আপনি নৈতিকভাবে পবিত্র থাকতে পারেন
আপনি নৈতিকভাবে পবিত্র থাকতে পারেন
“ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।”—১ যোহন ৫:৩.
১. আজকে ঈশ্বরের লোকেদের চালচলন, যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে না তাদের চেয়ে কীভাবে আলাদা?
অনেক বছর আগে মালাখি ঈশ্বরের শক্তিতে ভাববাণী করেছিলেন যে এমন এক সময় আসবে যখন ঈশ্বরের লোকেদের চালচলন, যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে না তাদের চেয়ে একেবারে আলাদা হবে। তিনি লিখেছিলেন: “তখন তোমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে।” (মালাখি ৩:১৮) আজকে এই ভাববাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। জীবনে ঈশ্বরের নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে সবচেয়ে ভাল ও বুদ্ধির কাজ আর যার মধ্যে নৈতিকভাবে পবিত্র থাকার নিয়মগুলোও রয়েছে। কিন্তু সবসময় তা খুব সহজ নয়। তাই যীশু বলেছিলেন যে ঈশ্বরের উপাসকেরা যদি নিজেদের জীবন বাঁচাতে চায়, তাহলে তাদের প্রাণপণ চেষ্টা করা দরকার আর সে কথা খুবই সত্যি।—লূক ১৩:২৩, ২৪.
২. জগতের চাপগুলো কী যার জন্য নৈতিকভাবে পবিত্র থাকা খুব সহজ নয়?
২ নৈতিকভাবে পবিত্র থাকা কেন খুব সহজ নয়? কারণ জগৎ আমাদের চাপ দেয়। মনোরঞ্জন জগৎ অবৈধ যৌনতাকে খুবই নজরকাড়া, আনন্দদায়ক করে আমাদের সামনে তুলে ধরে কিন্তু এর খারাপ ফলাফলের কথা সবসময়ই আড়াল করে। (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯) বেশির ভাগ সময়েই এমন নারী পুরুষের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক দেখানো হয় যারা বিবাহিত নয়। প্রায়ই সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালে যে যৌন সম্পর্ক দেখানো হয় তা দেখায় যে যৌনতা খুবই হালকা ব্যাপার আর এরজন্য কারও কোন দায়িত্ব নেই। ভালবাসা বা একে অন্যকে সম্মান করার কোন ব্যাপার এখানে নেই। অনেকে খুব ছোটবেলা থেকেই এই সমস্ত দেখতে থাকে। এছাড়া সঙ্গীসাথীদের চাপও আজকের এই বেপরোয়া অনৈতিক হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য হাতছানি দেয়। আর যারা তাতে রাজি হয় না অন্যেরা তাদের ঠাট্টা করে ও তাদের নামে কুৎসা রটায়।—১ পিতর ৪:৪.
৩. অনেকে কোন্ কারণগুলো দেখিয়ে যৌন অনৈতিকতা করে?
৩ আমাদের কামনাবাসনার জন্যও নৈতিকভাবে পবিত্র থাকা খুব সহজ হয় না। যিহোবা মানুষকে যৌন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর এই ইচ্ছা কখনও কখনও খুবই জোরালো হতে পারে। আমাদের ইচ্ছার সঙ্গে আমাদের চিন্তার গভীর যোগ আছে। আর আমাদের চিন্তাভাবনা যদি যিহোবার চিন্তার সঙ্গে না মেলে, তাহলে আমরা সহজেই অনৈতিকতা করে ফেলতে পারি। (যাকোব ১:১৪, ১৫) অনেকে কোন্ কারণগুলো দেখিয়ে যৌন অনৈতিকতা করে? ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে আজকালেই বেরোনো একটা সমীক্ষা জানায়, অনেকেই যারা প্রথমবার যৌন সহবাস করে তারা তা করতে কেমন লাগে জানার কৌতুহলেই করে। অনেক মেয়েরা মনে করে যে তাদের বয়সী অনেকেই যৌনতার স্বাদ পেয়েছে তাই তারাও তাদের সতীত্ব ভেঙে ফেলতে চায়। আবার অন্য অনেকে বলে যে তারা আবেগে পড়ে তা করেছে বা “সেই সময় তারা নেশার ঘোরে ছিল।” কিন্তু আমরা যদি ঈশ্বরকে খুশি করতে চাই, তাহলে আমাদের অন্যভাবে চিন্তা করা দরকার। তাহলে কোন্ ধরনের চিন্তাভাবনায় মন ভরালে আমরা নৈতিকভাবে পবিত্র থাকতে পারব?
মনে অটল বিশ্বাস গড়ে তুলুন
৪. নৈতিকভাবে পবিত্র থাকার জন্য আমাদের কী থাকা দরকার?
৪ নৈতিকভাবে পবিত্র থাকার জন্য আমাদের মনে অটল বিশ্বাস থাকা দরকার যে আমরা যেভাবে জীবন কাটাচ্ছি সেটাই সবচেয়ে ভাল। প্রেরিত পৌল তার রোমের ভাইবোনদেরকে ঠিক এ কথাই লিখেছিলেন: “তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” (রোমীয় ১২:২) নৈতিকভাবে পবিত্র থাকা যে সত্যিই ভাল তা বোঝার মানে শুধু এটুকুই জানা নয় যে ঈশ্বরের বাক্য অনৈতিকতা করতে নিষেধ করে। কিন্তু কেন ঈশ্বরের বাক্য অনৈতিকতা করতে নিষেধ করে তা আমাদের বোঝা দরকার ও অনৈতিকতা না করায় আমাদের লাভ কী তা জানা দরকার। আগের প্রবন্ধে আমরা এর কয়েকটা কারণ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।
৫. যিহোবা ঈশ্বরের সেবকদের জন্য যৌন অনৈতিকতা না করার সবচেয়ে বড় কারণটা কী?
৫ যিহোবা ঈশ্বরের সেবকদের জন্য যৌন অনৈতিকতা না করার সবচেয়ে বড় কারণটা হল যে যিহোবার সঙ্গে আমাদের এক কাছের সম্পর্ক আছে। আমরা জানি যে আমাদের কীসে ভাল তা তাঁর চেয়ে বেশি আর কেউ জানেন না। আমরা তাঁকে ভালবাসি আর সেই ভালবাসা আমাদের খারাপ কাজ করতে বাধা দেয়। (গীতসংহিতা ৯৭:১০) ঈশ্বর আমাদের “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর” দিয়েছেন। (যাকোব ১:১৭) তিনি আমাদের ভালবাসেন। তাঁর বাধ্য থেকে আমরা দেখাই যে আমরাও তাঁকে ভালবাসি ও তিনি আমাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। (১ যোহন ৫:৩) তাই যিহোবার দেওয়া আদেশ ভেঙে আমরা তাঁকে দুঃখ দিতে চাই না। (গীতসংহিতা ৭৮:৪১) আমরা এমন কোন কাজ করতে চাই না যাতে লোকেরা তাঁর পবিত্র ও সত্য উপাসনার বিষয়ে খারাপ কথা বলে। (তীত ২:৫; ২ পিতর ২:২) নৈতিকভাবে পবিত্র থেকে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তিকে খুশি করি।—হিতোপদেশ ২৭:১১.
৬. অন্যদের আপনার ইচ্ছার কথা জানানো কীভাবে আপনাকে রক্ষা করবে?
৬ যে কোন মূল্যেই আমরা নৈতিকভাবে পবিত্র থাকব একবার এ কথা ঠিক করে নেওয়ার পর অন্যদের আপনার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিন। লোকেদের জানান যে আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি আর আপনি তাঁর উচ্চ নৈতিক মান মেনে চলার ব্যাপারে অটল। জীবন আপনার, দেহ আপনার, আপনি বেছে নেবেন। আপনি যদি তা না করেন, তাহলে কী বিপদ হতে পারে? আপনার পিতা যিনি স্বর্গে থাকেন তাঁর সঙ্গে আপনার অমূল্য সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিন যে নৈতিকভাবে পবিত্র থাকার জন্য আপনার ইচ্ছা এদিকওদিক হওয়ার নয়। ঈশ্বরের নীতি মেনে চলে তাঁর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকাটা আপনার জন্য গর্বের বিষয়। (গীতসংহিতা ৬৪:১০) অন্যদের কাছে আপনার নৈতিক মান সম্বন্ধে বলতে লজ্জা পাবেন না। আপনি যদি সাহসের সঙ্গে সবার সামনে আপনার ইচ্ছার কথা জানান, তাহলে তা আপনাকে রক্ষা করবে, শক্তি দেবে ও অন্যদের মধ্যেও আপনার মতো চলার ইচ্ছা জাগাবে।—১ তীমথিয় ৪:১২.
৭. উচ্চ নৈতিক মান মেনে চলব বলে ঠিক করার পর কীভাবে আমরা সেই ইচ্ছায় অটল থাকতে পারি?
৭ উচ্চ নৈতিক মান মেনে চলব বলে ঠিক করা ও সকলকে তা জানানোর পর আমাদের নিজেদের সেই ইচ্ছায় অটল থাকতে হবে। এর একটা উপায় হল খুব বুঝেশুনে বন্ধু বাছা। বাইবেল বলে: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে।” শুধু তাদের সঙ্গেই মিশুন যারা আপনার মতো নৈতিক মানকে সম্মান করে। তারা আপনাকে আপনার পথে অটল থাকতে সাহায্য করবে। কিন্তু এরপর বাইবেল বলে: “যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) সেই লোকেদেরকে যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন যারা আপনার অটল ইচ্ছাকে ভেঙে দিতে পারে।—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.
৮. (ক) কেন আমাদের মনকে ভাল বিষয়গুলো দিয়ে ভরে রাখা দরকার? (খ) আমাদের কী এড়িয়ে চলা দরকার?
৮ এছাড়া আমাদের মনকে সত্য, আদরণীয়, ন্যায্য, বিশুদ্ধ, প্রীতিজনক, সুখ্যাতিযুক্ত বিষয় সদ্গুণ ও কীর্ত্তি এই ভাল বিষয়গুলো দিয়ে ভরে রাখা দরকার। (ফিলিপীয় ৪:৮) তা করতে হলে আমাদের দেখা, পড়া ও গানবাজনা শোনায় কোন বাছবিচার না থাকলে চলবে না। আমরা যদি বলি যে অনৈতিক বইপত্র আমাদের উপর কোন খারাপ ছাপ ফেলে না, তাহলে আমরা বলছি যে ভাল বইপত্রও আমাদের উপর কোন ভাল ছাপ ফেলে না। মনে রাখুন যে অসিদ্ধ হওয়ায় আমরা খুব সহজেই অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়তে পারি। যে বই, পত্রিকা, সিনেমা, ও গান যৌনতাকে খোলাখুলি দেখায় সেগুলোকে আমাদের এড়িয়ে চলা দরকার কারণ সেগুলো আমাদের মধ্যে খারাপ ইচ্ছা জাগিয়ে তুলবে ও ফলে আমরা শেষপর্যন্ত পাপ করে বসব। নৈতিকভাবে পবিত্র থাকার জন্য আমাদের মনকে ঈশ্বরের জ্ঞানে ভরে রাখা দরকার।—যাকোব ৩:১৭.
যে ধাপ অনৈতিকতার দিকে নিয়ে যায়
৯-১১. শলোমন যেমন বলেছেন কোন্ কোন্ ধাপ একজন যুবককে অনৈতিকতার পথে নিয়ে যায়?
৯ প্রায়ই যে ধাপগুলো অনৈতিকতার দিকে নিয়ে যায় সেগুলোকে আমরা চিনি। এক একটা ধাপ যাওয়া মানেই সেই পথ থেকে ফিরে আসা আরও কঠিন হয়ে পড়া। হিতোপদেশ ৭:৬-২৩ পদে কীভাবে এটাকে বলা হয়েছে দেখুন। শলোমন একজন ‘বুদ্ধিবিহীন যুবককে’ দেখেছিলেন যার মনে কুচিন্তা ছিল। সেই যুবক “গলিতে গেল, ঐ স্ত্রীর [এক বেশ্যার] কোণের নিকটে আসিল, তাহার বাটীর পথে চলিল। তখন সন্ধ্যাকাল, দিবাবসান হইয়াছিল।” এখানেই সে ভুল করে প্রথম ধাপ যায়। সন্ধ্যে বেলায় তার “হৃদয়” তাকে সেই পথেই নিয়ে যায় যেখানে গেলে সে জানে যে এক বেশ্যার দেখা পাওয়া যাবে।
১০ এরপর আমরা পড়ি: “দেখ, এক স্ত্রী তাহার সম্মুখে আসিল, সে বেশ্যা-বেশধারিণী ও চতুর-চিত্তা।” এই যুবক তাকে দেখে! সে এখন পিছন ফিরে ঘরে চলে যেতে পারত কিন্তু এখন তা করা তার জন্য বেশ কঠিন কারণ নৈতিক দিক দিয়ে এই যুবক ভাল নয়। সেই বেশ্যা তাকে জড়িয়ে ধরে ও চুমু খায়। এরপর এই যুবক তার নিলর্জ্জ কথাগুলো শোনে। সেই বেশ্যা বলে: “‘আমাকে মঙ্গলার্থক বলিদান করিতে হইয়াছে; আজ আমি আপন মানত পূর্ণ করিয়াছি।’” মঙ্গলার্থক বলিদানের জন্য মাংস, ময়দা, তেল ও দ্রাক্ষারস লাগত। (লেবীয় পুস্তক ১৯:৫, ৬; ২২:২১; গণনাপুস্তক ১৫:৮-১০) এই কথাগুলো বলে সে হয়তো বোঝাতে চাইছিল যে ধর্মেকর্মে তার খুবই মন আছে আর একই সঙ্গে সে এই যুবককে জানিয়ে দিচ্ছিল যে তার ঘরে ভালমন্দ খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা করা আছে। “চল, আমরা প্রভাত পর্য্যন্ত কামরসে মত্ত হই, আমরা প্রেম বাহুল্যে বিলাস করি,” সে বলে।
১১ এর ফলাফল আন্দাজ করা কঠিন কিছু নয়। “ওষ্ঠাধরের চাটুবাদে তাহাকে আকর্ষণ করিল।” আর সেই যুবক “তাহার পশ্চাতে গেল, যেমন গোরু হত হইতে যায়।” ও “যেমন পক্ষী ফাঁদে পড়িতে বেগে ধাবিত হয়।” এরপর শলোমন এই গম্ভীর কথাগুলো বলে শেষ করেন: “আর জানে না যে, তাহা প্রাণনাশক।” এতে তার প্রাণ যেতে পারে “কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) পুরুষ ও স্ত্রী দুজনের জন্যই কত বড় শিক্ষার বিষয়! ঈশ্বরকে অখুশি করে এমন কোন বিষয়ে আমাদের এমনকি প্রথম ধাপ যাওয়াও একেবারে উচিত নয়।
১২. (ক) “বুদ্ধিবিহীন” এই কথা থেকেই আমরা কী বুঝতে পারি? (খ) আমরা কীভাবে নৈতিক দিক দিয়ে অটল হতে পারি?
১২ খেয়াল করে দেখুন যে এই যুবকের জন্য বলা হয়েছে, সে “বুদ্ধিবিহীন।” এই কথা থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে এই যুবকের চিন্তা, ইচ্ছা, আবেগ অনুভূতি ও জীবনের পথ ঈশ্বরকে খুশি করার মতো ছিল না। তার নৈতিক মান ভাল না হওয়ায় তার জন্য তা খুবই খারাপ ফল নিয়ে এসেছিল। তাই এই বিষম “শেষকালে” নৈতিক দিক দিয়ে অটল হওয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা করা দরকার। (২ তীমথিয় ৩:১) তা করায় যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন। তিনি আমাদের ঠিক পথে চলার জন্য মণ্ডলীর ব্যবস্থা করেছেন যেখানে আমরা সেই লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পাই যারা আমাদের মতো একই পথে চলছেন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) মণ্ডলীতে প্রাচীনেরা আছেন যারা আমাদের দেখাশোনা করেন ও সত্যে পথ চলতে শেখান। (ইফিষীয় ৪:১১, ১২) পথ দেখানোর জন্য আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল আছে। (২ তীমথিয় ৩:১৬) আর আমরা সবসময়ই ঈশ্বরের কাছে তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করতে পারি।—মথি ২৬:৪১.
দায়ূদের পাপ থেকে শেখা
১৩, ১৪. কীভাবে রাজা দায়ূদ খুব বড় পাপ করেছিলেন?
১৩ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে এমনকি যিহোবা ঈশ্বরের খুব ভাল সেবকেরাও যৌন অনৈতিকতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রাজা দায়ূদ যিনি অনেক বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে আসছিলেন। কোন সন্দেহ নেই যে তিনি যিহোবাকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। কিন্তু তবুও তিনি খুব বড় পাপ করেছিলেন। শলোমন যে যুবকের কথা বলেছেন তার মতো দায়ূদও ধাপে ধাপে অনৈতিকতার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন ও পাপ করেছিলেন।
১৪ দায়ূদ তখন মধ্যবয়সী হয়তো ৫০ এর কোঠায়। ছাদের ওপর থেকে তিনি সুন্দরী বৎশেবাকে স্নান করতে দেখেছিলেন। তিনি তার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন ও জানতে চেয়েছিলেন। তিনি জেনেছিলেন যে তার স্বামী ঊরিয় অম্মোনীয় নগর রব্বার সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। দায়ূদ তাকে তার প্রাসাদে আনিয়েছিলেন ও তার সঙ্গে শয়ন করেছিলেন। পরে ব্যাপার আরও জটিল হয়ে উঠেছিল। বৎশেবা গর্ভবতী হয়েছিল। দায়ূদ ঊরিয়কে যুদ্ধ থেকে নিয়ে এসেছিলেন এই আশা করে যে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে শয়ন করবে। আর এইভাবে লোকেরা জানবে যে বৎশেবার সন্তানের পিতা ঊরিয়। কিন্তু ঊরিয় তার ঘরে যায়নি। তার পাপকে ঢাকার জন্য মরিয়া হয়ে দায়ূদ তখন ঊরিয়ের হাতেই প্রধান সেনাপতি যোয়াবকে একটা চিঠি লিখে রব্বা নগরে পাঠান যাতে ঊরিয়কে তুমুল যুদ্ধের সামনে দাঁড় করিয়ে তাকে মেরে ফেলার কথা লেখা ছিল। ঊরিয় মারা গিয়েছিল। আর বৎশেবা গর্ভবতী তা জানাজানি হওয়ার আগেই দায়ূদ বিধবা বৎশেবাকে বিয়ে করেছিলেন।—২ শমূয়েল ১১:১-২৭.
১৫. (ক) যিহোবা কীভাবে দায়ূদের পাপকে সামনে এনেছিলেন? (খ) নাথন যখন দায়ূদকে কুশলভাবে তার মহা পাপের কথা জানিয়েছিলেন তখন দায়ূদ কীভাবে তা নিয়েছিলেন?
১৫ দায়ূদ তার পাপ ঢাকতে চেয়েছিলেন ও আপাতভাবে তিনি তা করতে পেরেছিলেন। সময় কেটে যায়। এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। দায়ূদ যখন ৩২ গীতটা লিখেছিলেন তখন যদি দায়ূদের এই ঘটনার কথা মনে থাকে, তাহলে তিনি হয়তো তখন মনে মনে কষ্ট পেয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৩২:৩-৫) কিন্তু যিহোবার চোখে তার পাপ লুকোনো ছিল না। তিনি তা সামনে এনেছিলেন। কারণ বাইবেল বলে: “দায়ূদের কৃত এই কর্ম্ম সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হইল।” (২ শমূয়েল ১১:২৭) তিনি তাঁর ভাববাদী নাথনকে পাঠিয়েছিলেন যিনি খুব কুশলভাবে দায়ূদকে তার মহা পাপের কথা জানিয়েছিলেন। দায়ূদ তক্ষুণি যিহোবার কাছে তার পাপ স্বীকার করেছিলেন ও ক্ষমা চেয়েছিলেন। মন থেকে অনুতাপ করায় যিহোবার সঙ্গে দায়ূদের সম্পর্ক আবার গভীর হয়েছিল। (২ শমূয়েল ১২:১-১৩) দায়ূদকে যখন তিরস্কার করা হয়েছিল তিনি তাতে বিরক্ত হননি। তিনি তা মেনে নিয়েছিলেন আর গীতসংহিতা ১৪১:৫ পদে তিনি যে কথাগুলো লিখেছিলেন তার থেকে তার মনের ভাব স্পষ্ট ফুটে ওঠে। সেখানে বলা আছে: “ধার্ম্মিক লোক আমাকে প্রহার করুক, সেটী দয়া; সে আমাকে অনুযোগ করুক, তাহা মস্তকের তৈল; আমার মস্তক তাহা অগ্রাহ্য না করুক।”
১৬. পাপ করার ব্যাপারে শলোমন কীভাবে সাবধান করেন ও ভাল উপদেশ দেন?
১৬ শলোমন দায়ূদ ও বৎশেবার দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। তিনি হয়তো তার বাবার জীবনের এই অন্ধকার অধ্যায়ের বিষয়টা মনে রেখেছিলেন। পরে তিনি লিখেছিলেন: “যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে।” (হিতোপদেশ ২৮:১৩) আমরা যদি গুরুতর পাপ করি, তাহলে আমরা ঈশ্বরের দেওয়া এই পরামর্শ মেনে চলতে পারি। এটা আমাদের সাবধান করে ও ভাল উপদেশ দেয়। আমাদের যিহোবার কাছে পাপ স্বীকার করা উচিত ও মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত। প্রচীনদের একটা বড় দায়িত্ব হল সেই পাপীদের সাহায্য করা।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.
পাপের ফল ভোগ করা
১৭. যদিও যিহোবা পাপ ক্ষমা করেন, তিনি কীসের থেকে আমাদের বাঁচান না?
১৭ যিহোবা দায়ূদকে ক্ষমা করেছিলেন। কেন? কারণ দায়ূদ বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন, তিনি অন্যদের দয়া দেখাতেন আর তিনি মন থেকে অনুতাপ করেছিলেন। কিন্তু তাই বলে দায়ূদ তার পাপের ফল ভোগ করাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। (২ শমূয়েল ১২:৯-১৪) আজকেও এই একই কথা সত্যি। যদিও যারা মন থেকে অনুতাপ করে যিহোবা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেন না কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি তাদের পাপের ফল ভোগ করা থেকে বাঁচান। (গালাতীয় ৬:৭) যৌন অনৈতিকতার ফলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটতে পারে, গর্ভবতী হয়ে যেতে হতে পারে, যৌন রোগগুলো হতে পারে আর সমাজে সম্মান ও ভরসা হারিয়ে যেতে পারে।
১৮. (ক) পৌল করিন্থ মণ্ডলীকে একজন পাপীর সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করতে বলেছিলেন যে যৌন অনৈতিকতা করেছিল? (খ) যিহোবা পাপীদের জন্য কীভাবে প্রেম ও দয়া দেখান?
১৮ আমরা নিজেরা যদি কোন গুরুতর অন্যায় করি তখন ফল ভোগ করার সময় হয়তো আমাদের খুবই দুঃখ হতে পারে। যাই হোক না কেন আমরা যেন কোন কিছুকেই আমাদের অনুতাপ দেখানোয় বাধা না দিই আর আবার যিহোবার কাছে ফিরে আসি। প্রথম শতাব্দীতে পৌল তার করিন্থের ভাইবোনদের বলেছিলেন যে তারা যেন সেই পাপীকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেয় যে তার আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যভিচার করেছে। (১ করিন্থীয় ৫:১, ১৩) কিন্তু সেই ব্যক্তি যখন মন থেকে অনুতাপ দেখিয়েছিল পৌল মণ্ডলীকে বলেছিলেন: “তাহাকে ক্ষমা করিলে ও সান্ত্বনা করিলে ভাল হয়, পাছে অতিরিক্ত মনোদুঃখে তাদৃশ ব্যক্তি কবলিত হয়।” (২ করিন্থীয় ২:৫-৮) ঈশ্বরের শক্তিতে লেখা তার এই পরামর্শে আমরা অনুতপ্ত পাপীদের জন্য যিহোবার প্রেম ও দয়া দেখতে পাই। একজন পাপী মন ফিরালে স্বর্গদূতেরা আনন্দ করে।—লূক ১৫:১০.
১৯. অন্যায় কাজ করে আমরা যে দুঃখ পাই তা আমাদের কীভাবে সাবধান করে?
১৯ অন্যায় কাজ করে আমরা যে দুঃখ পাই, তার জন্য আমাদের যে অনুতাপ হয় তা আমাদের “সাবধান” করে, যাতে ‘আমরা অধর্ম্মের প্রতি না ফিরি।’ (ইয়োব ৩৬:২১) এছাড়া পাপের যে খারাপ ফল আমাদের ভোগ করতে হয় তাও আমাদের আবার সেই একই পাপ করা থেকে সাবধান করে। দায়ূদ তার নিজের জীবনের দুঃখজনক ঘটনা দিয়ে অন্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি অধর্ম্মাচারীদিগকে তোমার পথ শিক্ষা দিব, পাপীরা তোমার দিকে ফিরিয়া আসিবে।”—গীতসংহিতা ৫১:১৩.
যিহোবাকে সেবা করে খুশি হওয়া যায়
২০. যিহোবার ধার্মিক নীতিগুলোকে বাধ্যভাবে মেনে চলে আমাদের লাভ কী?
২০ যীশু বলেছিলেন, “ধন্য তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে।” (লূক ১১:২৮) যিহোবার ধার্মিক নীতিগুলোকে বাধ্যভাবে মেনে চলে আমরা খুশি হব—এখন আর চিরকালের জন্য। আমরা যদি নৈতিকভাবে পবিত্র, তাহলে আসুন আমরা পবিত্রই থাকি। যিহোবা আমাদের পথ দেখানোর জন্য যা কিছু ব্যবস্থা করেছেন আমরা যেন সেগুলোকে কাজে লাগাই। আমরা যদি কখনও অনৈতিকতায় জড়িয়েও পড়ি তখনও আমরা যেন মনে রাখি যে যারা মন থেকে ক্ষমা চায় যিহোবা তাদের ক্ষমা করতে চান। আর আমরা যেন আর কখনও সেই পাপ দ্বিতীয়বার না করি।—যিশাইয় ৫৫:৭.
২১. প্রেরিত পিতরের কোন্ পরামর্শ মেনে আমরা নৈতিকভাবে পবিত্র থাকতে পারি?
২১ খুব শীঘ্রিই এই অধার্মিক জগৎ শেষ হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে এর সমস্ত অনৈতিক কাজকর্ম ও চিন্তা। নৈতিকভাবে পবিত্র থাকলে এখনকার ও চিরকালের জন্য আমাদেরই লাভ। প্রেরিত পিতর আমাদের যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা মেনে চলে নৈতিকভাবে আমরা পবিত্র থাকতে পারি। তিনি লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন তাঁহার কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়! . . . তোমরা এ সকল অগ্রে জানিয়া সাবধান থাক, পাছে ধর্ম্মহীনদের ভ্রান্তিতে আকর্ষিত হইয়া নিজ স্থিরতা হইতে ভ্রষ্ট হও।”—২ পিতর ৩:১৪, ১৭.
আপনি কি বলতে পারেন?
• নৈতিকভাবে পবিত্র থাকা কেন খুব সহজ নয়?
• এক উচ্চ নৈতিক মান মেনে চলার জন্য আমাদের অটল ইচ্ছাকে বজায় রাখার কয়েকটা উপায় কী?
• শলোমন যে যুবকের কথা বলেছেন তার পাপের কথা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
• অনুতাপ করার বিষয়ে আমরা দায়ূদের কাছ থেকে কী শিখি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি যে এক উচ্চ নৈতিক মান মেনে চলেন অন্যদের সে কথা জানিয়ে দিলে তা আপনাকে রক্ষা করবে
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
দায়ূদ মন থেকে অনুতাপ করেছিলেন ও ক্ষমা চেয়েছিলেন বলে যিহোবা তাকে ক্ষমা করেছিলেন