যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলা
যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলা
“শান্তির ঈশ্বর, . . . আপনার ইচ্ছা সাধনার্থে তোমাদিগকে সমস্ত উত্তম বিষয়ে পরিপক্ব করুন।” —ইব্রীয় ১৩:২০, ২১.
১. বিশ্বের জনসংখ্যা কত এবং বিভিন্ন ধর্মের লোকেদের সংখ্যা কত?
উনিশশ নিরানব্বই সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছয়শ কোটিতে পৌঁছেছে! বিশ্ব বর্ষপঞ্জি (ইংরেজি) জানায় যে তার মধ্যে ১১৬,৫০,০০,০০০ মুসলমান; ১০৩,০০,০০,০০০ রোমান ক্যাথলিক; ৭৬,২০,০০,০০০ হিন্দু; ৩৫,৪০,০০,০০০ বৌদ্ধ; ৩১,৬০,০০,০০০ প্রটেস্টান্ট এবং ২১,৪০,০০,০০০ অর্থোডক্স।
২. আজকে পৃথিবীতে যে ধর্মীয় অবস্থা বিরাজ করছে সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়?
২ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের যে কোটি কোটি লোকেরা আছে, তারা সবাই-ই কি ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে? না, “কেননা ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির।” (১ করিন্থীয় ১৪:৩৩) অন্যদিকে, যিহোবার দাসদের আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ সম্বন্ধে কী বলা যায়? (১ পিতর ২:১৭) মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ‘শান্তির ঈশ্বর, তাঁর ইচ্ছা সাধনার্থে সমস্ত উত্তম বিষয়ে তাদের পরিপক্ব করেন।’—ইব্রীয় ১৩:২০, ২১.
৩. সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিরূশালেমে কী হয়েছিল এবং কেন?
৩ কত জন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করে সেই সংখ্যা সাক্ষিরা ঈশ্বরের সুনজরে আছে কি না, তা মাপার মাপকাঠি নয়; এছাড়াও সেই সংখ্যা ঈশ্বরকে খুশিও করে না। ইস্রায়েল জাতি “সকল জাতি অপেক্ষা সংখ্যাতে অধিক” ছিল বলে যিহোবা তাদেরকে বেছে নেননি বরং তারা “অল্পসংখ্যক” ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৭) কিন্তু, ইস্রায়েল জাতি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। আর তাই সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে ১২০ জন শিষ্য নিয়ে গড়ে ওঠা নতুন খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে যিহোবা বেছে নিয়েছিলেন ও তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন। তারা যিহোবার পবিত্র আত্মায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন এবং উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের বিষয়ে সত্য প্রচার করেছিলেন।—প্রেরিত ২:৪১, ৪২.
সবসময় সামনের দিকে এগিয়ে চলা
৪. কেন আপনি বলবেন যে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী সামনের দিকে এগিয়ে চলেছিল?
৪ প্রথম শতাব্দীতে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী এগিয়ে চলেছিল, নতুন নতুন এলাকায় প্রচার করেছিল, শিষ্য তৈরি করেছিল এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো ধীরে ধীরে আরও ভাল করে বুঝতে পেরেছিল। প্রেরিতদের দিয়ে চিঠি লিখিয়ে ঈশ্বর যে জ্যোতি প্রকাশ করছিলেন, প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা সেই জ্যোতিতে এগিয়ে চলেছিলেন। এছাড়াও, প্রেরিতরা প্রত্যেকটা মণ্ডলীতে গিয়ে খ্রীষ্টানদেরকে উৎসাহ দিতেন আর এর ফলে তারা তাদের প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। আমাদের জন্য এই বিষয়গুলো খ্রীষ্টান গ্রিক শাস্ত্রে লেখা আছে।—প্রেরিত ১০:২১, ২২; ১৩:৪৬, ৪৭; ২ তীমথিয় ১:১৩; ৪:৫; ইব্রীয় ৬:১-৩; ২ পিতর ৩:১৭, ১৮.
