সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে আমরা সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে পারি

যেভাবে আমরা সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে পারি

যেভাবে আমরা সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে পারি

 আধুনিক ডিকশনারিগুলোতে “সদ্‌গুণ” শব্দটার মানে দেওয়া আছে “নৈতিক উৎকর্ষ; ভাল গুণ।” এটা হল “সঠিক আচরণ এবং চিন্তাধারা; চরিত্রের ভাল গুণ।” একজন ডিকশনারি লেখক মারভিন আর. ভিনসেন্ট বলেন, ‘সদ্‌গুণের’ গ্রিক শব্দের আদি সাহিত্যিক অর্থ ছিল “যে কোন প্রকারের শ্রেষ্ঠত্ব।” তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে দূরদর্শিতা, সাহস, আত্মশাসন, ন্যায্যতা, করুণা, অধ্যবসায়, সততা, নম্রতা এবং নিষ্ঠাকে কখনও কখনও সদ্‌গুণ হিসেবে প্রশংসা করা হয়। ‘সদ্‌গুণকে’ “সঠিক মান অনুযায়ী চলা” হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কিন্তু আমরা কার উৎকর্ষতা, ভাল গুণ এবং সঠিক মান মেনে চলব? নিউজউইক পত্রিকা বলে, ‘নৈতিক দর্শনবিদ্যার সমর্থকদের মতে নবজাগরণের যুগ কোন্‌টা ঠিক আর কোন্‌টা ভুল তা পুরোপুরি ব্যক্তিগত রুচি, আবেগ বা সংস্কৃতির ওপর ছেড়ে দিয়েছে।’ কিন্তু কোন্‌টা ঠিক আর কোন্‌টা ভুল, তা বোঝার জন্য একজনের রুচি বা পছন্দই কি সব? না। সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে হলে কোন্‌টা ভাল ও কোন্‌টা মন্দ, তা বোঝার জন্য আমাদের নির্ভরযোগ্য একটা মানদণ্ডের দরকার যার সাহায্যে আমরা একটা কাজ, আচরণ অথবা গুণকে যাচাই করে দেখতে পারব।

নৈতিক মানের একমাত্র প্রকৃত উৎস

নৈতিক মানের একমাত্র প্রকৃত উৎস হলেন মানুষের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বর। প্রথম মানুষ আদমকে সৃষ্টি করার পরই যিহোবা তাকে এই আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) সেই গাছের আলাদা নাম দিয়ে যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে তার সৃষ্ট প্রাণীদের জন্য কোন্‌টা ভাল আর কোন্‌টা মন্দ, তা নির্ধারণ করার অধিকার শুধু তাঁরই আছে। কোন্‌টা ভাল আর কোন্‌টা মন্দ, তা বোঝার জন্য ঈশ্বরের মানই পরে একজন ব্যক্তির কাজ, দৃষ্টিভঙ্গি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিচার অথবা মূল্যায়ন করার ভিত্তি হয়েছিল। এই মান ছাড়া আমরা কখনও ঠিক করে বলতে পারব না যে, কোন্‌টা ঠিক আর কোন্‌টা ভুল।

সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক গাছের বিষয়ে আজ্ঞা দিয়ে আদম ও হবাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল যে তারা ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকবে নাকি অবাধ্য হবে। এই আজ্ঞা মেনে চলাই ছিল তাদের জন্য সদ্‌গুণ। পরে যিহোবা আরও জানিয়ে দিয়েছেন যে কী তাঁকে খুশি বা অখুশি করে এবং আমাদের জন্য সেগুলো তিনি বাইবেলেও লিখে রেখেছেন। তাই, সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে হলে বাইবেলে দেওয়া যিহোবার ধার্মিক মানগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে।

ঈশ্বরের মানগুলো পুরোপুরি জেনে নিন

যিহোবা যেহেতু কোন্‌টা ভাল এবং কোন্‌টা মন্দ তার মান ঠিক করে দিয়েছেন এবং বাইবেলেও তা প্রকাশ করেছেন, তাই সেগুলো কি আমাদের পুরোপুরি জেনে নেওয়া উচিত নয়? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।”—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.

