সুসমাচারের বইগুলো—ইতিহাস অথবা পৌরাণিক কাহিনী?
সুসমাচারের বইগুলো—ইতিহাস অথবা পৌরাণিক কাহিনী?
যীশু এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি পৃথিবীর ইতিহাসকে বদলে দিয়েছিলেন। ছেলেবুড়ো সবাই-ই তাঁকে জানে। তাঁর বিষয়ে শুধু স্কুলেই নয় কিন্তু ঘরে ও অন্য জায়গাতেও শেখানো হয়। অনেকে সুসমাচারের বইগুলোকে খুবই মূল্য দেন। তারা মনে করেন যে এতে এমনকিছু সত্য ও প্রবাদ দেওয়া আছে যা সবসময়ের জন্য ভাল। যেমন এইরকমই একটা প্রবাদ হল, “তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ৫:৩৭) আর এমনও হতে পারে যে আপনার বাবামা খ্রীষ্টান না হলেও আপনাকে যে ভাল বিষয়গুলো শিখিয়েছেন তা হয়তো এই সুসমাচারের বইগুলো থেকেই নেওয়া।
সুসমাচারের বইগুলোতে যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে খোলাখুলি লেখা হয়েছে। এগুলো পড়ে লক্ষ লক্ষ লোকেরা যীশুর বিষয়ে জেনেছেন ও খ্রীষ্টান হয়েছেন। যীশুর জন্য এমনকি অনেকে তাদের প্রাণ পর্যন্ত দিতে রাজি ছিলেন। এই বইগুলো মুশকিলের সময় লোকেদের সাহস দিয়েছে, তাদের বিশ্বাসকে মজবুত করেছে তাদেরকে বেঁচে থাকার রসদ যুগিয়েছে। কিন্তু তবুও কিছু পণ্ডিতেরা বলেন যে সুসমাচারের বইগুলোতে যা লেখা আছে তা মনগড়া গল্প, রূপকথা ছাড়া সেগুলো আর কিছুই নয়। তাই আপনার কি মনে হয় না যে তাদের এই কথার পেছনে ঠিক ঠিক প্রমাণ থাকা চাই? আমরা যখন দেখি যে সুসমাচারের বইগুলো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে তখন এগুলো সত্যি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য কি কারণের দরকার নেই?
এইজন্য আমরা আপনাকে সুসমাচারের বইগুলোর বিষয়ে কিছু প্রশ্নকে মন দিয়ে ভেবে দেখতে বলি। আপনি নিজেই দেখুন যে এই প্রশ্নগুলো সম্বন্ধে কিছু পণ্ডিতেরা কী বলেন এমনকি যদিও তাদের মধ্যে কিছুজন খ্রীষ্টান নন। আর তারপর আপনি নিজেই ঠিক করুন যে আপনি সুসমাচারের বইগুলোকে সত্যি বলবেন বা এগুলো শুধুই রূপকথা।
ভেবে দেখার মতো কিছু প্রশ্ন
◆ সুসমাচারের বইগুলো কি বানিয়ে বানিয়ে লেখা হয়েছিল?
যীশুকে নিয়ে যে সেমিনার হয়েছিল তার উদ্যোক্তা রবার্ট ফান্ক বলেন: “মথি, মার্ক, লূক এবং যোহন যীশুর মৃত্যুর পর তাঁর কাহিনী এমনভাবে বানিয়ে বানিয়ে লিখেছিলেন যে খ্রীষ্টানেরা যেন তা মেনে নেয়।” কিন্তু, সত্যি বিষয় হল যে সুসমাচারের বইগুলো লেখার সময় অনেক চাক্ষুষ সাক্ষিরা ছিলেন যারা যীশুর কথা শুনেছিলেন, নিজেদের চোখে যীশুকে অলৌকিক কাজ করতে দেখেছিলেন এবং তাঁর পুনরুত্থান বা আবার বেঁচে ওঠার পর তাঁকে দেখেছিলেন। কিন্তু তারা সুসমাচারের বইগুলো সত্যি কিনা সে বিষয়ে কখনও কোন প্রশ্ন তোলেননি।
এবার খ্রীষ্টের মৃত্যু ও আবার বেঁচে ওঠার বিষয়টা দেখুন। শুধু যে সুসমাচারের বইগুলোতেই এটা পাওয়া যায় তা নয়, প্রাচীন করিন্থের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের কাছে লেখা প্রেরিত পৌলের প্রথম চিঠিতে, প্রেরিত পৌলও এই বিষয়ে লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন; আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন; তাহার পরে একেবারে পাঁচ শতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন, তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্ত্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে। তাহার পরে তিনি যাকোবকে, পরে সকল প্রেরিতকে দেখা দিলেন। সকলের শেষ অকালজাতের ন্যায় যে আমি, আমাকেও দেখা দিলেন।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩-৮) এই সব লোকেরা যীশুকে আবার বেঁচে উঠতে দেখেছিলেন।
আজকে সমালোচকেরা বলেন যে সুসমাচারের বইগুলোতে কিছু মনগড়া গল্প লেখা হয়েছিল। কিন্তু আসলে সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দীর কিছু বইতে তা পাওয়া যায়। সেইসময় খ্রীষ্টান ধর্ম থেকে কিছু লোকেরা বেরিয়ে এসে মিথ্যা শিক্ষা দিতে শুরু করে প্রেরিত ২০:২৮-৩০.
আর তারাই যীশুর সম্বন্ধে কিছু মনগড়া গল্প লেখে।—◆ সুসমাচারের বইগুলো কি পৌরাণিক কাহিনীর বই?
লেখক এবং সমালোচক সি. এস লুইস বলেন, তিনি একেবারেই মেনে নিতে রাজি নন যে সুসমাচারের বইগুলো শুধুই পৌরাণিক কাহিনীর বই। তিনি লিখেছিলেন: ‘আমি একজন ঐতিহাসিক আর আমি সুসমাচারের বইগুলোকে খুব ভাল করে ঘেটেছি। এখন আমি হলফ করে বলতে পারি যে এগুলো আর যা কিছুই হোক না কেন পৌরাণিক কাহিনী হতেই পারে না। . . . এই বইগুলোতে কোন কথাই রং চড়িয়ে লেখা হয়নি যা আমরা পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে দেখি। কারণ যীশুর জীবনের বেশির ভাগ ঘটনাই এতে লেখা হয়নি। যেখানে পৌরাণিক কাহিনীতে সব ছোট ছোট বিষয়গুলোকে নিয়েও গল্প বানানো হয়।’ আরও একজন নামি ইতিহাসবেত্তা এইচ, জি. ওয়েলস যিনি খ্রীষ্টান ছিলেন না একেবারে ঠিক কথা বলেছিলেন: “[সুসমাচারের] চারজন লেখকই যীশুর বিষয়ে যা কিছু লিখেছেন তা একেবারেই গল্প নয়; তাদের বইগুলোকে বিশ্বাস না করার কোন কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না।”
যেমন দেখুন যে যখন যীশু বেঁচে উঠে তাঁর শিষ্যদের দেখা দিয়েছিলেন তখন কী হয়েছিল। যদি এটা পৌরাণিক কাহিনী হতো, তাহলে লেখকেরা যীশুর দেখা দেওয়ার ঘটনাটাকে খুবই রং চড়িয়ে লিখতেন যেমন, যীশু যখন আবার বেঁচে উঠেছিলেন তখন সেই দৃশ্য দেখার মতো ছিল। তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ ধাঁধানো আলোয় ঝলমল করছিল। তাঁকে দেখার জন্য লোকেরা দৌড়ে দৌড়ে আসত তারপর তিনি খুব অদ্ভুত ভাষণ দিতেন। কিন্তু, সুসমাচারের লেখকেরা এমন কিছুই লেখেননি। তারা শুধু সত্যি বিষয় লিখেছিলেন। তারা লিখেছিলেন যে যীশু তাঁর শিষ্যদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “বৎসেরা তোমাদের নিকটে কিছু খাবার আছে?” (যোহন ২১:৫) পণ্ডিত গ্রেগ ইস্টারব্রুক বলেন: “এইরকম বর্ণনা বলে দেয় যে সুসমাচারের বইগুলো পৌরাণিক কাহিনী নয় কিন্তু সত্যি ঘটনা।”
শুধু তাই নয় সুসমাচারের বইগুলো সেই সময়ে লেখা হয়েছিল যখন যিহুদি ধর্মগুরুরা সমস্ত ছোট ছোট বিষয়গুলোকে মুখস্থ করে করে শেখাত। এইজন্য সুসমাচারের বইগুলোতে রং চড়ানোর কোন প্রশ্নই ওঠে না।
◆ সুসমাচারের বইগুলোতে যদি পৌরাণিক কাহিনীই লেখা থাকে, তাহলে যীশু মারা যাওয়ার পর এত তাড়াতাড়ি কী করে তা লেখা যেতে পারে?
যীশু সা.কা. ৩৩ সালে মারা গিয়েছিলেন। আর সুসমাচারের বইগুলো সা.কা. ৪১ থেকে ৯৮ সালের মধ্যে লেখা হয়েছিল। এর মানে হল যে যীশুর মৃত্যুর পর অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর জীবন কাহিনী লেখা হয়েছিল। আর এটাই বিশ্বাস করতে বাধা দেয় যে সুসমাচারের বই পৌরাণিক কাহিনী। কারণ বানিয়ে বানিয়ে পৌরাণিক কাহিনী লিখতে সময় লাগে। উদাহরণ হিসেবে প্রাচীন গ্রিক কবি হোমারের লেখা ইলিয়েড ও ওডিসির কথাই ধরুন। কেউ কেউ মনে করেন যে এই দুই পৌরাণিক কাব্য লিখতে ১০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। কিন্তু সুসমাচারের বইগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়?
ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট তার সম্রাট এবং খ্রীষ্ট (ইংরেজি) বইয়ে লেখেন: “কিছু সাধারণ লোক মিলে যদি বানিয়ে বানিয়ে এমন একজন ব্যক্তির গল্প লেখেন যিনি লোকেদের জীবন বদলে দিয়েছিলেন, যাঁকে লোকেরা খুবই পছন্দ করত, যিনি খুবই উচ্চ মানের জীবনযাপন করতেন ও যিনি লোকেদের একে অন্যকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলে, তাহলে তা এমনই এক অলৌকিক ঘটনা হবে যা সুসমাচারের বইয়ে লেখা যে কোন অলৌকিক ঘটনার চেয়ে অনেক বড় অলৌকিক ঘটনা। খ্রীষ্টের জীবন, চরিত্র ও শিক্ষা নিয়ে দুশো বছর ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর দেখা গেছে যে তা একেবারে নিখুঁত ও সত্যি আর তাঁর জীবন, চরিত্র ও শিক্ষা পাশ্চাত্যের ইতিহাসের এক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
◆ সুসমাচারের লেখকেরা কি যীশুর কাহিনীকে বদলে দিয়েছেন?
কিছু সমালোচক দাবি করেন যে সুসমাচারের লেখকেরা যীশুর কাহিনী থেকে কিছু বাদ দিয়েছেন বা এর সঙ্গে কিছু বিষয় যোগ করেছেন যাতে অনেক অনেক লোকেরা খ্রীষ্টান হয়। কিন্তু সুসমাচারের বইগুলো ভাল করে পড়লে বোঝা যায় যে এই দাবি একেবারে মিথ্যে। যদি লোকেদের খ্রীষ্টান করার জন্যই এই বইগুলো লেখা হতো, তাহলে তাতে যিহুদি ও পরজাতীয় দুদলের খারাপ কাজের নিন্দা করে যা কিছু বলা হয়েছে তা লেখার কী দরকার ছিল?
