প্রেমে গেঁথে উঠুন
প্রেমে গেঁথে উঠুন
“‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিবে।’”—মথি ২২:৩৭.
১. (ক) একজন খ্রীষ্টান কোন্ গুণগুলো গড়ে তোলেন? (খ) খ্রীষ্টানদের জন্য সবচেয়ে জরুরি গুণ কোন্টা এবং কেন?
কার্যকারী পরিচারক হয়ে ওঠার জন্য একজন খ্রীষ্টানকে অনেক গুণ গড়ে তুলতে হয়। বাইবেলের হিতোপদেশ বই বলে যে জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা কতখানি জরুরি। (হিতোপদেশ ২:১-১০) এর জন্য যে অটল বিশ্বাস ও দৃঢ় আশা থাকা দরকার, সেই বিষয়ে প্রেরিত পৌল আলোচনা করেছিলেন। (রোমীয় ১:১৬, ১৭; কলসীয় ১:৫; ইব্রীয় ১০:৩৯) ধৈর্য এবং আত্মসংযম থাকাও জরুরি। (প্রেরিত ২৪:২৫; ইব্রীয় ১০:৩৬) কিন্তু আরেকটা জরুরি গুণ রয়েছে, যেটা না থাকলে অন্য সমস্ত গুণ ম্লান হয়ে যায় এবং মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আর সেই গুণ হল প্রেম।—১ করিন্থীয় ১৩:১-৩, ১৩.
২. যীশু কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে প্রেম খুব জরুরি এবং এর থেকে কোন্ প্রশ্নগুলো ওঠে?
২ প্রেম কতটা জরুরি তা যীশু এই বলে দেখিয়েছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) যেহেতু প্রেমই হল সত্য খ্রীষ্টানদের চেনার চিহ্ন, তাই এই প্রশ্নগুলো আমাদের জিজ্ঞেস করা দরকার প্রেম আসলে কী? কেনই বা এটা এত জরুরি যে, যীশু বলেছিলেন অন্য যে কোন কিছুর আগে প্রেমই তাঁর শিষ্যদের চেনার চিহ্ন? কীভাবে আমরা প্রেম গড়ে তুলতে পারি? কাদেরকে আমরা প্রেম দেখাব? আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করে দেখি।
প্রেম আসলে কী?
৩. প্রেম সম্বন্ধে কী বলা যায় এবং এর সঙ্গে কীভাবে মন ও হৃদয় দুটোই জড়িত?
৩ প্রেমের একটা সংজ্ঞা হল, ‘কারও প্রতি গভীর অনুরাগ বা স্নেহ থাকা, কাউকে পছন্দ করা বা কারও প্রতি আসক্ত থাকা।’ এটা এমনই এক গুণ, যা থাকলে লোকেরা নিজেদের বড় কোন ক্ষতি হলেও অন্যদের জন্য ভাল কাজ করতে পিছপা হয় না। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রেমের সঙ্গে মন ও হৃদয় দুটোই জড়িত। এক্ষেত্রে মন বা বিচার-বুদ্ধি একটা বড় ভূমিকা রাখে কারণ যে অন্যকে ভালবাসে সে এটা জেনেই ভালবাসে যে তার নিজের ও অন্যদের যাদেরকে সে ভালবাসে, তাদের সবারই দুর্বলতা আছে ও সেইসঙ্গে ভাল গুণও আছে। বিচার-বুদ্ধি এইজন্যও লাগে কেননা মাঝে মাঝে একজন খ্রীষ্টান তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও লোকেদেরকে প্রেম করেন কারণ বাইবেল পড়ে তিনি জেনেছেন, ঈশ্বর তার কাছ থেকে তাই-ই চান। (মথি ৫:৪৪; ১ করিন্থীয় ১৬:১৪) কিন্তু, কারও প্রতি প্রেম মূলত হৃদয় থেকেই আসে। বাইবেলে যে প্রেমের কথা বলা হয়েছে, তার জন্য শুধু বিচার-বুদ্ধিই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে গভীর আন্তরিকতা ও আবেগ-অনুভূতি জড়িত।—১ পিতর ১:২২.
৪. কীভাবে প্রেম এক মজবুত বন্ধন?
৪ স্বার্থপর লোকেরা প্রকৃত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না কারণ যে ব্যক্তি অন্যকে সত্যিই ভালবাসে সে কখনও নিজের স্বার্থ দেখে না বরং অন্যের সুখের কথা আগে চিন্তা করে। (ফিলিপীয় ২:২-৪) যীশু বলেছিলেন, “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়” আর তাঁর এই কথাগুলো বিশেষ করে তখনই সত্যি হয় যখন কেউ প্রেম দেখিয়ে অন্যকে কিছু দেয়। (প্রেরিত ২০:৩৫) প্রেম খুবই মজবুত এক বন্ধন। (কলসীয় ৩:১৪) বন্ধুত্বও এক শক্তিশালী বন্ধন কিন্তু প্রেমের বন্ধন বন্ধুত্বের চেয়েও আরও বেশি মজবুত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ককেও মাঝে মাঝে প্রেম বলা হয়; কিন্তু বাইবেল আমাদেরকে যে প্রেম গড়ে তুলতে বলে, তা শারীরিক আকর্ষণের চাইতেও আরও বেশি স্থায়ী। স্বামী-স্ত্রী যদি একে অন্যকে সত্যিই ভালবাসে, তাহলে বয়সের কারণে বা কোন একজনের অক্ষমতার জন্য দৈহিক সম্পর্ক করা সম্ভব না হলেও তারা সারাজীবন দুজন দুজনের সঙ্গে থাকে।
প্রেম—এক অপরিহার্য গুণ
৫. কেন একজন খ্রীষ্টানের জন্য প্রেম এক অপরিহার্য গুণ?
৫ একজন খ্রীষ্টানের জন্য প্রেম কেন এক অপরিহার্য গুণ? প্রথম কারণ হল, যীশু তাঁর শিষ্যদের একে অন্যকে প্রেম করতে আজ্ঞা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু। এই সকল তোমাদিগকে আজ্ঞা করিতেছি, যেন তোমরা পরস্পর প্রেম কর।” (যোহন ১৫:১৪, ১৭) দ্বিতীয় কারণটা হল, যিহোবা হলেন প্রেমের মূর্ত প্রতীক আর তাই তাঁর উপাসক হিসেবে তাঁকে আমাদের অনুকরণ করা উচিত। (ইফিষীয় ৫:১; ১ যোহন ৪:১৬) বাইবেল বলে যে, যিহোবা ও যীশুর বিষয়ে জ্ঞান নেওয়া মানে অনন্ত জীবন লাভ করা। আমরা যদি ঈশ্বরের মতো মনোভাব গড়ে তুলতেই চেষ্টা না করি, তাহলে কীভাবে আমরা বলব যে আমরা তাঁকে জানি? প্রেরিত যোহন যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন: “যে প্রেম করে না, সে ঈশ্বরকে জানে না, কারণ ঈশ্বর প্রেম।”—১ যোহন ৪:৮.
৬. প্রেম কীভাবে আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে?
৬ প্রেম যে খুবই জরুরি তার তৃতীয় কারণটা হল, প্রেম আমাদেরকে আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখতে এবং ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সবসময় ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞান নিয়ে চলা জরুরি। তার জন্য এই জ্ঞান খাবারের মতো। এটা তাকে পরিপক্ব হতে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে সাহায্য করে। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫; মথি ৪:৪; ২ তীমথিয় ৩:১৫, ১৬) এই ব্যাপারে পৌল সাবধান করেছিলেন: “জ্ঞান গর্ব্বি
ত করে, কিন্তু প্রেমই গাঁথিয়া তুলে।” (১ করিন্থীয় ৮:১) সঠিক জ্ঞানে কোন খুঁত নেই। সমস্যা আমাদের মধ্যে—কারণ আমাদের সবার পাপ করার প্রবণতা আছে। (আদিপুস্তক ৮:২১) কারও মধ্যে যদি প্রেম না থাকে, তাহলে জ্ঞান থাকায় সে অহংকারী হয়ে উঠতে পারে ও নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় মনে করতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে যদি প্রেম থাকে, তাহলে সে এমন মনে করবে না। কারণ “প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৫) তাই, একজন খ্রীষ্টান যত জ্ঞানই অর্জন করুন না কেন তার মধ্যে যদি প্রেম থাকে, তাহলে তিনি কখনোই অহংকারী হবেন না। অন্যের প্রতি প্রেম তাকে নম্র ব্যক্তি করে তোলে এবং তিনি কখনও নিজেকে বড় করতে চান না।—গীতসংহিতা ১৩৮:৬; যাকোব ৪:৬.
৭, ৮. প্রেম কীভাবে আমাদেরকে যে বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর ওপর মনোযোগ দিতে সাহায্য করে?
৭ ফিলিপীর খ্রীষ্টানদের পৌল লিখেছিলেন: “আমি এই প্রার্থনা করিয়া থাকি, তোমাদের প্রেম যেন তত্ত্বজ্ঞানে ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্যে উত্তর উত্তর উপচিয়া পড়ে; এইরূপে তোমরা যেন, যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পার।” (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) আমাদের মধ্যে খ্রীষ্টীয় প্রেম থাকলে আমরা এই উৎসাহ মেনে নিয়ে যে বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো বুঝতে পারব। উদাহরণ হিসেবে তীমথিয়কে পৌল যা বলেছিলেন তা দেখুন। তিনি বলেছিলেন: “যদি কেহ অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী হন, তবে তিনি উত্তম কার্য্য বাঞ্ছা করেন।” (১ তীমথিয় ৩:১) ২০০০ সালের পরিচর্যা বছরে সারা পৃথিবীতে মণ্ডলীর সংখ্যা ১,৫০২টা বেড়েছে আর এর ফলে এখন সারা পৃথিবীতে মোট ৯১,৪৮৭টা মণ্ডলী আছে। তাই, মণ্ডলীগুলোতে এখন আরও অনেক প্রাচীন দরকার আর যারা এই সুযোগ পেতে চান, তাদের আমরা মন থেকে প্রশংসা করি।
৮ তবে, যারা প্রাচীন হতে চান তারা যদি এই সুযোগের আসল উদ্দেশ্য মনে রাখেন, তাহলে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন। ক্ষমতা অথবা সুখ্যাতি লাভ করা জরুরি বিষয় নয়। প্রাচীনরা যিহোবাকে খুশি করতে চান কারণ তারা তাঁকে ও তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরকে ভালবাসেন। তারা খ্যাতি বা ক্ষমতা পেতে চান না। প্রেরিত পিতর মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে ভাল মনোভাব রাখতে পরামর্শ দেওয়ার পর ‘নম্রতার’ ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি মণ্ডলীর সবাইকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও।” (১ পিতর ৫:১-৬) যারা প্রাচীন হওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে তারা যেন সারা পৃথিবীতে যে অনেক অনেক পরিশ্রমী, নম্র প্রাচীনরা আছেন তাদের উদাহরণ বিবেচনা করেন। এইরকম প্রাচীনরা তাদের মণ্ডলীগুলোর জন্য বিরাট আশীর্বাদ।—ইব্রীয় ১৩:৭.
ভাল উদ্দেশ্য ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে
৯. যিহোবা যে আশীর্বাদগুলোর কথা প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলো নিয়ে কেন খ্রীষ্টানরা সবসময় চিন্তা করেন?
৯ প্রেমে চালিত হয়ে কাজ করা যে জরুরি, তা আরেকভাবেও দেখা যায়। ঈশ্বরকে ভালবেসে যারা তাঁর প্রতি ভক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তাদের সম্বন্ধে বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে, তারা এখন অনেক আশীর্বাদ পাবেন এবং ভবিষ্যতেও চমৎকার আশীর্বাদগুলো উপভোগ করবেন, যা তারা এখন কল্পনাও করতে পারেন না। (১ তীমথিয় ৪:৮) একজন খ্রীষ্টান যদি এই প্রতিজ্ঞাগুলো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন এবং নিশ্চিত থাকেন যে যারা যিহোবার “অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা,” তাহলে তা তাকে বিশ্বাসে অটল থাকতে সাহায্য করে। (ইব্রীয় ১১:৬) আমরা প্রায় সবাই-ই ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞাগুলোর পূর্ণতা দেখার জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করে আছি এবং প্রেরিত যোহনের মতো আমরাও বলি: “আমেন; প্রভু যীশু, আইস।” (প্রকাশিত বাক্য ২২:২০) সামনেই আমাদের জন্য যে আশীর্বাদগুলো আছে সেগুলো নিয়ে আমরা যদি গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে তা আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে শক্তি দেয়, ঠিক যেমন ‘সম্মুখস্থ আনন্দ’ যীশুকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল।—ইব্রীয় ১২:১, ২.
১০, ১১. প্রেম কীভাবে আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে?
১০ যিহোবাকে সেবা করার পেছনে নতুন জগতে বেঁচে থাকাই যদি আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাহলে কী হবে? তাহলে আমরা খুব সহজেই অধৈর্য হয়ে পড়তে পারি অথবা কোন সমস্যা দেখা দিলে বা আমরা যেভাবে আশা করি সেভাবে না হলে বিরক্ত হতে পারি। এর চেয়েও বিপদজনক হল, এমনকি আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকেও সরে পড়তে পারি। (ইব্রীয় ২:১; ৩:১২) পৌল তার এক সঙ্গী দীমার কথা বলেছিলেন, যে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কেন? কারণ ‘সে বর্ত্তমান যুগ ভালবাসিয়াছিল।’ (২ তীমথিয় ৪:১০) যারা শুধু নিজের স্বার্থের জন্য ঈশ্বরকে সেবা করে তারাও একইরকম বিপদে পড়তে পারে। তারা এই জগতের লোভনীয় সুযোগগুলোর ফাঁদে ধরা দিতে পারে এবং সামনে যে আশীর্বাদগুলো আসতে চলেছে, সেগুলোর জন্য এখন ত্যাগস্বীকার করতে না-ও চাইতে পারে।
১১ ভবিষ্যতে আশীর্বাদ পেতে কিংবা বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে স্বস্তি আশা করা সঠিক ও স্বাভাবিক কিন্তু প্রেম আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, কোন্ বিষয়কে আমাদের জীবনে সবচেয়ে প্রথম রাখা উচিত। আমাদের ইচ্ছা নয় কিন্তু যিহোবার ইচ্ছাই হল সবচেয়ে বেশি জরুরি। (লূক ২২:৪১, ৪২) হ্যাঁ, প্রেমই আমাদেরকে গেঁথে তোলে। এটা আমাদেরকে ধৈর্য ধরে ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করতে, যে আশীর্বাদই তিনি করেন না কেন তা পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে এবং এই বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করে যে, তাঁর নিরূপিত সময়ে আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সমস্ত কিছু এবং আরও অনেক কিছু পাব। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৬; ২ করিন্থীয় ১২:৮, ৯) এই সময়ে প্রেম আমাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করে চলতে সাহায্য করে কারণ “প্রেম . . . স্বার্থ চেষ্টা করে না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫.
খ্রীষ্টানরা কাদেরকে প্রেম দেখাবেন?
১২. যীশুর কথা অনুসারে আমরা কাদেরকে প্রেম দেখাব?
১২ আমরা কাদেরকে প্রেম দেখাব, তা বলতে গিয়ে যীশু মোশির ব্যবস্থা থেকে দুটো আজ্ঞা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “‘তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে’” এবং “‘তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।’”—মথি ২২:৩৭-৩৯.
১৩. যিহোবাকে না দেখেও কীভাবে আমরা তাঁর প্রতি প্রেম গড়ে তুলতে পারি?
১৩ যীশুর কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, সমস্ত কিছুর চেয়ে সবচেয়ে প্রথমে যিহোবাকে আমাদের প্রেম করতে হবে। কিন্তু, আমরা যিহোবার জন্য গভীর ভালবাসা নিয়ে জন্মাইনি। তা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আমরা প্রথম যখন তাঁর বিষয়ে শুনেছিলাম তখন আমরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। ধীরে ধীরে আমরা জেনেছিলাম যে তিনি কীভাবে মানবজাতির জন্য এই পৃথিবীকে প্রস্তুত করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২:৫-২৩) আমরা শিখেছিলাম যে, মানুষের সঙ্গে তিনি কেমন ব্যবহার করেছেন, মানব পরিবারের মধ্যে যখন পাপ ঢুকেছিল তখন তিনি আমাদেরকে ছেড়ে দেননি কিন্তু আমাদেরকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১-৫, ১৫) যারা বিশ্বস্ত ছিলেন তাদেরকে তিনি দয়া দেখিয়েছেন এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য শেষে তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে দিয়েছেন। (যোহন ৩:১৬, ৩৬) দিন-দিন বেড়ে চলা এই জ্ঞান যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। (যিশাইয় ২৫:১) রাজা দায়ূদ বলেছিলেন যে, যিহোবার প্রেমময় যত্নের জন্য তিনি তাঁকে ভালবাসতেন। (গীতসংহিতা ১১৬:১-৯) আজকে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন, আমাদেরকে সঠিক পথ দেখান এবং শক্তি ও উৎসাহ দেন। তাঁর সম্বন্ধে আমরা যত বেশি জানি, তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম তত গভীর হয়।—গীতসংহিতা ৩১:২৩; সফনিয় ৩:১৭; রোমীয় ৮:২৮.
আমরা কীভাবে প্রেম দেখাতে পারি?
১৪. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে যিহোবার জন্য আমাদের সত্যিই প্রেম আছে?
১৪ সারা পৃথিবীতে অনেকেই বলে যে তারা ঈশ্বরকে ভালবাসে কিন্তু তাদের কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। কীভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, যিহোবাকে আমরা সত্যিই ভালবাসি? প্রার্থনায় আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি এবং আমাদের অনুভূতি জানাতে পারি। আর আমরা এমনভাবে চলতে পারি, যা দেখায় যে আমরা তাঁকে ভালবাসি। প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “যে [ঈশ্বরের] বাক্য পালন করে, তাহার অন্তরে সত্যই ঈশ্বরের প্রেম সিদ্ধ হইয়াছে। ইহাতেই আমরা জানিতে পারি যে, তাঁহাতে আছি।” (১ যোহন ২:৫; ৫:৩) এছাড়াও, ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে ভাইবোনদের সঙ্গে মিলিত হতে এবং নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ ও শুচি জীবনযাপন করতে বলে। আমরা ভণ্ড নই, সত্য কথা বলি এবং আমাদের চিন্তাভাবনাকে শুদ্ধ রাখি। (২ করিন্থীয় ৭:১; ইফিষীয় ৪:১৫; ১ তীমথিয় ১:৫; ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) যাদের অভাব আছে তাদেরকে টাকাপয়সা বা দরকারি অন্যান্য জিনিস দিয়ে সাহায্য করে আমরা প্রেম দেখাই। (১ যোহন ৩:১৭, ১৮) আর অন্যদেরকে যিহোবার কথা বলতে আমরা পিছপা হই না। সারা পৃথিবীতে আমরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করি। (মথি ২৪:১৪; রোমীয় ১০:১০) এই সমস্ত ব্যাপারে ঈশ্বরের বাক্যের কথা মেনে চলা দেখায় যে যিহোবার জন্য আমাদের সত্যিই প্রেম আছে।
১৫, ১৬. যিহোবার জন্য প্রেম থাকায় গত বছর অনেকে কী করেছিলেন?
১৫ যিহোবার জন্য প্রেম থাকলে, তা লোকেদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এইরকম প্রেম থাকায় গত বছর ২,৮৮,৯০৭ জন তাদের জীবনকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিলেন এবং তা লোকেদের দেখানোর জন্য জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) তাদের উৎসর্গীকরণ অর্থপূর্ণ ছিল। এটা দেখিয়েছিল যে, তারা তাদের জীবনকে বদলেছেন। উদাহরণ হিসেবে আলবানিয়ার একজন বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড়, গেজমেন্ডের কথা বলা যায়। কয়েক বছর ধরে তিনি ও তার স্ত্রী বাইবেল অধ্যয়ন করেছেন এবং অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে শেষে রাজ্যের প্রকাশক হয়েছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০০০ সালের পরিচর্যা বছরে আলবানিয়াতে ৩৬৬ জন বাপ্তিস্ম নিয়েছেন আর তাদের মধ্যে গেজমেন্ডও আছেন। একটা খবরের কাগজে তাকে নিয়ে একটা প্রবন্ধ ছাপানো হয়েছে আর তাতে বলা হয়েছিল: “এখন তার জীবনে একটা উদ্দেশ্য আছে আর এইজন্যই তিনি ও তার পরিবার তাদের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন কাটাচ্ছেন। তিনি নিজে কতটা লাভবান হবেন, তা এখন আর তার কাছে জরুরি বিষয় নয় বরং তিনি এখন অন্যদেরকে কতটা দিতে পারেন, সেটাই তার কাছে বড় বিষয়।”
১৬ একইভাবে, গুয়ামে একজন নতুন বাপ্তাইজিত বোন একটা তেলের কোম্পানিতে কাজ করেন আর তিনি একটা লোভনীয় প্রস্তাব পান। কয়েক বছর ধরে একটার পর একটা প্রমোশন পেয়ে পেয়ে শেষে ওই কোম্পানিতে তাকেই প্রথমবারের মতো মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু, তিনি ইতিমধ্যেই যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তাই, তার স্বামীর সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কথা বলার পর এই নতুন বোন ওই প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিয়ে তার বদলে পার্ট-টাইমের একটা চাকরি নেন, যাতে তিনি নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ করতে পারেন। যিহোবার জন্য প্রেম থাকায় তিনি টাকাপয়সার পিছনে না ছুটে অগ্রগামী হয়েছিলেন। আসলে, এইরকম প্রেম আছে বলেই ২০০০ সালের পরিচর্যা বছরে সারা পৃথিবীতে ৮,০৫,২০৫ জন বিভিন্ন ধরনের অগ্রগামী হিসেবে কাজ করেছেন। এই অগ্রগামীরা কত অপূর্ব উপায়েই না তাদের প্রেম ও বিশ্বাস দেখিয়েছেন!
যীশুকে প্রেম করা
১৭. প্রেম দেখানোর কোন্ সুন্দর উদাহরণ আমরা যীশুর মধ্যে দেখতে পাই?
১৭ প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে যীশু হলেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষ হয়ে পৃথিবীতে আসার আগে তিনি তাঁর পিতা ও মানুষকে প্রেম করেছিলেন। নিজেকে প্রজ্ঞা হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেছিলেন: “আমি [যিহোবার] কাছে কার্য্যকারী ছিলাম; আমি দিন দিন আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম; আমি তাঁহার ভূমণ্ডলে আহ্লাদ করিতাম, মনুষ্য-সন্তানগণে আমার আনন্দ হইত।” (হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১) প্রেম ছিল বলেই যীশু তাঁর স্বর্গের বাসস্থান ছেড়ে দিয়ে এক অসহায় শিশু হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলেন। নম্র ও সাধারণ লোকেদের তিনি দয়া দেখিয়েছিলেন ও তাদের সঙ্গে ধৈর্য ধরে ব্যবহার করেছিলেন এবং যিহোবার শত্রুদের হাতে তাড়না সহ্য করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সমস্ত মানুষের জন্য যাতনা দণ্ডে মারা গিয়েছিলেন। (যোহন ৩:৩৫; ১৪:৩০, ৩১; ১৫:১২, ১৩; ফিলিপীয় ২:৫-১১) সঠিক উদ্দেশ্য রাখার ব্যাপারে আমাদের জন্য কত সুন্দর উদাহরণ!
১৮. (ক) কীভাবে আমরা যীশুর জন্য প্রেম গড়ে তুলি? (খ) কী করে আমরা দেখাই যে আমরা যীশুকে ভালবাসি?
১৮ ভাল মনের লোকেরা যখন সুসমাচারের বইগুলো থেকে যীশুর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা পড়েন ও তাঁর বিশ্বস্ততা তাদের কত কত আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে তা নিয়ে চিন্তা করেন, তখন তারা যীশুর জন্য গভীর প্রেম গড়ে তোলেন। আজকে আমরাও সেই লোকেদের মতো, যাদেরকে পিতর বলেছিলেন: “তোমরা [যীশুকে] না দেখিয়াও প্রেম করিতেছ।” (১ পিতর ১:৮) আমরা যখন যীশুতে বিশ্বাস করি এবং তাঁর মতো আত্মত্যাগের জীবন বেছে নিই, তখন আমাদের ভালবাসা প্রকাশ পায়। (১ করি. ১০:৩৪; ১ থিষলনীকীয় ১:৬; ১ পিতর ২:২১-২৫) ২০০০ সালের ১৯শে এপ্রিল ১,৪৮,৭২,০৮৬ জন লোক যখন যীশুর মৃত্যুর বার্ষিক স্মরণার্থক সভায় এসেছিলেন তখন তাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, কেন আমরা যীশুকে প্রেম করব। কত বড় সংখ্যা! আর অনেক লোকেরা যীশুর বলিদানের মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে চায় জেনে আমাদের বিশ্বাস কত মজবুতই না হয়! সত্যিই, যিহোবা ও যীশু আমাদের ভালবাসেন এবং আমরাও তাদেরকে ভালবাসি আর তা দিয়েই আমরা গেঁথে উঠেছি।
১৯. প্রেম সম্বন্ধে পরের প্রবন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হবে?
১৯ যীশু বলেছিলেন যে আমাদের সমস্ত মন, প্রাণ, শক্তি ও হৃদয় দিয়ে যিহোবাকে ভালবাসতে হবে। এছাড়াও তিনি বলেছিলেন যে, প্রতিবেশীকেও আমাদের নিজের মতো প্রেম করতে হবে। (মার্ক ১২:২৯-৩১) আমাদের প্রতিবেশী কারা? আর প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম কীভাবে আমাদেরকে সঠিক ভারসাম্য ও উদ্দেশ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হবে।
আপনার কি মনে আছে?
• কেন প্রেম এক অপরিহার্য গুণ?
• কীভাবে আমরা যিহোবার জন্য প্রেম গড়ে তুলতে পারি?
• আমাদের আচার-ব্যবহার কীভাবে প্রমাণ করে যে আমরা যিহোবাকে ভালবাসি?
• কীভাবে আমরা দেখাই যে আমরা যীশুকে ভালবাসি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১০, ১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
প্রেম আমাদেরকে স্বস্তির জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে সাহায্য করে
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশুর মহৎ বলিদানের জন্য আমরা তাঁকে প্রেম করি