সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হওয়ার ইচ্ছা কেন ঠিক নয়?

সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হওয়ার ইচ্ছা কেন ঠিক নয়?

সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হওয়ার ইচ্ছা কেন ঠিক নয়?

আপনি যখন কোন কাজ করেন, কীভাবে তা করেন? যতটা পারা যায় ভাল করে করার জন্য কি আপনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন না? খুবই ভাল হয় আপনি যদি তা করেন, কারণ তা আপনার ও আপনার আশেপাশের লোকেদের জন্য ভাল। কিন্তু এমন লোকেরাও আছেন যারা সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হতে চান। আপনি হয়তো এমন লোকেদের দেখেও থাকবেন। কিন্তু সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হতে চাওয়ার মানে কী?

 সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হতে চাওয়ার মানে হল সব ব্যাপারেই একেবারে নিখুঁত কিছু খোঁজা, যেটাই একেবারে নিখুঁত নয় সেটাকেই বাতিল করে দেওয়ার ইচ্ছা। যারা সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হতে চান তারা অন্যদের কাছ থেকে এত বেশি দাবি করেন যে তারা কোন কিছুতেই খুশি হন না, কোন কিছু করেই শান্তি পান না। অনেক বুদ্ধিমান লোকেরাই বোঝেন যে সবকিছুতেই চরম সীমায় যেতে চাওয়া আর সব ব্যাপারেই খুব বেশি দাবি করা মোটেই ভাল নয়। এরকম স্বভাব ছাড়া দরকার। কিন্তু মুশকিলের কথা হল যে আজকে অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাদের মধ্যেও এই স্বভাব আছে।

যেমন নেলসনের কথাই ধরুন। নেলসন এমন একটা কোম্পানিতে চাকরি করেন যেখানে তার অনেক দায়দায়িত্ব আর কাজ রয়েছে। তাকে সবসময়ই খেয়াল রাখতে হয় যে তার কোম্পানি বাজারে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। কোম্পানিকে এক নম্বরে রাখাটাই তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। তাই মনে হয় যেন সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত না হলে বাজারে টিকে থাকাই ভার। যদিও নেলসন সব ব্যাপারেই খুব নিখুঁত আর অনেকে তার কাজকে খুব পছন্দও করেন কিন্তু সবকিছুই একেবারে নিখুঁত করে করতে গিয়ে তার নিজের শরীর খারাপ হয়ে যায়, তার মাথা ধরে আর তাকে খুব চাপের মধ্যে থাকতে হয়। আপনার স্বভাবও কি নেলসনের মতো?

কিন্তু শুধু বড়রাই নয় বাচ্চা ছেলেমেয়েরাও অনেক সময় সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হতে চায়। রিও ডি জেনিরোর ছোট্ট রিটা স্কুলে যেতে ভালবাসে। আর পরীক্ষায় যদি সে সবচেয়ে বেশি নম্বর না পায়, তাহলেই সে ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। রিটা বলে: “সবসময়ই আমি দেখতাম যে অন্যদের হাতে কত সময় আছে আর আমার যেন নিঃশ্বাস ফেলার সময়টুকুও নেই। আমাকে সবসময়ই দৌড়াদৌড়ি, হুড়োহুড়ি করে কাজ করতে হয়। আমি কখনই একটু বসার সময় পাইনি কারণ হাতের কাজটা আমাকে শেষ করতে হবে।”

ছোট্ট মেয়ে মারিয়া অন্যদের মতো করে আঁকতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে দিত। তারপর গান শেখার সময়ও একেবারে নিখুঁতভাবে না করতে পারার জন্য সে প্রায়ই মন খারাপ করত। আর তাই গান শিখে বা গেয়ে আনন্দ পাওয়ার জায়গায় সে মন খারাপ করেই বসে থাকত। আরেকজন মেয়ে তানিয়া যে ব্রাজিলে থাকে, ভেবেছিল যে সে নিজেকে অন্যদের সঙ্গে কখনই তুলনা করবে না। কিন্তু সে বলে তবুও আমি স্কুলে ও বাড়িতে এত বেশি নিখুঁতভাবে সবকিছু করতে চাই যে তা করা খুবই কঠিন। সে মনে করে যে সবকিছুই নিখুঁতভাবে করতে না পারলে লোকেরা তাকে ভালবাসবে না। আর তাই তানিয়া কখনও কখনও অন্যদের কাছ থেকেও খুব বেশি আশা করে আর যার ফলে সে হতাশ হয় ও দুঃখ পায়।

যদিও অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা, খুব বেশি খাটাখাটনি করা বা নিজের কাজে খুশি হতে চাওয়া খারাপ কিছু নয় কিন্তু সবকিছুতেই খুব বেশি করতে চাওয়া বা খুব বড় কোন লক্ষ্য রাখা খারাপ। বাবামারা হয়তো ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বা খেলাধুলোর ব্যাপারে একেবারে নিখুঁত হওয়ার জন্য চাপ দিতে পারেন যা তাদের জন্য খুবই কঠিন হয়। যেমন রিকার্ডোর মা চাইতেন যে তার ছেলে সব ব্যাপারেই এক নম্বর হবে। তিনি চাইতেন যে তার ছেলে ডাক্তার হবে, ভাল পিয়ানো বাজাবে আর অনেকগুলো ভাষা জানবে। কিন্তু আপনি কি দেখেছেন যে চাওয়া যদি খুব বেশি হয়, তাহলে তা হতাশ করে ও দুঃখ দেয়?

এই স্বভাব কেন এড়ানো দরকার?

কাজের মান ভাল হোক, নির্ভুল হোক, সুন্দর হোক এটা সবসময়ই চাওয়া হয়। আর তাই কাজের মান ভাল না হলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয় থাকে। সেইজন্য লোকেরা সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করেই চলেন। একজন খেলোয়াড় যেমন নতুন রেকর্ড করার জন্য প্রচণ্ড খাটাখাটনি করে, অনেক কিছু ত্যাগ করে এমনকি জেতার জন্য স্টেরইডও নেয় সেইরকমই কিছু লোকেরা একেবারে নিখুঁত হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। দ্যা ফিলিং গুড হ্যান্ডবুক বলে এরকম লোকেদের মধ্যে “না পারার ভয়” ও “এক নম্বর হওয়ার” ইচ্ছা থাকে।

এটা ঠিক যে শিল্পে বা খেলাধুলোয় আমরা সবসময়ই আরও ভাল কিছু করতে পারি। কিন্তু তবুও ড. রবার্ট এস. এলিয়ট বলেন: ‘সবকিছুতেই একেবারে নিখুঁত হতে চাওয়ার ইচ্ছা এমনই এক চাওয়া যা কখনই পূরণ হয় না। এতে নিজেকে দোষী মনে হয় আর অপমানিত হওয়ার ভয় থাকে।’ তাই বলা যায় যে জ্ঞানী রাজা শলোমনের কথাগুলো কতই না সত্যি কারণ তিনি বলেছিলেন: “আমি সমস্ত পরিশ্রম ও সমস্ত কার্য্যকৌশল দেখিয়া বুঝিলাম, ইহাতে মনুষ্য প্রতিবাসীর ঈর্ষাভাজন হয়; ইহাও অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র।”—উপদেশক ৪:৪.

আপনার স্বভাবও কি এরকম? আপনিও কি সবকিছুতে একেবারে নিখুঁত হতে চান? অন্যের কাছ থেকে খুব বেশি দাবি না করাই কি ভাল নয়? সবকিছুতে একেবারে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা না করেও কি আপনি আপনার সমস্ত শক্তি দিয়ে কাজ করে যতটা পারেন নিখুঁত হতে চাইবেন না? এমন সময় কি আসবে যখন আমরা এক নিখুঁত পৃথিবীতে থেকে সবকিছু নিখুঁতভাবে করতে পারব?

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাবামারা হয়তো ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু দাবি করতে পারেন যা ছোট বাচ্চারা করে উঠতে পারে না