উদাহরণ হিসেবে মথি ৬:৫-৭ পদের কথাই দেখুন যেখানে যীশুর কথা হুবহু বলা হয়েছে: “তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন কপটীদের ন্যায় হইও না; কারণ তাহারা সমাজ-গৃহে ও পথের কোণে দাঁড়াইয়া লোক-দেখান প্রার্থনা করিতে ভাল বাসে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে।” এখানে যীশু যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের নিন্দা করছিলেন। এরপর যীশু পরজাতীয়দেরও নিন্দা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “প্রার্থনাকালে তোমরা অনর্থক পুনরুক্তি করিও না, যেমন জাতিগণ [পরজাতীয়রা] করিয়া থাকে; কেননা তাহারা মনে করে, বাক্যবাহুল্যে তাহাদের প্রার্থনার উত্তর পাইবে।” এভাবে যিহূদি ও পরজাতীয়দের নিন্দা করার কথা হুবহু লিখে সুসমাচার লেখকেরা দেখিয়েছেন যে লোকেদের ধর্ম পরিবর্তন করার ইচ্ছা তাদের ছিল না। তারা শুধু যীশু খ্রীষ্ট তাদের যা শিখিয়েছিলেন হুবহু তা-ই লিখেছিলেন।
এছাড়াও সুসমাচারের বইয়ে দেওয়া এই ঘটনার কথাও দেখুন যেখানে বলা হয়েছে যে যীশুর আবার বেঁচে ওঠার খবর প্রথমে স্ত্রীলোকেরা দিয়েছিল। কিছু স্ত্রীলোকেরা যীশুর কবর দেখতে এসেছিল ও তারা দেখেছিল যে তা খালি পড়ে আছে। (মার্ক ১৬:১-৮) গ্রেগ ইস্টারবুক বলেন: “প্রাচীন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের সমাজে স্ত্রীলোকেদের কথায় কেউ বিশ্বাস করত না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে দুজন পুরুষ যদি একজন স্ত্রীকে ব্যভিচার করার দোষ দিত, তাহলে তাদের সাক্ষ্যে বিশ্বাস করা হতো কিন্তু স্ত্রীলোকেরা একজন পুরুষকে দোষী করতে পারত না।” আর তাই যীশু খ্রীষ্টের শিষ্যরাও স্ত্রীলোকেদের কথা বিশ্বাস করেননি! (লূক ২৪:১১) তাই এটা বলা ভুল হবে যে সুসমাচারের বইয়ের লেখকেরা বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখেছেন।
কিছু লোকেরা বলেন যে পৌল ও অন্য প্রেরিতরা তাদের বইয়ে নিজেদের মনগড়া কথা এত চালাকির সঙ্গে লিখেছেন যে মনে হয় যেন এই কথাগুলো যীশুই বলেছিলেন। কিন্তু তা যদি সত্যি হতো, তাহলে সুসমাচারের বই ও প্রেরিতদের পত্রগুলোর অনেক কথাই এক হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তা হয়নি। যীশু যে দৃষ্টান্তগুলো দিয়েছিলেন তা সুসমাচারের বইগুলো ছাড়া আর কোথাও নেই। তাই নিশ্চিন্তে বলা যায় যে সুসমাচারের বইগুলোতে যীশু যা বলেছিলেন তা-ই লেখা আছে, কোনকিছু বানিয়ে লেখা হয়নি।
◆ সুসমাচারের বইগুলোর মধ্যে যে অমিল আছে বলে মনে করা হয় সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়?
অনেক দিন থেকেই সমালোচকেরা বলে আসছেন যে সুসমাচারের বইগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে মেলে না। ঐতিহাসিক ডুরান্ট ঠিক করেছিলেন যে সুসমাচারের বইগুলোকে তিনি নিজে পড়ে দেখবেন যে সেগুলোর মধ্যে সত্যিই কোন অমিল আছে কিনা। তিনি বলেছিলেন যে এগুলোকে ওপর ওপর পড়ে মনে হয় যে একটা আরেকটার সঙ্গে মেলে না কিন্তু তিনি এও বলেছিলেন: “অমিল শুধু মামুলি কিছু বিষয়ে আছে কিন্তু মূল বিষয়বস্তুতে কোন অমিল নেই। আসলে ভালভাবে যাচাই করলে দেখা যায় যে চারটে সুসমাচারের বই মিলে একই কথা বলে আর সেগুলো যীশু খ্রীষ্টের সম্বন্ধে সত্যি কথাই বলে।”
সুসমাচারের বইগুলোর মধ্যে যে অমিল আছে বলে মনে হয় তা খুব সহজেই ঠিক করে নেওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে মথি ৮:৫ পদের কথাই ধরুন যেখানে লেখা আছে: “একজন শতপতি তাঁহার [যীশুর] নিকটে আসিয়া বিনতিপূর্ব্বক” তার দাসকে সুস্থ করে দিতে বলেছিলেন। আবার লূক ৭:৩ পদে আমরা পড়ি যে শতপতি “কএক জন প্রাচীনকে দিয়া [যীশুর] কাছে নিবেদন করিয়া পাঠাইলেন, যেন তিনি আসিয়া তাঁহার দাসকে বাঁচান।” শতপতি তার কয়েকজন প্রাচীনকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, মথি বলেন যে শতপতি নিজে যীশুর কাছে অনুরোধ করেছিলেন আর মথির একথা বলার কারণ হল যে শতপতি প্রাচীনদের দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন অর্থাৎ প্রাচীনেরা তার হয়ে কথা বলেছিলেন। এটা শুধু একটা উদাহরণ, যা দেখায় যে সুসমাচারে পাওয়া অমিলগুলো সহজেই ঠিক করে নেওয়া যায়।
কিছু পণ্ডিতেরা বলেন যে সুসমাচারের বইগুলোতে যা লেখা আছে সেগুলোকে সত্যি বলার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের নেই। কিন্তু একথা কি সত্যি? ডুরান্ট বলেন: “আসলে গির্জার লোকেরা সুসমাচারের বইগুলোকে পরীক্ষা করার জন্য এতই কড়া নিয়ম বানিয়েছে যে সেই নিয়ম দিয়ে যদি অন্য বই সত্যি কিনা পরীক্ষা করা হয়, তাহলে সেগুলো একেবারেই মিথ্যে বলে প্রমাণ হবে। আর তাহলে হামুরাবি, ডেভিড ও সক্রেটিসের মতো বড় বড় লোকেদের জীবন রূপকথা হয়ে যাবে। সুসমাচারের লেখকদের নিজেদেরও অনেক দুর্বলতা ছিল কিন্তু তারা তাদের দুর্বলতাকে লুকাননি বরং খোলাখুলি বলেছিলেন। তারা এমন কিছু ঘটনার কথা লিখেছিলেন যা সাধারণ লেখকেরা হয়তো চেপে যেতেন যেমন, ঈশ্বরের রাজ্যে উঁচু পদ পাওয়ার জন্য প্রেরিতদের মধ্যে ঝগড়া, যীশুকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের পালিয়ে যাওয়া, পিতরের যীশুকে অস্বীকার . . .। এই ঘটনাগুলো দেখায় যে সুসমাচারের বইয়ে লেখা ঘটনাগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।”
◆ আজকের দিনের খ্রীষ্টধর্মের সঙ্গে সুসমাচারের বইগুলোতে পাওয়া যীশুর শিক্ষার কি কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়?
যীশুকে নিয়ে করা আলোচনা সভায় বলা হয়েছিল যে সুসমাচারের বইগুলো নিয়ে তারা যে গবেষণা করেছেন “গির্জার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই।” ঐতিহাসিক ওয়েলস বলেন যে গির্জার শিক্ষা এবং সুসমাচারের বইগুলোতে লেখা যীশুর শিক্ষার মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ রয়েছে। তিনি লিখেছিলেন: “আজকে গির্জায় ত্রিত্বের শিক্ষা দেওয়া হয় কিন্তু যীশুর প্রেরিতেরা ত্রিত্ব সম্বন্ধে কখনও কিছু শোনেননি ও যীশু তাদেরকে এমন কিছু কখনও শেখাননি। . . . [যীশু] তাঁর মা মরিয়মকে উপাসনা করার আজ্ঞাও দেননি বা বলেননি যে তিনি দেবী বা স্বর্গের রানি। কিন্তু আজ খ্রীষ্টানেরা মেরির উপাসনা করে। আর এইরকমই অনেক মিথ্যা শিক্ষা আজ খ্রীষ্টান ধর্মে দেখতে পাওয়া যায়।” তাই খ্রীষ্টান ধর্মের শিক্ষা দিয়ে সুসমাচারের বইগুলোকে বিচার করা ঠিক হবে না।
আপনি কী বলেন?
এতসব প্রমাণ দেখার পর আপনার কী মনে হয়? এরপরেও এটা বলা কি ঠিক হবে যে সুসমাচারের প্রেরিত ১৭:১১) আর তাহলেই আপনি দেখতে পাবেন যে এই বইগুলোতে কোন অমিল নেই। এতে কোন কথাই লুকোনো হয়নি। আর যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে এগুলো একেবারে ঠিক কথা বলে। আর তখনই আপনি বুঝতে পারবেন যে যীশুর ঘটনা একেবারে সত্যি। *
বইগুলো শুধুই মনগড়া গল্প? অনেকে মনে করেন যে সুসমাচারের বইগুলো সত্যি কিনা তা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বা সন্দেহ করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই ও তা বিশ্বাস করার মতো নয়। সুসমাচারের বইগুলো সম্বন্ধে ঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাইলে আপনাকে নিজেকে এগুলো মন দিয়ে ও খোলা মনে পড়তে হবে। (আপনি যদি মন দিয়ে বাইবেল পড়েন ও এর পরামর্শ জীবনে কাজে লাগান, তাহলে আপনি দেখবেন যে এটা কীভাবে আপনার জীবনকে বদলে দেয় ও আপনার জীবন কত সুন্দর হয়ে ওঠে। (যোহন ৬:৬৮) বিশেষ করে সুসমাচারের বইগুলোতে লেখা যীশুর কথাগুলো মানলে তা হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে আপনি শিখতে পারবেন যে যারা ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে চলে সেই মানুষদের জন্য সামনে কত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।—যোহন ৩:১৬; ১৭:৩, ১৭.
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
সত্য সাক্ষ্যের প্রমাণ
কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার একজন লেখক যিনি আগে বাইবেলের সমালোচনা করতেন তিনি বলেন: “জীবনে প্রথমবার আমি একজন লেখকের দায়িত্ব পালন করি: আমি প্রমাণগুলোকে যাচাই করি। . . . [সুসমাচারের বইগুলো] পড়ার সময় আমি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে আমি যা পড়ছি তা গল্প ও মনগড়া কাহিনী নয়। কিন্তু সেগুলো সত্যিকারের ঘটনা। এগুলোকে সেই লোকেরা লিখেছিলেন যারা যীশুর সঙ্গে ছিলেন বা চাক্ষুষ সাক্ষিদের কাছ থেকে শুনেছিলেন। চাক্ষুষ সাক্ষিদের কথায় বিশেষ কিছু থাকে আর সেটা আমরা সুসমাচারের বইগুলোতে দেখতে পাই।”
একইভাবে ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন সাহিত্যের অধ্যাপক ই. এম বিলক্লক বলেন: “আমি নিজেকে একজন ঐতিহাসিক বলে মনে করি কারণ আমি একজন ঐতিহাসিকের মতো করে সব গ্রন্থকে অধ্যয়ন করি। আর আমি আপনাদের বলতে চাই যে খ্রীষ্টের জীবন, মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের বিষয়ে এত বেশি প্রমাণ আছে যা ইতিহাসের আর কোন ঘটনার জন্য নেই।”
[পাদটীকাগুলো]
^ বাইবেল—ঈশ্বরের বাক্য অথবা মানুষের (ইংরেজি) বইয়ের ৫ ও ৭ অধ্যায় এবং সমস্ত লোকের জন্য একটি পুস্তক (ইংরেজি) ব্রোশারটা দেখুন। এই বই ও ব্রোশার ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসইটি প্রকাশ করেছে।
[৮, ৯ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্রগুলো]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
ফৈনীকিয়া
গালীল
যর্দ্দন নদী
যিহূদিয়া
[চিত্রগুলো]
“খ্রীষ্টের জীবন, মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের বিষয়ে এত বেশি প্রমাণ আছে যা ইতিহাসের আর কোন ঘটনার জন্য নেই।”—অধ্যাপক ই. এম. বিলক্লক
[সৌজন্যে]
পিছনের মানচিত্র: Based on a map copyrighted by Pictorial Archive (Near Eastern History) Est. and Survey of Israel.