সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যুদ্ধের ক্ষত

যুদ্ধের ক্ষত

যুদ্ধের ক্ষত

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করেছেন এমন একজন সৈনিক বলেছিলেন ‘যুদ্ধে কেউই জয়ী হয় না, শুধু হেরে যায়।’ অনেকেই এই সৈনিকের সঙ্গে একমত হবেন। যুদ্ধে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়; যারা জয়ী হয় ও যারা পরাজিত হয় তাদের উভয়কেই চরম মূল্য দিতে হয়। এমনকি, যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও লক্ষ লক্ষ লোকের রেখে যাওয়া মারাত্মক ক্ষতগুলো বয়ে চলে।

কোন্‌ ধরনের ক্ষত? যুদ্ধে অনেক লোক মারা যায় আর এর ফলে অনেকে অনাথ ও বিধবা হয়ে পড়ে। যুদ্ধে অনেকেই প্রাণে বেঁচে যায় ঠিকই কিন্তু তারা আহত হয় আর এর ফলে তাদের শরীরে ও সেইসঙ্গে মনে মারাত্মক ক্ষত বয়ে বেড়ায়। লক্ষ লক্ষ লোক সবকিছু হারিয়ে একেবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে বা জোর করে তাদেরকে দেশ ছাড়া করা হয়। যারা বেঁচে যায় তারা তাদের মনে কতটা ঘৃণা এবং দুঃখ পুষে রাখে, তা কি আমরা কল্পনা করতে পারি?

ক্ষত থেকেই যায়

একসময় যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, গোলাগুলির আওয়াজ থেমে যায় এবং সৈন্যরা যার যার ঘরে ফিরে যায়। কিন্তু, তার অনেক দিন পরেও লোকেদের মনে যুদ্ধের ক্ষত থেকে যায়। যাদের মধ্যে যুদ্ধ হয় তাদের পরের প্রজন্মরাও মনের মধ্যে একে অন্যের প্রতি তীব্র ঘৃণা পুষে রাখে। আর এভাবেই একটা যুদ্ধের ক্ষত আরেকটা যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ভার্সাইল চুক্তির কথা বলা যায়, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করার জন্য ১৯১৯ সালে করা হয়েছিল। এই চুক্তিতে জার্মানির ওপর যে সমস্ত শর্ত আরোপ করা হয়েছিল, সেগুলোকে জার্মানরা কঠোর ও প্রতিহিংসামূলক বলে মনে করেছিল। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে, চুক্তির শর্তগুলো “জার্মানদের অসন্তুষ্ট করেছিল আর তাদের মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল।” কয়েক বছর পর “শান্তি চুক্তির প্রতি অসন্তোষই হিটলারকে কোন কিছু শুরু করার মদত জুগিয়েছিল” আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে এটা ছিল একটা কারণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রথম শুরু হয় পোল্যান্ডে এবং পরে তা বলকান অঞ্চলসহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪০ এর দশকে সেই অঞ্চলের বিভিন্ন জাতির লোকেরা একে অন্যের যে ক্ষতি করেছিল, তার জের হিসেবেই ১৯৯০ এর দশকে বলকানের দেশগুলোতে যুদ্ধ লাগে। জার্মানির ডি সাইট পত্রিকা বলে, “ঘৃণা এবং প্রতিহিংসার আগুন বেড়েই চলে আর তা এখনও রয়ে গেছে।”

মানুষরা যদি শান্তিতে থাকতে চায়, তাহলে যুদ্ধের ক্ষতগুলো আসলেই সারানো দরকার। কিন্তু কীভাবে তা সারানো যাবে? ঘৃণা এবং দুঃখকষ্ট দূর করার জন্য কী করা যেতে পারে? কে যুদ্ধের ক্ষতগুলো সারাতে পারে?

[২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

প্রচ্ছদ: Fatmir Boshnjaku

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

U.S. Coast Guard photo; UN PHOTO ১৫৮২৯৭/J. Isaac