সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সাহায্যের জন্য অনেকে মরিয়া

সাহায্যের জন্য অনেকে মরিয়া

সাহায্যের জন্য অনেকে মরিয়া

 “ঈশ্বর আমাকে ভুলে গেছেন!” ব্রাজিলের একজন মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন। স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুতে তিনি এতই ভেঙে পড়েছিলেন যে তার মনে হয়েছিল বেঁচে থাকার আর কোন মানে হয় না। আপনি কি কখনও এমন কাউকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করেছেন যিনি হতাশায় একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন বা সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন?

কেউ কেউ এতটাই ভেঙ্গে পড়েন যে তারা শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করেন। আর এদের বেশির ভাগই হল যুবক-যুবতী। ফোলহা ডি সাও পাওলো নামের খবরের কাগজ বলে, ব্রাজিলে এই বিষয়ে গবেষণা করে জানা গেছে যে, “ব্রাজিলে যুবক-যুবতীদের আত্মহত্যার হার ২৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।” যেমন, * সাও পাওলোর যুবক ভালটরের কথাই ধরুন। তার বাবামা, বন্ধুবান্ধব কেউ ছিল না, যাদের কাছে সে তার মনের কথা বলতে পারে। তার বাড়িঘর বা এমন কোন জায়গা ছিল না যেখানে সে থাকতে পারে বা একটু নিরিবিলি পেতে পারে। এই দুরবস্থা থেকে বাঁচতে সে একটা পুল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে ঠিক করে।

এডনা একলা তার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকে। একদিন হঠাৎই তার একজন লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। আর এক মাস যেতে না যেতেই এডনা সেই লোকের মায়ের বাড়িতে দুজনে একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। এই লোকের মা ছিল মাতাল ও সে প্রেতচর্চা করত। ইতিমধ্যে এডনার আরেকটা বাচ্চা হয় ও এডনা খুব মদ খেতে শুরু করে। এডনা এতই হতাশ হয়ে পড়ে যে সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। শেষে, এমন একটা সময় আসে যখন তার কাছ থেকে তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে নেওয়া হয়।

বয়স্ক লোকেদের বিষয়েই বা কী বলা যায়? মারিয়া লোকেদের সঙ্গে গল্পগুজব ও হাসিঠাট্টা করতে ভালবাসতেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, তিনি ভয় পেতে থাকেন যে তিনি যদি কাজে কিছু ভুল করেন, তাহলে তার নার্সের চাকরি রক্ষা করা দায় হয়ে উঠবে। চিন্তায় চিন্তায় তিনি একেবারে ভেঙে পড়েন। তিনি নিজে নিজে কিছু ওষুধপালা খেতে শুরু করেন কিন্তু কোন কাজ হয় না। পরে ডাক্তার দেখিয়ে তিনি কিছুটা সুস্থ হন। কিন্তু ৫৭ বছর বয়সে মারিয়া যখন তার চাকরি হারান তখন তিনি হতাশায় ডুবে যান। তিনি ভাবতে থাকেন আত্মহত্যা করা ছাড়া এখন তার সামনে আর কোন পথ নেই।

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জোস এলবার্টু ডেল পোর্টু বলেন, “হতাশ লোকেদের শতকরা ১০ ভাগ আত্মহত্যা করে।” আমেরিকার এক ডাক্তার ডেভিড স্যাচর বলেন, “আজকে অন্যের হাতে খুন হয়ে যত লোকে না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক নিজেরা নিজেদের খুন করে, যা খুবই দুঃখের।”

যখন কেউ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে তখন তা দেখায় যে সে সাহায্যের জন্য মরিয়া। আর কোন সন্দেহ নেই যে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবেরা তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে চাইবেন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে যারা একেবারে ভেঙে পড়েছেন তাদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে এই কথাগুলো না বলাই ভাল, যেমন: “এত ভেঙে পড়ো না”, “কারও কারও অবস্থা তো তোমার থেকেও খারাপ” বা, “আমাদের সবার জীবনেই কখনও না কখনও খারাপ সময় আসে।” এর বদলে বরং, সত্যিকারের বন্ধু হয়ে তার কথা শুনুন না কেন? হতাশ ব্যক্তিকে বোঝাবার চেষ্টা করুন যে জীবন সত্যিই অমূল্য।

ফরাসি লেখক ভলতেয়ার লিখেছিলেন: “আজকে যে হতাশায় নিজেকে মেরে ফেলতে চায়, সে-ই যদি এক সপ্তা অপেক্ষা করে, তাহলে তার মধ্যে নতুন করে বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগতে পারে।” তাহলে, এখন প্রশ্ন হল যারা হতাশ তারা কীভাবে বুঝবেন যে জীবন সত্যিই অমূল্য?

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যুবক-যুবতী ও বয়স্ক লোকেদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেড়ে চলেছে

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কীভাবে একজন হতাশ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারেন?