সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিশ্বনিন্দক তারা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?

বিশ্বনিন্দক তারা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?

বিশ্বনিন্দক তারা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?

‘বি শ্বনিন্দক হল এমন একজন যে সবসময়ই অন্যের দোষ ধরে, অন্যের ভাল তার নজরে পড়ে না।’ উনিশ শতকের একজন আমেরিকান পাদ্রি হেনরি ওয়ার্ড বীচার বলেন, ‘এই লোকেদের সঙ্গে পেঁচার কোন পার্থক্য নেই। পেঁচারা যেমন শুধু রাতের বেলাতেই বেরোয় আর ছোট ছোট পোকা মাকড় ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না, তেমনই বিশ্বনিন্দকেরা লোকেদের শুধু দোষই দেখতে পায়। অন্যের দোষ ছাড়া তাদের চোখে আর কিছু পড়ে না। লোকেদের দোষ ধরাই যেন তাদের পরম কর্তব্য।’ প্রাচীন গ্রিসে “বিশ্বনিন্দক” বলতে কোন একজন লোককে বোঝাতো না যেমন আজকে লোকেরা মনে করেন কিন্তু অনেক অনেক বছর ধরে এটা এক দল দার্শনিকদের বোঝাতো।

তাহলে বিশ্বনিন্দকদের দর্শন কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল? তারা কী শেখাত? তাদের এই স্বভাব আমাদের, খ্রীষ্টানদের কি ভাল লাগা উচিত?

আপনার কি তাদের স্বভাব ভাল লাগা উচিত?

বিশ্বনিন্দকের মানে দিতে গিয়ে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারী বলে “বিশ্বনিন্দক এমন একজন ব্যক্তি যে সবসময়ই অন্যের দোষ ধরে বা নিন্দা করে। . . . মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখে আর তাদের নিচু করে।” আজকে জগতে এমন লোকেদের অভাব নেই কিন্তু বাইবেল বলে যে আমাদের এমন স্বভাব থাকা উচিত নয়। কেন? কারণ জানার জন্য আমাদের বাইবেলের কিছু নীতি পরীক্ষা করে দেখা দরকার। তাই আসুন আমরা এখন বাইবেলের কিছু নীতিতে একবার নজর বুলিয়ে নিই।

বাইবেল যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে বলে: “সদাপ্রভু স্নেহশীল ও কৃপাময়, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান। তিনি নিত্য অনুযোগ করিবেন না, চিরকাল ক্রোধ রাখিবেন না।” (গীতসংহিতা ১০৩:৮, ৯) তাই সারা পৃথিবীর মালিক হয়েও যিহোবা যদি আমাদের ‘নিত্য অনুযোগ না করেন’ বরং আমাদের ভালবাসেন ও দয়া দেখাতে চান, তাহলে আমাদের আরও কত বেশি করে তা করতে চেষ্টা করা দরকার। এই ব্যাপারে আমাদের ‘ঈশ্বরের মতো করে চলা’ উচিত।—ইফিষীয় ৫:১, প্রে.বা.

যীশু খ্রীষ্ট একেবারে যিহোবার মতো করে চলতেন। তিনি আমাদের জন্য এক ‘আদর্শ রেখে গেছেন যেন আমরাও তাঁরই মত চলি।’ (১ পিতর ২:২১; ইব্রীয় ১:৩) তবে এটা ঠিক যে যীশু ধর্মীয় নেতাদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন তাদের খারাপ কাজকে সবার সামনে মেলে ধরেছিলেন। (যোহন ৭:৭) কিন্তু তা তিনি শুধু দোষ ধরার বা তাদের নিন্দা করার জন্য করেননি। তিনি লোকেদের ভাল গুণগুলোও দেখেছিলেন আর তাদের প্রশংসা করেছিলেন। যেমন বলা যায় যে নথনেলকে দেখে তিনি বলেছিলেন: “ঐ দেখ, এক জন প্রকৃত ইস্রায়েলীয়, যাহার অন্তরে ছল নাই।” (যোহন ১:৪৭) যে লোকেরা তাঁকে বিশ্বাস করত তাদের তিনি প্রশংসা করেছিলেন আর তাদের বিশ্বাসের জন্য তিনি তাদের অলৌকিকভাবে সুস্থ করেছিলেন। (মথি ৯:২২) আর একবার যখন একজন স্ত্রীলোক যীশুকে দামি উপহার দিয়েছিলেন অন্যেরা তার সমালোচনা করেছিল। কিন্তু যীশু করেননি। বরং তিনি বলেছিলেন: “সমুদয় জগতে যে কোন স্থানে এই সুসমাচার প্রচারিত হইবে, সেই স্থানে ইহার এই কর্ম্মের কথাও ইহার স্মরণার্থে বলা যাইবে।” (মথি ২৬:৬-১৩) যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে কখনও সন্দেহ করেননি, তিনি তাদের ওপর ভরসা করতেন। তিনি তাদের বন্ধুর মতো ছিলেন, তাদের ভালবাসতেন আর তিনি তাদের “শেষ পর্যন্তই ভালবেসেছিলেন।”—যোহন ১৩:১, প্রে.বা.

যীশু খ্রীষ্ট একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন। তাঁর মধ্যে কোন অন্যায়, কোন দোষ ছিল না। তাই তিনি চাইলে খুব সহজেই অন্যদের মধ্যে দোষ খুঁজতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং তিনি লোকেদের প্রশংসা করেছিলেন, তাদের সাহস দিয়েছিলেন।—মথি ১১:২৯, ৩০.

“[প্রেম] সকলই বিশ্বাস করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৭) বাইবেল বলে যে আমাদের অন্যকে প্রেম করা দরকার। আমরা যদি অন্যদের প্রেম করি, তাহলে আমরা তাদের বিশ্বাস করব। বিনা কারণে তাদের সন্দেহ করব না। তবে এটা ঠিক যে আজকে যে জগতে আমরা আছি সেখানে অনেক লোকেরাই খারাপ তাই আমাদের সাবধান হওয়া দরকার।—হিতোপদেশ ১৪:১৫.

ঈশ্বরও তাঁর সেবকদের ভালবাসেন ও তাদেরকে বিশ্বাস করেন। তিনি তাদের দুর্বলতাগুলো খুব ভাল করে জানেন। কিন্তু তবুও তিনি তাদের সন্দেহের চোখে দেখেন না। তিনি তাদের ক্ষমতা জানেন আর তাদের কাছ থেকে ততটুকুই চান যতটা তারা দিতে পারে। (গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪) তিনি তাদের বিশ্বাস করেন, তাদের ভাল গুণগুলো দেখেন, তাদেরকে বড় বড় দায়িত্ব দেন আর এইভাবে তাদের সম্মান দেখান।—১ রাজাবলি ১৪:১৩; গীতসংহিতা ৮২:৬.

“আমি সদাপ্রভু অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করি, আমি মর্ম্মের পরীক্ষা করি; আমি প্রত্যেক মনুষ্যকে আপন আপন আচরণানুসারে আপন আপন কর্ম্মের ফল দিয়া থাকি।” (যিরমিয় ১৭:১০) যিহোবা আমাদের হৃদয় পড়তে পারেন। কিন্তু আমরা পারি না। তাই অন্যদের ওপর সন্দেহ করার সময় আমাদের খুবই সাবধান হওয়া দরকার।

আমরা যদি জগতের লোকেদের মতো অন্যদের দোষ ধরি, নিন্দা করি আর তাদের সন্দেহ করতে শুরু করি, তাহলে মণ্ডলীতে ভাঙন ধরতে পারে। মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট হতে পারে। এর বদলে বরং আসুন আমরা যীশু খ্রীষ্টের মতো হই যিনি লোকেদের দোষ ত্রুটিকে দেখেও দেখতেন না কিন্তু তিনি অন্যের মধ্যে ভাল গুণগুলো দেখার চেষ্টা করতেন। তিনি বন্ধুর মতো তাদের ওপর ভরসা করতেন।—যোহন ১৫:১১-১৫.

“তোমরা যেরূপ ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” (লূক ৬:৩১) যীশু খ্রীষ্টের এই পরামর্শ আমরা জীবনের প্রতিটা পদে কাজে লাগাতে পারি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা চাই যে লোকেরা আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুক, আমাদের সম্মান করুক। তাই আমাদের প্রথমে লোকেদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা দরকার ও তাদের সম্মান করা দরকার। যীশু যখন ধর্মীয় নেতাদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন, তাদের নিন্দা করেছিলেন তখন তিনি তাদের দোষ ধরার জন্যে তা করেননি।—মথি ২৩:১৩-৩৬.

এই খারাপ স্বভাবকে কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়

যদি কেউ আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাহলে আমরা খুব সহজেই সবাইকে সন্দেহ করতে শুরু করে দিই, তাদের দোষ ধরতে শুরু করে দিই। কিন্তু আমাদের তা করা উচিত নয়। আমাদের মনে রাখা দরকার যে যিহোবা অসিদ্ধ ও পাপী লোকেদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেন। তিনি আমাদেরকে বিশ্বাস করেন। আমরাও সেইরকম করতে পারি। এইভাবে যিহোবা যেমন করে তাঁর সেবকদের দেখেন আমরাও তাদের সেইভাবে দেখতে পারব। আর আমরা বুঝব যে অসিদ্ধ হয়েও এই মানুষেরা ঠিক কাজ করার চেষ্টা করছে।

হয়তো কিছুজনের জীবনে খুবই দুঃখজনক কোন ঘটনা ঘটে আর তার ফলে তারা অন্যদের আর বিশ্বাসই করতে পারেন না। এটা ঠিক যে অসিদ্ধ মানুষের ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখা বুদ্ধির কাজ নয়। (গীতসংহিতা ১৪৬:৩, ৪) কিন্তু আমাদের মণ্ডলীতে এমন অনেক ভাইবোনেরা আছেন যাদেরকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন আর যারা আপনাকে সাহস দিতে পারেন। এখন একটু ভেবে দেখুন যে মণ্ডলীতে কত ভাইবোনেরা আছেন যারা আমাদের মা, বাবা, ভাই, বোন ও ছেলেমেয়ের মতো। (মার্ক ১০:৩০) ভেবে দেখুন যে আমাদের দুঃখের সময় কতজন আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আর সত্যিকারের বন্ধু হয়ে উঠেছেন। *হিতোপদেশ ১৮:২৪.

তাই লোকেদের দোষ ধরে নয় কিন্তু ভালবেসে আমরা জগৎকে দেখাতে পারি যে আমরা যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য। কারণ তিনি বলেছিলেন: “যদি তোমরা একে অন্যকে ভালবাস, তবে সবাই বুঝতে পারবে তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫ প্রে.বা.) তাই আসুন আমরা অন্যদের ভালবাসি। তাদের গুণগুলোকে দেখার চেষ্টা করি। এরকম করলে আমরা সবসময় লোকেদের দোষ ধরার বা নিন্দা করার স্বভাব এড়িয়ে চলতে পারব।

পুরনো দিনের বিশ্বনিন্দক ও তাদের ইতিহাস

প্রাচীন গ্রিসে সক্রেটিস, প্লেটো ও আ্যরিস্টটলের মতো বড় বড় দার্শনিকেরা ছিলেন। তাদের শিক্ষা লোকেদের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। আজও পশ্চিমের দেশগুলোতে তাদের শিক্ষা দেখা যায়। তারা কী শিখিয়েছিলেন আর কীভাবে শিখিয়েছিলেন? আসুন আমরা এই ইতিহাসের দিকে একটু নজর দিই।

সক্রেটিস (সা.কা.পূ. ৪৭০-৩৯৯ সাল) মনে করতেন যে আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস, কামনা-বাসনা জীবনে সত্যিকারের সুখ দিতে পারে না। এগুলো সত্যিকারের সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষ নিজেদের মধ্যে ভাল গুণ গড়ে তুলে সত্যিকারের সুখ পেতে পারে। এইজন্যেই তিনি নিজে সমস্ত আরাম-আয়েশ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে সাধারণ জীবন কাটিয়েছিলেন। তার নীতি ছিল সহজ ও ত্যাগের জীবন।

কিন্তু সক্রেটিস এক অদ্ভুত উপায়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কীভাবে? সাধারণত দার্শনিকেরা তাদের শিক্ষাকে ঠিক বলে তুলে ধরার জন্য লোকেদের সামনে প্রমাণ হাজির করতেন কিন্তু সক্রেটিস তার উল্টোটা করেছিলেন। তিনি অন্যদের শিক্ষার ভুল ধরে, নিন্দা করে তার শিক্ষাকে ঠিক প্রমাণ করেছিলেন। তিনি মনে করতেন যে এইভাবে দোষ ধরে ও মিথ্যে শিক্ষার মুখোশ খুলে দিয়েই সত্যি বিষয়কে শেখানো যায়। আর পরে এই উপায় অন্য লোকেরাও গ্রহণ করে।

সক্রেটিসের একজন শিষ্য ছিলেন এন্টিস্থেনেস (প্রায় সা.কা.পূ. ৪৪৫-৩৬৫ সাল)। তিনি ও তার সঙ্গীরা মিলে সক্রেটিসের শিক্ষাকে আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা শেখাতে শুরু করেছিলেন যে আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস, কামনা-বাসনা শুধু বাধাই নয়, এগুলো পাপ। সত্যিকারের সুখ এগুলো থেকে নয় কিন্তু শুধু নিজেদের মধ্যে ভাল গুণ গড়ে তুলে পাওয়া যায়। এই কারণে তারা নিজেরা আরাম-আয়েশ সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর তারা শুধু লোকেদের দোষই ধরতেন না বা নিন্দাই করতেন না, বরং যারা তাদের মতো চলত না সেই লোকেদের খারাপ চোখে দেখতেন কারণ তারা মনে করতেন যে এই লোকেদের একজনের মধ্যেও ভাল গুণ নেই। তারা এমনভাবে লোকেদের দোষ ধরতেন বা নিন্দা করতেন যেমন একটা কুকুর হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে খায়। এই স্বভাবের জন্য তাদের বিশ্বনিন্দক বলা হতো যা গ্রিক শব্দ কীনিকস থেকে এসেছে আর যার মানে হল “কুকুরের মতো।” *

তাদের জীবনে তাদের শিক্ষার ছাপ

যদিও আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস, কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে তাদের এই শিক্ষা ঠিক ছিল কিন্তু এটাকে মেনে চলতে গিয়ে এই দার্শনিকেরা মাত্রা ছাড়িয়ে যেতেন। বিখ্যাত দার্শনিক ডায়োজিনীসের জীবন এর ভাল উদাহরণ।

ডায়োজিনীস সা.কা.পূ. ৪১২ সালে কৃষ্ণ সাগরের কাছে সনোপী শহরে জন্মেছিলেন। তিনি তার বাবার সঙ্গে এথেন্সে এসেছিলেন যেখানে তিনি সক্রেটিসের শিক্ষার বিষয়ে জেনেছিলেন। ডায়োজিনীস এন্টিস্থেনেসের কাছে শিক্ষা নেন ও তার শিষ্য হয়ে যান। আর তিনি এতই উৎসাহী ছাত্র ছিলেন যে তিনি সক্রেটিস ও এন্টিস্থেনেসের চেয়েও কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছিলেন। সক্রেটিস কিছুটা সাধারণ জীবন কাটিয়েছিলেন। এন্টিস্থেনেস ভোগ-বিলাস ছেড়ে ত্যাগের জীবন কাটিয়েছিলেন আর ডায়োজিনীস এইসব থেকে একেবারেই সরে গিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। কামনা-বাসনা ও আরাম-আয়েশ যে কত খারাপ তা দেখানোর জন্য তিনি এমনকি কিছু সময় একটা ছোট গামলার মধ্যে থেকেছিলেন।

কথিত আছে যে ডায়োজিনীস একজন ভাল বা গুণী লোককে খোঁজার জন্য ভরা দুপুরে এথেন্সের গলিতে গলিতে জ্বলন্ত প্রদীপ নিয়ে ঘুরেছিলেন! এরকম করে তিনি লোকেদের দোষ ধরতেন। তার এই কাজ অনেকের ওপর বেশ ছাপ ফেলেছিল। এইভাবেই ডায়োজিনীস ও অন্য দার্শনিকেরা অন্যের দোষ খুঁজে বের করে অন্যদের শেখাতেন। কথিত আছে একবার মহান আলেকজান্ডার ডায়োজিনীসকে বলেছিলেন আপনি যা চান, আমার কাছে চাইতে পারেন আমি আপনাকে দেব। উত্তরে ডায়োজিনীস শুধু এটুকুই বলেছিলেন একটু সরে দাঁড়ান যেন সূর্যের আলো আড়াল না হয়!

ডায়োজিনীস আর অন্য দার্শনিকেরা ভিখারির মতো জীবন কাটাতেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, সমাজের কাজকর্ম তাদের কাছে কোন অর্থ রাখত না। সক্রেটিসের মতো তারাও লোকেদের দোষ ধরতেন আর তাদের মান সম্মানের কথা তারা ভাবতেন না। এইজন্য এই দার্শনিকদের “কুকুরের মতো” বলা হতে থাকে। কিন্তু দোষ ধরা বা নিন্দা করার ব্যাপারে ডায়োজিনীসের চেয়ে নামকরা আর কেউই ছিল না। এইজন্য তাকে সবচেয়ে ‘জঘন্য কুকুর’ নাম দেওয়া হয়েছিল। আর যখন সা.কা.পূ. ৩২০ সালে ৯০ বছর বয়সে তিনি মারা যান তখন একটা শ্বেত পাথরের কুকুরের মূর্তি বানিয়ে সেটা তার কবরে রাখা হয়েছিল।

এই দার্শনিকদের শিক্ষা অন্য দার্শনিকদের ওপরও ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু সময় কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়োজিনীস ও তার সঙ্গীদের লোকেরা অপছন্দ করতে শুরু করে। আর এমন এক সময় আসে যখন তাদের শিক্ষা ও তাদের শেখানোর উপায় ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যায়।

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৯৯ সালের ১৫ই মের প্রহরীদুর্গ থেকে “খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী শক্তির এক উৎস” প্রবন্ধটা দেখুন।

^ আবার এটাও হতে পারে যে বিশ্বনিন্দক নাম কাইনোসারজেস এই শব্দ থেকে এসেছে যা ছিল এথেন্সের এক বিদ্যালয় যেখানে এন্টিস্থেনেস তার ছাত্রদের পড়াতেন।

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অন্যের দোষ ধরায় ও নিন্দা করায় পটু, ডায়োজিনীস

[সৌজন্যে]

From the book Great Men and Famous Women