সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পেরুর অল্টিপ্লানোতে রাজ্যের কথা প্রচার করা

পেরুর অল্টিপ্লানোতে রাজ্যের কথা প্রচার করা

আমরা বিশ্বাসের লোক

পেরুর অল্টিপ্লানোতে রাজ্যের কথা প্রচার করা

 আন্দিজ পর্বতমালার পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে যেখানে বলিভিয়া এবং পেরু গিয়ে মিশেছে, সেখানেই অল্টিপ্লানো অবস্থিত। অল্টিপ্লানো মানে “উঁচু সমভূমি” অথবা “মালভূমি।” এই মালভূমির বেশির ভাগ অংশই বলিভিয়ার মধ্যে পড়েছে।

অল্টিপ্লানো মালভূমি ১০০ কিলোমিটার চওড়া ও ১,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা এবং সমুদ্রতল থেকে এর গড় উচ্চতা প্রায় ৩,৭০০ মিটার। পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্লেনে করে অল্টিপ্লানোতে যাওয়ার পথে আপনি বরফে ঢাকা একটা আগ্নেয়গিরি দেখতে পাবেন, যেটার নাম হচ্ছে এল মিস্টি। এর উচ্চতা ৫,৮২২ মিটার, যা মেঘকেও ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়াও আপনি নেভাডো এমপাটো এবং নেভাডো কোরোপুনা নামে বরফে ঢাকা দুটো চূড়া দেখতে পাবেন, যেগুলোর উচ্চতা প্রায় ৬,০০০ মিটার। এর পরই এক বিশাল মালভূমি আপনার চোখে পড়বে আর এটাই দক্ষিণ পেরুর অল্টিপ্লানো।

অল্টিপ্লানোর রাজধানী পুনো, টিটিকাকা হ্রদের একেবারে উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত আর পৃথিবীর মধ্যে এই হ্রদই হল নৌ চলাচলের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। সমভূমি হতে যেহেতু এই অঞ্চল প্রায় তিন কিলোমিটার উঁচু তাই যারা এখানে বেড়াতে আসেন, এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের কিছুটা সময় লাগে। টিটিকাকা হ্রদের কাছে কেচুয়া এবং আইমারা আদিবাসীরা থাকে। সেখানে গেলে আপনি দেখবেন যে লাল, সবুজ অথবা নীল রঙের জামাকাপড় পরে তারা তাদের চাকরাস অথবা ছোট্ট খামারগুলোতে কাজ করছে। পেরুর জাতীয় ভাষা স্প্যানিস হলেও অল্টিপ্লানোর আদিবাসীরা কেচুয়া এবং আইমারা ভাষায়ও কথা বলে।

প্রচার কাজের শুরু

কেচুয়া এবং আইমারা ভাষাভাষির অনেক নম্র ও পরিশ্রমী লোকেরা এখন বাইবেলের সত্যের সঠিক জ্ঞান জানতে পেরেছেন। আর তা সম্ভব হয়েছে কারণ পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে বিশেষ অগ্রগামীরা এখানে জোরকদমে সুসমাচার প্রচার করেছেন এবং যিহোবা তাদের কাজে অনেক আশীর্বাদ করেছেন।

উদাহরণ হিসেবে, বিশেষ অগ্রগামী ভাই হোসে এবং বোন সিলভিয়াকে পুটিনা শহরে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়েছিল, যা টিটিকাকা হ্রদ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে গিয়ে দুই মাসের মধ্যে সিলভিয়া ১৬টা এবং হোসে ১৪টা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। আর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে মণ্ডলীর প্রকাশকদের সংখ্যা ২৩ জন থেকে বেড়ে ৪১ জন হয়। এছাড়াও সভায় উপস্থিতির সংখ্যা ৪৮ থেকে বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়ায়।

হোসে বলেন: ‘দূরের এলাকাগুলোতে আমরা যখন প্রথম সভা শুরু করেছিলাম তখন আমরা দেখেছিলাম যে, অন্যান্য সভার চেয়ে এখানে জনসাধারণের উদ্দেশে ভাষণ এবং মণ্ডলীর বুকস্টাডি শুরু করলেই ভাল ফল পাওয়া যায়। কারণ এতে করে নতুন ব্যক্তিরা সভায় আসার আগ্রহ খুঁজে পায়।’

পুটিনা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মুনানি অঞ্চলে দুজন বোন প্রথম সুসমাচার প্রচার করেন, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন অগ্রগামী। সেখানে লুসিও * নামে একজন অন্ধ ভদ্রলোকের সঙ্গে তারা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। লুসিও তার ভাই মিগেলকেও তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য বলেন, যিনি একজন ক্যাথলিক মিশনারি ও কাছের একটা এলাকার ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। মিগেলকে প্রতি সপ্তায় মুনানিতে যেতে দেখে তার এক বন্ধু জিজ্ঞেস করে, কেন সে সেখানে যায়। তার প্রশ্নের উত্তরে মিগেল বলে, সেখানে সে যিহোবা এবং তাঁর বাক্য সম্বন্ধে শিখতে যায়। এই কথা শুনে তার বন্ধু তাকে বলে: “তাহলে এখানেই কেন আমরা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করছি না?” মিগেল যেখানে থাকতেন সেখানকার লোকেরা সত্য শেখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানোর ফলে শীঘ্রিই সাক্ষিরা সেখানেও সভার ব্যবস্থা করেন।

মিগেল যা শিখতেন, তা তিনি অন্যদের কাছেও বলতে শুরু করেন। কিন্তু, ক্যাথলিক মিশনারি এবং ডেপুটি গভর্নর হিসেবে তার যে পদ ছিল তার কী হয়েছিল? কমিউনিটি হলের একটা সভায় তিনি ক্যাথলিক মিশনারির পদ থেকে তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করা হয় যে তার জায়গায় কি এখন অন্য কাউকে মিশনারি করা হবে? শ্রোতাদের মধ্যে থেকে একজন মহিলা বলেছিলেন: “আমরা তো এখন সত্য শিখছি, তাহলে মিশনারির দরকার কী?” তিনি আসলে যিহোবার সাক্ষিরা তাদেরকে যে সত্য শেখাচ্ছিলেন সেই কথাই বলেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন বলেছিলেন: “আপনি একাই পদত্যাগ করবেন, তা আমরা হতে দেব না। আমরা সবাই কেন পদত্যাগ করছি না?” এরপর শ্রোতারা সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে, “আমরা সবাই পদত্যাগ করছি।”

এর কিছুদিন পর কমিউনিটি সভায় মূর্তিপূজা এবং ক্রুশের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে একজন ব্যক্তি সবাইকে দ্বিতীয় বিবরণ ৭:২৫ পদ পড়ার জন্য অনুরোধ করেন, যেখানে লেখা আছে: “তোমরা তাহাদের ক্ষোদিত দেবপ্রতিমা সকল অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে; তুমি যেন ফাঁদে না পড়, এই জন্য তাহাদের গাত্রের রৌপ্যে কি স্বর্ণে লোভ করিবে না, ও আপনার জন্য তাহা গ্রহণ করিবে না, কেননা তাহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু।”

পদটা পড়ার পর তিনি বলেন, যারা যারা তাদের মূর্তিগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে চান তারা সবাই হাত তুলুন। এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সবাই হাত তুলেছিল। (প্রেরিত ১৯:১৯, ২০) এখন সেখানে ২৫টা পরিবারের মধ্যে ২৩টা পরিবারই ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে শিখছে। দুজন ব্যক্তি অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হয়েছেন এবং পাঁচ জোড়া দম্পতি যিহোবার সামনে শুচি থাকার জন্য তাদের বিয়েকে বৈধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।—তীত ৩:১; ইব্রীয় ১৩:৪.

ক্যাসেটের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া

যেহেতু অল্টিপ্লানোর অনেকেই লিখতে পড়তে জানে না, তাই লোকেদের সত্য শেখানোর জন্য ওখানকার ভাষায় ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির ভিডিও এবং অডিও ক্যাসেটগুলো খুবই কাজে আসে। এমনকি বাইবেল অধ্যয়ন করাতেও এগুলো অনেক সাহায্য করে। যেমন, অডিও ক্যাসেটের সাহায্যে একজন বিশেষ অগ্রগামী বোন ডোরা, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? ব্রোশার দিয়ে অনেককে অধ্যয়ন করাচ্ছেন। একটা একটা করে অনুচ্ছেদ বাজিয়ে শোনানোর পর তিনি বাইবেল ছাত্রদেরকে ওই অনুচ্ছেদের ওপর প্রশ্ন করেন।

এখানকার একটা রেডিও স্টেশন চান ব্রোশার থেকে কিছু অংশ কেচুয়া ভাষায় এবং সচেতন থাক! পত্রিকা থেকে কিছু অংশ স্প্যানিশ ভাষায় নিয়মিত প্রচার করে। তাই, অনেক লোকেরা আগেই রাজ্যের খবর শোনেন এবং যিহোবার সাক্ষিরা যখন তাদের ঘরে আসেন তখন তারা আরও বেশি করে জানতে চান।

পৃথিবীর অনেকেই হয়তো অল্টিপ্লানো সম্বন্ধে খুব একটা জানে না কিন্তু যিহোবা এই জায়গার কথা ভুলে যাননি। তিনি মানুষকে ভালবাসেন বলেই আজকে আন্দিজ পর্বতমালার কাছে অল্টিপ্লানোর অনেক লোকেরা দলে দলে সেই লোকেদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন, যারা তাঁর সত্য উপাসনার প্রতাপান্বিত গৃহে প্রশংসা করছেন।—হগয় ২:৭.

[পাদটীকা]

^ এই প্রবন্ধে কিছু নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।