সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসেরা ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত

অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসেরা ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত

অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসেরা ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত

“তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান, এবং পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে অধ্যক্ষ করিয়া যাহার মধ্যে নিযুক্ত করিয়াছেন, সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হও।”প্রেরিত ২০:২৮.

১, ২. যিশাইয় ৬০:২২ পদ আজকে কীভাবে পূর্ণ হচ্ছে?

 যিহোবা অনেক আগেই বলেছিলেন যে শেষকালে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটবে। ভাববাদী যিশাইয়কে দিয়ে যিহোবা বলেছিলেন: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।”—যিশাইয় ৬০:২২.

এই ভবিষ্যদ্বাণী যে আমাদের সময়ে পূর্ণ হচ্ছে, তার কি কোন প্রমাণ আছে? অবশ্যই! ১৮৭০ এর দশকে আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার আ্যলিগেনিতে যিহোবার লোকেদের একটা মণ্ডলী গঠন করা হয়েছিল। ওই একটা মণ্ডলী থেকে পরে সারা পৃথিবী জুড়ে হাজার হাজার মণ্ডলী গঠন করা হয়েছে আর এখনও দিনে দিনে আরও মণ্ডলী গড়ে উঠছে। লক্ষ লক্ষ রাজ্য ঘোষণাকারীদের এক বলবান জাতি এখন সারা পৃথিবীর ২৩৫টা জায়গায় ৯১,০০০টারও বেশি মণ্ডলীতে মিলিত হচ্ছেন। অতএব, কোন সন্দেহ নেই যে আসন্ন “মহাক্লেশ” শুরু হয়ে যাওয়ার আগে যিহোবা দ্রুত গতিতে তাঁর সত্য উপাসকদের সংগ্রহ করে চলেছেন।—মথি ২৪:২১; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪.

৩. “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তিস্ম নেওয়ার মানে কী?

এই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা প্রথমে যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন এবং যীশুর নির্দেশের সঙ্গে মিল রেখে “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। (মথি ২৮:১৯) ‘পিতার নামে’ বাপ্তিস্ম নেওয়ার মানে হল, এই উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিরা যিহোবাকে তাদের স্বর্গীয় পিতা ও জীবনদাতা বলে স্বীকার করেন ও তাঁর সার্বভৌম শাসনকে মেনে নেন। ‘পুত্ত্রের নামে’ বাপ্তিস্ম নেওয়া বলতে বোঝায় যে তারা যীশু খ্রীষ্টকে তাদের মুক্তিদাতা, নেতা ও রাজা বলে স্বীকার করেন। এছাড়াও তারা মেনে নেন যে, তাদের জীবনে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা অথবা কার্যকারী শক্তি এক বড় ভূমিকা রাখে। আর এটা দেখায় যে তারা “পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তিস্ম নিয়েছেন।

৪. খ্রীষ্টান পরিচারকরা কীভাবে নিযুক্ত হন?

নতুন শিষ্যরা বাপ্তিস্মের সময় যিহোবা ঈশ্বরের পরিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু কে তাদেরকে নিযুক্ত করেন? ২ করিন্থীয় ৩:৫ পদের কথাগুলোর নীতি তাদের ওপর খাটে: “[পরিচারক হিসেবে] আমাদের উপযোগিতা ঈশ্বর হইতে উৎপন্ন।” যিহোবা ঈশ্বরের মাধ্যমে তাঁর পরিচারক নিযুক্ত হওয়ার চেয়ে বড় আর কোন সম্মান তারা পেতে পারেন না! বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার নির্দেশনাগুলো মেনে চলবেন ও তাঁর বাক্যকে কাজে লাগিয়ে যাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ‘সুসমাচারের’ পরিচারক হিসেবে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বৃদ্ধি পাবেন।—মথি ২৪:১৪; প্রেরিত ৯:৩১.

