সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমরা সকলে ভ্রাতা”

“তোমরা সকলে ভ্রাতা”

“তোমরা সকলে ভ্রাতা”

“তোমরা ‘রব্বি’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের গুরু এক জন, এবং তোমরা সকলে ভ্রাতা।”মথি ২৩:৮.

১. আমাদের কোন্‌ বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত?

 প্রাচ্যের এক বোন, অস্ট্রেলিয়ার একজন মিশনারিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কে বেশি সম্মান পাওয়ার যোগ্য, একজন বেথেলকর্মী না একজন মিশনারি?” একজন মিশনারি অন্য দেশে গিয়ে সেবা করেন আর একজন বেথেল কর্মী তারই দেশে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির শাখা অফিসে কাজ করেন। তাই ওই বোন জানতে চেয়েছিলেন যে কাকে বেশি সম্মান দেখানো উচিত। এই বোনের প্রশ্ন শুনে ওই মিশনারি বোন খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন কারণ প্রশ্নটা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে কেউ কেউ পদ নিয়ে বা কে কী কাজ করে সেই বিষয়টাকে বড় করে দেখে। আর কে বড় এই প্রশ্নটা তখনই মনে আসে যখন লোকেরা জানতে চায় যে কে কোন্‌ পদে আছে এবং তাদের কতটুকু প্রভাব বা ক্ষমতা আছে।

২. আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের আমরা কোন্‌ চোখে দেখব?

কে বড় এই প্রশ্নটা নতুন কিছু নয়। কারণ এই নিয়ে যীশুর শিষ্যদের মধ্যেও অনেকবার তর্কবিতর্ক হয়েছিল। (মথি ২০:২০-২৪; মার্ক ৯:৩৩-৩৭; লূক ২২:২৪-২৭) তারা যিহুদি ধর্ম থেকে এসেছিলেন আর এই ধর্মের লোকেরা পদ বা মর্যাদা নিয়ে খুব বেশি ভাবত। যীশু তা জানতেন আর তাই এই কথা মাথায় রেখে তিনি তাঁর শিষ্যদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা ‘রব্বি’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের গুরু এক জন, এবং তোমরা সকলে ভ্রাতা।” (মথি ২৩:৮) “রব্বি” ছিল একটা ধর্মীয় খেতাব যার মানে হল “শিক্ষক।” এই সম্বন্ধে বাইবেল পণ্ডিত আ্যলবার্ট বার্নস্‌ বলেছিলেন, “কাউকে রব্বি বলে ডাকলে সে নিজেকে বড় মনে করত ও তার মধ্যে কিছুটা অহংকার চলে আসত। আর যারা রব্বি হতে পারত না তারা ওই লোকেদের হিংসা করত এবং নিজদেরকে ছোট মনে করত; রব্বিদের মনোভাব ও ধ্যানধারণা ‘খ্রীষ্টের সরল শিক্ষার’ চেয়ে একেবারে আলাদা ছিল।” তাই খ্রীষ্টানেরা মণ্ডলীর অধ্যক্ষদের কাউকে “প্রাচীন” নাম ধরে ডাকেন না। (ইয়োব ৩২:২১, ২২) অন্যদিকে, যে প্রাচীনেরা যীশুর পরামর্শকে মেনে চলেন তারা মণ্ডলীর অন্যান্য ভাইবোনদেরকে সম্মান করেন, ঠিক যেমন যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের এবং যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের সম্মান দেখান।

যিহোবা ও যীশুর উদাহরণ

৩. যিহোবা তাঁর আত্মিক পুত্রদের কীভাবে সম্মান দেখিয়েছিলেন?

যিহোবা হলেন “পরাৎপর।” কিন্তু তারপরও সৃষ্টির শুরু থেকেই তিনি তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাদেরকে সম্মান দেখিয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করার সময় তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে “কার্য্যকারী” হিসেবে সঙ্গে নিয়েছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:২৭-৩০; আদিপুস্তক ১:২৬) যিহোবা যখন দুষ্ট রাজা আহাবকে মেরে ফেলবেন বলে ঠিক করেছিলেন তখন তাকে কীভাবে মারা যায় সেই সম্বন্ধে তিনি তাঁর দূতেদের জিজ্ঞেস করেছিলেন।—১ রাজাবলি ২২:১৯-২৩.

