সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নতুন জগৎ—আপনি কি সেখানে থাকবেন?

নতুন জগৎ—আপনি কি সেখানে থাকবেন?

নতুন জগৎ—আপনি কি সেখানে থাকবেন?

“যাবজ্জীবন আনন্দ ও সৎকর্ম্ম করণ ব্যতীত আর মঙ্গল তাহাদের হয় না। আর প্রত্যেক মনুষ্য যে ভোজন পান ও সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে সুখভোগ করে, ইহাও ঈশ্বরের দান।”উপদেশক ৩:১২, ১৩.

১. আমরা কেন বলতে পারি যে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে?

 অনেকে ঈশ্বরকে একজন কঠোর ও নির্দয় ব্যক্তি বলে মনে করেন। কিন্তু ওপরে বলা তাঁর বাক্যের এই কথাগুলো, আমাদেরকে তাঁর সত্যিকারের ছবি দেয়। তিনি একজন ‘ধন্য [সুখী] ঈশ্বর’ আর এইজন্যই তিনি আমাদের প্রথম বাবামাকে পরমদেশে রেখেছিলেন, যেন তারা সুখী হয়। (১ তীমথিয় ১:১১; আদিপুস্তক ২:৭-৯) তাই ঈশ্বর তাঁর লোকেদের জন্য যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা শুনে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।

২. ভবিষ্যতে কেমন অবস্থা হবে?

‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’ সম্বন্ধে বাইবেলে চারটে ভবিষ্যদ্বাণী আছে আর আগের প্রবন্ধে আমরা তিনটে নিয়ে আলোচনা করেছি। (যিশাইয় ৬৫:১৭) এর মধ্যে একটা ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশিত বাক্য ২১:১ পদে রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর পৃথিবীর অবস্থাকে পুরোপুরি বদলে দেবেন ও সমস্ত কিছু নতুন করবেন। তিনি আমাদের চোখের জল মুছে দেবেন। বার্ধক্য, অসুস্থতা, দুর্ঘটনা এবং সবচেয়ে বড় কথা হল মৃত্যু আর থাকবে না। শোক, আর্তনাদ ও ব্যথাও থাকবে না। ভেবে দেখুন যে কত সুন্দর এক ভবিষ্যৎ! কিন্তু, আমরা কি পুরোপুরি ভরসা করতে পারি যে সেই সময় আসবেই আর সেই ভবিষ্যৎ আজকে আমাদের জীবনের ওপর কীভাবে ছাপ ফেলে?

ভরসা রাখার কারণ

৩. ভবিষ্যতের বিষয়ে বাইবেলের প্রতিজ্ঞায় আমরা কেন পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারি?

প্রকাশিত বাক্য ২১:৫ পদ কী বলে দেখুন। ঈশ্বর স্বর্গে সিংহাসনে বসে রয়েছেন আর তিনি বলেন: “দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি।” ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা মানুষদের মিথ্যা প্রতিজ্ঞার মতো নয়। আজকে সরকারগুলো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, সমান অধিকার ও মানব অধিকার দেওয়ার ব্যাপারে যে প্রতিজ্ঞা করে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার সামনে তার কোন মূল্যই নেই। কিন্তু ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞায় আমরা পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারি কারণ বাইবেল বলে যে তিনি “মিথ্যাকথনে অসমর্থ্য।” (তীত ১:২) এই সমস্ত কিছু শুনে আপনি হয়তো বলবেন যে ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞায় আমার পুরোপুরি ভরসা আছে, আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে থাকতে চাই। কিন্তু একটু থামুন। ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু হবে যে সম্বন্ধে আমাদের শেখা দরকার।

৪, ৫. আগের প্রবন্ধে বাইবেলের কোন্‌ ভবিষ্যদ্বাণীগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, যেগুলো ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে তাতে আমাদের বিশ্বাসকে মজবুত করে?

