সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

 যিহোবার সাক্ষিরা কি রক্ত থেকে তৈরি কোন ওষুধ খেতে পারেন?

প্রথমেই বলতে হয় যে যিহোবার সাক্ষিরা কোনরকমেই রক্ত নেন না। তারা রক্ত সম্বন্ধে ঈশ্বরের আইন মেনে চলেন। তারা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের আইনকে তাদের নিজেদের খুশিমতো বদলানো যায় না। কিন্তু, আজকে চিকিৎসা বিজ্ঞান রক্তের চারটে মূল উপাদানগুলো যেমন লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, অনুচক্রিকা ও রক্তরসকে আলাদা আলাদা করতে পারে। শুধু তাই নয় আজকাল এই উপাদানগুলোকে আরও ছোট ছোট অংশে ভেঙে তা দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। আর তাই এই ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন ওঠে। যেমন একজন খ্রীষ্টান কি রক্তের কোন একটা উপাদান বা তার কিছু অংশ দিয়ে বানানো কোন ওষুধ খাবেন? একজন খ্রীষ্টানের জন্য এটা শুধু লাভ বা ক্ষতির প্রশ্ন নয় বরং তিনি ভাববেন যে এই বিষয়ে বাইবেল কী বলে আর এই চিকিৎসা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে?

একথা খুবই পরিষ্কার যে আমরা রক্ত নিই না। কিন্তু কেন নিই না তা জানার জন্য আসুন আমরা বাইবেল, ইতিহাস আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে রক্ত সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে সে বিষয়গুলো দেখি।

বাইবেল বলে যে যিহোবা ঈশ্বর আমাদের পূর্বপুরুষ নোহকে বলেছিলেন যে সে ও তার পরিবার যেন কোনভাবেই রক্ত না খায়। (আদিপুস্তক ৯:৩, ৪) যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে যে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন সেখানে রক্তকে পবিত্র বলে বলা হয়েছিল। যিহোবা তাদের আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “ইস্রায়েল-কুলজাত কোন ব্যক্তি, কিম্বা . . . কোন বিদেশী লোক যদি কোন প্রকার রক্ত ভোজন করে, তবে আমি সেই রক্তভোক্তার প্রতি বিমুখ হইব।” একজন ইস্রায়েলীয় ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে লঙ্ঘন করলে তার দেখা দেখি অন্যরাও তা করতে পারে। তাই ঈশ্বর বলেছিলেন: “তাহার লোকদের মধ্য হইতে তাহাকে উচ্ছিন্ন করিব।” (লেবীয় পুস্তক ১৭:১০) পরে প্রথম শতাব্দীতে যখন প্রেরিত ও প্রাচীনদের এক সভা হয়েছিল সেইসময়ও এই নিয়মকে আবারও বলা হয়েছিল যে খ্রীষ্টানদের ‘রক্ত হইতে পৃথক্‌ থাকা’ উচিত। আর এই নিয়ম মানা ততটাই জরুরি ছিল যতটা কিনা যৌন অনৈতিকতা ও প্রতিমাপূজা থেকে দূরে থাকা জরুরি।—প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯.

প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের জন্য রক্ত থেকে ‘পৃথক থাকার’ মানে কী ছিল? খ্রীষ্টানেরা কোনভাবেই রক্ত খেতেন না, তা টাটকা রক্ত বা জমাট বাধা রক্ত যাই হোক না কেন। এছাড়াও তারা গলা টিপে মারা প্রাণীর মাংসও খেতেন না। শুধু তাই নয়, রক্তযুক্ত কোন খাবারও তারা খেতেন না যেমন রক্ত দিয়ে তৈরি সসেজ। খ্রীষ্টানেরা যদি সেগুলো খেতেন, তাহলে যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করা হতো।—১ শমূয়েল ১৪:৩২, ৩৩.

