দ আর শুনা যাইবে না।” দেখুন যে এই ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশাইয় কত খুশি, আনন্দ ও উল্লাসের কথা বলেছেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে বাবিলনে বন্দি থাকার সময় যিহুদিরা কখনও এত আশীর্বাদ পায়নি। এখন “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” কথাটা দেখুন। পুরো বাইবেলে মাত্র চারবার এই কথাগুলো পাওয়া যায়, যার মধ্যে এটাই হল প্রথমবার। এই ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলে।

৯. যিশাইয় ৬৫:১৭-১৯ পদের ভবিষ্যদ্বাণী প্রথমে কখন পূর্ণ হয়েছিল?

যিশাইয় ৬৫:১৭-১৯ পদের ভবিষ্যদ্বাণী প্রথম পূর্ণ হয়েছিল যখন যিহুদিরা নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল এবং সত্য উপাসনাকে আবার শুরু করেছিল। (ইষ্রা ১:১-৪; ৩:১-৪) কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণীতে “নূতন পৃথিবীর” মানে কী? এখানে কি কোন নতুন গ্রহের কথা বলা হচ্ছিল? না, কারণ যিহুদি লোকেরা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল যা এই পৃথিবীতেই ছিল, অন্য কোন গ্রহে নয়। তাহলে এই নতুন পৃথিবী কী? এর মানে বোঝার জন্য আমাদের অনুমান করার দরকার নেই, যেমন লোকেরা নসট্রাডামাস বা অন্য ভবিষ্যদ্বক্তাদের ভবিষ্যদ্বাণী বোঝার জন্য করেন। বাইবেল থেকেই আমরা তা জানতে পারি যে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা এই নতুন পৃথিবীর মানে কী।

১০. যিশাইয়ের বলা নতুন “পৃথিবীর” মানে কী?

১০ ‘পৃথিবী’ শব্দ দিয়ে বাইবেলে সবসময় আমাদের গ্রহকেই বোঝায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইব্রীয় ভাষায় গীতসংহিতা ৯৬:১ পদ বলে: “সমস্ত পৃথিবী! সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাও।” আমরা জানি যে পৃথিবী ও সমুদ্র গান গাইতে পারে না। মানুষ গান গাইতে পারে। তাই, গীতসংহিতা ৯৬:১ পদ আসলে পৃথিবীর মানুষদেরকেই বোঝাচ্ছে। * কিন্তু যিশাইয় ৬৫:১৭ পদ “নূতন আকাশমণ্ডলের” কথাও বলে। ‘পৃথিবী’ যদি যিহুদিদের নিজেদের দেশে ফিরে আসা মানুষদের নতুন সমাজকে বোঝায়, তাহলে এই “নূতন আকাশমণ্ডলের” মানে কী?

১১. ভবিষ্যদ্বাণীতে “নূতন আকাশমণ্ডলের” মানে কী?

১১ এম ক্লিনটক ও স্ট্রং এর লেখা সাইক্লোপিডিয়া অফ বিবলিক্যাল, থিওলজিক্যাল আ্যন্ড ইকলেসিয়াসটিক্যাল লিটারেচার বলে: “যখনই কোন ভবিষ্যদ্বাণীতে আকাশমণ্ডলের কথা বলা হয় . . . তখন তার মানে হল শাসনরত সরকার . . . যা প্রজা বা সাধারণ লোকেদের ওপর শাসন করে। ঠিক যেমন আকাশ পৃথিবীর ওপরে আছে আর তা যেন পৃথিবীর ওপর শাসন করছে।” এরপর এই সাইক্লোপিডিয়া ‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী’ সম্বন্ধে বলে যে ‘ভবিষ্যদ্বাণীতে এই কথাগুলো শাসনকারী ও প্রজাদের বোঝায়। আকাশ বলতে শাসনকারী শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় আর পৃথিবী বলতে সাধারণ নাগরিকদের বোঝায়, যে লোকেদের ওপর শাসন করা হয়।’

১২. নিজেদের দেশে ফিরে আসা যিহুদিদের কাছে ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’ কী ছিল?