মনে করে দেখুন যে আগের প্রবন্ধে আমরা নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবী সম্বন্ধে কী শিখেছিলাম। আমরা দেখেছিলাম যে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছিল যখন যিহুদিরা নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল এবং সত্য উপাসনাকে আবার শুরু করেছিল। (ইষ্রা ১:১-৩; ২:১, ২; ৩:১২, ১৩) কিন্তু, যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী কি শুধু একবারই পূর্ণ হয়েছিল? কখনোই না! এই ভবিষ্যদ্বাণী ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে পূর্ণ হবে। কেন আমরা এই বিষয়ে এতটা নিশ্চিত? কারণ ২ পিতর ৩:১৩ এবং প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৫ পদে নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবীর প্রতিজ্ঞা খ্রীষ্টানদের কাছে করা হয়েছে যা নতুন জগতে বড় আকারে পূর্ণ হবে।

আগে আমরা যেমন দেখেছি যে বাইবেলে “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” কথা চারবার আছে। এর মধ্যে তিনটে নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং আমাদের বিশ্বাস আরও মজবুত হয়েছে। আমরা শিখেছি যে বাইবেল বলে ঈশ্বর দুষ্টতা এবং দুঃখকষ্ট চিরতরে শেষ করে দেবেন এবং নতুন বিধিব্যবস্থায় মানুষদের আশীর্বাদ করবেন।

৬. “নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী”-র চতুর্থ ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের কী বলে?

আসুন এখন আমরা “নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী”-র চতুর্থ ও শেষ ভবিষ্যদ্বাণীটা দেখি যা যিশাইয় ৬৬:২২-২৪ পদে আছে। সেখানে বলা হয়েছে: “আমি যে নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী গঠন করিব, তাহা যেমন আমার সম্মুখে থাকিবে, তেমনি তোমাদের বংশ ও তোমাদের নাম থাকিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর প্রতি অমাবস্যায় ও প্রতি বিশ্রামবারে সমস্ত মর্ত্ত্য আমার সম্মুখে প্রণিপাত করিতে আসিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর তাহারা বাহিরে গিয়া, যে লোকেরা আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্ম করিয়াছে, তাহাদের শব দেখিবে; কারণ তাহাদের কীট মরিবে না, ও তাহাদের অগ্নি নির্ব্বাণ হইবে না, এবং তাহারা সমস্ত মর্ত্ত্যের ঘৃণাস্পদ হইবে।”

৭. কেন আমরা বলতে পারি যে যিশাইয় ৬৬:২২-২৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণী ভবিষ্যতে পূর্ণ হবে?

এই ভবিষ্যদ্বাণী শুধু সেই যিহুদিদের বেলাতেই পূর্ণ হয়নি, যারা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল বরং এটা আরও বড় আকারে পূর্ণ হবে। পিতরের দ্বিতীয় চিঠি এবং প্রকাশিত বাক্যের বই থেকে আমরা বলতে পারি যে ভবিষ্যতে তা বড় আকারে পূর্ণ হবে। হ্যাঁ, যিশাইয় ৬৬:২২-২৪ পদে দেওয়া ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবীর’ ভবিষ্যদ্বাণী নতুন জগতে বড় আকারে আর অদ্ভুতভাবে পূর্ণ হবে। আসুন আমরা এখন এক ঝলক দেখে নিই যে তখন জীবন কত সুন্দর হবে।

৮, ৯. (ক) ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে তাঁর “সম্মুখে থাকিবে”? (খ) নতুন জগতে যিহোবার সেবকেরা “প্রতি অমাবস্যায় ও প্রতি বিশ্রামবারে” যিহোবাকে উপাসনা করবে এর মানে কী?

