সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ অতিশয় ভালবাসেন?

আপনি কি যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ অতিশয় ভালবাসেন?

আপনি কি যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ অতিশয় ভালবাসেন?

“আমার প্রাণ তোমার সাক্ষ্যকলাপ পালন করিয়াছে, আমি সে সকল অতিশয় ভালবাসি।”গীতসংহিতা ১১৯:১৬৭.

১. বিশেষ করে কোথায় বার বার যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের কথা বলা হয়েছে?

 যিহোবা চান যে তাঁর সেবকেরা সুখী হোক। কিন্তু সত্যিকারের সুখী হতে গেলে আমাদের অবশ্যই তাঁর দেওয়া নিয়ম ও আজ্ঞা মেনে চলা দরকার। সেই কারণে তিনি আমাদের তাঁর সাক্ষ্যকলাপ দিয়েছেন। বাইবেলে বার বার এগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে। বিশেষ করে গীতসংহিতা ১১৯ অধ্যায়ে, যেটা যিহূদার যুবক রাজকুমার হিষ্কিয় লিখেছিলেন। এই সুন্দর গান এই কথাগুলো দিয়ে শুরু হয়: “ধন্য তাহারা, যাহারা আচরণে সিদ্ধ, যাহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পথে চলে। ধন্য তাহারা, যাহারা তাঁহার সাক্ষ্যকলাপ পালন করে; যাহারা সর্ব্বান্তঃকরণে তাঁহার অন্বেষণ করে।”—গীতসংহিতা ১১৯:১, ২.

২. ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ কীভাবে আমাদের সুখী করতে পারে?

আমরা বাইবেল থেকে সঠিক জ্ঞান নিয়ে ও জীবনে তা কাজে লাগিয়ে ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পথে চলি।’ যেহেতু আমরা অসিদ্ধ মানুষ, তাই আমাদের যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের দরকার আছে। যে ইব্রীয় শব্দকে “সাক্ষ্যকলাপ” বলে অনুবাদ করা হয়েছে তা বোঝায় যে ঈশ্বর তাঁর নিয়ম, আদেশ, নীতি, আজ্ঞা ও বিধিসকল আমাদেরকে বার বার মনে করিয়ে দেন। (মথি ১০:১৮-২০) যদি আমরা এইসমস্ত সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলি, একমাত্র তাহলেই আমরা সত্যিকারের সুখী হতে পারব। কারণ এগুলো সেই ফাঁদগুলো এড়াতে সাহায্য করে যা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দুর্বল করে দেয়, আর যার ফলে আমাদের জীবনে খারাপ অবস্থা ও দুঃখ ঘনিয়ে আসে।

যিহোবার সাক্ষ্যকলাপে আসক্ত হোন

৩. গীতসংহিতা ১১৯:৬০, ৬১ পদ যেমন বলে আমরা কোন্‌ বিষয়টা নিশ্চিতভাবে জানি?

ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ দায়ূদের খুব প্রিয় ছিল যিনি গেয়েছিলেন: “আমি সত্বর হইলাম, বিলম্ব করিলাম না, তোমার আজ্ঞা সকল পালন করিবার জন্য। দুষ্টগণের রজ্জু আমাকে জড়াইয়াছে, আমি তোমার ব্যবস্থা ভুলিয়া যাই নাই।” (গীতসংহিতা ১১৯:৬০, ৬১) আমাদের পিতা যিহোবা ঈশ্বর যিনি স্বর্গে থাকেন তাঁর সাক্ষ্যকলাপ আমাদের তাড়না সহ্য করার শক্তি দেয় কারণ আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, তিনি আমাদের শত্রুদের রজ্জু কেটে দেবেন ও শত্রুর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। ঠিক সময়ে তিনি আমাদের এই বাধাগুলোকে সরিয়ে দেবেন যাতে আমরা রাজ্যের প্রচার কাজ করে চলতে পারি।—মার্ক ১৩:১০.

