সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা তাঁর লোকেদের বিশ্রাম-স্থল দেন

যিহোবা তাঁর লোকেদের বিশ্রাম-স্থল দেন

রাজ্য ঘোষণাকারীরা বিবৃতি দেয়

যিহোবা তাঁর লোকেদের বিশ্রাম-স্থল দেন

 পাহাড়ি রাস্তায় চলতে চলতে ক্লান্ত পথিক একটা বিশ্রাম-স্থল দেখতে পেলে কতই না স্বস্তি পান! নেপালে এইরকম বিশ্রাম-স্থলগুলোকে চৌতারা বলা হয়। চৌতারা সাধারণত বিশাল বট গাছের আশেপাশে কোথাও বানানো হয় যাতে করে পথিকেরা সেই ছায়া ঘেরা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। রাস্তায় এইরকম চৌতারা বানানো খুবই পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয় আর যারা লোকেদের প্রতি এই দয়া দেখান তারা কিন্তু নিজেদেরকে গোপনে রাখেন।

নেপালের কিছু অভিজ্ঞতা দেখায় যে, এই জগতের পথে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত “পথিকদের” যিহোবা ঈশ্বর কীভাবে সতেজ করেছেন ও তাদের বিশ্রাম-স্থল দিয়েছেন।—গীতসংহিতা ২৩:২.

• লিল কুমারী নেপালের এক সুন্দর শহর পোখরায় থাকেন। সেই শহর থেকে বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বতকে অপূর্ব দেখায়। কিন্তু সংসারে অভাব থাকায় লিল কুমারীকে এতই চিন্তা করতে হয় যে তার সামনে যেন আশার কোন আলো নেই। একদিন একজন যিহোবার সাক্ষির সঙ্গে তার কথা হয়। সাক্ষি বোন তাকে বাইবেল থেকে আশার কথা শোনান আর তা তার এত ভাল লাগে যে, দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে চান।

বাইবেল অধ্যয়ন করতে লিল কুমারীর খুবই ভাল লাগত কিন্তু ঘরের লোকেদের বিরোধিতার জন্য ঠিকমতো তা চালিয়ে যাওয়া তার জন্য খুবই কঠিন ছিল। তাই বলে তিনি হাল ছেড়ে দেননি। তিনি প্রত্যেকটা সভাতে আসতেন আর যা কিছু তিনি শিখছিলেন তা জীবনে কাজে লাগাতেন। বিশেষ করে বাইবেলের সেই পরামর্শকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন যেখানে বলা রয়েছে যে স্ত্রীর তার স্বামীর বশীভূত থাকা উচিত। ফলে, লিল কুমারীর মা ও স্বামী দেখেন যে লিল কুমারীর বাইবেল অধ্যয়নের ভাল ফল তাদের পুরো পরিবারের ওপর ছাপ ফেলছে।

লিল কুমারীর স্বামী ও তার বেশ কিছু আত্মীয় এখন বাইবেল অধ্যয়ন করছেন। কদিন আগে পোখরাতে যিহোবার সাক্ষিদের এক অধিবেশন হয়েছিল আর সেই অধিবেশনে লিল কুমারীর সঙ্গে তার ১৫ জন আত্মীয় এসেছিলেন। লিল কুমারী কতই না খুশি হয়েছিলেন! তিনি বলেন: “আজ আমার ঘর এক বিশ্রাম-স্থল হয়ে উঠেছে কারণ আজ আমরা পরিবারের সকলে মিলে সত্য উপাসনা করছি। আর আমি সত্যিকারের শান্তি খুঁজে পেয়েছি।”

• যদিও নেপালে জাতিবৈষম্য বেআইনী, তবুও নেপালে এখনও লোকেদের মধ্যে তা রয়ে গেছে। তাই, তারা যখন জানতে পারেন যে সব লোকেরাই সমান ও কোন জাত অন্য জাতের চেয়ে উঁচু নয় বলে বাইবেলে লেখা আছে তখন অনেকেই বাইবেল শিখতে চান। সূর্য মায়া ও তার পরিবার যখন বাইবেল থেকে শেখেন যে “ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান” তখন তা তাদের জীবনকে বদলে দেয়।—প্রেরিত ১০:৩৪, প্রেমের বাণী।

সূর্য মায়া জাতপাতের নামে করা অন্যায়, সমাজ ও রীতি-রেওয়াজ মানার নামে লোকেদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বোঝা দেখে মনে মনে খুবই অশান্তিতে ভুগতেন। কিন্তু ধর্মমনা হওয়ায় তিনি বছরের পর বছর ধরে তার ঠাকুর-দেবতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাই একদিন যখন তিনি মরিয়া হয়ে কেঁদে কেঁদে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছিলেন সেই সময় তার ছবছরের নাতনি ববিতা এসে বলে: “দিদা, কেন তুমি এই ঠাকুরগুলোর সামনে কাঁদছ, এরা তো কিছুই করতে পারে না?”

একজন যিহোবার সাক্ষি বোনের সঙ্গে ববিতার মা বাইবেল অধ্যয়ন করছিলেন। তাই সে তার দিদাকে তাদের সঙ্গে যিহোবার সাক্ষিদের সভাতে আসার জন্য বলে। সভাতে এসে সূর্য মায়া দেখে অবাক হয়ে যান যে বিভিন্ন জাতের লোকেরা একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করছে আর তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। তাই দেরি না করে তিনি তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। কিন্তু যখন থেকে তিনি সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন, পাড়াপড়শী তাকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করে কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি। আর এমনকি খুব বেশি লেখাপড়া না জানলেও তিনি অধ্যয়ন, সভা, প্রচার করা থেকে পিছিয়ে থাকেননি। তিনি সত্যে এগিয়ে যেতে থাকেন।

আজ প্রায় আট বছর কেটে গেছে আর তার পরিবারের ছজন এখন যিহোবার সাক্ষি। তার স্বামী ও তিন ছেলে সত্যে এসেছেন। সূর্য মায়া এখন একজন নিয়মিত অগ্রগামী। আজ যারা এই মন্দ জগতে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তাদেরকে তিনি খুশি মনে যিহোবার দেওয়া বিশ্রাম-স্থলে পৌঁছাতে সাহায্য করছেন, যেখানে তারা চিরকালের জন্য বিশ্রাম পেতে পারেন।