সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারীরা আনন্দ খুঁজে পান

ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারীরা আনন্দ খুঁজে পান

ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারীরা আনন্দ খুঁজে পান

“এই সম্মেলনকে আমরা যিহোবার একটা ব্যবস্থা বলে মনে করি, যাতে আমরা রাজ্যের প্রচার কাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিজেদেরকে তৈরি করতে পারি।” যিহোবার সাক্ষিদের “ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারীরা” জেলা সম্মেলনের একজন বক্তা এই কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন: “আমরা সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করার, যিহোবার সংগঠনের কাছাকাছি থাকার, রাজ্যের কাজে আমাদের উদ্যোগ ধরে রাখার এবং সবসময় সজাগ থাকার জন্য তৈরি হয়েছি।”

 দুহাজার সালের মে মাসের শেষ থেকে ঈশ্বরের বাক্যের লক্ষ লক্ষ কার্যকারীরা ও তাদের বন্ধুরা বাইবেলের জরুরি শিক্ষা নেওয়ার জন্য সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন জায়গায় মিলিত হয়েছিলেন। তিন দিনের ওই সম্মেলন থেকে তারা কী শিখেছিলেন?

প্রথম দিন—যিহোবার উপকারগুলো ভুলে যাবেন না

প্রথম বক্তৃতায় সভাপতি, এই সম্মেলনে সবাই মিলে যিহোবাকে উপাসনা করার ফলে যে আশীর্বাদগুলো আসবে, তা উপভোগ করার জন্য শ্রোতাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। উপস্থিত সকল শ্রোতাদেরকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে তাদের বিশ্বাস আরও বাড়বে এবং যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

‘পরম ধন্য [“সুখী,” NW] ঈশ্বর’ জানেন যে আমাদের সুখের জন্য কী কী দরকার। (১ তীমথিয় ১:১১) “ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চললে সুখী হওয়া যায়” বক্তৃতায় তুলে ধরা হয়েছিল যে যিহোবার বাক্য, বাইবেলে বলা আছে যে কী করে সবচেয়ে ভালভাবে জীবনযাপন করা যায়। (যোহন ১৩:১৭) অনেক দিন ধরে সত্যে আছেন এমন অনেক ভাইবোনদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, যার থেকে জানা গিয়েছিল যে বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যেও ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলে কীভাবে আমরা আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি। এর পরে “যিহোবার মঙ্গলভাবে আনন্দ করুন” বক্তৃতায় তুলে ধরা হয়েছিল যে “ঈশ্বরের অনুকারী” হয়ে খ্রীষ্টানরা তাদের জীবনে ‘সর্ব্বপ্রকার সৎভাব [“মঙ্গলভাব,” NW] গড়ে তুলতে চান। (ইফিষীয় ৫:১, ৯) মঙ্গলভাব গড়ে তোলার একটা ভাল উপায় হল, সুসমাচার প্রচার এবং শিষ্য তৈরি করা।—গীতসংহিতা ১৪৫:৭.

“যিনি অদৃশ্য তাঁকে দেখেছেন ভেবে স্থির থাকুন” বক্তৃতায় দেখানো হয়েছিল যে, কীভাবে দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের অদৃশ্য ঈশ্বরকে দেখতে সাহায্য করে। বক্তা বলেছিলেন যে ঈশ্বরের সঙ্গে কাছের সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিরা ঈশ্বরের গুণাবলি সম্বন্ধে জানেন আর সেইসঙ্গে তারা এও জানেন তাদের মনে কী আছে, তা ঈশ্বর জানেন। (হিতোপদেশ ৫:২১) যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল তারা বলেছিলেন যে, দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলার এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে তাদের জীবনে প্রথমে রাখার জন্য তারা কোন্‌ পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন।

সকালের অধিবেশন মুখ্য বক্তৃতা দিয়ে শেষে হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল “আশ্চর্য কার্যকারী—যিহোবার প্রশংসা করুন।” এটা শ্রোতাদেরকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে যিহোবার সম্বন্ধে আমরা যত বেশি জানি, আশ্চর্য কার্যকারী হিসেবে তাঁর প্রশংসা করার তত বেশি কারণ আমরা খুঁজে পাই। বক্তা বলেছিলেন: “ঈশ্বরের চমৎকার সৃষ্টি ও সেইসঙ্গে তিনি এখনও আমাদের জন্য যে আশ্চর্য কাজগুলো করে চলেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি তখন আমরা অন্তর থেকে তাঁর প্রশংসা করি। অতীতে তিনি তাঁর লোকেদের জন্য যে আশ্চর্য কাজগুলো করেছিলেন, তা নিয়ে আমরা যখন ধ্যান করি তখন আমরা তাঁর প্রশংসা করতে চাই। আর যিহোবা সামনে যে আশ্চর্য কাজগুলো করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি তখনও আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”

দুপুরের অধিবেশন “ভাল কাজ করতে করতে নিরুৎসাহ হবেন না” বক্তৃতা দিয়ে শুরু হয়েছিল। এটা সমস্ত শ্রোতাদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, জগতে এত সমস্যা দেখায় যে শেষ একেবারে কাছে। (২ তীমথিয় ৩:১) নিরুৎসাহিত না হয়ে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে আমরা “প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।”—ইব্রীয় ১০:৩৯.

পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে বাইবেল থেকে কোন্‌ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল? সম্মেলনের প্রথম সিম্পোজিয়াম “ঈশ্বরের বাক্য মেনে চলুন,” “জীবনসাথি বেছে নেওয়ার সময়” অংশটা দিয়ে শুরু হয়েছিল। জীবন সাথি বেছে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত। তাই, খ্রীষ্টানরা পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের জন্য অপেক্ষা করেন এবং ‘কেবল প্রভুতেই’ বিবাহ করেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) সিম্পোজিয়ামের পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হয়ছিল যে যিহোবা চান যেন সব পরিবারই আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে একতাবদ্ধ ও সফল হয় আর কীভাবে তা করা যায়, সেই সম্বন্ধে এই অংশে কিছু ব্যবহারিক উপায় বলা হয়েছিল। শেষের অংশটা বাবামাদের মনে করিয়ে দিয়েছিল, ছেলেমেয়েরা যখন দেখবে যে বাবামা যিহোবাকে ভালবাসে তখন তারাও যিহোবাকে ভালবাসতে শিখবে।

“গুজব ছড়ানো থেকে সাবধান থাকুন” বক্তৃতায় যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছিল, তা আমাদের সবাইকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে যদিও অদ্ভুত বিষয় ঘটে থাকে কিন্তু আমরা যখন কোন কৌতূহলজনক খবর শুনি, তখন বোকার মতো সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস না করে যাচাই করে দেখা উচিত। যে সত্য সম্বন্ধে তারা নিশ্চিত জানেন, যেমন ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার সেই বিষয়ে কথা বলার জন্য খ্রীষ্টানরা সুবিধাজনক স্থানে আছেন। “‘মাংসের কন্টকের’ সঙ্গে লড়াই করা” বক্তৃতাটা শুনে অনেকেই সান্ত্বনা এবং উৎসাহ পেয়েছিলেন। এটা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে অনেক পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, কীভাবে যিহোবা আমাদেরকে তাঁর পবিত্র আত্মা, তাঁর বাক্য বাইবেল এবং আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের মাধ্যমে শক্তি দিতে পারেন। এই বিষয়ে প্রেরিত পৌলের ব্যক্তিগত উদাহরণ থেকে অনেক উৎসাহ পাওয়া গিয়েছিল।—২ করিন্থীয় ১২:৭-১০: ফিলিপীয় ৪:১১, ১৩.

“যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলা” বক্তৃতা দিয়ে প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ হয়েছিল। এই বক্তৃতায় ঈশ্বরের সংগঠন বিশেষ করে যে তিনটে দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে, তা আলোচনা করা হয়েছিল যেমন: (১) যিহোবার কাছ থেকে আসা আধ্যাত্মিক জ্যোতি দিনে দিনে উজ্জ্বল হয়, (২) ঈশ্বর আমাদেরকে প্রচার করার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং (৩) যথাসময়ে সংগঠনের কার্যপদ্ধতিতে ঠিক ঠিক রদবদল করা হয়েছে। এরপর আস্থা নিয়ে বক্তা বলেছিলেন: “সামনে কী হবে তার জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে আছি।” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “প্রথমে আমাদের যে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার যে সঠিক কারণ আমাদের রয়েছে, সেই বিষয়ে কি কোন সন্দেহ আছে?” (ইব্রীয় ৩:১৪) এর উত্তর একেবারে পরিষ্কার ছিল। এরপরই আপনি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারেন! নামে নতুন ব্রোশারটা বের হয়েছিল। যারা কম শিক্ষিত বা একটু একটু পড়তে পারেন তাদেরকে যিহোবার সম্বন্ধে জানানোর জন্য এই ব্রোশারটা অনেক সাহায্যে আসবে।

দ্বিতীয় দিন—ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলোর কথা প্রচার করুন

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন প্রতিদিনের শাস্ত্রপদ নিয়ে আলোচনার পর “ঈশ্বরের বাক্যের পরিচারকেরা” সিম্পোজিয়াম বক্তৃতা হয়েছিল। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রচার কাজ করে আমরা যে সফলতা পাচ্ছি সে সম্বন্ধে সিম্পোজিয়ামের প্রথম অংশে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু, বেশির ভাগ লোকই রাজ্যের খবর শোনে না আর এতে করে আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা হয়। যে প্রকাশকেরা অনেক দিন ধরে সত্যে আছেন তারা বলেছিলেন, লোকেরা যখন তাদের কথা শোনে না বা বিরোধিতা করে তখন তারা কীভাবে তাদের মন ও হৃদয়কে শক্তিশালী করে প্রচার কাজে তাদের আনন্দকে ধরে রেখেছেন। সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় অংশ সম্মেলনের সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে যিহোবার সাক্ষিরা সব জায়গার লোকেদের কাছে নিয়মিত এবং অনিয়মিত সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। শেষ অংশটা বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেছিল, যা কাজে লাগিয়ে খ্রীষ্টানরা তাদের ব্যক্তিগত পরিচর্যাকে বাড়াতে পারেন। বক্তা বলেছিলেন যে, তা করতে হলে ঈশ্বরের রাজ্যকে আমাদের জীবনে সবচেয়ে প্রথমে রাখতে হবে, এমনকি তা করতে গিয়ে যদি আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে ও আত্মত্যাগ করতে হয়।—মথি ৬:১৯-২১.

যেহেতু আমরা এক অধার্মিক জগতে বাস করছি যেখানে লোকেরা শুধু টাকাপয়সার পিছনে ছুটছে তাই “সন্তুষ্ট মন নিয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি গড়ে তুলুন” বক্তৃতাটা খুবই সময়োপযোগী ছিল। ১ তীমথিয় ৬:৬-১০, ১৮, ১৯ পদের ওপর ভিত্তি করে বলা বক্তার কথাগুলো দেখিয়েছিল যে, টাকার নেশা অনেককে বিপথে নিয়ে যেতে পারে এবং এর জন্য তাদেরকে অনেক মাশুল দিতে হতে পারে কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি থাকলে খ্রীষ্টানরা কীভাবে এই নেশাকে কাটিয়ে উঠতে পারেন। তিনি বলেছিলেন যে আমাদের টাকাপয়সা থাকুক বা নাই থাকুক, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে আমরা কতটা দৃঢ় তার ওপর আমাদের সুখ নির্ভর করে। “ঈশ্বরকে লজ্জায় না ফেলা” বক্তৃতাটা অনেককে প্রেরণা দিয়েছিল। কারণ সেখানে যিহোবা যে তাঁর বিশ্বস্ত সাক্ষিদের কথা কখনও ভুলে যান না, এই বিষয়টার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। যীশু খ্রীষ্টের অতুলনীয় উদাহরণ, যিনি “কল্য ও অদ্য এবং অনন্তকাল যে, সেই আছেন” অনেককে জীবন পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে দৌড়ে চলতে সাহায্য করবে।—ইব্রীয় ১৩:৮.

বাপ্তিস্মের বক্তৃতা দিয়ে সকালের পর্ব শেষ হয়েছিল, যা যিহোবার সাক্ষিদের বড় বড় সমাবেশগুলোতে বরাবরই হয়ে থাকে। নতুন উৎসর্গীকৃত ব্যক্তিদেরকে দেখে আমরা কত আনন্দিতই না হয়েছিলাম, যারা জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে যীশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করেছেন! (মথি ৩:১৩-১৭) যারা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারী হিসেবে ইতিমধ্যেই অনেক কিছু করেছেন। এছাড়াও, বাপ্তিস্ম নিয়ে তারা সুসমাচারের নিযুক্ত পরিচারক হয়ে উঠেছেন এবং তারাও যিহোবার নামকে পবিত্র করায় অংশ নিচ্ছেন জেনে অনেক আনন্দ পাচ্ছেন।—হিতোপদেশ ২৭:১১.

“‘ন্যায় অন্যায়কে পৃথক করতে’ পরিপক্ব হওয়া দরকার” বক্তৃতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। জগতের ন্যায়-অন্যায় নির্ধারণের মানগুলোতে অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। তাই, আমাদের যিহোবার নীতির ওপর নির্ভর করা দরকার। (রোমীয় ১২:২) আমাদের সবাইকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে আমরা যেন ঈশ্বরের পথগুলো ভালভাবে বোঝার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি এবং পরিপক্ব হই। অভ্যাস করলে আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলো “সদসৎ বিষয়ের বিচারণে [“ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক করতে,” NW]” প্রশিক্ষিত হবে।—ইব্রীয় ৫:১১-১৪.

এরপর ছিল “আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দৃঢ় হতে প্রাণপণ চেষ্টা করুন” সিম্পোজিয়ামটা। সত্য খ্রীষ্টানরা জানেন যে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দৃঢ় হওয়া এবং তা ধরে রাখার চেয়ে জরুরি আর কিছুই হতে পারে না। এর জন্য প্রাণপণ চেষ্টার দরকার যেমন বাইবেল পড়া, অধ্যয়ন করা ও ধ্যান করা। (মথি ৭:১৩, ১৪; লূক ১৩:২৪) এছাড়াও, আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিরা “সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি” করেন। (ইফিষীয় ৬:১৮) আমরা বুঝি, আমাদের প্রার্থনা দেখায় যে আমাদের বিশ্বাস ও ভক্তি কতটুকু গভীর, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমরা কতটা দৃঢ় ও সেইসঙ্গে “ভিন্ন প্রকার [‘বেশি গুরুত্বপূর্ণ,’ NW]” বিষয়গুলোকে আমরা কীভাবে দেখি। (ফিলিপীয় ১:১০) একটা বাচ্চা যেমন তার স্নেহময় বাবার বাধ্য থেকে তার সঙ্গে এক কাছের সম্পর্ক উপভোগ করে, ঠিক তেমনই যিহোবার সঙ্গে এক সুন্দর ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা যে খুবই জরুরি সেই সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছিল। এর মানে শুধু একটা ধর্মে থাকা, এমনকি সত্য ধর্মে থাকাকেই বোঝায় না বরং ঈশ্বরকে ‘যেন দেখছেন’ এরকম দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তোলা বোঝায়।—ইব্রীয় ১১:৬, ২৭.

আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উন্নতি করার বিষয় নিয়ে “আপনার উন্নতি যেন সকলে দেখতে পায়” বক্তৃতায় আলোচনা করা হয়েছিল। এখানে তিনটে দিক বিবেচনা করা হয়েছিল: (১) জ্ঞান, বোঝার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা বাড়ানো, (২) ঈশ্বরের আত্মার ফল উৎপন্ন করা এবং (৩) পরিবারে আমাদের দায়িত্ব পালন করা।

ওই দিনের শেষ বক্তৃতা ছিল “ঈশ্বরের বাক্যের দিন দিন উজ্জ্বল হওয়া জ্যোতিতে চলা” আর এই বক্তৃতায় যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী—সমস্ত মানুষের জন্য এক জ্যোতি ১ম খন্ড (ইংরেজি) নতুন বইটা পেয়ে সম্মেলনে উপস্থিত সবাই খুব খুশি হয়েছিলেন। বাইবেলের যিশাইয় বইয়ের ওপর দুটো খণ্ড বের হবে আর তার মধ্য এটা হল প্রথম খণ্ড। বক্তা বলেছিলেন: “যিশাইয়ের বইয়ে আমাদের দিনের জন্যও অনেক খবর আছে। হ্যাঁ, এর অনেক ভবিষ্যদ্বাণী যিশাইয়ের দিনেই পূর্ণ হয়েছিল। . . . কিন্তু, যিশাইয়ের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের দিনে পূর্ণ হচ্ছে আর কিছু কিছু ঈশ্বর যে নতুন জগতের প্রতিজ্ঞা করেছেন সেখানে পূর্ণ হবে।”

তৃতীয় দিন—বাক্যের কার্যকারী হোন

সম্মেলনের শেষ দিন প্রতিদিনের শাস্ত্রপদ নিয়ে আলোচনা করে শুরু হয়েছিল। এরপর “যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলছেন সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী তাদের জন্য অর্থ রাখে” সিম্পোজিয়ামটা হয়েছে। এই সিম্পোজিয়ামের তিনটে বক্তৃতা থেকে জানা গিয়েছিল যে যিহূদার বিপথগামী লোকেদের যেমন যিহোবা কষ্ট দিয়েছিলেন তেমনই আজকে যারা তাঁর সাবধানবাণীতে কান দেয় না, তাদেরও তিনি কষ্ট দেবেন। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করায় তারা অন্ধের মতো চলবে এবং কোন কিছুই তাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু, সত্য খ্রীষ্টানরা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার অন্বেষণ করে চলেন এবং যিহোবার ক্রোধের দিনে তারা গুপ্ত স্থানে রক্ষা পাবেন। শুধু তাই নয়, তারা এখনও অনেক আশীর্বাদ পাচ্ছেন। তাদেরকে বাইবেলের সত্যের “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে। (সফনিয় ৩:৯) বক্তা বলেছিলেন: “বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলা বলতে শুধু সত্যে বিশ্বাস করা ও সেগুলো অন্যদের শেখানোই বোঝায় না কিন্তু ঈশ্বরের ব্যবস্থা ও নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করা বোঝায়।”

সম্মেলনে উপস্থিত সকলে “যে উদাহরণগুলো আজকে আমাদের সাবধান করে” নাটকের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন। ঐতিহাসিক এই নাটকটা দেখিয়েছিল যে যিহোবাকে ভুলে যাওয়ায় এবং মিথ্যা ধর্মের মেয়েদের সঙ্গে ব্যভিচার ও মিথ্যা উপাসনা করায় অনেক ইস্রায়েলীয় কীভাবে প্রতিজ্ঞাত দেশের একেবারে দোরগোড়ায় এসে তাদের জীবন হারিয়েছিল। নাটকের এক প্রধান চরিত্র যামীন, মোয়াবীয় মেয়েদের প্রলোভনে পা দেবে নাকি যিহোবার প্রতি ভক্তি বজায় রাখবে, তা নিয়ে প্রথমে এক টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল। নাটকে প্রথমে দুষ্ট সিম্রির মিথ্যা যুক্তি ও বিপথে নিয়ে যায় এমন চিন্তাভাবনা তুলে ধরা হয় এবং পরে পীনহসের বিশ্বাস এবং ভক্তি দেখানো হয়। যারা যিহোবাকে ভালবাসে না তাদের সঙ্গে মেলামেশা করার বিপদ কী হতে পারে, তা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছিল।

নাটকের সঙ্গে মিল রেখে এর পরের বক্তৃতা দেওয়া হয়েছিল। এর শিরোনাম ছিল “অমনোযোগী শ্রোতা হবেন না।” ১ করিন্থীয় ১০:১-১০ পদের ওপর আলোচনা করে দেখানো হয়েছিল যে যিহোবা আমাদের বাধ্যতা পরীক্ষা করেন এটা দেখার জন্য যে আমরা নতুন জগতে যাওয়ার যোগ্য কি না। নতুন জগতে ঢোকার মুখে এসে কারও কারও মাংসিক ইচ্ছাগুলো তাদেরকে আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। আমাদের সকলকে ‘যিহোবার বিশ্রামে প্রবেশ’ করার সুযোগকে অবহেলা না করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল।—ইব্রীয় ৪:১.

জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতার শিরোনাম ছিল “ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলোর দিকে কেন মনোযোগ দেবেন।” যিহোবার “আশ্চর্য কার্য্য সকল” দেখে আমরা বুঝতে পারি যে তাঁর প্রজ্ঞা আছে এবং সমস্ত সৃষ্টির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব আছে। (ইয়োব ৩৭:১৪) যিহোবা ইয়োবকে ভাবিয়ে তোলার মত অনেক প্রশ্ন করেছিলেন আর এগুলো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ক্ষমতা কতটুকু, তা ইয়োবকে বুঝতে সাহায্য করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জন্যও যিহোবা ভবিষ্যতে “আশ্চর্য্য কার্য্য সকল” করবেন। বক্তা এই বলে শেষ করেছিলেন: “ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজগুলোর অর্থাৎ অতীতে তিনি কী করেছেন, আজকে তিনি কী করছেন এবং নিকট ভবিষ্যতে তিনি কী করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছেন সেই দিকে মনোযোগ দেওয়ার অনেক অনেক কারণ আমাদের আছে।”

সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ থেকে সারাংশ আলোচনার পর সম্মেলনের শেষ বক্তৃতা দেওয়া হয়েছিল। এর শিরোনাম ছিল “ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারী হওয়ার সুযোগকে মহামূল্যবান মনে করুন।” উৎসাহমূলক এই বক্তৃতাটা দেখিয়েছিল যে ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারী হওয়া সম্মান এনে দেয়। (যাকোব ১:২২) শ্রোতাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারী হওয়ার জন্য আমাদের এই সুযোগের সঙ্গে অন্য আর কিছুর তুলনা হয় না এবং যত দিন আমরা এই সুযোগকে ধরে রাখব এটা আমাদের কাছে ততই মূল্যবান মনে হবে। উপস্থিত সবাইকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল, এই জেলা সম্মেলন থেকে পাওয়া উৎসাহে তারা যেন ঈশ্বরের বাক্যের উত্তম কার্যকারী হওয়ার জন্য চেষ্টা করে। পুরোপুরি সুখী হওয়ার এটাই হল একমাত্র উপায়।

[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

আপনি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারেন! *

শুক্রবার বিকেলে, আপনি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারেন! নামের নতুন ব্রোশারটা প্রকাশ করা হয়েছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার লোকেদেরকে সহজ করে বাইবেল শেখানো জরুরি প্রয়োজন আর এই ব্রোশারটা সেই প্রয়োজন পূরণ করবে। যারা ভাল করে পড়তে পারেন না এবং যারা শিক্ষিত কিন্তু তারা যে দেশে থাকেন সেই দেশের ভাষা ভাল করে পড়তে পারেন না, এই দুদলের লোকেদের জন্যই এটা একটা বড় আশীর্বাদ হবে।

[২৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী—সমস্ত মানুষের জন্য এক জ্যোতি

যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী—সমস্ত মানুষের জন্য এক জ্যোতি (ইংরেজি) বইয়ের দুটো খণ্ডের মধ্যে প্রথম খণ্ডটা পেয়ে সবাই খুবই খুশি হয়েছিল। যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের দিনের জন্য কীভাবে কাজে আসে, এই প্রকাশনায় সেই বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

[পাদটীকা]

^ এই ব্রোশার এখন ভারতে পাওয়া যাচ্ছে না