৪. ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

কখনও কখনও যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ আমাদের ভুল শুধরে দেয়। আসুন আমরা সবসময় নিজেদেরকে শুধরে নিই যেমন গীতরচক নিজেকে শুধরেছিলেন। তিনি প্রার্থনায় যিহোবাকে বলেছিলেন: “তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমার হর্ষজনক, . . . আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ ভালবাসি।” (গীতসংহিতা ১১৯:২৪, ১১৯) গীতরচকের কাছে যত না সাক্ষ্যকলাপ ছিল আমাদের কাছে তার চেয়ে অনেক বেশি আছে। ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে শত শত বিষয় গ্রিক শাস্ত্রে লেখা রয়েছে। আর এগুলো শুধু সেই নিয়মগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয় না যা ঈশ্বর তাঁর পুরনো দিনের ব্যবস্থা মেনে চলা লোকেদের দিয়েছিলেন কিন্তু খ্রীষ্টান মণ্ডলীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধেও আমাদের মনে করিয়ে দেয়। ঈশ্বর যখন মনে করেন যে আমাদেরকে তাঁর নিয়মগুলো মনে করিয়ে দেওয়া দরকার তখন এভাবে আমাদের পথ দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ হই। আর ‘যিহোবার সাক্ষ্যকলাপে আসক্ত’ থেকে আমরা পাপ করা এড়িয়ে চলি যা আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে দুঃখ দেয় আর আমাদের সুখ কেড়ে নেয়।—গীতসংহিতা ১১৯:৩১.

৫. আমরা কীভাবে যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে অতিশয় ভালবাসতে পারি?

যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ আমরা কতখানি ভালবাসি? গীতরচক গেয়েছিলেন: “আমার প্রাণ তোমার সাক্ষ্যকলাপ পালন করিয়াছে, আমি সে সকল অতিশয় ভালবাসি।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (গীতসংহিতা ১১৯:১৬৭) আমরা যদি যিহোবাকে পিতার মতো মনে করে তাঁর দেওয়া উপদেশ মেনে চলি, তাহলে আমরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে অতিশয় ভালবাসতে পারব। (১ পিতর ৫:৬, ৭) আমাদের যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের দরকার আছে আর এগুলো কীভাবে আমাদের উপকার করে তা যতই আমরা বুঝতে পারব ততই সেগুলোকে আরও বেশি ভালবাসব।

আমাদের যে কারণে ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ দরকার

৬. কেন আমাদের যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের দরকার তার একটা কারণ কী ও কী করলে আমাদের জন্য সেগুলোকে মনে রাখা সহজ হবে?

কেন আমাদের যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের দরকার তার একটা কারণ হল যে আমরা ভুলে যাই। বিশ্বকোষ বলে: “সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত লোকেরা ভুলে যায়। . . . আপনার বেলায়ও হয়তো এমনটা হয়েছে, যে নাম বা কথা একদিন আপনার ঠোঁটের আগায় ছিল এখন আপনি তা ভুলে গেছেন আর তা মনে করতে পারছেন না। . . . এইরকম অল্প সময়ের জন্য ভুলে যাওয়া যা আমাদের জীবনে অহরহ ঘটছে, এটাকে বলা হয় রিট্রিভেল ফেইলুর। বৈজ্ঞানিকেরা এটাকে হারিয়ে যাওয়া কোন জিনিসকে একটা অগোছালো ঘর থেকে খুঁজে বের করার সঙ্গে তুলনা করেন। . . . কোন কথাকে মনে রাখার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে সেটাকে বার বার মনে মনে চিন্তা করা এমনকি যদিও আপনার মনে হয় যে তা আপনার মনে গেঁথে গেছে।” তাই ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ বার বার অধ্যয়ন করলে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করলে ও সেগুলোকে মেনে চললে আমাদের জন্য সেগুলোকে মনে রাখা সহজ হবে। আর তা করা আমাদের জন্যই ভাল।

৭. অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আজকে কেন আমাদের যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ আরও বেশি করে দরকার?

আজকে আমাদের যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আরও বেশি করে দরকার। কারণ আজকে আমরা ইতিহাসের চরম মন্দ সময়ে পৌঁছে গেছি। যদি আমরা ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপে মন দিই, তাহলে জগতের মন্দ পথে যাওয়ার ইচ্ছা থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য আমরা বুদ্ধি পাই। গীতরচক বলেছিলেন: “আমার সমস্ত গুরু অপেক্ষা আমি জ্ঞানবান, কেননা আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ ধ্যান করি। প্রাচীন লোক হইতেও আমি বুদ্ধিমান, কারণ আমি তোমার নিদেশ সকল পালন করিয়াছি। আমি সমস্ত কুপথ হইতে আপন চরণ নিবৃত্ত করিয়াছি, যেন আমি তোমার বাক্য পালন করি।” (গীতসংহিতা ১১৯:৯৯-১০১) ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলে আমরা “সমস্ত কুপথ হইতে” সরে আসব আর জগতের লোকেদের মতো হব না যারা “চিত্তে অন্ধীভূত, ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভূত হইয়াছে।”—ইফিষীয় ৪:১৭-১৯.

৮. আমরা কীভাবে আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা খুব ভাল করে কাটিয়ে উঠতে পারব?

এছাড়াও ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ আমাদের এই ‘শেষকালে’ নানারকম পরীক্ষা সহ্য করতে শক্তি দেয়। (দানিয়েল ১২:৪) এই সাক্ষ্যকলাপ ছাড়া আমরা “ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা” হয়ে পড়ব। (যাকোব ১:২৫) কিন্তু আমরা যদি নিজেরা ঘরে ও মণ্ডলীতে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল বার বার অধ্যয়ন করি, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” আমাদের জন্য যে বইপত্রিকাগুলো তৈরি করেন সেগুলো পড়ি, তাহলে আমরা আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা খুব ভাল করে কাটিয়ে উঠতে পারব। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এই সমস্ত আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো আমাদের বলে দেয় যে, পরীক্ষার সময় কী করলে আমরা যিহোবাকে খুশি করতে পারি।

সভাগুলো আমাদের যেভাবে সাহায্য করে

৯. ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ কারা আর তারা ভাইদের কীভাবে সাহায্য করেন?

খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে গিয়ে আমরা ঈশ্বরের কিছু সাক্ষ্যকলাপ জানতে পারি যেখানে দায়িত্বে আছেন এমন ভাইরা আমাদের উপদেশ দেন। প্রেরিত পৌল এ কথা বলেছিলেন যখন তিনি লেখেন যে যীশু ‘ঊদ্ধের্ব উঠিয়া বন্দিগণকে বন্দি করিলেন, মনুষ্যদিগকে নানা বর দান করিলেন।’ তারপর পৌল বলেছিলেন: “[খ্রীষ্টই] কয়েক জনকে প্রেরিত, কয়েক জনকে ভাববাদী, কয়েক জনকে সুসমাচার-প্রচারক ও কয়েক জনকে পালক ও শিক্ষাগুরু করিয়া দান করিয়াছেন, পবিত্রগণকে পরিপক্ব করিবার নিমিত্ত করিয়াছেন, যেন পরিচর্য্যা-কার্য্য সাধিত হয়, যেন খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তোলা হয়।” (ইফিষীয় ৪:৮, ১১, ১২) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে আমরা যখন যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য এক জায়গায় জমা হই তখন ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ অর্থাৎ প্রাচীনরা আমাদেরকে যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ শেখান!

১০. ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫ পদে কোন্‌ বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে?

১০ ঈশ্বরের দেওয়া এই ব্যবস্থার জন্য যদি আমরা কৃতজ্ঞ হই, তাহলে আমরা সপ্তার পাঁচটা সভাতেই আসব আর এগুলোর একটাও বাদ দেওয়ার ইচ্ছা আমাদের হবে না। প্রেরিত পৌল সবসময় সভাতে যাওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে লিখেছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।”—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

১১. সপ্তার সবকটা সভায় গিয়ে আমাদের কী লাভ হয়?

১১ আপনি কি বোঝেন যে সভাগুলোতে গিয়ে আপনার কতটা উপকার হয়? সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ পাঠ আমাদের বিশ্বাসকে বাড়ায়, যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলতে সাহায্য করে আর “জগতের আত্মাকে” বাধা দেওয়ার জন্য আমাদের শক্তি দেয়। (১ করিন্থীয় ২:১২; প্রেরিত ১৫:৩১) জনসভায় বক্তা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল থেকে আমাদের উপদেশ দেন, যার মধ্যে যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ এবং যীশু খ্রীষ্ট যে “অনন্ত জীবনের কথা” বলেছিলেন তা আছে। (যোহন ৬:৬৮; ৭:৪৬; মথি ৫:১–৭:২৯) ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়ায় পটু করে তোলা হয়। পরিচর্যা সভা আমাদের শেখায় যে কীভাবে সবচেয়ে ভাল করে আমরা ঘরে ঘরে প্রচারে লোকেদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। কীভাবে তাদের কাছে আবার ফিরে গিয়ে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারি। কীভাবে ভাল করে বাইবেল অধ্যয়ন করাতে পারি বা কীভাবে যখনই লোকেদের পাওয়া যায় তাদের কাছে সুসমাচার জানাতে পারি। ছোট্ট বুক স্টাডি দল আরও বেশি করে আমাদের চিন্তাভাবনাকে সবার সামনে মেলে ধরার সুযোগ দেয়, যেখানে আমরা প্রায়ই যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ নিয়ে কথা বলি।

১২, ১৩. এশিয়ার একটা দেশে ভাইবোনেরা কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে সভাতে যাওয়া যে কত লাভ তা তারা বোঝেন?

১২ সপ্তার সবকটা সভায় গেলে তা আমাদের ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল মনে করিয়ে দেয়, আর যাতে আমরা যুদ্ধের মধ্যে, টাকাপয়সার অভাবে ও বিশ্বাসের অন্য পরীক্ষাগুলোর মধ্যেও টিকে থাকতে পারি তার জন্য আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করে। এশিয়ার একটা দেশের ৭০ জন ভাইবোন সভাতে যাওয়ায় যে কত লাভ তা বুঝতে পেরেছিলেন। তাদেরকে তাদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ও এর ফলে তারা একটা গভীর জঙ্গলে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু সভাগুলো যাতে তারা ঠিক ঠিক করে যেতে পারেন তাই তারা তাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শহরে ফিরে যান, কিংডম হলের যা কিছু রয়ে গিয়েছিল তা নিয়ে আসেন আর জঙ্গলে একটা কিংডম হল তৈরি করেন।

১৩ ওই দেশের আরেক এলাকায় বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চলতে থাকা সত্ত্বেও, যিহোবার সাক্ষিরা খুবই উৎসাহের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে চলেছেন। সেই এলাকার একজন প্রাচীনকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, “কী ভাইদের একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে সাহায্য করেছিল?” তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন? “এই ১৯ বছরে আমরা একটাও সভা বাদ দিইনি। কখনও কখনও হয়তো বোমাবাজি বা অন্য কোন অসুবিধার জন্য কিছু ভাইরা সভাতে আসতে পারেননি কিন্তু আমরা কখনও কোন সভা বাতিল করিনি।” আমাদের এই প্রিয় ভাইবোনেরা অবশ্যই বোঝেন যে ‘সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করার’ লাভ কত।

১৪. বৃদ্ধা হান্নার অভ্যাস থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৪ চুরাশি বছর বয়সী বিধবা হান্না ‘ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান করিতেন না।’ ফলে শিশু যীশুকে জন্মের অল্প কিছুদিন পরে যখন ধর্ম্মধামে আনা হয়েছিল তিনি সেখানে ছিলেন। (লূক ২:৩৬-৩৮) আপনি একটা সভাও যে বাদ দেবেন না তার জন্য কি কিছু ভেবেছেন? সম্মেলন ও অধিবেশনগুলোতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকা ও শোনা যাতে একদমই বাদ না পড়ে তার জন্য আপনি কি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন? এই সমস্ত ব্যবস্থাগুলো থেকে আমরা যা শিখি তা থেকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমরা উপকার পাই আর আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে আমাদের পিতা যিনি স্বর্গে আছেন তিনি আমাদের দেখাশোনা করেন। (যিশাইয় ৪০:১১) এই সভাগুলোতে গিয়ে আমরা আনন্দ পাই আর আমরা দেখাই যে যিহোবার সাক্ষ্যকলাপের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।—নহিমিয় ৮:৫-৮, ১২.

যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে আলাদা থাকা

১৫, ১৬. যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মানলে তা কীভাবে আমাদের আচার ব্যবহারের উপর ছাপ ফেলে?

১৫ ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলে আমরা এই মন্দ জগৎ থেকে আলাদা থাকতে পারি। যেমন বলা যায় যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে আমরা যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ি না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৮; হিতোপদেশ ৬:২৯-৩৫; ইব্রীয় ১৩:৪) মিথ্যে কথা বলা, প্রতারণা করা বা চুরি করার ইচ্ছাকেও খুবই সহজে দমন করা যেতে পারে যদি আমরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলি। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৫, ১৬; লেবীয় পুস্তক ১৯:১১; হিতোপদেশ ৩০:৭-৯; ইফিষীয় ৪:২৫, ২৮; ইব্রীয় ১৩:১৮) যিহোবার দেওয়া সাক্ষ্যকলাপ মেনে চললে আমাদের মনে বদলা নেওয়ার ইচ্ছা জাগে না। আমরা অন্যদের বিরুদ্ধে মনে মনে রাগ পুষে রাখি না বা অন্যদের নামে কুৎসা রটাই না।—লেবীয় পুস্তক ১৯:১৬, ১৮; গীতসংহিতা ১৫:১, ৩.