৫. আজকে কেন ঈশ্বরের সংগঠন এগিয়ে চলেছে আর আমাদের কেন এর সঙ্গে সঙ্গে চলা উচিত?
৫ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো আজকের দিনে যিহোবার সাক্ষিদের শুরুও খুব ছোট আকারে হয়েছিল। (সখরিয় ৪:৮-১০) উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে আজ পর্যন্ত অনেক প্রমাণ দেখায় যে, যিহোবার আত্মা তাঁর সংগঠনের ওপর আছে। আমরা মানুষের ক্ষমতা নয় কিন্তু পবিত্র আত্মার পরিচালনার ওপর নির্ভর করেছি বলেই দিন দিন বাইবেলের বিভিন্ন বিষয় আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি ও ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে চলেছি। (সখরিয় ৪:৬) আমরা এখন “শেষ কালে” বাস করছি আর তাই ঈশ্বরের এগিয়ে যাওয়া সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলা আগের চেয়ে এখন আরও অনেক বেশি জরুরি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) আমরা যদি ঈশ্বরের সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলি, তাহলে আমাদের আশা উজ্জ্বল থাকবে এবং আজকের দুষ্ট জগৎ শেষ হওয়ার আগে আমরা সারা পৃথিবীর লোকেদের কাছে জোরকদমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতে পারব।—মথি ২৪:৩-১৪.
৬, ৭. যিহোবার সংগঠন এগিয়ে গেছে এমন কোন্ তিনটে দিক আমরা দেখব?
৬ আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ১৯২০, ৩০ বা ৪০ এর দশকে যিহোবার সংগঠনে এসেছেন। ওই বছরগুলোতে কেই বা ভাবতে পেরেছিল যে আমাদের সময়ে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা এত বেড়ে যাবে ও সংগঠন এতখানি এগিয়ে যাবে? আমাদের দিনে যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা একটু ভেবে দেখুন! ঈশতান্ত্রিকভাবে সংগঠিত তাঁর লোকেদের দিয়ে যিহোবা যা যা করেছেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভাল ফল নিয়ে আসে।
৭ প্রাচীনকালের দায়ূদ যখন যিহোবার আশ্চর্য কাজগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন তখন সেগুলো তার ওপর বিরাট ছাপ ফেলেছিল। তিনি বলেছিলেন: “আমি সে সকল বলিতাম ও বর্ণনা করিতাম, কিন্তু সে সকল গণনা করা যায় না।” (গীতসংহিতা ৪০:৫) দায়ূদের মতো আমাদেরও একইরকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আজকে যিহোবা আমাদের জন্য যে মহৎ ও প্রশংসনীয় কাজগুলো করেছেন, তার সবগুলো আমরা বলতে পারি না। তাসত্ত্বেও, আসুন আমরা তিনটে দিক দেখি যে দিকগুলোতে যিহোবার সংগঠন সামনের দিকে এগিয়ে গেছে: (১) ধীরে ধীরে বেড়ে চলা আধ্যাত্মিক জ্ঞান, (২) উন্নত ও আরও বিরাট আকারে প্রচার করার সুযোগ এবং (৩) সংগঠনের কার্যপদ্ধতিতে যথাসময়ে রদবদল।
আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জন্য কৃতজ্ঞ
৮. হিতোপদেশ ৪:১৮ পদের সঙ্গে মিল রেখে আধ্যাত্মিক জ্ঞান আমাদেরকে রাজ্যের বিষয়ে কী বুঝতে সাহায্য করেছে?
