সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সংগৃহীত লোকেরা সারা পৃথিবীতে তাঁর প্রশংসা করেন

যিহোবার সংগৃহীত লোকেরা সারা পৃথিবীতে তাঁর প্রশংসা করেন

যিহোবার সংগৃহীত লোকেরা সারা পৃথিবীতে তাঁর প্রশংসা করেন

“আমি জাতিগণকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিব, যেন তাহারা সকলেই সদাপ্রভুর নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে।”সফনিয় ৩:৯.

১. যিহূদা ও অন্যান্য জাতিগুলোর ওপর কেন ধ্বংসের খবর পূর্ণ হয়েছিল?

 যিহোবা সফনিয়কে কত জোরালো এক বিচারের খবর ঘোষণা করতে বলেছিলেন! যিহূদা ও এর রাজধানী যিরূশালেমের ওপর এই ধ্বংসের খবর পূর্ণ হয়েছিল কারণ ওখানকার নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ লোকেরা, কেউই যিহোবার ইচ্ছা মেনে চলেনি। আশেপাশের জাতিগুলো যেমন পলেষ্টীয়, মোয়াব ও অম্মোনও ঈশ্বরের ক্রোধের শিকার হয়েছিল। কেন? কারণ তারা কয়েকশ বছর ধরে যিহোবার লোকেদের ওপর নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করেছিল। ওই একই কারণে সেই সময়কার বিশ্বশক্তি অশূরও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

২. সফনিয় ৩:৮ পদের কথাগুলো কাদের উদ্দেশে বলা হয়েছিল?

কিন্তু, তখনও প্রাচীন যিহূদাতে কিছু ভাল লোক ছিলেন। ওই ব্যক্তিরা দুষ্টদের ওপর যিহোবার বিচারের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন এবং ওই লোকেদের উদ্দেশ করেই এই কথাগুলো বলা হয়েছিল: “সদাপ্রভু কহেন, তোমরা সেই দিন পর্য্যন্ত আমার অপেক্ষায় থাক, যে দিন আমি হরণ করিতে উঠিব; কেননা আমার বিচার এই; আমি জাতিগণকে সংগ্রহ করিয়া ও রাজ্য সকল একত্র করিয়া তাহাদের উপরে আমার ক্রোধ, আমার সমস্ত কোপাগ্নি ঢালিয়া দিব; বস্তুতঃ আমার অন্তর্জ্বালার তাপে সমস্ত পৃথিবী অগ্নিভক্ষিত হইবে।”—সফনিয় ৩:৮.

“বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” কাদের জন্য?

৩. সফনিয়কে যিহোবা কোন্‌ আশার খবর জানাতে বলেছিলেন?

হ্যাঁ, সফনিয় যিহোবার কাছ থেকে আসা ধ্বংসের খবর ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা ভাববাদীকে আশার খবরও জানাতে বলেছিলেন। যে লোকেরা যিহোবার প্রতি সবসময় বিশ্বস্ত ছিলেন, তাদেরকে এটা সান্ত্বনা দিয়েছিল। সফনিয় ৩:৯ পদে যিহোবা ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন: “তৎকালে আমি জাতিগণকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিব, যেন তাহারা সকলেই সদাপ্রভুর নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে।”

৪, ৫. (ক) অধার্মিকদের কী হবে? (খ) কারা এর থেকে আশীর্বাদ পেয়েছিলেন এবং কেন?

কিন্তু, সব লোকেদেরই বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দেওয়া হবে না। ভবিষ্যদ্বাণীতে তাদের সম্বন্ধে এই কথা বলা আছে: “আমি তোমার দর্পযুক্ত উল্লাসকারী লোকদিগকে তোমার মধ্য হইতে হরণ করিব।” (সফনিয় ৩:১১) অতএব, যে দাম্ভিক লোকেরা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে তুচ্ছ করেই যাবে এবং অন্যায় করেই চলবে, তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। কিন্তু এর থেকে কারা উপকার পাবেন? সফনিয় ৩:১২, ১৩ পদ বলে: “আমি [যিহোবা] তোমার মধ্যে দীনদুঃখী এক জাতিকে অবশিষ্ট রাখিব; তাহারা সদাপ্রভুর নামের শরণ লইবে। ইস্রায়েলের অবশিষ্ট লোক অন্যায় করিবে না, মিথ্যাকথা বলিবে না, এবং তাহাদের মুখে প্রতারক জিহ্বা থাকিবে না; বস্তুতঃ তাহারা চরিবে ও শয়ন করিবে, তাহাদিগকে ভয় দেখাইবার কেহ থাকিবে না।”

প্রাচীন যিহূদার অবশিষ্ট বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। কেন? কারণ তারা এই কথাগুলো মেনে চলেছিলেন: “হে দেশস্থ সমস্ত নম্র লোক, তাঁহার শাসন পালন করিয়াছ যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, ধর্ম্মের অনুশীলন কর, নম্রতার অনুশীলন কর; হয় ত সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তোমরা গুপ্তস্থানে রক্ষা পাইবে।”—সফনিয় ২:৩.

৬. সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম পরিপূর্ণতায় কী হয়েছিল?

সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম পরিপূর্ণতায়, ঈশ্বর সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলনীয় বিশ্বশক্তিকে যিহূদা রাজ্যকে আক্রমণ করতে দিয়ে ও এর লোকেদের বন্দি করে নিয়ে যেতে দিয়ে অবিশ্বস্ত যিহূদাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। যিরমিয় ও আরও কিছু লোক তখন রক্ষা পেয়েছিলেন এবং অন্যান্যরা বন্দি অবস্থায়ও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তারপর সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে রাজা কোরসের নেতৃত্বে মাদীয় ও পারসীক সাম্রাজ্য, বাবিলনকে আক্রমণ করেছিল। প্রায় দুবছর পর, রাজা কোরস যিহুদি অবশিষ্টাংশদের তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। পরে যিরূশালেমের মন্দিরকে আবার বানানো হয়েছিল এবং আবারও যাজকশ্রেণীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে তারা লোকেদেরকে ব্যবস্থা সম্বন্ধে শেখাতে পারেন। (মালাখি ২:৭) বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসা এই লোকেরা যতদিন পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন যিহোবা তাদেরকে আশীর্বাদ করেছিলেন।

৭, ৮. সফনিয় ৩:১৪-১৭ পদের ভবিষ্যদ্বাণীর কথাগুলো কাদের জন্য খাটে এবং আপনি কেন এইরকম মনে করেন?

বন্দিত্ব থেকে ফিরে এসে যারা যিহোবার আশীর্বাদ উপভোগ করবেন সেই লোকেদের বিষয়ে সফনিয় বলেছিলেন: “হে সিয়োন-কন্যা, আনন্দগান কর; হে ইস্রায়েল, জয়ধ্বনি কর; হে যিরূশালেম-কন্যা, আনন্দ কর, সর্ব্বান্তঃকরণে উল্লাস কর। সদাপ্রভু তোমার দণ্ড সকল দূর করিয়াছেন, তোমার শত্রুকে সরাইয়া দিয়াছেন; ইস্রায়েলের রাজা সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; তুমি আর অমঙ্গলের ভয় করিবে না। সেই দিন যিরূশালেমকে এই কথা বলা যাইবে, ভয় করিও না; হে সিয়োন, তোমার হস্ত শিথিল না হউক। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন, তিনি তোমার বিষয়ে পরম আনন্দ করিবেন; তিনি প্রেমভরে মৌনী হইবেন, আনন্দগান দ্বারা তোমার বিষয়ে উল্লাস করিবেন।”—সফনিয় ৩:১৪-১৭.

ভবিষ্যদ্বাণীর এই কথাগুলো সেই লোকেদের বেলায় পূর্ণ হয়েছিল, যারা বাবিলনীয়দের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে তাদের নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিলেন। সফনিয় ৩:১৮-২০ পদে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়, যেখানে আমরা পড়ি: “যাহারা পর্ব্ববিরহে খেদ করে, তাহাদিগকে আমি [যিহোবা] একত্র করিব; তাহারা তোমা হইতে উৎপন্ন, তাহারা ধিক্কারে ভারগ্রস্ত। দেখ, যে সকল লোক তোমাকে দুঃখ দেয়, সেই সময়ে আমি তাহাদের প্রতি যাহা করিবার, তাহা করিব; আর আমি খঞ্জাকে পরিত্রাণ করিব, ও দূরীকৃতাকে সংগ্রহ করিব; এবং যাহাদের লজ্জা সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপিয়াছে, আমি তাহাদিগকে প্রশংসার ও কীর্ত্তির পাত্র করিব। সেই সময়ে আমি তোমাদিগকে আনিব, সেই সময়ে তোমাদিগকে সংগ্রহ করিব; কারণ আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদিগকে কীর্ত্তির ও প্রশংসার পাত্র করিব; কেননা তখন আমি তোমাদের দৃষ্টিগোচরে তোমাদিগকে বন্দিদশা হইতে ফিরাইয়া আনিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন।”

৯. যিহূদার লোকেদের মাধ্যমে যিহোবা কীভাবে তাঁর নামকে মহিমান্বিত করেছিলেন?

এই কথা শুনে ঈশ্বরের লোকেদের শত্রুরা অর্থাৎ আশেপাশের জাতিগুলো কত বড় ধাক্কা খেয়েছিল, তা একটু ভেবে দেখুন! বাবিলনের বীর সৈন্যরা যখন যিহূদার লোকেদের বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল তখন মনে হয়েছিল যে যিহূদার লোকেরা বুঝি আর কখনোই নিজেদের দেশে ফিরে আসতে পারবে না। এছাড়াও, তাদের দেশ জনশূন্য অবস্থায় পড়ে ছিল। কিন্তু, ঈশ্বরের শক্তিতে তারা ৭০ বছর পরেই আবার নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিল, আশেপাশের শত্রু জাতিগুলো শত চেষ্টা করেও তাদেরকে ধ্বংস করতে পারেনি। ওই অবশিষ্ট বিশ্বস্ত লোকেদেরকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে এনে যিহোবা তাঁর নিজের নামকে কত মহিমান্বিতই না করেছিলেন! তিনি তাদেরকে “সমস্ত জাতির মধ্যে . . . কীর্ত্তির ও প্রশংসার পাত্র” করেছিলেন। এই পুনর্স্থাপন যিহোবার জন্য এবং যারা তাঁর নামে ডাকত তাদের জন্য কত প্রশংসা নিয়ে এসেছিল!

যিহোবার উপাসনা উচ্চীকৃত হয়েছিল

১০, ১১. সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে যে সংগ্রহ করার কথা বলা আছে তা বড় আকারে কখন পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল আর আমরা কীভাবে তা জানি?

১০ সাধারণ কালের প্রথম শতাব্দীতে যীশু খ্রীষ্ট যখন ইস্রায়েলের কিছু লোকেদের সত্য ধর্মে ফিরিয়ে এনেছিলেন, সেই সময় কিছু লোকেদের সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রথম শতাব্দীতে এই সংগ্রহ করার কাজ ভবিষ্যতে কী হবে তার পূর্বাভাস দিয়েছিল কারণ ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে লোকেদের সংগ্রহ করা হবে। মীখার ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিল: “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; তাহাতে জাতিগণ তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে।”—মীখা ৪:১.

১১ কিন্তু এটা কখন হবে? ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তা “শেষকালে” হবে—হ্যাঁ, এই ‘শেষ কালেই’ তা হওয়ার কথা। (২ তীমথিয় ৩:১) এই বর্তমান দুষ্ট জগৎ শেষ হয়ে যাওয়ার আগে এটা ঘটবে যখন লোকেরা মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করেই চলবে। মীখা ৪:৫ পদ বলে: “জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে।” কিন্তু সত্য উপাসকদের কথা কী বলা যায়? মীখার ভবিষ্যদ্বাণী উত্তর দেয়: “আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে চলিব।”

১২. এই শেষকালে সত্য ধর্ম কীভাবে উচ্চীকৃত হয়েছে?

১২ তাই, এই শেষকালে “সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত [হয়েছে]।” যিহোবার সত্য ধর্ম অন্য সমস্ত ধর্মের চেয়ে উচ্চীকৃত হয়েছে। মীখার ভবিষ্যদ্বাণী আরও বলেছিল, “জাতিগণ তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে।” আর যারা সত্য ধর্ম পালন করেন তারা “যুগে যুগে চিরকাল [তাহাদের] ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে চলিবে।”

১৩, ১৪. এই জগতে কখন ‘শেষকাল’ শুরু হয়েছে আর তখন থেকে সত্য উপাসনায় কী কী ঘটে চলেছে?

১৩ বাইবেলের যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে সেগুলো প্রমাণ দেয় যে ১৯১৪ সালে জগতে ‘শেষকাল’ শুরু হয়েছে। (মার্ক ১৩:৪-১০) ইতিহাস থেকে জানা যায় যে যিহোবা সত্য উপাসনার জন্য অভিষিক্ত ব্যক্তিদের বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশকে সংগ্রহ করতে শুরু করেন, যারা স্বর্গে যাবেন। এরপর তিনি “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক”-কে সংগ্রহ করতে শুরু করেন, যারা চিরকাল এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.

১৪ যারা যিহোবার নামে ডাকেন তাদের মাধ্যমে সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যিহোবার সত্য ধর্ম, তাঁর দেখানো পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র কয়েক হাজার যিহোবার সাক্ষি ছিলেন কিন্তু আজকে তা বেড়ে প্রায় ষাট লক্ষ। দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় প্রায় ৯১,০০০ মণ্ডলীতে একত্র হয়ে তারা যিহোবার উপাসনা করছেন। এই রাজ্যের ঘোষণাকারীরা প্রতি বছর একশ কোটিরও বেশি ঘন্টা প্রচার করে জনসাধারণ্যে ঈশ্বরের প্রশংসা করেন। কোন সন্দেহ নেই যে যিহোবার সাক্ষিরাই যীশুর বলা এই কথাগুলো পূর্ণ করছেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.

১৫. সফনিয় ২:৩ পদ আজকে কীভাবে পূর্ণ হচ্ছে?

১৫ সফনিয় ৩:১৭ পদ বলে: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন।” এই শেষকালে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ‘তাহাদের মধ্যবর্ত্তী’ বলে যিহোবার দাসেরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে এগিয়ে চলেছেন। সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে প্রাচীন যিহূদাকে পুনর্স্থাপন করার সময় যেমন এটা সত্য ছিল, তেমনই আজকে আমাদের দিনেও এটা সত্য। তাই আমাদের দিনে সফনিয় ২:৩ পদ কীভাবে বড় আকারে পূর্ণ হচ্ছে তা আমরা দেখছি, সেখানে বলা আছে: “হে দেশস্থ সমস্ত নম্র লোক, . . . তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে “সমস্ত” বলতে সেই অবশিষ্ট যিহুদিদেরকে বুঝিয়েছিল, যারা বাবিলনের বন্দিত্ব থেকে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু, আজকে সমস্ত লোক বলতে সারা পৃথিবীর সব জাতি থেকে আসা নম্র লোকেদের বোঝায়, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচার শুনে খুশি মনে ‘সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বতের দিকে’ স্রোতের ন্যায় এগিয়ে আসছেন।

সত্য উপাসনা এগিয়ে চলেছে

১৬. আমাদের সময়ে যিহোবার দাসদের বৃদ্ধি দেখে আমাদের শত্রুরা মনে মনে কী চিন্তা করে?

১৬ সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৭ সালে, ঈশ্বরের দাসেরা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে এসে যখন সত্য উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন তখন তা দেখে আশেপাশের জাতির লোকেরা অবাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, আজকের তুলনায় তখন তা ছোট আকারে পূর্ণ হয়েছিল। আজকে আমাদের সময়ে লোকেরা এমনকি ঈশ্বরের দাসদের শত্রুরা যখন দেখে যে যিহোবার দাসদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে, তাদের কাজ সফল হচ্ছে এবং যিহোবার সংগঠন সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে তখন তারা কী বলে, তা কি আপনি কল্পনা করতে পারেন? যীশুর কাছে লোকেরা একত্র হচ্ছিল দেখে ফরীশীরা যেমন মনে করেছিল, এখন ঈশ্বরের লোকেদের শত্রুরাও হয়তো তেমনটাই মনে করে। তারা বলেছিল: “দেখ, জগৎসংসার উহার পশ্চাদ্গামী হইয়াছে।”—যোহন ১২:১৯.

১৭. একজন লেখক যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে কী লিখেছিলেন আর তাদের কেমন বৃদ্ধি হয়েছে?

১৭ এরাও বিশ্বাস করে (ইংরেজি) বইয়ে অধ্যাপক চার্লস এস. ব্রেডেন বলেছিলেন: ‘যিহোবার সাক্ষিরা সত্যি সত্যিই সারা পৃথিবীতে প্রচার করে ফেলেছেন। এটা হলফ্‌ করে বলা যায় যে যিহোবার সাক্ষিরা ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন ধর্মীয় সংগঠন এতটা উৎসাহ নিয়ে ও জোরকদমে সুসমাচার প্রচার করেনি। আর তাদের এই কাজ শুধু সামনের দিকেই এগিয়ে যাবে।’ তিনি ঠিক কথাই বলেছিলেন! ৫০ বছর আগে তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন আর তখন সারা পৃথিবীতে মাত্র ৩,০০,০০০ সাক্ষি সুসমাচার প্রচার করতেন। আজকে সেই সংখ্যা প্রায় ষাট লক্ষ হয়েছে অর্থাৎ গত ৫০ বছর আগের চেয়ে এখন ২০ গুণ বেড়ে গেছে। এটা দেখলে তিনি কী বলতেন বলে আপনার মনে হয়?

১৮. বিশুদ্ধ ওষ্ঠ কী আর ঈশ্বর কাদেরকে তা দিয়েছেন?

১৮ তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি জাতিগণকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিব, যেন তাহারা সকলেই সদাপ্রভুর নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে।” (সফনিয় ৩:৯) এই শেষকালে, যিহোবার সাক্ষিরাই শুধু যিহোবার নামে ডাকেন, প্রেমের অটুট বন্ধনে তারা “একযোগে” তাঁকে সেবা করেন। শুধু তাদেরকেই যিহোবা বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিয়েছেন। বিশুদ্ধ ওষ্ঠ মানে ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো ঠিক মতো বোঝা। একমাত্র যিহোবাই তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তা বুঝতে সাহায্য করেন। (১ করিন্থীয় ২:১০) কাদেরকে যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা দেন? একমাত্র “আপন আজ্ঞাবহদিগকে” তিনি পবিত্র আত্মা দেন। (প্রেরিত ৫:৩২) একমাত্র যিহোবার সাক্ষিরাই ঈশ্বরকে সার্বভৌম শাসক হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করতে চান। সেইজন্যই ঈশ্বর তাদেরকে পবিত্র আত্মা দেন ও তারা বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলেন, যা হল যিহোবা ও তাঁর চমৎকার উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় সত্য। তারা যিহোবার প্রশংসা করার জন্য এই বিশুদ্ধ ওষ্ঠকে সারা পৃথিবীতে আরও বড় আকারে কাজে লাগান।

১৯. বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলা বলতে কী বোঝায়?

১৯ বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলা বলতে শুধু সত্য বিশ্বাস করা ও সেগুলো অন্যদের শেখানোই বোঝায় না কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরের ব্যবস্থা ও নীতি অনুযায়ী আচারব্যবহার করা বোঝায়। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা যিহোবার অন্বেষণ করায় ও বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তারা কী কী করেছেন তা একটু ভেবে দেখুন! যদিও এখন মাত্র ৮,৭০০ জনেরও কম অভিষিক্ত ব্যক্তিরা পৃথিবীতে আছেন কিন্তু আরও প্রায় ষাট লক্ষ লোকেরা যিহোবার অন্বেষণ করে ও বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলে তাদের মতো বিশ্বাস দেখিয়ে চলেছেন। এরা হলেন দিন দিন বেড়ে চলা বিরাট জনতা যারা সমস্ত জাতি থেকে আসেন, খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস করেন, ঈশ্বরের আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে পবিত্র সেবা করেন এবং এই দুষ্ট জগতের ওপর শীঘ্রিই যে ‘মহাক্লেশ’ আসতে চলেছে তার থেকে রক্ষা পাবেন।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪, ১৫.

২০. বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এবং বিরাট জনতার জন্য কী অপেক্ষা করছে?

২০ বিরাট জনতা ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে প্রবেশ করবেন। (২ পিতর ৩:১৩) যীশু খ্রীষ্ট এবং ১,৪৪,০০০ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যারা স্বর্গে পুনরুত্থিত হন তারা রাজা ও যাজক হিসেবে খ্রীষ্টের সঙ্গে কাজ করবেন এবং পৃথিবীর নতুন শাসন কাঠামো গড়ে তুলবেন। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭; প্রকাশিত বাক্য ৭:৪; ২০:৬) তারপর মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাওয়া ব্যক্তিরা পৃথিবীকে পরমদেশ বানানোর জন্য কাজ করবেন এবং ঈশ্বরের দেওয়া বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলে চলবেন। এইভাবে ভবিষ্যদ্বাণীর এই কথাগুলো তাদের বেলায় খাটবে: “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে। তুমি ধার্ম্মিকতায় স্থিরীকৃত হইবে।”—যিশাইয় ৫৪:১৩, ১৪.

ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিক্ষা দেওয়ার কাজ

২১, ২২. (ক) প্রেরিত ২৪:১৫ পদে যেমন বলা আছে, কাদের বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলা শেখাতে হবে? (খ) রাজ্য শাসনের অধীনে কোন্‌ নজিরবিহীন শিক্ষা দেওয়ার কাজ করা হবে?

২১ ওই নতুন জগতে আরও একটা বিরাট দলকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলতে শেখার সুযোগ দেওয়া হবে যাদের সম্বন্ধে প্রেরিত ২৪:১৫ পদ বলে: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” অতীতে কোটি কোটি লোকেরা যিহোবার সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান না নিয়েই মারা গেছেন। যিহোবা একে একে সেই ব্যক্তিদেরকে জীবন ফিরিয়ে দেবেন। আর সেই পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের সকলকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠে কথা বলা শেখাতে হবে।

২২ এত বড় শিক্ষা দেওয়ার কাজ করতে পারা কী বিরাট এক সুযোগই না হবে! সত্যিই, মানুষের ইতিহাসে এটা হবে সবচেয়ে বড় শিক্ষা কার্যক্রম আর এই কাজ যীশু খ্রীষ্ট যখন শাসন করবেন তখন করা হবে। ফলে, শেষ পর্যন্ত মানুষেরা যিশাইয় ১১:৯ পদের কথাগুলো পূর্ণ হতে দেখবে, যেখানে বলা আছে: “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”

২৩. কেন আপনি বলবেন যে যিহোবার লোক হিসেবে আমাদের এক বড় সুযোগ রয়েছে?

২৩ যখন যিহোবা বিষয়ক জ্ঞান সত্যি সত্যি সারা পৃথিবীকে পূর্ণ করবে তখন তা এক চমৎকার সময় হবে আর তার জন্য এই শেষ কালে আমরা তৈরি হতে পারছি, তা আমাদের জন্য কত বড় এক সুযোগ! আর ঈশ্বরের লোক হিসেবে আমাদের কত বড় সুযোগ যে আমরা সফনিয় ৩:২০ পদের কথাগুলো এখন পূর্ণ হতে দেখছি! সেখানে যিহোবা এই আশ্বাস দেন: “আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদিগকে কীর্ত্তির ও প্রশংসার পাত্র করিব।”

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• সফনিয় যে সংগ্রহ করার কাজের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল?

• আজকে এই শেষকালে সত্য উপাসনা কীভাবে এগিয়ে চলেছে?

• নতুন জগতে কোন্‌ বড় শিক্ষা দেওয়ার কাজ চলবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

সত্য উপাসনাকে আবার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যিহোবার লোকেরা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন। আপনি কি জানেন আজকে এর মানে কী?

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

‘বিশুদ্ধ ওষ্ঠে’ কথা বলে যিহোবার সাক্ষিরা লোকেদেরকে বাইবেলের সান্ত্বনাদায়ক বার্তা জানান