সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমার হৃদয় রক্ষা কর”

“তোমার হৃদয় রক্ষা কর”

“তোমার হৃদয় রক্ষা কর”

ভাববাদী শমূয়েলকে যিহোবা বলেছিলেন: “মনুষ্য যাহা দেখে, তাহা কিছু নয়; যেহেতু মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন।” (১ শমূয়েল ১৬:৭) এছাড়া গীতরচক দায়ূদও হৃদয়ের কথা বলতে গিয়ে গেয়েছিলেন: “তুমি [যিহোবা] আমার চিত্তের পরীক্ষা করিয়াছ, রাত্রিকালে আমার তত্ত্বানুসন্ধান করিয়াছ, তুমি আমাকে কষিয়াছ, কিছু পাও নাই।”—গীতসংহিতা ১৭:৩.

হ্যাঁ, যিহোবা আমাদের হৃদয় পরীক্ষা করেন ও জানেন যে আমরা আসলে কীরকম লোক। (হিতোপদেশ ১৭:৩) তাই প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন ঠিক পরামর্শই দিয়েছিলেন: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) কিন্তু আমরা কী করে আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে পারি? হিতোপদেশ ৪ অধ্যায় আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর দেয়।

পিতার উপদেশ শোন

হিতোপদেশের ৪ অধ্যায়ের শুরুতেই এই কথাগুলো বলা হয়েছে: “বৎসগণ, পিতার উপদেশ শুন, সুবিবেচনা বুঝিবার জন্য মনোযোগ কর। কেননা আমি তোমাদিগকে সুশিক্ষা দিব; তোমরা আমার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না।”হিতোপদেশ ৪:১, ২.

এখানে ছেলেমেয়েদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা যেন ঈশ্বরকে ভয় করেন এমন বাবামায়েরা, বিশেষ করে বাবারা যে ভাল শিক্ষা দেন তা শোনে। যিহোবা প্রত্যেক বাবাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি যেন তার ছেলেমেয়েদেরকে ঈশ্বরের পথে চলতে শেখান ও সেইসঙ্গে পরিবারের খাওয়া-পরা জোগান। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭; ১ তীমথিয় ৫:৮) ছেলেমেয়েদের যদি এই বিষয়গুলো না শেখানো হয়, তাহলে তারা কোন দিনও পরিপক্ব হতে পারবে না! তাই ছেলেমেয়েদের কি তাদের বাবার শিক্ষাকে সম্মানের সঙ্গে মেনে নেওয়া উচিত নয়?

কিন্তু, যে ছেলেমেয়েদের বাবা নেই তাদেরকে কে শেখাবে? উদাহরণ হিসেবে ১১ বছরের জেসনের কথাই ধরুন। * ৪ বছর বয়সেই সে তার বাবাকে হারায়। একজন খ্রীষ্টান প্রাচীন যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তার জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্ট কী তখন জেসন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল: “বাবা না থাকার কষ্টই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট। বাবার কথা মনে করে কখনও কখনও আমি খুবই নিরাশ হয়ে পড়ি।” কিন্তু জেসনের মতো যাদের বাবা নেই তারাও ভাল উপদেশ পেতে পারে, যা তাদেরকে সান্ত্বনা দেবে। তারা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীন এবং অন্যান্য পরিপক্ব ভাইবোনদের কাছে যেতে পারে, যারা তাদেরকে একজন প্রেমময় বাবার মতোই উপদেশ দেবেন।—যাকোব ১:২৭.

নিজের বাবার কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছিলেন সে কথা মনে করে শলোমন বলেন: “আমিও নিজ পিতার বৎস ছিলাম, মাতার দৃষ্টিতে কোমল ও অদ্বিতীয় ছিলাম।” (হিতোপদেশ ৪:৩) এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় যে রাজা শলোমন তার ছেলেবেলার কথা মনে করে খুশি হতেন। যুবক শলোমন নিশ্চয়ই তার বাবা দায়ূদের দেওয়া উপদেশ হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছিল এবং বাবার সঙ্গে তার সুন্দর ও কাছের সম্পর্ক ছিল, যা তাকে তার বাবার “[প্রকৃত] বৎস” করে তুলেছিল। শুধু তাই নয়, মায়ের কাছেও শলোমন “অদ্বিতীয়” বা খুবই আদরের ছিলেন। তাই ছেলেমেয়েদের এমন একটা ঘরে বড় হওয়া কতই না জরুরি, যে ঘরে বাবামায়ের সঙ্গে তাদের কাছের সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলার রাস্তা সবসময়ই খোলা!

