সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সুন্দর বিয়েগুলো—যিহোবার সম্মান আনে

সুন্দর বিয়েগুলো—যিহোবার সম্মান আনে

সুন্দর বিয়েগুলো—যিহোবার সম্মান আনে

ওয়েলশ্‌ ও এলথিয়ার বিয়ে হয়েছিল ১৯৮৫ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েটো শহরে। তারা প্রায়ই তাদের মেয়ে জেঞ্জিকে নিয়ে তাদের বিয়ের আ্যলবামটা দেখতে বসেন আর সেই সুন্দর দিনটার স্মৃতিকে মনের কোণে উজ্জ্বল করে নেন। জেঞ্জি বিয়েতে আসা অতিথিদের চিনতে পেরে মজা পায় আর তার মা এত সুন্দর করে সেজেছে ও সুন্দর কাপড় পরেছে দেখে খুবই খুশি হয়।

 সোয়েটোর একটা কমিউনিটি হলে তাদের বিয়ে হয়েছিল। প্রথমে একজন ভাই বিয়ের বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তারপর কিছু খ্রীষ্টান যুবক-যুবতী সুর মিলিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা গান করেছিল। এরপর অতিথিরা খাবার খেয়েছিলেন আর সেইসঙ্গে মৃদু স্বরে রাজ্যের গানের টেপ বাজানো হয়েছিল। সেখানে মদ পরিবেশন করা হয়নি, জোরে কোন গান বাজানো হয়নি বা কেউ নাচেনি। এর বদলে অতিথিরা একে অন্যের সঙ্গে গল্পগুজব করেছিলেন ও বর-কনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রায় তিন ঘন্টার মধ্যেই ওই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছিল। একজন খ্রীষ্টান প্রাচীন রেমন্ড বলেন, “এই বিয়ের মধুর স্মৃতি আজও আমার মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে।”

ওয়েলশ্‌ ও এলথিয়ার যখন বিয়ে হয়, সেই সময় তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির শাখা অফিসে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছিলেন। খুব জাঁকজমক করে বিয়ে করার মতো টাকাপয়সা তাদের ছিল না, তাই তারা খুব সাদাসিধেভাবেই বিয়ে করেছিলেন। কিছু খ্রীষ্টান খুব জাঁকজমক করে বিয়ে করার জন্য পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা ছেড়ে দিয়ে বাইরে চাকরি করেন। কিন্তু এত সাদাসিধেভাবে বিয়ে করায় ওয়েলশ্‌ ও এলথিয়ার কোন দুঃখ নেই, বরং তারা খুশি যে তাদের মেয়ে জেঞ্জির জন্ম হওয়ার আগে পর্যন্ত তারা পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করতে পেরেছিলেন।

কিন্তু কোন বর-কনে যদি তাদের বিয়েতে জগতের ধাঁচের গান-বাজনা ও নাচের আয়োজন করতে চান, তাহলে কী হবে? তারা যদি মদ পরিবেশন করতে চান, তাহলে? কিংবা তারা যদি খুব ঘটা করে, অনেককে নিমন্ত্রণ করে বিয়ে করতে চান, তাহলেই বা কী বলা যায়? তারা কীভাবে মনে রাখতে পারেন যে এই অনুষ্ঠান যেন সবাইকে আনন্দ দেয় আর একইসঙ্গে তারা যিহোবার উপাসক হওয়ায় তা যিহোবার নামে কলঙ্ক না আনে? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে খুব মন দিয়ে চিন্তা করা দরকার কারণ বাইবেল বলে: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।”—১ করিন্থীয় ১০:৩১.

