সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রীষ্টের মতো মনোভাব দেখান

খ্রীষ্টের মতো মনোভাব দেখান

খ্রীষ্টের মতো মনোভাব দেখান

“ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর এমন বর দিউন, যাহাতে তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে পরস্পর একমনা হও [খ্রীষ্টের মতো মনোভাব দেখাও]।”রোমীয় ১৫:৫.

১. একজনের মনোভাব কীভাবে তার জীবনে বিরাট ছাপ ফেলতে পারে?

 মানুষের মনোভাব তার জীবনের ওপর এক বিরাট ছাপ ফেলে। লোকেদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের মনোভাব দেখা যায়। যেমন, কেউ হয়তো উদাসীন হয়, কেউ বা পরিশ্রমী হয়। কারও হয়তো ভাল মনোভাব থাকে, কারও আবার খারাপ থাকে। কেউ হয়তো হিংসুটে হয় আবার কেউ হয়তো অন্যদের সাহায্য করতে চায়। কেউ কেউ হয়তো সবকিছুতে অভিযোগ করে আবার কেউ হয়তো কৃতজ্ঞ মনোভাব দেখাতে পারে। মোট কথা, একজন ব্যক্তি কোন একটা বিষয়কে কীভাবে নেবে এবং অন্যরা তাকে কোন্‌ চোখে দেখবে, তা অনেকটা তার মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। একজনের মনোভাব যদি ভাল থাকে, তাহলে কষ্টের মধ্যেও সে মুখে হাসি ধরে রাখতে পারে। কিন্তু, যার মনোভাব খারাপ তার কাছে সবকিছুকেই খারাপ বলে মনে হয়, এমনকি সবাই যেটাকে ভাল বলে সেটার মধ্যেও সে খুঁত খুঁজে পায়।

২. একজন ব্যক্তি কীভাবে মনোভাব গড়ে তুলতে শেখে?

ভাল-খারাপ দুরকম মনোভাব রয়েছে আর এ দুটোই গড়ে তুলতে শেখা যায়। হ্যাঁ, মনোভাব এমনি এমনি তৈরি হয় না এটা গড়ে তুলতে শিখতে হয়। নবজাত শিশুদের কথা বলতে গিয়ে কোলিয়ারস্‌ এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “কোন শিশু যেভাবে একটা ভাষা শেখে বা অন্য কোন কাজ শেখে, সেভাবেই তাকে মনোভাব অর্জন করতে বা গড়ে তুলতে শিখতে হয়।” এখন প্রশ্ন আসে যে কী করে আমরা মনোভাব গড়ে তুলতে পারি? একজনের মনোভাব ভাল না খারাপ হবে তার ওপর অনেক কিছুই প্রভাব ফেলতে পারে কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে আমরা যেখানে থাকি সেখানকার পরিবেশ এবং সেই ব্যক্তিরা, যাদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করি। ওই একই এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “আমরা যাদের সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশা করি তাদের মনোভাব শিখে ফেলি বা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নিই।” কয়েক হাজার বছর আগে বাইবেলও একইরকম কথা বলেছিল: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।”—হিতোপদেশ ১৩:২০; ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.

এক আদর্শ মনোভাব

৩. আদর্শ মনোভাব কে দেখিয়েছেন আর আমরা কী করে তাঁর মতো মনোভাব দেখাতে পারি?

যীশু খ্রীষ্ট আদর্শ মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত [আদর্শ] দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।” (যোহন ১৩:১৫) যীশুর মতো কাজ করতে চাইলে প্রথমে আমাদেরকে তাঁর সম্বন্ধে জানতে হবে। * প্রেরিত পিতরের কথা মতো কাজ করার জন্য আমরা যীশুর জীবনী অধ্যয়ন করি। পিতর বলেছিলেন: “তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ; কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর।” (১ পিতর ২:২১) যতটা সম্ভব আমরা যীশুর মতো কাজ করতে চাই। আর এর জন্য তাঁর মতো মনোভাব গড়ে তোলা দরকার।

৪, ৫. রোমীয় ১৫:১-৩ পদে যীশুর কোন্‌ গুণের কথা বলা হয়েছে আর খ্রীষ্টানরা কীভাবে তাঁর মতো কাজ করতে পারেন?

