সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মৃতেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে!

মৃতেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে!

মৃতেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে!

“আমারও ঈশ্বরের ওপর এই আশা আছে যে, . . . সবাইকে আবার জীবিত করা হবে।”প্রেরিত ২৪:১৫, প্রে.বা.

১. মৃত লোকেরা আবার বেঁচে উঠবেন একথা বিশ্বাস করা কেন আমাদের জন্য খুব কঠিন হওয়া উচিত নয়?

 আপনি কি ভাবতে পারেন যে আপনার, আমার আত্মীয়স্বজনেরা যারা মারা গেছেন তারা আবার বেঁচে উঠবেন? একথা বিশ্বাস করা কি আমাদের জন্য খুব কঠিন? আমরা একথা বিশ্বাস করতে পারি কারণ এই পৃথিবীর মালিক যিহোবা ঈশ্বর যাঁর শক্তির কোন সীমা নেই তিনি তাঁর বাক্যে বলেছেন যে মৃত লোকেদের তিনি আবার বাঁচিয়ে তুলবেন আর তাঁর কাছে কোনকিছুই অসাধ্য নয়। (যিশাইয় ৫৫:১১; লূক ১৮:২৭) আসলে যিহোবা ঈশ্বর ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন যে মৃত লোকেদের আবার বাঁচিয়ে তোলার মতো শক্তি তাঁর আছে।

২. এই বিশ্বাস কীভাবে আমাদের নতুন করে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়?

আর এই বিশ্বাস আমাদের যেন নতুন করে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়। দুঃখে এটা আমাদের সান্ত্বনা দেয়। মৃত লোকেরা যে বেঁচে উঠবেই উঠবে এই আশা নিয়ে আমরা মৃত্যুর মুখেও যিহোবার বাধ্য থাকতে পারি। যিহোবা ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে দিয়ে এই ব্যবস্থা করেছেন। এখন আমরা বাইবেলে লেখা কিছু লোকেদের ঘটনা দেখব যারা মারা গিয়েছিলেন ও যিহোবা ঈশ্বর যাদেরকে আবার বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। আর তাতে আমাদের বিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে।

তারা তাদের মৃত লোকেদের আবার জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়েছিলেন

৩. বিধবার ছেলে যখন মারা গিয়েছিল তখন এলিয় কী করেছিলেন?

যিহোবার পুরনো দিনের সাক্ষিদেরও এ কথায় খুব অটল বিশ্বাস ছিল যে মৃতেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে। তাদের বিশ্বাসের কথা বলতে গিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “স্ত্রীলোকেরা তাঁদের মৃত লোকদের আবার জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়েছিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৩৫; ১২:১ প্রে.বা.) এই স্ত্রীলোকেদের মধ্যে একজন গরিব বিধবা ছিল যে সীদোনের সারিফত নগরে থাকত। তার একটা ছেলে ছিল। একবার সেই নগরে খুব দুর্ভিক্ষ হয়। কিন্তু যিহোবা তাদের খাবার যোগান কারণ সে সবসময় ভাববাদী এলিয়কে খুব আদরযত্ন করত। এরপর একসময় তার ছেলে অসুখে মারা যায়। এলিয় তার ঘরে আসেন। প্রার্থনা করেন, বিধবার ছেলেকে বিছানায় শোয়ান আর তারপর তিনবার তার ওপর শোন। এরপর তিনি যিহোবার কাছে অনুনয় করে বলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, বিনয় করি, এই বালকের মধ্যে প্রাণ ফিরিয়া আসুক।” ঈশ্বর বিধবার ছেলেকে আবার বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। (১ রাজাবলি ১৭:৮-২৪) একটু ভেবে দেখুন যে সেই বিধবা যখন তার একমাত্র ছেলেকে বেঁচে উঠতে দেখেছিল তখন সে যেন তার সর্বস্ব ফিরে পেয়েছিল!