প্রকাশিত বাক্য ২১:৪ পদ দেখিয়েছিল যে মৃত্যু আর হবে না। যিশাইয় ৬৬ অধ্যায়েও এই কথাগুলো বলা হয়েছে। আমরা দেখতে পাই, ২২ পদে বলা হয়েছে যে যিহোবা জানেন নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী কিংবা কিছু সময়ের জন্য হবে না। এছাড়াও, তাঁর লোকেরা তাঁর “সম্মুখে থাকিবে” অর্থাৎ চিরকাল বেঁচে থাকবে। ঈশ্বর আজ পর্যন্ত তাঁর লোকেদের জন্য যা করেছেন, তা দেখে আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারি। সত্য খ্রীষ্টানদের ওপর নির্মম তাড়না করা হয়েছে, এমনকি তাদেরকে পৃথিবী থেকে একেবারে মুছে ফেলার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। (যোহন ১৬:২; প্রেরিত ৮:১) কিন্তু, রোমীয় সম্রাট নিরো ও এডল্ফ হিটলারের মতো বড় বড় শত্রুরাও যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের, যারা তাঁর নাম বহন করে তাদেরকে পৃথিবী থেকে একেবারে মুছে ফেলতে পারেনি। যিহোবা আজ পর্যন্ত তাঁর লোকেদের মণ্ডলীকে রক্ষা করে এসেছেন আর আমরা নিশ্চিত যে তিনি সবসময় তা করে যাবেন।

একইভাবে, নতুন পৃথিবী অর্থাৎ নতুন জগতে নতুন সমাজের সত্য উপাসকেরা প্রত্যেকে ঈশ্বরের সম্মুখে থাকবেন, কারণ তারা বিশ্বস্তভাবে সবসময় সৃষ্টিকর্তাকে উপাসনা করে যাবেন। তারা শুধু কখনও কখনও বা মাঝে মধ্যে মন চাইলে উপাসনা করবেন না। ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে যে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন তাতে ইস্রায়েলীয়দের প্রতি মাসে, নতুন চাঁদ দেখা গেলে এবং প্রতি সপ্তায় বিশ্রামবারে উপাসনা করতে হতো। (লেবীয় পুস্তক ২৪:৫-৯; গণনাপুস্তক ১০:১০; ২৮:৯, ১০; ২ বংশাবলি ২:৪) তাই যিশাইয় ৬৬:২৩ পদ ঈশ্বরকে একটানা ও সবসময় অর্থাৎ সপ্তার পর সপ্তা, মাসের পর মাস ধরে উপাসনা করার কথা বলে। সেই সময়ে আজকের মতো কোন নাস্তিক লোক ও মিথ্যা ধর্ম থাকবে না। যিহোবার কাছে “সমস্ত মর্ত্ত্য . . . প্রণিপাত করিতে আসিবে।”

১০. আপনি কেন নিশ্চিত যে নতুন জগতে দুষ্ট লোকেরা থাকবে না?

১০ যিশাইয় ৬৬:২৪ পদ আমাদের নিশ্চিত করে বলে যে নতুন পৃথিবীতে শান্তি ও ধার্মিকতা সবসময়ের জন্য থাকবে। দুষ্ট লোকেরা এটাকে নষ্ট করবে না। মনে করে দেখুন, ২ পিতর ৩:৭ পদ বলে যে সামনে “ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের” দিন আসছে। তখন শুধু ভক্তিহীন লোকেদের ধ্বংস করা হবে। মানুষদের যুদ্ধে প্রায়ই সৈন্যদের চেয়ে সাধারণ মানুষেরাই বেশি প্রাণ হারায় কিন্তু ঈশ্বরের যুদ্ধে নির্দোষ লোকেদের শরীরে একটা আঁচড়ও লাগবে না। মহান বিচারক ন্যায়বিচার পছন্দ করেন আর তিনি আমাদের নিশ্চয়তা দেন যে তাঁর যুদ্ধে শুধু ভক্তিহীন মানুষরা ধ্বংস হবে।

১১. যারা ঈশ্বরের পথে চলে না ও তাঁকে উপাসনা করে না তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে বলে যিশাইয় বলেন?

