সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের দিনের জন্য ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য কী বলে

আমাদের দিনের জন্য ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য কী বলে

আমাদের দিনের জন্য ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য কী বলে

“হে মনুষ্যসন্তান, বুঝিয়া লও, কারণ এই দর্শন শেষকাল-বিষয়ক।”—দানয়েল ৮:১৭.

১. যিহোবা পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে কী জানাতে চান?

 যিহোবা জানেন যে ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে আর তিনি তা শুধু নিজের কাছেই রেখে দেন না। তিনি গুপ্ত বিষয়গুলো প্রকাশ করেন। আর তিনি চান যে পৃথিবীর ৬০০ কোটি লোক জানুক যে তারা ‘শেষকালের’ একেবারে শেষ মুহূর্তে বাস করছে। কতই না জরুরি খবর!

২. কোন্‌ অবস্থা দেখে আজকে মানুষ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে চিন্তা করে?

এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে জগৎ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। একটু ভেবে দেখুন যে মানুষ চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু তার নিজের গ্রহে ঘরের বাইরে পা রাখতে ভয় পেয়েছে। সমস্ত আধুনিক জিনিসপত্রে ঘর ভরে ফেলেছে কিন্তু ঘরে ঘরে অশান্তি আর সংসার ভেঙে যাওয়াকে রুখতে পারেনি। সারা পৃথিবীর তথ্য সে সংগ্রহ করেছে অথচ একসঙ্গে মিলেমিশে শান্তিতে বাস করার কথা সে লোকেদের শেখাতে পারেনি। বাইবেলে বলা শেষ কালের এই সমস্ত চিহ্ন যখন পূর্ণ হয় তখন তা দেখে আমরা বুঝি যে সত্যিই আমরা শেষ কালের একেবারে শেষ মুহূর্তে বাস করছি।

৩. প্রথম কখন ‘শেষকাল’ কথাগুলো বলা হয়েছিল?

‘শেষকাল,’ এই জরুরি কথাগুলো প্রায় ২,৬০০ বছর আগে স্বর্গদূত গাব্রিয়েল যিহোবার এক ভাববাদীকে প্রথম বলেছিলেন। গাব্রিয়েলকে দেখে ভাববাদী ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন আর গাব্রিয়েল তাকে বলেছিলেন: “হে মনুষ্যসন্তান, বুঝিয়া লও, কারণ এই দর্শন শেষকাল-বিষয়ক।”—দানিয়েল ৮:১৭.

এটাই ‘শেষকাল’!

৪. বাইবেলে আর কীভাবে শেষকাল কথাগুলো বলা আছে?

ওই ভাববাদী ছিলেন দানিয়েল যিনি ‘শেষকাল’ এবং ‘নিরূপিত শেষকাল’ এই কথাগুলো তার বইয়ে ছয়বার লিখেছিলেন। (দানিয়েল ৮:১৭, ১৯; ১১:৩৫, ৪০; ১২:৪, ৯) প্রেরিত পৌলও এই ‘শেষকাল’ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) এছাড়া যীশু খ্রীষ্ট নিজে বলেছিলেন যে শেষকালে তিনি রাজা হিসেবে স্বর্গে ‘উপস্থিত’ (NW) হবেন।—মথি ২৪:৩৭-৩৯.

৫, ৬. শেষকালে কারা ‘ইতস্তত ধাবমান হয়েছেন’ আর এর ফলে কী হয়েছে?

দানিয়েল ১২:৪ পদ বলে: “হে দানিয়েল, তুমি শেষকাল পর্য্যন্ত এই বাক্য সকল রুদ্ধ করিয়া রাখ, এই পুস্তক মুদ্রাঙ্কিত করিয়া রাখ; অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে।” দানিয়েল যা লিখেছিলেন তার বেশির ভাগই গুপ্ত ছিল আর শত শত বছর ধরে মানুষেরা তা বুঝতে পারেনি। কিন্তু আজকেও কি তা গুপ্তই আছে?

একেবারেই নয়। দানিয়েলের বইয়ে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তেমনই আমাদের দিনে অনেক বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা ঈশ্বরের বাক্যের পাতায় পাতায় ‘ইতস্তত ধাবমান হয়েছেন।’ ফলে, যিহোবা তাদের সত্যিকারের জ্ঞান দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে, তারা জেনেছেন যে যীশু খ্রীষ্ট ১৯১৪ সালে স্বর্গে রাজা হয়েছেন। ঠিক যেমন ২ পিতর ১:১৯-২১ পদে লেখা আছে, সেইরকমই অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ও বিরাট জনতা একসঙ্গে মিলে ‘ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে মন’ দিচ্ছেন আর তারা খুব ভাল করে জানেন যে তারা শেষকালে বাস করছেন।

৭. কোন্‌ ঘটনাগুলোর কথা লেখা থাকায় দানিয়েলের বইয়ের কোন তুলনা হয় না?

দানিয়েলের বইয়ের কোন তুলনা হয় না। এতে এমন এক রাজার কথা বলা আছে, যিনি তার সমস্ত জ্ঞানী লোকেদের হত্যা করার হুমকি দেন কারণ তারা তাকে তার জটিল স্বপ্ন ও তার অর্থ বলতে পারেননি। কিন্তু যিহোবার ভাববাদী তাকে তা বলেছিলেন। তিনজন যুবক এক প্রকাণ্ড প্রতিমার সামনে প্রণিপাত না করায় তাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা মারা যায়নি। এক ভোজ চলা কালে, শত শত লোকেরা একটা হাতকে দেওয়ালের ওপর রহস্যময় কিছু শব্দ লিখতে দেখেছিল। দুষ্ট ষড়যন্ত্রকারীরা একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সিংহের গর্তে ফেলে দিয়েছিল কিন্তু তিনি অক্ষত অবস্থায় সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। একটা দর্শনে চারটে জন্তুকে দেখা গিয়েছিল এবং সেগুলোর ভবিষ্যতের জন্য অর্থ ছিল, যা এই ‘শেষকালে’ পূর্ণ হচ্ছে।

৮, ৯. বিশেষ করে এই শেষকালে দানিয়েলের বই থেকে আমরা কী জানতে পারি?

ওপরের ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায় যে দানিয়েলের বই একেবারে আলাদা দুটো বিষয় সম্বন্ধে জানায়। একটা হল ইতিহাস, অন্যটা ভবিষ্যদ্বাণী। দুটোই আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। ইতিহাস আমাদের দেখায় যে যারা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন তিনি তাদের কখনও ছেড়ে দেন না। আর ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের নিশ্চিত করে যে যিহোবা শত শত বছর এমনকি হাজার হাজার বছর আগেই বিষয়গুলো বলে দিতে পারেন।

দানিয়েল যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো লিখেছেন সেগুলো বলে যে খুব শীঘ্রিই ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীর ওপর শাসন করবে। আর এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যখন আমরা পূর্ণ হতে দেখি তখন আমাদের বিশ্বাস মজবুত হয়, আমরা আরও নিশ্চিত হয়ে যাই যে আমরা শেষকালে বাস করছি। কিন্তু কিছু সমালোচকেরা দোষ দিয়ে বলেন যে ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পরই দানিয়েল সেগুলোকে ভবিষ্যদ্বাণী বলে লিখেছিলেন। তাদের এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে শেষকাল সম্বন্ধে দানিয়েলের বইয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী আছে তার ওপর কীভাবে ভরসা করা যায়? এছাড়া সমালোচকেরা বলেন যে দানিয়েলের বইয়ের ইতিহাসও ভুল। তাই আসুন এখন আমরা একবার পরীক্ষা করে দেখি যে তাদের এই দাবি সত্যি কি না।

আদালতে!

১০. আজ দানিয়েলের বইকে কেন আদালতের সামনে হাজির হতে হয়?

১০ মনে করুন যে আদালতে মামলার শুনানি হচ্ছে আর আপনি সেখানে হাজির হয়েছেন। সরকারি উকিল জোরের সঙ্গে একজন লোকের ওপর ধোঁকা দেওয়ার দোষ দিচ্ছেন কিন্তু সেই লোক বলছেন যে তা একেবারেই মিথ্যে। একইভাবে, দানিয়েলের বই সমালোচকদের দেওয়া দোষকে মিথ্যে বলে। এই বই একজন ইব্রীয় ভাববাদী সা.কা.পূ. সপ্তম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে লিখেছিলেন। কিন্তু সমালোচকেরা এটাকে সত্যি বলে মেনে নেন না। তাহলে আসুন এখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে দানিয়েলের বই যা বলে তা ইতিহাসের সঙ্গে মেলে কি না।

১১, ১২. বেল্‌শৎসর নামে কোন রাজা কি ইতিহাসে কখনও ছিল না?

১১ আসুন প্রথমে আমরা দানিয়েলের বইয়ের ইতিহাস পরীক্ষা করে দেখি। দানিয়েল ৫ অধ্যায়ে লেখা আছে যে সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে যখন বাবিলনকে ধ্বংস করা হয়েছিল সেই সময়ে বাবিলনের রাজা ছিলেন বেল্‌শৎসর। সমালোচকেরা বলেন যে সেই সময়ে নেবোনাইডাস বাবিলনে রাজত্ব করছিলেন আর তিনিই ছিলেন শেষ রাজা। ইতিহাসে বেল্‌শৎসর নামে কোন রাজা কখনও ছিল না।

১২ কিন্তু ১৮৫৪ সালে মাটি খুঁড়ে পাওয়া কিছু জিনিস সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেয়। প্রাচীন বাবিলনের ঊর শহর, এখন যেটা ইরাক সেখানকার ধ্বংসস্তূপ থেকে মাটি খুঁড়ে কিছু কীলকাকার শিলালিপি পাওয়া গেছে। এই কীলকাকার শিলালিপিতে রাজা নেবোনাইডাস তার পুত্রের কথা বলেছিলেন, “বেল্‌শৎসর আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র।” যদিও পৃথিবীর লোকেরা বেল্‌শৎসরকে জানতে কিছুটা দেরি করেছে কিন্তু তিনি ইতিহাসে ছিলেন। এমনকি সমালোচকেরাও একথা মানতে বাধ্য। এছাড়াও আরও অনেক প্রমাণ দেখায় যে দানিয়েলের বই সত্যি। আর এর থেকেই আমরা জানতে পারি যে দানিয়েলের বই ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য আর তাই এই শেষকালে তাতে মন দেওয়া জরুরি।

১৩, ১৪. নবূখদ্‌নিৎসর কে ছিলেন আর তিনি কোন্‌ দেবতার উপাসনা করতেন?

১৩ দানিয়েলের বইয়ে বিশ্বশক্তি ও সেগুলোর কিছু রাজাদের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী আছে। আপনি কি জানেন যে আমাদের দিনের সঙ্গে এটা কীভাবে জড়িত? এদেরই একজন ছিলেন নবূখদ্‌নিৎসর। যখন তিনি একজন রাজকুমার ছিলেন সেই সময় তিনি ও তার সেনাবাহিনী মিশরের ফরৌণ-নিকোর সেনাবাহিনীকে কারকিমিশ শহরে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে তিনি খবর পান যে তার পিতা নাবোপোলাসারের মৃত্যু হয়েছে আর তাই তাকে সমস্ত কিছু সেনাপতিদের হাতে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর সা.কা.পূ. ৬২৪ সালে এই যুবক রাজকুমার নবূখদ্‌নিৎসর সিংহাসনে বসেন। আর তিনি খুব বড় যোদ্ধা ছিলেন কারণ তার ৪৩ বছরের রাজত্বকালের মধ্যে তিনি এক বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। তার রাজত্বে তিনি সেই অঞ্চলগুলোকেও জয় করে নিয়েছিলেন যেগুলো একসময় অশূর বিশ্বশক্তির দখলে ছিল। এছাড়া তিনি সিরিয়া এবং প্যালেস্টাইন থেকে মিশরের সীমানা পর্যন্ত তার রাজ্যকে বাড়িয়েছিলেন।

১৪ নবূখদ্‌নিৎসর বিশ্বাস করতেন যে তার সমস্ত জয়ের পেছনে আছেন বাবিলনের প্রধান দেবতা মার্দুক আর তাই তিনি মার্দুকের উপাসনা করতেন। নবূখদ্‌নিৎসর মার্দুক ও বাবিলনের আরও অন্যান্য দেবদেবীর সুন্দর সুন্দর মন্দির তৈরি করেছিলেন। দানিয়েল ৩ অধ্যায়ে লেখা আছে যে রাজা দূরা সমস্থলীতে সোনার এক প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন আর সেটা হয়তো মার্দুকেরই মূর্তি ছিল। (দানিয়েল ৩:১, ২) আর নবূখদ্‌নিৎসর যুদ্ধের জন্য যে কোন কাজ করার আগেই জ্যোতিষীদের পরামর্শ নিতেন।

১৫, ১৬. নবূখদ্‌নিৎসর বাবিলনে কী কী করেছিলেন আর নিজের সাফল্যে যখন তিনি গর্ব করেছিলেন তখন কী হয়েছিল?

১৫ যুদ্ধজয় ছাড়াও নবূখদ্‌নিৎসর আরও কিছু কাজ করেছিলেন। তিনি বাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান বানিয়েছিলেন—যেটা প্রাচীন জগতের সপ্ত আশ্চর্যের মধ্যে একটা ছিল। এটা তিনি তার রানিকে খুশি করার জন্য তৈরি করেছিলেন, যিনি তার দেশ মাদিয়ের মতো পাহাড় ও বাগান চেয়েছিলেন। এছাড়াও বাবিলনকে তিনি সবচেয়ে শক্তিশালী শহর করে তুলেছিলেন। তিনি বাবিলনে দুটো প্রকাণ্ড প্রাচীর বানিয়েছিলেন যা তার পিতা বানাতে শুরু করেছিলেন। এই প্রাচীরগুলোর জন্য শত্রুদের পক্ষে বাবিলন আক্রমণ করা অসম্ভব ছিল। বাবিলন ছিল প্রাচীর ঘেরা বড় বড় শহরগুলোর মধ্যে একটা। আর নিজের এতসব সাফল্যে রাজা কতই না গর্বিত ছিলেন!

১৬ রাজা নবূখদ্‌নিৎসর গর্ব করে বলেছিলেন, “এ কি সেই মহতী বাবিল নয়, যাহা আমি . . . নির্ম্মাণ করিয়াছি?” কিন্তু দানিয়েল ৪:৩০-৩৬ পদ বলে, “রাজার মুখ হইতে এই বাক্য নির্গত হইতে না হইতে” তিনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক দানিয়েলের বলা ভবিষ্যদ্বাণীর মতো তিনি সাত বছর মাঠে মাঠে ঘুরে বেরিয়েছিলেন আর ঘাস খেয়েছিলেন। তারপর তার রাজ্য তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আপনি কি জানেন যে এই ঘটনা আজকে আমাদের কী বলে? আপনি কি বলতে পারেন যে কীভাবে এই শেষকালে তা ঘটবে?

ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষা করে দেখা

১৭. বিশ্ব শাসক হওয়ার দুবছর পরে ঈশ্বর নবূখদ্‌নিৎসরকে কোন্‌ স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন?

১৭ আসুন এখন আমরা দানিয়েলের বইয়ের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষা করে দেখি। যার মধ্যে একটা হল রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্ন। বিশ্ব শাসক হওয়ার দুবছর পরে (সা.কা.পূ. ৬০৬/৬০৫ সালে) তিনি এই স্বপ্ন দেখেছিলেন। ঈশ্বর তাকে এমন এক ভয়াবহ স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে রাজার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। দানিয়েল ২ অধ্যায়ে বলা রয়েছে যে স্বপ্নের এই প্রকাণ্ড প্রতিমার মস্তক সুবর্ণময়, বক্ষঃ ও বাহু রৌপ্যময়, উদর ও ঊরুদেশ পিত্তলময়, জঙ্ঘা লৌহময় এবং চরণ কিছু লৌহ ও কিছু মৃত্তিকাময় ছিল। প্রতিমার এই আলাদা আলাদা অঙ্গগুলোর মানে কী?

১৮. প্রতিমার স্বর্ণময় মস্তক, রৌপ্যময় বক্ষঃ ও বাহু আর পিত্তলময় উদর ও ঊরুদেশ দিয়ে কাদের বোঝানো হয়েছে?

১৮ স্বপ্নের অর্থ বলতে গিয়ে ঈশ্বরের ভাববাদী দানিয়েল নবূখদ্‌নিৎসরকে বলেছিলেন: “হে মহারাজ, . . . আপনিই সেই স্বর্ণময় মস্তক।” (দানিয়েল ২:৩৭, ৩৮) কারণ বাবিলনের বিশাল সাম্রাজ্যে নবূখদ্‌নিৎসরই ছিলেন প্রথম রাজা। প্রতিমার রৌপ্যময় বক্ষঃ ও বাহু হল মাদীয়-পারস্য বিশ্বশক্তি, যা বাবিলনকে পরাজিত করেছিল। এরপর আসে গ্রিক সাম্রাজ্য, যেটা পিত্তলময় উদর ও ঊরুদেশ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু গ্রিস কীভাবে বিশ্বশক্তি হয়ে উঠেছিল?

১৯, ২০. মহান আলেকজান্ডার কে ছিলেন আর তিনি কীভাবে গ্রিসকে এক বিশ্বশক্তি করে তুলেছিলেন?

১৯ সাধারণ কাল পূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে একজন যুবক দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীকে পূর্ণ করার ব্যাপারে এক বড় ভূমিকা নেন। পৃথিবীর লোকেরা তাকে মহান আলেকজান্ডার নামে জানে। সা.কা.পূ. ৩৫৬ সালে তার জন্ম হয়েছিল আর সা.কা.পূ. ৩৩৬ সালে যখন তার পিতা ফিলিপ আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন সেই সময় মাত্র ২০ বছর বয়সে আলেকজান্ডার ম্যাসিডোনিয়ার সিংহাসনে বসেছিলেন।

২০ সাধারণ কাল পূর্ব ৩৩৪ সালের মে মাসে আলেকজান্ডার সারা পৃথিবীকে জয় করার জন্য বেরিয়ে পড়েন। তার ৩০,০০০ পদাতিক ও ৫,০০০ অশ্বারোহী সৈন্য ছিল। ছোট হলেও আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী ছিল খুবই দক্ষ। ওই বছর, উত্তমপশ্চিম এশিয়া মাইনরের গ্রেনিকস নদীর তীরে (এখন যেটা তুরস্ক) আলেকজান্ডার প্রথম পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। এরপর তিনি আর পেছন ফিরে তাকাননি, তিনি একের পর এক রাজ্য জয় করেছিলেন। সা.কা.পূ. ৩২৬ সালের মধ্যে তিনি পারসীকদের পরাস্ত করে সিন্ধু নদীর পূর্ব দিক পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিলেন, আজকে যেটা পাকিস্তান। কিন্তু বাবিলনে তার শেষ যুদ্ধে তিনি হেরে গিয়েছিলেন। আর সা.কা.পূ. ৩২৩ সালের ১৩ই জুন সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু মৃত্যু তাকে চিরকালের মতো হারিয়ে দিয়েছিল। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৫) তিনি মাত্র ৩২ বছর ৮ মাস বেঁচেছিলেন। তাই দানিয়েল যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, একের পর এক রাজ্য জয় করে আলেকজান্ডার গ্রিসকে এক বিশ্বশক্তি করে তুলেছিলেন।

২১. রোম সাম্রাজ্য ছাড়াও স্বপ্নে দেখা প্রতিমার লৌহময় জঙ্ঘা আর কোন্‌ বিশ্বশক্তিকে বুঝিয়েছিল?

২১ নবূখদ্‌নিৎসর স্বপ্নে যে বড় প্রতিমা দেখেছিলেন সেটার লৌহময় জঙ্ঘার মানে কী? এটা ছিল রোম সাম্রাজ্য যা লোহার মতো মজবুত ছিল। এটা গ্রিস সাম্রাজ্যকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল। ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি এই সাম্রাজ্য কোনরকম সম্মান দেখায়নি আর রোমীয়রা সা.কা. ৩৩ সালে ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে যাতনাদণ্ডে হত্যা করেছিল। এটা সত্য খ্রীষ্ট ধর্মকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার জন্য যীশুর শিষ্যদেরকে তাড়না করেছিল। কিন্তু, নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্নের প্রতিমার লৌহময় জঙ্ঘা কেবল রোমকেই বোঝায়নি কিন্তু তার থেকে বেরিয়ে আসা আ্যংলো-আমেরিকান যৌথ বিশ্বশক্তিকেও বুঝিয়েছিল।

২২. নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্নের বড় প্রতিমা কীভাবে দেখায় যে আমরা শেষকালের একেবারে শেষে বাস করছি?

