সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেল সমাদরও পেয়েছে অনাদরও পেয়েছে

বাইবেল সমাদরও পেয়েছে অনাদরও পেয়েছে

বাইবেল সমাদরও পেয়েছে অনাদরও পেয়েছে

“আমি চাই যে পবিত্র বাইবেল পৃথিবীর সব ভাষায় অনুবাদ করা হোক।” ষোড়শ শতকের নামকরা ওলন্দাজ পণ্ডিত ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস লিখেছিলেন।

 ইরাসমাস অন্তর থেকে চাইতেন যে সব লোকেরা বাইবেল পড়ুক আর তা বুঝুক। কিন্তু বাইবেলের শত্রুরা তা মোটেই চাইত না। আসলে সেই সময়ে ইউরোপের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, লোকেরা বাইবেলের নাম পর্যন্ত মুখে আনতে পারত না। বাইবেলে কী লেখা আছে, তা জানতে চাওয়া খুবই বিপদজনক ছিল। ইংল্যান্ডের সংসদ আইন পাস করেছিল যে, “যদি কেউ বাইবেল পড়ার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের জমিজমা, অস্থাবর সম্পত্তি ও জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে . . . কিন্তু, তাদের ক্ষমা করার পরও যদি তারা একগুঁয়েমি করে আবারও বাইবেল পড়ে, তাহলে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার দোষে তাদের ফাঁসি দেওয়া হবে আর গির্জার শিক্ষার বিরুদ্ধে যাওয়ায় তাদের পুড়িয়ে মারা হবে।”

ইউরোপের অন্য দেশগুলোর অবস্থাও একইরকম ছিল। ক্যাথলিক ধর্মীয় বিচারসভা “ধর্মবিরোধী” দলগুলোকে শিকারি কুকুরের মতো খুঁজে বেড়িয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওয়ালডেনসেস দলের কথা বলা যায়। তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছিল কারণ তারা “বাইবেল প্রচার করত, . . . সেই সময়ে সাধারণ লোকেদের কাছে গিয়ে বাইবেল প্রচার করা ও বোঝানো একেবারে নিষিদ্ধ ছিল।” বাইবেলকে ভালবেসে অগণিত লোকেরা নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছিলেন, তাদের জীবন দিয়েছিলেন। অনেক লোকেদের শুধুমাত্র প্রভুর প্রার্থনা বা দশ আজ্ঞা বলার জন্য বা তাদের ছেলেমেয়েদের তা শেখানোর কারণে ভয়ানক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল।

কিন্তু, অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করেও অনেকে তাদের মন থেকে বাইবেলের জন্য ভালবাসা ও ভক্তিকে কমে যেতে দেননি। এইরকম কিছু লোকেরা ইংল্যান্ড থেকে উত্তর আমেরিকায় এসে বাস করতে শুরু করেছিলেন। তাদের বিষয়ে ব্যক্তিগত জীবনের ইতিহাস—নবজাগরণের প্রেমিক (ইংরেজি) নামে একটা বই বলে যে, সেই যুগের আমেরিকার লোকেরা “খুব ভাল করে বাইবেল জানত, প্রতিদিন তা পড়ত ও জীবনে কাজে লাগাত।” আর সেইজন্য ১৭৬৭ সালে বোস্টন শহরে ছাপানো এক প্রবন্ধে বলা হয়েছিল যে, “পবিত্র শাস্ত্র পড়ার জন্য সচেষ্ট হোন। প্রত্যেকদিন সকাল ও সন্ধ্যায় বাইবেলের একটা করে অধ্যায় পড়ুন।”

ক্যালিফোর্নিয়া ভেন্টুরার বার্না গবেষণা দলের কথামতো আমেরিকায় একশ জনের মধ্যে ৯০ জনের হাতে গড়ে তিনটে করে বাইবেল আছে। সম্প্রতি করা এক সমীক্ষা দেখায় যে আমেরিকায় বাইবেলকে এখনও লোকেরা খুবই সমাদর করে। কিন্তু “বাইবেল পড়ার জন্য সময় করে নেওয়া, অধ্যয়ন করা বা এতে লেখা কথাগুলো মেনে চলা . . . অতীতের বিষয় হয়ে গেছে।” বেশির ভাগ লোকেরাই শুধু ওপর ওপর বাইবেল জানে। একজন সাংবাদিক লেখেন: “লোকেরা কখনও ভেবেই দেখে না যে আজও [বাইবেলে] লেখা কথাগুলো মেনে চলে আমরা আমাদের সমস্যা ও মুশকিলের সমাধান করতে পারি।”

সাধারণ লোকেদের ধারণা

আজকে সাধারণ লোকেদের ধারণা হল যে, জীবনে সফল হওয়ার জন্য বাইবেলের কথা শোনার কোন দরকার নেই। শুধু বুদ্ধি করে কাজ করা ও একে অন্যের কাজে আসাই যথেষ্ট। বাইবেলকে অন্যান্য বইয়ের মতোই মামুলি বই বলে মনে করা হয়, যেখানে কিছু নীতিকথা ও জীবন কাহিনী দেওয়া আছে। আজকে লোকেরা মনে করে না যে, বাইবেলে বলা ঘটনাগুলো বাস্তব ও এর কথাগুলো সত্য।

তাহলে, দিনের পর দিন জীবনে যে জটিল সমস্যা ও মুশকিলগুলো বেড়ে চলেছে, তা লোকেরা কীভাবে সামলাচ্ছে? লোকেদের মধ্যে ধর্মীয় জীবন বলতে কিছু নেই। তাদের জীবনে কোন নীতি নেই এবং ধর্ম তাদের ঠিক রাস্তা দেখায়নি। তাদের অবস্থা হাল ছাড়া নৌকার মতো, যা ‘মানুষের শিক্ষা, . . . ছলনা ও ধূর্ততার বাতাসে এদিকে সেদিকে দুলতে থাকে।’—ইফিষীয় ৪:১৪, দ্যা টুয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরি নিউ টেস্টামেন্ট।

তাহলে এখন প্রশ্ন ওঠে যে বাইবেল কি অন্য ধর্মগ্রন্থগুলোর মতো শুধুই একটা ধর্মগ্রন্থ? নাকি এটা সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য, যা আমাদের কাজে আসে ও জীবনে চলার পথে আমাদের এটার দরকার আছে? (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) আমাদের কি বাইবেল পড়া উচিত? পরের প্রবন্ধ আমাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস

[সৌজন্যে]

Deutsche Kulturgeschichte বই থেকে

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ওয়ালডেনসেসরা বাইবেল থেকে প্রচার করায় তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছিল

[সৌজন্যে]

Stichting Atlas van Stolk, Rotterdam