নিযুক্তি—গণতান্ত্রিক নয় কিন্তু ঈশতান্ত্রিক

৫. খ্রীষ্টান অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হয়? বুঝিয়ে বলুন।

দিন দিন বেড়ে চলা সক্রিয় পরিচারকদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য, যোগ্য অধ্যক্ষদের খুব যত্নের সঙ্গে দেখাশোনা করা ও সেইসঙ্গে পরিচারক দাসদের সহযোগিতাও দরকার। (ফিলিপীয় ১:১) কিন্তু এই ব্যক্তিরা কীভাবে নিযুক্ত হন? খ্রীষ্টীয়জগতে যে পদ্ধতিতে নিযুক্ত করা হয় সেভাবে নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খ্রীষ্টান অধ্যক্ষরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ মণ্ডলীর বেশির ভাগ লোকেদের দেওয়া ভোটের মাধ্যমে নিযুক্ত হন না। এর বদলে, এই লোকেরা ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত হন। এই কথার মানে কী?

৬. (ক) প্রকৃত ঈশতন্ত্র কী? (খ) কেন বলা যায় যে অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত করা হয়?

সাধারণভাবে বললে, প্রকৃত ঈশতন্ত্র মানে ঈশ্বরের শাসন। যিহোবার সাক্ষিরা স্বেচ্ছায় তাঁর শাসনকে মেনে নেন এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য একে অন্যকে সহযোগিতা করেন। (গীতসংহিতা ১৪৩:১০; মথি ৬:৯, ১০) খ্রীষ্টান অধ্যক্ষ বা প্রাচীনদের এবং পরিচারক দাসদের নিযুক্তি ঈশতান্ত্রিক কারণ এই দায়িত্ববান ব্যক্তিদেরকে পবিত্র শাস্ত্রে ঈশ্বরের ব্যবস্থার বিষয়ে যেভাবে বলা আছে, ঠিক সেভাবেই সুপারিশ বা নিযুক্ত করা হয়। আর ‘সকলের মস্তক’ হিসেবে যিহোবার এটা ঠিক করার অধিকার আছে যে তাঁর দৃশ্য সংগঠন কীভাবে কাজ করবে।—১ বংশাবলি ২৯:১১; গীতসংহিতা ৯৭:৯.

৭. যিহোবার সাক্ষিদেরকে কীভাবে পরিচালনা করা হয়?

খ্রীষ্টীয়জগতের বিভিন্ন ধর্মীয় দলগুলোর মতো যিহোবার সাক্ষিরা এমন কোন ধর্মীয় শাসন কাঠামো গঠন করেন না, যার অধীনে তারা কাজ করেন। এই আন্তরিক খ্রীষ্টানরা যিহোবার মানদণ্ড অনুযায়ী চলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। যিহোবার সাক্ষিদের মাঝে যে অধ্যক্ষরা আছেন তাদেরকে গির্জার শাসন কাঠামোর মতো কোন মণ্ডলীগত, যাজকতান্ত্রিক অথবা প্রেসবিটারিয়ান পদ্ধতিতে নিযুক্ত করা হয় না। জগতের কোন বিষয় যদি এই নিযুক্তিতে বাধা দেয়, তাহলে যিহোবার লোকেরা কোন রকম আপোশ করেন না। তারা তাদের অবস্থানকে খুব বিশ্বস্তভাবে রক্ষা করেন, যা প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিতদের কথা থেকে বোঝা যায়। তারা বলেছিলেন: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” (প্রেরিত ৫:২৯) এভাবেই সাক্ষিরা সমস্তকিছুতে ঈশ্বরের বশীভূত থাকেন। (ইব্রীয় ১২:৯; যাকোব ৪:৭) ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে চললে ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়া যায়।

৮. গণতান্ত্রিক ও ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্যগুলো কী?

ঈশতন্ত্রের মহান শাসক, যিহোবার দাস হিসেবে আমাদের গণতান্ত্রিক ও ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে যে পার্থক্যগুলো আছে, তা মনে রাখা উচিত। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকলের সমান অধিকার থাকে, প্রায়ই ক্ষমতার জন্য প্রচার অভিযান চালানো হয় এবং বেশির ভাগ জনগণ যাকে ভোট দেন তাকে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউকে এভাবে নির্বাচন করা হয় না। কোন মানুষ বা কোন বৈধ সত্তার মাধ্যমে তারা নির্বাচিত হন না। যীশু ও যিহোবার মাধ্যমে “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত” হিসেবে তার নিযুক্তি সম্বন্ধে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে পৌল গালাতীয়দের কাছে বলেছিলেন যে তিনি “মনুষ্যদের হইতে নয়, মনুষ্যের দ্বারাও নয়, কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা, এবং যিনি মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন, সেই পিতা ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত।”—রোমীয় ১১:১৩; গালাতীয় ১:১.

পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত

৯. খ্রীষ্টান অধ্যক্ষদের নিযুক্ত করার বিষয়ে প্রেরিত ২০:২৮ পদ কী বলে?

ইফিষের অধ্যক্ষদের পৌল মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে ঈশ্বর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে নিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান, এবং পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে অধ্যক্ষ করিয়া যাহার মধ্যে নিযুক্ত করিয়াছেন, সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হও, ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীকে পালন কর, যাহাকে তিনি নিজ [“পুত্রের,” NW) রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (প্রেরিত ২০:২৮) ঈশ্বরের পালের পালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলার সময় ওই খ্রীষ্টান অধ্যক্ষদের পবিত্র আত্মার নির্দেশনা মেনে চলার দরকার ছিল। মণ্ডলীর কোন দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের মানদণ্ডগুলো মেনে না চলেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পবিত্র আত্মা ঠিক সময়ে কাজ করত।

১০. ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত করার ব্যাপারে পবিত্র আত্মা কীভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?

১০ কীভাবে বলা যায় যে পবিত্র আত্মার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে? প্রথমত, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দেখাশোনা করতে হলে যা দরকার, তা পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা শাস্ত্রে রয়েছে। অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের যে যে বিষয়ে আদর্শ দেখাতে হতো সেই বিষয়ে তীমথিয় ও তীতের কাছে লেখা তাঁর চিঠিগুলোতে পৌল জানিয়েছিলেন। তিনি মোট ১৬টা গুণের কথা বলেছিলেন, যা তাদেরকে পূরণ করতে হতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অধ্যক্ষদের অনিন্দনীয়, মিতাচারী, আত্মসংযমী, পরিপাটী, অতিথিসেবক, শিক্ষাদানে নিপুণ এবং পরিবারের উদাহরণযোগ্য মস্তক হতে হতো। মদ খাওয়ার ব্যাপারে ভারসাম্য বজায় রাখতে হতো, অর্থের প্রতি লোভ বাদ দিতে হতো এবং আত্মসংযম দেখাতে হতো। একইভাবে, যারা পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা করতেন তাদেরকেও এই চাহিদাগুলো পূরণ করতে হতো।—১ তীমথিয় ৩:১-১০, ১২, ১৩; তীত ১:৫-৯.

১১. মণ্ডলীতে যারা দায়িত্ব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন তাদেরকে কোন্‌ কোন্‌ যোগ্যতা অর্জন করতে হবে?

১১ এই গুণগুলো আলোচনা করে বোঝা যায় যে, যিহোবার উপাসনায় যারা নেতৃত্ব দেন তাদেরকে অবশ্যই খ্রীষ্টীয় আচরণের ক্ষেত্রে উদাহরণযোগ্য হতে হবে। যে পুরুষেরা মণ্ডলীতে দায়িত্ব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন তাদের অবশ্যই প্রমাণ দিতে হবে যে পবিত্র আত্মা তাদের ওপর কাজ করছে। (২ তীমথিয় ১:১৪) এই ব্যক্তিদের দেখে বোঝা যাবে যে পবিত্র আত্মা তাদের মধ্যে ফল উৎপন্ন করছে যেমন “প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।” (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) খ্রীষ্টান ভাইবোন ও অন্যান্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় এই ফলগুলো দেখা যাবে। কারও কারও ব্যবহারে আত্মার কিছু ফল হয়তো খুব ভাল দেখতে পাওয়া যায় আবার অন্যান্যদের হয়তো অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য অন্য যোগ্যতাগুলো থাকতে পারে। কিন্তু, যারা অধ্যক্ষ বা পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন তাদের জীবনযাপনে দেখানো দরকার যে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তারা পরিপক্ব ব্যক্তি এবং ঈশ্বরের বাক্যে যে চাহিদাগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো পূরণ করার জন্য তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।

১২. কাদের বিষয়ে বলা যেতে পারে যে তারা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছেন?