২২ দানিয়েলের এই ভবিষ্যদ্বাণী ভাল করে আলোচনা করলে দেখা যায় যে আমরা শেষকালের একেবারে শেষে এসে পোঁছেছি, যা প্রতিমার লৌহ ও কাদায় মিশ্রিত পা দিয়ে বোঝানো হয়েছে। আজকে আমরা দেখি যে পৃথিবীর কিছু একনায়কতন্ত্র সরকার লোহার মতো শক্ত আর কিছু গণতান্ত্রিক সরকার কাদার মতো নরম। দানিয়েল কাদাকে “মনুষ্যের” সঙ্গে তুলনা করেছেন। আজকে একনায়কতন্ত্র সরকারগুলো, কাদার মতো নরম গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়। (দানিয়েল ২:৪৩; ইয়োব ১০:৯) কিন্তু ঠিক যেমন লোহা আর কাদা একসঙ্গে মিশতে পারে না তেমনই এই সরকারগুলোর মধ্যে কোন একতা নেই। তাই খুব শীঘ্রিই ঈশ্বরের রাজ্য জগতের এই সমস্ত রাজ্যগুলোকে ধ্বংস করে শাসন শুরু করবে।—দানিয়েল ২:৪৪.

২৩. বাবিলনের রাজা বেল্‌শৎসরের রাজত্বের প্রথম বছরে দানিয়েল যে স্বপ্ন ও দর্শন দেখেছিলেন সেটা আপনি কীভাবে বলবেন?

২৩ দানিয়েল ৭ অধ্যায়ে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীও দেখায় যে আমরা শেষকালের একেবারে শেষ মুহূর্তে বাস করছি। দানিয়েলের বয়স যখন ৭০ এর কোঠায় ছিল তখন তিনি “শয্যার উপরে স্বপ্ন ও মনের দর্শন” দেখেছিলেন। এটা ছিল বাবিলনের রাজা বেল্‌শৎসরের রাজত্বের প্রথম বছর। এই স্বপ্ন দেখে দানিয়েল কী ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন! তিনি লিখেছিলেন: “দেখ, মহাসমুদ্রের উপরে আকাশের চারি বায়ু প্রচণ্ড বেগে বহিতেছে। আর সমুদ্র হইতে বৃহৎ চারিটা জন্তু বাহির হইল, তাহারা পরস্পর বিভিন্ন।” (দানিয়েল ৭:১-৮, ১৫) কতই না ভয়ঙ্কর জন্তু! প্রথমটা সিংহের মতো যার পাখা ছিল আর দ্বিতীয়টা ভল্লুকের মতো। এরপর চিতাবাঘের মতো এক জন্তু আসে যার চারটে পাখা ও চারটে মাথা ছিল! প্রচণ্ড শক্তিশালী চতুর্থ জন্তুর লৌহময় দন্ত ও দশটা শিং ছিল। এই দশ শিংয়ের মধ্যে একটা “ক্ষুদ্র” শিং ওঠে যার “মানুষের চক্ষুর মত চক্ষু” এবং “দর্পবাক্যবাদী মুখ” ছিল। কী অদ্ভুত ও ভয়ংকর জন্তু!

২৪. দানিয়েল ৭:৯-১৪ পদ যেমন বলে স্বর্গের দর্শনে দানিয়েল কী দেখেন আর এর থেকে কী বোঝা যায়?

২৪ এরপর দানিয়েল স্বর্গের দর্শন দেখেন। (দানিয়েল ৭:৯-১৪) তিনি দেখেন যে “অনেক দিনের বৃদ্ধ,” যিহোবা ঈশ্বর স্বর্গে বিচারক হিসেবে তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন। ‘সহস্রের সহস্র তাঁহার পরিচর্য্যা করে এবং অযুতের অযুত তাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান।’ এরপর ঈশ্বর জন্তুগুলোর বিচার করে তাদের কাছ থেকে শাসন কেড়ে নেন এবং চতুর্থ জন্তুটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার আদেশ দেন। তারপর তিনি ‘লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীদের’ ওপর চিরকালের জন্য শাসন করার ভার “মনুষ্যপুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষের” ওপর দেন। মনুষ্যপুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষ হলেন যীশু খ্রীষ্ট, যাঁকে ১৯১৪ সালে এই শাসনভার দেওয়া হয়েছে। এখন পৃথিবীর ওপর তিনি রাজা আর এর থেকে বোঝা যায় যে আমরা শেষকালের একেবারে শেষ মুহূর্তে বাস করছি।

২৫, ২৬. বাইবেলের দানিয়েলের বই পড়ে আমাদের মনে কোন্‌ প্রশ্নগুলো ওঠে আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা কোথায় পেতে পারি?

২৫ আমরা যখন বাইবেলের দানিয়েল বই পড়ি তখন আমাদের মনে নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্ন ওঠে। যেমন ৭ অধ্যায়ে যে চারটে জন্তুর কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মানে কী? দানিয়েল ৯:২৪-২৭ পদে বলা ‘সত্তর সপ্তাহের’ ভবিষ্যদ্বাণীকে আমরা কীভাবে বুঝতে পারি? ১১ অধ্যায়ে “উত্তর দেশের রাজা” এবং ‘দক্ষিণ দেশের রাজার’ মধ্যে যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে এই শেষকালের কী সম্পর্ক আছে?

২৬ এই বিষয়গুলো বুঝবার ক্ষমতা যিহোবা পৃথিবীতে তাঁর অভিষিক্ত দাসেদের অর্থাৎ ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসদের’ দিয়েছেন। (মথি ২৪:৪৫) এদেরকে দানিয়েল ৭:১৮ পদে “পরাৎপরের পবিত্রগণ” বলা হয়েছে। যিহোবার এই দাসরা দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বোঝানোর জন্য কিছুদিন হল একটা নতুন বই প্রকাশ করেছেন, যেটার নাম হল দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি)। ৩২০ পৃষ্ঠার এই বইটা সুন্দর সুন্দর ছবিতে ভরা আর এতে দানিয়েলের বইয়ের সমস্ত ইতিহাস ও ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বলা আছে। ঈশ্বরের দাস দানিয়েল, যা কিছুই লিখেছেন তা পড়ে আমাদের বিশ্বাস আরও মজবুত হয়।

আমাদের দিনের জন্য বিশেষ অর্থ

২৭, ২৮. (ক) দানিয়েল যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো লিখেছিলেন সে সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে? (খ) আমরা কোন্‌ বিশেষ সময়ে বাস করছি আর তাই আমাদের কী করার জন্য ঠিক করা উচিত?

২৭ খেয়াল করে দেখুন যে দানিয়েল যত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তার এক আধটা ছাড়া প্রায় সবগুলোই পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। যেমন দানিয়েল ২ অধ্যায়ে স্বপ্নে দেখা প্রতিমার চরণ দিয়ে যে সময়কে বোঝানো হয়েছে আজকে পৃথিবীতে সেই সময় চলছে। দানিয়েল ৪ অধ্যায়ে যেমন বলা হয়েছে যে সেই গাছের শৃঙ্খল খুলে ফেলা হবে আর ১৯১৪ সালে এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছে যখন যীশু রাজা হয়েছেন। হ্যাঁ, সেই বছরই অনেক দিনের বৃদ্ধ, মনুষ্যপুত্রের ন্যায় এক পুরুষকে শাসনভার দিয়েছেন যেমন দানিয়েল ৭ অধ্যায়ে ভাববাণী করা হয়েছিল।—দানিয়েল ৭:১৩, ১৪; মথি ১৬:২৭–১৭:৯.

২৮ এছাড়াও দানিয়েল ৮ অধ্যায়ের ২,৩০০ দিন আর ১২ অধ্যায়ের ১,২৯০ ও ১,৩৩৫ দিনের ভবিষ্যদ্বাণী অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। দানিয়েল ১১ অধ্যায় ভাল করে পড়লে বোঝা যায় যে “উত্তর দেশের রাজা” ও ‘দক্ষিণ দেশের রাজার’ মধ্যে যুদ্ধ প্রায় শেষ হতে চলেছে। এই সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পূর্ণ হওয়া প্রমাণ করে যে আমরা এখন এক বিশেষ সময়ে অর্থাৎ ‘শেষকালের’ একেবারে শেষ মুহূর্তে আছি। এখন যে বিশেষ সময়ে আমরা বাস করছি তা মনে রেখে আমরা কী করব বলে আমাদের ঠিক করা উচিত? আমাদের অবশ্যই যিহোবা ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে পুরোপুরি মন দেওয়া উচিত।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বর পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে কী জানাতে চান?

• দানিয়েলের বই আজকে আমাদের বিশ্বাসকে কীভাবে মজবুত করতে পারে?

• নবূখদ্‌নিৎসর কোন স্বপ্ন দেখেছিলেন আর তার অর্থ কী ছিল?

• দানিয়েলের বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণ হওয়া আমাদেরকে কোন্‌ বিশেষ কথা জানায়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]