৪, ৫. যিহোবা কীভাবে মানুষকে সম্মান দেখান?

যিহোবা সারা বিশ্বের সার্বভৌম রাজা। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩:২৪) কোন ব্যাপারে মানুষদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়ার কোন দরকারই তাঁর নেই। কিন্তু তবুও তিনি মানুষদের কথা শোনার জন্য নিজেকে অবনত করেন। একজন গীতরচক গেয়েছিলেন: “কে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর তুল্য? তিনি ঊদ্ধের্ব সমাসীন; তিনি অবনত হইয়া দৃষ্টিপাত করেন আকাশে ও পৃথিবীতে। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন।”—গীতসংহিতা ১১৩:৫-৮.

সদোম ও ঘমোরাকে ধ্বংস করার আগে যিহোবা অব্রাহামকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং তার কথা শুনেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৮:২৩-৩৩) যদিও যিহোবা আগে থেকেই জানতেন যে অব্রাহাম আসলে কী বলতে চান কিন্তু তবুও তিনি ধৈর্য ধরে অব্রাহামের কথা শুনেছিলেন এবং তার যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন।

৬. হবক্‌কূকের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যিহোবা যখন তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন তার ফল কী হয়েছিল?

যিহোবা হবক্‌কূকের কথাও শুনেছিলেন। হবক্‌কূক যিহোবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, কত কাল আমি আর্ত্তনাদ করিব, আর তুমি শুনিবে না?” যিহোবা কি ধরে নিয়েছিলেন যে এই প্রশ্ন করে হবক্‌কূক তাঁর কর্তৃত্ব করার অধিকার নিয়ে আপত্তি তুলেছে? না, তিনি হবক্‌কূকের প্রশ্ন করাকে ঠিক মনে করেছিলেন আর তাই তিনি তাকে তাঁর উদ্দেশ্য জানিয়েছিলেন। যিহোবা তাকে বলেছিলেন যে কল্‌দীয়দের দিয়ে তিনি তাঁর বিচার আনবেন। তিনি ভাববাদীকে এই বলে সাহস জুগিয়েছিলেন যে ‘এই বিচার অবশ্য উপস্থিত হইবে।’ (হবক্‌কূক ১:১, ২, ৫, ৬, ১৩, ১৪; ২:২, ৩) হবক্‌কূকের ভাবনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এবং তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যিহোবা ভাববাদীকে সম্মান দেখিয়েছিলেন। আর এর ফলে তার মন থেকে সমস্ত দুশ্চিন্তা চলে গিয়েছিল ও তিনি খুশি মনে যিহোবার ওপর পুরো ভরসা রেখেছিলেন যে তিনি পরিত্রাণ করতে পারেন। এই বিষয়টা, ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা হবক্‌কূকের বইয়ে লেখা আছে, যা যিহোবার ওপর আমাদের ভরসাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।—হবক্‌কূক ৩:১৮, ১৯.

৭. সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চশত্তমীর দিনে পিতরের কাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

অন্যদের সম্মান দেখানোর ব্যাপারে যীশু খ্রীষ্টও সুন্দর উদাহরণ রেখেছিলেন। যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আপন . . . পিতার সাক্ষাতে তাহাকে অস্বীকার করিব।” (মথি ১০:৩২, ৩৩) কিন্তু, যে রাতে যীশুকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সময় সব শিষ্যরা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং প্রেরিত পিতর তাঁকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন। (মথি ২৬:৩৪, ৩৫, ৬৯-৭৫) কিন্তু যীশু কি পিতরকে অস্বীকার করেছিলেন? না, যীশু শুধু পিতরের বাইরের চেহারাই দেখেননি কিন্তু পিতরের মন দেখেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে পিতর মন থেকে অনুতপ্ত হয়েছিলেন। (লূক ২২:৬১, ৬২) মাত্র ৫১ দিন পর পঞ্চাশত্তমীর দিনে যীশু খ্রীষ্ট এই অনুতপ্ত প্রেরিতকে, তাঁর ১২০ জন শিষ্যের প্রতিনিধি হওয়ার এবং ‘রাজ্যের প্রথম চাবিটা’ ব্যবহার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (মথি ১৬:১৯; প্রেরিত ২:১৪-৪০) যীশু পিতরকে ‘তাঁর ভ্রাতৃগণকে ফিরানোর ও সুস্থির করিবার’ সুযোগ দিয়েছিলেন আর তা করে তিনি পিতরকে সম্মান দেখিয়েছিলেন।—লূক ২২:৩১-৩৩.