৪. শূনেম নগরে যিহোবার ভাববাদী ইলীশায় কী করেছিলেন?

শূনেম নগরে আরেকজন স্ত্রীলোকের ছেলেও বেঁচে উঠেছিল। তার স্বামীর অনেক বয়স হয়েছিল আর তাদের কোন ছেলেমেয়ে ছিল না। যিহোবার ভাববাদী ইলীশায় ও তার সাথীকে দয়া দেখানোয় যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেন আর তার একটা ছেলে হয়। কিন্তু বেশ কিছু বছর পরে যখন তার ছেলে মারা যায়, এই স্ত্রী ভাববাদীকে ডেকে আনেন। ইলীশায় প্রার্থনা করে তার ছেলের ওপর শুলে “বালকটীর গাত্র উত্তাপযুক্ত হইতে লাগিল।” সে ‘সাত বার হাঁচিল, ও চক্ষু মেলিল।’ এই স্ত্রীলোক তার ছেলেকে আবার ফিরে পেয়ে খুবই খুশি হয়েছিল। (২ রাজাবলি ৪:৮-৩৭; ৮:১-৬) আর কত খুশিই না তারা হবেন যারা নতুন জগতে আবার বেঁচে উঠবেন ও আরও ‘ভাল জীবন’ পাবেন। যারা আর কখনও মারা যাবেন না! যিহোবা ঈশ্বরকে তাই আমাদের কতই না ধন্যবাদ দেওয়া উচিত যিনি আমাদের ভালবেসে মৃত লোকেদের আবার বাঁচিয়ে তোলার ব্যবস্থা করেছেন!—ইব্রীয় ১১:৩৫, প্রে.বা.

৫. মারা যাওয়ার পরও ইলীশায়ের জন্য কীভাবে একজন লোক আবার বেঁচে উঠেছিল?

ইলীশায় মারা যান। কিন্তু কবরের মধ্যেও যিহোবা তার হাড়গুলোকে শক্তি দিয়েছিলেন। তার ফলে কী ঘটেছিল তা আমরা ২ রাজাবলি ১৩:২০, ২১ পদে লেখা ঘটনা থেকে জানতে পারি। সেখানে লেখা আছে: “লোকেরা একটা লোককে [একজন ইস্রায়েলীয়কে] কবর দিতেছিল, আর দেখ, তাহারা এক লুটকারী সৈন্যদল [মোয়াবীয়] দেখিয়া সেই শব ইলীশায়ের কবরে ফেলিয়া দিল; তখন সেই [মৃত] ব্যক্তি প্রবিষ্ট হইয়া ইলীশায়ের অস্থি স্পর্শ করিবামাত্র জীবিত হইয়া পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইল।” সেই লোক কতই না অবাক হয়ে গিয়েছিল আর নিশ্চয়ই খুব খুশিও হয়েছিল! এবার ভেবে দেখুন যে আমাদের আত্মীয়স্বজনেরা যারা মারা গেছেন তারা যখন নতুন জগতে আবার বেঁচে উঠবেন তখন আমাদের কীরকম আনন্দ হবে! আমরা বিশ্বাস করি যে যিহোবা ঈশ্বর যা প্রতিজ্ঞা করেছেন তা করবেন কারণ তাঁর কাছে কিছুই অসাধ্য নয়।

ঈশ্বরের পুত্র মৃত লোকেদের আবার বাঁচিয়ে তুলেছিলেন

৬. নাইন নগরের কাছে কোন্‌ ঘটনা ঘটেছিল আর এই ঘটনা আমাদের কী বলে?

ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট দেখিয়েছিলেন যে মৃত ব্যক্তিরা আবার বেঁচে উঠতে পারে। আর আমাদের তাতে বিশ্বাস করার অনেক কারণ আছে। নাইন নগরের কাছে একটা ঘটনা থেকে দেখা যায় যে ঈশ্বরের শক্তিতে মৃত লোকেদের আবার বাঁচিয়ে তোলা যায়। যীশু দেখেন যে লোকেরা একটা মরা মানুষকে নিয়ে যাচ্ছিল। সে বিধবার একমাত্র ছেলে ছিল। যীশু সেই বিধবাকে বলেছিলেন: “কাঁদিও না।” তারপর তিনি খাট ছুঁয়ে বলেছিলেন: “হে যুবক, তোমাকে বলিতেছি, উঠ।” সে উঠে বসে কথা বলতে শুরু করেছিল। (লূক ৭:১১-১৫) এই ঘটনা আমাদের বলে যে মৃত লোকেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে।

৭. যায়ীরের মেয়ে যখন মারা গিয়েছিল তখন কী ঘটেছিল?

কফরনহূম সমাজ-গৃহের অধ্যক্ষ যায়ীরের ঘরে কী ঘটেছিল দেখুন। তিনি যীশুর কাছে এসে তার আদরের মেয়েকে সারিয়ে তোলার জন্য অনুনয়-বিনয় করছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই খবর আসে যে তার মেয়ে মারা গেছে। যীশু যায়ীরকে বিশ্বাস রাখতে বলেছিলেন। তিনি তার সঙ্গে তার ঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে যীশু দেখেন যে লোকেরা কান্নাকাটি করছিল। যীশু যখন তাদের বলেন যে “বালিকাটী মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে” শুনে লোকেরা হেসেছিল কারণ তারা জানত যে সেই মেয়ে মারা গেছে। যায়ীরের মেয়ে মারা গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু যীশু দেখাতে চেয়েছিলেন যে মৃত লোকেরাও আবার বেঁচে উঠতে পারে ঠিক যেমন একজন ঘুমন্ত লোককে ঘুম থেকে তোলা যায়। যীশু তার হাত ধরে বলেছিলেন: “বালিকে, উঠ।” তক্ষুণি সে উঠেছিল আর তাতে “তাহার পিতামাতা চমৎকৃত হইল।” (মার্ক ৫:৩৫-৪৩; লূক ৮:৪৯-৫৬) সত্যিই আমরা “চমৎকৃত” হব যখন নতুন জগতে আমাদের আত্মীয়স্বজনেরা আবার বেঁচে উঠবেন।

৮. লাসারের কবরে এসে যীশু কী করেছিলেন?

লাসার মারা যাওয়ার চারদিন পরে যীশু লাসারের কবরের কাছে যান আর কবরের পাথর সরাতে বলেন। তিনি সবার সামনে প্রার্থনা করেন ও তাতে লোকেরা জানতে পারে যে তিনি যিহোবার শক্তিতে লাসারকে বাঁচিয়ে তুলবেন। তারপর যীশু চিৎকার করে ডাকেন: “লাসার, বাহিরে আইস।” লাসার বাইরে এসেছিল। তার হাত পা কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল, তার মুখ গামছায় বাঁধা ছিল। যীশু বলেছিলেন: “ইহাকে খুলিয়া দেও, ও যাইতে দেও।” এই ঘটনা দেখে যে যিহুদিরা মার্থা ও মরিয়মকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এসেছিল তারা যীশুতে বিশ্বাস করেছিল। (যোহন ১১:১-৪৫) এই ঘটনা পড়ে কি আপনার মন আশায় ভরে ওঠে না যে নতুন জগতে আপনার আত্মীয়স্বজনেরাও আবার বেঁচে উঠবে?

৯. আমরা কেন নিশ্চিত যে যীশু এখনও মৃত লোকেদের বাঁচিয়ে তুলতে পারেন?

যোহন বাপ্তাইজক যখন কারাগারে ছিলেন তখন যীশু তাকে খবর দিতে বলেছিলেন যে: “অন্ধেরা দেখছে . . . মৃতেরা বেঁচে উঠছে।” (মথি ১১:৪-৬, প্রে.বা.) যীশু যখন পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে ছিলেন তিনি মৃত লোকেদের বাঁচিয়েছিলেন আর এখন তিনি স্বর্গে একজন আত্মিক প্রাণী, যিহোবা তাঁকে মৃত লোকেদের বাঁচিয়ে তোলার শক্তি দিয়েছেন। তাই এখন যে তিনি তা করবেন সে ব্যাপারে আমরা কতই না নিশ্চিত। যীশুই “পুনরুত্থান ও জীবন।” আর “যারা কবরে আছে তারা সবাই মনুষ্যপুত্রের গলার স্বর শুনে বের হয়ে আসবে।” খুব শীঘ্রিই তা হবে জেনে আপনার মন কি খুশিতে ভরে ওঠে না?—যোহন ৫:২৮, ২৯, প্রে.বা.; ১১:২৫.

মৃত লোকেদের বেঁচে ওঠার অন্য ঘটনাগুলো আমাদের বিশ্বাসকে মজবুত করে

১০. পিতর টাবিথাকে আবার বাঁচিয়েছিলেন এই ঘটনাকে আপনি কীভাবে নিজের ভাষায় বলবেন?

১০ যীশু যখন তাঁর শিষ্যদের প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তিনি তাদের বলেছিলেন: “মৃতদের জীবন দিয়ো।” (মথি ১০:৫-৮, প্রে.বা.) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া শক্তিতে তারা তা করেছিলেন। সা.কা. ৩৬ সালে যাফোতে দর্কা (টাবিথা) মারা গিয়েছিলেন। তিনি দুঃখী বিধবাদের জন্য কাপড় তৈরি করতেন আর তারাই খুব কান্নাকাটি করছিল। দর্কাকে কবর দেওয়ার আগে স্নান করিয়ে উপরের ঘরে রেখে তারা পিতরের জন্য অপেক্ষা করছিল। (প্রেরিত ৯:৩২-৩৮) পিতর উপরের ঘর থেকে সবাইকে চলে যেতে বলে প্রার্থনা করেন ও বলেন: “টাবিথা, উঠ।” টাবিথা উঠে বসেছিলেন আর পিতর তাকে হাত ধরে দাঁড় করিয়েছিলেন। পিতর টাবিথাকে বাঁচিয়ে তুলেছেন এই ঘটনার কথা শুনে অনেকে বিশ্বাসী হয়েছিল। (প্রেরিত ৯:৩৯-৪২) এই ঘটনা আমাদের বিশ্বাসকেও মজবুত করে।

১১. বাইবেলে মৃতদের বাঁচিয়ে তোলার শেষ যে ঘটনার কথা লেখা আছে সেটা কোন্‌ ঘটনা?

১১ বাইবেলে মৃতদের বাঁচিয়ে তোলার শেষ যে ঘটনার কথা লেখা আছে সেটা ত্রোয়াতে ঘটেছিল। তৃতীয় মিশনারী ভ্রমণের সময় পৌল যখন সেখানে গিয়েছিলেন বক্তৃতা দিতে দিতে তার মাঝরাত হয়ে গিয়েছিল। অনেক প্রদীপের আলোয় ঘর গরম হয়ে যাওয়ায় ও ঘরে খুব ভীড় থাকায়, উতুখ নামে এক যুবক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল ও ঘুমিয়ে গিয়েছিল। তাই উতুখ তিনতলা থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিল। “তাহাতে লোকেরা তাহাকে মরা তুলিয়া লইল।” কিন্তু পৌল তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন “তোমরা কোলাহল করিও না; কেননা ইহার মধ্যে প্রাণ আছে।” এই কথা বলে পৌল বুঝিয়েছিলেন যে এই যুবককে আবার বাঁচিয়ে তোলা যাবে। এতে যারা সেখানে ছিল তারা “অসামান্য আশ্বাস প্রাপ্ত হইল।” (প্রেরিত ২০:৭-১২) আজকে এটা জেনে আমরা কতই না খুশি হই যে পুরনো সময়ে ঈশ্বরের সেবকেরা আবার বেঁচে উঠবেন আর এটা আমাদেরকে কত আশা ভরসাই না দেয়!

আবার বেঁচে ওঠার আশা—অনেক পুরনো

১২. রোমীয় গভর্ণর ফেলিক্সের সামনে দাঁড়িয়ে পৌল কী বলেছিলেন?

১২ রোমীয় গভর্ণর ফেলিক্সের সামনে দাঁড়িয়ে পৌল বলেছিলেন: “মোশির আইন কানুনের সংগে যা কিছুর মিল আছে তাতে এবং নবীদের লেখায় আমি বিশ্বাস করি। তাঁরা যেমন আশা করেন তেমনি আমারও ঈশ্বরের উপর এই আশা আছে যে, সৎ কিম্বা অসৎ সবাইকে আবার জীবিত করা হবে।” (প্রেরিত ২৪:১৪, ১৫, প্রে.বা.) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের এই অংশ ‘মোশির আইন কানুন’ বলে যে মৃতরা আবার বেঁচে উঠবে?

১৩. কেন বলা যায় যে এদন বাগানে ঈশ্বর যখন প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিলেন তখনই তিনি আভাস দিয়েছিলেন যে মৃতদের আবার বাঁচিয়ে তোলা হবে?

১৩ এদন বাগানে ঈশ্বর যখন প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিলেন তখনই তিনি আভাস দিয়েছিলেন যে মৃতদের আবার বাঁচিয়ে তোলা হবে। কারণ “পুরাতন সর্প” শয়তান দিয়াবলকে দণ্ড দেওয়ার সময় ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯; আদিপুস্তক ৩:১৪, ১৫) স্ত্রীর বংশের পাদমূল চূর্ণ করার মানে ছিল যীশুকে মেরে ফেলা। কিন্তু স্ত্রীর বংশকে যদি সর্পের মস্তক চূর্ণ করতে হয়, তাহলে যীশু খ্রীষ্টকে অবশ্যই আবার বেঁচে উঠতে হবে।

১৪. কেন ঈশ্বর মৃতদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিতদেরই ঈশ্বর?

১৪ যীশু বলেছিলেন: “মৃতগণ যে উত্থাপিত হয়, ইহা মোশিও ঝোপের বৃত্তান্তে দেখাইয়াছেন; কেননা তিনি প্রভুকে ‘অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর, ও যাকোবের ঈশ্বর’ বলেন। ঈশ্বর ত মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে সকলেই জীবিত।” (লূক ২০:২৭, ৩৭, ৩৮; যাত্রাপুস্তক ৩:৬) অব্রাহাম ইস্‌হাক আর যাকোব মারা গেছেন। কিন্তু ঈশ্বর তাদের আবার বাঁচিয়ে তুলবেন। আর এই বিষয়টা এতটাই নিশ্চিত যে ঈশ্বরের চোখে তারা যেন আজও বেঁচে আছেন।

১৫. কেন অব্রাহাম বিশ্বাস করতেন যে মৃতরা আবার বেঁচে উঠবে?

১৫ অব্রাহাম বিশ্বাস করতেন যে মৃতরা আবার বেঁচে উঠবে। কারণ তিনি ও তার স্ত্রী সারা যখন বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ও তাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিল বা মরে গিয়েছিল, ঈশ্বর তাদের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বা বাঁচিয়েছিলেন। এই ঘটনা মৃতকে জীবন দেওয়ার চেয়ে কিছু কম ছিল না। (আদিপুস্তক ১৮:৯-১১; ২১:১-৩; ইব্রীয় ১১:১১, ১২) তাদের ছেলে ইস্‌হাক যখন ২৫ বছর বয়সী সেইসময় ঈশ্বর অব্রাহামকে তাকে বলি দিতে বলেছিলেন। যাইহোক অব্রাহাম যখন তাকে মারার জন্য খড়্গ তুলেছিলেন ঠিক সেইসময় যিহোবার দূত তাকে বাধা দেন। অব্রাহাম বিশ্বাস করতেন যে “ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও [ইস্‌হাককে] উত্থাপন করিতে সমর্থ; আবার তিনি তথা হইতে দৃষ্টান্তরূপে তাঁহাকে ফিরিয়া পাইলেন।”—ইব্রীয় ১১:১৭-১৯; আদিপুস্তক ২২:১-১৮.

১৬. অব্রাহাম এখন মৃত অবস্থায় ঘুমিয়ে কিসের অপেক্ষা করছেন?

১৬ অব্রাহাম বিশ্বাস করতেন যে মশীহ রাজ্যে মৃতেরা আবার বেঁচে উঠবে। স্বর্গ থেকে মশীহ অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট অব্রাহামের বিশ্বাস দেখেছিলেন। তাই পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু যিহুদিদের বলেছিলেন: “তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম আমার দিন দেখিবার আশায় উল্লাসিত হইয়াছিলেন।” (যোহন ৮:৫৬-৫৮; হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১) অব্রাহাম এখন মৃত অবস্থায় ঘুমিয়ে আছেন। আর ঈশ্বরের মশীহ রাজ্যে তিনি আবার বেঁচে উঠবেন বলে অপেক্ষা করছেন।—ইব্রীয় ১১:৮-১০, ১৩.

মোশির আইন কানুন ও গীতসংহিতায় প্রমাণ

১৭. যীশু যে আবার বেঁচে উঠবেন একথা ‘মোশির আইন কানুনে’ কীভাবে লেখা ছিল?

১৭ প্রেরিত পৌল ‘মোশির আইন কানুনে’ একথা লেখা থাকায় বিশ্বাস করতেন যে মৃতেরা আবার বেঁচে উঠবে। ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “তোমরা . . . তোমাদের কাটা শস্যের অগ্রিমাংশ [প্রথম ফল] বলিয়া এক আটি যাজকের নিকটে আনিবে। সে [১৬ই নিশান] সদাপ্রভুর সম্মুখে ঐ আটি দোলাইবে, যেন তোমাদের জন্য তাহা গ্রাহ্য হয়।” (লেবীয় পুস্তক ২৩:৯-১৪) বোধহয় এই কথা মাথায় রেখেই পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টকে কিন্তু সত্যি সত্যিই মৃত্যু থেকে জীবিত করে তোলা হয়েছে। তিনি প্রথম ফল অর্থাৎ মৃত্যু থেকে যাদের জীবিত করা হবে তাদের মধ্যে তিনিই প্রথমে জীবিত হয়েছেন।” তাই “প্রথম ফল” যীশু খ্রীষ্ট সা.কা. ৩৩ সালের ১৬ই নিশান আবার বেঁচে উঠেছিলেন। তারপর যারা খ্রীষ্টের নিজের অর্থাৎ তাঁর আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের, খ্রীষ্টের আসবার সময়ে বাঁচিয়ে তোলা হবে।—১ করিন্থীয় ১৫:২০-২৩, প্রে.বা.; ২ করিন্থীয় ১:২১; ১ যোহন ২:২০, ২৭.

১৮. কীভাবে পিতর বলেন যে মশীহের আবার বেঁচে ওঠার কথা গীতসংহিতায় লেখা ছিল?

১৮ গীতসংহিতার বইও বলে যে মৃতরা আবার বেঁচে উঠবে। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিত পিতর গীতসংহিতা ১৬:৮-১১ পদের কথা তুলে বলেছিলেন: “দায়ূদ তাঁর [খ্রীষ্টের] বিষয়ে বলেছেন—আমি প্রভুকে সব সময় আমার সামনে দেখি, কারণ তিনি আমার ডান দিকে আছেন, যেন আমি অস্থির না হই। এই জন্য আমার অন্তর আনন্দিত হয়, আমার জিভ্‌ আনন্দের কথা বলে, আমার দেহও আশা নিয়ে বাঁচবে; কারণ তুমি আমাকে মৃতস্থানে ফেলে রাখবে না, তোমার পবিত্রজনের দেহকে নষ্ট হতে দেবে না।’” এরপর পিতর আরও বলেছিলেন: “পরে কি হবে তা দায়ূদ দেখতে পেয়েছিলেন বলে মৃত্যু থেকে মশীহের আবার জীবিত হয়ে ওঠা সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, মৃতস্থানে মশীহকে ফেলে রাখা হয়নি এবং তাঁর দেহও নষ্ট হয়নি।”—প্রেরিত ২:২৫-৩২, প্রে.বা.

১৯, ২০. পিতর কখন গীতসংহিতা ১১৮:২২ পদ তুলে কথা বলেছিলেন আর এটা কীভাবে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু ও মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠাকে বোঝায়?

১৯ কিছুদিন পরে পিতর মহাসভায় কথা বলেছিলেন আর আবার গীতসংহিতা থেকে তুলে বলেছিলেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে কী করে তিনি একজন খোঁড়া ভিখারিকে সুস্থ করেছিলেন তখন উত্তরে প্রেরিত বলেছিলেন: “তবে আপনারা সকলে ও সমস্ত ইস্রায়েল লোক ইহা জ্ঞাত হউন, নাসরতীর যীশু খ্রীষ্টের নামে, যাঁহাকে আপনারা ক্রুশে দিয়াছিলেন, যাঁহাকে ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইলেন, তাঁহারই গুণে এই ব্যক্তি আপনাদের সম্মুখে সুস্থ শরীরে দাঁড়াইয়া আছে। তিনিই [যীশুই] সেই প্রস্তর, যাহা গাঁথকেরা যে আপনারা, আপনাদের দ্বারা অবজ্ঞাত হইয়াছিল, যাহা কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল। আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।”—প্রেরিত ৪:১০-১২.

২০ পিতর গীতসংহিতা ১১৮:২২ পদ তুলে কথা বলেছিলেন আর দেখিয়েছিলেন যে এইগুলো যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু ও মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠাকে বোঝায়। কীভাবে? যিহুদিরা তাদের ধর্মীয় নেতাদের কথা মতো চলে যীশুকে বিশ্বাস করেনি। (যোহন ১৯:১৪-১৮; প্রেরিত ৩:১৪, ১৫) ‘গাঁথকেরা’ যে ‘প্রস্তরকে’ অগ্রাহ্য করেছিল তার মানে হল তারা যীশুকে মেরে ফেলেছিল। আর “তাহা কোণের প্রধান প্রস্তর” হয়ে ওঠার মানে হল যে যীশু আত্মিক দেহ নিয়ে আবার বেঁচে উঠেছিলেন ও স্বর্গে গিয়েছিলেন। গীতরচক আগে থেকেই বলেছিলেন “ইহা সদাপ্রভু হইতেই হইয়াছে।” (গীতসংহিতা ১১৮:২৩) এই ‘প্রস্তরকে’ কোণের প্রধান প্রস্তর করার মানে হল যে যীশু খ্রীষ্ট রাজা হয়েছেন।—ইফিষীয় ১:১৯, ২০.

মৃতেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে একথা আমাদের কতই না আশা দেয়!

২১, ২২. মৃতেরা আবার বেঁচে উঠবে বলে ইয়োব ১৪:১৩-১৫ পদে ইয়োব কী বলেছিলেন আর আজকে সে কথায় আমরাও কীভাবে অনেক আশা পাই?

২১ যদিও আমরা কখনও কোন মৃতকে আবার বেঁচে উঠতে দেখিনি কিন্তু আমরা বাইবেল থেকে মৃতদের বেঁচে ওঠার ঘটনাগুলো পড়েছি। আর তা আমাদের বিশ্বাসকে অটল করে। তাই মৃতেরা আবার বেঁচে উঠবে বলে ইয়োব ১৪:১৩-১৫ পদে ইয়োব যা বলেছিলেন সে কথায় আমরাও অনেক আশা পাই। ইয়োব যখন কষ্ট পাচ্ছিলেন তখন যিহোবার কাছে বিনতি করে তিনি বলেছিলেন: “হায়, তুমি [যিহোবা] আমাকে পাতালে লুকাইয়া রাখিও, . . . আমার জন্য সময় নিরূপণ কর, আমাকে স্মরণ কর। মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে? . . . পরে তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব। তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করিবে।” যিহোবা ঈশ্বর যিনি ‘আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করেন’ তিনি ইয়োবকে আবার বাঁচিয়ে তোলার জন্য অধীর অপেক্ষা করছেন। একথা আমাদের কতই না আশা দেয়!

২২ আজকে যারা যিহোবাকে উপাসনা করেন তারা অসুস্থ হবেন যেমন ইয়োব হয়েছিলেন। আজকে যাদের আত্মীয়স্বজনেরা মারা যান তারা দুঃখে কাঁদবেন কারণ লাসার মারা যাওয়ায় যীশু কেঁদেছিলেন। (যোহন ১১:৩৫) কিন্তু একথা আমাদের কত সান্ত্বনা দেয় যে যিহোবা মৃত লোকেদের নাম ধরে ডাকবেন আর তারা উত্তর দেবে! এটা যেন ঠিক এমন যে তারা তাদের বেড়ানো শেষ করে ফিরে আসবেন। সম্পূর্ণ সুস্থ শরীরে।

২৩. কোন্‌ কথাগুলো বলে অনেকে দেখিয়েছেন যে তারা অটলভাবে বিশ্বাস করেন, মৃতেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে?

২৩ অনেক বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করার পর মণ্ডলীর একজন বয়স্ক বোন যখন মারা গিয়েছিলেন তখন সেই মণ্ডলীর অন্য ভাইবোনেরা তার ছেলেমেয়েদের লিখেছিলেন: “তোমাদের মা আর আমাদের প্রিয় বোনের মৃত্যুতে আমরা খুবই দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু অল্প সময় পরেই আমরা আবার আমাদের বোনকে ফিরে পাব, সম্পূর্ণ সুস্থসবল অবস্থায়!” যে বাবামা তাদের ছেলেকে হারিয়েছেন তারা বলেছিলেন: “জেসন যেদিন আবার ফিরে আসবে সে দিনটার জন্য আমরা কীভাবেই যে অপেক্ষা করে আছি তা বলার ভাষা আমাদের নেই! চারিদিকে তাকিয়ে নতুন জগৎ দেখে সে খুবই আনন্দ পাবে কারণ সে খুব চাইত যে পৃথিবীতে নতুন জগৎ আসুক। . . . আমাদের এটা কত বড় পাওয়া।” মৃত লোকেরা অবশ্যই আবার বেঁচে উঠবে জেনে যিহোবাকে আমাদের অন্তর থেকে কতই না ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করে!

আপনি কী উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বর মৃতদের আবার বাঁচিয়ে তুলবেন তা বিশ্বাস করে আমরা কোন্‌ সান্ত্বনা পাই?

• বাইবেল বলা কোন্‌ ঘটনাগুলো দেখে আমরা জানি যে মৃতেরা আবার বেঁচে উঠবে?

• কেন বলা যেতে পারে যে মৃতরা আবার বেঁচে উঠবে এটা অনেক পুরনো আশা?

• মৃতদের জন্য কোন্‌ আশা থাকায় আমরা আনন্দ করি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের শক্তিতে এলিয় এক বিধবার ছেলেকে আবার বাঁচিয়েছিলেন

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু যখন যায়ীরের মেয়েকে আবার বাঁচিয়েছিলেন, তার বাবামা চমৎকৃত হয়েছিল

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিত পিতর প্রমাণ দিয়েছিলেন যে যীশু আবার বেঁচে উঠেছেন