হই হুল্লোড় এড়িয়ে চলা

বিয়েতে আনন্দ করা হবে না, তা ভাবাই যায় না। কিন্তু, আনন্দের এই অনুষ্ঠানে মাত্রা ছাড়িয়ে হই হুল্লোড় করলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। যারা যিহোবার সাক্ষি নয় তাদের বিয়েতে এমন কিছু হয় যেগুলোকে যিহোবা ঘৃণা করেন। যেমন, তাদের বিয়েতে মদ খেয়ে মাতাল হওয়াটা এমন কিছু বড় বিষয় নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে কিছু খ্রীষ্টান বিয়েতেও এইরকম হয়েছে।

বাইবেল সাবধান করে দেয় যে “সুরা কলহকারিণী।” (হিতোপদেশ ২০:১) যে ইব্রীয় শব্দকে “কলহকারিণী” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে তার মানে হল “খুব জোরে চিৎকার-চেঁচামেচি করা।” মদ খেয়ে যদি একজন ব্যক্তিই বেশ ভালরকম চেঁচামেচি করতে পারে, তাহলে অনেকে মিলে মদ খেলে আর মাতাল হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করলে সেখানে কী অবস্থা হতে পারে তা আপনি বুঝতে পারেন! আর এইরকম হলে সহজেই সেখানে “মত্ততা, রঙ্গরস ও তৎসদৃশ অন্য অন্য দোষ” হতে পারে যেগুলোকে বাইবেল “মাংসের কার্য্য” বলে। যারা এই কাজগুলো করে ও কোন রকম অনুতাপ না দেখিয়ে এই কাজগুলো করেই চলে তারা ঈশ্বরের রাজ্যে অনন্ত জীবন পাবে না।—গালাতীয় ৫:১৯-২১.

“রঙ্গরস” এর জন্য যে গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা সেই যুবকদের বোঝাতে ব্যবহার করা হতো, যারা মদ খেয়ে রাস্তা দিয়ে জোরে জোরে নাচগান ও হই হুল্লোড় করতে করতে যেত। তাই কোন বিয়েতে যদি ইচ্ছেখুশি মতো মদ পরিবেশন করা হয় আর কানফাটানো শব্দে গান বাজানো হয় বা উদ্দাম নাচ নাচা হয়, তাহলে সবাই হই হুল্লোড়ের মধ্যেই ডুবে যাবে আর তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এইরকম অবস্থায়, যারা সত্যে খুব দৃঢ় নয় তারা সহজেই ফাঁদে পড়তে পারে এবং মাংসের অন্যান্য কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন “বেশ্যাগমন [ব্যভিচার], অশুচিতা, স্বৈরিতা, [অথবা] রাগ।” মাংসের এই কাজগুলো যাতে একজন খ্রীষ্টানের বিয়ের আনন্দকে মাটি করে না দেয়, সেইজন্য কী করা যেতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা দেখি যে বাইবেল একটা বিয়ের সম্বন্ধে কী বলে।

যীশু যে বিয়েতে গিয়েছিলেন

যীশু ও তাঁর শিষ্যদের গালীলের কান্না নগরের একটা বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তারা সেখানে গিয়েছিলেন এবং যীশু সেই অনুষ্ঠানের আনন্দকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। দ্রাক্ষারস ফুরিয়ে গেলে তিনি অলৌকিকভাবে উৎকৃষ্ট দ্রাক্ষারস বানিয়েছিলেন। বর যীশুর এই অলৌকিক কাজের জন্য খুবই কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন। আর কোন সন্দেহ নেই যে বিয়েতে পরিবেশন করার পরও যে দ্রাক্ষারস রয়ে গিয়েছিল তা পরে বর ও তার পরিবারের কাজে এসেছিল।—যোহন ২:৩-১১.

যীশু যে বিয়েতে গিয়েছিলেন তার থেকে আমরা বেশ কিছু বিষয় শিখতে পারি। প্রথমে যে বিষয়টা শেখার আছে তা হল, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা নিমন্ত্রণ ছাড়াই বিয়ে বাড়িতে যাননি। বাইবেলে খুব স্পষ্ট করে বলা আছে যে তারা নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। (যোহন ২:১, ২) আর যীশু বিবাহভোজের যে দুটো দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে সেখানে অতিথিদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল।—মথি ২২:২-৪, ৮, ৯; লূক ১৪:৮-১০.

কিছু দেশে এমন রীতি আছে যে বিয়ে বাড়িতে যে কেউই আসতে পারেন, তা সে তাদের নিমন্ত্রণ করা হোক বা না হোক। কিন্তু, এরকম হলে বর-কনে মুশকিলে পড়তে পারেন। তাদের যদি খুব বেশি পয়সা না থাকে, তাহলে এত লোকের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য হয়তো তাদের টাকা ধার করতে হতে পারে। তাই, কোন খ্রীষ্টান বর-কনে যদি খুব সাদাসিধেভাবে বিয়ে করেন ও অল্প কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করেন, তাহলে অন্য খ্রীষ্টান ভাইবোনদের তা বোঝা উচিত ও বর-কনের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখানো উচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে একজন ব্যক্তি তার বিয়েতে ২০০ জনকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু সেই বিয়ে বাড়িতে ৬০০ জন লোক এসেছিল আর স্বাভাবিকভাবেই খাবার কম পড়েছিল। যে অতিথিরা নিমন্ত্রণ না পেয়েও সেই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তাদের মধ্যে একটা পুরো বাস ভর্তি যাত্রীরা ছিলেন, যারা সেই বিয়ের দিনেই কেপ টাউনে ঘুরতে এসেছিলেন। এই বাসের গাইড ছিলেন কনের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় আর তিনি মনে করেছিলেন যে বর বা কনেকে কিছু না বলেই পুরো দলকে ওই বিয়েতে নিয়ে আসার অধিকার তার আছে!

যে কেউই আসতে পারেন এমন কিছু যদি না বলা হয়, তাহলে একজন খ্রীষ্টান নিমন্ত্রণ ছাড়া কোন বিয়েতে যাবেন না বা নিমন্ত্রিত লোকেদের জন্য যে খাবার পরিবেশন করা হয় তার থেকে কিছু নেবেনও না। কেউ যদি নিমন্ত্রণ না পেয়েও কোন বিয়েতে যেতে চান তখন তার নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি যদি এই বিয়েতে যাই, তাহলে কি তা দেখাবে না যে এই নবদম্পতির জন্য আমার মনে কোন ভালবাসাই নেই? আমাকে দেখে কি তারা লজ্জায় পড়বে না বা আমি কি বিয়ে বাড়ির আনন্দকে মাটি করব না?’ নিমন্ত্রণ পাননি বলে দুঃখ না পেয়ে বরং একজন বিবেচক খ্রীষ্টান প্রেম দেখিয়ে ওই বর-কনেকে শুভেচ্ছা পাঠাতে পারেন ও তাদের জন্য প্রার্থনা করতে পারেন যেন যিহোবা তাদেরকে আশীর্বাদ করেন। এমনকি তিনি হয়তো তাদের আনন্দকে বাড়ানোর জন্য নবদম্পতিকে কোন উপহার পাঠানোর কথাও ভাবতে পারেন।—উপদেশক ৭:৯; ইফিষীয় ৪:২৮.

দায়িত্ব আসলে কার?

আফ্রিকার কিছু জায়গায় সাধারণত বয়স্ক আত্মীয়রাই বিয়ের সমস্ত দায়দায়িত্ব নেন। এইজন্য বর-কনে তাদেরকে ধন্যবাদ জানান কারণ এতে তাদেরকে খরচের কথা চিন্তা করতে হয় না। আর তারা হয়তো এও মনে করতে পারেন যে বিয়েতে যা কিছুই হবে তার কোন দায়দায়িত্বও তাদের নয়। কিন্তু, আত্মীয়দের সাহায্য নেওয়ার আগে বর-কনের দেখে নেওয়া দরকার যে তাদের ইচ্ছার কথাও যেন শোনা হয়।

যদিও ঈশ্বরের পুত্র যীশু ‘স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছেন’ কিন্তু তাই বলে যে তিনি কান্না নগরের বিয়ে বাড়িতে গিয়ে অধিকার খাটাতে শুরু করেছিলেন বা সমস্ত দায়দায়িত্ব নিজের হাতে নিতে চেয়েছিলেন তা নয়। (যোহন ৬:৪১) এর বদলে বাইবেল বলে যে অন্য কাউকে ‘ভোজাধ্যক্ষ’ করা হয়েছিল। (যোহন ২:৮) কোন কিছু হলে এই ভোজাধ্যক্ষ নতুন পরিবারের মস্তক, অর্থাৎ বরের কাছে জবাব দিতে বাধ্য ছিলেন।—যোহন ২:৯, ১০.

ঈশ্বর স্বামীকে তার পরিবারের মস্তক করেছেন। তাই খ্রীষ্টান আত্মীয়স্বজনদের এই নতুন পরিবারের মস্তকের দায়িত্বকে সম্মান দেখানো উচিত। (কলসীয় ৩:১৮-২০) তার বিয়েতে কী কী হবে তা দেখার দায়িত্ব বরের। তবে বরের বিচার বিবেচনা করে কাজ করা দরকার আর তিনি তার স্ত্রী, বাবামা ও শ্বশুর-শাশুড়ীর ইচ্ছেকে মাথায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আত্মীয়স্বজনরা যদি নিজেদের ইচ্ছা মতো কিছু করতে চান ও তারা যদি বর-কনের ইচ্ছার কথা না শুনেই কিছু ব্যবস্থা করতে চান, তাহলে বর-কনেকে হয়তো তাদের ভালভাবে বুঝিয়ে না বলতে হতে পারে আর নিজেদেরই সাদাসিধেভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। আর তাহলে অশোভন কিছু ঘটবে না, যে জন্য বর-কনে পরে অস্বস্তিতে পড়েন ও তার জন্য তাদের দুঃখ করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একবার আফ্রিকায় এক সাক্ষির বিয়েতে একজন অবিশ্বাসী আত্মীয়কে দেখাশোনার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আর তিনি মৃত পূর্বপুরুষদের নামে অতিথিদের জন্য মদের ব্যবস্থা করেছিলেন।

কখনও কখনও বিয়ের পর সঙ্গে সঙ্গেই বর-কনে মধুচন্দ্রিমায় চলে যান। যদি সেরকম হয়, তাহলে বরের দায়িত্ববান কাউকে দেখাশোনার ভার দিয়ে যাওয়া উচিত যিনি খেয়াল রাখবেন যে তিনি চলে যাওয়ার পরও যেন এমন কিছু না হয় যাতে বাইবেলের মান ভঙ্গ হয় এবং অনুষ্ঠান যেন ঠিক সময়ে শেষ করা হয়।

ভেবেচিন্তে তৈরি হন ও মাত্রা বজায় রাখুন

যীশু যে বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন সেখানে যে অনেক ভাল ভাল খাবার ছিল সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই কারণ বাইবেলে এটাকে বিবাহভোজ বলা হয়েছে। আর আগেই বলা হয়েছে যে সেখানে প্রচুর পানীয়ও ছিল। কোন সন্দেহ নেই যে সেখানে ভাল গান ও নাচের আয়োজনও করা হয়েছিল কারণ নাচগান যিহুদি সমাজ জীবনের একটা অঙ্গ ছিল। আর একথা যীশুর বলা অপব্যয়ী পুত্রের দৃষ্টান্ত থেকেও জানা যায়। ওই গল্পে ধনী বাবার ছেলে যখন খারাপ রাস্তা ছেড়ে তার বাবার কাছে ফিরে এসেছিল তখন বাবা এত খুশি হয়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন: “আমরা ভোজন করিয়া আমোদ প্রমোদ করি।” যীশুর কথা মতো ওই অনুষ্ঠানে “বাদ্য ও নৃত্যের” ব্যবস্থা করা হয়েছিল।—লূক ১৫:২৩, ২৫.

কিন্তু, আগ্রহের বিষয় হল যে কান্না নগরের বিয়ে বাড়িতে নাচগান হয়েছিল কি না সেই বিষয়ে বাইবেল সরাসরি কিছু বলে না। আসলে, বাইবেলে যখনই কোন বিয়ের কথা বলা হয়েছে তার কোথাও নাচ হয়েছিল কি না সেই বিষয়ে লেখা নেই। অতএব, বাইবেল লেখার যুগে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেদের বিয়েতে নাচগান খুব কমই হতো বলে মনে হয়। এর থেকে কি আমরা কিছু শিখতে পারি?

আফ্রিকায় কিছু খ্রীষ্টান বিয়েতে খুব জোরে গান বাজানো হয়। এত জোরে গান বাজানো হয় যে অতিথিরা ভালভাবে বসে কথাবার্তাও বলতে পারেন না। কখনও কখনও খাবার কম পড়লেও পড়তে পারে কিন্তু নাচের কোন কমতি নেই বরং মাঝে মাঝে তা যেন বেসামাল হয়ে ওঠে। বিয়ের বদলে তা যেন মাঝে মাঝে নাচের পার্টি হয়ে ওঠে। এছাড়াও, এত জোরে গানবাজনা শুনে প্রায়ই দুষ্ট ও অপরিচিত লোকেরা সেখানে আসার সুযোগ পেয়ে যায় ও নিমন্ত্রণ ছাড়াই তারা সেখানে চলে আসে।

বাইবেলে যে বিয়েগুলোর কথা বলা আছে তার থেকে দেখা যায় যে নাচগানকে খুব বড় জায়গা দেওয়া হতো না। তাহলে এই বিষয়টা মনে রেখে যে যুবক-যুবতীরা বিয়ের জন্য তৈরি করছেন তারা কি এমনভাবে বিয়ে করবেন না যা যিহোবার সম্মান নিয়ে আসে? কিন্তু, কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু বিয়েতে নাচের জন্য কিছু যুবক-যুবতীরা অনেক সময় ধরে অভ্যাস করেছিল। এভাবে মাসের পর মাস তারা অনেক সময় নষ্ট করেছিল। কিন্তু তা না করে খ্রীষ্টানদের বরং “যা সত্যিসত্যিই সবচেয়ে ভাল তা” করা যেমন প্রচারে যাওয়া, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করা এবং সভাতে আসার জন্য ‘সুযোগ কিনিয়া লওয়া’ দরকার।—ফিলিপীয় ১:১০, প্রেমের বাণী; ইফিষীয় ৫:১৬.

কান্না নগরে যীশু অলৌকিকভাবে যতখানি দ্রাক্ষারস বানিয়েছিলেন তা থেকে বোঝা যায় যে সেই বিয়ে বেশ জাঁকজমক করে হয়েছিল ও অনেকে সেখানে এসেছিলেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ওই বিয়েতে কোন হই হুল্লোড় হয়নি এবং কেউই মদ খেয়ে মাতাল হয়নি, যেমন সাধারণত যিহুদি বিয়েগুলোতে হতো। (যোহন ২:১০) কিন্তু আমরা কীভাবে নিশ্চিত করে তা বলতে পারি? কারণ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সেখানে গিয়েছিলেন। অন্য যে কারোর চেয়ে যীশুর এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি চিন্তা ছিল যে সেখানে যেন ঈশ্বরের এই আজ্ঞা মানা হয়: “মদ্যপায়ীদের সঙ্গী হইও না।”—হিতোপদেশ ২৩:২০.

তাই বর-কনে যদি ঠিক করেন যে তাদের বিয়েতে মদ পরিবেশন করবেন, তাহলে তা পরিবেশনের দায়িত্ব কিছু দায়িত্ববান ভাইদের দেওয়া উচিত যারা খুব ভালভাবে বিষয়টা দেখাশোনা করতে পারবেন। আর যদি তিনি গান বাজাতে চান, তাহলে তার ভাল গান বাছাই করা উচিত ও এমন একজনকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত যিনি দেখবেন যে গান যেন খুব বেশি জোরে না বাজানো হয়। খেয়াল রাখা দরকার যে অতিথিরা যেন তাদের জোর খাটানোর চেষ্টা না করেন, কারণ তারা হয়তো কোন খারাপ গান বাজাতে অথবা খুব জোরে গান বাজানো শুরু করে দিতে পারেন। যদি নাচের আয়োজন করা হয়, তাহলে দেখা দরকার যে তা যেন বেসামাল না হয়ে পড়ে। খ্রীষ্টান নন এমন লোকেরা বা অপরিপক্ব খ্রীষ্টানেরা যদি দৃষ্টিকটু বা খারাপভাবে নাচতে শুরু করেন, তাহলে বর গান বদলে দিতে বা নাচ বন্ধ করে দিতে বলতে পারেন। তা না হলে, বিয়ে বাড়িতে খুব বেশি হই হল্লা হতে পারে ও কেউ বিঘ্ন পেতে পারেন।—রোমীয় ১৪:২১.

আমাদের কিছু ভাইবোনেরা বিয়েতে নাচগান বা মদ না রাখাটাই ঠিক বলে মনে করেন। কারণ তারা জানেন যে এর থেকে কী কী বিপদ আসতে পারে। এর জন্য কাউকে কাউকে হয়তো কথা শুনতে হয়েছে কিন্তু আসলে তাদের প্রশংসা করা দরকার কারণ তারা ঈশ্বরের পবিত্র নামে কলঙ্ক আনে এমন কিছু করতে চান না। আবার অন্য দিকে কিছু বরেরা ভাল গানবাজনা, নাচ ও পরিমিত মদের আয়োজন করেন। তবে বিয়েতে যা কিছুই করা হোক না কেন, তার সমস্ত দায়দায়িত্ব বরের।

আফ্রিকায় কিছু লোকেরা খ্রীষ্টানদের বিয়েগুলোর জন্য ঠাট্টা করে বলে যে সেগুলোতে যাওয়া যেন মরা বাড়িতে যাওয়ার সমান। কিন্তু, এইরকম ভাবা ঠিক নয়। মাংসের পাপপূর্ণ কাজ হয়তো কিছু সময়ের জন্য আনন্দ দিতে পারে কিন্তু এরজন্য পরে খ্রীষ্টানদের বিবেক দংশনে ভুগতে হয় ও তা ঈশ্বরের নামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসে। (রোমীয় ২:২৪) অন্যদিকে, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা সত্যিকারের আনন্দ নিয়ে আসে। (গালাতীয় ৫:২২) অনেক খ্রীষ্টান দম্পতি তাদের বিয়ের দিনের কথা ভেবে খুশি হন, তারা জানেন যে সেটা সত্যিই এক আনন্দের অনুষ্ঠান ছিল, কারও ‘ব্যাঘাত জন্মানোর’ নয়।—২ করিন্থীয় ৬:৩.

ওয়েলশ্‌ ও এলথিয়ার আজও তাদের বিয়েতে আসা অবিশ্বাসী আত্মীয়স্বজনদের ভাল মন্তব্যগুলো মনে আছে। একজন বলেছিলেন: “আজকাল বিয়েতে এত বেশি হই হট্টোগোল হয় যে সেখানে যেতেই ইচ্ছে হয় না। এমন এক সভ্য ও সুন্দর বিয়েতে এসে আমার খুব ভাল লেগেছিল।”

কিন্তু সবচেয়ে বেশি জরুরি বিষয় হল যে সুন্দর খ্রীষ্টীয় বিয়েগুলো, বিবাহের উদ্যোক্তা যিহোবা ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে আসে।

[২২ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

বিয়ে বাড়ির জন্য যে বিষয়গুলো ঠিক করা দরকার

• আপনি যদি কোন অবিশ্বাসী আত্মীয়কে আপনার বিয়েতে কিছু বলার জন্য বলেন, তাহলে কি আপনি ঠিক জেনে নিয়েছেন যে তিনি এমন কোন প্রথা মানবেন না, যা বাইবেল অনুসারে ঠিক নয়?

• যদি ঠিক করেন যে গানবাজনা থাকবে, তাহলে কি আপনি ভাল গান বাছাই করেছেন?

• গানবাজনা কি আস্তে আস্তে হবে?

• যদি নাচের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে নাচ কি রুচিসম্মত হবে?

• মদ কি পরিমিত মাত্রায় পরিবেশন করা হবে?

• দায়িত্ববান ব্যক্তিরা কি এটা পরিবেশন করবেন?

• বিয়ে বাড়ির কাজকর্ম কখন শেষ হবে তার সময় কি ঠিক করা হয়েছে?

• শৃঙ্খলা রাখার জন্য যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা কি শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকবেন?