সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রকৃত সুখ যেভাবে পাওয়া যায়

প্রকৃত সুখ যেভাবে পাওয়া যায়

প্রকৃত সুখ যেভাবে পাওয়া যায়

 বৌদ্ধ ধর্মের একজন নেতা দলাইলামা বলেছিলেন: “আমি মনে করি যে, সুখ খোঁজাই হচ্ছে আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য।” এরপর তিনি বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন হৃদয় ও মনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং শাসন করে সুখ লাভ করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, “পরিপূর্ণ সুখ লাভ করার জন্য যা যা দরকার তার মধ্যে মনই হচ্ছে প্রধান হাতিয়ার।” তিনি মনে করেন এর জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। *

অন্যদিকে, যীশুর কথা বিবেচনা করুন। ঈশ্বরের ওপর তাঁর দৃঢ বিশ্বাস ছিল এবং তাঁর শিক্ষা শত শত বছর ধরে কোটি কোটি লোকের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। মানুষের সুখের বিষয়ে যীশু আগ্রহী ছিলেন। পাহাড়ে দেওয়া তাঁর বিখ্যাত উপদেশের শুরুতেই তিনি নয়টা বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যার শুরুতেই বলা ছিল: “ধন্য [“সুখী,” NW] . . .।” (মথি ৫:১-১২) সেই একই উপদেশে তিনি লোকেদেরকে তাদের হৃদয় ও মন পরীক্ষা করতে, পরিষ্কার রাখতে এবং শাসন করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। মন থেকে হিংস্রতা, অনৈতিক ও স্বার্থপর চিন্তাভাবনা দূর করে শান্তিপূর্ণ, পরিচ্ছন্ন আর প্রেমপূর্ণ চিন্তাভাবনা রাখতে বলেছিলেন। (মথি ৫:২১, ২২, ২৭, ২৮; ৬:১৯-২১) পরে তাঁরই একজন শিষ্য উৎসাহিত করেছিলেন যে ‘যাহা যাহা সত্য, আদরণীয়, ন্যায্য, বিশুদ্ধ, প্রীতিজনক, সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি হউক’ সেই সমস্ত বিষয় আমাদের “আলোচনা” করে যেতে হবে।—ফিলিপীয় ৪:৮.

যীশু জানতেন যে, সত্যিকারের সুখ পেতে হলে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে। মানুষকে একা থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি অর্থাৎ আমরা সহজাতভাবেই দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে চাই আর তাই আমরা যদি নিজেদেরকে আলাদা রাখি বা সবসময় অন্যদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করি, তাহলে আমরা সত্যিকারের সুখী হতে পারব না। যদি আমরা অনুভব করি যে অন্যেরা আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও যদি অন্যদেরকে ভালবাসি, তাহলেই আমরা সুখী হতে পারব। যীশু শিখিয়েছিলেন, এইধরনের প্রেমই হল ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার মূলসূত্র। আর বিশেষ করে এখানেই যীশুর শিক্ষার সঙ্গে দলাইলামার শিক্ষার পার্থক্য প্রকাশ পেয়েছে কারণ যীশু শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে মানুষ কখনোই সত্যিকারের সুখী হতে পারে না। কিন্তু কেন?—মথি ৪:৪; ২২:৩৭-৩৯.

আপনার আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করুন

পাহাড়ে দেওয়া উপদেশের একটা হল: “সুখী তারা যারা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন।” (মথি ৫:৩, NW) যীশু এটা কেন বলেছিলেন? কারণ পশুপাখিদের নয়, শুধুমাত্র আমাদেরকে আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে আর তাই আমরা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা তাঁর গুণাবলি যেমন, প্রেম, ন্যায়বিচার, করুণা এবং প্রজ্ঞা গড়ে তুলতে পারি। (আদিপুস্তক ১:২৭; মীখা ৬:৮; ১ যোহন ৪:৮) আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

আমরা কীভাবে এই আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারি? অতিপ্রাকৃত ধ্যান বা আত্মপরীক্ষার মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। বরং যীশু বলেছিলেন: “‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’” (মথি ৪:৪) লক্ষ্য করুন, যীশু বলেছিলেন যে আমাদের জীবনের জন্য জরুরি “প্রত্যেক বাক্য” ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে। কিছু প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র ঈশ্বরই আমাদেরকে দিতে পারেন। আজকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া সময়োপযোগী কারণ জীবনের উদ্দেশ্য ও সুখের উপায় সম্বন্ধে নানারকমের ধারণা জন্ম নিচ্ছে। বইয়ের দোকানে থরে থরে সাজানো বইগুলো পাঠকদের জন্য স্বাস্থ্য, সম্পদ আর সুখের প্রতিশ্রুতি দেয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমেও সুখ সম্বন্ধে তথ্য লাভের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু, এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে মানুষের চিন্তাভাবনার মধ্যে যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। এটা তাদেরকে তাদের স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোকে পূরণ করতে উৎসাহ দেয় বা অহংকারী করে তোলে। এই সমস্ত ধারণা সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে জন্ম নেয় এবং প্রায়ই মিথ্যা প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ পাওয়া যায় এমন বইয়ের লেখকদের কথা বলা যায়। দেখা যায় যে এই লেখকরা “বিবর্তনমূলক মনোবিদ্যা” তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই তত্ত্বে মনে করা হয় যে, মানুষের আবেগ-অনুভূতিগুলো তারা যে পশু থেকে এসেছে বলে মনে করা হয় তার কাছ থেকেই পাওয়া। যত চেষ্টাই করা হোক না কেন আসল কথাটা হল, সুখী হওয়ার চেষ্টা যদি এমন কোন তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে করা হয় যা সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে, তাহলে তা কখনোই সঠিক হতে পারে না এবং তা শেষ পর্যন্ত শুধু হতাশাই নিয়ে আসবে। তাই, প্রাচীনকালের একজন ভাববাদী বলেছিলেন: “জ্ঞানীরা লজ্জিত হইল . . . দেখ, তাহারা সদাপ্রভুর বাক্য অগ্রাহ্য করিয়াছে, তবে তাহাদের জ্ঞান কি প্রকার?”—যিরমিয় ৮:৯.

যিহোবা আমাদের গঠন জানেন এবং এও জানেন যে, কী আমাদেরকে সত্যিই সুখী করবে। কেন তিনি মানুষকে পৃথিবীতে রেখেছেন আর ভবিষ্যতে তাদের জন্য কী আছে সেটাও তিনি জানেন আর এই সবকিছুই তিনি বাইবেলের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়েছেন। তিনি তাঁর অনুপ্রাণীত বইতে যা লিখেছেন, তা আগ্রহী ব্যক্তিদের মনে ছাপ ফেলে আর তাই তারা সুখী হয়। (লূক ১০:২১; যোহন ৮:৩২) যীশুর দুজন শিষ্যের বেলায় এমনটাই ঘটেছিল। যীশুর মৃত্যুর পরে তারা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, পুনরুত্থিত যীশুর মুখ থেকে মানবজাতির পরিত্রাণ সম্বন্ধে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের মধ্যে তাঁর ভূমিকা সম্বন্ধে জানতে পেরে তারা বলেছিলেন: “পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সহিত কথা বলিতেছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিতেছিলেন, তখন আমাদের অন্তরে আমাদের চিত্ত কি উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল না?”—লূক ২৪:৩২.

আমরা যখন বাইবেলের সত্য অনুযায়ী জীবনযাপন করি তখন এইধরনের আনন্দ আরও বেড়ে যায়। এই প্রসঙ্গে সুখকে রংধনুর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বৃষ্টির পর যখন মেঘের আড়াল থেকে সূর্য উঁকি দেয় তখন রংধনু দেখা যায়। কিন্তু, মেঘ পুরোপুরি কেটে গিয়ে আকাশের গায়ে যখন ঝকঝকে সূর্যের আলো থাকে তখন এটাকে আরও স্পষ্ট দেখায় আর এমনকি দুটো রংধনু দেখা যায়। বাইবেলের শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে সুখকে আরও বাড়াতে পারি সেই বিষয়ে আসুন আমরা কিছু উদাহরণ লক্ষ্য করি।

আপনার জীবনকে সাদাসিধে রাখুন

প্রথমে, ধনসম্পদের বিষয়ে যীশুর পরামর্শ লক্ষ্য করুন। সম্পদের পিছনে হন্যে হয়ে ছোটাকে জীবনের প্রধান বিষয় না করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার পর তিনি এক অসাধারণ কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমার চক্ষু যদি সরল হয়, তবে তোমার সমস্ত শরীর দীপ্তিময় হইবে।” (মথি ৬:১৯-২২) তিনি আসলে বলেছিলেন যে আমরা যদি হন্যে হয়ে সম্পদ, ক্ষমতা অথবা জগতের লোকেদের মতো বিভিন্ন লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলি, তাহলে আমরা জীবনের বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হারাব। কারণ আরেকবার যীশু বলেছিলেন: “উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) আমরা যদি সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, পারিবারিক ব্যাপার এবং এই জাতীয় অন্যান্য বিষয়গুলোকে প্রথম রাখি, তাহলে আমাদের ‘চক্ষু সরল’ অর্থাৎ সুস্থির হবে।

তবে খেয়াল রাখুন যে, যীশু কোন কঠোর তপস্যার জীবনধারার কথা বলেননি। আর যীশু নিজেও সেইরকম জীবনযাপন করেননি। (মথি ১১:১৯; যোহন ২:১-১১) বরং তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন, যারা ধন সম্পদ অর্জন করাকেই জীবনের সবকিছু মনে করে তারা তাদের জীবন হারাবে।

যারা খুব তাড়াতাড়ি যথেষ্ট সম্পদশালী হয়েছিলেন তাদের কয়েকজনের কথা বলতে গিয়ে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর একজন মনোরোগ চিকিৎসক বলেছিলেন যে, তাদের জন্য টাকাপয়সাই হচ্ছে “মানসিক যন্ত্রণা ও রোগের মূল কারণ।” তিনি আরও বলেন, এই লোকেরা “দুটো-তিনটে বাড়ি, গাড়ি এবং নানারকমের জিনিসপত্র কিনে টাকাপয়সা খরচ করে। কিন্তু এগুলো যখন তাদের জন্য কিছুই আনে না [অর্থাৎ, তাদেরকে সুখী করে না] তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে, সবকিছুকেই অসার মনে করে আর তারা কী করবে সেই সম্বন্ধে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।” অন্যদিকে, জীবনকে সাদাসিধে রাখা ও আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখা সম্বন্ধে যীশুর পরামর্শে যারা মনোযোগ দেন, তারা প্রকৃত সুখ পান।

টম একজন নির্মাতা আর তিনি হাওয়াইয়ে থাকেন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দ্বীপগুলোতে তিনি উপাসনালয় নির্মাণ করতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই এলাকার লোকেদের এত বেশি টাকাপয়সা নেই। সেই সময় টম ওই নম্র লোকেদের মধ্যে কিছু বিষয় লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “এই দ্বীপগুলোর খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা সত্যিই সুখী ছিলেন। তারা আমাকে স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, টাকাপয়সা বা ধনসম্পত্তির মধ্যে সুখ লুকিয়ে নেই।” এছাড়া, সেই দ্বীপগুলোতে যে সব স্বেচ্ছাসেবকরা তার সঙ্গে কাজ করেছিলেন তাদেরও তিনি ভালভাবে লক্ষ্য করেছিলেন আর দেখেছিলেন যে, তারা অল্পতেই কত সন্তুষ্ট। টম বলেছিলেন, “তারা প্রচুর টাকাপয়সার মালিক হতে পারতেন। কিন্তু, তারা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখাকে বেছে নিয়েছেন আর সাদাসিধে জীবনযাপন করছেন।” এই ভাইবোনদের উদাহরণ টমের ওপর এতটাই প্রভাব ফেলে যে তিনি তার নিজের জীবনকে সাদাসিধে করেছিলেন, যাতে তিনি তার পরিবার ও আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আরও সময় দিতে পারেন। আর তার এইরকম সিদ্ধান্তের জন্য তাকে কখনও পস্তাতে হয়নি।

সুখ এবং আত্মমর্যাদাবোধ

সুখী হওয়ার জন্য আত্মমর্যাদাবোধ থাকাটা খুবই জরুরি। অসিদ্ধতা আর এর ফলে দুর্বলতা থাকায় নিজেদের সম্বন্ধে কারও কারও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং অনেকের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই এইধরনের অনুভূতি জন্ম নেয়। মনের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা এইধরনের অনুভূতি কাটিয়ে ওঠাকে হয়তো কঠিন মনে হতে পারে কিন্তু তা অসম্ভব নয়। বাইবেলের পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর মধ্যেই এর সমাধান রয়েছে।

আমাদের জন্য ঈশ্বরের অনুভূতি কেমন, তা বাইবেলে বলা আছে। অন্য যে কোন মানুষের এমনকি আমাদের নিজেদের চেয়েও ঈশ্বরের অনুভূতি কি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়? ঈশ্বর হলেন প্রেমের মূর্ত প্রতীক, তাই কোনরকম পক্ষপাত অথবা বিদ্বেষ ছাড়াই তিনি আমাদের প্রতি দৃষ্টি দেন। আমরা কেমন হতে পারি আর এখনইবা কেমন, তা তিনি দেখেন। (১ শমূয়েল ১৬:৭; ১ যোহন ৪:৮) যারা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চান, অসিদ্ধতা সত্ত্বেও তাদেরকে তিনি অত্যন্ত মূল্যবান হ্যাঁ, প্রীতির-পাত্র বলে মনে করেন।—দানিয়েল ৯:২৩; হগয় ২:৭.

তাই বলে ঈশ্বর আমাদের দুর্বলতা ও পাপগুলোকে উপেক্ষা করেন না। তিনি চান, যেটা ঠিক তা করার জন্য আমরা যেন কঠোর চেষ্টা করি আর যখন আমরা তা করি তখন তিনি আমাদের সাহায্য করেন। (লূক ১৩:২৪) এছাড়া, বাইবেল বলে: “পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন।” এটা আরও বলে: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে? কিন্তু তোমার কাছে ক্ষমা আছে, যেন লোকে তোমাকে ভয় করে।”—গীতসংহিতা ১০৩:১৩; ১৩০:৩, ৪.

অতএব, ঈশ্বর আপনাকে যেভাবে দেখেন সেভাবে নিজেকে দেখতে শিখুন। মনে রাখবেন, যারা যিহোবাকে ভালবাসেন তারা নিজেদেরকে অযোগ্য মনে করলেও যিহোবা তাদেরকে প্রীতির-পাত্র বলে মনে করেন এবং তাদের ওপর তাঁর আস্থা আছে এটা জানা একজন ব্যক্তিকে সুখী করতে পারে।—১ যোহন ৩:১৯, ২০.

সুখী হওয়ার জন্য প্রত্যাশা থাকা খুবই জরুরি

সম্প্রতি, ইতিবাচক মনস্তত্ত্ব বলে একটা ধারণা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা বলে যে, সবসময় ইতিবাচক চিন্তা এবং নিজের কর্মক্ষমতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে আশাবাদী মনোভাব রাখা একজনকে সুখী করতে পারে। জীবন এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি যে আমাদের সুখকে বাড়ায়, তা খুব কম লোকই অস্বীকার করবেন। কিন্তু, এইরকম আশাবাদ অবশ্যই সত্যের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে, কারও মনগড়া চিন্তার ওপর নয়। এছাড়া, কোন আশাবাদ বা ভাল চিন্তাই যুদ্ধ, ক্ষুধা, রোগব্যাধি, দূষণ, বার্ধক্য, অসুস্থতা বা মৃত্যুকে দূর করতে পারবে না আর এগুলোই অনেকের সুখ কেড়ে নেয়। তাই, ওই আশাবাদের ধারণা এর নিজস্ব জায়গাতেই রয়ে গেছে।

কিন্তু আগ্রহের বিষয় হল, বাইবেল আশাবাদ শব্দটা ব্যবহার করে না বরং আরও জোরালো এক শব্দ ব্যবহার করে আর তা হল প্রত্যাশা। ভাইনস্‌ কমপ্লিট এক্সপজিটরি ডিকশনারি “প্রত্যাশা” শব্দকে “উপকারী ও নিশ্চিত প্রতীক্ষা, . . . ভাল কিছুর জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করা” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে আর বাইবেলে প্রত্যাশা শব্দটাকে এই অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। বাইবেলে প্রত্যাশা বলতে শুধু কোন পরিস্থিতির প্রতি আশাবাদী মনোভাব রাখাই বোঝায় না। এটা বলতে এমন কোন বিষয়কে বোঝায় যেটার ওপর একজনের প্রত্যাশা অটল থাকে। (ইফিষীয় ৪:৪; ১ পিতর ১:৩) উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে খ্রীষ্টানদের প্রত্যাশা হল, আগের অনুচ্ছেদে বলা সমস্ত খারাপ বিষয়গুলো শীঘ্রিই দূর হয়ে যাবে। (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১, ২৯) কিন্তু, এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িত।

খ্রীষ্টানরা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছেন যখন বিশ্বস্ত মানুষেরা পরমদেশ পৃথিবীতে সিদ্ধ জীবন লাভ করবে। (লূক ২৩:৪২, ৪৩) প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদ সেই প্রত্যাশাকে আরও বাড়িয়ে দেয়, যেখানে বলা আছে: “দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; . . . আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”

এমনকি একজনের বর্তমান অবস্থা তিনি যতটা চান ততটা ভাল না হলেও যিনি এইরকম ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করেন, তার সুখী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। (যাকোব ১:১২) তাই, বাইবেলকে পরীক্ষা করুন এবং দেখুন যে কেন আপনি তা বিশ্বাস করতে পারেন। প্রত্যেকদিন বাইবেল পড়ে আপনার প্রত্যাশাকে দৃঢ় করুন। আর তা করা আপনাকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করবে এবং যে বিষয়গুলো লোকেদের সুখ কেড়ে নেয়, তা পরিহার করতে সাহায্য করবে ও আপনি পরিতৃপ্তি লাভ করবেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ লুকিয়ে আছে। (উপদেশক ১২:১৩) বাইবেলের নীতিগুলো মেনে জীবনযাপন করলে সুখী হওয়া যায় কারণ যীশু বলেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” NW] তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে।”—লূক ১১:২৮.

[পাদটীকা]

^ বৌদ্ধ ধর্মের লোকেদের জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক নয়।

[৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ধনসম্পত্তি অর্জন করে, নিজেকে আলাদা রেখে অথবা মানুষের সীমিত জ্ঞানের ওপর আস্থা রেখে সুখ খুঁজে পাওয়া যাবে না

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের বাক্য পালন করে জীবনযাপন করলে সুখী হওয়া যায়

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রীষ্টীয় প্রত্যাশা একজন ব্যক্তিকে সুখী করে