এখন ইতিহাস থেকে আমরা সা.কা. দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর এক লেখক টারটুলিয়ানের লেখা কথাগুলো দেখি। তার লেখা থেকে জানা যায় যে সেইসময় লোকেরা খুব সহজেই রক্ত খেত। টারটুলিয়ান সেই উপজাতিগুলোর কথাও বলেছিলেন, যারা কোন চুক্তি করার আগে রক্ত খেত। রোমের লোকেরা রোগ সারানোর জন্য মানুষের রক্ত খেত। এইজন্য টারটুলিয়ান বলেছিলেন যে “তাই মল্লভূমিতে যখন লড়াই হতো, তখন [কিছু দর্শকেরা] অপেক্ষা করে বসে থাকত যে কখন একজনকে মেরে ফেলা হবে আর তার টাটকা রক্ত খেয়ে . . . মৃগী রোগ ভাল করা যাবে।”

অন্যদিকে খ্রীষ্টানদের জন্য রক্ত খাওয়া পাপ ছিল তা সে রোগ সারানোর জন্যও হোক না কেন। টারটুলিয়ান লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টানেরা এমনকি তাদের খাবারে পশুর রক্তও খান না। গলা টিপে মারা পশুপাখির মাংসও তারা খান না।” রোমীয়রা তা জানত আর তাই খ্রীষ্টানদের ওপর তাড়না করার জন্য তারা তাদের রক্ত মেশানো খাবার খেতে দিত। রক্তের ব্যাপারে খ্রীষ্টানদের অটল সিদ্ধান্তকে সেইসময়ে সবাই জানত কিন্তু তবুও আশ্চর্যের কথা হল যে এই খ্রীষ্টানদেরকেই দোষ দেওয়া হয়েছিল যে তারা মানুষের রক্ত খান। তাদের ওপর চাপানো এই দোষকে খণ্ডন করে টারটুলিয়ান আরও বলেছিলেন: “আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে আপনি যদি জানেনই [খ্রীষ্টানেরা] পশুর রক্ত পর্যন্ত খান না, তাহলে কী করে আপনি দাবি করতে পারেন যে তারা মানুষের রক্ত খান?”

আগেকার দিনে যেমন লোকেরা খুব সহজেই রক্ত খেত তেমনই আজকে ডাক্তাররা যখন রক্ত নিতে বলেন তখন প্রায় সব লোকেরাই সহজেই তা মেনে নেন। তারা বুঝতেই পারেন না যে রক্ত নেওয়ার সঙ্গে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিয়ম ভাঙার কী সম্পর্ক। কিন্তু আরেকদিকে যিহোবার সাক্ষিরাও আছেন। যদিও তারা বেঁচে থাকতে চান কিন্তু তাই বলে জীবন বাঁচানোর জন্য রক্ত নিয়ে তারা যিহোবার আইন ভাঙতে চান না। তাহলে চলতি চিকিৎসা ক্ষেত্রে রক্তের মূল উপাদানগুলোকে আলাদা আলাদা করার ব্যাপারে যে উন্নতি হচ্ছে তা মাথায় রেখে যিহোবার সাক্ষিরা কী করবেন?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে রক্ত দেওয়া নেওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সময় থেকে চিকিৎসা জগৎ অনেক বদলেও গিয়েছে। এখন রক্তের মূল উপাদানগুলোকে আলাদা আলাদা করা যায়। এই মূল উপাদানগুলো হল (১) লোহিত কণিকা (রেড ব্লাড সেল), (২) শ্বেত কণিকা (হোয়াইট ব্লাড সেল), (৩) অনুচক্রিকা (ব্লাড প্লেটলেটস) ও (৪) রক্তরস (প্লাজমা)। আজকে যখন রক্ত নেওয়ার প্রশ্ন আসে তখন রক্তের এই চারটে মূল উপাদানের যে কোন একটা দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা যায়। ডাক্তার কোন উপাদান দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করবেন তা রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে। রক্তের উপাদানগুলোকে এইভাবে কাজে লাগানোতে রক্তের এক একক থেকেই অনেক রোগীর চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু যিহোবার সাক্ষিরা জানেন যে রক্ত নেওয়া বা রক্তের কোন একটা উপাদান নেওয়া যিহোবার আইন বিরুদ্ধ কাজ। আর দেখার মতো বিষয় হল যে তাদের এই বিশ্বাসের জন্যই তারা এইডস, হেপাটাইটিস ও আরও অন্য অনেক রোগের হাত থেকে বেঁচে যান যা রক্ত নেওয়ার জন্য হয়।

আজকে এই মূল উপাদানগুলো ছাড়াও রক্তকে আরও ছোট ছোট অংশে ভাগ করা যায়। তাই প্রশ্ন ওঠে যে খ্রীষ্টানেরা কী এই অংশগুলো দিয়ে তৈরি ওষুধ খেয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন? এর উত্তর পাওয়ার আগে আমাদের জানা দরকার যে এই অংশগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়? আর এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় একজন খ্রীষ্টান কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন?

রক্তের মধ্যে অনেক উপাদান রয়েছে। যেমন প্লাজমার শতকরা ৯০ ভাগ জল হলেও এতে অনেক হরমোন, অজৈব লবণ, এনজাইম, পুষ্টিদায়ক পদার্থ এবং খনিজ লবণ ও শর্করা থাকে। শুধু তাই নয়, প্লাজমাতে এলবুমিন ছাড়া এমন অনেক প্রোটিন থাকে যা রক্ত জমাট বাঁধায় সাহায্য করে আর কিছু প্রোটিন শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার শক্তি যোগায়। গবেষণাগারে বিশেষজ্ঞরা প্লাজমা থেকে অনেক প্রোটিন আলাদা করে সেগুলো ব্যবহার করেন। যেমন, হিমোফিলিয়া রোগীর কথা ধরুন। তাদের শরীরের কোথাও একটুখানি আঘাত লাগলেই সেখান থেকে রক্ত বন্ধ হতে চায় না। এইসময় এই রোগীকে প্লাজমার ক্লটিং ফ্যাক্টর VIII দেওয়া হয়। এটা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আবার কারও যদি বিশেষ কোন অসুখ হয়, তাহলে ডাক্তাররা তাদেরকে গ্যামা গ্লোবুলিন ইনজেকশন নিতে বলেন। গ্যামা গ্লোবুলিন সেই লোকেদের রক্তের প্লাজমা থেকে নেওয়া হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল। এছাড়াও প্লাজমাতে আরও এমন অনেক প্রোটিন আছে যেগুলো আলাদা আলাদা রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যায়। ওপরে দেওয়া এই উদাহরণগুলো থেকে আমরা জানতে পারি যে রক্তের একটা মূল উপাদানকে (প্লাজমা) কীভাবে আলাদা আলাদা অংশে ভাগ করা যায় আর তা দিয়ে আলাদা আলাদা রোগের চিকিৎসা করা যায়। *

রক্তের একটা উপাদান প্লাজমা থেকে যেমন আলাদা আলাদা অংশ বের করা যায়, তেমনই রক্তের অন্যান্য মূল উপাদানগুলো (লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, অনুচক্রিকাকেও) ভেঙে ছোট ছোট অংশ আলাদা করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে ক্যানসার বা কিছু ভাইরাল ইনফেকশনের চিকিৎসা করার জন্য শ্বেত কণিকার ইন্টারফেরন ও ইন্টারলুকিন প্রোটিনকে ব্যবহার করা হয়। অনুচক্রিকা থেকেও কিছু ওষুধ তৈরি করা যায় যা কোথাও কেটে গেলে তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া এখন আরও অনেক এমন ওষুধ বানানো হচ্ছে যা রক্তের মূল উপাদানগুলোর ছোট ছোট অংশ দিয়ে তৈরি। কিন্তু লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল যে এই ওষুধগুলো খাওয়ার মানে নয় যে রক্তের মূল উপাদানগুলো শরীরে নেওয়া হচ্ছে। বরং এই ওষুধগুলোতে রক্তের ছোট ছোট অংশ ব্যবহার করা হয়। তাহলে একজন খ্রীষ্টান কি রক্তের এই অংশ দিয়ে তৈরি ওষুধ খেতে পারেন? হ্যাঁ বা না বলে এককথায় এর উত্তর আমরা দিতে পারি না। রক্তের এই অংশগুলোর বিষয়ে বাইবেলে কোন স্পষ্ট নিয়ম দেওয়া নেই। সেইজন্য খ্রীষ্টানদের এই বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার আর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার যাতে এর পরেও তারা বিশুদ্ধ বিবেক নিয়ে যিহোবা ঈশ্বরের সেবা করে চলতে পারেন।

কিছু খ্রীষ্টানেরা রক্ত থেকে বানানো কোন কিছুই শরীরে নিতে চান না (এমনকি সেই রক্তের উপাদানগুলোর ছোট অংশ যদি কিছু সময়ের জন্যও রোগ প্রতিরোধ করে তবুও তারা তা নেন না)। ‘রক্ত হইতে পৃথক্‌’ থাকার বিষয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞাকে তারা এভাবেই পালন করেন। এছাড়াও তারা জানেন যে ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বর বলেছিলেন যে প্রাণীর রক্ত ‘ভূমিতে ঢালিয়া ফেলিতে’ হবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:২২-২৪) কিন্তু এই আইনকে মানা কেন জরুরি? কারণ গ্যামা গ্লোবুলিন, ক্লটিং ফ্যাক্টর, ও অন্য কিছু ওষুধের জন্য প্রথমে রক্তকে জমা করা হয় আর তারপর কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই ওষুধগুলো বানানো হয়। তাই কিছু খ্রীষ্টানেরা এই জিনিসগুলো দিয়ে তৈরি ওষুধ খান না ঠিক যেমন তারা রক্ত বা রক্তের মূল উপাদানগুলো শরীরে নেন না। যিহোবার সামনে শুদ্ধ বিবেক রাখার জন্য তারা যে সিদ্ধান্ত নেন আমাদের তাকে সম্মান দেখানো উচিত।

আবার কিছু খ্রীষ্টানেরা বিষয়টাকে আলাদাভাবে দেখেন। তারাও শরীরে রক্ত অথবা প্লাজমা, লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা বা অনুচক্রিকা নেন না। কিন্তু তারা হয়তো রক্তের এই মূল উপাদানগুলোর ছোট অংশ থেকে তৈরি ওষুধ খান। আবার এর মধ্যেও কোন অংশগুলো দিয়ে তৈরি ওষুধ খাওয়া যেতে পারে আর কোনগুলো খাওয়া যেতে পারে না সে ব্যাপারেও তারা আলাদা আলাদা রকমভাবে ভাবেন। যেমন বলা যেতে পারে যে একজন খ্রীষ্টানের হয়তো গ্যামা গ্লোবুলিন ইনজেকশন নিতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু তিনি এমন কোন ওষুধ খেতে চান না যা লোহিত কণিকা বা শ্বেত কণিকার অংশ দিয়ে তৈরি। যাই হোক না কেন এখন প্রশ্ন হল যে, খ্রীষ্টানেরা কিসের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবেন যে তারা রক্তের মূল উপাদানগুলোর ছোট অংশ দিয়ে তৈরি ওষুধ খাবেন না খাবেন না?

১৯৯০ সালের ১লা জুনের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি)-এ “পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল” প্রবন্ধে বলা হয়েছিল যে একজন গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে প্লাজমা প্রোটিন (ছোট অংশ) তার বাচ্চার শরীরে যায় যদিও মা আর বাচ্চার রক্ত চলাচল প্রণালী আলাদা। এভাবে মার শরীরের ইমিউনোগ্লোবুলিন বাচ্চার শরীরে চলে যায় যাতে বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। যখন গর্ভে বড় হচ্ছে এমন বাচ্চার পুরনো লোহিত কণিকা মরে যায় তখন সেগুলোর অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিন আলাদা হয়ে যায়। মরে যাওয়া এই লোহিত কণিকার কিছু অংশ বিলিরুবিনে পরিণত হয়, যা প্লাসেন্টা থেকে বেরিয়ে মার শরীরে চলে যায় আর পরে বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তাই কিছু খ্রীষ্টানেরা হয়তো বলতে পারেন যে যেহেতু রক্তের ছোট অংশ প্রকৃতির নিয়মেই একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে যায়, তাহলে তারা রক্তের লোহিত কণিকা বা প্লাজমার সেই সমস্ত ছোট অংশও শরীরে নিতে পারেন।

কিন্তু এইরকম আলাদা আলাদা ধারণা থাকায় এটা ভেবে নেওয়া কি ঠিক হবে যে আমরা যা খুশি তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারি? না আমরা তা পারি না। এটা খুবই গম্ভীর বিষয়। উপরে বলা কথাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে যিহোবার সাক্ষিরা রক্ত বা রক্তের মূল উপাদান একেবারেই নেন না। কারণ বাইবেল তাদের আজ্ঞা দেয়, “প্রতিমার প্রসাদ এবং রক্ত ও গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস ও ব্যভিচার হইতে পৃথক্‌ থাকা তোমাদের উচিত।” (প্রেরিত ১৫:২৯) কিন্তু যখন রক্তের উপাদান থেকে বের করা ছোট অংশগুলো দিয়ে তৈরি ওষুধ খাওয়ার ব্যাপার আসে তখন খ্রীষ্টানেরা নিজেরা ঠিক করবেন যে তারা রোগ সারানোর জন্য এই ওষুধগুলো খাবেন কিনা। তারা তাড়াহুড়ো করে এই সিদ্ধান্ত নেন না কিন্তু অনেক ভেবেচিন্তে ঈশ্বরকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য বার বার প্রার্থনা করে তবেই ঠিক করেন।

অনেকে কিছু না ভেবেই তক্ষুণি সুস্থ হওয়ার জন্য যে কোন চিকিৎসা করার জন্য রাজি হয়ে যান এমনকি পরে যদি তারা জানতেও পারেন যে এই চিকিৎসায় অনেক বিপদ আছে। আর একথা রক্ত নিয়ে চিকিৎসা করার ব্যাপারে সত্যি। অন্যদিকে খ্রীষ্টানেরা শুধু তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার কথা ভাবেন না। যিহোবার সাক্ষিরা সবচেয়ে ভালভাবে চিকিৎসা করাতে চান আর তারা কোন একটা চিকিৎসা তাদের জন্য কতটা লাভ বা ক্ষতি করবে তাও চিন্তা করেন। কিন্তু যখন রক্তের উপাদান থেকে তৈরি ওষুধ খাওয়ার ব্যাপার আসে তখন তারা ঈশ্বরের আইনকে প্রথমে রাখেন কারণ তিনিই মানুষকে জীবন দিয়েছেন। সত্য খ্রীষ্টানেরা এমন কোন কাজ করতে চান না যাতে তাদের জীবনদাতার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।—গীতসংহিতা ৩৬:৯

ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা দেখাই যে আমরা যিহোবার ওপর ভরসা করি। আর যারা এমন সিদ্ধান্ত নেন যিহোবা তাদের কখনও ছেড়ে দেন না যেমন গীতরচক লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু ঈশ্বর সূর্য্য ও ঢাল; সদাপ্রভু অনুগ্রহ ও প্রতাপ প্রদান করেন; যাহারা সিদ্ধতায় চলে, তিনি তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিবেন না। হে . . . সদাপ্রভু, ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তোমার উপরে নির্ভর করে।”—গীতসংহিতা ৮৪:১১, ১২.

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৭৮ সালের ১৫ই জুন এবং ১৯৯৪ সালের ১লা অক্টোবরের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর “পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল” প্রবন্ধগুলো দেখুন। ওষুধ তৈরি করার কোম্পানিগুলো গবেষণাগারে এমন কিছু ওষুধ তৈরি করেছে যা রক্তের উপাদান ও উপাদানগুলোর অংশ থেকে তৈরি। আর যে ওষুধগুলো রক্ত দেওয়ার বদলে ব্যবহার করা যায়।

[৩০ পৃষ্ঠার বাক্স]

যে প্রশ্নগুলো আপনি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন

যদি আপনাকে এমন কোন অপারেশন বা চিকিৎসা করাতে হয় যাতে রক্ত থেকে তৈরি ওষুধ খাওয়ার দরকার পড়তে পারে, তাহলে আপনি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন:

একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ায় আমি চাই যে আমাকে যেন কোনভাবেই (রক্ত বা রক্তের মূল উপাদান লোহি কণিকা, শ্বেত কণিকা, অনুচক্রিকা বা রক্তরস) না দেওয়া হয়। হাসপাতালের সব কর্মচারিরা কি তা জানেন?

ডাক্তার যদি এমন কোন ওষুধ লিখে দেন যাতে রক্তের লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা রক্তরস বা অনুচক্রিকার অংশ আছে, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করুন:

এই ওষুধ কি রক্তের চারটে মূল উপাদান দিয়ে তৈরি? যদি হয় তাহলে তাতে কী কী আছে?

ওই ওষুধ কতটা নিতে হবে আর কীভাবে?

আমার বিবেক যদি রক্তের অংশ দিয়ে তৈরি এই ওষুধ খেতে বাধা না দেয় আর আমি যদি এই ওষুধ খাই, তাহলে তার থেকে কী কী ক্ষতি হতে পারে?

আমার বিবেক যদি এই ওষুধ খেতে বাধা দেয়, তাহলে আমি অন্য আর কোন্‌ উপায়ে চিকিৎসা করাতে পারি?

এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাল করে ভাবার পর কত সময় পরে আমাকে আপনার কাছে আসতে হবে?