যীশু খ্রীষ্টের মতো মনোভাব গড়ে তোলার জন্য কী করা দরকার? রোমীয়দের কাছে লেখা পৌলের চিঠির ১৫ অধ্যায় আমাদেরকে এই উত্তর পেতে সাহায্য করে। পৌল এই অধ্যায়ের প্রথম কয়েকটা পদে যীশুর এক চমৎকার গুণের কথা বলেছেন। তিনি বলেন: “কিন্তু বলবান্‌ যে আমরা, আমাদের উচিত, যেন দুর্ব্বলদিগের দুর্ব্বলতা বহন করি, আর আপনাদিগকে তুষ্ট না করি। আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক। কারণ খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না, বরং যেমন লিখিত আছে, ‘যাহারা তোমাকে তিরস্কার করে, তাহাদের তিরস্কার আমার উপরে পড়িল।’”—রোমীয় ১৫:১-৩.

যীশুর মতো মনোভাব দেখানোর জন্য খ্রীষ্টানদের নিজেদের স্বার্থের কথা না ভেবে, নম্র মন নিয়ে অন্যদের সেবা করা উচিত। অন্যদের সেবা করার ইচ্ছা ‘বলবান্‌দের’ একটা গুণ। এই পৃথিবীতে যীশুই ছিলেন আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি দৃঢ় কিন্তু তিনি নিজের বিষয়ে বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।” (মথি ২০:২৮) খ্রীষ্টান হিসেবে আমরাও অন্যদেরকে, বিশেষ করে ‘দুর্ব্বলদিগকে’ সেবা করতে চাই।

৬. যীশুকে যখন ঠাট্টা ও নির্যাতন করা হয়েছিল তখন তিনি যেরকম মনোভাব দেখিয়েছিলেন আমরা কী করে সেরকম মনোভাব দেখাতে পারি?

এছাড়াও যীশুর আরেকটা ভাল গুণ হল যে তিনি অন্যদের সম্বন্ধে সবসময় ভাল চিন্তা করতেন ও অন্যদেরকে গড়ে তোলা যায় এমন কাজ করতেন। যিহোবাকে সেবা করার পথে তিনি কোন কিছুকেই বাধা হতে দেননি; আমাদেরও তা-ই করা উচিত। যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করায় যীশুকে ঠাট্টা ও নির্যাতন করা হয়েছিল কিন্তু তিনি সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছিলেন। তিনি জানতেন যে যারা প্রতিবেশীদের “গাঁথিয়া তুলিবার” জন্য তাদেরকে খুশি করতে চান, এই জগতের বোকা ও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না এমন লোকেরা তাদের বাধা দেবেই।

৭. যীশু কীভাবে ধৈর্য দেখিয়েছিলেন আর আমাদেরও কেন একই মনোভাব দেখানো উচিত?

অন্যান্য বিষয়েও যীশু ঠিক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি কখনও যিহোবার ওপর অধৈর্য হননি বরং যিহোবা কখন তাঁর উদ্দেশ্যগুলো পূর্ণ করেন তার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। (গীতসংহিতা ১১০:১; মথি ২৪:৩৬; প্রেরিত ২:৩২-৩৬; ইব্রীয় ১০:১২, ১৩) এছাড়া যীশু তাঁর শিষ্যদের বিষয়েও কখনও অধৈর্য হননি। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন: “আমার কাছে শিক্ষা কর;” তিনি “মৃদুশীল” ছিলেন তাই তাঁর শিক্ষা, অন্যদের গড়ে তুলত ও সতেজ করত। তিনি “নম্রচিত্ত” ছিলেন বলে কখনও অহংকার করেননি বা এমনভাবে কথা বলেননি, যা শিষ্যদের বুঝতে অসুবিধা হয়। (মথি ১১:২৯) পৌল আমাদেরকে যীশুর মতো মনোভাব দেখাতে বলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব [মনোভাব] ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক। ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন।”—ফিলিপীয় ২:৫-৭.

৮, ৯. (ক) নিঃস্বার্থ মনোভাব গড়ে তোলার জন্য কেন আমাদের চেষ্টা করতে হবে? (খ) যীশু যে আদর্শ রেখে গেছেন, তা একেবারে ঠিক ঠিক মতো মেনে চলতে না পারলে কেন আমাদের ভেঙে পড়া উচিত না আর এই বিষয়ে পৌল কীভাবে ভাল উদাহরণ ছিলেন?