প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনা লাভ করুন

শলোমন তার বাবার দেওয়া সুন্দর উপদেশের কথা মনে করে আরও বলেন: “পিতা আমাকে শিক্ষা দিতেন, বলিতেন, তোমার চিত্ত আমার কথা ধরিয়া রাখুক; আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, জীবন পাইবে; প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর, সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর, ভুলিও না; আমার মুখের কথা হইতে বিমুখ হইও না। প্রজ্ঞাকে ছাড়িও না, সে তোমাকে রক্ষা করিবে; তাহাকে প্রেম কর, সে তোমাকে সংরক্ষণ করিবে। প্রজ্ঞাই প্রধান বিষয়, তুমি প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর; সমস্ত উপার্জ্জন দিয়া সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর।”হিতোপদেশ ৪:৪-৭.

কেন প্রজ্ঞাকে “প্রধান বিষয়” বলা হয়েছে? প্রজ্ঞা মানে হল জ্ঞান এবং বুদ্ধি খাটিয়ে এমনভাবে কাজ করা, যা ভাল ফল নিয়ে আসে। প্রজ্ঞার ভিত্তিই হল জ্ঞান। আর জ্ঞান মানে পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা বা পড়া ও অধ্যয়নের মাধ্যমে কোন কিছু জানা বা বোঝা। কিন্তু, আমরা যদি জ্ঞানকে ভাল কাজে খাটাতে না পারি, তাহলে এর কোন মূল্যই থাকবে না। আমাদের শুধু রোজ বাইবেল এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসদের’ কাছ থেকে পাওয়া বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রিকা পড়লেই চলবে না কিন্তু সেগুলো থেকে আমরা যা শিখি, তা নিজের জীবনে কাজে লাগানোর জন্যও চেষ্টা করতে হবে।—মথি ২৪:৪৫.

সুবিবেচনা লাভ করাও খুব জরুরি। কারণ আমাদের যদি সুবিবেচনা না থাকে, তাহলে যে বিষয়টা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি সেগুলো কীভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িত তা কি আমরা বুঝতে পারব? আমাদের যদি সুবিবেচনা না-ই থাকে, তাহলে আমরা কোন একটা বিষয় কেন হল ও এর পেছনে কারণগুলো কী তা ধরতে পারব না এবং বিষয়টা বুঝতে পারব না। হ্যাঁ, দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর অর্থাৎ আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তার থেকে ঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য আমাদের সুবিবেচনা থাকা দরকার।—দানিয়েল ৯:২২, ২৩.

শলোমন তার বাবার কথাগুলো বলেই চলেন: “তাহাকে [প্রজ্ঞাকে] শিরোধার্য্য কর, সে তোমাকে উন্নত করিবে, যখন তাহাকে আলিঙ্গন কর, সে তোমাকে মান্য করিবে। সে তোমার মস্তকে লাবণ্যভূষণ দিবে, সে শোভার মুকুট তোমাকে প্রদান করিবে।” (হিতোপদেশ ৪:৮, ৯) যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রজ্ঞা কাজে লাগান তারা বিপদ থেকে রক্ষা পান। শুধু তাই নয়, এটা তাদের জন্য সম্মান ও সুনাম নিয়ে আসে। তাই, আসুন আমরা সবাই প্রজ্ঞা লাভ করি।

“উপদেশ ধরিয়া রাখ”

এরপর ইস্রায়েলের রাজা শলোমন তার বাবার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন: “বৎস, শুন, আমার কথা গ্রহণ কর, তাহাতে তোমার জীবনের বৎসর বহুসংখ্যক হইবে। আমি তোমাকে প্রজ্ঞার পথ দেখাইয়াছি, তোমাকে সরলতার মার্গে চালাইয়াছি। তোমার গমনকালে পাদসঞ্চার সঙ্কুচিত হইবে না, ধাবনকালে তোমার উছোট লাগিবে না। উপদেশ ধরিয়া রাখিও, ছাড়িয়া দিও না, তাহা রক্ষা কর, কেননা তাহা তোমার জীবন।”হিতোপদেশ ৪:১০-১৩.

শলোমন নিশ্চয়ই খুব ভাল ছেলে ছিলেন আর তাই তিনি তার বাবার দেওয়া প্রেমময় উপদেশের মূল্য বুঝেছিলেন, এর থেকে ভাল কিছু শিখেছিলেন ও তার ভুল শুধরে নিয়েছিলেন। আমাদের যদি ঠিক মতো উপদেশ দেওয়া না হয়, তাহলে আমরা কী করে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করব বা আমাদের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলব? আমরা যদি আমাদের ভুলগুলো থেকে না শিখি অথবা ভুল ধারণাগুলোকে শুধরে না নিই, তাহলে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে একটুও উন্নতি করতে পারব না। সঠিক উপদেশ পেলে আমরা ভাল আচরণ করব, যা ঈশ্বরকে খুশি করবে আর এটাই আমাদেরকে ‘সরলতার মার্গে চলতে’ সাহায্য করবে।

শুধু কী তাই, শাসন ‘আমাদের জীবনের বৎসরও বহুসংখ্যক’ করবে। কীভাবে? দেখুন যীশু খ্রীষ্ট কী বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত; আর যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে অধার্ম্মিক, সে প্রচুর বিষয়েও অধার্ম্মিক।” (লূক ১৬:১০) ছোটখাটো অন্যায় না করার জন্য আমরা যদি নিজেদেরকে শাসন করি, তাহলে বড় বড় অন্যায়, যেজন্য হয়তো আমাদের জীবনও হারাতে হতে পারে তা না করা কি আরও সহজ হয়ে যাবে না? যেমন, “কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত” না করার জন্য যদি আমরা চোখকে শাসন করি, তাহলে আমরা কখনোই ব্যভিচার করব না। (মথি ৫:২৮) এই নীতি নারী-পুরুষ সবার বেলায়ই খাটে। আমরা যদি আমাদের মনকে শাসন করে ‘সমুদয় চিন্তাকে বন্দি করি,’ তাহলে কথায় বা কাজে গুরুতর পাপ করার সম্ভাবনা খুব কম থাকবে।—২ করিন্থীয় ১০:৫.

এটা ঠিক যে শাসন মেনে নিতে আমাদের খুব কষ্ট হয় আর মনে হয় এটা আমাদের স্বাধীনতায় বাধা দেয়। (ইব্রীয় ১২:১১) কিন্তু, জ্ঞানী রাজা আমাদের আশ্বাস দেন যে আমরা যদি শাসন মেনে নিই, তাহলে আমাদের চলার পথে কোন বাধা থাকবে না। ঠিক ঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে একজন দৌড়বিদ যেমন পড়ে না গিয়ে বা কোন চোট না পেয়েই খুব জোরে দৌড়াতে পারে তেমনই আমরা যদি শাসন মেনে নিই, তাহলে আমরাও জীবনের পথে কোন বাধা ছাড়াই খুব ভালভাবে চলতে পারব। তবে আমাদের খুব ভাল করে দেখেশুনে পথ বেছে নিতে হবে।

‘দুর্জ্জনদের মার্গ’ এড়িয়ে চলুন

জরুরি মনে করেই শলোমন সাবধান করেছিলেন: “দুর্জ্জনদের মার্গে প্রবেশ করিও না, দুর্বৃত্তদের পথে চলিও না, তাহা ছাড়, তাহার নিকট দিয়া যাইও না; তাহা হইতে বিমুখ হইয়া অগ্রসর হও। কেননা দুষ্কর্ম্ম না করিলে তাহাদের নিদ্রা হয় না, কাহারও উছোট না লাগাইলে তাহাদের নিদ্রা দূরে যায়। কারণ তাহারা দুষ্টতার অন্ন ভক্ষণ করে, তাহারা উপদ্রবের দ্রাক্ষারস পান করে।”হিতোপদেশ ৪:১৪-১৭.

শলোমন চান আমরা যেন দুষ্টদের পথ এড়িয়ে চলি কারণ তারা খারাপ কাজ করাকেই জীবনে ধ্যানজ্ঞান করে নেয়। খাবার ও জল ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনই খারাপ কাজ করা ছাড়াও তারা বাঁচতে পারে না। খারাপ কাজ না করলে তাদের ঘুমই আসে না। তাদের সমস্ত কাজই নোংরামিতে ভরা! এদের সঙ্গে চলে আমরা কি আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে পারব? আজকে টেলিভিশনের বেশির ভাগ অনুষ্ঠান বা সিনেমাগুলোতে যে হিংস্রতা ও মারামারি দেখানো হয় তা দেখে ‘দুর্বৃত্তদের পথে চলা’ কতই না বোকামির কাজ! আর আমরা যদি হিংস্র অনুষ্ঠানগুলো দেখি, তাহলে আমরা কী করে আমাদের হৃদয়ে করুণা গড়ে তুলতে পারব?

আলোতে পথ চলা

পথের বিষয়ে আরও উদাহরণ টেনে শলোমন বলেন: “কিন্তু ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” (হিতোপদেশ ৪:১৮) বাইবেল পড়ে তা জীবনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হল ভোর রাতে পথ চলতে শুরু করার মতো। রাতের কালো আকাশ যখন নীল হতে থাকে তখন আমরা কিছুই ভাল করে দেখতে পাই না। কিন্তু, ভোরের আলোয় আমরা আমাদের আশেপাশের জিনিসগুলো আবছা আবছা দেখতে পাই। আর পরে সূর্য উঠে গেলে আমরা সমস্ত কিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই। এইরকমই আমরা যদি ধৈর্য ধরে ও মন দিয়ে বাইবেল পড়া চালিয়ে যাই, তাহলে আমরা ধীরে ধীরে বাইবেলের সত্যগুলো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারব। আমরা যদি মিথ্যা যুক্তিতর্ক থেকে আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের হৃদয়ের জন্য আধ্যাত্মিক পুষ্টি জোগানো খুবই জরুরি।

বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মানেও আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারব। ভবিষ্যদ্বাণীগুলো তখনই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যখন যিহোবার পবিত্র আত্মা এগুলোর ওপর আলো দেয় এবং জগতে এগুলো পূর্ণ হয় বা ঈশ্বরের লোকেরা নিজেদের জীবনে ঘটতে দেখেন। ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কখন পূর্ণ হবে এই বিষয়ে অনুমান না করে আমাদেরকে ‘জ্যোতির উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হওয়ার’ জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

আলোতে পথ চলতে না চেয়ে যারা ঈশ্বরের নির্দেশনাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? শলোমন বলেন: “দুষ্টদের পথ অন্ধকারের ন্যায়; তাহারা কিসে উছোট খাইবে, জানে না।” (হিতোপদেশ ৪:১৯) দুষ্ট লোকেরা এমন একজন ব্যক্তির মতো যে রাতের অন্ধকারে হোঁচট খায় কিন্তু জানে না যে কোথায় হোঁচট খেল। দুষ্ট লোকেরা অসৎ পথে চলে অনেক টাকাপয়সা ও বাড়ি, গাড়ি করতে পারে কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে তাদের এই সাফল্য শুধুই ক্ষণিকের। এইরকম ব্যক্তিদের বিষয়ে গীতরচক বলেছিলেন: “তুমি তাহাদিগকে পিচ্ছিল স্থানেই রাখিতেছ, তাহাদিগকে বিনাশে ফেলিয়া দিতেছ।”—গীতসংহিতা ৭৩:১৮.

সাবধান থাকুন

ইস্রায়েলের রাজা বলেই চলেন: “বৎস, আমার বাক্যে অবধান কর, আমার কথায় কর্ণপাত কর। তাহা তোমার দৃষ্টির বহির্ভূত না হউক, তোমার হৃদয়মধ্যে তাহা রাখ। কেননা যাহারা তাহা পায়, তাহাদের পক্ষে তাহা জীবন, তাহা তাহাদের সর্ব্বাঙ্গে স্বাস্থ্যস্বরূপ। সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।”হিতোপদেশ ৪:২০-২৩.

হৃদয়কে রক্ষা করা যে কতখানি জরুরি তা শলোমনের জীবনের একটা ঘটনাই বলে দেয়। এটা ঠিক যে ছেলেবেলায় তিনি তার বাবার “[প্রকৃত] বৎস” ছিলেন এবং বড় হয়ে তিনি যিহোবার প্রতিও খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু তবুও বাইবেল জানায়: “এইরূপ ঘটিল, শলোমনের বৃদ্ধ বয়সে তাঁহার [বিজাতীয়া] স্ত্রীরা তাঁহার হৃদয়কে অন্য দেবগণের অনুগমনে বিপথগামী করিল; তাঁহার পিতা দায়ূদের অন্তঃকরণ যেমন ছিল, তাহার অন্তঃকরণ তেমনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর ভক্তিতে একাগ্র ছিল না।” (১ রাজাবলি ১১:৪) সাবধান না থাকলে ভাল হৃদয়ও ফাঁদে পড়ে খারাপ কাজ করে ফেলতে পারে। (যিরমিয় ১৭:৯) ঈশ্বরের বাক্যে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের “হৃদয়মধ্যে” রাখতে হবে। আর এই পরামর্শই হিতোপদেশ ৪ অধ্যায়ে দেওয়া হয়েছে।

হৃদয় পরীক্ষা করুন

আমরা কি আমাদের হৃদয়কে ঠিক মতো রক্ষা করতে পারছি? কীভাবে আমরা আমাদের ভিতরের ব্যক্তিকে চিনতে পারি? যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।” (মথি ১২:৩৪) তিনি আরও বলেছিলেন: “অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, মিথ্যাসাক্ষ্য, নিন্দা আইসে।” (মথি ১৫:১৯, ২০) হ্যাঁ, আমরা যেভাবে কথা বলি ও কাজ করি তা বলে দেয় যে আমরা আসলে ভিতরে কেমন লোক।

তাই শলোমনের এই পরামর্শ আমাদের মেনে চলা খুবই জরুরি: “মুখের কুটিলতা আপনা হইতে অন্তর কর, ওষ্ঠাধরের বক্রতা আপনা হইতে দূর কর। তোমার চক্ষু সরল দৃষ্টি করুক, তোমার চক্ষুর পাতা সোজাভাবে সম্মুখে দেখুক। তোমার চরণের পথ সমান কর, তোমার সমস্ত গতি ব্যবস্থিত হউক। দক্ষিণে কি বামে ফিরিও না, মন্দ হইতে চরণ নিবৃত্ত কর।”হিতোপদেশ ৪:২৪-২৭.

শলোমনের পরামর্শ মতো আমাদের পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে আমরা কীধরনের কথাবার্তা বলি ও কেমন কাজ করি। আমরা যদি আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে এবং যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তাহলে আমাদের খারাপ কথাবার্তা ও কাজ অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। (হিতোপদেশ ৩:৩২) এইজন্য ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রার্থনা করা দরকার ও দেখা দরকার যে আমাদের কথাবার্তা এবং চালচলন আমাদের সম্বন্ধে কী জানায়। আসুন আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলো শুধরে নিতে যিহোবার কাছে সাহায্য চাই।—গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪.

আর আমাদের ‘চক্ষুর দৃষ্টিও যেন সরল’ হয়। আসুন আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে মনপ্রাণ দিয়ে সেবা করার লক্ষ্যে আমাদের চোখকে স্থির রাখি। (কলসীয় ৩:২৩) আপনি যদি ঠিক পথে চলার চেষ্টা করেন, তাহলে যিহোবা ‘আপনার সমস্ত গতিকে’ সফল করবেন এবং ‘আপনার হৃদয়কে রক্ষা’ করতে বাইবেলের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক আশীর্বাদ করবেন।

[পাদটীকাগুলো]

^ নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।

[২২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

আপনি কি এমন আমোদপ্রমোদকে এড়িয়ে চলেন, যা হিংস্রতাকে তুলে ধরে?

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপদেশ থেকে উপকার লাভ করুন

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

শাসন আপনার পথ চলাকে ধীর করে দেয় না

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাইবেল অধ্যয়নের জন্য অধ্যবসায়ী হোন