পরিবারের লোকেদের সম্মান দেখানো

৮, ৯. স্ত্রীকে সম্মান দেখাতে গিয়ে একজন স্বামী কীভাবে যিহোবা ও যীশুকে অনুকরণ করতে পারেন?

স্বামী ও বাবামাদেরকে যিহোবা কর্তৃত্ব করার অধিকার দিয়েছেন। আর তারা তাদের এই কর্তৃত্ব যিহোবা ও যীশু খ্রীষ্টের মতো খাটালে ভাল করবেন। পিতর পরামর্শ দিয়েছিলেন: “হে স্বামিগণ, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের [স্ত্রীদের] সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর।” (১ পিতর ৩:৭) একটা চিনামাটির পাত্রের কথা চিন্তা করুন। কাঠের পাত্রের চেয়ে চিনামাটির পাত্র অনেক ভঙ্গুর। তাই চিনামাটির পাত্রটা নাড়াচাড়া করার সময় আপনি কি তা অনেক যত্ন নিয়ে করবেন না? একজন স্বামীও যিহোবার মতো করে পরিবারের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় স্ত্রীর মতামত শুনতে পারেন। মনে করে দেখুন যে যিহোবা অব্রাহামের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। অসিদ্ধ হওয়ায় একজন স্বামী হয়তো কোন ব্যাপারে খুঁটিনাটি সবদিক ভেবে নাও দেখতে পারেন। তাই, স্বামী যদি তার স্ত্রীকে সম্মান দেখিয়ে তার কথা মন দিয়ে শোনেন, তাহলে সেটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না?

আর পুরুষশাসিত সমাজে একজন স্বামীর মনে রাখা উচিত যে তার স্ত্রী হয়তো মনের কথা খুলে বলতে সংকোচ করতে পারে। তাই পৃথিবীতে থাকাকালে যীশু খ্রীষ্ট তাঁর ভাবী বধূ শ্রেণীর সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করেছিলেন, একজন স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে সেইরকম করতে পারেন। যীশু তাদেরকে ভালবাসতেন এবং তারা বলার আগেই তাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলো মেটাতেন। (মার্ক ৬:৩১; যোহন ১৬:১২, ১৩; ইফিষীয় ৫:২৮-৩০) আপনার স্ত্রী আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য কী কী করেন তা দেখুন ও এর জন্য তাকে ধন্যবাদ দিন এবং আপনি যে কৃতজ্ঞ তা আপনার কাজের মধ্যে দিয়ে দেখান। যিহোবা ও যীশু দুজনেই যোগ্য ব্যক্তিদের কাজ দেখে উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন, তাদের প্রশংসা করেছিলেন এবং তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন। (১ রাজাবলি ৩:১০-১৪; ইয়োব ৪২:১২-১৫; মার্ক ১২:৪১-৪৪; যোহন ১২:৩-৮) প্রাচ্যে একজন বোনের স্বামী খ্রীষ্টান হওয়ার পর কী করেছিলেন সেই বিষয়ে ওই বোন বলেছিলেন: “আগে আমার স্বামী সবসময় আমাকে পেছনে ফেলে আগে আগে হাঁটত আর ব্যাগ, জিনিসপত্র সমস্তকিছু আমাকেই নিতে হতো। কিন্তু এখন সে আমার ব্যাগগুলো নিয়ে যায় ও আমি ঘরে যে কাজ করি তার জন্য আমাকে ধন্যবাদও জানায়!” ধন্যবাদ জানিয়ে দুটো মিষ্টি কথা বললে আপনার স্ত্রী বুঝতে পারবে যে আপনি তাকে অনেক ভালবাসেন ও তাকে আপনার দরকার আছে।—হিতোপদেশ ৩১:২৮.

১০, ১১. যিহোবা বিদ্রোহী ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করেছিলেন তার থেকে বাবামারা কী শিখতে পারেন?

১০ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময়, বিশেষ করে তাদেরকে শাসন করার সময় বাবামাদের ঈশ্বরের উদাহরণ মেনে চলা উচিত। খারাপ পথ থেকে ফেরার জন্য “সদাপ্রভু . . . ইস্রায়েলের ও যিহূদার কাছে সাক্ষ্য দিতেন” কিন্তু তারা “আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিত।” (২ রাজাবলি ১৭:১৩-১৫) ইস্রায়েলীয়রা এমনকি “মুখে তাঁহার চাটুবাদ করিল, জিহ্বাতে তাঁহার নিকটে মিথ্যা কহিল।” অনেক বাবামারা হয়তো দেখতে পান যে তাদের ছেলেমেয়েরাও মাঝে মাঝে এরকম করে। ইস্রায়েলীয়রা “ঈশ্বরের পরীক্ষা” করেছিল, তাঁকে দুঃখ দিয়েছিল এবং তাঁর মনে কষ্ট দিয়েছিল। কিন্তু যিহোবা “স্নেহময়, তাই অপরাধ ক্ষমা করিলেন, ধ্বংস করিলেন না।”—গীতসংহিতা ৭৮:৩৬-৪১.

১১ আর যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের এই অনুরোধ পর্যন্ত করেছিলেন: “আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি; তোমাদের পাপ সকল সিন্দূরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হইলেও মেষলোমের ন্যায় হইবে।” (যিশাইয় ১:১৮) যদিও যিহোবা কোন ভুল করেননি কিন্তু তবুও তিনি বিদ্রোহী জাতিকে তাদের ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য ডেকেছিলেন। বাবামাদের জন্য কত সুন্দর এক উদাহরণ! যখন ছেলেমেয়েরা কোন ভুল করে তখন তা শুধরে দেওয়ার সময় তাদের কথাও শুনুন এবং কেন তাদের সংশোধন হতে হবে তা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন আর এভাবে তাদেরকে সম্মান দেখান।

১২. (ক) কেন আমাদের যিহোবার চেয়ে ছেলেমেয়েদের বেশি সম্মান করা উচিত নয়? (খ) ছেলেমেয়েদের ভুল শুধরে দেওয়ার সময় আমরা যদি তাদের সম্মান করতে চাই, তাহলে কী করা দরকার?

১২ তবে কখনও কখনও ছেলেমেয়েদের কড়া শাসনের দরকার হয়। বাবামারা নিশ্চয়ই এলির মতো হতে চাইবেন না, যিনি ‘যিহোবা অপেক্ষা আপন পুত্ত্রদিগকে অধিক গৌরবান্বিত [সম্মান] করেছিলেন।’ (১ শমূয়েল ২:২৯) তবে ছেলেমেয়েদেরকে বোঝানো দরকার যে বাবামা তাদেরকে ভালবাসেন বলেই তাদের ভুল শুধরে দেন। পৌল বাবাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) এটা ঠিক যে বাবার শাসন করার অধিকার আছে কিন্তু তাই বলে তিনি যেন এত কড়া না হন যাতে ছেলেমেয়েরা রেগে যায়। তিনি যখন শান্তভাবে শাসন করবেন তখন তা দেখাবে যে তিনি ছেলেমেয়েদের সম্মান দেখান। হ্যাঁ, এইজন্য বাবামাকে সময় দিতে হয় ও অনেক চেষ্টা করতে হয়। কিন্তু তারা যদি তা করেন, তাহলে তাদের সমস্ত ত্যাগস্বীকার সার্থক হবে।

১৩. বাইবেল আমাদেরকে বয়স্ক বাবামাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে বলে?

১৩ পরিবারের লোকেদের সম্মান করা বলতে শুধু স্ত্রী ও সন্তানদের মর্যাদা দেওয়াই বোঝায় না। একটা জাপানি প্রবাদ বলে, “বয়স হয়ে গেলে ছেলেমেয়েদের কথা শুনুন।” এই প্রবাদের মূল কথাটা হল, বয়স্ক বাবামাদের তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর অতিরিক্ত কর্তৃত্ব খাটানো উচিত নয় এবং ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে বাবামাদের তাদের কথা শোনা উচিত। এটা ঠিক যে বাইবেল বাবামাদেরকে তাদের ছেলেমেয়েদের কথা শুনে তাদেরকে সম্মান করতে বলে কিন্তু তাই বলে ছেলেমেয়েদের তাদের বয়স্ক বাবামাকে অসম্মান করা উচিত নয়। হিতোপদেশ ২৩:২২ পদ বলে, “তোমার মাতা বৃদ্ধা হইলে তাঁহাকে তুচ্ছ করিও না।” রাজা শলোমন এই উপদেশ মেনে চলতেন আর তার মা যখন তার কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে এসেছিলেন তখন তিনি তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন। শলোমন তার বয়স্কা মা বৎশেবার জন্য তার ডান দিকে আসন বসিয়েছিলেন এবং তিনি তাকে যা বলতে এসেছিলেন তা মন দিয়ে শুনেছিলেন।—১ রাজাবলি ২:১৯, ২০.

১৪. মণ্ডলীর বয়স্ক ভাইবোনদের আমরা কীভাবে সম্মান দেখাতে পারি?

১৪ আমাদের বড় আধ্যাত্মিক পরিবারে বয়স্ক ভাইবোনদের “শ্রেষ্ঠ জ্ঞান” করার বিরাট সুযোগ আমাদের আছে। (রোমীয় ১২:১০) যুবক বয়সে তারা যতখানি কাজ করতেন এখন ততখানি করতে পারেন না বলে হয়তো মাঝে মাঝে তাদের মন ভেঙে যেতে পারে। (উপদেশক ১২:১-৭) যেমন একজন বয়স্কা অভিষিক্ত বোন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় কোন কাজ করতে পারতেন না। শুয়ে থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন: “বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি কেবল মৃত্যুর দিন গুণছিলাম যাতে স্বর্গে গিয়ে আমি আবার কাজ করতে পারি।” এইরকম বয়স্ক ভাইবোনদেরকে আমরা যদি সম্মান করি ও তাদের কাজের জন্য উপলব্ধি দেখাই, তাহলে তারা অনেক সান্ত্বনা পাবেন। ইস্রায়েলীয়দের বলা হয়েছিল: “তুমি পক্বকেশ প্রাচীনের সম্মুখে উঠিয়া দাঁড়াইবে, বৃদ্ধ লোককে সমাদর করিবে।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:৩২) বয়স্ক ব্যক্তিদের বুঝতে দিন যে তাদের এখনও দরকার আছে আর আমরা তাদের কাজকে অনেক উপলব্ধি করি। ‘উঠিয়া দাঁড়ানো’ বলতে শুধু তাদের দেখে উঠে দাঁড়ানোই নয় বরং তাদের কাছে বসে তাদের সঙ্গে কথা বলা ও আগে তারা যে কাজ করেছেন সেগুলো মন দিয়ে শোনাকেও বোঝায়। আমরা যখন তা করব তখন তা দেখাবে যে আমরা বয়স্কদের সম্মান করি এবং এতে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনেও উন্নতি করতে পারব।

‘সমাদরে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর’

১৫. মণ্ডলীর ভাইবোনদেরকে সম্মান দেখানোর জন্য প্রাচীনেরা কী করতে পারেন?

১৫ মণ্ডলীর প্রাচীনেরা যখন সুন্দর উদাহরণ রাখেন তখন অন্য ভাইবোনেরা তাদের দেখে শেখেন। (১ পিতর ৫:২, ৩) যদিও প্রাচীনরা খুবই ব্যস্ত থাকেন কিন্তু তারপরও তারা ছোটদের সঙ্গে, পরিবারের মস্তকদের সঙ্গে, একক মায়েদের সঙ্গে, গৃহবধূদের সঙ্গে এবং বয়স্ক ভাইবোনদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলেন, তা সে তাদের কোন সমস্যা থাকুক কিংবা নাই থাকুক। মণ্ডলীর ভাইবোনদের কথা প্রাচীনেরা মন দিয়ে শোনেন এবং তারা মণ্ডলীর জন্য যতটুকু কাজ করেন তার জন্য তাদের প্রশংসা করেন। মণ্ডলীর কোন ভাই বা বোনের কাজ দেখে কোন প্রাচীন যদি তার প্রশংসা করেন, তাহলে তিনি যিহোবাকে অনুকরণ করছেন কারণ যিহোবাও তাঁর সৃষ্ট মানুষের কাজের জন্য উপলব্ধি দেখান।

১৬. প্রাচীন ও মণ্ডলীর অন্যান্য ভাইবোনদেরকে কেন আমরা একইরকম সম্মান দেখাব?

১৬ যিহোবাকে অনুকরণ করে প্রাচীনেরা পৌলের পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর উদাহরণ রাখেন। পৌল বলেছিলেন: “ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০) যে সমস্ত দেশে পদ বা মর্যাদাকে খুব বড় করে দেখা হয় সেখানকার প্রাচীনদের জন্য অন্যকে সম্মান দেখানো হয়তো মুশকিল হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, প্রাচ্যের একটা দেশে “ভাই” শব্দের জন্য দুটো আলাদা শব্দ আছে, একটা সম্মানীয় ব্যক্তিদের জন্য ও আরেকটা সাধারণ লোকেদের জন্য। কিছুদিন আগেও ভাইবোনেরা প্রাচীনদের ও বয়স্ক ব্যক্তিদের বিশেষ শব্দটা দিয়ে ডাকতেন আর অন্যান্য ভাইদের সাধারণ শব্দটা দিয়েই ডাকতেন। কিন্তু, তাদেরকে বলা হয়েছিল তারা যেন সবার জন্য ওই সাধারণ শব্দটাই ব্যবহার করেন কারণ যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “তোমরা সকলে ভ্রাতা।” (মথি ২৩:৮) অন্যান্য দেশে হয়তো শ্রেণী ভেদাভেদ এতটা নেই কিন্তু তারপরও আমাদের সকলের সাবধান হওয়া দরকার, যাতে আমরা মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ না করি।—যাকোব ২:৪.

১৭. (ক) প্রাচীনদের কেন এমন হওয়া উচিত যাতে তাদের কাছে সহজেই যাওয়া যায়? (খ) মণ্ডলীর ভাইবোনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় প্রাচীনেরা কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারেন?

১৭ এটা ঠিক যে পৌল প্রাচীনদেরকে ‘দ্বিগুণ সমাদর’ করতে বলেছিলেন কিন্তু তারপরও আমাদের মনে রাখা দরকার যে তারা আমাদের ভাই। (১ তীমথিয় ৫:১৭) আমরা যদি মহাবিশ্বের সার্বভৌম প্রভুর ‘অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে সাহসপূর্ব্বক উপস্থিত হতে’ পারি, তাহলে আমাদের কি সহজেই প্রাচীনদের কাছে যেতে পারা উচিত নয়, যারা যিহোবার মতোই কাজ করতে চান? (ইব্রীয় ৪:১৬; ইফিষীয় ৫:১) মণ্ডলীর ভাইবোনেরা তাদের কাছে পরামর্শ বা উপদেশ চাইতে আসেন কিনা তা দেখে প্রাচীনরা নিজের বিষয়ে বুঝতে পারেন যে তাদের কাছে কতটা সহজে আসা যায়। যিহোবা তাঁর বিভিন্ন কাজে মানুষদের যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা থেকে শিখুন। অন্যদেরকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি তাদের সম্মান দেখান। কোন সাক্ষি ভাই বা বোন যদি এমন কোন পরামর্শ দেন যেটা হয়তো বাস্তবসম্মত নয় কিন্তু তবুও প্রাচীনদের তাদের পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ জানানো উচিত ও তা যাচাই করে দেখা উচিত। অব্রাহামের প্রশ্ন ও হবক্‌কূকের আর্তনাদ শুনে যিহোবা কী করেছিলেন তা মনে করে দেখুন।

১৮. যাদের শুধরে দেওয়া দরকার তাদেরকে পরামর্শ দেওয়ার সময় প্রাচীনেরা কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারেন?

১৮ কিছু ভাইবোনদের শুধরে দেওয়া দরকার হতে পারে। (গালাতীয় ৬:১) কিন্তু তারপরও তারা যিহোবার চোখে খুবই মূল্যবান এবং তারা আমাদের সম্মান পাওয়ার যোগ্য। একজন সাক্ষি বলেছিলেন: “কেউ যদি আমাকে সম্মান দেখিয়ে পরামর্শ দেন, তাহলে আমি তার কাছে সহজেই যেতে পারি।” সম্মানের সঙ্গে পরামর্শ দেওয়া হলে বেশির ভাগ লোকেরাই তা মেনে নেন। যে ব্যক্তিরা ভুল করেছেন তাদের কথা মন দিয়ে শুনতে হয়তো সময় দরকার কিন্তু তবুও যদি তা করা হয়, তাহলে তারা খুব সহজেই পরামর্শ মেনে নেন। যিহোবা দয়া দেখিয়ে ইস্রায়েল জাতিকে যে বার বার যুক্তি দেখিয়েছিলেন তা মনে রাখুন। (২ বংশাবলি ৩৬:১৫; তীত ৩:২) পরামর্শ দেওয়ার সময় যদি সহানুভূতি দেখানো হয় ও অন্যের কথা চিন্তা করা হয়, তাহলে তারা সহজেই পরামর্শ মেনে নেবেন।—হিতোপদেশ ১৭:১৭; ফিলিপীয় ২:২, ৩; ১ পিতর ৩:৮.

১৯. যারা খ্রীষ্টান নন তাদেরকে আমরা কোন্‌ চোখে দেখব?

১৯ শুধু খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরই নয় কিন্তু বাইরের লোকেদেরও আমাদের সম্মান দেখানো উচিত। এই লোকেরা হয়তো আমাদের কথা তাড়াতাড়ি মেনে নাও নিতে পারেন কিন্তু তবুও আমাদের ধৈর্য ধরা দরকার এবং মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য সম্মান তাদের দেওয়া দরকার। ‘কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা যিহোবার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।’ (২ পিতর ৩:৯) আমাদেরও কি যিহোবার মতোই মনোভাব থাকা উচিত নয়? আমরা যদি সবার সঙ্গে বন্ধুর মতো ব্যবহার করি, তাহলে তাদের কাছে প্রচার করার পথ সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বিপদ আসতে পারে এমন লোকেদের সঙ্গে আমাদের মেলামেশা করা উচিত নয়। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) তবুও তাদেরকে ঘৃণার চোখে না দেখে আমরা তাদের সঙ্গে “সৌজন্য ব্যবহার” করতে পারি।—প্রেরিত ২৭:৩.

২০. যিহোবা ও যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণ দেখে আমরা কী করতে চাইব?

২০ হ্যাঁ, যিহোবা ও যীশু খ্রীষ্ট আমাদের প্রত্যেককে সম্মান করেন। আমরা সবাই যেন মনে রাখি যে তারা দুজনে কেমন ব্যবহার করেছিলেন আর সেরকমভাবে আমরাও যেন একে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করি। আসুন আমরা সবাই আমাদের প্রভু যীশুর এই কথাগুলো মনে রাখি: “তোমরা সকলে ভ্রাতা।”—মথি ২৩:৮.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরকে আপনার কোন্‌ চোখে দেখা উচিত?

• যিহোবা ও যীশুর উদাহরণ দেখে আপনি কীভাবে অন্যদেরকে সম্মান করতে পারেন?

• স্বামী ও বাবামারা কীভাবে অন্যদেরকে সম্মান দেখাতে পারেন?

• খ্রীষ্টানদেরকে তাদের ভাই হিসেবে দেখে প্রাচীনেরা কীভাবে তাদের জন্য কাজ করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

দুটো মিষ্টি কথা বলে, ধন্যবাদ দিয়ে আপনার স্ত্রীকে সম্মান করুন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার ছেলেমেয়েদের কথা শুনে তাদের সম্মান করুন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

মণ্ডলীর ভাইবোনদের সঙ্গে সম্মান দেখিয়ে কথা বলুন