এটা বলা অনেক সহজ যে আমরা অন্যদের সেবা করতে চাই এবং নিজেদের নয় কিন্তু অন্যদের স্বার্থকে বড় করে দেখতে চাই। কিন্তু, আমরা যদি আমাদের নিজেদের মনোভাবকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করি, তাহলে হয়তো দেখা যাবে যে আমাদের মন আসলে সেরকমটা চায় না। এর কারণ কী? প্রথম কারণটা হল, আদম ও হবার কাছ থেকে আমরা স্বার্থপর মনোভাব পেয়েছি আর দ্বিতীয় কারণটা হল, আমরা এমন এক জগতে থাকি, যেখানে স্বার্থপরতা দিন দিন শুধু বেড়েই চলেছে। (ইফিষীয় ৪:১৭, ১৮) নিঃস্বার্থ মনোভাব গড়ে তোলার মানে হল, আমাদের অসিদ্ধ মন যা কিছু চিন্তা করে তার উলটো বিষয় চিন্তা করা। এর জন্য ইচ্ছা ও অনেক চেষ্টার দরকার।

আমরা অসিদ্ধ বলে যীশুর রেখে যাওয়া নিখুঁত আদর্শকে একেবারে ঠিক ঠিক মতো মেনে চলতে পারি না আর সেইজন্য আমাদের মন ভেঙে যায়। আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে যীশুর মতো মনোভাব রাখা কোনদিনও সম্ভব নয়। কিন্তু, এই বিষয়ে উৎসাহ দিয়ে পৌল কী বলেছিলেন দেখুন: “আমি জানি যে আমাতে, অর্থাৎ আমার মাংসে, উত্তম কিছুই বাস করে না; আমার ইচ্ছা উপস্থিত বটে, কিন্তু উত্তম ক্রিয়া সাধন উপস্থিত নয়। কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি। বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে।” (রোমীয় ৭:১৮, ১৯, ২২, ২৩) সত্যি, অসিদ্ধ হওয়ায় পৌল চাইলেও সবসময় ঈশ্বরের ইচ্ছা মতো কাজ করতে পারতেন না কারণ তার অসিদ্ধতা তাকে পিছিয়ে দিত। কিন্তু, তার মনোভাব অর্থাৎ যিহোবার জন্য তার যেরকম অনুভূতি ছিল ও তাঁর ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি যেভাবে চিন্তা করতেন, তা আমাদের জন্য খুবই ভাল উদাহরণ। আমরাও তার মতো করতে পারি।

ভুল মনোভাব শোধরানো

১০. পৌল ফিলিপীয়দের কোন্‌ মনোভাব গড়ে তোলার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন?

১০ সত্যিই কি কেউ তার ভুল মনোভাবকে শোধারাতে পারে? হ্যাঁ, পারে। প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রীষ্টান পেরেছিলেন। পৌল ফিলিপীয়দের কাছে চিঠি লিখেছিলেন যে কী করে ঠিক মনোভাব রাখা যায়। তিনি লিখেছিলেন: “আমি যে জন্য চেষ্টা করছি তা [প্রথম পুনরুত্থানের মাধ্যমে স্বর্গীয় জীবন] এখনই যে পেয়ে গেছি, কিম্বা পূর্ণতা লাভ করে ফেলেছি, এমন নয়। কিন্তু যে জন্য খ্রীষ্ট যীশু আমাকে ধরেছিলেন, সেটাই ধরবার জন্য আমি ছুটে চলেছি। ভাইয়েরা, আমি যে সেটা ধরতে পেরেছি তা মনে করি না। তবে একটা কাজ আমি করছি—পিছনের সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে সব শক্তি দিয়ে আমি শেষ সীমার দিকে ছুটে চলেছি। এতে যেন খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের স্বর্গমুখী ডাকের মধ্যে যে পুরস্কার রয়েছে, তা আমি পাই। এই জন্য, আমরা যারা পূর্ণতার দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছি, আমাদের সেই বিষয়ে একই রকম মনোভাব থাকা উচিত।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—ফিলিপীয় ৩:১২-১৫, প্রেমের বাণী।

১১, ১২. কী কী উপায়ে যিহোবা আমাদেরকে ঠিক মনোভাব দেখিয়ে দেন?

১১ পৌলের কথা থেকে বোঝা যায় যে খ্রীষ্টান হওয়ার পরেও কেউ যদি আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য তাগিদ বোধ না করে, তাহলে তার মনোভাব ঠিক নয়। তিনি খ্রীষ্টের মতো মনোভাব গড়ে তুলতে পারেননি। (ইব্রীয় ৪:১১; ২ পিতর ১:১০; ৩:১৪) এর মানে কি তার কোনই আশা নেই? কখনোই না। আমরা যদি সত্যি সত্যি আমাদের মনোভাব পালটাতে চাই, তাহলে ঈশ্বর আমাদেরকে সাহায্য করবেন। এই বিষয়ে পৌল বলেন: “যদি কোন বিষয়ে তোমাদের অন্য রকম মনোভাব থাকে, তবে ঈশ্বর তোমাদের তাও দেখিয়ে দেবেন।”—ফিলিপীয় ৩:১৫, প্রে.বা.

১২ কিন্তু, আমরা যদি চাই যে ঈশ্বর আমাদেরকে ঠিক মনোভাব দেখিয়ে দেন, তাহলে আমাদেরও চেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি এবং “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” শ্রেণী যে সমস্ত বইপত্রিকা জোগান সেগুলোর সাহায্য নিয়ে বাইবেল পড়ি, তাহলে আমরা আমাদের “অন্য রকম মনোভাব”-কে পালটে ঠিক মনোভাব গড়ে তুলতে পারব। (মথি ২৪:৪৫) এছাড়াও, ‘ঈশ্বরের মণ্ডলীকে পালন করার’ জন্য পবিত্র আত্মা প্রাচীনদের নিযুক্ত করেছে আর এই প্রাচীনেরা খুশি মনে আমাদের সাহায্য করতে চান। (প্রেরিত ২০:২৮) আমরা যিহোবার কাছে সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ কারণ তিনি সবসময় মনে রাখেন যে আমরা অসিদ্ধ আর তাই মাঝে মধ্যে ভুল করে ফেললে তিনি প্রেম দেখিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করেন! আসুন আমরা যিহোবার সাহায্যকে মেনে নিই।

অন্যদের কাছ থেকে শেখা

১৩. বাইবেলে ইয়োবের বিবরণ থেকে ঠিক মনোভাব সম্বন্ধে আমরা কী শিখি?

১৩ রোমীয় ১৫ অধ্যায়ে পৌল দেখান যে আগের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কথা মন দিয়ে চিন্তা করলে, তা আমাদের মনোভাব পালটাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি লেখেন: “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) প্রাচীনকালে, যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত দাসদেরকেও তাদের মনোভাব পালটাতে হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে ইয়োবের কথা বলা যায়। এমনিতে তিনি খুব ভাল মনের মানুষ ছিলেন। তিনি কখনও যিহোবার বিষয়ে খারাপ কথা বলেননি আর দুঃখকষ্টের মধ্যেও যিহোবার ওপর তাঁর বিশ্বাস অটল ছিল। (ইয়োব ১:৮, ২১, ২২) কিন্তু, একসময় তিনি নিজেকে বেশি ধার্মিক দেখাতে চেয়েছিলেন। তখন যিহোবা তার মনোভাব পালটাতে সাহায্য করার জন্য ইলীহূকে পাঠিয়েছিলেন। এতে ইয়োব অপমান বোধ করেননি বরং নম্রভাবে মেনে নিয়েছিলেন যে তাকে তার মনোভাব পালটাতে হবে আর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তা করেছিলেন।—ইয়োব ৪২:১-৬.

১৪. আমাদের মনোভাব পালটানোর ব্যাপারে কেউ যদি আমাদের পরামর্শ দেন তখন আমরা কীভাবে ইয়োবের মতো হতে পারি?

১৪ কোন খ্রীষ্টান ভাই বা বোন যদি ভাল মন নিয়ে আমাদের দেখিয়ে দেন যে কোন একটা বিষয়ে আমাদের মনোভাব ভুল, তাহলে ইয়োবের মতো আমরা কি তা মেনে নেব? ইয়োবের মতো আমরাও যেন “ঈশ্বরের প্রতি অবিবেচনার দোষারোপ” না করি। (ইয়োব ১:২২) আমাদের সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার করা হলেও আমরা যেন আমাদের দুঃখকষ্টের জন্য কখনও অভিযোগ না করি বা যিহোবাকে দোষ না দিই। নিজেদেরকে বেশি ধার্মিক দেখানোর চেষ্টা না করে আমরা যেন সবসময় মনে রাখি যে যিহোবার সেবা করার অনেক সুযোগ আমরা হয়তো পেয়েছি কিন্তু তারপরও আমরা “অনুপযোগী দাস।”—লূক ১৭:১০.

১৫. (ক) যীশুর কয়েকজন শিষ্য কোন্‌ ভুল মনোভাব দেখিয়েছিল? (খ) পিতর কীভাবে এক সুন্দর মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

১৫ প্রথম শতাব্দীতে, যীশুর কথা শুনে কেউ কেউ ভুল মনোভাব দেখিয়েছিল। একবার যীশু এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যা বোঝা সহজ ছিল না। সেই সময় “তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এ কথা শুনিয়া বলিল, এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?” যারা এভাবে কথা বলেছিল তাদের মনোভাব ঠিক ছিল না। আর তাদের ভুল মনোভাবের জন্য তারা আর যীশুর কথা শোনেনি। ওই বিবরণ বলে: “ইহাতে তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।” তাই বলে সব শিষ্যই কি ভুল মনোভাব দেখিয়েছিলেন? না। ওই বিবরণ বলে: “অতএব যীশু সেই বারো জনকে কহিলেন, তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে? শিমোন পিতর তাঁহাকে উত্তর করিলেন, প্রভু, কাহার কাছে যাইব?” এরপর পিতর তার নিজের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন: “আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।” (যোহন ৬:৬০, ৬৬-৬৮) কত সুন্দর মনোভাব! বাইবেলের কোন একটা পদ যখন আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় বা কোন একটা বিষয়ে আমাদের আগের ধারণাকে শুধরে দেওয়া হয় তখন প্রথম প্রথম তা মেনে নিতে হয়তো একটু মুশকিল মনে হয় কিন্তু তবুও আমাদের কি পিতরের মতো মনোভাব দেখানো ভাল নয়? বাইবেলের কোন কোন বিষয় বোঝা কঠিন মনে হয় বলে যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দেওয়া বা ‘নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শের’ বিপরীত কথা বলা, কত বোকামির কাজই না হবে!—২ তীমথিয় ১:১৩.

১৬. যীশুর দিনের যিহুদি ধর্মের নেতারা কোন্‌ জঘন্য মনোভাব দেখিয়েছিল?

১৬ প্রথম শতাব্দীর যিহুদি ধর্মের নেতারা যীশুর মতো মনোভাব দেখায়নি। যীশু লাসারকে পুনরুত্থান করার পর তারা যে মনোভাব দেখিয়েছিল, তার থেকে বোঝা যায় যে তারা যীশুর কথা একেবারেই শুনতে চায় না। সঠিক মনোভাব আছে এমন যে কেউই ওই অলৌকিক কাজ দেখে এক বাক্যে বিশ্বাস করবেন যে ঈশ্বরই যীশুকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমরা পড়ি: “প্রধান যাজকগণ ও ফরীশীরা সভা করিয়া বলিতে লাগিল আমরা কি করি? এ ব্যক্তি ত অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিতেছে। আমরা যদি ইহাকে এইরূপ চলিতে দিই, তবে সকলে ইহাতে বিশ্বাস করিবে; আর রোমীয়েরা আসিয়া আমাদের স্থান ও জাতি উভয়ই কাড়িয়া লইবে।” তারা কী করেছিল? “সেই দিন অবধি তাহারা তাঁহাকে বধ করিবার মন্ত্রণা করিতে লাগিল।” তারা শুধু যীশুকে মেরে ফেলার চক্রান্তই করেনি কিন্তু তাঁর অলৌকিক কাজের জলন্ত প্রমাণকেও একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। “প্রধান যাজকেরা মন্ত্রণা করিল, যেন লাসারকেও বধ করিতে পারে।” (যোহন ১১:৪৭, ৪৮, ৫৩; ১২:৯-১১) আমরাও যদি এইরকম মনোভাব দেখাই এবং যে বিষয়গুলো দেখে আমাদের খুশি হওয়া উচিত, তা দেখে আমরা বিরক্ত হই, তাহলে তা কত জঘন্যই না হবে! আর এরকম মনোভাব বিপদও ডেকে আনবে!

যীশুর মতো ভাল মনোভাব দেখানো

১৭. (ক) কোন্‌ অবস্থায় দানিয়েল সাহস দেখিয়েছিলেন? (খ) যীশু কীভাবে সাহস দেখিয়েছিলেন?

১৭ যিহোবার দাসেরা সবসময় ভাল মনোভাব দেখান। দানিয়েলের শত্রুরা যখন চক্রান্ত করে একটা আইন বানিয়েছিল যে ৩০ দিন শুধু রাজা ছাড়া অন্য কোন দেবতা বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করা যাবে না তখন দানিয়েল জানতেন যে এটা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর আঘাত আনবে। এই ঘোষণা শুনে তিনি কি ৩০ দিন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন? কখনোই না। বরং তিনি সাহস দেখিয়ে বরাবরের মতোই দিনে তিনবার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। (দানিয়েল ৬:৬-১৭) একইভাবে যীশুও তাঁর শত্রুদেরকে ভয় করেননি। এক বিশ্রামবারে যীশু এমন একজন রোগীর কাছে গিয়েছিলেন, যার হাত শুকিয়ে গিয়েছিল। যীশু জানতেন যে তিনি যদি বিশ্রামবারে কাউকে সুস্থ করেন, তাহলে যিহুদিরা রেগে যাবে। তাই তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সেই বিষয়ে তারা কী মনে করে। যখন তারা চুপ করে ছিল তখন যীশু কাছে এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে সুস্থ করেছিলেন। (মার্ক ৩:১-৬) যে কাজকে যীশু ঠিক মনে করতেন সেই কাজ করা থেকে তিনি কখনও পিছপা হননি।

১৮. কিছু লোকেরা কেন আমাদের বিরোধিতা করে কিন্তু কেউ খারাপ ব্যবহার করলে আমরা কী করব?

১৮ আজকে যিহোবার সাক্ষিরা জানেন যে বিরোধীদের কাজ দেখে তাদেরও ভয় পাওয়া উচিত নয়। যদি তারা ভয় পান, তাহলে তারা যীশুর মতো মনোভাব দেখাতে পারবেন না। আজকে, অনেকে যিহোবার সাক্ষিদের বিরোধিতা করে কারণ তারা সাক্ষিদের সম্বন্ধে ঠিক মতো জানে না এবং কেউ কেউ যিহোবার সাক্ষিদেরকে ও তাদের প্রচার কাজকে পছন্দ করে না। কিন্তু, কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তা দেখে আমাদের মন যেন ভেঙে না যায়। আমাদের উপাসনায় কোন কিছুকেই বাধা হতে দেওয়া উচিত নয়।

১৯. আমরা কী করে যীশু খ্রীষ্টের মতো মনোভাব দেখাতে পারি?

১৯ যীশু তাঁর শিষ্যদের ও ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি সবসময় ভাল মনোভাব দেখিয়েছিলেন, যদিও তা করা খুব সহজ ছিল না। (মথি ২৩:২, ৩) আমাদেরও তাঁর মতো মনোভাব দেখানো উচিত। এটা ঠিক যে আমাদের ভাইবোনেরা অসিদ্ধ ও ভুল করেন কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত যে আমরাও অসিদ্ধ। সারা পৃথিবীতে আমাদের যে খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা আছেন তারা ছাড়া আর কে আমাদের সত্যিকারের বন্ধু হতে পারে? যিহোবা এখনও আমাদেরকে তাঁর বাক্য পুরোপুরি বোঝার ক্ষমতা দেননি কিন্তু আমরা ছাড়া আর কোন ধর্মীয় দল কি এর চেয়ে ভাল বাইবেল বোঝে? তাই আসুন আমরা সবসময় যীশু খ্রীষ্টের মতো ঠিক মনোভাব রাখি। ভাল মনোভাব রাখতে হলে যিহোবার জন্য অপেক্ষা করতে শেখাও দরকার। আর সেই বিষয়টাই আমরা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করব।

[পাদটীকা]

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন বইয়ে যীশুর জীবন ও প্রচার কাজ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি কি বলতে পারেন?

• আমাদের মনোভাব কীভাবে আমাদের জীবনের ওপর ছাপ ফেলে?

• যীশু খ্রীষ্টের মনোভাব কেমন ছিল তা বলুন।

• ইয়োবের মনোভাব থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• বিরোধিতার মুখে কোন্‌ মনোভাব রাখা ঠিক?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যে খ্রীষ্টানদের ভাল মনোভাব থাকে তারা অন্যদের সাহায্য করতে চান

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রার্থনা করে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করলে, তা আমাদেরকে খ্রীষ্টের মতো মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে