সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের বাটীতে হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ

ঈশ্বরের বাটীতে হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ

ঈশ্বরের বাটীতে হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ

ইস্রায়েল দেশে একটা গাছ আছে যে গাছকে সত্যিই নষ্ট করা যায় না। এটাকে কেটে ফেললেও খুব তাড়াতাড়িই এর গুঁড়ি থেকে নতুন অঙ্কুর গজিয়ে ওঠে। আর ফল কাটার মরশুমে এই গাছ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার থেকে এর মালিক খুবই লাভবান হয়। আর এই তেল দিয়ে রান্না করা, বাতি জ্বালানো, গায়ে মাখা আর সাজগোজের জিনিস বানানো কিই না করা যায়।

বাইবেলের বিচারকর্তৃগণের বইয়ে লেখা একটা গল্প বলে যে “একদা বৃক্ষগণ আপনাদের উপরে অভিষেক করণার্থে রাজার অন্বেষণে গমন করিল।” বনের গাছেরা এক নজরেই কাকে তাদের রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছিল? কোন সন্দেহ নেই যে তারা শক্তসমর্থ, ফলবতী জিতবৃক্ষকে বেছে নিয়েছিল।—বিচারকর্ত্তৃগণ ৯:৮.

প্রায় ৩,৫০০ বছরেরও বেশি আগে মোশি ইস্রায়েল দেশকে ‘উত্তম ও জিতবৃক্ষের দেশ’ বলেছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৭, ৮) এমনকি এখনও পর্যন্ত উত্তরে হর্মোন পর্বতের পাদদেশ থেকে শুরু করে দক্ষিণে বেরশেবার সীমা পর্যন্ত জিতবৃক্ষের বন ছড়িয়ে আছে। আর শারোন উপকূল, শমরিয়ার পাহাড়ি এলাকা ও গালিলের উর্বর উপত্যকাকে সেগুলো আজও শোভিত করে।

বাইবেলের লেখকেরা জিতবৃক্ষকে প্রায়ই রূপকভাবে ব্যবহার করেছেন। এই গাছ দিয়ে ঈশ্বরের দয়া, পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞা ও সুখী পরিবার জীবনকেও বোঝানো হয়। আমরা যদি জিতবৃক্ষের বিষয়ে আরও বেশি করে জানি, তাহলে বাইবেলে জিতবৃক্ষকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে আমরা তা আরও ভাল করে বুঝতে পারব আর বুঝতে পারব যে এই অদ্ভুত গাছ কীভাবে অন্যান্য সৃষ্টির সঙ্গে সুর মিলিয়ে যিহোবার প্রশংসা করে।—গীতসংহিতা ১৪৮:৭, ৯.

শক্তসমর্থ জিতবৃক্ষ

প্রথম নজরেই জিতবৃক্ষকে দেখে আপনার যে খুব সুন্দর লাগবে তা নয়। লেবাননের বিশাল দেবদারু বৃক্ষের মতো এই গাছ আকাশ ছোঁয়া নয়। এর কাঠ পাইন গাছের কাঠের মতো দামি নয় আর এর ফুল বাদাম ফুলের মতো আপনার চোখও জুড়ায় না। (পরমগীত ১:১৭; আমোষ ২:৯) জিতবৃক্ষের সবচেয়ে জরুরি অংশকে চোখে দেখা যায় না কারণ তা মাটির নিচে থাকে। মাটির নিচে এর শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। কখনও কখনও তা ৬ মিটার পর্যন্ত গভীরে যায় ও তার চেয়েও বেশি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আর এটাই এই হরিৎপর্ণ গাছকে বাঁচিয়ে রাখে ও ফলবতী করে।

