সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বড়দিনের রীতিনীতিগুলো কি সত্যিই খ্রীষ্টীয়?

বড়দিনের রীতিনীতিগুলো কি সত্যিই খ্রীষ্টীয়?

বড়দিনের রীতিনীতিগুলো কি সত্যিই খ্রীষ্টীয়?

বড়দিন এসে পড়েছে। আপনার কাছে আর আপনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে বড়দিন কী অর্থ রাখে? বড়দিন কি এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় না শুধুই এক উৎসব ও আনন্দফূর্তির সময়? এটা কি যীশু খ্রীষ্টের জন্ম নিয়ে চিন্তা করার সময় নাকি খ্রীষ্টীয় নীতিগুলোর দিকে নজর দেওয়ার কোন দরকারই আপনার নেই?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় মনে রাখবেন যে নানা দেশে বড়দিনকে নানাভাবে পালন করা হয়। যেমন মেক্সিকো ও ল্যাটিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোতে বড়দিনের নামই বদলে গিয়েছে। একটা বিশ্বকোষ বলে যে ইংরেজি নাম ক্রিসমাস “ক্রিস্টেস মেসে বা খ্রীষ্টের মিশা থেকে এসেছে।” কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে একে লা নেভিডাড বা নেটিভিটি বলা হয় যার মানে হল খ্রীষ্টের জন্ম। এখন আসুন আমরা কিছুসময়ের জন্য মেক্সিকোতে কীভাবে বড়দিন পালন করা হয় তা এক ঝলক দেখে নিই। আর তাহলেই আপনি এই ছুটির মরশুম সম্বন্ধে একটা ধারণা গড়ে নিতে পারবেন।

পোসাডাস, “তিন পণ্ডিত” ও নেসিমিয়েনটো

পোসাডাস দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর থেকেই বড়দিনের উৎসব শুরু হয়ে যায়। মেক্সিকোবাসীর জীবনে উৎসব (ইংরেজি) বই বলে: “পোসাডাস হল নদিনের আনন্দফূর্তির সময় যা বড়দিনের আগের রাতে শেষ হয়। পোসাডাস পালন করা হয় সেই ঘটনাকে মনে রেখে যখন বৈৎলহমের পথে পথে যোষেফ ও মরিয়ম ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এবং শেষে তারা যখন দয়া ও আশ্রয় পেয়েছিলেন। প্রত্যেক রাতে বিভিন্ন পরিবার ও তাদের বন্ধুবান্ধবরা মিলে এক জায়গায় হয়ে যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগের এই ঘটনাগুলোকে অভিনয় করেন।”

মেক্সিকোর লোকেরা তাদের দেশের রীতি অনুযায়ী মেরি ও যোষেফের মূর্তি নিয়ে কোন একটা ঘরে যায় আর গান গেয়ে তাদের কাছে থাকবার জায়গা বা পোসাডা চায়। ঘরের লোকেরাও গান গেয়ে তাদের ঘরে আসতে বলে ও গান শেষ হলে তারা ঘরে ঢোকে। তারপর ওই ঘরে পার্টি শুরু হয় আর সেখানে কয়েকজন লোক চোখে কাপড় বেঁধে হাতে একটা লাঠি নিয়ে একে একে পিনিয়া অর্থাৎ দড়ি দিয়ে ঝুলানো একটা বড় সাজান মাটির হাড়ি ভাঙার চেষ্টা করে। হাড়ি ভাঙার পরে এর ভেতরে যে জিনিসগুলো থাকে (ক্যান্ডি, ফল ও এইরকম আরও অনেক কিছু) তা সেখানকার লোকেরা সংগ্রহ করে। এরপর তারা একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে, মদ খায় ও নাচ-গান করে। ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ২৩শে ডিসেম্বরের মধ্যে আটটা পোসাডা পার্টি হয়। ২৪ তারিখ নচিবুয়েনা (বড়দিনের আগের রাত) পালন করা হয় আর সেইদিন রাতে ঘরের সব লোকেরা একসঙ্গে এই বিশেষ রাতের খাবার খায়।

এর অল্প কিছুদিন পরেই নতুন বছর আসে আর সেইদিনও খুব হৈহুল্লোড় করে পার্টি করা হয়। ৫ই জানুয়ারি সন্ধ্যেবেলায় ট্রেস রেইস ম্যাগোস (“তিন পণ্ডিত”) বাচ্চাদের জন্য খেলনা নিয়ে আসবেন বলা মনে করা হয়। ৬ই জানুয়ারির পার্টিতে রোসকা ডে রেইস (গোল কেক) খেতে দেওয়া হয় আর এই পার্টির সঙ্গে উৎসব শেষ হয়।। এটা খাওয়ার সময় কোন একজন তার কেকের ভেতর একটা ছোট্ট পুতুল খুঁজে পায় যা শিশু যীশুকে বোঝায়। আর যে এটা পাবে তাকে ২রা ফেব্রুয়ারি শেষ পার্টি দিতে হবে। (কোন কোন জায়গায় কেকের ভেতরে তিনটে ছোট পুতুল থাকে যা ‘তিন পণ্ডিতকে’ বোঝায়।) তাই বড়দিনের পার্টি যেন আর শেষ হতেই চাই না।

এই সময়ে যে দিকেই তাকানো যায় সেদিকেই নেসিমিয়েনটো (যীশুর জন্মের দৃশ্য) দেখা যায়। এতে কী করা হয়? রাস্তার মোড়ে মোড়ে, গির্জায় ও ঘরে ঘরে চিনেমাটি, কাঠ বা মাটির তৈরি ছোট বড় পুতুল দিয়ে গোশালা সাজান হয়। সেখানে যোষেফ ও মেরি একটা যাবপাত্রের সামনে হাঁটুগেড়ে বসে থাকেন ও যাবপাত্রে শিশু যীশু শোয়ান থাকে। এছাড়াও সেখানে মেষপালকেরা ও লস রেইস ম্যাগোস (‘পণ্ডিতেরা’) থাকেন। যেহেতু এটা গোশালা তাই কিছু পশুও চারপাশে থাকে। কিন্তু গোশালার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এক নবজাত শিশু যাকে স্প্যানিশ ভাষায় এল নিনো ডিওস (শিশু ঈশ্বর) বলে। এই শিশুকে বড়দিনের আগের রাতে সেখানে রাখা হয়।

যীশুর জন্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রীতিরেওয়াজগুলো যেভাবে শুরু হয়েছে

আজকে সারা পৃথিবীতে যেভাবে বড়দিন পালন করা হয় সে বিষয়ে দি এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা বলে: “এখন যেভাবে বড়দিন পালন করা হয়, যে রীতিরেওয়াজ মানা হয় তার কিছুই আগে মানা হতো না। কিন্তু গির্জা খ্রীষ্টধর্ম শুরু হওয়ার আগের রীতিনীতি বা অখ্রীষ্টীয় রীতিরেওয়াজকে পালন করতে শুরু করে। রোমীয় উৎসব স্যাটারনালিয়া যা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পালন করা হতো তার থেকে বড়দিন পালনের অনেক রীতিরেওয়াজকে নকল করা হয়েছে। যেমন, এর থেকেই হৈহুল্লোড় করে পার্টি করা, উপহার দেওয়া ও মোমবাতি জ্বালানোর রেওয়াজ চলে এসেছে।”

ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে বড়দিন পালনের সময় এই রীতিরেওয়াজগুলোর সঙ্গে আরও কিছু রীতিরেওয়াজ পালন করা হয়। আপনি হয়তো মনে মনে ভাবছেন যে ‘এগুলো এলো কোথা থেকে।’ সত্যি করে বলতে গেলে বলতে হয় যে যারা বাইবেল মেনে চলেন তারা জানেন যে এগুলোর বেশির ভাগই এসেছে আ্যজটেক জাতির কাছ থেকে। মেক্সিকো শহরের এক খবরের কাগজ এল ইউনিভারসাল বলেছিল: “আ্যজটেক জাতির অনেক ধর্মীয় উৎসব ও ক্যাথলিকদের ধর্মীয় উৎসবগুলো বছরের প্রায় একই সময়ে পড়ত। আর ক্যাথলিক প্রচারকদের দলগুলো যারা লোকেদের তাদের নিজেদের ধর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করত তারা এর সুযোগ নিয়েছিল। তারা আ্যজটেক দেবদেবীর উৎসবের রীতিনীতিকে তাদের নিজেদের উৎসবের সঙ্গে যোগ করে নিয়েছিল। ফলে দুই সংস্কৃতি ও রীতিরেওয়াজের মধ্যে মিলন ঘটেছিল। আর এইজন্য অনেক খ্রীষ্টান উৎসবের নাম মেক্সিকো ভাষায় রাখা হয়েছিল।

দি এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা বলে: “যীশুর জন্মের ঘটনাগুলোকে অভিনয় করে দেখানোর ব্যাপারটা প্রথমেই বড়দিন পালনের একটা অঙ্গ হয়ে যায়। . . . বলা হয় যে গির্জায় যে ক্রেস বা [গোয়ালঘরের দৃশ্য] দেখানো হয় তা সাধু ফ্রান্সিস শুরু করেছিলেন।” স্পেন থেকে লোকেরা যখন এসে মেক্সিকোতে বাস করতে শুরু করে তখন থেকেই যীশুর জন্মের ঘটনাগুলোকে গির্জায় অভিনয় করে দেখানো হতো। সাধু ফ্রান্সিসের শিষ্যরা যীশুর জন্মের এই ঘটনাগুলোকে আ্যজটেক জাতির লোকেদের শেখানোর জন্য অভিনয় করে দেখাত। পরে পোসাডাস আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর শুরু যে উদ্দেশ্যেই করা হোক না কেন, আজকে যেভাবে পোসাডাস পালন করা হয় তা এর আসল পরিচয় দেয়। আপনি যদি এই সময়ে মেক্সিকোতে থাকেন, তাহলে আপনি দেখতে বা বুঝতে পারবেন যে এল ইউনিভারসাল এর লেখক কী বলতে চান: “পোসাডাস পালন করা হতো লোকেদের সেই ঘটনার কথা মনে করতে যখন বৈৎলহমের পথে পথে যীশুর বাবামা একটা জায়গা যেখানে তাঁর জন্ম হতে পারে সেটা খোঁজার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু এখন পোসাডাস শুধুই মদ খেয়ে মাতলামো করা, হৈহুল্লোড় করে পার্টি করা, অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া করা, বাজে কাজ করা ও আরও বেশি বেশি অপরাধ করার একটা সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

মেক্সিকোতে যখন স্পেনের লোকেরা এসে বাস করতে শুরু করে সেই সময়ে গির্জায় করা অভিনয় থেকে যে আরেকটা রেওয়াজ শুরু হয়েছিল তাকে নেসিমিয়েনটো বলা হয়। যদিও কিছু লোকেরা নেসিমিয়েনটোর দৃশ্য খুব পছন্দ করে, তবুও এতে কি সত্যিই বাইবেলে যা লেখা আছে তাই-ই অভিনয় করে দেখানো হয়? প্রশ্নটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। যখন তিনজন পণ্ডিত যারা আসলে জ্যোতিষী ছিলেন, যীশু ও তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন সেইসময়ে তারা গোয়ালঘরে ছিলেন না। সময় কেটে গিয়েছিল আর সেইসময় তারা একটা ঘরে বাস করতেন। মথি ২:১ ও ১১ পদে দেওয়া এই ঘটনাগুলো পড়তে আপনার ভাল লাগবে যা ঈশ্বর লিখিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, আপনি দেখতে পাবেন যে বাইবেল বলে না ঠিক কতজন জ্যোতিষী সেখানে এসেছিলেন। *

ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে এই তিন পণ্ডিত স্যান্টা ক্লজের জায়গা নেন। কিন্তু তবুও অন্য দেশগুলোর মতোই এখানেও বাবামারা ছেলেমেয়েদের জন্য ঘরে খেলনা লুকিয়ে রাখেন। ৬ই জানুয়ারি সকালে ছেলেমেয়েরা খেলনা খুঁজতে লাগে যেন তিন পণ্ডিত তাদের জন্য খেলনা এনেছে। এই সময়টা খেলনার দোকানদারদের পোয়া বারো। এই সুযোগে তারা বেশ কিছু পয়সা করে নেয়। তাই কিছু লোকেদের কাছে এটা সৌভাগ্য হলেও অনেক ভাল লোকেরা এগুলোকে শুধু মনগড়া গল্প বলেই মনে করেন। তিন পণ্ডিতের কাহিনীকে অনেকেই বিশ্বাস করেন না, এমনকি ছোট বাচ্চারাও আর এইসব বিশ্বাস করতে চায় না। যদিও কিছু লোকেরা এতে অখুশি, তবুও এমন একটা মনগড়া কাহিনীর বিষয়ে আর কী বা আশা করা যেতে পারে যা শুধু বাপঠাকুরদাদের দিন থেকে চলে এসেছে বলেই মানা হয় আর যা লোকেদের পয়সা রোজগারের একটা উপায় বলেই টিকে আছে?

বড়দিন বা যীশুর জন্ম প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা পালন করতেন না। এই বিষয়ে একটা বিশ্বকোষ বলে: “প্রথম শতাব্দীর গির্জায় বড়দিন পালন করা হতো না। কারণ খ্রীষ্টানরা বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মদিন নয় বরং মৃত্যুদিন পালন করতেন।” বাইবেল বলে যে পৌত্তলিক লোকেরা জন্মদিন পালন করত। ঈশ্বরের সত্য উপাসকেরা কখনও জন্মদিন পালন করতেন না।—মথি ১৪:৬-১০.

কিন্তু তার মানে এই নয় যে ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টের জন্মের সময়ের আসল ঘটনাগুলো জেনে বা সেগুলো মনে করে কোন লাভ হবে না। যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলতে চান তাদেরকে বাইবেল সত্যি ঘটনা জানায় ও গভীর বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করে।

যীশুর জন্মের বিষয়ে বাইবেল যা বলে

মথি ও লূকের সুসমাচারে আপনি যীশুর জন্মের বিষয়ে একেবারে ঠিক ঠিক ঘটনাগুলো পাবেন। সুসমাচারের বইগুলো আমাদের বলে যে গাব্রিয়েল দূত মরিয়ম নামে এক কুমারী যুবতীর কাছে আসেন, যে গালিলের নাসারতে বাস করত। দূত তাকে কী বলেছিলেন? “দেখ, তুমি গর্ব্ভবতী হইয়া পুত্ত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম যীশু রাখিবে। তিনি মহান্‌ হইবেন, আর তাঁহাকে পরাৎপরের পুত্ত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন, ও তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না।”—লূক ১:৩১-৩৩.

এ কথা শুনে মরিয়ম খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কুমারী হওয়ায় তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ইহা কিরূপে হইবে? আমি ত পুরুষকে জানি না।” দূত উত্তর দিয়েছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে; এই কারণ যে পবিত্র সন্তান জন্মিবেন, তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্ত্র বলা যাইবে।” ঈশ্বর তার জন্য এমন চান তা বুঝতে পেরে মরিয়ম বলেছিলেন: “দেখুন, আমি প্রভুর দাসী; আপনার বাক্যানুসারে আমার প্রতি ঘটুক।—লূক ১:৩৪-৩৮

যোষেফের কাছেও একজন দূত এসেছিলেন আর যোষেফকে এই অলৌকিক ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন যাতে যোষেফ তাকে ত্যাগ না করেন। কারণ মরিয়ম গর্ভবতী জানতে পারায় যোষেফ মনে মনে তাকে ত্যাগ করার কথা ভাবছিলেন। এরপর তিনি ঈশ্বরের পুত্রকে বড় করে তোলার দায়িত্ব পালন করার জন্য তৈরি হন।—মথি ১:১৮-২৫.

এরপর আগস্ত কৈসর যখন নাম লেখানোর আদেশ দেন তখন যোষেফ ও মরিয়ম গালিলের নাসরৎ নগর থেকে যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে নাম লেখাতে গিয়েছিলেন কারণ সেটা তাদের পিতৃপুরুষদের নগর ছিল। “তাঁহারা সেই স্থানে আছেন, এমন সময়ে মরিয়মের প্রসবকাল সমপূর্ণ হইল। আর তিনি আপনার প্রথমজাত পুত্ত্র প্রসব করিলেন, এবং তাঁহাকে কাপড়ে জড়াইয়া যাবপাত্রে শোয়াইয়া রাখিলেন, কারণ পান্থশালায় তাঁহাদের জন্য স্থান ছিল না।”—লূক ২:১-৭.

এরপর কী ঘটেছিল সে বিষয়ে লূক ২:৮-১৪ পদ বলে: “ঐ অঞ্চলে মেষপালকেরা মাঠে অবস্থিতি করিতেছিল, এবং রাত্রিকালে আপন আপন পাল চৌকি দিতেছিল। আর প্রভুর এক দূত তাহাদের নিকটে আসিয়া দাঁড়াইলেন, এবং প্রভুর প্রতাপ তাহাদের চারিদিকে দেদীপ্যমান হইল; তাহাতে তাহারা অতিশয় ভীত হইল। তখন দূত তাহাদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না, কেননা দেখ, আমি তোমাদিগকে মহানন্দের সুসমাচার জানাইতেছি; সেই আনন্দ সমুদয় লোকেরই হইবে; কারণ অদ্য দায়ূদের নগরে তোমাদের জন্য ত্রাণকর্ত্তা জন্মিয়াছেন; তিনি খ্রীষ্ট প্রভু। আর তোমাদের জন্য ইহাই চিহ্ন, তোমরা দেখিতে পাইবে, একটী শিশু কাপড়ে জড়ান ও যাবপাত্রে শয়ান রহিয়াছে। পরে হঠাৎ স্বর্গীয় বাহিনীর এক বৃহৎ দল ঐ দূতের সঙ্গী হইয়া ঈশ্বরের স্তবগান করিতে করিতে কহিতে লাগিলেন, ঊর্দ্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”

জ্যোতিষীরা

মথির বই বলে যে পূর্বদেশ থেকে জ্যোতিষীরা যিহুদিদের রাজা কোথায় জন্মেছেন তা খুঁজতে খুঁজতে যিরূশালেমে এসেছিলেন। হেরোদ রাজা এই ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন কিন্তু ভাল মনে তিনি তা করেননি। “তিনি তাঁহাদিগকে বৈৎলেহেমে পাঠাইয়া দিয়া কহিলেন, তোমরা গিয়া বিশেষ করিয়া সেই শিশুর অন্বেষণ কর; দেখা পাইলে আমাকে সংবাদ দিও, যেন আমিও গিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিতে পারি।” জ্যোতিষীরা শিশু যীশুকে দেখেছিলেন ও “আপনাদের ধনকোষ খুলিয়া তাঁহাকে স্বর্ণ, কুন্দুরু ও গন্ধরস উপহার দিলেন।” কিন্তু তারা হেরদের কাছে ফিরে যাননি। “তাঁহারা যেন হেরোদের নিকটে ফিরিয়া না যান, স্বপ্নে এই আদেশ পাইয়া, অন্য পথ দিয়া আপনাদের দেশে চলিয়া গেলেন।” ঈশ্বর একজন দূত পাঠিয়ে যোষেফকে সাবধান করে দেন। তাই যোষেফ ও মরিয়ম তাদের ছেলেকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর নতুন রাজাকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছায় হেরোদ বৈৎলেহমের সব ছেলে শিশুদের হত্যা করার আদেশ দেন। কোন্‌ বয়সের শিশুদের? দুবছর ও তার কম বয়সী ছেলে শিশুদের।—মথি ২:১-১৬.

এই কাহিনী থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যে জ্যোতিষীরা যীশুকে দেখতে এসেছিলেন তারা সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করতেন না। লা নোয়েভা বিবলিয়া ল্যাটিনামেরিকা (১৯৮৯ সংস্করণ) এক পাদটীকায় বলে: “জ্যোতিষীরা রাজা ছিলেন না বরং তারা ছিল গণক ও পৌত্তলিক ধর্মের পুরোহিত।” এই জ্যোতিষীরা তারা গণনা করে এখানে এসেছিলেন, যে তারাগুলোকে তারা উপাসনা করতেন। ঈশ্বর যদি এই ছোট্ট শিশুর কাছেই তাদের নিয়ে আসতেন, তাহলে তিনি তাদের যিরূশালেমে হেরোদের কাছ না নিয়ে গিয়ে সরাসরি এখানেই নিয়ে আসতেন। পরে ঈশ্বর শিশুকে রক্ষা করার জন্য তাদের অন্য পথে চলে যেতে বলেছিলেন।

বড়দিনের সময় এই ঘটনাকে প্রায়ই রূপকথা ও কাল্পনিক কাহিনীর মতো করে দেখানো হয় যার ফলে সবচেয়ে বড় বিষয়টাই আড়াল হয়ে যায় যে এই শিশু এক মহান রাজা হওয়ার জন্য জন্ম নিয়েছে যেমন মরিয়ম ও মেষপালকদের কাছে ঘোষণা করা হয়েছিল। যীশু আর সেই শিশু নন আর এক বালকও নন। তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা যিনি এখন শাসন করছেন আর এই রাজ্য খুব শীঘ্রিই সেই সমস্ত রাজ্যকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে যা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে বিরোধিতা করে। আর তিনি মানবজাতির যে সমস্ত সমস্যাগুলো আছে তা দূর করবেন। প্রভুর প্রার্থনায় আমরা এই রাজ্যই আসুক বলে প্রার্থনা করি।—দানিয়েল ২:৪৪; মথি ৬:৯, ১০.

মেষপালকদের কাছে স্বর্গদূতেরা যা ঘোষণা করেছিলেন তার থেকে আমরা শিক্ষতে পাই যে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ সেই সব লোকেদের জন্যই খোলা আছে যারা সুসমাচারের কথা শোনার জন্য আগ্রহী। যারাই ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাবেন তারাই ‘প্রীতিপাত্র মনুষ্য’ হবেন। যীশু খ্রীষ্টের রাজ্যে সারা পৃথিবীর লোকেদের জন্য শান্তির অপূর্ব প্রত্যাশা রয়েছে কিন্তু তার জন্য লোকেদের ঈশ্বরের ইচ্ছা স্বেচ্ছায় পালন করতে হবে। বড়দিনের সময় তা করতে কি দেখা যায় ও এই ধরনের মনোভাব কি এই সময় দেখানো হয়? যে সব লোকেরা অন্তর থেকে বাইবেলের কথা মতো চলতে চান তাদের কাছে এর উত্তর একেবারে স্পষ্ট।—লূক ২:১০, ১১, ১৪.

[পাদটীকা]

^ আর কিছু জরুরি বিষয়ও আমরা অবহেলা করতে পারি না: মেক্সিকোর নেসিমিয়েনটোতে বাচ্চা যীশুকে “শিশু ঈশ্বর” বলা হয়। কারণ তারা মনে করেন যে ঈশ্বর নিজে শিশুর রূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। কিন্তু বাইবেল যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলে যিনি এই পৃথিবীতে জন্মেছিলেন। বাইবেল বলে যে তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা নন বা তাঁর সমান নন। এই বিষয়গুলো যে সত্যি তা লূক ১:৩৫; যোহন ৩:১৬; ৫:৩৭; ১৪:১, ৬, ৯, ২৮; ১৭:১, ৩; ২০:১৭ পদে দেওয়া আছে।

[৪ পৃষ্ঠার বাক্স]

এটা পড়ে কেউ কেউ আশ্চর্য হবেন

দ্যা ট্রাবল উইথ ক্রিসমাস বইয়ের লেখক টম্‌ ফ্লীন বছরের পর বছর বড়দিনের ওপর গবেষণা করার পর এই উপসংহার করেছিলেন:

“পূর্বপুরুষ থেকে বড়দিনের সময় যে সব রীতিনীতিগুলো পালন করে আসছি সেগুলো খ্রীষ্ট ধর্ম শুরু হওয়ার আগে পৌত্তলিক ধর্মের রীতিনীতিগুলো থেকে এসেছে। সামাজিক, যৌনতা ও জ্যোতিষ বিদ্যার কিছু বিষয় এই রীতিনীতিগুলোর মধ্যে আছে। তাই আজকের দিনের শিক্ষিত লোকেরা যখন এই রীতিনীতিগুলো কোথা থেকে এসেছে তা স্পষ্টভাবে জানতে পারেন তখন তারা এই রীতিনীতিগুলো পালন করতে চান না।”—পৃষ্ঠা ১৯.

বড়দিনের বিষয়ে প্রচুর তথ্য দেওয়ার পর ফ্লীন আবার তার মূল কথায় ফিরে আসেন: “বড়দিনের ব্যাপারে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে এর রীতিনীতিগুলোর মধ্যে খ্রীষ্টীয় শিক্ষা নেই বললেই চলে। এই রীতিনীতিগুলোর মধ্যে থেকে আমরা যদি খ্রীষ্ট ধর্ম শুরু হওয়ার আগে যে সব রীতিনীতিগুলো পালন করা হতো সেগুলো বাদ দিই তাহলে যে রীতিনীতিগুলো খ্রীষ্ট ধর্ম শুরু হওয়ার পর পালন করা হয় সেগুলো থেকে যায়। আর দেখা যায় যে খ্রীষ্ট ধর্ম শুরু হওয়ার সময় যে রীতিনীতিগুলো ছিল তা এগুলোর মধ্যে নেই।”—পৃষ্ঠা ১৫৫.

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশুর জন্মের ঘোষণা বলে দিয়েছিল যে ভবিষ্যতে তিনি ঈশ্বরের মনোনীত রাজা হবেন