সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আত্মা কী বলে শুনুন

আত্মা কী বলে শুনুন

আত্মা কী বলে শুনুন

“দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার সময়ে তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।”যিশাইয় ৩০:২১.

১, ২. আজ পর্যন্ত যিহোবা কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে বার্তা পাঠিয়েছেন?

 বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে শুধু পৃথিবীতেই নয় কিন্তু অন্য গ্রহেও জীবন রয়েছে। আর তাই তারা পুয়ের্টো রিকো দ্বীপে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে সূক্ষ্ণ রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে সেই প্রাণীদের কাছ থেকে কোন বার্তা পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করে আছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা কোন বার্তা পাননি। তবে, আশ্চর্যের কথা হল যে আজ মানুষকে বাইরের জগৎ থেকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে আর তা আমরা যখন তখনই পেতে পারি এবং তা পাওয়ার জন্য আমাদের কোন জটিল যন্ত্রেরও দরকার হয় না। আর সেই বার্তা এই বিশ্বের সবচেয়ে মহান উৎস থেকে আসে, যিনি অন্য কোন গ্রহে থাকা প্রাণীদের চেয়ে অনেক অনেক উচ্চ। তাহলে এখন প্রশ্ন হল যে কে এই বার্তা পাঠাচ্ছেন ও এই পৃথিবীতে কারা তাঁর বার্তা পাচ্ছেন? আর সেই বার্তায় কী বলা হয়?

বাইবেলে কয়েকটা ঘটনার কথা লেখা আছে যখন মানুষেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছিল। কখনও কখনও এই বার্তা স্বর্গের আত্মিক প্রাণীরা নিয়ে এসেছিলেন, যারা সবসময় ঈশ্বরের সেবা করেন। (আদিপুস্তক ২২:১১, ১৫; সখরিয় ৪:৪, ৫; লূক ১:২৬-২৮) তিনবার যিহোবার নিজের স্বর শোনা গিয়েছিল। (মথি ৩:১৭; ১৭:৫; যোহন ১২:২৮, ২৯) এছাড়া ঈশ্বর ভাববাদীদের দিয়েও বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যাদের অনেকেই ঈশ্বর তাদেরকে যা বলতে বলেছিলেন তা লিখেও রেখেছিলেন। আজকে, তাদের সেই লেখা বার্তাই বাইবেলে পাওয়া যায়। এছাড়া বাইবেলে যীশু ও তাঁর শিষ্যদের শিক্ষার কথাও লেখা আছে। (ইব্রীয় ১:১, ২) সত্যিই আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে যিহোবা মানুষকে সবসময়ই তথ্য দিয়ে আসছেন।

৩. যিহোবা তাঁর বার্তায় আমাদের কী বলেছেন আর আমরা কী করব বলে যিহোবা আশা করেন?

কিন্তু ঈশ্বর যে বার্তা আমাদেরকে দিয়েছেন, তা অন্য গ্রহের জীবন সম্বন্ধে বলে না। এর বদলে এটা আরও বেশি জরুরি কিছু বিষয় সম্বন্ধে আমাদের বলে যেগুলোর সঙ্গে শুধু আমাদের আজকের জীবনই নয় কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎও জড়িয়ে আছে। (গীতসংহিতা ১৯:৭-১১; ১ তীমথিয় ৪:৮) তাঁর বার্তায় যিহোবা আমাদেরকে তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন ও আমাদের কোন্‌ পথে চলা দরকার তা বলেছেন। এই বার্তাই ভাববাদী যিশাইয়ের এই কথাগুলোকে পূর্ণ করে: “দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার সময়ে তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশাইয় ৩০:২১) যিহোবা আমাদেরকে তাঁর “বাণী” শোনার জন্য জোরাজুরি করেন না। আমরা ঈশ্বরের কথা মানব কী মানব না অথবা তাঁর পথে চলব কী চলব না তা পুরোপুরি আমাদের ওপর নির্ভর করে। সেইজন্য বাইবেল, যিহোবা আমাদের যে বার্তা দেন তা মন দিয়ে শুনতে বলে। প্রকাশিত বাক্যের বইয়ে সাতবার আমাদের বলা হয়েছে যে ‘শুন, আত্মা কি কহিতেছেন।’—প্রকাশিত বাক্য ২:৭, ১১, ১৭, ২৯; ৩:৬, ১৩, ২২.

৪. আজকে যিহোবা আমাদের স্বর্গ থেকে সরাসরি বার্তা পাঠাবেন তা ভাবা কি ঠিক?

আজকে, যিহোবা স্বর্গ থেকে আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন না। বাইবেল লেখার সময়েও তিনি খুব কমই এভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, কখনও কখনও কয়েকশ বছর ধরে তা হতো না। ইতিহাস জুড়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের বার্তা দেওয়ার জন্য কোন না কোন মাধ্যম কাজে লাগিয়েছেন। আমাদের দিনেও তিনি তাই করেন। আসুন এখন আমরা দেখি যে আজকে যিহোবা কোন্‌ তিনটে উপায়ে তাঁর বার্তা পাঠান।

“পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে”

৫. মানুষকে তাঁর বার্তা শোনানোর জন্য ঈশ্বরের একটা প্রধান উপায় কী আর তা কীভাবে আমাদের জন্য ভাল?

মানুষকে তাঁর বার্তা শোনানোর জন্য ঈশ্বরের একটা প্রধান উপায় হল বাইবেল। এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং এতে যা কিছু লেখা আছে সবই আমাদের ভালর জন্য। (২ তীমথিয় ৩:১৬, প্রেমের বাণী) বাইবেলে অনেক ব্যক্তিদের উদাহরণ আছে, যারা তাদের নিজেদের ইচ্ছায় ঈশ্বরের বাক্য শুনেছেন বা শোনেননি। এই উদাহরণগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে ঈশ্বরের আত্মা কী বলে তা শোনা কেন আমাদের জন্য জরুরি। (১ করিন্থীয় ১০:১১) এছাড়াও বাইবেলে অনেক বাস্তব পরামর্শও দেওয়া রয়েছে, যা আমাদেরকে জীবনের কঠিন সময়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এটা এমন যেন ঈশ্বর আমাদের পেছনে চলতে চলতে আমাদেরকে বলছেন: “এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।”

৬. অন্য যে কোন বইয়ের চেয়ে কেন বাইবেল অনেক গুণ ভাল?

বাইবেলের পাতায় পাতায় আত্মা কী বলে তা শোনার জন্য আমাদের অবশ্যই রোজ বাইবেল পড়তে হবে। বাইবেল আজকের বইগুলোর মতো নয়, যা কেবল খুব সুন্দর করে লেখা হয়েছে বলে পড়তে ভাল লাগে। কিন্তু বাইবেল অন্য যে কোন বইয়ের চেয়ে অনেক গুণ ভাল। বাইবেল ঈশ্বরের আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে এবং এতে ঈশ্বরের কথা রয়েছে। ইব্রীয় ৪:১২ পদ বলে: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ণ বিচারক।” আমরা যখন বাইবেল পড়ি, এর কথাগুলো আমাদের মনের গোপন ইচ্ছা ও চিন্তাকে চিরে আমাদের সামনে খুলে দেয়। আর এর থেকে বোঝা যায় যে আমরা যিহোবার ইচ্ছা কতটা মেনে চলছি আর আমাদের কী করা দরকার।

৭. বাইবেল পড়া কেন জরুরি আর এটাকে কখন পড়ার পরামর্শ আমাদের দেওয়া হয়েছে?

সময় বয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের ভালমন্দ অভিজ্ঞতার কারণে আমাদের ‘হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনা’ বদলে যেতে পারে। আমরা যদি সবসময় ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন না করি, তাহলে আমাদের চিন্তাভাবনা ও আবেগ-অনুভূতি খুব বেশি দিন ঈশ্বরের নীতির সঙ্গে মিলবে না। তাই, বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ করিন্থীয় ১৩:৫) আত্মা কী বলে তা যদি আমরা সবসময় শুনে চলি, তাহলে রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়ার জন্য আমাদের যে পরামর্শ দেওয়া হয় তাতে আমরা মন দেব।—গীতসংহিতা ১:২.

৮. বাইবেল পড়ার ব্যাপারে নিজেকে পরীক্ষা করে দেখার জন্য প্রেরিত পৌলের কোন্‌ উপদেশ আমাদের কাজে আসে?

যারা বাইবেল পড়েন তাদের একটা জরুরি বিষয় মনে রাখা দরকার। আপনি বাইবেল থেকে যা পড়েছেন, তা নিয়ে চিন্তা করার জন্যও সময় করে নিন! রোজ বাইবেল পড়তে বলা হয়েছে বলে আমরা যে তাড়াহুড়ো করে কয়েকটা অধ্যায় পড়েই আমাদের দায়িত্ব শেষ করব কিন্তু এতে আসলে কী বলা হয়েছে সেই বিষয়ে কিছুই বুঝব না, তা ঠিক নয়। রোজ বাইবেল পড়া খুবই জরুরি কিন্তু তাই বলে আমাদের এমনও ভাবা উচিত নয় যে বাইবেলটা পড়ে শেষ করার জন্যই আমরা বাইবেল পড়ব। আমরা এইজন্য বাইবেল পড়ব কারণ যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানার পিপাসা আমাদের আছে। এই ব্যাপারে নিজেকে পরীক্ষা করে দেখার জন্য প্রেরিত পৌলের উপদেশ আমাদের কাজে আসে। খ্রীষ্টান ভাইবোনদের লিখতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “পিতার কাছে আমি জানু পাতিতেছি, . . . যেন বিশ্বাস দ্বারা খ্রীষ্ট তোমাদের হৃদয়ে বাস করেন; যেন তোমরা প্রেমে বদ্ধমূল ও সংস্থাপিত হইয়া সমস্ত পবিত্রগণের সহিত বুঝিতে সমর্থ হও যে, সেই প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা কি, এবং জ্ঞানাতীত যে খ্রীষ্টের প্রেম, তাহা যেন জানিতে সমর্থ হও, এই প্রকারে যেন ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতার উদ্দেশে পূর্ণ হও।”—ইফিষীয় ৩:১৫, ১৭-১৯.

৯. কীভাবে আমরা আমাদের ভেতরে যিহোবার কাছ থেকে শেখার ইচ্ছা তৈরি করতে পারি ও তাকে বাড়িয়ে তুলতে পারি?

এটা ঠিক যে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ একেবারেই পড়তে পছন্দ করেন না আবার কেউ কেউ বই ছেড়ে উঠতে চান না। কিন্তু আমরা পড়তে পছন্দ করি বা না করি, আমরা আমাদের ভেতরে যিহোবার কাছ থেকে শেখার ইচ্ছা তৈরি করতে পারি আর সেই ইচ্ছাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারি। প্রেরিত পিতর বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আমাদের বাইবেলের জ্ঞানের জন্য লালসা থাকা উচিত আর তিনি এও বলেছিলেন যে এই লালসা এমনি এমনি হবে না, তা তৈরি করতে হবে। তিনি লিখেছিলেন: “নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ পিতর ২:১, ২) বাইবেল অধ্যয়নের “লালসা” গড়ে তোলার জন্য নিজেকে শাসন করা খুবই জরুরি। ঠিক যেমন কোন নতুন খাবার কয়েকবার খাওয়ার পর তবেই আমাদের তা ভাল লাগতে শুরু করে, তেমনই আমরা যদি নিজেদের শাসন করে নিয়মিত বাইবেল পড়ি ও অধ্যয়ন করি, তাহলে তাও আমাদের আস্তে আস্তে ভাল লাগতে শুরু করবে।

“উপযুক্ত সময়ে খাদ্য”

১০. “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” শ্রেণী কাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে আর আজকে যিহোবা কীভাবে তাদের ব্যবহার করছেন?

১০ আরেক উপায়েও আজকে যিহোবা আমাদেরকে বার্তা পাঠান। আর এই বিষয়ে যীশু খ্রীষ্ট মথি ২৪:৪৫-৪৭ পদে বলেছেন। সেখানে তিনি আত্মায়-অভিষিক্ত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর অর্থাৎ “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এর কথা বলেছেন। আর তাদেরকে ‘উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য’ দেওয়ার কাজ দেওয়া হয়েছে। এই শ্রেণীর প্রত্যেক সদস্য আলাদা আলাদাভাবে প্রভু যীশুর ‘পরিজন।’ তাই দাস শ্রেণী এই পরিজনদের ও তাদের সঙ্গে সঙ্গে ‘অপর মেষের’ ‘বিস্তর লোকেদেরও’ উৎসাহ দেন ও সঠিক পথ দেখান। (যোহন ১০:১৬, NW; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) বেশির ভাগ আধ্যাত্মিক খাবারই ছাপানো বই ও পত্রিকার মধ্যে দিয়ে আসে যেমন প্রহরীদুর্গ, সচেতন থাক! এবং অন্যান্য বই। এছাড়া সম্মেলন, অধিবেশন ও মণ্ডলীর সভাগুলোতে দেওয়া বক্তৃতা ও নমুনার মধ্যে দিয়েও আধ্যাত্মিক খাবার দেওয়া হয়।

১১. আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” শ্রেণীকে দিয়ে ঈশ্বরের আত্মা যা বলছেন আমরা তা শুনছি?

১১ “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” আমাদের যে খাবার দেন তা এমনভাবে তৈরি যে তা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় প্রশিক্ষিত হয়। (ইব্রীয় ৫:১৪) এই পরামর্শগুলো সবার জন্যই কাজে আসে ফলে প্রত্যেকে তাদের নিজেদের জীবনে তা কাজে লাগাতে পারেন। সময় সময় আমাদের নিজেদের আচারআচরণের জন্যেও আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। দাস শ্রেণীর মাধ্যমে আত্মা আমাদের কী বলছে তা যদি আমরা সত্যি সত্যিই শুনতে চাই, তাহলে এই পরামর্শগুলোকে আমাদের কীভাবে নেওয়া উচিত? প্রেরিত পৌল উত্তর দেন: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) এটা সত্যি যে তারা সবাই-ই অসিদ্ধ ও ভুল করেন। কিন্তু তাদের ভুলত্রুটি থাকা সত্ত্বেও, এই শেষ কালে আমাদের পথ দেখানোর জন্য যিহোবা তাঁর এই অসিদ্ধ দাসদেরকেই ব্যবহার করতে চান।

আমাদের বিবেক পথ দেখায়

১২, ১৩. (ক) আমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য যিহোবা আরেকটা কোন্‌ উপায় ব্যবহার করেন? (খ) এমনকি যাদের ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞান নেই তাদের বিবেকও কীভাবে ভাল কাজ করতে বলে?

১২ আমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য যিহোবা আরেকটা উপায় ব্যবহার করেন আর তা হল আমাদের বিবেক। তিনি মানুষকে ভালমন্দ বিচার করার ক্ষমতা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তাই এটা আমাদের স্বভাবেই আছে। রোমীয়দের কাছে লেখা তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন: “তাহারাই ধার্ম্মিক গণিত হইবে—কেননা যে পরজাতিরা কোন ব্যবস্থা পায় নাই, তাহারা যখন স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে, তখন কোন ব্যবস্থা না পাইলেও আপনাদের ব্যবস্থা আপনারাই হয়; যেহেতুক তাহারা ব্যবস্থার কার্য্য আপন আপন হৃদয়ে লিখিত বলিয়া দেখায়, তাহাদের সংবেদও সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষ্য দেয়, এবং তাহাদের নানা বিতর্ক পরস্পর হয় তাহাদিগকে দোষী করে, না হয় তাহাদের পক্ষ সমর্থন করে।”—রোমীয় ২:১৪, ১৫.

১৩ কোন্‌টা ভাল ও কোন্‌টা খারাপ সেই বিষয়ে ঈশ্বর আমাদের অনেক নীতি দিয়েছেন। কিন্তু, যারা যিহোবা ও তাঁর নীতিগুলোকে জানেন না এমন অনেক লোকেরাও অনেক সময় ভাল কথা বলেন, ভাল কাজ করেন। এটা এমন যে তাদের ভেতর থেকে কেউ যেন আস্তে আস্তে তাদেরকে সঠিক পথে চলার কথা বলে দিচ্ছে। যারা ঈশ্বরকে জানেন না তাদের মন যদি তাদেরকে বলতে পারে, তাহলে যারা সত্য খ্রীষ্টান তাদের মন আরও কত জোরেই না কথা বলবে! সত্যিই একজন খ্রীষ্টানের বিবেক ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞান দিয়ে শুদ্ধ করা যায় আর তা যখন যিহোবার পবিত্র আত্মার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে তখন এর দেখানো পথে আমরা নিশ্চিন্তে চলতে পারি।—রোমীয় ৯:১.

১৪. বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবেক কীভাবে যিহোবার আত্মার দেখানো পথে চলতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৪ বাইবেল শিক্ষিত ভাল বিবেক আমাদেরকে সেই পথের কথা মনে করিয়ে দিতে পারে যে পথে আত্মা আমাদের চলতে বলে। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা যে সমস্যায় পড়েছি তার উত্তর বাইবেলে বা বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রে পাওয়া যায় না। কিন্তু হতে পারে যে সেই সময় আমাদের বিবেক আমাদের সতর্ক করে আর বলে দেয় যে আমরা যে পথে চলেছি তাতে বিপদ আসতে পারে। এই অবস্থায় বিবেকের কথা না শোনা যিহোবার আত্মা আমাদেরকে যা করতে বলে তা না শোনার সমান হবে। অন্যদিকে, আমরা যদি আমাদের বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবেকের ওপর নির্ভর করতে শিখি, তাহলে আমরা যে বিষয়ে কিছু লেখা নেই সে বিষয়েও ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। কিন্তু, একটা কথা আমাদের মনে রাখা জরুরি যে কোন একটা বিষয়ে ঈশ্বর যদি কোন নীতি, নিয়ম বা ব্যবস্থা না দেন, তাহলে সেই ব্যাপারে আমাদের বিবেকের সিদ্ধান্ত আমরা আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের ওপর চাপিয়ে দেব না।—রোমীয় ১৪:১-৪; গালাতীয় ৬:৫.

১৫, ১৬. আমাদের বিবেক কীভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে আর কীভাবে আমরা তা রোধ করতে পারি?

১৫ বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা ভাল বিবেক হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক সুন্দর উপহার। (যাকোব ১:১৭) আমরা যখনই কোন ভুল রাস্তায় যাই আমাদের বিবেক আমাদের সাবধান করে। যদি আমরা চাই যে আমাদের বিবেক এভাবেই কাজ করুক, তাহলে আমাদের এটাকে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। জগতের বেশির ভাগ প্রথা, রীতিনীতি এবং অভ্যাসগুলো ঈশ্বরের মানের সঙ্গে মেলে না। আমরা যদি এগুলো থেকে দূরে না থাকি, তাহলে আমাদের বিবেক কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে আর ঠিক পথ নাও দেখাতে পারে। আর আমরা হয়তো ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব না আর নিজেকে ধোঁকা দিয়ে খারাপ কাজগুলোকেও ভাল বলে মনে করব।—যোহন ১৬:২ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।

১৬ আমরা যদি আমাদের বিবেকের কথাকে অবহেলা করি বা না শুনি, তাহলে এর আওয়াজ দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়বে আর এমন সময় আসবে যখন আমাদের হৃদয় কঠোর হয়ে যাবে আর আমরা ভালমন্দের পার্থক্য করতে পারব না। গীতরচক এরকম লোকেদের বিষয়ে বলেছিলেন: “উহাদের অন্তঃকরণ মেদের ন্যায় স্থূল।” (গীতসংহিতা ১১৯:৭০) কিছু লোকেরা যারা তাদের বিবেকের কথা শোনেন না, তারা একসময় সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তারা আর ঈশ্বরের নীতির সঙ্গে মিল রেখে চিন্তা করেন না এবং সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারেন না। আমাদের অবস্থা যেন এরকম না হয়ে পড়ে তার জন্য আমাদের সব বিষয়ে বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবেকের কথা শোনা উচিত, বিবেক আমাদেরকে যে পথে চলতে বলে সেদিকে যাওয়া উচিত, এমনকি আমাদের চোখে যদি সেগুলো খুব ছোটখাটো বিষয়ও হয়।—লূক ১৬:১০.

যারা শোনে ও বাধ্য হয় তারা সুখী

১৭. আমরা যদি ‘আমাদের পশ্চাতের বাণী’ শুনি ও বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবেকের কথায় মন দিই, তাহলে আমরা কোন্‌ আশীর্বাদ পাব?

১৭ আমরা যেমন দেখেছি আজকে বাইবেল আর বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীকে দিয়ে যিহোবা ‘আমাদের পশ্চাৎ হইতে বাণী’ শোনাচ্ছেন। এছাড়া বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা আমাদের বিবেকও আমাদেরকে পথ দেখায়। আমরা যদি এই সমস্ত কিছু শোনার ও সেগুলোর বাধ্য হয়ে চলার চেষ্টা করি, তাহলে যিহোবা আমাদেরকে তাঁর আত্মা দিয়ে আশীর্বাদ করবেন। এই পবিত্র আত্মাই আমাদের সেই ক্ষমতা দেবে, যাতে আমরা যিহোবা ঈশ্বরের সব কথা মন দিয়ে শুনি ও বুঝতে পারি।

১৮, ১৯. যিহোবার আত্মা কীভাবে আমাদেরকে প্রচার কাজে ও আমাদের জীবনে সাহায্য করে?

১৮ যিহোবার আত্মা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মোকাবিলা করার জন্য আমাদেরকে জ্ঞান ও সাহস দিয়ে শক্তিশালী করে। প্রেরিতদের বেলায় যেমন হয়েছিল, ঈশ্বরের আত্মা আমাদেরও ঠিকভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করবে যাতে আমরা যা কিছু বলি ও করি তা বাইবেলের নীতি মেনেই করি। (মথি ১০:১৮-২০; যোহন ১৪:২৬; প্রেরিত ৪:৫-৮, ১৩, ৩১; ১৫:২৮) যিহোবার আত্মা ও আমাদের চেষ্টা মিলে আমরা শুধু ভাল সিদ্ধান্তই নেব না কিন্তু এই সিদ্ধান্তে চলার সাহসও পাব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি হয়তো আপনার জীবনকে একটু বদলাতে চান যাতে আপনি ঈশ্বরের সেবায় আরেকটু বেশি সময় দিতে পারেন। কিংবা আপনি হয়তো জরুরি কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান, যা আপনার সারা জীবনকে বদলে দিতে পারে যেমন জীবনসাথি খোঁজা, কোন বিশেষ চাকরি করবেন বা করবেন না অথবা কোন একটা বাড়ি কিনবেন কী কিনবেন না। এই অবস্থায় শুধু আমাদের মন যা বলছে সে কথাই না শুনে ঈশ্বরের আত্মা কী বলে তা শোনা উচিত এবং সেই মতো কাজ করা উচিত।

১৯ আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা ও বিশেষ করে প্রাচীনরা যখন দয়া দেখিয়ে আমাদের পরামর্শ দেন ও শুধরে দেন তখন তাদের এই সাহায্যের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া দরকার। কিন্তু তাই বলে আমরা এমন আশা করব না যে সবসময় অন্যরা আমাদেরকে বলে দেবে। আমরা নিজেরা যদি জানি ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য আমাদের কোন্‌ পথে চলতে হবে আর আমাদের আচারব্যবহার ও চিন্তা কোথায় বদলাতে হবে, তাহলে আসুন আমরা তা করি। যীশু বলেছিলেন: “এ সকল যখন তোমরা জান, ধন্য [সুখী] তোমরা, যদি এ সকল পালন কর।”—যোহন ১৩:১৭.

২০. যারা ‘তাহাদের পশ্চাতের বাণী’ শোনেন তারা কোন্‌ কোন্‌ আশীর্বাদ পান?

২০ তাহলে এটা পরিষ্কার যে ঈশ্বরকে কীভাবে খুশি করা যায় তা জানার জন্য, খ্রীষ্টানদের সঙ্গে স্বর্গ থেকে ঈশ্বরের সরাসরি কথা বলার বা তাদের কাছে স্বর্গদূতদের আসার দরকার নেই। তাদের জন্য ঈশ্বরের লেখা বাক্য ও পৃথিবীতে তাঁর অভিষিক্ত দাস শ্রেণী আছেন, যারা তাঁর লোকেদের ঠিক পথ দেখান। তাই খ্রীষ্টানেরা যদি মন দিয়ে ‘তাদের পশ্চাতের বাণী’ শোনেন ও বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবেকের কথা শোনেন, তাহলে তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে পারবেন। আর তাহলেই তারা প্রেরিত যোহনের করা এই প্রতিজ্ঞাকে নিজের চোখে সত্যি হতে দেখবেন: “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.

সংক্ষেপে পুনরালোচনা

• কেন যিহোবা মানুষদের বার্তা পাঠান?

• রোজ বাইবেল পড়ে আমাদের কীভাবে ভাল হবে?

• দাস শ্রেণীর পরামর্শকে আমাদের কীভাবে নেওয়া দরকার?

• বাইবেলের শিক্ষায় গড়ে ওঠা বিবেকের কথা কেন আমাদের শোনা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের কাছ থেকে বার্তা পাওয়ার জন্য মানুষের জটিল কোন যন্ত্রের দরকার নেই

[সৌজন্যে]

Courtesy Arecibo Observatory/David Parker/Science Photo Library

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা আমাদের সঙ্গে বাইবেল এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে কথা বলেন