পাথুরে জায়গায় জন্মানো এই গাছগুলোর শিকড় খুব শুকনোর সময়েও গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে, যখন কিনা নিচের উপত্যকার অন্য গাছগুলো জলের অভাবে মরে যায়। এই শিকড়ের জন্যই গাছগুলো বছরের পর বছর ধরে ফল দিতে পারে যদিও এর কাণ্ড দেখলে মনে হয় যে তা যেন জ্বালানি ছাড়া আর কোন কাজেই আসবে না। এই শক্তসমর্থ গাছগুলোর বেড়ে ওঠার জন্য বেশ অনেকখানি জায়গা ও বায়ুপূর্ণ মাটির দরকার যাতে গাছগুলো তাদের শ্বসন কাজ চালাতে পারে। আর এর আশেপাশে অন্য ছোট ছোট জংলি গাছপালা হতে দেওয়াও ঠিক নয় যাতে পোকামাকড় এই গাছগুলোর ক্ষতি করতে না পারে। গাছগুলোকে যদি ঠিক ঠিক পরিবেশে বাড়িয়ে তোলা যায়, তাহলে বছরে একটা গাছ থেকেই প্রায় ৫৭ লিটার পর্যন্ত তেল পাওয়া যেতে পারে।

কোন সন্দেহ নেই যে ইস্রায়েলীয়দের কাছে জিতবৃক্ষ খুবই দামি এক গাছ ছিল কারণ এর থেকে তারা প্রচুর দামি তেল পেত। জিতবৃক্ষের তেলে বাতি জ্বালিয়ে তারা তাদের ঘরকে আলোকিত করত। (লেবীয় পুস্তক ২৪:২) রান্নার কাজেও জিতবৃক্ষের তেলের কোন জুড়ি ছিল না। এটা গায়ে মাখা তাদেরকে রোদের হাত থেকে বাঁচাত। আর এর থেকে তৈরি সাবান তাদের ধোয়ামোছার কাজেও লাগত। দানাশস্য, দ্রাক্ষালতা ও জিতবৃক্ষ ছিল ইস্রায়েল দেশের প্রধান ফসল। তাই কোন এক বছর জিতবৃক্ষ ফল না দিলে ইস্রায়েলীয় পরিবারের জন্য সেই বছরটা খুবই খারাপ কাটত।—দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১৩; হবক্‌কূক ৩:১৭.

সাধারণত জিতবৃক্ষ থেকে অনেক তেল পাওয়া যেত। মোশি প্রতিজ্ঞাত দেশকে ‘জিতবৃক্ষের দেশ’ বলেছিলেন কারণ সেই এলাকায় প্রচুর জিতবৃক্ষ হতো। উনিশ শতকের প্রকৃতিবিজ্ঞানী, এইচ. বি. ট্রিসট্রাম জিতবৃক্ষকে এই “দেশের বিশেষ গাছ” বলেছিলেন। এই তেল এত দামি আর এত বেশি হতো যে পুরো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এটা দিয়ে বাণিজ্য করা হতো। যীশু খ্রীষ্ট একজন ঋণীর কথা বলেছিলেন যে “এক শত মণ তৈল” ধার করেছিল।—লূক ১৬:৫, ৬.

“জিতবৃক্ষের চারার ন্যায়”

জিতবৃক্ষ ঈশ্বরের আশীর্বাদকও বোঝায়। কীভাবে একজন ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরকে ভয় করেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে পারেন? গীতরচক বলেছিলেন, “তোমার গৃহের অন্তঃপুরে তোমার স্ত্রী ফলবতী দ্রাক্ষালতার ন্যায় হইবে, তোমার মেজের চারিদিকে তোমার সন্তানগণ জিত বৃক্ষের চারার ন্যায় হইবে।” (গীতসংহিতা ১২৮:৩) ‘জিত বৃক্ষের এই চারা’ কী আর গীতরচক কেন সেগুলোকে সন্তানের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

জিতবৃক্ষের গুঁড়ি থেকে যেভাবে অনেক অনেক নতুন চারা অঙ্কুরিত হয় তা অন্য গাছের বেলায় সচরাচর দেখা যায় না। * অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ায় যখন গাছের মূল শাখা আর বেশি ফল দিতে পারে না, তখন চাষীরা নতুন চারাগাছগুলোকে বাড়তে দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সেগুলো মূল কাণ্ডের সঙ্গে জুড়ে যায়। কিছু সময় পরে তিন বা চারটে নতুন সজীব শাখা গাছের মূল শাখাকে ঘিরে বেড়ে ওঠে, যা ঠিক যেন মেজের চারিদিকে সন্তানদের মতো। এই চারাগাছগুলো একই শিকড় থেকে তাদের খাবার জোগাড় করে আর সেগুলো অনেক ফল দেয়।

জিতবৃক্ষের এই বিশেষত্ব থেকে দেখা যায় যে সন্তানেরা কীভাবে সত্যে বেড়ে ওঠে, তাদের সত্যের শিকড়কে তাদের বাবামা কীভাবে বাড়িয়ে তোলেন। সন্তানেরা যখন বড় হয়ে ওঠে তখন তাদের ফল দেওয়া দরকার ও তাদের বাবামাকে সাহায্য করা দরকার। বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের তাদের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করতে দেখে খুশি হন।—হিতোপদেশ ১৫:২০.

“বৃক্ষের আশা আছে”

একজন বয়স্ক বাবা যিনি যিহোবাকে ভালবাসেন, যখন দেখেন যে তার ছেলেমেয়েরা ঈশ্বরের সেবা করছেন তখন তিনি খুশি হন। ছেলেমেয়েরা দুঃখ করে যখন তাদের বাবা ‘মর্ত্ত্যলোকের সেই পথে গমন করেন।’ (১ রাজাবলি ২:২) বাইবেল আমাদেরকে জানায় যে মৃত লোকেরা আবার বেঁচে উঠবেন। আর বাইবেলে দেওয়া এই আশা প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলোকে তাদের দুঃখ কাটিয়ে ওঠার শক্তি জোগায়।—যোহন ৫:২৮, ২৯; ১১:২৫.

ইয়োবের অনেক ছেলেমেয়ে ছিল আর তিনি জানতেন যে মানুষের জীবন খুবই ছোট। তিনি জীবনকে একটা ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন যা খুব তাড়াতাড়িই শুকিয়ে যায়। (ইয়োব ১:২; ১৪:১, ২) পরীক্ষার সময় ইয়োব কষ্টের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মারা যেতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি কবরকে লুকিয়ে থাকার এক জায়গা বলে মনে করতেন, যেখান থেকে তিনি আবার ফিরে আসতে পারবেন। ইয়োব জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে?” আর তিনিই এর উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি আপন সৈন্যবৃত্তির সমস্ত দিন প্রতীক্ষা করিব, যে পর্য্যন্ত আমার দশান্তর না হয়। পরে তুমি [যিহোবা] আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব। তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করিবে।”—ইয়োব ১৪:১৩-১৫.

ঈশ্বর যে তাকে কবর থেকে বের করে আনবেনই তা তিনি কীসের তুলনা দিয়ে বুঝিয়েছিলেন? তিনি একটা গাছের তুলনা দিয়েছিলেন। আর যেভাবে তিনি এর বর্ণনা করেছিলেন তার থেকে মনে হয় যে তিনি জিতবৃক্ষের কথাই বলছিলেন। ইয়োব বলেছিলেন, “বৃক্ষের আশা আছে, ছিন্ন হইলে তাহা পুনর্ব্বার পল্লবিত হইবে।” (ইয়োব ১৪:৭) জিতবৃক্ষকে কেটে ফেললেও তা মরে যায় না। শুধু শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা হলেই এই গাছ মরে। মাটির নিচে শিকড় যদি থেকে যায় তাহলে তার থেকে আবার নতুন অঙ্কুর বের হয়।

এমনকি অনেকদিন ধরে চলতে থাকা খরা একটা পুরনো জিতবৃক্ষকে শুকিয়ে দিলেও সেই শুকনো গুঁড়িই আবার বেঁচে উঠতে পারে। “যদ্যপি মৃত্তিকায় তাহার মূল পুরাতন হয়, ভূমিতে তাহার গুঁড়ি মরিয়া যায়, তথাচ জলের গন্ধ পাইলে তাহা পল্লবিত হয়, নবরোপিত বৃক্ষের ন্যায় শাখাবিশিষ্ট হয়।” (ইয়োব ১৪:৮, ৯) ইয়োব এক শুষ্ক, গরম অঞ্চলে বাস করতেন যেখানে তিনি হয়তো জিতবৃক্ষের এমন অনেক গুঁড়ি দেখতে পেতেন যেগুলো দেখে মনে হতো যে সেগুলো যেন শুকিয়ে মরে গিয়েছে। কিন্তু যখন বৃষ্টি আসত এই “মৃত” গাছগুলো যেন জীবন ফিরে পেত আর এর গুঁড়ি থেকে নতুন কাণ্ড বের হতো, যা দেখে মনে হতো যেন এগুলো ‘নবরোপিত বৃক্ষ।’ নতুন করে বেঁচে ওঠার এই অদ্ভুত প্রক্রিয়া দেখে একজন উদ্যানপালক বলেছিলেন: “জিতবৃক্ষ অমর।”

ঠিক যেমন একজন কৃষক জিতবৃক্ষকে আবার অঙ্কুরিত হতে দেখার জন্য অধীর অপেক্ষা করেন তেমনই যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের আবার জীবন দিতে চান। অব্রাহাম ও সারা, ইস্‌হাক ও রিবিকা এবং অন্য আরও অনেক অনেক বিশ্বস্ত সেবকদের আবার বাঁচিয়ে তোলার জন্য তিনি অপেক্ষা করে আছেন। (মথি ২২:৩১, ৩২) এই ব্যক্তিদের স্বাগত জানানো কতই না আনন্দের হবে। আর তারা আবারও একবার এই পৃথিবীতে যিহোবার সেবায় জীবন কাটাবেন!

রূপক জিতবৃক্ষ

ঈশ্বর দয়ালু আর তিনি পক্ষপাত করেন না। তাই তিনি মৃত লোকেদের আবার বাঁচিয়ে তুলবেন বলে ঠিক করেছেন। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে কীভাবে জিতবৃক্ষ দিয়ে ঈশ্বরের দয়াকে বোঝানো হয়েছে, যা তিনি জাতি, ভাষার কোনরকম ভেদাভেদ না করেই সমস্ত মানুষদের দেখান। শত শত বছর ধরে যিহুদি লোকেরা ছিল ‘অব্রাহামের বংশ,’ ঈশ্বরের নিজস্ব জাতি আর এই নিয়ে তারা অনেক গর্বও করত।—যোহন ৮:৩৩; লূক ৩:৮.

কিন্তু যিহুদি জাতির লোক হলেই যে তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাবে এমন নয়। যীশুর প্রথম শিষ্যরা সবাই যিহুদি ছিলেন আর তারাই ছিলেন প্রথম দল যাদের দিয়ে যিহোবা অব্রাহামের বংশ গড়ে তুলেছিলেন, যারা ছিলেন প্রতিজ্ঞানুসারে দায়াধিকারী। (আদিপুস্তক ২২:১৮; গালাতীয় ৩:২৯) প্রেরিত পৌল এই যিহুদি শিষ্যদের রূপক জিতবৃক্ষের শাখার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

কিন্তু যিহুদি জাতির বেশির ভাগ লোকেরাই যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলে মেনে নেয়নি। আর তাই তারা পরে ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ বা “ঈশ্বরের ‘ইস্রায়েলের’” সদস্য হতে পারেনি। (লূক ১২:৩২; গালাতীয় ৬:১৬) তারা রূপক জিতবৃক্ষের সেই বন্য শাখা হয়ে উঠেছিল, যেগুলোকে কেটে ফেলা হতো। কিন্তু তাদের জায়গা কারা নিয়েছিল? সা.কা. ৩৬ সালে অব্রাহামের বংশ হওয়ার জন্য পরজাতীয়দের বেছে নেওয়া হয়েছিল। এটা এমন ছিল যেন যিহোবা জিতবৃক্ষের যে শাখাগুলো ফল দেয় না সেই বন্য শাখাগুলোকে কেটে ফেলে ভাল শাখাগুলোকে নিয়ে কলম করেছিলেন। তাই, যাদের নিয়ে অব্রাহামের বংশ গড়ে তোলা হবে তাদের মধ্যে পরজাতীয় লোকেদেরও নেওয়া হয়েছিল। পরজাতীয় খ্রীষ্টানেরা তাই “জিতবৃক্ষের রসের মূলের অংশী” হতে পেরেছিল।—রোমীয় ১১:১৭.

একজন চাষী কিন্তু বন্য জিতবৃক্ষের শাখা কেটে ফেলে তার জায়গায় ভাল জিতবৃক্ষের শাখা নিয়ে কলম করার কথা ভাবতে পারেন না কারণ তা ‘স্বভাবের বিপরীত।’ (রোমীয় ১১:২৪) দ্য ল্যান্ড আ্যন্ড দ্য বুক নামের বই বলে ‘বন্য জিতবৃক্ষে ভাল জিতবৃক্ষের কলম করলে তা ভাল ফল দেবে বলে আরববাসীরা বলেন; কিন্তু আপনি এর উল্টোটা করতে পারবেন না।’ তাই যিহুদি লোকেরা অবাক হয়ে গিয়েছিল যখন যিহোবা ঈশ্বর “আপন নামের জন্য পরজাতিগণের মধ্য হইতে এক দল প্রজা গ্রহণার্থে . . . প্রথমে তাহাদের তত্ত্ব লইয়াছিলেন।” (প্রেরিত ১০:৪৪-৪৮; ১৫:১৪) এটা দেখিয়েছিল যে ঈশ্বর শুধু একটা জাতিকে নিয়েই তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করেন না। বরং “প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত ১০:৩৫.

পৌল বলেছিলেন যে জিতবৃক্ষের বন্য “শাখা” অবিশ্বাসী যিহুদিদের যেমন কেটে ফেলা হয়েছে, তেমনই পরে গড়ে তোলা নতুন শাখার মধ্যে থেকেও যদি কেউ গর্বিত ও অবাধ্য হয়, তাহলে তাদেরও কেটে ফেলা হবে। (রোমীয় ১১:১৯, ২০) আর এর থেকে বোঝা যায় যে ঈশ্বরের অপার দয়াকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।—২ করিন্থীয় ৬:১.

তেল দিয়ে কোমল করা

বাইবেল জিতবৃক্ষের তেলের ব্যবহারকে আক্ষরিক ও রূপক দুভাবেই বলে। আগেকার দিনে কেটে গেলে বা হাড় ভেঙে গেলে তা তাড়াতাড়ি সারানোর জন্য সেখানে জিতবৃক্ষের তেল লাগিয়ে ‘তৈল দ্বারা কোমল’ করা হতো। (যিশাইয় ১:৬) যীশু দয়ালু শমরীয়ের দৃষ্টান্তে বলেছিলেন, যিরীহোর পথে যে ব্যক্তিকে এই শমরীয় দেখতে পেয়েছিলেন তার ক্ষতে তিনি জিতবৃক্ষের তেল ও দ্রাক্ষারস ঢেলে দিয়েছিলেন।—লূক ১০:৩৪.

জিতবৃক্ষের তেল মাথায় মাখলে তা সতেজতা নিয়ে আসে। (গীতসংহিতা ১৪১:৫) আর মণ্ডলীর আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঠিক করার জন্য প্রাচীনেরা ‘প্রভুর নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করেন।’ (যাকোব ৫:১৪) তাদের এই অসুস্থ ভাইবোনদের জন্য প্রাচীনদের বাইবেল থেকে দেওয়া পরামর্শ ও অন্তর থেকে করা প্রার্থনাকে জিতবৃক্ষের তেলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এছাড়াও একজন ভাল ব্যক্তিকে বোঝানোর জন্য ইব্রীয় ভাষায় “খাঁটি জিতবৃক্ষের তেল” এই কথাগুলো বলা হয়।

‘ঈশ্বরের বাটীতে হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ’

আমরা আগে যেমন আলোচনা করেছি তার ভিত্তিতে যদি ঈশ্বরের সেবকদের জিতবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে তাতে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। দায়ূদ নিজেকে “ঈশ্বরের বাটীতে হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষসদৃশ” বলেছিলেন। (গীতসংহিতা ৫২:৮) ইস্রায়েলের লোকেরা যেমন তাদের ঘরের চারিদিকে জিতবৃক্ষ লাগাত, তেমনই এই কথাগুলো বলে দায়ূদ বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তিনি যিহোবার খুব কাছাকাছি থাকতে চান ও ঈশ্বরের প্রশংসা করতে চান।—গীতসংহিতা ৫২:৯.

যিহূদার দুই গোষ্ঠী যখন বিশ্বস্ত ছিল তখন তারা ‘ফলশোভায় মনোহর হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষের’ মতো ছিল। (যিরমিয় ১১:১৫, ১৬) কিন্তু যিহূদার লোকেরা হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ হয়ে থাকার সুযোগ হারিয়েছিল কারণ তারা যিহোবার ‘কথা শুনিতে অস্বীকৃত হইয়াছিল; আর তাহারা সেবা করণার্থে অন্য দেবগণের পশ্চাতে গিয়াছিল।’—যিরমিয় ১১:১০.

ঈশ্বরের বাটীতে হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ হতে হলে আমাদের ঈশ্বররে কথা শুনতে হবে আর তিনি আমাদের যেভাবে শাসন করেন তা মেনে নিতে হবে। কারণ কখনও কখনও তিনি আমাদের ‘ঝুড়িবেন’ যাতে করে আমরা আরও বেশি ফল দিতে পারি। (ইব্রীয় ১২:৫, ৬) আর ঠিক যেমন একটা জিতবৃক্ষকে বেঁচে থাকতে হলে, বিশেষ করে খুব শুকনোর সময়েও বেঁচে থাকতে হলে অনেক গভীর ও অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শিকড়ের দরকার হয় তেমনই আমাদেরও সত্যে শিকড়কে গভীর করা উচিত আর তাহলেই আমরা পরীক্ষা ও তাড়না সহ্য করতে পারব।—মথি ১৩:২১; কলসীয় ২:৬, ৭.

জিতবৃক্ষ বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদের বোঝায়, যাদের হয়তো জগতের লোকেরা চেনে না কিন্তু যিহোবা তাদের ভালবাসেন। এই ব্যক্তিদের কেউ যদি আজকে মারা যান, তাহলে তিনি নতুন জগতে আবার বেঁচে উঠবেন।—২ করিন্থীয় ৬:৯; ২ পিতর ৩:১৩.

জিতবৃক্ষকে কখনোই নষ্ট করে ফেলা যায় না ও এটা বছরের পর বছর ফল দিতে থাকে আর জিতবৃক্ষের এই বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে যিহোবার প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেয়: “আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে, এবং আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে।” (যিশাইয় ৬৫:২২) আর নতুন জগতে যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে।—২ পিতর ৩:১৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ প্রত্যেক বছর এই নতুন চারাগাছগুলোকে ঝুড়ে দেওয়া হয় যাতে সেগুলো মূল শাখা থেকে রস শুষে নিয়ে সেটাকে কমজোরি করে না দেয়।

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্পেনের আ্যলিক্যান্টে অঞ্চলের জেভিয়াতে এই বিশাল পুরনো কাণ্ডটা দেখা গেছে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

স্পেনের গ্রানাডা অঞ্চলে জিতবৃক্ষের বন

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিরূশালেমের প্রাচীরের বাইরে এক পুরনো জিতবৃক্ষ

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাইবেল জিতবৃক্ষের শাখায় কলম করার কথা বলে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

এই পুরনো জিতবৃক্ষের চারিদিকে নতুন নতুন চারাগাছ জন্মেছে