সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি যেভাবে অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন

আপনি যেভাবে অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন

আপনি যেভাবে অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন

“জীবনে একজন বন্ধু পাওয়াই অনেক; দুজন, খুবই বেশি পাওয়া আর তিনজনের কথা তো ভাবাই যায় না।”—হেনরি ব্রুকস্‌ এডামস্‌।

 এই কথাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সত্যিকারের বন্ধু খুব কমই পাওয়া যায়। অনেকেই যাদের কোন বন্ধু নেই অথচ সত্যিকারের বন্ধু পেতে চান তারা প্রায়ই এ কথা বলে থাকেন যে, “মনের কথা খুলে বলার মতো এমন বন্ধু আমার নেই,” “আমার এমন কোন বন্ধু নেই যাকে আমি বিশ্বাস করতে পারি,” আবার কেউ কেউ বলেন “আমার কুকুরই হল আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।”

কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ও বছরের পর বছর সেই বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন। একটা সমীক্ষা জানায় যে, “আমেরিকায় ২৫ শতাংশ বয়স্ক লোকেরা ‘দীর্ঘ নিঃসঙ্গতায়’ ভোগেন আর . . . ফ্রান্সের প্রায় অর্ধেক লোকেদের ভীষণ একাকীত্ব যেন কুরে কুরে খাচ্ছে।” দিনের পর দিন ডেটিং ক্লাব ও কমপিউটার চ্যাট রুম লোকেদের আরও প্রিয় হয়ে উঠছে আর খবরের কাগজে পত্রমিতালীর বিজ্ঞাপন বেড়েই চলেছে। এই সবকিছুই দেখায় যে মানুষ অন্যের সঙ্গ চায়, তারা বন্ধু পেতে চায়।

নিউরোসাইকোলজিস্ট, ড. ডেভিড উইক্স বলেন যে একাকীত্ব শুধু মনের ওপরই নয় কিন্তু শরীরের ওপরও প্রভাব ফেলে। তিনি আরও বলেন, “আমার কাছে যে রোগীরা আসেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই যারা দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভোগেন বলতে গেলে তারা সকলেই নিঃসঙ্গ। লোকেরা যত বেশি নিঃসঙ্গ তত বেশি হতাশায় ভোগেন। তাই বলা যায় যে নিঃসঙ্গতা ও হতাশার মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে।”

আজ বিবাহবিচ্ছেদ ও পরিবারে ভাঙন দিনের পর দিন লোকেদের আরও একা করে দিচ্ছে। ব্রিটেনে করা এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই দেশের শতকরা ৩০ ভাগ পরিবারে শুধু একজন করে লোক দেখা যাবে।

ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা শাস্ত্র বলে যে “শেষ কালে” মানুষেরা স্বার্থপর হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) আজকে দেখা যায় যে লোকেরা টাকাপয়সা, ধনদৌলতের জন্য পাগল। বাড়ি, গাড়ি ভাল চাকরির পিছনে তারা এতটাই ব্যস্ত যে অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মতো সময় ও ইচ্ছা তাদের নেই। লেখক এন্থনি স্টর বলেন: “আজকে লোকেদের জীবন তাদের পরিবারের সঙ্গে নয় কিন্তু অফিসেই কেটে যায়।”

সত্যিকারের বন্ধুর চেয়ে দামি আর কিছু নেই

আপনার জীবন কেমন হবে তার বেশিটাই ঠিক হয় আপনি কেমন বন্ধু তার ওপর। বেশির ভাগ সময়ই যারা শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকতে চায় তারা কখনোই সুখী হয় না কারণ তাদের কোন বন্ধু থাকে না, যার কাছে তারা তাদের সুখদুঃখের কথা বলতে পারে। তাই যীশু খ্রীষ্ট যা বলেছিলেন তা একেবারেই সত্যি: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:৩৫) এই সত্যেরই প্রতিধ্বনি করতে গিয়ে ইংরেজ কবি জর্জ বাইরন লিখেছিলেন: “যারা আনন্দ পেয়েছেন তাদের উচিত অন্যদের সঙ্গে তা ভাগ করে নেওয়া।”

কাকে বন্ধু বলা যেতে পারে? একটা অভিধান ব্যাখ্যা করে বন্ধু হল “এমন একজন যে আপনাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে ও সম্মান করে।” সত্যিকারের বন্ধু আপনাকে সঠিক চিন্তাধারা রাখার জন্য সাহায্য করে। বিপদে উদ্ধার করে, দরকারে সাহায্য করে। দুঃখের সময়ে আপনাকে ভরসা দেয়। তাই রাজা শলোমন বলেছিলেন: “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে।” (হিতোপদেশ ১৭:১৭) সময় গড়িয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে টাকাপয়সা ও জিনিসপত্রের কোন মূল্য থাকে না কিন্তু সত্যিকারের বন্ধুত্বের মূল্য দিনের পর দিন বেড়ে যায় আর তা আরও গভীর হয়।

বাইবেল খ্রীষ্টানদের ‘অন্তর খুলে’ অন্যদের ভালবাসতে বলে। (২ করিন্থীয় ৬:১৩, প্রেমের বাণী) অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা হচ্ছে বুদ্ধির কাজ। উপদেশক ১১:১, ২ পদে আমরা পড়ি: “তুমি জলের উপরে আপন ভক্ষ্য ছড়াইয়া দেও, কেননা অনেক দিনের পরে তাহা পাইবে। সাত জনকে, এমন কি, আট জনকেও অংশ বিতরণ কর, কেননা পৃথিবীতে কি আপদ ঘটিবে, তাহা তুমি জান না।” বন্ধুত্ব করার সময় বাইবেলের এই নীতি কীভাবে কাজে আসে? আপনি যদি অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, তাহলে তাদের মধ্যে কেউ না কেউ দরকারের সময় আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে।

সত্যিকারের বন্ধু আবার আপনার রক্ষক হতে পারে। হিতোপদেশ ২৭:৬ পদ বলে, “প্রণয়ীর প্রহার বিশ্বস্ততাযুক্ত।” অনেকে হয়তো শুধু আপনার প্রশংসাই করতে পারে কিন্তু যে সত্যিকারের বন্ধু সে আপনার জন্য চিন্তা করে তাই সে আপনার ভুলটুকু দেখিয়ে দেয় আর ভালবেসে তা শুধরেও দেওয়ার চেষ্টা করে।—হিতোপদেশ ২৮:২৩.

ভাল বন্ধুরা যেন সুন্দর উপহারের মতো যারা আপনার উপকার করে। প্রেরিত ১০ অধ্যায়ে আমরা রোমীয় শতপতি কর্ণীলিয়ের বিষয়ে পড়ি যাকে এক দূত এসে বলেছিলেন যে, তার প্রার্থনা ঈশ্বর শুনেছেন। কর্ণীলিয় ‘আপন জ্ঞাতিদিগকে ও আত্মীয় বন্ধুগণকে ডাকিয়া একত্র করিয়া’ প্রেরিত পিতরের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। কর্ণীলিয় ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিলেন প্রথম অছিন্নত্বক পরজাতীয় যারা সুসমাচার গ্রহণ করেছিলেন। তারা পবিত্র আত্মায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ঈশ্বরের রাজ্যে খ্রীষ্টের সঙ্গে রাজত্ব করার জন্য তাদেরকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কর্ণীলিয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জন্য এটা কত বড় এক আশীর্বাদই না ছিল!—প্রেরিত ১০:২৪, ৪৪.

তাহলে, আপনি কীভাবে অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন? বাইবেল বন্ধুত্বের বিষয়ে অনেক কিছু বলে ও অনেক ভাল পরামর্শ দেয়, যা আমরা কাজে লাগাতে পারি। (নিচে দেওয়া বাক্স দেখুন।)

আপনি কোথায় সত্যিকারের বন্ধু পাবেন

সত্যিকারের বন্ধু পাওয়ার সবচেয়ে ভাল জায়গা হল খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী। সেখানে সবচেয়ে প্রথমে আপনি যিহোবা যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি আপনার স্বর্গীয় পিতা তাঁকে আপনার বন্ধু হিসেবে পাবেন। আর যীশু খ্রীষ্ট যিনি আপনাকে পরিত্রাণ দিয়েছেন তিনিও আপনার বন্ধু হবেন। যীশু আপনার বন্ধু হতে চান ও তিনি বলেন “কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই।” (যোহন ১৫:১৩, ১৫) যিহোবা ও যীশু খ্রীষ্টের বন্ধু হয়ে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে তাঁরা ‘আপনাদেরকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করবেন।’ হ্যাঁ, যিহোবা ও যীশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মানে হল অনন্তকাল বেঁচে থাকার সুযোগ পাওয়া।—লূক ১৬:৯; যোহন ১৭:৩.

আপনি তাদের সঙ্গে কীভাবে বন্ধুত্ব করতে পারেন? যিহোবার বন্ধু হয়ে তাঁর তাঁবুতে অতিথি হওয়ার জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে সেগুলো গীতসংহিতা ১৫ অধ্যায়ে লেখা আছে। বাইবেল খুলে গীতসংহিতা ১৫ অধ্যায়ের পাঁচটা পদ পড়ুন। এছাড়াও যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু।”—যোহন ১৫:১৪.

তাই আপনি যদি যীশু খ্রীষ্টের আজ্ঞা মানার জন্য মন দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল পড়েন ও বাইবেলের নীতি মেনে কাজ করেন, তাহলে তার মানে আপনি যিহোবা ও যীশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান। আর তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য আপনার সব সভাগুলোতে যোগ দেওয়া দরকার, যেখানে যিহোবা ঈশ্বরের বিষয়ে জ্ঞান পাওয়া যায়। যিহোবার আজ্ঞা মানুন আর তাহলেই আপনি তাঁর ও তাঁর পুত্রের কাছে আসতে পারবেন।

সভাগুলোতে গিয়ে আপনি সেই লোকেদেরকে জানতে পারবেন যারা যিহোবাকে ভালবাসেন ও যারা নিজেদের জীবনে আত্মার ফল যেমন প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমনের মতো গুণগুলো দেখান। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আপনি যদি সত্যিই বন্ধু চান ও আপনার একাকীত্ব দূর করতে চান, তাহলে আপনার একেবারেই সভা বাদ দেওয়া উচিত নয়। প্রত্যেক সপ্তার প্রতিটা সভায় আসুন। আপনি যদি সভাগুলোতে আসেন, তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় ও ঠিক সময়ে আপনার বন্ধু খুঁজছেন। আর আপনি সেই লোকেদের মধ্যে থেকে বন্ধু বেছে নিচ্ছেন যারা ঈশ্বরের বন্ধু।

চিরকালের বন্ধু

সত্যিকারের বন্ধুত্ব যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক সুন্দর উপহার। এটা যিহোবার ব্যক্তিত্বের একটা দিক এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তিনি প্রেমময় ও উদার আর তাই তিনি এই পৃথিবীতে বুদ্ধিমান প্রাণীদের সৃষ্টি করেছেন, যাদের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব করতে পারি। তাই সত্যিকারের বন্ধু পাওয়ার জন্য সত্যের ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করুন। তাদেরকে উৎসাহ দিন। তাদের সঙ্গে প্রচার করুন। সবসময় তাদের সঙ্গে ও তাদের জন্য প্রার্থনা করুন। তাহলেই বলা যেতে পারে যে যিহোবা ও তাঁর পুত্র, যীশু খ্রীষ্টের মতো আপনি কাজ করছেন।

বন্ধুত্ব হচ্ছে এমন এক উপহার যা সকলেই দিতে পারে ও নিতে পারে। খুব শীঘ্রিই আপনি আরও অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সুযোগ পাবেন। আপনি এখন লাখ লাখ লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন যারা আজ বেঁচে আছেন। আর নতুন জগতে আপনি এমন আরও অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারবেন যারা অনেক দিন আগে মারা গেছেন। নতুন জগতে এই লোকেরা আবার বেঁচে উঠবেন যখন ‘মৃত্যু আর হবে না।’ (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪; যোহন ৫:২৮, ২৯) তাই এখনই অন্যদের বন্ধু হোন ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন, যারা যিহোবাকে ভালবাসেন। ঈশ্বরের বাক্য শুনে যিহোবা ঈশ্বর ও যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বকে গভীর করুন। তাহলে আপনি চিরকালের জন্য আর কখনোই নিঃসঙ্গ হবেন না।

[২২, ২৩ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব করার ছয়টা উপায়

১. বন্ধু হোন। অব্রাহামকে “‘ঈশ্বরের বন্ধু’” বলা হয়েছিল কারণ যিহোবার ওপর তার অটল বিশ্বাস ছিল। (যাকোব ২:২৩) তাকে বন্ধু বলার পেছনে এটা ছাড়াও আরেকটা কারণ ছিল। বাইবেল বলে যে অব্রাহাম ঈশ্বরকে ভালবাসতেন। (২ বংশাবলি ২০:৭, NW) তিনি নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে যিহোবাকে তার মনের কথা জানিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১৮:২০-৩৩) আপনি বন্ধুত্ব করতে চান তা দেখানোর জন্য নিজে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন। যীশু বলেছিলেন: “দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে।” (লূক ৬:৩৮) দুই একটা মিষ্টি কথা ও একটু সাহায্য করা একটা বীজের মতো, যা পরে বন্ধুত্বের এক বিশাল বৃক্ষ হয়ে যায়। আমেরিকার প্রবন্ধকার রাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন বলেন: “একমাত্র বন্ধু হয়েই আপনি বন্ধু পেতে পারেন।”

২. বন্ধুত্ব করার জন্য সময় করে নিন। অনেক লোকেরাই ভাল বন্ধু চান। কিন্তু বন্ধুত্ব করার জন্য তাদের হাতে সময় নেই। রোমীয় ১২:১৫, ১৬ পদ বলে: “যাহারা আনন্দ করে, তাহাদের সহিত আনন্দ কর; যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর। তোমরা পরস্পরের প্রতি একমনা হও।” বাইবেলের এই পদ আমাদেরকে অন্যের সুখদুঃখকে নিজের করে নিতে বলে। যীশু খ্রীষ্ট যদিও খুবই ব্যস্ত থাকতেন, তবুও তিনি তাঁর বন্ধুদের জন্য সময় করে নিতেন। (মার্ক ৬:৩১-৩৪) মনে রাখবেন যে বন্ধুত্ব হচ্ছে এক ফুল গাছের মতো যাতে ফুল ফোটানোর জন্য জলের ও যত্নের প্রয়োজন। আর তার জন্য সময়ের দরকার।

৩. অন্যেরা যখন কথা বলেন, মন দিয়ে তা শুনুন। যারা ভাল করে ও মন দিয়ে অন্যের কথা শোনেন তারা খুব তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব করতে পারেন। তাই শিষ্য যাকোব বলেন: “প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, . . . হউক।” (যাকোব ১:১৯) আপনি যখন অন্যদের সঙ্গে গল্পগুজব করেন তখন তারা কী বলতে চান তা শুনুন। তাদেরও কথা বলার সুযোগ দিন। নিজে এগিয়ে গিয়ে আপনি তাদেরকে সম্মান দেখান। (রোমীয় ১২:১০) তাহলেই তারা আপনার সঙ্গ চাইবেন। অন্যদের সঙ্গে গল্পগুজব করার সময় আপনি যদি সবসময় নিজের কথাই বলেন বা আপনি নিজে বিশেষ কিছু বলে দেখাতে চান, তাহলে এমন কাউকেই হয়তো আপনি খুঁজে পাবেন না যে আপনার কথা শুনতে বা আপনাকে বুঝতে চাইবে।

৪. ক্ষমা করুন। যীশু একবার পিতরকে “সত্তর গুণ সাত বার পর্য্যন্ত” ক্ষমা করতে বলেছিলেন। (মথি ১৮:২১, ২২) সত্যিকারের বন্ধু আপনার ছোট্ট ছোট্ট ভুলগুলোকে বড় করে দেখে না। যেমন বলা যায় যে, কেউ কেউ হয়তো পেয়ারায় ছোট্ট ছোট্ট অনেক বীজ থাকায় তা খেতে ভালবাসে না। কিন্তু আবার যারা পেয়ারা খেতে ভালবাসে তাদের এই বীজগুলো চোখেই পড়ে না। সত্যিকারের বন্ধুদের তাদের ভাল গুণের জন্য ভালবাসা হয় কিন্তু তাদের ছোট ছোট ভুলগুলোকে বড় করে দেখা হয় না। তাই পৌল আমাদের বলেন: “পরস্পর সহনশীল হও . . . পরস্পর ক্ষমা কর।” (কলসীয় ৩:১৩) যারা ক্ষমা করতে শেখেন তারাই বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারেন।

৫. সবসময় বন্ধুর সঙ্গ চাইবেন না। প্রত্যেকের নিজের জন্য সময় দরকার আর আপনার বন্ধুর ব্যাপারেও তাই। সেই জন্য হিতোপদেশ ২৫:১৭ পদ আমাদের বিজ্ঞ পরামর্শই দেয় এই বলে: “প্রতিবাসীর গৃহে তোমার পদার্পণ বিরল কর; পাছে বিরক্ত হইয়া সে তোমাকে ঘৃণা করে।” এইজন্য আপনি আপনার বন্ধুর সঙ্গে কতবার দেখা করতে যাচ্ছেন ও তাদের সঙ্গে কতক্ষণ সময় কাটাচ্ছেন তা খেয়াল রাখুন। তাদের উপর কর্তৃত্ব করবেন না তাতে ঈর্ষা জাগতে পারে। যখন কোন ব্যাপারে আপনার নিজস্ব মতামত বা ইচ্ছা জানানোর থাকে, তখন তা ভাল করে চিন্তা করে বলুন। এতে আপনার বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে ও আরও অনেকে আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইবে।

৬. খোলা মনের হোন। খোলা মনের হলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায়। এ ব্যাপারে প্রেরিত পৌলের পরামর্শ হল ‘দানশীল হোন, সহভাগীকরণে তৎপর হোন।’ (১ তীমথিয় ৬:১৮) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অন্যদের সঙ্গে ভাল করে কথা বলুন। (হিতোপদেশ ১১:২৫) অন্যদের প্রশংসা করুন, ভাল বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন, অন্যদের উৎসাহ দিন। আপনি যখন দেখান যে আপনি অন্যের বিষয়ে চিন্তা করেন ও অন্যের ভাল চান, তখন অন্যেরা আপনার আরও কাছে আসবে। আপনার জন্য তারা কী করতে পারে তা ভাবার চেয়ে বরং ভাবুন যে, আপনি তাদের জন্য কী করতে পারেন।