১৬ ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলে আমরা পবিত্র থাকি বা বলা যায় তাঁর কাজ করার জন্য নিজেদের এই জগৎ থেকে আলাদা রাখি। আর আজকে এই জগৎ থেকে আলাদা থাকা কতই না দরকার! মারা যাওয়ার আগের রাতে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় যীশু তাঁর শিষ্যদের জন্য এই বিনতি করেছিলেন: “আমি তাহাদিগকে তোমার বাক্য দিয়াছি; আর জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছে, কারণ তাহারা জগতের নয় যেমন আমিও জগতের নই। আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর। তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই। তাহাদিগকে সত্যে পবিত্র কর; তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৪-১৭) আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসি, যা আমাদেরকে যিহোবার পবিত্র সেবা করার জন্য জগৎ থেকে আলাদা করেছে।

১৭. আমরা যদি ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপকে অবহেলা করি, তাহলে কী হবে আর তাই আমাদের কী করা উচিত?

১৭ যিহোবার দাস হওয়ায় আমরা চাই যে তিনি সবসময় তাঁর কাজের জন্য আমাদের ব্যবহার করুন। কিন্তু আমরা যদি ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপকে অবহেলা করি, তাহলে এই জগতের দূষিত হাওয়া আমাদেরকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরবে। আমরা এর কথাবার্তা, আচার-ব্যবহারকে নকল করতে থাকব আর এর বইপত্র ও আমোদপ্রমোদে ডুবে যাব। কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই অর্থপ্রিয়, আত্মাশ্লাঘী, অভিমানী, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, প্রচণ্ড, দুঃসাহসী, গর্বান্ধ হতে চাই না বা ঈশ্বরপ্রিয় না হয়ে বিলাসপ্রিয় হতে চাই না। আজকে যারা ঈশ্বরের থেকে অনেক দূরে সরে গেছে তাদের মধ্যে যে দোষগুলো দেখা যায় এগুলো তার মাত্র কয়েকটা। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) যেহেতু আমরা এই মন্দ জগতের শেষের একেবারে গভীরে বাস করছি, তাই আসুন আমরা যিহোবার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি যেন আমরা তাঁর সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলতে পারি আর ‘তাঁর বাক্যানুসারে সাবধান হই।’—গীতসংহিতা ১১৯:৯.

১৮. যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে আমরা কোন্‌ ঠিক কাজ করতে পারব?

১৮ যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ আমাদের যা করা উচিত নয় শুধু সে ব্যাপারেই সাবধান করে না কিন্তু তার চেয়েও বেশি কিছু করে। যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে আমরা যা ঠিক কাজ তা করতে পারব। কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই যিহোবার ওপর পুরোপুরি ভরসা করব। আমাদের সমস্ত হৃদয়, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে যিহোবাকে ভালবাসব। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫; গীতসংহিতা ৪:৫; হিতোপদেশ ৩:৫, ৬; মথি ২২:৩৭; মার্ক ১২:৩০) ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ আমাদের প্রতিবেশীদের ভালবাসতে শেখায়। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮; মথি ২২:৩৯) আর আমরা ঈশ্বরের জন্য ও আমাদের প্রতিবেশীদের জন্য বিশেষ করে তখনই ভালবাসা দেখাই যখন আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলি ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে জীবনদায়ী “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” ভাগ করে নিই।—হিতোপদেশ ২:১-৫.

যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলার মানে জীবন!

১৯. কীভাবে আমরা অন্যদের মনে এই ধারণা দিতে পারি যে যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মানা তাদের জন্য ভাল ও উপকারী?

১৯ যদি আমরা নিজেরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলি ও অন্যদেরও তা করার জন্য সাহায্য করি, তাহলে আমরা আমাদের নিজেদের ও যারা আমাদের কথা শোনে তাদের সবার জীবন বাঁচাব। (১ তীমথিয় ৪:১৬) কীভাবে আমরা অন্যদের মনে এই ধারণা দিতে পারি যে যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মানা আজ তাদের জন্য ভাল ও উপকারী? নিজেরা জীবনে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগিয়ে। তাহলেই যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত” তারা নিজের চোখে দেখতে পাবেন যে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের যে নীতি মেনে চলতে বলে তা সত্যিই আমাদের ভালর জন্য। (প্রেরিত ১৩:৪৮) তারা এও দেখতে পাবেন যে ‘ঈশ্বর বাস্তবিকই আমাদের মধ্যবর্ত্তী।’ তখন তারাও আমাদের সঙ্গে নিখিল বিশ্বের ঈশ্বর যিহোবার সেবা করতে চাইবেন।—১ করিন্থীয় ১৪:২৪, ২৫.

২০, ২১. যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ ও তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা কী করতে পারব?

২০ তাহলে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে চলে, আমরা যা শিখেছি তা জীবনে কাজে লাগিয়ে ও যিহোবা আমাদের শেখানোর জন্য যে আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো করেছেন তা মেনে নিয়ে আমরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে অতিশয় ভালবাসতে পারি। আমরা যদি যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে মেনে চলি, তাহলে আমরা ‘সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করতে পারব, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।’ (ইফিষীয় ৪:২০-২৪) যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ ও তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন এই গুণগুলোকে গড়ে তুলতে পারব। এই গুণগুলো শয়তানের জগতের মনোভাব থেকে কতই না আলাদা! (গালাতীয় ৫:২২, ২৩; ১ যোহন ৫:১৯) তাই আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হই যখন যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যা চান তা আমাদের বার বার মনে করিয়ে দেন। আর তা সে আমাদের নিজেদের অধ্যয়নের মধ্যে দিয়েই হোক, কোন প্রাচীন আমাদের তা মনে করিয়ে দিন বা সভা, সম্মেলন বা অধিবেশনগুলোতেই আমাদের তা মনে করিয়ে দেওয়া হোক।

২১ যেহেতু আমরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে চলি, তাই ধার্মিকতার জন্য যখন কষ্টভোগ করি তখন আমরা তার জন্য আনন্দ করতে পারি। (লূক ৬:২২, ২৩) খুব বিপদের মধ্যেও আমরা রক্ষা পাওয়ার জন্য যিহোবার দিকে তাকাই। আর এখন এটা করা আরও বেশি জরুরি কারণ এখন সমস্ত জাতিকে ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধের’ জন্য জড়ো করা হচ্ছে যে যুদ্ধের নাম হল হর্‌মাগিদোন।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬.

২২. যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে মেনে চলার ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছা কেমন হওয়া উচিত?

২২ আমরা যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে অমূল্য অনন্ত জীবন উপহার পেতে চাই, তাহলে যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে আমাদের অতিশয় ভালবাসতে হবে আর মন থেকে সেগুলোকে মেনে চলতে হবে। তাহলে আসুন আমরা গীতরচকের মতো মন গড়ে তুলি যিনি গেয়েছিলেন: “তোমার সাক্ষ্যকলাপ অনন্তকাল ধর্ম্মময়; আমাকে বুদ্ধি দেও, তাহাতে আমি বাঁচিব।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৪৪) তাই গীতরচকের এই কথাগুলো থেকে তার যে দৃঢ় ইচ্ছার কথা জানা যায় আসুন আমরা মনে মনে সেইরকম ইচ্ছা গড়ে তুলি। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাকে [“যিহোবাকে,” NW] ডাকিয়াছি; আমাকে পরিত্রাণ কর, তাহাতে আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ পালন করিব।” (গীতসংহিতা ১১৯:১৪৬) তাই আসুন আমরা আমাদের কথায় ও কাজে প্রমাণ দিই যে আমরা যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে অতিশয় ভালবাসি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে গীতরচক কীভাবে দেখতেন?

• কেন আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপের দরকার?

• সভাগুলো থেকে আমরা ঈশ্বরের সাক্ষ্যকলাপ সম্বন্ধে কী শিখি?

• যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ কীভাবে আমাদেরকে এই জগৎ থেকে আলাদা রাখে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

গীতরচক যিহোবার সাক্ষ্যকলাপকে অতিশয় ভালবাসতেন

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

হান্নার উদাহরণ দেখে আপনি একটা সভাও যে বাদ দেবেন না তার জন্য কি কিছু ভেবেছেন?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার সাক্ষ্যকলাপ মেনে চললে তা আমাদেরকে শুদ্ধ রাখে যাতে তিনি তাঁর কাজের জন্য আমাদের ব্যবহার করতে পারেন