১২ যিহুদিরা যখন বাবিলন থেকে ফিরে এসেছিল তখন তারা এমন কিছু পেয়েছিল যার সবকিছু নতুন ছিল। সেখানে এক নতুন শাসনব্যবস্থা ছিল। সেখানে দেশাধ্যক্ষ ছিলেন দায়ূদের বংশ থেকে আসা সরুব্বাবিল এবং মহাযাজক ছিলেন যিহোশূয়। (হগয় ১:১, ১২; ২:২১; সখরিয় ৬:১১) তারা ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ গঠন করেছিল। কাদের ওপর? এই “নূতন আকাশমণ্ডলের” নিচে এক ‘নূতন পৃথিবী’ ছিল অর্থাৎ ঈশ্বরের লোকেদের এক নতুন সমাজ, যারা বাবিলন থেকে ফিরে এসে তাদের নিজেদের দেশে বাস করতে শুরু করেছিল, যাতে যিরূশালেম ও এর মন্দিরকে যিহোবার উপাসনার জন্য আবার তৈরি করতে পারে। এভাবে নতুন আকাশমণ্ডলের ও নতুন পৃথিবীর ভবিষ্যদ্বাণী এই যিহুদিদের সময়ে পূর্ণ হয়েছিল।

১৩, ১৪. (ক) ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবীর’ কোন্‌ দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণী এখন আমরা দেখব? (খ) আজকে আমরা কেন এই ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশেষ করে মন দেব?

১৩ তবে মনে রাখুন যে আমরা এখানে শুধু ইতিহাস পড়ছি না বা শুধু বাইবেলের জ্ঞান নিচ্ছি না। এই কথাগুলোর সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে! এইজন্য আসুন আমরা “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণী, যেটা ২ পিতর ৩ অধ্যায়ে পাওয়া যায় সেটা দেখি।

১৪ যিহুদিরা দেশে ফিরে আসার প্রায় ৫০০ বছর পরে প্রেরিত পিতর তার চিঠিটা লিখেছিলেন। পিতর ‘প্রভু’ যীশুর একজন প্রেরিত ছিলেন আর খ্রীষ্টের শিষ্যদের কাছেই তিনি এই চিঠিটা লিখেছিলেন। ৩ পদে পিতর যীশুর “আগমনের [উপস্থিতির] প্রতিজ্ঞা” সম্বন্ধে বলেছেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীটা আজকে আমাদের জন্য খুবই জরুরি। কারণ প্রমাণ দেখায় যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে যীশু উপস্থিত আছেন। যার মানে হল, স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হয়ে তিনি সিংহাসনে বসে আছেন। (প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৮; ১১:১৫, ১৮) যীশু খ্রীষ্ট এখন স্বর্গে রাজা এই কথা মনে রেখে আসুন আমরা ২ পিতর ৩:১৩ পদের ভবিষ্যদ্বাণীটা দেখি।

১৫. ২ পিতরে ৩:১৩ পদে বলা ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ কী?

১৫ দ্বিতীয় পিতর ৩:১৩ পদে আমরা পড়ি: “তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” আপনি হয়তো এর মধ্যেই জেনেছেন যে যীশু এখন স্বর্গে রাজা আর তিনিই হলেন “নূতন আকাশমণ্ডলের” প্রধান শাসক। (লূক ১:৩২, ৩৩) কিন্তু বাইবেলের অন্য পদগুলো দেখায় যে তিনি একাই রাজত্ব করবেন না। যীশু তাঁর প্রেরিতদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তারা এবং তাদেরই মতো অল্প কিছু ব্যক্তি স্বর্গে যাবেন। ইব্রীয় বইয়ে প্রেরিত পৌল এইরকম ব্যক্তিদের “স্বর্গীয় আহ্বানের অংশিগণ” বলেছেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) আর যীশু বলেছিলেন যে তারাই স্বর্গে তাঁর সঙ্গে সিংহাসনে বসবেন। (ইব্রীয় ৩:১; মথি ১৯:২৮; লূক ২২:২৮-৩০; যোহন ১৪:২, ৩) এর থেকে বোঝা যায় যে কিছু ব্যক্তিরা যীশুর সঙ্গে রাজত্ব করবেন। তাহলে, পিতরের বলা এই ‘নূতন পৃথিবী’ কী?