৮ ধীরে ধীরে বেড়ে চলা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে হিতোপদেশ ৪:১৮ পদের কথাগুলো সত্যি প্রমাণ হয়েছে। এখানে বলা আছে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” ধীরে ধীরে বেড়ে চলা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জন্য আমরা কত কৃতজ্ঞ! ১৯১৯ সালে ওহাইওর সিডার পয়েন্টে যে সম্মেলন হয়েছিল সেখানে বিশেষ করে ঈশ্বরের রাজ্যের কথা বলা হয়েছিল। যিহোবা তাঁর নামকে পবিত্র এবং তাঁর সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই রাজ্যকেই ব্যবহার করেন। আসলে, আধ্যাত্মিক জ্ঞানই আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে, বাইবেলে আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিত বাক্য পর্যন্ত যিহোবার উদ্দেশ্য অর্থাৎ তাঁর পুত্র যে রাজত্ব করবেন এবং সেই রাজ্যের মাধ্যমে তিনি তাঁর নামকে পবিত্র করবেন, সেই সম্বন্ধে বলা আছে। আর যারা ধার্মিকতা ভালবাসেন তাদের জন্য সেই রাজ্যই একমাত্র আশা।—মথি ১২:১৮, ২১.
৯, ১০. ১৯২০ এর দশকে রাজ্য এবং একে অন্যের শত্রু এমন দুটো সংগঠনের বিষয়ে কী জানা গেছে আর এটা কীভাবে সাহায্যকারী হয়েছে?
৯ ১৯২২ সালে সিডার পয়েন্টের সম্মেলনে ভাই জে. এফ. রাদারফোর্ড ঈশ্বরের লোকেদের বলেছিলেন, “রাজা ও তাঁর রাজ্যের বিষয়ে ঘোষণা করুন, ঘোষণা করুন, ঘোষণা করুন।” ১৯২৫ সালের ১লা মার্চ প্রহরীদুর্গ-এ (ইংরেজি) “জাতির জন্ম” নামে একটা প্রবন্ধে বাইবেলের সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর কথা বলা হয়েছিল, যেগুলো দেখিয়েছিল যে ঈশ্বরের রাজ্য ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, ১৯২০ এর দশকে বোঝা গিয়েছিল যে দুটো আলাদা সংগঠন আছে আর এগুলো একটা অন্যটার শত্রু। তার মধ্যে একটা হল যিহোবার সংগঠন ও অন্যটা হল শয়তানের সংগঠন। এই দুটো সংগঠনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে আর আমরা যদি যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলি, একমাত্র তাহলেই আমরা বিজয়ী দলে থাকতে পারব।
১০ এইরকম আধ্যাত্মিক জ্ঞান আমাদেরকে কীভাবে সাহায্য করেছে? ঈশ্বরের রাজ্য ও রাজা যীশু খ্রীষ্ট যেহেতু জগতের অংশ নয়, তাই আমরাও এর অংশ হতে পারি না। জগৎ থেকে নিজেদেরকে আলাদা রেখে আমরা দেখাই যে আমরা সত্যের পক্ষে রয়েছি। (যোহন ১৭:১৬; ১৮:৩৭) আমরা যখন দেখি যে এই দুষ্ট জগতের ওপর একটার পর একটা কঠিন সমস্যা আসছে তখন আমরা কত কৃতজ্ঞই না হই যে আমরা শয়তানের সংগঠনের অংশ নই! আর যিহোবার সংগঠনে থাকায় আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে নিরাপদ থেকে আমরা কত উপকারই না পাচ্ছি!
১১. ১৯৩১ সালে ঈশ্বরের লোকেরা কোন্ শাস্ত্রীয় নাম নিয়েছিলেন?
১১ ১৯৩১ সালে ওহাইওর কলম্বাসের সম্মেলনে যিশাইয় ৪৩:১০-১২ পদের কথাগুলোকে ঠিক মতো বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বাইবেল ছাত্রদেরকে যিহোবার সাক্ষি নাম দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বরের নামকে জানানোর কত বড় এক সুযোগ আমাদের সকলের রয়েছে, যাতে অন্যরাও যিহোবার নামে ডেকে রক্ষা পেতে পারে!—গীতসংহিতা ৮৩:১৮, NW; রোমীয় ১০:১৩.
১২. ১৯৩৫ সালে বিরাট জনতার বিষয়ে কী জানানো হয়েছে?
১২ ১৯৩০ এর দশকের আগে ঈশ্বরের হাজার হাজার লোকেরা তাদের ভবিষ্যৎ আশা নিয়ে কিছুটা দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। কেউ কেউ স্বর্গে যাওয়ার আশা রাখতেন আবার বাইবেলে পরমদেশ পৃথিবীর কথা লেখা আছে দেখে পৃথিবীতেও থাকতে চাইতেন। ১৯৩৫ সালে ওয়াশিংটন ডি.সি.-র সম্মেলনে একটা দারুণ বিষয় বলা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল যে প্রকাশিত বাক্যের ৭ অধ্যায়ে যে বিস্তর লোক বা বিরাট জনতার কথা বলা আছে, তারা পরমদেশ পৃথিবীতে বাস করবে। তখন থেকে আরও জোরকদমে বিরাট জনতাকে সংগ্রহ করার কাজ এগিয়ে চলেছে। ‘বিস্তর লোকের’ বিষয়টা এখন আমাদের কাছে কোন গুপ্ত কিছু নয় জেনে কি আমরা কৃতজ্ঞ নই? সমস্ত জাতি, বংশ ও ভাষার লোকেদেরকে সংগ্রহ করা হচ্ছে জেনে আমরা যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আমাদের গতি আরও বাড়াতে পারি।
১৩. ১৯৪১ সালে সেন্ট লুইসের সম্মেলনে কোন্ বড় বিচার্য বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল?
১৩ যে বড় বিচার্য বিষয়টা নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি চিন্তিত, তা ১৯৪১ সালে মিশৌরির সেন্ট লুইসের সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছিল। সেটা হল, সারা পৃথিবীর ওপর যিহোবার শাসন করার অধিকার অথবা সার্বভৌমত্ব! এই বিচার্য বিষয়টার শীঘ্রিই মীমাংসা হওয়া দরকার এবং তা মীমাংসা করার জন্য এক মহৎ ও ভয়ানক দিন খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসছে! ঈশ্বরের প্রতি মানুষ কতটুকু বিশ্বস্ত, সেই সম্বন্ধে ১৯৪১ সালে আরেকটা বিচার্য বিষয়ের কথা বলা হয়েছিল, যেটা আমাদেরকে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ করে দেয় যে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে আমরা মেনে নিই কি না।
১৪. ১৯৫০ সালের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যিশাইয় ৩২:১, ২ পদে যে শাসনকর্তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে তাদের সম্বন্ধে কী জানা যায়?
১৪ ১৯৫০ সালে, নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যে, গীতসংহিতা ৪৫:১৬ পদে বলা শাসনকর্তারা আসলে কারা। সেই মুহূর্তটা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে যখন ভাই ফ্রেডরিক ফ্রাঞ্জ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে নতুন পৃথিবীর এই শাসনকর্তারা এখন আমাদের মাঝেই আছেন। সেই সম্মেলন ও এর পরের সম্মেলনগুলোতে অনেক অনেক আধ্যাত্মিক দীপ্তির ঝলক প্রকাশ করা হয়েছিল। (গীতসংহিতা ৯৭:১১) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে আমাদের পথ “প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়”!
আমাদের প্রচার কাজে এগিয়ে যাওয়া
১৫, ১৬. (ক) ১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকে আমরা প্রচার কাজে কীভাবে এগিয়ে গিয়েছিলাম? (খ) সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কোন্ প্রকাশনাগুলো প্রচার কাজে এক জোরালো ভূমিকা রেখেছে?
১৫ দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রধান কাজ অর্থাৎ রাজ্যের প্রচার ও শিষ্য তৈরির দিক দিয়ে সংগঠন সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। (মথি ২৮:১৯, ২০; মার্ক ১৩:১০) আমাদের সংগঠন আমাদেরকে সবসময় বলে চলেছে যে, এই কাজ ঠিক মতো করার জন্য বেশি করে প্রচার করা দরকার। ১৯২২ সালে সমস্ত খ্রীষ্টানকে প্রচারে বের হওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। প্রচার করে প্রত্যেকে তাদের দীপ্তিকে উজ্জ্বল করতে এবং সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারত কিন্তু এর জন্য কাউকে জোর করা হয়নি। (মথি ৫:১৪-১৬) ১৯২৭ সালে, প্রচারে যাওয়ার জন্য রবিবারকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যিহোবার সাক্ষিদেরকে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর রাস্তায় রাস্তায় প্রচার করতে দেখা যেত। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা লোকেদের প্রহরীদুর্গ এবং সান্ত্বনা (যেটা এখন সচেতন থাক!) পত্রিকাগুলো দিতেন।
১৬ ১৯৩৭ সালে মডেল স্টাডি নামে একটা পুস্তিকা বের করা হয় আর ওই পুস্তিকাতে বাইবেলের কথা শুনতে চান এমন লোকেদেরকে সত্য শেখানোর জন্য তাদের কাছে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এর পরের বছরগুলোতে আরও বেশি বাইবেল অধ্যয়ন করানোর জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল। আর এইজন্য ১৯৪৬ সালে “ঈশ্বর যেন সত্য হোন” (ইংরেজি) এবং ১৯৬৮ সালে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় বইগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল। আমরা এখন জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটা দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করাই। এই বইয়ের বিষয়বস্তু শিষ্য করার এক শক্ত ভিত তৈরি করে।
সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় রদবদলগুলোর সঙ্গে সঙ্গে চলা
১৭. যিশাইয় ৬০:১৭ পদের সঙ্গে মিল রেখে যিহোবার সংগঠন কীভাবে এগিয়ে গেছে?
১৭ তৃতীয়ত, সংগাঠনিক প্রক্রিয়ায় রদবদল করা হয়েছে আর এই দিক দিয়ে যিহোবার সংগঠন সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। যিশাইয় ৬০:১৭ পদে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি পিত্তলের পরিবর্ত্তে সুবর্ণ, এবং লৌহের পরিবর্ত্তে রৌপ্য আনিব, কাষ্ঠের পরিবর্ত্তে পিত্তল, ও প্রস্তরের পরিবর্ত্তে লৌহ আনিব; আর আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব।” এই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিল রেখে রাজ্যের প্রচার কাজকে আরও ভালভাবে দেখাশোনা করার ও পালের সদস্যদের যত্ন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৮, ১৯. বছরের পর বছর ধরে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় কী কী রদবদল করা হয়েছে?
১৮ ১৯১৯ সালে সোসাইটি প্রত্যেকটা মণ্ডলীতে একজন করে পরিচর্যা পরিচালক নিযুক্ত করেছিল, যাতে প্রচারের সঙ্গে জড়িত কাজগুলো তিনি দেখাশোনা করতে পারেন। এই নতুন ব্যবস্থার জন্য প্রচার কাজে বেশ উন্নতি হয়েছিল। ভোটের মাধ্যমে মণ্ডলীগুলোতে প্রাচীন ও ডিকনদের নিয়োগ করার গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ১৯৩২ সালে শেষ হয়ে যায়। ১৯৩৮ সালে আরেকটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল। সেই বছর থেকে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মতো করে মণ্ডলীতে সমস্ত পরিচারকদের নিযুক্ত করা শুরু হয়েছিল। (প্রেরিত ১৪:২৩; ১ তীমথিয় ৪:১৪) আর ১৯৭২ সালে, প্রথম শতাব্দীতে যেরকম যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষেরা মণ্ডলীতে সেবা করার সুযোগ পেতেন তেমনই যোগ্য পুরুষদের অধ্যক্ষ ও পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ফিলিপীয় ১:১ ও অন্যান্য শাস্ত্রপদগুলো থেকে বোঝা যায় যে শুধু একজন ব্যক্তিকে মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ নিযুক্ত না করে যারা অধ্যক্ষদের জন্য বাইবেলে দেওয়া গুণগুলো দেখান, তাদের নিয়ে প্রাচীন গোষ্ঠী গঠন করা যেতে পারে।—প্রেরিত ২০:২৮; ইফিষীয় ৪:১১, ১২.
১৯ সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের সংগঠনের কাজগুলো দেখাশোনা করার জন্য ১৯৭৫ সালে পরিচালক গোষ্ঠীর বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এছাড়া নির্দিষ্ট অঞ্চলের কাজ দেখাশোনা করার জন্য শাখা কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তখন থেকে প্রধান কার্যালয়ে এবং শাখা অফিসগুলোতে আরও সহজে কীভাবে কাজ করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো,” NW] চিনিতে পারা’ যায়। (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) খ্রীষ্টের অধীনে যে পালকেরা কাজ করেন তাদের শুধু প্রচার কাজে নেতৃত্ব দেওয়াই নয় কিন্তু মণ্ডলীতে শিক্ষা দেওয়া এবং ঈশ্বরের পালকে সঠিকভাবে দেখাশোনা করার দায়িত্বও রয়েছে।—১ তীমথিয় ৪:১৬; ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭; ১ পিতর ৫:২, ৩.
যীশুর সক্রিয় নেতৃত্ব
২০. যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য যীশুর পদ সম্বন্ধে আমাদের কী মেনে নেওয়া দরকার?
২০ যিহোবার এগিয়ে চলা সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আজকে আমাদের মেনে নিতে হবে যে, যীশু খ্রীষ্টকে ঈশ্বর “মণ্ডলীর মস্তক” হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। (ইফিষীয় ) এছাড়াও ৫:২২, ২৩যিশাইয় ৫৫:৪ পদে আমাদের বলা হয়েছে: “দেখ, আমি [যিহোবা] তাঁহাকে জাতিগণের সাক্ষীরূপে, জাতিগণের নায়ক ও আদেষ্টারূপে নিযুক্ত করিলাম।” যীশু জানেন যে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়। তিনি তাঁর মেষদের চেনেন এবং তারা কী করে না করে, তা তাঁর অজানা নয়। এশিয়া মাইনরের সাতটা মণ্ডলীর কাজকর্ম পরীক্ষা করার সময় তিনি পাঁচবার এই কথাগুলো বলেছিলেন: “আমি জানি তোমার কার্য্য সকল।” (প্রকাশিত বাক্য ২:২, ১৯; ৩:১, ৮, ১৫) এছাড়াও, যীশু তাঁর পিতা যিহোবার মতো জানেন যে আমাদের কী কী দরকার। আদর্শ প্রার্থনা বলার আগে যীশু বলেছিলেন: “তোমাদের কি কি প্রয়োজন, তাহা যাচ্ঞা করিবার পূর্ব্বে তোমাদের পিতা জানেন।”—মথি ৬:৮-১৩.
২১. খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে যীশুর নেতৃত্ব কীভাবে বোঝা যায়?
২১ যীশু যে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা কীভাবে বোঝা যায়? একটা উপায় হল ‘মনুষ্যদের মধ্যে নানা বর’ অর্থাৎ খ্রীষ্টান অধ্যক্ষদের মাধ্যমে যীশু নেতৃত্ব দিচ্ছেন। (ইফিষীয় ৪:৮) প্রকাশিত বাক্য ১:১৬ পদ বলে যে তারা যীশুর ডান হাতে অর্থাৎ তারা তাঁর অধীনে রয়েছেন। আজকে যীশু প্রাচীনদেরকে নির্দেশনা দেন, তা সেই ব্যক্তির স্বর্গীয় বা পার্থিব যে আশাই থাকুক না কেন। আগের প্রবন্ধে যেমন আলোচনা করা হয়েছে যে তারা শাস্ত্রে যে যোগ্যতাগুলোর কথা বলা আছে তার সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত হন। (১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৫-৯) প্রথম শতাব্দীতে যিরূশালেমের কিছু প্রাচীন ব্যক্তি পরিচালক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করেছিলেন আর তারা দিন দিন বেড়ে চলা প্রচার কাজ দেখাশোনা করতেন। আজকে যিহোবার সংগঠনে এই একই ব্যবস্থা মেনে চলা হয়।
সঙ্গে সঙ্গে চলুন!
২২. পরিচালক গোষ্ঠী কীভাবে সাহায্য করেন?
২২ পৃথিবীতে রাজ্যের কাজের ভার “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস”-কে দেওয়া হয়েছে, যাকে যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠী প্রতিনিধিত্ব করে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) পরিচালক গোষ্ঠী মূলত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও পরিচালনা দেওয়ার ব্যাপারে বেশি চিন্তিত। (প্রেরিত ৬:১-৬) কিন্তু, খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা যখন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েন তখন তাদেরকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার জন্য এবং তাদের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও কিংডম হল মেরামত করার জন্য পরিচালক গোষ্ঠী সঙ্গে সঙ্গে একটা বা তারও বেশি বৈধ সত্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এছাড়াও, খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা নির্যাতিত বা তাড়িত হলে তাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, “অসময়ে,” রাজ্যের প্রচার কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়।—২ তীমথিয় ৪:১, ২.
২৩, ২৪. তাঁর লোকেরা যে অবস্থাতেই পড়ুক না কেন, যিহোবা সবসময় কী জুগিয়ে যাচ্ছেন আর আমাদের কোন্ সংকল্প নেওয়া উচিত?
২৩ যিহোবার লোকেরা আজকে যে অবস্থাতেই পড়ুক না কেন, যিহোবা সবসময় আত্মিক খাদ্য ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জুগিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও, যে ভাইয়েরা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে যিহোবা জ্ঞান ও বুদ্ধি দেন, যাতে তারা ঈশ্বরের সংগঠনের আরও উন্নতি ও সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় যে সমস্ত রদবদল করা হবে তার জন্য আগে থেকে তৈরি হতে পারেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪:৯; ইফিষীয় ১:১৬, ১৭) শিষ্য তৈরির দায়িত্ব পূর্ণ করার এবং সারা পৃথিবীতে প্রচার কাজ করার জন্য আমাদের যা যা দরকার, তা যিহোবা অবশ্যই জুগিয়ে চলেন।—২ তীমথিয় ৪:৫.
২৪ আমরা পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারি যে যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদের কখনও ছেড়ে দেবেন না; তিনি আসন্ন “মহাক্লেশের” মধ্যে থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪; গীতসংহিতা ৯৪:১৪; ২ পিতর ২:৯) প্রথমে আমাদের যে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার সঠিক কারণ আমাদের রয়েছে। (ইব্রীয় ৩:১৪) তাই, আসুন আমরা সবাই যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য সংকল্প নিই।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• আমরা কেন বলতে পারি, যিহোবার সংগঠন সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে?
• কোন্ প্রমাণ আছে যে ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান দিন দিন বেড়ে চলেছে?
• খ্রীষ্টীয় প্রচার কাজে কীভাবে উন্নতি করা হয়েছে?
• যিহোবার দাসদের মধ্যে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় কোন্ কোন্ সময়োপযোগী রদবদল করা হয়েছে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
দায়ূদের মতো আমরাও যিহোবার সমস্ত আশ্চর্য কাজ গুণে শেষ করতে পারি না
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সময়োপযোগী রদবদলের কারণে ঈশ্বরের পাল উপকার পেয়েছে