১২ পৌল অন্যান্যদের পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা যেন তাকে অনুকরণ করেন। আর তিনি খুব সহজেই তা বলতে পেরেছিলেন কারণ তিনি নিজে যীশু খ্রীষ্টকে অনুকরণ করছিলেন, যিনি ‘আমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন করি।’ (১ পিতর ২:২১; ১ করি. ১০:৩৪) কাউকে অধ্যক্ষ বা পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত করার সময় তাদের যদি শাস্ত্রে বলা এই যোগ্যতাগুলো থাকে, তাহলে বলা যায় যে তারা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছেন।

১৩. মণ্ডলীতে সেবা করার জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে যারা সুপারিশ করেন তাদেরকে পবিত্র আত্মা কীভাবে সাহায্য করে?

১৩ অধ্যক্ষদের সুপারিশ ও নিয়োগ করার ব্যাপারে পবিত্র আত্মা কীভাবে কাজ করে, আরেকটা বিষয় থেকে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যীশু বলেছিলেন, ‘স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করেন।’ (লূক ১১:১৩) তাই, স্থানীয় মণ্ডলীর প্রাচীনরা যখন মণ্ডলীর দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে কোন ভাইয়ের কথা সুপারিশ করেন তখন তারা প্রার্থনা করে নেন, যাতে পবিত্র আত্মা তাদেরকে নির্দেশনা দেয়। ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যে যেভাবে বলা আছে তার ওপর নির্ভর করে তারা সুপারিশ করেন আর পবিত্র আত্মা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে যাকে নিযুক্ত করার ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে, তিনি শাস্ত্রে বলা গুণাবলি পূরণ করেন কি না। যারা সুপারিশ করেন তারা ব্যক্তির চেহারা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অন্য কোন কর্মদক্ষতা দেখেন না। বরং তাদের লক্ষ্য করতে হবে যে, ওই ব্যক্তি আসলেই আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিপক্ব কি না, যার কাছে মণ্ডলীর সদস্যরা বাইবেলের পরামর্শ নেওয়ার জন্য নির্দ্বিধায় আসতে পারেন।

১৪. প্রেরিত ৬:১-৩ পদ থেকে আমরা কী শিখি?

১৪ প্রাচীন বা পরিচারক দাস হিসেবে কোন ভাইকে সুপারিশ করার বিষয়টা যদিও প্রাচীন গোষ্ঠী ভ্রমণ অধ্যক্ষকে জানান কিন্তু প্রকৃত মনোনয়ন আসলে প্রথম শতাব্দীর নমুনা অনুযায়ীই হয়। একবার একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে যোগ্য কিছু ভাইদের দরকার হয়েছিল। পরিচালক গোষ্ঠী এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সুখ্যাতিপন্ন এবং আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ সাত জনকে দেখিয়া লও; তাঁহাদিগকে আমরা এই কার্য্যের ভার দিব।” (প্রেরিত ৬:১-৩) যদিও সেখানকার ভাইয়েরাই ওই ব্যক্তিদের বিষয়ে সুপারিশ করেছিলেন কিন্তু যিরূশালেমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই আসলে তাদেরকে নিযুক্ত করেছিলেন। আজকেও এই একই পদ্ধতি মেনে চলা হয়।

১৫. নিযুক্ত করার সঙ্গে পরিচালক গোষ্ঠী কীভাবে জড়িত?

১৫ যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠী শাখা কমিটির সমস্ত সদস্যদের সরাসরি নিয়োগ করে থাকেন। এই গুরু দায়িত্ব কারা পালন করতে পারবে সেই বিষয়ে তারা যখন সিদ্ধান্ত নেন তখন পরিচালক গোষ্ঠী যীশুর এই কথাগুলো মনে রাখেন: “যে কোন ব্যক্তিকে অধিক দত্ত হইয়াছে, তাহার নিকটে অধিক দাবি করা যাইবে; এবং লোকে যাহার কাছে অধিক রাখিয়াছে, তাহার নিকটে অধিক চাহিবে।” (লূক ১২:৪৮) পরিচালক গোষ্ঠী শাখা কমিটির সদস্যদের নিয়োগ করা ছাড়াও বেথেলের প্রাচীন ও ভ্রমণ অধ্যক্ষদের নিযুক্ত করেন। কিন্তু, অন্যান্য ব্যক্তিদের নিযুক্ত করার ব্যাপারে তারা নির্ভরযোগ্য ভাইদের দায়িত্ব দেন। এই ব্যাপারেও বাইবেলে উদাহরণ আছে।

‘যেমন আমি তোমাকে আদেশ দিয়াছিলাম, তেমনই নিযুক্ত কর’

১৬. পৌল কেন তীতকে ক্রীতীতে রেখে এসেছিলেন আর তা আজকে ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত করার বিষয়ে কী জানায়?

১৬ পৌল তার সহকর্মী তীতকে বলেছিলেন: “আমি তোমাকে এই কারণে ক্রীতীতে রাখিয়া আসিয়াছি, যেন যাহা যাহা অসম্পূর্ণ, তুমি তাহা ঠিক করিয়া দেও, এবং যেমন আমি তোমাকে আদেশ দিয়াছিলাম, প্রত্যেক নগরে প্রাচীনদিগকে নিযুক্ত কর।” (তীত ১:৫) তারপর পৌল কিছু যোগ্যতার বিষয়ে বলেছিলেন আর যে ব্যক্তিদের নিযুক্ত করা হবে তাদের মধ্যে আসলেই এই যোগ্যতা আছে কি না, তা তীতকে দেখতে বলা হয়েছিল। তাই, আজকে পরিচালক গোষ্ঠী শাখা অফিসগুলোতে যোগ্য ভাইদের নিযুক্ত করেন, যাতে করে এই ভাইয়েরা তাদের হয়ে প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের নিযুক্ত করতে পারেন। পরিচালক গোষ্ঠীকে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদেরকে খুব সতর্কভাবে নিযুক্ত করা হয়, যাতে তারাও কাউকে নিযুক্ত করার ব্যাপারে শাস্ত্রের নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে বোঝেন এবং মেনে চলেন। তাই, পরিচালক গোষ্ঠীর নির্দেশেই সারা পৃথিবীতে যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোতে সেবা করার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নিযুক্ত করা হয়েছে।

১৭. অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের নিযুক্ত করার ব্যাপারে সুপারিশ করা হলে শাখা অফিস কীভাবে তা নির্ধারণ করে?

১৭ অধ্যক্ষ অথবা পরিচারক দাসদের নিযুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে যখন ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির শাখা অফিসে জানানো হয় তখন এই অভিজ্ঞ ভাইয়েরা কাউকে নিযুক্ত করার জন্য ঈশ্বরের আত্মার নির্দেশনার ওপর নির্ভর করেন। এই ব্যক্তিরা জানেন যে তাদের নিকাশ দিতে হবে আর তা বুঝতে পেরে তারা কখনোই তাড়াহুড়ো করে অন্যদের ওপর হস্তার্পণ করেন না, পাছে তারা অন্যের পাপের ভাগী হন।—১ তীমথিয় ৫:২২.

১৮, ১৯. (ক) বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিযুক্ত করার তথ্যটা কীভাবে পাঠানো হয়? (খ) কাউকে সুপারিশ ও নিযুক্ত করার পুরো পদ্ধতিটা কীভাবে সম্পন্ন হয়?

১৮ কিছু কিছু নিয়োগপত্র হয়তো বৈধ সত্তার কাছ থেকে অফিসিয়াল স্ট্যাম্প লাগানো কাগজে পাঠানো হয়। মণ্ডলীতে একজন বা তারও বেশি ভাইদের নিয়োগ করার সময় হয়তো এইরকম চিঠি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১৯ ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউকে নিযুক্ত করা হলে, তা তাঁর পুত্র ও পৃথিবীতে তাঁর দৃশ্য মাধ্যম “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” ও এর পরিচালক গোষ্ঠীর মাধ্যমে স্বয়ং যিহোবাই নিযুক্ত করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এইরকম সুপারিশ বা নিযুক্ত করার পদ্ধতি পবিত্র আত্মার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কারণ পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত ঈশ্বরের বাক্যে যোগ্যতাগুলো লেখা আছে আর যে ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয়েছে তিনি ওই আত্মার ফল উৎপন্ন করেছেন বলে প্রমাণ দিয়েছেন। তাই কাউকে নিযুক্ত করা হলে তা পবিত্র আত্মার দ্বারাই করা হয়েছে বলে দেখা উচিত। প্রথম শতাব্দীতে যেমন ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের নিযুক্ত করা হয়েছিল আজকেও ঠিক তাই-ই করা হয়।

যিহোবার নির্দেশনার জন্য কৃতজ্ঞ

২০. গীতসংহিতা ১৩৩:১ পদে লেখা দায়ূদের কথাগুলো কেন আমরাও বলি?

২০ আধ্যাত্মিক উন্নতি ও রাজ্যের প্রচার কাজ বৃদ্ধি পাওয়ার এই সময়ে অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের যিহোবা নিযুক্ত করছেন বলে আমরা কৃতজ্ঞ। এই আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে ঈশ্বরের উচ্চ মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই ব্যক্তিদের খ্রীষ্টীয় মনোভাব ও ঐকান্তিক চেষ্টা যিহোবার দাসদের মধ্যে শান্তি ও একতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। গীতরচক দায়ূদের মতো তাই আমরাও বলি: “দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে!”—গীতসংহিতা ১৩৩:১.

২১. যিশাইয় ৬০:১৭ পদের কথাগুলো এখন কীভাবে পূর্ণ হচ্ছে?

২১ যিহোবা তাঁর বাক্য ও পবিত্র আত্মার মাধ্যমে নির্দেশনা জুগিয়েছেন বলে আমরা কত কৃতজ্ঞ! আর যিশাইয় ৬০:১৭ পদের এই কথাগুলোও খুবই অর্থপূর্ণ: “আমি পিত্তলের পরিবর্ত্তে সুবর্ণ, এবং লৌহের পরিবর্ত্তে রৌপ্য আনিব, কাষ্ঠের পরিবর্ত্তে পিত্তল, ও প্রস্তরের পরিবর্ত্তে লৌহ আনিব; আর আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব।” যেহেতু যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিগুলো দিনে দিনে আরও বেশি করে কাজে লাগানো হচ্ছে, তাই আমরা ঈশ্বরের পার্থিব সংগঠনের সব জায়গায় এই আশীর্বাদ উপভোগ করেছি।

২২. আমরা কীসের জন্য কৃতজ্ঞ আর আমাদের কোন্‌ দৃঢ় সংকল্প নেওয়া দরকার?

২২ আমাদের মাঝে ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে বলে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আর ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসেরা কঠিন অথচ পরিতৃপ্তি আনে এমন কাজ করেন বলে আমরা তা গভীরভাবে উপলব্ধি করি। আমরা মনপ্রাণ দিয়ে আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতার প্রশংসা করি, যিনি আমাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার সুযোগ দিয়েছেন এবং আমাদেরকে প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেছেন। (হিতোপদেশ ১০:২২) তাই, যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আসুন আমরা দৃঢ়সংকল্প নিই। সর্বোপরি, আসুন আমরা যিহোবার মহান ও পবিত্র নামের সম্মান, প্রশংসা ও মহিমা করার জন্য একসঙ্গে তাঁকে সেবা করে চলি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন আমরা বলতে পারি যে, অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের নিযুক্তি গণতান্ত্রিক নয় কিন্তু ঈশতান্ত্রিক?

• যোগ্য খ্রীষ্টান পুরুষেরা কীভাবে পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত হন?

• অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাসদের নিযুক্ত করার সঙ্গে কীভাবে পরিচালক গোষ্ঠী জড়িত?

• ঈশতান্ত্রিক নিযুক্তির জন্য যিহোবার প্রতি কেন আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রাচীন ও পরিচারক দাসেরা ঈশতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত হয়ে সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন