সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রাখুন!

ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রাখুন!

ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রাখুন!

“ভাববাণীর বাক্য দৃঢ়তর হইয়া আমাদের নিকটে রহিয়াছে।”২ পিতর ১:১৯.

১, ২. পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী কী ছিল আর এতে কোন্‌ প্রশ্ন ওঠে?

 যখন আদম ও হবা পাপ করেছিল সেই সময় যিহোবা ঈশ্বর প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করেন। সেইসময়ে তিনি সাপকে বলেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১-৭, ১৪, ১৫) এই ভবিষ্যদ্বাণীই ছিল আমাদের, পাপী মানুষদের জন্য একমাত্র আশা।

কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণী বুঝতে বেশ অনেক শতাব্দী কেটে গিয়েছিল। অনেক বছর পরে এসে বাইবেল বলেছিল যে শয়তানই হচ্ছে সেই “পুরাতন সর্প।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) তাহলে ঈশ্বর যে বংশের কথা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সে কে?

বংশ কে?

৩. হেবল কীভাবে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন?

হেবল তার বাবার মতো ছিলেন না। তিনি প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন আর এই বিশ্বাসের জন্যই তিনি পশু বলি দিয়েছিলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে মানুষের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রক্ত পাতিত করার দরকার আছে। ঈশ্বর তাতে খুশি হয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ৪:২-৪) কিন্তু তখনও পর্যন্ত বংশ কে তা জানা যায়নি।

৪. যিহোবা অব্রাহামের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর এই প্রতিজ্ঞা থেকে বংশ সম্বন্ধে কী জানা যায়?

হেবলের সময় থেকে প্রায় ২০০০ বছর পর যিহোবা অব্রাহামের কাছে এক প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যা একটা ভবিষ্যদ্বাণী ছিল: “আমি অবশ্য তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং আকাশের তারাগণের ন্যায় তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; . . . আর তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২২:১৭, ১৮) এই ভবিষ্যদ্বাণী বলে যিহোবা অব্রাহামকে কিছুটা ধারণা দিয়েছিলেন যে এই বংশ তার কুল থেকেই আসবে, যে শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবে। (১ যোহন ৩:৮) অব্রাহাম ও যিহোবার প্রাচীন কালের অন্য বিশ্বস্ত সেবকেরা “ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি লক্ষ্য করিয়া অবিশ্বাস বশতঃ সন্দেহ করিলেন না” এমনকি যদিও “ইহাঁরা প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হন নাই।” (রোমীয় ৪:২০, ২১; ইব্রীয় ১১:৩৯) হ্যাঁ, তারা ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রেখেছিলেন।

৫. ঈশ্বর যে বংশের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা কে আর কীভাবে তা বলা যেতে পারে?

ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে বংশের বিষয়ে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সে বিষয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “অব্রাহামের প্রতি ও তাঁহার বংশের প্রতি প্রতিজ্ঞা সকল উক্ত হইয়াছিল। তিনি বহুবচনে ‘আর বংশ সকলের প্রতি’ না বলিয়া, একবচনে বলেন, ‘আর তোমার বংশের প্রতি’; সেই বংশ খ্রীষ্ট।” (গালাতীয় ৩:১৬) অব্রাহামের একই কুল থেকে পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে আর এই বংশ অব্রাহামের আরেক পুত্র ইসমাইল বা অন্য স্ত্রী কটুরার পুত্রের মধ্যে দিয়ে আসবে না কিন্তু এই বংশ তার পুত্র ইস্‌হাক ও পৌত্র যাকোবের মধ্যে দিয়ে আসবে। (আদিপুস্তক ২১:১২; ২৫:২৩, ৩১-৩৪; ২৭:১৮-২৯, ৩৭; ২৮:১৪) পরে যাকোব বলেন যে তার পুত্র যিহূদার গোত্র থেকে সেই বংশ বা শীলো আসবেন, যিনি সমস্ত ‘জাতির’ ওপর শাসন করবেন। আর শেষে গিয়ে যিহোবা বলেন যে এই বংশ দায়ূদের কুল থেকে আসবে। (আদিপুস্তক ৪৯:১০; ২ শমূয়েল ৭:১২-১৬) তাই প্রথম শতাব্দীতে যিহুদি জাতি দায়ূদের কুল থেকে সেই বংশ অর্থাৎ মশীহ বা খ্রীষ্টের আসার অপেক্ষা করেছিল। (যোহন ৭:৪১, ৪২) আর ঈশ্বর সেই শতাব্দীতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে সেই বংশ হলেন তাঁর নিজের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট।

মশীহ আসেন!

৬. (ক) সত্তর সপ্তার ভবিষ্যদ্বাণী আমরা কীভাবে বোঝাব? (খ) যীশু কখন ও কীভাবে “পাপ শেষ” করেন?

দানিয়েলের কাছেও এই মশীহের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। মাদীয় রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের প্রথম বছরে যিরূশালেমের ৭০ বছরের উৎসন্ন-দশা শেষ হওয়ার সময় এসে গিয়েছিল। (যিরমিয় ২৯:১০; দানিয়েল ৯:১-৪) দানিয়েল প্রার্থনা করছিলেন এমন সময় ঈশ্বরের দূত গাব্রিয়েল এসে তার কাছে মশীহের আসার কথা ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি বলেছিলেন ‘পাপ শেষ করিবার জন্য সত্তর সপ্তাহ নিরূপিত হইয়াছে।’ এই সত্তর সপ্তা দিন নয় কিন্তু বছর, যা সা.কা.পূ. ৪৫৫ সালে শুরু হয়েছিল যখন পারস্য রাজ অর্তক্ষস্ত ১ম ‘যিরূশালেমকে আবার নির্ম্মাণ করার আজ্ঞা দেন।’ (দানিয়েল ৯:২০-২৭; নহিমিয় ২:১-৮) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ৬৯ সপ্তার পর মশীহের আসার কথা ছিল আর সত্তর সপ্তার মাঝখানে তাঁকে উচ্ছিন্ন হতে হতো। সা.কা.পূ. ৪৫৫ সাল থেকে এই ৬৯ সপ্তা অর্থাৎ ৪৮৩ বছর গুনলে আমরা দেখি যে তা এসে শেষ হয় সা.কা. ২৯ সালে। এই বছর যীশু বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন আর ঈশ্বর তাঁকে মশীহ বা খ্রীষ্ট হিসেবে অভিষিক্ত করেছিলেন। (লূক ৩:২১, ২২) এর সাড়ে তিন বছর পরে, সা.কা. ৩৩ সালে যীশু যখন মুক্তির মূল্য হিসেবে তাঁর জীবন বলি দেন সেই সময় তিনি উচ্ছিন্ন হন ও সেইসময় তিনি ‘পাপ শেষ করেন।’ (মার্ক ১০:৪৫) ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রাখার কত বড় কারণ! *

৭. বাইবেল থেকে বলুন যে মশীহের বিষয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যীশু খ্রীষ্টে তা কীভাবে পূর্ণ হয়েছে?

যদি আমরা ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রাখি, তাহলে যীশুই যে মশীহ সে ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ থাকে না। গ্রিক শাস্ত্রের লেখকরা বলেছেন যে ইব্রীয় শাস্ত্রে মশীহের বিষয়ে যত ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল তার সবগুলোই যীশু খ্রীষ্টে পূর্ণ হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে বৈৎলেহমের এক কুমারীর গর্ভে যীশু জন্মান। (যিশাইয় ৭:১৪; মীখা ৫:২; মথি ১:১৮-২৩; লূক ২:৪-১১) তাঁকে মিশর থেকে ডেকে আনা হয় আর তাঁর জন্মের পর শিশুদের হত্যা করা হয়। (যিরমিয় ৩১:১৫; হোশেয় ১১:১; মথি ২:১৩-১৮) যীশু আমাদের যাতনা সকল তুলে নিয়েছিলেন। (যিশাইয় ৫৩:৪; মথি ৮:১৬, ১৭) তিনি গাধার পিঠে চড়ে যিরূশালেমে এসেছিলেন। (সখরিয় ৯:৯; যোহন ১২:১২-১৫) যীশুকে যাতনাদণ্ডে দেওয়ার পর গীতরচকের কথা পূর্ণ হয়েছিল যে সৈন্যরা তাঁর বস্ত্র ভাগ করে নেবে ও তাঁর পরিচ্ছদের জন্য গুলিবাঁট করবে। (গীতসংহিতা ২২:১৮; যোহন ১৯:২৩, ২৪) তাঁর একটা হাড়ও ভাঙা হবে না আর তাঁকে বিদ্ধ করা হবে, এই ভবিষ্যদ্বাণীও পূর্ণ হয়েছে। (গীতসংহিতা ৩৪:২০; সখরিয় ১২:১০; যোহন ১৯:৩৩-৩৭) এখানে কেবল কয়েকটা ভবিষ্যদ্বাণীর কথাই বলা হয়েছে, যেগুলো ঈশ্বর বাইবেলের লেখকদের দিয়ে লিখিয়েছিলেন। *

মশীহ রাজাকে স্বাগত জানান!

৮. অনেক দিনের বৃদ্ধ কে আর দানিয়েল ৭:৯-১৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পূর্ণ হয়?

ঈশ্বর দানিয়েলকে একটা দর্শন দিয়েছিলেন যেটাতে যীশুকে রাজা হওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। এই দর্শন তিনি বাবিলনের রাজা বেল্‌শৎসরের রাজত্বের প্রথম বছরে দেখেছিলেন। এই দর্শনে তিনি চারটে ভয়াবহ জন্তুকে দেখেছিলেন যার মানে ঈশ্বরের দূত তাকে পরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে এই চারটে জন্তু “চারি রাজা” অর্থাৎ একের পর এক আসা বিশ্বশক্তিগুলোকে বোঝায়। (দানিয়েল ৭:১-৮, ১৭) পরে দানিয়েল স্বর্গের দর্শন দেখেছিলেন আর সেখানে তিনি “অনেক দিনের বৃদ্ধ” যিহোবাকে দেখেছিলেন, যিনি বিচার করার জন্য সিংহাসনে বসে আছেন। তিনি এই পশুদের থেকে শাসন করার অধিকার কেড়ে নেন ও চতুর্থ জন্তুটাকে ধ্বংস করে দেন। এরপর তিনি “লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীদের” ওপর চিরকালের জন্য শাসন করার ভার ‘মনুষ্যপুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষকে’ দেন। (দানিয়েল ৭:৯-১৪) এই ভবিষ্যদ্বাণী ১৯১৪ সালে পূর্ণ হয় যখন “মনুষ্যপুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষ,” যীশু খ্রীষ্ট সিংহাসনে বসেছেন!—মথি ১৬:১৩.

৯, ১০. (ক) স্বপ্নের প্রতিমার বিভিন্ন ভাগগুলো কাকে বোঝায়? (খ) দানিয়েল ২:৪৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণীকে আপনি কীভাবে বোঝেন?

দানিয়েল জানতেন যে যিহোবাই “রাজাদিগকে পদভ্রষ্ট করেন, ও রাজাদিগকে পদস্থ করেন।” (দানিয়েল ২:২১) আর তাই যিনি “নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন” সেই যিহোবা ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রেখে তিনি বাবিলনের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্নের বিরাট প্রতিমার অর্থ বলেন। প্রতিমার চার ভাগ চারটে বিশ্বশক্তির উত্থান ও পতনকে বোঝায়। আর এই বিশ্বশক্তিগুলো ছিল বাবিলন, মাদীয়-পারস্য, গ্রিস আর রোম। কিন্তু যিহোবা দানিয়েলকে আমাদের দিনে ও ভবিষ্যতে যে ঘটনাগুলো ঘটবে সেগুলোর বিষয়েও জানিয়েছিলেন।—দানিয়েল ২:২৪-৩০.

১০ ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিল, “সেই রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) যখন ১৯১৪ সালে “জাতিগণের সময়” শেষ হয়েছিল তখন ঈশ্বর স্বর্গে এক রাজ্য স্থাপন করেছিলেন, যার রাজা হলেন যীশু খ্রীষ্ট। দানিয়েল নবূখদ্‌নিৎসরকে তার স্বপ্নের অর্থ বলার সময় যে ‘মহাপর্ব্বতের’ কথা বলেছিলেন তা এই বিশ্বমণ্ডলের ওপর যিহোবার শাসনকে বোঝায়। এই মহাপর্বত থেকে একটা ‘প্রস্তর’ বা মশীহ রাজ্য বের হয়ে আসে। (লূক ২১:২৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:১-৫) হর্‌মাগিদোনে এই প্রস্তর প্রতিমাকে আঘাত করবে আর তাকে একেবারে গুঁড়ো করে ফেলবে। এরপর মশীহ রাজ্য বড় পাহাড় হয়ে ‘সমস্ত পৃথিবীর’ ওপর চিরকালের জন্য শাসন করবে।—দানিয়েল ২:৩৫, ৪৫; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬. *

১১. যীশুর রূপান্তর কিসের ঝলক ছিল আর পিতরের ওপর এই দর্শন কতখানি ছাপ ফেলেছিল?

১১ যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন তিনি এই রাজ্যের বিষয়ে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যাহারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্ত্রকে আপনার রাজ্যে আসিতে না দেখিবে।” (মথি ১৬:২৮) এই কথা বলার ছদিন পরে যীশু পিতর, যাকোব ও যোহনকে উঁচু একটা পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আর সেখানে তাদের সামনে তাঁর রূপান্তর হয়েছিল। একখণ্ড উজ্জ্বল মেঘ যখন শিষ্যদের আড়াল করেছিল, সেই সময় ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন: “‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত, ইহাঁর কথা শুন।’” (মথি ১৭:১-৯; মার্ক ৯:১-৯) মশীহ রাজ্যের কতই না অদ্ভুত এক ঝলক! কোন সন্দেহ নেই যে এই অদ্ভুত দর্শন শিষ্যদের বিশ্বাস মজবুত করেছিল আর সেইজন্য অনেক বছর পরে পিতর লিখেছিলেন: ‘আর ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য দৃঢ়তর হইয়া আমাদের নিকটে রহিয়াছে।’—২ পিতর ১:১৬-১৯. *

১২. আজকে আমাদের ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রাখা কেন আরও বেশি করে দরকারি?

১২ ‘ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য’ শুধুমাত্র ইব্রীয় শাস্ত্রে মশীহ সম্বন্ধে যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করা ছিল সেগুলোর কথাই বলে না কিন্তু এতে একথাও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে যীশু ‘পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিবেন।’ (মথি ২৪:৩০) রূপান্তরের ঘটনা ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যকে আরও নিশ্চিত করে আর আমরা বুঝি যে যীশু খ্রীষ্ট খুব শীঘ্রিই মহাপ্রতাপে বিচার করতে আসবেন। তখন তিনি যারা বিশ্বাস করে না তাদেরকে ধ্বংস করবেন আর যারা বিশ্বাস রাখেন তাদেরকে আশীর্বাদ করবেন। (২ থিষলনীকীয় ১:৬-১০) বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পূর্ণ হওয়া দেখায় যে আমরা “শেষ কালে” বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৬, ১৭; মথি ২৪:৩-১৪) এই শেষকালে যখন “মহাক্লেশ” শুরু হবে সেইসময় যিহোবার পক্ষ থেকে মীখায়েল অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট এই দুষ্ট জগতের বিচার করবেন ও এটাকে ধ্বংস করে দেবেন। আর এই কাজ করার জন্য তিনি একেবারে তৈরি। (মথি ২৪:২১; দানিয়েল ১২:১) তাহলে, আজকে ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য বাইবেলে বিশ্বাস রাখা কি আমাদের জন্য আরও বেশি করে দরকারি নয়?

ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস বাড়ান

১৩. ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালবাসা বাড়াতে আর তাঁর বাক্যে বিশ্বাস রাখার জন্য আমাদের কী করা উচিত?

১৩ যখন আমরা প্রথম প্রথম দেখেছিলাম যে ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য পূর্ণ হয়েছে তখন ঈশ্বরের জন্য আমাদের ভালবাসা কতই না গভীর হয়েছিল, তাঁর বাক্যে আমাদের বিশ্বাস কতই না মজবুত হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় থেকে অনেক দিন কেটে যাওয়ায় আজকে কি আমাদের বিশ্বাসে কিছু ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, আমাদের ভালবাসা কি একটু কমে গিয়েছে? ইফিষীয় মণ্ডলীর মতো কি আমরা আমাদের ‘প্রথম প্রেম পরিত্যাগ করিয়াছি’? আমাদের যেন কখনও এমন না হয়। (প্রকাশিত বাক্য ২:১-৪) আমরা হয়তো অনেক দিন ধরে যিহোবার সেবা করে আসছি কিন্তু আমাদের এখনও আর ভবিষ্যতেও ‘প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করতে’ হবে যাতে আমরা স্বর্গে ধন সঞ্চয় করে চলতে পারি। (মথি ৬:১৯-২১, ৩১-৩৩) আমরা যদি মন দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করি, মিটিং আর প্রচার একেবারেই বাদ না দিই তবেই ঈশ্বর, যীশু ও বাইবেলের জন্য আমাদের ভালবাসা দিন দিন বাড়তে থাকবে। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫; মার্ক ১৩:১০; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আর এই ভালবাসাই ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস রাখতে আমাদেরকে সাহায্য করবে।—গীতসংহিতা ১০৬:১২.

১৪. ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাসের জন্য অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কোন্‌ উপহার পান?

১৪ প্রাচীন সময়ে ঈশ্বর যেভাবে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীকে পূর্ণ করেছেন, তেমনই আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি যে ভবিষ্যতেও তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবেন। উদাহরণ হিসেবে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল যে “যে জয় করে, তাহাকে আমি ঈশ্বরের ‘পরমদেশস্থ জীবনবৃক্ষের’ ফল ভোজন করিতে দিব।” (প্রকাশিত বাক্য ২:৭, ১০; ১ থিষলনীকীয় ৪:১৪-১৭) যীশু খ্রীষ্ট যখন স্বর্গে রাজত্ব শুরু করেন তখন তিনি এই জয়ী অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা যারা মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন তাদেরকে ‘ঈশ্বরের পরমদেশ’ থেকে ‘জীবনবৃক্ষের ফল’ খেতে দিয়েছেন। যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা তারা আবার জীবন ফিরে পান আর তারা ‘যুগপর্য্যায়ের রাজা, অক্ষয় অদৃশ্য একমাত্র ঈশ্বরের’ কাছ থেকে অমরতা ও অক্ষয়তার বর পান। (১ তীমথিয় ১:১৭; ১ করিন্থীয় ১৫:৫০-৫৪; ২ তীমথিয় ১:১০) এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জন্য এটা কত বড় উপহার! ঈশ্বরের জন্য তাদের অশেষ প্রেম ও তাঁর বাক্যের জন্য তাদের অটল বিশ্বাস আমাদের জন্য কত ভাল উদাহরণ!

১৫. কাদের দিয়ে এক ‘নূতন পৃথিবীর’ ভিত গড়ে তোলা হয়েছে আর কারা তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন?

১৫ বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা স্বর্গে ‘ঈশ্বরের পরমদেশে’ যাওয়ার অল্প কিছু সময় পরে ১৯১৯ সালে পৃথিবীতে আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশরা মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য, “মহতী বাবিল” থেকে মুক্ত হয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৮; গালাতীয় ৬:১৬) তাদের দিয়ে এক ‘নূতন পৃথিবীর’ ভিত গড়ে তোলা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:১) আর এইভাবে এক ‘দেশ’ তৈরি হয়েছে। (যিশাইয় ৬৬:৮) এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা মহতী বাবিল থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসায় এই নতুন পৃথিবী ও দেশে সত্য উপাসনা আবারও একবার শুরু হয়েছিল। আজকে সারা পৃথিবীতে যিহোবার সত্য উপাসনা হয়ে চলেছে। আর এখন এই “শেষকালে” লাখ লাখ লোকেরা এই নতুন পৃথিবী ও দেশে আসছেন আর তারা যিহোবার কাছ থেকে শিখছেন ও অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন।—যিশাইয় ২:২-৪; সখরিয় ৮:২৩; যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.

ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য মানুষের ভবিষ্যৎ জানায়

১৬. অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সামনে কোন্‌ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে?

১৬ আজকে যারা ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে বিশ্বাস রেখে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে? তারাও এক নতুন পৃথিবীর জন্য অপেক্ষা করেন যেখানে চারিদিকে শুধু খুশিই থাকবে। (লূক ২৩:৩৯-৪৩) সেখানে তারা “জীবন-জলের নদী” থেকে জল পান করবেন আর সেই নদীর চারপাশের “বৃক্ষের পত্র” থেকে আরোগ্য পাবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২) আপনিও যদি এই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অপেক্ষায় আছেন, তাহলে এখন যিহোবার জন্য আপনার ভালবাসাকে বাড়ান ও ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে আপনার বিশ্বাসকে অটল করুন। আমরা চাই যে আপনিও সেই লোকেদের মধ্যে থাকুন, যারা ভবিষ্যতে এই নতুন জগতে চিরকালের জন্য জীবন উপভোগ করবেন।

১৭. নতুন জগতে ঈশ্বর আমাদের কী কী আশীর্বাদ দেবেন?

১৭ নতুন জগৎ এত সুন্দর হবে যে আমরা মানুষেরা তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য আমাদেরকে বলে যে আমরা যারা ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে চলি, আমাদেরকে তিনি কী কী আশীর্বাদ দেবেন। যখন ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীর ওপর শাসন করবে ও যেভাবে স্বর্গে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হয় সেভাবে পৃথিবীতেও হবে তখন কোন খারাপ লোকেরা থাকবে না, পশুরাও আর হিংস্র থাকবে না আর তারা কেউ “কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না।” (যিশাইয় ১১:৯; মথি ৬:৯, ১০) ভাল লোকেরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে আর তারা “শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১১) খাবারের কোন অভাব থাকবে না কারণ “দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।” (গীতসংহিতা ৭২:১৬) দুঃখে কাউকে চোখের জল ফেলতে হবে না। কারোর অসুখ করবে না আর কেউ মারা যাবে না। (যিশাইয় ৩৩:২৪; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) ভাবতে পারেন ডাক্তার, ওষুধপত্র, হাসপাতাল, পাগলাগারদ এবং কোন কবরখানাই আর থাকবে না। কতই না উজ্জ্বল ও সুন্দর ভবিষ্যৎ!

১৮. (ক) দানিয়েলকে নিশ্চিত করে কী বলা হয়েছিল? (খ) দানিয়েল কী ‘অধিকার’ করবেন?

১৮ যে লোকেরা মারা গেছেন নতুন জগতে তারা আবার বেঁচে উঠবেন, তারা সবাই পুনরুত্থিত হবেন। নতুন জগতে ইয়োব কবর থেকে উঠে আসবেন, যিনি প্রাচীনকালের একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫) ভাববাদী দানিয়েল বেঁচে উঠবেন কারণ যিহোবার দূত তাকে নিশ্চিত করে বলেছিলেন: “তুমি শেষের অপেক্ষাতে গমন কর, তাহাতে বিশ্রাম পাইবে, এবং দিন-সমূহের শেষে আপন অধিকারে দণ্ডায়মান হইবে।” (দানিয়েল ১২:১৩) মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত দানিয়েল ঈশ্বরের সেবা করেছিলেন। আর ঈশ্বরের চোখে তিনি এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন কিন্তু খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময় যখন “ধার্ম্মিকগণের পুনরুত্থান” হবে ও তারা আবার বেঁচে উঠবেন। (লূক ১৪:১৪) কিন্তু দানিয়েল কী ‘অধিকার’ করবেন? যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণী বলে যে নতুন জগতে যিহোবা সব লোকেদের অধিকার দেবেন অর্থাৎ নতুন জগতে তাদের নিজেদের জমি থাকবে আর কারও সঙ্গে কোনরকম অন্যায় করা হবে না। (যিহিষ্কেল ৪৭:১৩–৪৮:৩৫) তার মানে নতুন জগতে দানিয়েলেরও নিজের জমি থাকবে। এছাড়া ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার কাজে তার আরও অন্য দায়িত্বও থাকবে।

১৯. নতুন জগতে বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে কী করতে হবে?

১৯ কিন্তু আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনি যদি ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনিও নতুন জগতে থাকতে চাইবেন। আপনি সেখানে থাকতে চাইবেন ও সেখানে আপনার জন্য যে আশীর্বাদগুলো অপেক্ষা করছে তা পেতে চাইবেন। আপনি হয়তো সেখানে অনেক কাজ করতে চাইবেন আর যারা মারা গিয়েছিলেন তাদের কবর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে আনন্দ করবেন। আসলে, নতুন জগতের সুন্দর পরিবেশ মানুষদেরই জন্য। ঈশ্বর আমাদের প্রথম বাবামাকে এরকম একটা জায়গাতেই রেখেছিলেন। (আদিপুস্তক ২:৭-৯) আর তিনি চান যে যারা তাঁর কথা মেনে চলেন তারা যেন চিরকাল নতুন জগতে বেঁচে থাকে। আপনিও কি যিহোবার কথা মেনে চলছেন যাতে আপনি নতুন জগতে বেঁচে থাকতে পারেন যেখানে কোটি কোটি লোকেরা থাকবে? আপনি সেখানে থাকতে পারবেন যদি আপনি আমাদের পিতা যিহোবা ঈশ্বরকে সত্যি করে ভালবাসেন ও তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে অটল বিশ্বাস রেখে চলেন।

[পাদটীকাগুলো]

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির প্রকাশিত দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন (ইংরেজি) বইয়ের ১১ অধ্যায় ও শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের “সত্তর সপ্তাহ” অংশটা দেখুন।

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির প্রকাশিত ‘ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি উপকারী’ (ইংরেজি) বইয়ের ৩৪৩-৪ পাতা দেখুন।

^ দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন! বইয়ের ৪ ও ৯ অধ্যায় দেখুন।

^ ২০০০ সালের ১লা এপ্রিল প্রহরীদুর্গ থেকে “ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যে মনোযোগ দিন” প্রবন্ধটা দেখুন।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী কী ছিল আর ঈশ্বর যে বংশের কথা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সে কে?

• মশীহের বিষয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল সেগুলোর কয়েকটা কী যা যীশু খ্রীষ্টে পূর্ণ হয়েছে?

দানিয়েল ২:৪৪, ৪৫ পদের ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পূর্ণ হবে?

• যারা ঈশ্বরের কথা মেনে চলেন তাদের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য কোন্‌ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানায়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি নতুন জগতে থাকতে চান?