১৬. আজ কীভাবে “নূতন পৃথিবীর” ভিত তৈরি করা হচ্ছে?

১৬ প্রাচীন কালে এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছিল যখন যিহুদিরা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল আর আজকে ২ পিতর ৩:১৩ পদ সেই ব্যক্তিদের বেলায় পূর্ণ হচ্ছে, যারা খুশি মনে নতুন আকাশমণ্ডলের শাসনকে মেনে নেন। আজকে, সারা পৃথিবীতে আপনি লাখ লাখ লোকেদের দেখতে পাবেন, যারা খুশি মনে এই শাসনকে মেনে নিচ্ছেন। তারা এর শিক্ষা থেকে উপকার পাচ্ছেন এবং বাইবেলের কথার সঙ্গে মিল রেখে চলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। (যিশাইয় ৫৪:১৩) এই লোকেরা “নূতন পৃথিবীর” ভিত গড়ে তুলছেন। এই নতুন সমাজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে আর এতে সমস্ত জাতি, ভাষা, দেশের লোকেরা আসছেন। তারা একসঙ্গে তাদের রাজা যীশু খ্রীষ্টের অধীনে কাজ করছেন। আপনিও তাদের মধ্যে একজন হতে পারেন!—মীখা ৪:১-৪.

১৭, ১৮. ২ পিতর ৩:১৩ পদের কথাগুলো আমাদের কেমন ভবিষ্যতের আশা দেয়?

১৭ কিন্তু, এখানেই শেষ নয় কারণ ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু হবে। যদি আপনি ২ পিতর ৩ অধ্যায়টা মন দিয়ে পড়েন, তাহলে আপনি দেখবেন যে সেখানে অনেক বড় বড় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ঘটবে। ৫ ও ৬ পদে পিতর নোহের দিনের জলপ্লাবনের কথা বলেন, যাতে সমস্ত দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। ৭ পদে পিতর বলেন যে “এই বর্ত্তমান কালের আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী” অর্থাৎ আজকের দিনের সরকারগুলো ও লোকেরা “ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের” দিনের জন্য রক্ষিত হচ্ছে। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) অতএব, এই কথাগুলো থেকে আমরা আরও একবার বুঝতে পারি যে “বর্ত্তমান কালের আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী”-র মানে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও তাদের ওপর শাসন করছে এমন সরকারগুলো, সত্যিকার আকাশ বা আমাদের পৃথিবী নয়।

১৮ পিতর এরপর বলেন যে এই ধ্বংস যিহোবার দিনে হবে, যখন পুরনো ব্যবস্থাকে পরিষ্কার করা হবে যেন তার জায়গায় নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবী আসতে পারে। দেখুন ১৩ পদে বলা হয়েছে যে এর মধ্যে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” এর থেকে কি বোঝা যায় না যে শীঘ্রিই অনেক বড় বড় কিছু পরিবর্তন হবে? এর মানে কি এই নয় যে সত্যিই সমস্ত কিছু নতুন হবে, যখন সমস্ত দুষ্টতাকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে আর মানুষেরা সুখী হবে? যদি আপনি এগুলোকে আপনার মনের চোখ দিয়ে পরিষ্কার দেখতে পান, তাহলে তার মানে আপনি ভবিষ্যৎকে এমনভাবে বুঝেছেন যেভাবে আজকে অনেক লোকেরাই বোঝেন না।

১৯. প্রকাশিত বাক্যের বই “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” কথা বলার আগে কোন্‌ ঘটনাগুলোর কথা বলে?

১৯ আসুন আমরা আরও কিছু বিষয় দেখি। এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যিশাইয় ৬৫ অধ্যায়ে আর ২ পিতর ৩ অধ্যায়ে “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” কথা দেখেছি। এখন প্রকাশিত বাক্য ২১ অধ্যায় খুলুন, যেখানে আরেকবার এই কথাগুলো বলা হয়েছে। এই কথাগুলো বোঝার জন্যও আমাদের এর আগে কী হয়েছিল তা দেখা দরকার। দুটো অধ্যায় আগে, প্রকাশিত বাক্য ১৯ অধ্যায়ে রূপক ভাষায় এক যুদ্ধের কথা লেখা রয়েছে। এই যুদ্ধ, দুটো দেশের মধ্যে হবে না। এই যুদ্ধে এক দিকে রয়েছেন “ঈশ্বরের বাক্য।” আপনি হয়তো জানেন যে যীশু খ্রীষ্ট হলেন ঈশ্বরের বাক্য। (যোহন ১:১, ১৪) তিনি স্বর্গে আছেন আর এই দর্শনে তাঁর সঙ্গে এক বিরাট সেনাবাহিনীকে দেখা যায়। তারা কার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন? ওই অধ্যায়েই বলা আছে যে তারা “রাজগণের,” “সহস্রপতিবর্গের,” এবং “ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকল মনুষ্যের” সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। এই যুদ্ধ যিহোবার দিনে হবে যখন দুষ্টতাকে চিরতরে শেষ করে দেওয়া হবে। (২ থিষলনীকীয় ১:৬-১০) পরের অধ্যায়ে অর্থাৎ প্রকাশিত বাক্য ২০ অধ্যায়ের শুরুতেই “পুরাতন সর্প, . . . দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ]”-র ধ্বংসের কথা বলা আছে। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখে এখন আসুন আমরা ২১ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে মন দিই।

২০. প্রকাশিত বাক্য ২১:১ পদে কোন্‌ বিষয়ে বলা আছে?

২০ প্রেরিত যোহন এই কথাগুলো লিখে ২১ অধ্যায় শুরু করেন: “আমি ‘এক নূতন আকাশ ও এক নূতন পৃথিবী’ দেখিলাম; কেননা প্রথম আকাশ ও প্রথম পৃথিবী লুপ্ত হইয়াছে; এবং সমুদ্র আর নাই।” যিশাইয় ৬৫ অধ্যায় এবং ২ পিতর ৩ অধ্যায় থেকে আমরা দেখেছি যে এখানে সত্যিকারের আকাশ, পৃথিবী ও সমুদ্রের লুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। আর প্রকাশিত বাক্য ১৯ ও ২০ অধ্যায় থেকে আমরা দেখেছি যে এই পৃথিবীর দুষ্ট মানুষ, তাদের ওপর শাসন করে এমন সরকারগুলো আর তাদের অদৃশ্য শাসক শয়তানকে সরিয়ে ফেলা হবে। হ্যাঁ, এই ভবিষ্যদ্বাণীতে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে যে এগুলোর জায়গায় এক পুরোপুরি নতুন ব্যবস্থা ও নতুন মানুষরা আসবে।

২১, ২২. যোহন আমাদেরকে কোন্‌ আশীর্বাদের কথা বলেন আর নেত্রজল মুছে দেওয়ার মানে কী?

২১ পরের পদগুলোতে আমাদেরকে এই প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে আরও নিশ্চিত করে বলা হয়েছে। ৩ পদে বলা হয়েছে যে ঈশ্বর মানুষদের সঙ্গে থাকবেন, তিনি তাদেরকে আশীর্বাদ করবেন আর তারা তাঁর কথা মেনে চলবে। (যিহিষ্কেল ৪৩:৭) ৪ ও ৫ পদে যোহন বলে চলেন: “তিনি [যিহোবা] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল। আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি কহিলেন, দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি। পরে তিনি কহিলেন, লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।” এই ভবিষ্যদ্বাণী আমাদেরকে কত বড় আশা দেয়!

২২ বাইবেল যে সুন্দর বিষয় সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে তা একটু ভেবে দেখুন। ‘ঈশ্বর তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।’ এটা ঠিক যে ঈশ্বর আমাদের আনন্দাশ্রু কেড়ে নেবেন না। বা আমাদের চোখের জলীয় পদার্থকেও শুকিয়ে দেবেন না কারণ এটা আমাদের চোখের জন্য দরকারি। আসলে তিনি আমাদের চোখ থেকে সেই জল মুছিয়ে দেবেন যা নিরাশা, দুঃখ, বেদনা, হতাশা, আঘাত ও শোকে আসে। আমরা কীভাবে তা বলতে পারি? পরের পদ বলে, “মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।”—যোহন ১১:৩৫.

২৩. নতুন জগতে কী কী থাকবে না বলে যোহনের ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে?

২৩ তাহলে, এর মানে কি এই নয় যে মানুষের আর কোন রোগ হবে না তা সে ক্যানসার, স্ট্রোক এবং হার্টের অসুখ যাই হোক না কেন? আমাদের মধ্যে এমন কে আছেন যে কোন অসুখ, দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে তাদের প্রিয়জনকে হারাননি? মৃত্যু আর হবে না, এর মানে হল সেই সময় যে বাচ্চারা জন্মাবে তাদের আর বুড়ো হয়ে মরতে হবে না। কারণ আর কেউ বুড়ো হবে না। বুড়ো বয়সের অসুখগুলো আর হবে না এবং গিঁটে বাত, হাড়ের ব্যথা, চোখে কম দেখা বা চোখে ছানি পড়া কিছুই থাকবে না।

২৪. ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবীতে’ আমরা কোন্‌ আশীর্বাদ পাব আর আমরা পরের প্রবন্ধে কোন্‌ বিষয় আলোচনা করব?

২৪ যখন মৃত্যু হবে না, কেউ বুড়ো হবে না বা কারও অসুখ হবে না তখন শোক, বিলাপ এবং পীড়াও আর থাকবে না। কিন্তু সেখানেও যদি লোকেদের দারিদ্র ভোগ করতে হয়, শিশুদের ওপর যদি যৌন নিপীড়ন করা হয় বা সাদা-কালো, উঁচু-নিচু, জাতিধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ যদি চলতেই থাকে, তাহলে কি আমাদের চোখে জল আসবে না? এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে আমরা শোক ও আর্তনাদ থেকে মুক্তি পাব না আর তাই ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবীতে’ চোখের জল আসার সমস্ত কারণগুলোকে দূর করে দেওয়া হবে। পৃথিবীর চেহারাই বদলে যাবে! এই পর্যন্ত আমরা ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবীর’ তিনটে ভবিষ্যদ্বাণী দেখেছি। আমরা দেখব যে ঈশ্বর কখন ও কীভাবে ‘সকলই নূতন করবেন।’ পরের প্রবন্ধে এই ভবিষ্যদ্বাণী এবং তার থেকে আমাদের কী লাভ হবে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

[পাদটীকাগুলো]

^ দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল গীতসংহিতা ৯৬:১ পদকে এভাবে অনুবাদ করেছে: “পৃথিবীর সমস্ত মানুষ প্রভুর উদ্দেশে গান গাও।” আর দ্যা কনটেমপোরারি ইংলিশ বাইবেল বলে: “পৃথিবীর সবাই প্রভুর উদ্দেশে প্রশংসা গান গাও।” এই দুটো উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে ‘নূতন পৃথিবী’ বলতে যিশাইয় আসলে ঈশ্বরের লোকেদের বুঝিয়েছিলেন, যারা নিজেদের দেশে ফিরে এসে নতুন সমাজ গড়ে তুলেছিল।

আপনার কতটুকু মনে আছে?

• কোন্‌ তিনটে জায়গায় বাইবেল “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” কথা ভবিষ্যদ্বাণী করে?

• যিহুদিরা বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার পর কীভাবে “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছিল?

• পিতর যে “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” কথা বলেছিলেন তা আসলে কী?

প্রকাশিত বাক্য ২১ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের কেমন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বলে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, কোরসের জন্যই যিহুদিরা সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে তাদের নিজেদের দেশে ফিরতে পেরেছিল