সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?

সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?

সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?

 একটা ডিকশনারি বলে সফলতা হল “ধনদৌলত করা, নাম করা ও যশ পাওয়া।” কিন্তু সফলতা কী শুধু এগুলোই? কেবলমাত্র ধনদৌলত, নাম ও যশ পাওয়ার মানেই কি জীবনে সফল হওয়া? উত্তর পাওয়ার আগে আসুন আমরা এই বিষয়টা দেখি: যীশু খ্রীষ্ট যখন পৃথিবীতে ছিলেন তাঁর কাছে ধন বলতে কিছু ছিল না। বেশির ভাগ লোকেরা তাঁকে পছন্দ করত না তাই তাঁর তেমন নামও ছিল না। তাঁর দিনের নামিদামি লোকেদের কাছ থেকে তিনি যশও পাননি। তবুও যীশু একজন সফল ব্যক্তি ছিলেন। কীভাবে?

পৃথিবীতে থাকার সময়ে যীশু “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” ছিলেন। (লূক ১২:২১) তিনি আবার জীবিত হয়ে ওঠার পর যিহোবা তাঁকে “প্রতাপ ও সমাদর-মুকুটে বিভূষিত” করেছিলেন। যিহোবা তাঁর পুত্রকে “অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” (ইব্রীয় ২:৯; ফিলিপীয় ২:৯) যীশু যেভাবে তাঁর জীবন কাটিয়েছিলেন তাতে যিহোবা খুশি হয়েছিলেন। (হিতোপদেশ ২৭:১১) পৃথিবীতে তিনি যে কাজ করার জন্য এসেছিলেন তা করতে পারায় তিনি সফল ছিলেন। তিনি সফল ছিলেন কারণ তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন ও তাঁর নামের গৌরব নিয়ে এসেছিলেন। তাই ঈশ্বর তাঁকে এমন ধন, নাম, যশ দিয়েছিলেন যা কোন নামকরা পণ্ডিত, রাজনীতিক ও খেলোয়াড় জীবনে কখনও পায়নি। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত মানুষ এসেছে তাদের সবার মধ্যে যীশুই হচ্ছেন সবচেয়ে সফল ব্যক্তি।

যে বাবামারা যিহোবার সেবা করেন তারা বোঝেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা যদি যীশুর মতো চলে, তারা যদি যীশুর মতো যিহোবার উদ্দেশে ধনবান হয়, তাহলে যিহোবা এখন তাদের আশীর্বাদ করবেন। আর তাদের সামনে এক নতুন জগৎ রয়েছে। তাই একজন কিশোর বা যুবকের জীবনে যীশুর মতো চলার কোন বিকল্প হতে পারে না। যীশু যে কাজ করেছিলেন তা করা ছাড়া আর কোন্‌ কাজই বা তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল কাজ হতে পারে? তাই পারলে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করাই তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল।

কিন্তু কিছু কিছু জায়গার রীতিই হল যে যুবক ছেলেমেয়েরা পূর্ণ-সময়ের সেবা করবে না। একজন যুবক যখন পড়াশোনা শেষ করে তখন মনে করা হয় যে এবার সে একটা চাকরি খুঁজবে, বিয়ে করবে ও সংসারী হবে। তাই এইরকম সমাজে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক সময় পূর্ণ-সময়ের সেবা শুরু করার ব্যাপারে পিছিয়ে যায়। (হিতোপদেশ ৩:২৭) কেন? কারণ সমাজ তাদেরকে চাপ দেয় ও তারা শেষপর্যন্ত সমাজের কাছে নতি স্বীকার করে। রবার্টও এই একই অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল। *

যখন সমাজ আপনার বিবেকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধায়

রবার্ট যিহোবার সাক্ষি ঘরে মানুষ হয়েছে। উঠতি বয়সে তার চালচলন ও বন্ধুবান্ধবের দল খারাপ হতে শুরু করে। তার মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি একজন অগ্রগামীকে, যিহোবার সাক্ষিদের একজন পূর্ণ-সময়ের প্রচারককে রবার্টের সঙ্গে কথা বলে তাকে একটু উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলেন। এর পরে কী ঘটেছিল সে কথা আসুন এখন আমরা রবার্টের মুখেই শুনি।

“সেই অগ্রগামী ভাই আমার সঙ্গে এত ভালভাবে কথা বলেছিল যে আমি একেবারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তার কথাবার্তা, হাবভাব, ব্যবহার আমার এত ভাল লেগেছিল যে আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম স্কুল শেষ করেই আমি অগ্রগামীর কাজ শুরু করব আর সারা জীবনই আমি তা করে চলব। আমার মা আবার চিন্তিত হয়ে পড়ে, তবে এবার কারণটা আলাদা। আমাদের সমাজে একজন মেয়ে স্কুল শেষ করার পর সরাসরি অগ্রগামীর কাজ শুরু করতে পারে কিন্তু একজন ছেলের জন্য মনে করা হয় যে তাকে প্রথমে রোজগার করতে শিখতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে আর তারপর সে অগ্রগামীর কাজ করার কথা ভাবতে পারে।

“আমি একটা পেশা শিখি ও নিজস্ব ব্যাবসা শুরু করি। অল্প সময়ের মধ্যেই আমি ব্যাবসায় এত বেশি ডুবে যাই যে আমি নামসাক্ষি মিটিং, প্রচার করতে থাকি। আমার বিবেক আমাকে খোঁচা দিত। আমি জানতাম যে আমি যিহোবাকে আরও বেশি করে সেবা করতে পারি। অন্যেরা আমার কাছ থেকে যা আশা করেন তা না করা বা ব্যাবসা ছেড়ে আসা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু আমি খুশি যে শেষ পর্যন্ত আমি তা করেছিলাম। এখন আমি বিবাহিত আর গত দুবছর ধরে আমি ও আমার স্ত্রী অগ্রগামীর কাজ করছি। অল্প কিছুদিন আগে আমি মণ্ডলীতে সহায়ক দাস হয়েছি। এখন সত্যিই আমি বলতে চাই যে সমস্ত মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে যিহোবার সেবা করতে পারায় আমার জীবন সার্থক।”

এই পত্রিকা যুবক-যুবতীদের বার বার উৎসাহ দিয়ে এসেছে যে তারা যেন কোন বিশেষ পেশা শেখে, এমনকি যদি হয় পড়াশোনা করার সঙ্গে সঙ্গেই। কেন তারা তা করবে? পয়সা রোজগারের জন্য? মোটেই না। কারণটা হচ্ছে যে বড় হয়ে যেন তারা নিজেদের চালানোর মতো রোজগার করতে পারে ও যিহোবাকে বেশি করে সেবা করতে পারে। বিশেষ করে তারা যেন পূর্ণ-সময়ের সেবা করতে পারে। প্রায়ই দেখা যায় যে যুবক-যুবতীরা চাকরি বাকরির পিছনে এত বেশি সময় দেয় যে তাদের মিটিং প্রচারে ঘাটা পড়ে। কিছুজন পূর্ণ-সময়ের সেবার ব্যাপারে কখনও ভাবেই না। কিন্তু কেন?

রবার্ট যা বলেছিল তার থেকে আপনি এর কারণ কিছুটা অনুমান করতে পারেন। পেশা শেখার পর রবার্ট ব্যাবসা করতে শুরু করে। খুব শীঘ্রিই সে যেন এক জাঁতাকলে আটকে যায় যার থেকে বেরনো খুবই মুশকিল। সে অনেক টাকা রোজগার করতে চেয়েছিল যাতে তাকে কোনদিনই টাকাপয়সার অভাবে পড়তে না হয়। কিন্তু যারা যিহোবার সেবা করে বা যারা করে না তাদের কেউই কি কখনও পুরোপুরি তা করতে পারে? এটা ঠিক যে যিহোবার একজন সেবকের নিজের খরচ নিজে চালানোর মতো ক্ষমতা থাকা দরকার। যাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তার উপর আছে তা ঠিক করে পালন করার জন্য তাদের পরিশ্রম করা দরকার। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাদের এও বোঝা দরকার যে আজকের এই অনিশ্চিত জগতে খুব অল্পজনই পয়সাকড়ির অভাবে পড়ে না। সেইজন্যেই মথি ৬:৩৩ পদে যীশু যে কথাগুলো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা যিহোবার সেবকদের আশ্বাস দেয়।

রবার্ট এখন খুশি কারণ সে তার মনের কথা শুনেছে, সমাজের ইশারা মতো সে চলেনি। আজকে পূর্ণ-সময়ের সেবাই তার জীবন। সত্যিই পূর্ণ-সময়ের সেবাই সবচেয়ে ভাল ও সম্মানের কাজ। রবার্ট একজন সুখী ব্যক্তি। তার মনে শান্তি আছে কারণ সে ‘তার সমস্ত শক্তি দিয়ে’ যিহোবার সেবা করছে।

আপনার ক্ষমতাকে সবচেয়ে ভালভাবে কাজে লাগান

আজকে যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে অনেক গুণী ভাইবোনেরা আছেন। অনেকে খুব বুদ্ধিমান, অন্যেরা খুব ভাল কাজ করতে পারেন। এই সমস্ত ক্ষমতা আমাদের যিহোবা দিয়েছেন যিনি “সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন।” (প্রেরিত ১৭:২৫) আমাদের যদি জীবনই না থাকত, তাহলে এই গুণ বা ক্ষমতাগুলোর কোন দাম থাকত না।

তাই আমাদের জীবন যিহোবার কাজে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য কত বড় কারণই না আমাদের আছে! আর বিশেষ করে যখন আমরা নিজেদের জীবন যিহোবার হাতে সঁপে দিয়েছি। একজন গুণী ব্যক্তি এরকমই করেছিলেন। তিনি প্রথম শতাব্দীতে বাস করতেন। খুব বড় ঘরে জন্মানোয় তিনি নামকরা নগর কিলিকিয়ার তার্ষে বড় হয়েছিলেন। যদিও তিনি জন্মসূত্রে যিহুদি ছিলেন কিন্তু বাবা রোমীয় নাগরিক হওয়ায় তিনি রোমীয় নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। আর তা তাকে কিছু অধিকার ও সুযোগসুবিধা দিয়েছিল। বড় হয়ে তিনি সেই সময়ের নামকরা “শিক্ষক” গমলীয়েলের কাছে ব্যবস্থা পড়েছিলেন। তাই সহজেই বোঝা যায় যে ‘ধনদৌলত, নাম, যশ’ তার হাতের মুঠোয় ছিল।—প্রেরিত ২১:৩৯; ২২:৩, ২৭, ২৮.

এই ব্যক্তি কে ছিলেন? তার নাম ছিল শৌল। কিন্তু শৌল খ্রীষ্টের সেবক বা খ্রীষ্টান হয়েছিলেন। আর পরে তিনি প্রেরিত পৌল হয়েছিলেন। তিনি তার সমস্ত কামনা বাসনাকে একপাশে সরিয়ে সারাটা জীবন যিহোবার সেবায় লাগিয়ে দিয়েছিলেন। লোকেরা পৌলকে অসাধারণ ব্যবস্থাপক হিসেবে চেনেনি কিন্তু তারা জেনেছিল যে পৌল সুসমাচারের উদ্যোগী প্রচারক ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর একজন মিশনারী হিসেবে কাজ করার পর তিনি তার ফিলিপীয়ের ভাইবোনদের একটা চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিতে তিনি তার পুরনো জীবনের কথা, খ্রীষ্টান হওয়ার আগে তিনি কী কী করেছিলেন তার কিছু লিখেছিলেন। আর তার পর তিনি লিখিছিলেন: “[যীশু খ্রীষ্টের] নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি।” (ফিলিপীয় ৩:৮) পৌল যেভাবে তার জীবন কাটিয়েছিলেন তার জন্য তিনি কখনও দুঃখ করেননি।

কিন্তু গমলীয়েলের কাছ থেকে যে শিক্ষা তিনি নিয়েছিলেন সে বিষেয় কী বলা যায়? সেটা কি কখনও তার কোন কাজে এসেছিল? অবশ্যই! অনেকবার ‘সুখবরের পক্ষে কথা বলে তার সত্যতা প্রমাণ করতে’ তার শিক্ষা তাকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু পৌলের আসল কাজ ছিল সুসমাচার প্রচার করা যে শিক্ষা তার বিদ্যালয় তাকে কখনওই দেয়নি।—ফিলিপীয় ১:৭, প্রেমের বাণী; প্রেরিত ২৬:২৪, ২৫.

সেইরকমই আজকে অনেকে তাদের ক্ষমতা, দক্ষতা ও তাদের শিক্ষাদীক্ষা যিহোবার কাজে, রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে চলার জন্য লাগান। যেমন এমী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগে পি.এইচ.ডি. করেছে ও আইন পাশ করেছে। একসময় সে উকিল ছিল। কিন্তু আজকে সে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির এক শাখা অফিসে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে। এখন সে তার নিজের সম্বন্ধে বলে: “আমার মনে হয় যে জীবনে আমি সবচেয়ে ভাল জিনিসটা বেছে নিয়েছি। . . . আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কারও পদের সঙ্গে আমি আমার জায়গা বদলাতে চাই না। আমি যে কাজ করছি তার জন্য আমি গর্বিত। আমার যা দরকার ও আমি যা চাই তার সবকিছু আমার আছে। আমি সুখী, আমি তৃপ্ত। আমার কাজ করে আমি খুবই আনন্দ পাই।”

এমী এমন কাজ বেছে নিয়েছে যা তাকে শান্তি দিয়েছে, তৃপ্ত করেছে ও তার জীবনে যিহোবার আশীর্বাদ এনে দিয়েছে। যিহোবার সাক্ষি বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য এর চেয়ে বেশি আর কী চান!

প্রচার কাজে সফল হওয়া

প্রচার কাজে সফল হওয়া বলতে আসলে কী বোঝায় তা আমাদের ঠিক করে জানা দরকার। আমরা যখন বেশ অনেকখানি সময় প্রচার করি, অনেক বইপত্র লোকেদের হাতে দিতে পারি বা লোকেদের সঙ্গে আমাদের অনেকক্ষণ ধরে বেশ ভাল আলোচনা হয় তখন খুব সহজেই আমরা মনে করি যে প্রচার কাজে আমরা সফল। কিন্তু যখন আমাদের কথা লোকেরা প্রায় শুনতেই চায় না, তখন আমরা হয়তো ভাবতে শুরু করতে পারি যে আমরা অযথা সময় নষ্ট করছি। মনে করে দেখুন যে সফলতা হল ‘নাম কেনা।’ কার কাছ থেকে আমরা নাম কিনতে চাই? অবশ্যই যিহোবার কাছ থেকে। আর লোকেরা আমাদের কথা শুনুক বা না শুনুক যিহোবা আমাদের তা দেবেন। যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের এই ব্যাপারে এক বড় শিক্ষা দিয়েছিলেন।

আপনার হয়তো মনে আছে যে যীশু তাঁর ৭০ জন শিষ্যকে “সমস্ত নগরে ও স্থানে আপনার অগ্রে” পাঠিয়েছিলেন। (লূক ১০:১) তাদেরকে তাদের গুরু যীশুকে ছাড়াই নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে প্রচার করতে হয়েছিল। এটা তাদের জন্য একটা নতুন বিষয় ছিল। এইজন্য তাদের পাঠানোর আগে যীশু তাদের সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বলে দিয়েছিলেন। কোন ঘরে তারা যদি “শান্তির সন্তান” পায়, তাহলে সেখানে তাদের রাজ্যের বিষয়ে খুব ভাল করে প্রচার করতে হতো। আর যারা তাদের কথা শুনত না, শিষ্যদের সেখান থেকে নিজের পথে চলে যেতে হতো। যীশু বলেছিলেন যারা তোমাদের কথা শুনতে চাইবে না তারা আসলে যিহোবার কথাই শুনতে চায় না।—লূক ১০:৪-৭, ১৬.

এই ৭০ জন শিষ্য তাদের প্রচার কাজ শেষ করে যীশুর কাছে এসে খবর দিয়েছিল। তারা “আনন্দে . . . কহিল, প্রভু, আপনার নামে ভূতগণও আমাদের বশীভূত হয়।” (লূক ১০:১৭) এই অসিদ্ধ মানুষেরা যখন ভূত ছাড়াতে পেরেছিল তখন তারা কতই না আশ্চর্য আর খুশি হয়েছিল! যাইহোক যীশু তাঁর উৎসাহী শিষ্যদের সাবধান করেছিলেন: “আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, ইহাতে আনন্দ করিও না; কিন্তু তোমাদের নাম যে স্বর্গে লিখিত আছে, ইহাতেই আনন্দ কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (লূক ১০:২০) এই ৭০ জন শিষ্য হয়তো সবসময়ই ভূত ছাড়াতে পারত না বা সবসময়ই লোকেরা তাদের কথাও শোনেনি। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত তাদের বিশ্বাসে অটল ছিলেন আর যিহোবা তাদের উপর খুশি ছিলেন।

যারা পূর্ণ-সময়ের সেবা করছেন আপনার চোখে কি তারা সবচেয়ে ভাল কাজ করছেন না?

একজন অল্পবয়স্ক ভাই একবার এক প্রাচীনকে বলেছিল: “হাইস্কুল পাশ করার পর আমি চাকরি খুঁজব। চাকরি না পেলে তখন আমি পূর্ণ-সময়ের সেবা শুরু করার কথা ভাবব। কিন্তু যারা আজকে অগ্রগামীর কাজ করছেন তারা সবাই অবশ্য এইরকম ভাবেননি। অগ্রগামীর কাজ করার জন্য অনেকে অনেক লোভনীয় চাকরির সুযোগ ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে উচ্চশিক্ষার দিকে যাননি। প্রেরিত পৌলের মতো তারা অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন কিন্তু পল, রবার্ট ও এমীর মতো তাদের এর জন্য কোন দুঃখ নেই। তারা যে পথ বেছে নিয়েছে তার জন্য তারা খুশি। তাদের নিজেদের বিদ্যাবুদ্ধি যিহোবার কাজে লাগানোর এই যে সুযোগ তারা পেয়েছে তার জন্য তারা নিজেদের ধন্য মনে করে। কারণ যিহোবা আমাদের সবচেয়ে ভালটুকু পাওয়ার যোগ্য আর আমরা তাঁকে তা দিতে পেরে খুশি হই।

যিহোবার সব সেবকদের অগ্রগামীর কাজ করার মতো অবস্থা নেই। নানা কারণে তারা অগ্রগামীর কাজ করতে পারেন না। হয়তো তাদের এমন অনেক দায়িত্ব আছে যা বাইবেল তাদের পালন করতে বলে। কিন্তু তবুও যদি তারা তাদের ‘সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত মন’ দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করেন, তাহলে তাতেই যিহোবা খুশি হন। (মথি ২২:৩৭) যদিও তারা নিজেরা অগ্রগামীর কাজ করতে পারেন না, তবুও তারা বোঝেন যে এই কাজের তুলনা জগতের আর কোন কিছুর সঙ্গে হয় না, যারা তা করতে পারছেন তারা সত্যিই সুখী।

প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “এই যুগের অনুরূপ হইও না।” (রোমীয় ১২:২) পৌল যে পরামর্শ আমাদের দিয়েছেন তা মাথায় রেখে আমরা এই জগতের সমাজ ও মানের সঙ্গে মিল রেখে চিন্তাভাবনা করব না। আপনি অগ্রগামীর কাজ করতে পারুন বা না পারুন যিহোবার সেবাকে জীবনে সবচেয়ে প্রথমে রাখুন। যতক্ষণ পর্যন্ত যিহোবা আপনার সঙ্গে আছেন আপনি সফল হবেন।

[পাদটীকা]

^ নামগুলো পালটে দেওয়া হয়েছে।

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

নিজেকে কখনওই জাঁতাকলে আটকে ফেলবেন না যার থেকে বেরনো খুবই মুশকিল