সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরীয় শিক্ষাকে ধরে রাখুন

ঈশ্বরীয় শিক্ষাকে ধরে রাখুন

ঈশ্বরীয় শিক্ষাকে ধরে রাখুন

“তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

১. আজকে মানুষের কাছে কত তথ্য আছে যা আর কখনও ছিল না?

 প্রত্যেক দিন সারা পৃথিবীতে প্রায় ৯,০০০ খবরের কাগজ ছাপানো হয়। শুধু আমেরিকাতেই প্রতি বছর প্রায় ২,০০,০০০ নতুন বই বের হয়। একটা হিসাব দেখায় যে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ইন্টারনেটে প্রায় ২৭.৫ কোটি ওয়েব পেজ হয়ে গেছে আর প্রত্যেক মাসে প্রায় দুই কোটিরও বেশি করে ওয়েব পেজ তৈরি হচ্ছে। ইতিহাসে আর কখনও মানুষ সমস্ত বিষয়ে এত বেশি তথ্য পায়নি। এক দিক দিয়ে এটা ভাল হলেও, এর থেকে অনেক বিপদও এসেছে।

২. এত বেশি তথ্য কোন্‌ বিপদ নিয়ে আসতে পারে?

কিছু লোকেরা তথ্যের জন্য এতই পাগল যে তারা তাদের সমস্ত দরকারি কাজকর্ম ছেড়ে দিনরাত শুধু আরও তথ্য জোগাড় করার পেছনেই সময় কাটান। অন্যদিকে কেউ কেউ বড় বড় বিষয়গুলোর ওপর অল্প কিছু তথ্য জেনে নিয়েই নিজেদেরকে পণ্ডিত বলে মনে করেন। কিছু লোকেরা আবার এই তথ্যের ওপর ভরসা করে জরুরি সিদ্ধান্ত নেন, যা পরে তাদের নিজেদের ও অন্যদের বিপদ ডেকে আনে। আর সত্যি বলতে কী, এত এত তথ্য আদৌ সত্য ও ঠিক কি না, তা পরখ করে দেখার কোন উপায়ই আসলে নেই।

৩. মানুষের কাছ থেকে আসা তথ্য সম্বন্ধে বাইবেল কীভাবে সাবধান করে?

মানুষ মাত্রই কৌতূহলী। কিন্তু অনেক আগে থেকেই তারা এও জেনে গিয়েছিল যে আজেবাজে, এমনকি ক্ষতিকর তথ্যের পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করা বিপদ ডেকে আনে। রাজা শলোমন বলেছিলেন: “উপদেশ গ্রহণ কর; বহুপুস্তক রচনার শেষ হয় না, এবং অধ্যয়নের আধিক্যে শরীরের ক্লান্তি হয়।” (উপদেশক ১২:১১, ১২) কয়েকশ বছর পর প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে লিখেছিলেন: “তীমথিয়, যা রক্ষা করবার জন্য তোমাকে দেওয়া হয়েছে তা ভাল করে রক্ষা কর। মিথ্যা জ্ঞানের ভক্তিহীন বাজে কথা ও ভুল শিক্ষা থেকে দূরে থাক। কোন কোন লোক এইরকম জ্ঞানের দাবী করে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে।” (১ তীমথিয় ৬:২০, ২১, প্রেমের বাণী) হ্যাঁ, আজকেও খ্রীষ্টানদের সাবধান থাকা দরকার যাতে মানুষের আজেবাজে তথ্য তাদের জন্য বিপদ না ডেকে আনে।

৪. কোন্‌ একটা উপায়ে আমরা দেখাতে পারি যে যিহোবা ও তাঁর বাক্যের শিক্ষার ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে?