উদাহরণ হিসেবে আগের প্রবন্ধে বলা কুনিহিতোর কথাই ধরুন, যিনি তার সংস্কৃতি অনুযায়ী নম্রতা দেখাতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝির মুখোমুখি হয়েছিলেন। পরে তিনি যখন বাইবেলের মানগুলো ভালভাবে জানতে পেরেছিলেন তখন তিনি আরও ভারসাম্য বজায় রেখে কথা বলতে শিখেছিলেন। বাইবেল নম্রতা দেখাতে উৎসাহিত করে কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অহংকার সম্বন্ধে সাবধান করে। (হিতোপদেশ ১১:২; মীখা ৬:৮) কিন্তু, “অধ্যক্ষপদের” যোগ্যতা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে পৌল সেই সুযোগের জন্য “আকাঙ্ক্ষী” হতে বলেছিলেন। (১ তীমথিয় ৩:১) এখানে “আকাঙ্ক্ষী” বলতে শুধু দম্ভ এবং অহংকার না করাই নয় কিন্তু অযথা কাউকে ছোট না করাকেও বোঝায়।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সৎ থাকার ব্যাপারে বাইবেল কী বলে? আজকের এই ব্যবসায়িক জগতে সরকারের নিয়মনীতি এবং করের ব্যাপারে সন্দেহজনক পদ্ধতি কাজে লাগানো বা ফাঁকি দেওয়া সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অন্যেরা যা-ই করুক না কেন, বাইবেলের মান আমাদেরকে “সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে” বলে। (ইব্রীয় ১৩:১৮) তাই মালিক, কর্মচারী, ক্রেতা এবং সরকারের প্রতি সৎ এবং নিরপেক্ষ থেকে আমরা সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে পারি। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৫:১৩-১৬; রোমীয় ১৩:১; তীত ২:৯, ১০) সততা আমাদের আস্থা ও সুনাম বাড়ায়। আর লিখিত চুক্তি ভুলবোঝাবুঝি এবং জটিলতাকে এড়াতে সাহায্য করে, যা কিনা ‘দৈবের’ কারণে ঘটতে পারে।—উপদেশক ৯:১১; যাকোব ৪:১৩, ১৪.

এছাড়াও, পোশাকআশাক ও সাজগোজের ব্যাপারেও আমাদের সদ্‌গুণ গড়ে তোলা দরকার। আমরা কোন্‌ পোশাক পরব, তা আমাদের সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে এবং আমরা হয়তো আধুনিক স্টাইল বা ফ্যাশনের পোশাক পরতে চাইতে পারি। কিন্তু, আমাদের কি এই নতুন নতুন ফ্যাশনের সব পোশাকই পরতে হবে? বাইবেল আমাদেরকে পরামর্শ দেয়, “এই যুগের অনুরূপ হইও না।” (রোমীয় ১২:২) কোন আইন তৈরি না করে বরং প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লিখেছিলেন: “নারীগণও সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য।” (১ তীমথিয় ২:৯, ১০) এই মৌলিক নীতিটা নারী-পুরুষ সবার বেলায়ই খাটে। এটা ঠিক যে, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিগত রুচির কারণে স্টাইলের মধ্যে পার্থক্য দেখা যেতে পারে।

এছাড়াও, যে অনৈতিক অভ্যাসগুলোকে ঈশ্বর স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন সেগুলো বাইবেলে বলা আছে। ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০ পদে আমরা এই সতর্কবাণী পড়ি: “তোমরা কি জান না যে, অধার্ম্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না? ভ্রান্ত হইও না; যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” এই পদটাই আগের প্রবন্ধে বলা মারিয়াকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে নৈতিক উৎকর্ষ সম্বন্ধে সৃষ্টিকর্তার মান অনুযায়ী ওয়ানের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক, তা অন্যায় এবং তিনি যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে চান, তাহলে তাকে সেখানেই সেই সম্পর্কের ইতি টানতে হবে। তাই, এটা পরিষ্কার যে সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে হলে যিহোবার মানগুলো সম্বন্ধে আমাদের খুব ভাল করে জানতে হবে।

হৃদয় দিয়ে শিখুন

সদ্‌গুণ বলতে শুধু যা খারাপ, তা এড়িয়ে চলাকেই বোঝায় না। এর নৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। একজন সদ্‌গুণ সম্পন্ন ব্যক্তির ভাল ভাল গুণ রয়েছে। একজন অধ্যাপক বলেন, ‘হৃদয় এবং মন দিয়ে সদ্‌গুণ শিখতে হবে।’ তাই, সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে হলে শুধু ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে ভাল করে জানার চেয়ে আরও বেশি কিছুর দরকার। এর জন্য বাইবেলে যা লেখা আছে, তা নিয়ে ধ্যান করা প্রয়োজন যেন আমাদের মন যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে যায় এবং বাইবেলে যা লেখা আছে, তা যেন আমরা আমাদের নিজেদের জীবনে কাজে লাগাই।

গীতরচক বলেছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।” (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) আর রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “আমি পূর্ব্বকালের দিন সকল স্মরণ করিতেছি, তোমার [ঈশ্বরের] সমস্ত কর্ম্ম ধ্যান করিতেছি, তোমার হস্তের কার্য্য আলোচনা করিতেছি।” (গীতসংহিতা ১৪৩:৫) বাইবেল এবং বাইবেল ভিত্তিক সাহিত্যাদি পড়ার সময় আমাদেরও প্রার্থনা এবং তা নিয়ে ধ্যান করা উচিত।

এটা ঠিক যে, ভালভাবে অধ্যয়ন ও তা নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় করে নেওয়া সত্যিই খুব কঠিন। কিন্তু, সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে চাইলে আমাদেরকে অন্যান্য কাজ থেকে সময় কিনে নিতে হবে। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) ২৪ বছর বয়স্ক আ্যরোন রোজ সকালে আগের চেয়ে ৩০ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠে এইভাবে সময় কিনে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন: “প্রথম প্রথম আমি পুরো আধ ঘন্টাই বাইবেল পড়তাম। কিন্তু, পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে ধ্যান করাও অনেক জরুরি। তাই, এখন আমি ১৫ মিনিট বাইবেল পড়ি এবং বাকি ১৫ মিনিট যা পড়েছি, তা নিয়ে ধ্যান করি। আর তা করে আমি সত্যিই অনেক উপকার পেয়েছি।” অন্য সময়েও ধ্যান করা যেতে পারে। যিহোবার উদ্দেশে একটা গানে দায়ূদ গেয়েছিলেন: “প্রহরে প্রহরে তোমার বিষয় ধ্যান করি।” (গীতসংহিতা ৬৩:৬) আর বাইবেল বলে: “ইস্‌হাক সন্ধ্যাকালে ধ্যান করিতে ক্ষেত্রে গিয়াছিলেন।”—আদিপুস্তক ২৪:৬৩.

সদ্‌গুণ গড়ে তোলার জন্য ধ্যান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা আমাদেরকে যিহোবার মতো করে ভাবতে এবং বিভিন্ন বিষয়কে তাঁর মতো করে দেখতে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মারিয়া জানতেন যে ঈশ্বর ব্যভিচার ঘৃণা করেন। কিন্তু ‘যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা করা এবং যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হওয়ার’ জন্য এই বিষয়ে বাইবেলের পদগুলো নিয়ে তার ধ্যান করার দরকার ছিল। (রোমীয় ১২:৯) কলসীয় ৩:৫ পদ পড়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তার পরিবর্তন করা দরকার, যেখানে আমাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, “আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভ।” মারিয়া নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘কোন্‌ ধরনের যৌন কামনা আমাকে শেষ করতে হবে? যে কাজগুলো অশুদ্ধ আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে, তা কেন আমাকে এড়িয়ে চলতে হবে? বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গে আমার আচরণে কি কোন পরিবর্তন করতে হবে?’

কোন একটা কাজের পরিণাম কী, তা নিয়ে চিন্তা করাও ধ্যানের মধ্যে পড়ে। পৌল খ্রীষ্টানদেরকে ব্যভিচার থেকে দূরে থাকতে এবং নিজেদেরকে সংযত করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে “কেহ যেন সীমা অতিক্রম করিয়া এই ব্যাপারে আপন ভ্রাতাকে না ঠকায়।” (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭) তাই, এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করা ভাল: ‘এই কাজ করলে আমি আমার নিজের, পরিবারের অথবা অন্যদের কী ক্ষতি করব? এতে করে আমার আধ্যাত্মিক, মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা কীভাবে প্রভাবিত হবে? প্রাচীনকালে যারা ঈশ্বরের আইন অমান্য করেছিলেন তাদের পরিণতি কী হয়েছিল?’ এই প্রশ্নগুলো চিন্তা করে মারিয়া হৃদয়কে দৃঢ় করতে পেরেছিলেন এবং আমাদের বেলায়ও তা হতে পারে।

উদাহরণগুলো থেকে শেখা

স্কুলে গিয়ে কি সদ্‌গুণ শেখা যায়? হাজার হাজার বছর ধরে এই প্রশ্নটা লোকেদেরকে ধাঁধার মধ্যে ফেলেছে। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো মনে করতেন যে স্কুলেই তা শেখা যায়। অন্যদিকে, আ্যরিস্টোটল যুক্তি দেখিয়েছেন যে অভ্যাসের মাধ্যমে সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে হয়। একজন সাংবাদিক এই বিতর্কের সারাংশ করেন এভাবে: “অল্প কথায় বলতে গেলে, একা একা সদ্‌গুণ অর্জন করা যায় না। অথবা কোন পাঠ্য বই থেকেও তা শেখা যায় না। যে সমাজে সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে উৎসাহ দেওয়া হয় এবং সদ্‌গুণের মূল্য দেওয়া হয় . . . সেখানে বাস করে ভাল প্রকৃতির হওয়া যায়।” কিন্তু, সদ্‌গুণের ব্যক্তিদেরকে আমরা কোথায় খুঁজব? যদিও বেশির ভাগ সংস্কৃতি সদ্‌গুণের উদাহরণ দিতে গিয়ে তাদের পৌরাণিক কাহিনীর বীরদের এবং গল্পকে তুলে ধরে কিন্তু বাইবেল আমাদেরকে অনেক সত্য উদাহরণ সম্বন্ধে জানায়।

সদ্‌গুণের সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ হলেন যিহোবা। তিনি সবসময় তাঁর কাজে সদ্‌গুণ দেখান এবং যা ন্যায্য ও ভাল তাই করেন। “ঈশ্বরের অনুকারী” হয়ে আমরাও সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে পারি। (ইফিষীয় ৫:১) আর ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট ‘আমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন করি।’ (১ পিতর ২:২১) এছাড়াও, বাইবেলে অনেক বিশ্বস্ত নারী ও পুরুষদের কথা বলা আছে যেমন, অব্রাহাম, সারা, যোষেফ, রূত, ইয়োব এবং দানিয়েল ও তার তিন ইব্রীয় বন্ধু। আর আজকের দিনেও ঈশ্বরের যে দাসেরা সদ্‌গুণ দেখিয়ে আমাদের সামনে উদাহরণ রেখেছেন তাদের কথা ভুলে যাবেন না।

আমরা সফল হতে পারি

ঈশ্বরের চোখে যা সৎ, তা করতে গিয়ে আমরা কি সত্যিই সফল হতে পারব? উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাপের কারণে কখনও কখনও আমাদের মনের সঙ্গে মাংসের অর্থাৎ সৎ কাজ করার ইচ্ছা এবং পাপপূর্ণ প্রবণতার মধ্যে হয়তো প্রচণ্ড লড়াই হতে পারে। (রোমীয় ৫:১২; ৭:১৩-২৩) কিন্তু, যিহোবার সাহায্যে আমরা সেই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারি। (রোমীয় ৭:২৪, ২৫) যিহোবা আমাদেরকে তাঁর বাক্য বাইবেল এবং বাইবেল ভিত্তিক সাহিত্যাদি জুগিয়ে যাচ্ছেন। মন দিয়ে বাইবেল পড়ে এবং প্রার্থনা সহকারে ধ্যান করে আমরা হৃদয়ে শুদ্ধ হতে পারব। আর এইরকম বিশুদ্ধ মন থেকে সৎ চিন্তা, কথা এবং কাজ বেরিয়ে আসতে পারে। (লূক ৬:৪৫) যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণ অনুকরণ করে আমরা ধার্মিক গুণাবলি গড়ে তুলতে পারব। এছাড়াও, আজকে যারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকেও আমরা শিখতে পারি।

প্রেরিত পৌল তার পাঠকদের সদ্‌গুণ এবং অন্যান্য প্রশংসাযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে ‘সবসময় আলোচনা করতে’ পরামর্শ দিয়েছেন। আর তা করলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে যিহোবার আশীর্বাদ আমরা পাবই পাব। (ফিলিপীয় ৪:৮, ৯) যিহোবার সাহায্যে আমরা সদ্‌গুণ গড়ে তুলতে সফল হব।

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ধ্যান করাকে আপনার বাইবেল অধ্যয়নের একটা অংশ করে তুলুন

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রীষ্ট যীশুকে অনুকরণ করে ধার্মিক গুণাবলি গড়ে তুলুন