১১ যে ধার্মিক লোকেরা যিহোবার বিচার থেকে রক্ষা পাবেন, তারা ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হতে দেখবেন। ২৪ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করে, ‘যে লোকেরা যিহোবার বিরুদ্ধে অধর্ম্ম করিয়াছে, তাহাদের শব’ প্রমাণ দেবে যে যিহোবা বিচার করেছেন। যিশাইয়ের কথা শুনে আমাদের হয়তো কিছুটা ধাক্কা লাগতে পারে। কিন্তু, তিনি নতুন কিছু বলছিলেন না কারণ প্রাচীনকালে এরকমই হতো। প্রাচীন যিরূশালেমের প্রাচীরের বাইরে জঞ্জাল ফেলার জায়গা ছিল আর সেখানে কখনও কখনও কুখ্যাত আসামীদের মৃতদেহ ফেলা হতো, যেগুলো সম্মানের সঙ্গে কবর দেওয়ার যোগ্য ছিল না। * সেই মৃতদেহ ও জঞ্জালগুলো কীটে খেত আর জ্বলতে থাকা আগুনে পুড়ে যেত। এই কথা বলে যিশাইয় বুঝিয়েছেন যে যারা জেনেশুনে ঈশ্বরের পথে চলে না ও তাঁকে উপাসনা করে না তারা চিরকালের জন্য ও একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি কী প্রতিজ্ঞা করেছেন

১২. নতুন জগতে জীবন কেমন হবে সেই সম্বন্ধে যিশাইয় আর কী বলেন?

১২ প্রকাশিত বাক্য ২১:৪ পদে আমরা দেখি যে নতুন জগতে কী কী থাকবে না। তাহলে, সেখানে কী কী থাকবে? তখন জীবন কেমন হবে? আমরা কি সেই সম্বন্ধে কোন আভাস পেতে পারি? অবশ্যই। যিশাইয় ৬৫ অধ্যায়ে যে নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবীর কথা বলা আছে, তা যখন পুরোপুরি স্থাপিত হবে তখন আমাদের জীবন কত সুন্দর হবে। নতুন পৃথিবীতে যারা চিরকালের জন্য থাকতে পারবেন তারা কখনও বুড়ো হবেন না আর মারাও যাবেন না। যিশাইয় ৬৫:২০ পদ আমাদের আশ্বাস দেয়: “সে স্থান হইতে অল্প দিনের কোন শিশু কিম্বা অসম্পূর্ণায়ু কোন বৃদ্ধ [যাইবে] না; বরং বালকই এক শত বৎসর বয়ঃক্রমে মরিবে; এবং পাপী এক শত বৎসর বয়স্ক হইলে শাপাহত হইবে [একশ বছর বয়স্ক হলেও সে এক বালকের মতো মারা যাবে।]”

১৩. যিশাইয় ৬৫:২০ পদ কীভাবে আমাদের নিশ্চিত করে বলে যে ঈশ্বরের লোকেরা নিরাপদে থাকবে?

১৩ এটা প্রথমে যিশাইয়ের দিনের লোকেদের বেলায় পূর্ণ হয়েছিল। এই ভবিষ্যদ্বাণীর মানে ছিল যে তাদের শিশুরা তাদের নিজেদের দেশে নিরাপদে থাকত। কোন শত্রু তাদের কেড়ে নিয়ে যেতে বা মেরে ফেলতে পারত না, যেমন আগে বাবিলনীয় সৈন্যরা শিশু ও বালকদের মেরে ফেলেছিল। (২ বংশাবলি ৩৬:১৭, ২০) সেইরকমই নতুন জগতে লোকেদের ওপর কোনরকম বিপদ আসবে না তারা ভালভাবে আর খুশি মনে জীবন কাটাবে। সেখানে যদি কেউ জেনেশুনে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা পাপ করে, তাহলে তাকে নতুন জগতে বেঁচে থাকতে দেওয়া হবে না। যিহোবা তাকে ধ্বংস করবেন। পাপীর বয়স যদি একশ বছর হয়, তাহলে কী হবে? অনন্ত জীবনের তুলনায় সে যেন ‘এক বালকের মতো’ মারা যাবে।—১ তীমথিয় ১:১৯, ২০; ২ তীমথিয় ২:১৬-১৯.

১৪, ১৫. যিশাইয় ৬৫:২১, ২২ পদের কথা মতো নতুন জগতে আমরা কী কী কাজ করব?

১৪ যিহোবা এই বিদ্রোহী লোকেদের কীভাবে মেরে ফেলবেন তা বলার বদলে যিশাইয় নতুন জগতের সুন্দর আর খুশিতে ভরা জীবন কেমন হবে তা বলেন। এখন যিশাইয়ের কথাগুলোকে মনের চোখ দিয়ে একটু দেখার চেষ্টা করুন। আপনার মনে সবার প্রথমে বোধ হয় আপনার নিজের ঘরের কথাই ভেসে উঠবে। ২১ ও ২২ পদে যিশাইয় বলেন: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না; বস্তুতঃ আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে, এবং আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে।”

১৫ আপনি যদি বাড়ি তৈরি করতে না জানেন বা বাগান করতে না পারেন, তাহলে চিন্তার কিছু নেই কারণ যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে দেখা যায় যে আপনি এগুলো ভবিষ্যতে শিখতে পারবেন। আপনি কি যোগ্য, অভিজ্ঞ লোকদের বা আপনাকে সাহায্য করতে চান এমন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শিখতে চাইবেন না? সেইসময়ে আপনার ঘর কেমন হবে? আপনার ঘরে কী বড় বড় জানালা থাকবে যাতে আপনি গরমের সময় হাওয়া পেতে পারেন কিংবা কাঁচ দেওয়া জানালা থাকবে যার মধ্যে দিয়ে আপনি ঋতুর পালাবদলকে দেখতে পারেন, সেই সম্বন্ধে যিশাইয় কিছু বলেননি। আপনি কি আপনার ঘরের ছাদ ঢালু করে বানাবেন যাতে বৃষ্টির জল জমে না থাকে ও তুষারপাত থেকে তা রক্ষা পায়? নাকি আপনি সমতল ছাদ বানাবেন, যেখানে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন কিংবা একসঙ্গে বসে গল্পগুজব করতে পারবেন?—দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৮; নহিমিয় ৮:১৬.

১৬. আপনি কেন বলতে পারেন যে নতুন জগতে কাজ করে আপনি খুশি হবেন?

১৬ যদিও যিশাইয় বলেননি যে নতুন জগতে আমাদের ঘর কেমন হবে বা কেমন হবে না কিন্তু তিনি বলেছেন যে আপনার নিজের একটা সুন্দর ঘর থাকবে। সেটা হবে একান্তই আপনার—আজকের দিনের মতো নয় যে আপনি কষ্ট করে বানাবেন আর অন্য লোকেরা সেখানে থাকবে। যিশাইয় ৬৫:২১ পদে একথাও বলা হয়েছে যে আপনি গাছ লাগালে আপনি তার ফল খাবেন। যার মানে আপনার খাটাখাটনির ফল আপনি ভোগ করতে পারবেন। আর কতদিন পর্যন্ত? চিরকালের জন্য কারণ আপনার আয়ু “বৃক্ষের আয়ুর” মতো হবে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে সেই সময় “সকলই নূতন” হবে!—গীতসংহিতা ৯২:১২-১৪.

১৭. কোন্‌ প্রতিজ্ঞা শুনে বাবামায়েদের মন ভরে যায়?