শুধু তাই নয়, যিহোবার লোকেদের জন্য হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদের কথাগুলো মেনে চলা ভাল, যেখানে বলা আছে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” যিহোবাতে বিশ্বাস করার মানে হল, ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষার সঙ্গে মেলে না এমন কোন ধারণাকে তা সে আমাদের নিজেদেরই হোক বা অন্য লোকেদের, আমাদের মনে আসতে না দেওয়া। কিন্তু আমরা যদি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দৃঢ় থাকতে চাই, তাহলে আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই জরুরি, যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে কোন্‌ তথ্য জানা ঠিক আর কোন্‌গুলো জানা ঠিক নয়। (ইব্রীয় ৫:১৪) তাহলে, আসুন এখন আমরা দেখি যে এই ক্ষতিকর তথ্যগুলো কোথা থেকে আসে।

শয়তানের জগৎ

৫. আজকে কীভাবে ক্ষতিকর তথ্য পাওয়া যায় আর এর পেছনে কার হাত রয়েছে?

আজকের জগৎ এমন সব তথ্যে ভরা যা লোকেদের শুধু ক্ষতিই করে। (১ করিন্থীয় ৩:১৯) যীশু খ্রীষ্ট জানতেন যে এই জগৎ শয়তানের হাতের মুঠোর মধ্যে রয়েছে। তাই তিনি তাঁর শিষ্যদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর।” (যোহন ১৭:১৫) কিন্তু, তার মানে এই নয় যে আমরা খ্রীষ্টান বলে যিহোবা আমাদের এই জগতের সমস্ত খারাপ অবস্থা থেকে রক্ষা করবেন। যোহন লিখেছিলেন: “আমরা জানি যে, আমরা ঈশ্বর হইতে; আর সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) বিশেষ করে, এই শেষ কালের শেষ মুহূর্তে শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা জগতে কীভাবে ক্ষতিকর তথ্য ছড়িয়ে রেখেছে, তা দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই।

৬. বিনোদন জগৎ কীভাবে আমাদের ভালমন্দবোধকে শেষ করে দিতে পারে?

এছাড়া এই ক্ষতিকর তথ্যগুলোকে ওপর থেকে ভাল বলে মনে হতে পারে। (২ করিন্থীয় ১১:১৪) উদাহরণ হিসেবে বিনোদন জগতের টিভি অনুষ্ঠান, সিনেমা, গানবাজনা ও বইপত্রের কথাই ধরুন। অনেকেই মনে করেন যে মনোরঞ্জনের মান দিন দিন নিচু হয়ে যাচ্ছে। বিনোদনের নামে আজকে যা কিছু দেখানো হয় তার বেশির ভাগই অনৈতিকতা, হিংসা এবং মাদকাসক্তির মতো খারাপ কাজগুলোকে বেশি করে দেখায়। প্রথমবার লোকেদের এগুলো দেখতে খারাপ লাগে বা মনে হয় এগুলো খুবই জঘন্য। কিন্তু, বার বার দেখতে দেখতে সেগুলো তাদের চোখ সয়ে যায় আর একসময় এই খারাপ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে তারা খারাপ কিছু আর দেখতে পান না। খারাপ মনোরঞ্জনের জন্য আমরা কখনও ভেবে নেব না যে এগুলো কোন বিপদ আনবে না বা এতে দোষের কিছু নেই।—গীতসংহিতা ১১৯:৩৭.

৭. মানুষের কোন্‌ জ্ঞান বাইবেলের ওপর আমাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দিতে পারে?

মনে রাখুন যে এই জগৎ আরেকভাবে আমাদের ক্ষতিকর তথ্য দিতে পারে। তা হল, কিছু বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতরা দাবি করেন যে বাইবেলে যা লেখা আছে তা ভুল আর সেটা প্রমাণ করার জন্য তারা অনেক কিছু বলেন ও ছাপান। (যাকোব ৩:১৫ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) এই বিষয়গুলো প্রায়ই চলতি পত্র-পত্রিকা ও বইগুলোতে ছাপা হয় আর তা পড়া বাইবেলের ওপর আমাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দিতে পারে। কিছু লোকেরা নিজেদের চিন্তাধারা ও দর্শন দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের ওপর লোকেদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিয়ে মজা পান। প্রেরিতদের দিনেও যে একইরকম বিপদ এসেছিল তা প্রেরিত পৌলের কথা থেকেই স্পষ্ট দেখা যায়: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।”—কলসীয় ২:৮.

সত্যের শত্রুরা

৮, ৯. আজকে ধর্মভ্রষ্ট লোকেরা তাদের কথা প্রচার করার জন্য কী করে?

সত্যের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান, আমাদের বিশ্বাস দুর্বল করার জন্য সেই লোকেদের কাজে লাগায় যারা আগে সত্যে ছিল কিন্তু এখন সত্য ছেড়ে চলে গেছে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে যারা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে দাবি করে তাদের মধ্যেও কিছুজন ধর্মভ্রষ্ট হবে। (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০; ২ থিষলনীকীয় ২:৩) তার কথা সত্যি হয়েছিল কারণ প্রেরিতেরা মারা যাবার পর খ্রীষ্টান মণ্ডলীতে ধর্মভ্রষ্টতা এতটাই ছেয়ে গিয়েছিল যে পরে তার থেকে খ্রীষ্টীয়জগতের জন্ম হয়েছিল। আজকে, ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে তত বড় ধর্মভ্রষ্টতা হয়তো নেই তবে কিছু লোকেরা আছে যারা আগে আমাদের ভাই ছিল কিন্তু এখন মণ্ডলী ছেড়ে চলে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলে ও তাদের নামে খারাপ কথা রটিয়ে তাদের বদনাম করে চলেছে। কেউ কেউ গিয়ে এমন কোন দলে যোগ দিয়েছে, যাদের কাজই হচ্ছে যিহোবার সাক্ষিদের বিরোধিতা করা। এই কাজগুলো করে তারা আসলে শয়তানেরই পক্ষ নেয়।

সত্য ছেড়ে চলে যাওয়া কিছু ব্যক্তি যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা ছড়ানোর জন্য এমনকি প্রচার মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে আর এর মধ্যে একটা হল ইন্টারনেট। তাই কিছু ভাল মনের ব্যক্তিরা, যারা সত্যিই আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জানতে চান তারা যখন ইন্টারনেটে খোঁজ করেন তখন তারা হয়তো ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের মিথ্যা প্রচার পড়তে পান। এমনকি কিছু সাক্ষি ভাইবোনেরাও না জেনেশুনে এই সমস্ত ক্ষতিকর তথ্য পড়েছেন ও তাদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছেন। এছাড়াও, ধর্মভ্রষ্ট লোকেরা মাঝে মাঝে টেলিভিশন ও রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েও হাজির হন। আমরা যদি এই ধর্মভ্রষ্টদের কথা শুনতে ও দেখতে পাই, তাহলে তখন কী করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে?

১০. ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের প্রচারের সামনে কী করা বুদ্ধিমানের কাজ?

১০ প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিত যোহন খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন তারা যেন কোন ধর্মভ্রষ্ট লোককে তাদের বাড়িতে ঢুকতে না দেন। তিনি লিখেছিলেন: “যদি কেহ সেই শিক্ষা না লইয়া তোমাদের কাছে আইসে, তবে তাহাকে বাটীতে গ্রহণ করিও না, এবং তাহাকে ‘মঙ্গল হউক’ বলিও না। কেননা যে তাহাকে ‘মঙ্গল হউক’ বলে, সে তাহার দুষ্কর্ম্ম সকলের সহভাগী হয়।” (২ যোহন ১০, ১১) আমরা যদি সত্যের এই বিরোধীদের থেকে অনেক অনেক দূরে থাকি, একমাত্র তাহলেই আমরা তাদের খারাপ চিন্তা থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারব। ধর্মভ্রষ্ট লোকেদের কথা প্রচার মাধ্যমগুলো থেকে জানা তাদের ঘরে আসতে দেওয়ার মতোই সমান ক্ষতিকর। আমরা কখনও যেন এমন কৌতূহলী না হই যে তা আমাদেরকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়!—হিতোপদেশ ২২:৩.

মণ্ডলীর ভেতরে

১১, ১২. (ক) প্রথম শতাব্দীতে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে ক্ষতিকর ধারণা কাদের কাছ থেকে এসেছিল? (খ) কিছু খ্রীষ্টান কীভাবে ঈশ্বরীয় শিক্ষাকে ধরে রাখতে পারেনি?

১১ মনে রাখুন যে মণ্ডলীর ভেতরেও আমরা ক্ষতিকর তথ্যের সামনে পড়তে পারি। একথা ঠিক যে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত আমাদের ভাইবোনেরা অন্যদের হয়তো মিথ্যা কিছু শেখাতে চান না কিন্তু তারা এমন কোন আজেবাজে কথা বলাকে তাদের অভ্যাসে দাঁড় করান, যা অন্যদের দুঃখ দেয়। (হিতোপদেশ ১২:১৮) আমরা সবাই অসিদ্ধ বলে কখনও কখনও এমন কিছু বলে বসি, যা অন্যদের কষ্ট দেয়। (হিতোপদেশ ১০:১৯; যাকোব ৩:৮) প্রেরিত পৌলের দিনেও কেউ কেউ মণ্ডলীতে নিজেদের জিহ্বাকে দমন করতে পারেনি আর তাই তারা নিজেদের মধ্যে নানারকম তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ত। (১ তীমথিয় ২:৮) আবার কেউ কেউ এমনও ছিল যারা মনে করত যে তারা যা মনে করে সেটাই ঠিক, তারা এমনকি প্রেরিত পৌলের প্রেরিত পদ নিয়েও আপত্তি তুলেছিল। (২ করিন্থীয় ১০:১০-১২) তাদের এইরকম আচারব্যবহারে মণ্ডলীতে বিনা কারণে ঝগড়া হতো।

১২ কখনও কখনও এই ভাইদের মধ্যে এতখানি মতের অমিল হতো যে “অনবরত গোলমাল” শুরু হয়ে যেত আর মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট হতো। (১ তীমথিয় ৬:৫, প্রেমের বাণী; গালাতীয় ৫:১৫) যারা এইরকম বিবাদ শুরু করত তাদের বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “যদি কেহ অন্যবিধ শিক্ষা দেয়, এবং নিরাময় বাক্য, অর্থাৎ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বাক্য, ও ভক্তির অনুরূপ শিক্ষা স্বীকার না করে, তবে সে গর্ব্বান্ধ, কিছুই জানে না, কিন্তু বিতণ্ডা ও বাগ্‌যুদ্ধের বিষয়ে রোগগ্রস্ত হইয়াছে; এ সকলের ফল মাৎসর্য্য, বিরোধ, বিবিধ নিন্দা, কুসন্দেহ।”—১ তীমথিয় ৬:৩, ৪.

১৩. প্রথম শতাব্দীর বেশির ভাগ খ্রীষ্টানেরা কী করে চলেছিলেন?

১৩ কিন্তু, আনন্দের বিষয় হল যে প্রেরিতদের সময়ে সবাই-ই এমন ছিলেন না। সেই সময় বেশির ভাগ খ্রীষ্টানই বিশ্বস্তভাবে তাদের কাজ করে চলেছিলেন। তাদের কাছে সবচেয়ে বড় কাজ ছিল ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা। তারা “ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের” দেখাশোনা করতেন ও আজেবাজে কথাবার্তায় সময় নষ্ট না করে “সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা” করেছিলেন। (যাকোব ১:২৭) ঈশ্বরের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখার জন্য তারা এমনকি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মধ্যেও “কুসংসর্গ” এড়িয়ে চলেছিলেন।—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; ২ তীমথিয় ২:২০, ২১.

১৪. যদি আমরা সাবধান না হই, তাহলে একসময় যেটাকে খুবই ছোট ব্যাপার বলে মনে হয়েছিল কী করে সেটাই পরে ক্ষতি করতে পারে?

১৪ আজকে যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীতে ১১ অনুচ্ছেদে যে অবস্থার কথা বলা হয়েছে তা হয়তো ঘটে না। কিন্তু, আমাদের মানতেই হবে যে এইরকম বাজে তর্কবিতর্ক আমাদের মধ্যেও হতে পারে। এটা ঠিক যে বাইবেলের কোন ঘটনা নিয়ে কথা বলা অথবা নতুন জগতে কী কী হবে তা নিয়ে কল্পনা করায় দোষের কিছু নেই। এছাড়াও পোশাক-আশাক, সাজগোজ অথবা আমোদপ্রমোদের মতো বিষয়গুলো নিয়ে নিজের নিজের ধ্যানধারণার কথা বলাও খারাপ কিছু নয়। তবে সমস্যা তখন দেখা দিতে পারে যখন আমরা আমাদের নিজেদের ধারণা অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চাই বা অন্যরা যখন আমাদের সঙ্গে একমত হয় না তখন রেগে যাই। আর এর ফলে এমনকি ছোট ছোট বিষয় নিয়েও মণ্ডলীর মধ্যে দলভেদ আসতে পারে। এমনকি একসময় যেটাকে খুবই ছোট ব্যাপার বলে মনে হয়েছে সেটাই পরে ক্ষতি করতে পারে।

আমাদেরকে দেওয়া ধন সাবধানে রাখা

১৫. ‘ভূতগণের শিক্ষা’ কীভাবে আমাদের বিশ্বাসকে হুমকি দেয় আর এই ব্যাপারে বাইবেল আমাদের কী পরামর্শ দেয়?

১৫ প্রেরিত পৌল সাবধান করেছিলেন: “আত্মা স্পষ্টই বলিতেছেন, উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।” (১ তীমথিয় ৪:১) হ্যাঁ, ক্ষতিকর শিক্ষা আমাদের বিশ্বাসকে সত্যিই হুমকি দেয়। এইজন্য পৌল তার প্রিয় বন্ধু তীমথিয়কে অনুরোধ করেছিলেন: “তীমথিয়, যা রক্ষা করবার জন্য তোমাকে দেওয়া হয়েছে তা ভাল করে রক্ষা কর। মিথ্যা জ্ঞানের ভক্তিহীন বাজে কথা ও ভুল শিক্ষা থেকে দূরে থাক। কোন কোন লোক এইরকম জ্ঞানের দাবী করে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে।”—১ তীমথিয় ৬:২০, ২১.

১৬, ১৭. আজ ঈশ্বর আমাদের কাছে কোন্‌ ধন রেখেছেন আর সেটা আমরা কীভাবে সাবধানে রাখতে পারি?

১৬ পৌলের এই প্রেমপূর্ণ পরামর্শ থেকে আজকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি? তীমথিয়কে এমন কিছু দেওয়া হয়েছিল, যা খুবই মূল্যবান ছিল ও যেটাকে রক্ষা করতে হতো। কিন্তু তীমথিয়কে দেওয়া এই ধন কী ছিল? পৌল উত্তর দেন: “তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে ও প্রেমে ধারণ কর। তোমার কাছে যে উত্তম ধন গচ্ছিত আছে, তাহা যিনি আমাদের অন্তরে বাস করেন, সেই পবিত্র আত্মা দ্বারা রক্ষা কর।” (২ তীমথিয় ১:১৩, ১৪) হ্যাঁ, তীমথিয়কে যে ধন দেওয়া হয়েছিল তা ছিল “নিরাময় বাক্য” যা ঈশ্বরীয় “ভক্তির অনুরূপ শিক্ষা।” (১ তীমথিয় ৬:৩) এটা করার জন্য আজকে খ্রীষ্টানেরা তাদের বিশ্বাস ও যে সত্য বিষয়গুলো তাদের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছে, তা রক্ষা করার সংকল্প করেন।

১৭ আমাদের ধনকে সাবধানে রাখার জন্য বাইবেল পড়াকে আমাদের অভ্যাস করে তোলা, প্রার্থনা করে চলা এবং সেইসঙ্গে “সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম” করার দরকার। (গালাতীয় ৬:১০; রোমীয় ১২:১১-১৭) পৌল আরও পরামর্শ দেন: “ধার্ম্মিকতা, ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর। বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর; অনন্ত জীবন ধরিয়া রাখ; তাহারই নিমিত্ত তুমি আহূত হইয়াছ, এবং অনেক সাক্ষীর সাক্ষাতে সেই উত্তম প্রতিজ্ঞা স্বীকার করিয়াছ।” (১ তীমথিয় ৬:১১, ১২) “উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর” এবং “ধরিয়া রাখ,” পৌলের এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায় যে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ক্ষতিকর প্রভাবগুলো থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, আমাদেরকে অবশ্যই সমস্ত শক্তি দিয়ে আর সবসময় যুদ্ধ করে চলতে হবে।

বুদ্ধি দরকার

১৮. আজকে খ্রীষ্টানেরা জগতের তথ্যের ব্যাপারে কীভাবে বুদ্ধি করে কাজ করেন?

১৮ বিশ্বাসের যুদ্ধে প্রাণপণ করতে হলে আমাদের বুদ্ধির দরকার। (হিতোপদেশ ২:১১; ফিলিপীয় ১:৯) সত্য খ্রীষ্টানেরা জগতের সমস্ত তথ্যকেই খারাপ বা সেগুলো বিশ্বাস করা যায় না, এমন ভাবেন না। (ফিলিপীয় ৪:৫; যাকোব ৩:১৭) মানুষের সব ধারণাই ঈশ্বরের বাক্যের বিপরীত নয়। যীশু বলেছিলেন যে অসুস্থ ব্যক্তিদের অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত যারা জগতের শিক্ষা থেকেই অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। (লূক ৫:৩১) যীশুর দিনে চিকিৎসা পদ্ধতি আজকের দিনের মতো উন্নত ছিল না, তবুও যীশু জানতেন যে ডাক্তারের কাছে গেলে অন্তত কিছু না কিছু ভাল হবেই। তাই আজকে খ্রীষ্টানেরা জগতের তথ্যের ব্যাপারে বুদ্ধি করে কাজ করেন কিন্তু তারা সেইসমস্ত তথ্যকে এড়িয়ে চলেন, যা তাদের ঈশ্বরের সেবা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

১৯, ২০. (ক) আজেবাজে কথা বলে এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করার সময় প্রাচীনেরা কীভাবে বুদ্ধি করে কাজ করতে পারেন? (খ) যারা মিথ্যা শিক্ষা ছড়াতে চেষ্টা করে চলে তাদের জন্য প্রাচীনরা কোন্‌ পদক্ষেপ নেবেন?

১৯ মণ্ডলীর প্রাচীনদেরও বুদ্ধি করে কাজ করা দরকার, যখন তারা এমন কাউকে সাহায্য করেন, যে আজেবাজে কিছু কথা বলেছে। (২ তীমথিয় ২:৭) কখনও কখনও, মণ্ডলীর ভাইবোনেরা সামান্য বিষয় ও মনগড়া কথাবার্তা নিয়ে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন। মণ্ডলীর একতাকে অটুট রাখার জন্য প্রাচীনদের তাড়াতাড়ি এই সমস্যাগুলোর মীমাংসা করা উচিত। তা করার সময় তারা এটাও খেয়াল রাখবেন যে তারা যেন ভাইদের সম্বন্ধে ভুল ধারণা করে না নেন আর তাদেরকে তখনই ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি বলে মনে করতে শুরু না করেন।

২০ প্রাচীনদের কীভাবে তাদের ভাইবোনদের সাহায্য করা উচিত পৌল তা বলেন। তিনি বলেছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, যদি কেহ কোন অপরাধে ধরাও পড়ে, তবে আত্মিক যে তোমরা, তোমরা সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ কর, আপনাকে দেখ, পাছে তুমিও পরীক্ষাতে পড়।” (গালাতীয় ৬:১) যে খ্রীষ্টানদের মনে বাইবেলের শিক্ষা নিয়ে এখনও সন্দেহ আছে বিশেষ করে তাদের কথা বলে যিহূদা লিখেছিলেন: “কতক লোকের প্রতি, যাহারা সন্দিহান, তাহাদের প্রতি দয়া কর, অগ্নি হইতে টানিয়া লইয়া রক্ষা কর।” (যিহূদা ২২, ২৩) কিন্তু কাউকে বার বার সাবধান করে দেওয়ার পরও যদি সে মিথ্যা শিক্ষা ছড়াতে চেষ্টা করে, তাহলে মণ্ডলীকে রক্ষা করার জন্য প্রাচীনদের কোন কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার আছে।—১ তীমথিয় ১:২০; তীত ৩:১০, ১১.

প্রশংসনীয় বিষয়গুলো দিয়ে আমাদের মনকে ভরা

২১, ২২. কী করার জন্য আমাদের বুদ্ধি করে কাজ করা উচিত আর কোন্‌ বিষয়গুলো দিয়ে আমাদের মনকে ভরে রাখা উচিত?

২১ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী সেই ক্ষতিকর কথাগুলো থেকে দূরে থাকে যা “গলিত ক্ষতের ন্যায় . . . ক্ষয়” করে। (২ তীমথিয় ২:১৬, ১৭; তীত ৩:৯) তা সে জগতের “জ্ঞান” হোক, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের প্রচার হোক বা মণ্ডলীর ভেতরের কারোর আজেবাজে কথা হোক, খ্রীষ্টানেরা সেগুলো থেকে দূরে থাকেন। নতুন নতুন বিষয় জানতে চাওয়াতে যদিও দোষের কিছু নেই কিন্তু জানার কৌতূহল মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে আমরা এমন কিছু বিষয় শিখে ফেলতে পারি, যা আমাদের ক্ষতি করতে পারে। শয়তানের ফন্দিগুলো আমাদের অজানা নয়। (২ করিন্থীয় ২:১১) আমরা জানি যে সে আমাদেরকে ঈশ্বরের সেবা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

২২ ঈশ্বরের সেবক হওয়ায় আসুন আমরা ঈশ্বরীয় শিক্ষাকে ধরে রাখি। (১ তীমথিয় ৪:৬) আমরা বুদ্ধি করে আমাদের সময়কে কাজে লাগাই আর কোন্‌ তথ্য আমরা জানব বা জানব না তা বাছাই করি। তাহলে আমরা শয়তান যে প্রচার করছে তা শুনে টলে যাব না। তাই আসুন আমরা “যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরণীয়, যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি হউক” সেগুলো নিয়ে কথাবার্তা বলি। আমরা যদি এই বিষয়গুলো দিয়ে আমাদের মন ও হৃদয় ভরে রাখি, তাহলে শান্তির ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে থাকবেন।—ফিলিপীয় ৪:৮, ৯.

আমরা কী শিখেছি?

• জগতের জ্ঞান আমাদের ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য কীভাবে বিপদ নিয়ে আসতে পারে?

• ক্ষতিকর ভুল তথ্য থেকে আমরা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারি?

• মণ্ডলীতে আমরা কোন্‌ ধরনের কথাবার্তা বলব না?

• আজকে জগতের এত বেশি তথ্যের মধ্যে বাছাই করার সময় খ্রীষ্টানেরা কীভাবে বুদ্ধি করে কাজ করবেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

অনেক জনপ্রিয় বই ও পত্রিকাগুলো বাইবেলের শিক্ষার বিপরীতে কথা বলে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রীষ্টানরা তাদের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে না দিয়েও তা জানাতে পারেন