১৭ আপনি যদি একজন বাবা কিংবা মা হয়ে থাকেন, তাহলে এই কথাগুলো পড়ে আপনার মন ভরে যাবে: “তাহারা বৃথা পরিশ্রম করিবে না, বিহ্বলতার নিমিত্ত সন্তানের জন্ম দিবে না, কারণ তাহারা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত বংশ, ও তাহাদের সন্তানগণ তাহাদের সহবর্ত্তী হইবে। আর তাহাদের ডাকিবার পূর্ব্বে আমি উত্তর দিব, তাহারা কথা বলিতে না বলিতে আমি শুনিব।” (যিশাইয় ৬৫:২৩, ২৪) আপনি কি ‘বিহ্বলতার নিমিত্ত সন্তান জন্ম’ দেওয়ার কষ্ট বোঝেন? ছেলেমেয়েরা কতভাবে তাদের বাবামাদের কষ্ট দেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আজকাল এমন বাবামায়েরাও আছেন, যারা তাদের চাকরি, কাজকর্ম ও আনন্দ-ফূর্তি নিয়ে এত মত্ত থাকেন যে ছেলেমেয়েদের জন্য তাদের এতটুকু সময় নেই। কিন্তু যিহোবা এমন নন। তিনি আমাদের নিশ্চয়তা দেন যে তিনি আমাদের বিনতি শুনবেন এবং আমরা চাওয়ার আগেই তিনি আমাদের চাহিদা মেটাবেন।

১৮. নতুন জগতে আমরা পশুপাখিদের সঙ্গে কীভাবে থাকব?

১৮ নতুন জগতে আপনি এই দৃশ্যও দেখতে পাবেন যা যিশাইয় ৬৫:২৫ পদে লেখা আছে। এখানে বলা আছে: “কেন্দুয়াব্যাঘ্র ও মেষশাবক একত্র চরিবে, সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে; আর ধূলিই সর্পের খাদ্য হইবে। তাহারা আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (যিশাইয় ৬৫:২৫) অনেক শিল্পীরা তাদের কল্পনা মিশিয়ে এমন ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন কিন্তু এইমাত্র আমরা যা পড়লাম, তা শুধু শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি নয়। এটা বাস্তব হবে। মানুষ ও পশুপাখিরা একসঙ্গে শান্তিতে থাকবে। আজকে অনেক জীববিজ্ঞানীরা এবং পশুপাখি ভালবাসেন এমন লোকেরা মাত্র কয়েক জাতের পশুপাখিদের বা শুধু একটা প্রজাতির পশুর সম্বন্ধে জানার জন্যই তাদের জীবন কাটিয়ে দেন। কিন্তু ভেবে দেখুন যে ছোট ছোট পশুপাখিরা যখন মানুষদের দেখে ভয় পাবে না তখন আপনি কত কিছু জানতে পারবেন। তখন আপনি পাখিদের, বনজঙ্গলের ছোট ছোট জীব-জন্তুদের কাছে যেতে পারবেন, তাদের মজার মজার কাণ্ড দেখতে পারবেন ও তাদের সঙ্গে খেলা করতে পারবেন। (ইয়োব ১২:৭-৯) কোন মানুষ বা পশুকে আপনার ভয় করার দরকার নেই, কারণ তখন কেউই আপনার কোন ক্ষতি করবে না। যিহোবা বলেন: “তাহারা আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না।” আজকের চেয়ে সেই সময় কত আলাদাই না হবে!

১৯, ২০. জগতের বেশির ভাগ লোকের থেকে আমাদের জীবন কেন আলাদা?

১৯ আগের প্রবন্ধে আমরা দেখেছি যে নতুন সহস্রাব্দ নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা করেও, মানুষ ভবিষ্যতের বিষয়ে ঠিক করে বলতে পারে না। আর এইজন্য অনেকে হতাশ ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে, কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক, পিটার এমবারলি লিখেছিলেন, “অনেক বয়স্ক লোকেরা এতকাল পর এখন তাদের জীবনের জরুরি প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছেন, যেমন: আমি কে? আসলে আমি কী পেতে চাই? আগামী প্রজন্মের জন্য আমি কী রেখে যাচ্ছি? মাঝ বয়সে এসে এই লোকেরা তাদের জীবনের মানে খুঁজতে শুরু করেছেন।”

২০ আপনি কি বুঝতে পারেন যে কেন কিছু লোকেদের এমন মনে হয়? কারণ ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে তা তারা জানে না। তাই তারা নানারকম শখ, মনোরঞ্জন, হাসিখেলা করে জীবনে খুশি পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা তাদের চেয়ে কতই না আলাদা কারণ আমরা নতুন আকাশমণ্ডল ও নতুন পৃথিবীর চারটে ভবিষ্যদ্বাণী আলোচনা করে জেনে নিয়েছি যে আমাদের জন্য ভবিষ্যতে কী আছে আর তা কতই না উজ্জ্বল আর খুশির হবে। সেইসময় আমরা চোখ তুলে চারিদিকে তাকিয়ে দেখব আর মন থেকে বলব ‘সত্যিই ঈশ্বর সকলই নূতন করে দিয়েছেন!’

২১. যিশাইয় ৬৫:২৫ পদে কী বলা হয়েছে আর যিশাইয় ১১:৯ পদে তার কোন্‌ কারণ দেওয়া হয়েছে?

২১ নতুন জগতের স্বপ্ন দেখা দোষের কিছু নয়। ঈশ্বর চান এখন আমরা তাঁকে সত্য উপাসনা দিই এবং নতুন জগতে বাস করার জন্য নিজেদের যোগ্য করে তুলি, যখন ‘তাঁর পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ থাকবে না।’ (যিশাইয় ৬৫:২৫) কিন্তু ‘কেউ হিংসা কিম্বা বিনাশ করবে না’ তা কী করে হবে? যিশাইয় তার বইয়ের ১১ অধ্যায়ের ৯ পদে এর কারণ আমাদের বলেন: “সে সকল আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”

২২. বাইবেলের চারটে ভবিষ্যদ্বাণী আলোচনা করে আমাদের কী করা দরকার?

২২ ‘সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞান।’ ঈশ্বর যখন সবকিছু নতুন করবেন তখন পৃথিবীর সবাইকে তাঁর সম্বন্ধে ও তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান দেওয়া হবে। এই জ্ঞান আমরা শুধু ঈশ্বরের সৃষ্টি ও পশুপাখিদের দেখেই পাব না। তাঁর বাক্য থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখব। উদাহরণ হিসেবে “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” সম্বন্ধে চারটে ভবিষ্যদ্বাণী আলোচনা করে আমরা যা শিখেছি। (যিশাইয় ৬৫:১৭; ৬৬:২২; ২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:১) তাহলে একবার ভেবে দেখুন যে আপনি যদি রোজই ঈশ্বরের বাক্য পড়েন, আপনি কত কিছু শিখতে পারবেন। কিন্তু আপনি কি রোজ বাইবেল পড়েন? যদি না, তাহলেও চিন্তিত হয়ে পড়ার কিছু নেই। সারাদিনের আপনার কাজকর্মকে একটু অদলবদল করে নিয়েই আপনি রোজ বাইবেল পড়তে পারেন। আর আপনি দেখবেন যে নতুন জগতে জীবন উপভোগ করার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়াও আপনি এখনই অনেক আনন্দ পাবেন, ঠিক যেমন গীতরচক পেয়েছিলেন।—গীতসংহিতা ১:১, ২.

[পাদটীকাগুলো]

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) ১ম খণ্ডের ৯০৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আমরা কেন বলতে পারি যে যিশাইয় ৬৬:২২-২৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণী আরও বড় আকারে পূর্ণ হবে?

যিশাইয় ৬৬:২২-২৪ এবং যিশাইয় ৬৫:২০-২৫ পদের ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা কথাগুলোর মধ্যে আপনি বিশেষ করে কী পছন্দ করেন?

• আপনি কীভাবে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেন যে আপনার সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিশাইয়, পিতর ও যোহন “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন