সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সিরিল এবং মেথোডিয়াস বাইবেলের যে অনুবাদকেরা একটা ভাষার বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিলেন

সিরিল এবং মেথোডিয়াস বাইবেলের যে অনুবাদকেরা একটা ভাষার বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিলেন

সিরিল এবং মেথোডিয়াস বাইবেলের যে অনুবাদকেরা একটা ভাষার বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিলেন

“আমাদের জাতি খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষা নিয়েছে কিন্তু তবুও আমাদের এখানে কোন শিক্ষক নেই। আমরা গ্রিক বা ল্যাটিন কোন ভাষাই বুঝি না। . . . আমরা কোন অক্ষর চিনি না বা সেগুলোর অর্থও বুঝি না; তাই শাস্ত্রের কথাগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে শিক্ষকদের পাঠান।” —রোসটিস্লাভ, মোরাভিয়ার যুবরাজ, সা.কা. ৮৬২ সাল।

আজকে ৪৩ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি লোকেরা স্লাভিক ভাষাগুলোতে কথা বলে আর তাদের নিজেদের ভাষায় অনূদিত বাইবেল পড়ে। * তাদের মধ্যে ৩৬ কোটি লোক স্লাভ বর্ণমালা ব্যবহার করে। কিন্তু, বারশ বছর আগে তাদের পূর্বপুরুষরা যে সমস্ত আঞ্চলিক ভাষাগুলোতে কথা বলতেন, সেগুলোর লেখ্যরূপ বা বর্ণমালা কোনটাই ছিল না। সিরিল ও মেথোডিয়াস নামে আপন দুই ভাই এই সমস্যাটার সমাধান করতে সাহায্য করেছিলেন। যে লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালবাসেন তারা দেখতে পাবেন যে এই দুই ভাইয়ের নির্ভীক ও নতুন ধারা প্রবর্তনের প্রচেষ্টা বাইবেল সংরক্ষণ ও উৎপাদন বাড়ানোর ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা করেছে। কিন্তু, এরা কারা আর তারা কোন্‌ বাধাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন?

“দার্শনিক” এবং গভর্নর

সিরিল (সা.কা. ৮২৭-৮৬৯, আসল নাম কনস্টানটিন) এবং মেথোডিয়াস (সা.কা. ৮২৫-৮৮৫) গ্রিসের থিষলনীকীর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন। থিষলনীকীর লোকেরা তখন গ্রিক ও স্লাভিক এই দুই ভাষায় কথা বলত। ওই শহরে প্রচুর স্লাভভাষী লোক ছিল এবং স্লাভ ও গ্রিকভাষী লোকেদের মধ্যে উঠাবসা ছিল আর আশেপাশের অনেক এলাকায় স্লাভভাষী লোকেরা দল বেঁধে থাকত। এই কারণেই হয়তো সিরিল ও মেথোডিয়াস দক্ষিণাঞ্চলের স্লাভিক ভাষার ওপর এত গভীর জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর মেথোডিয়াসের জীবনী লিখেছেন এমন একজন লেখক বলেছিলেন যে তাদের মা স্লাভিক ভাষায় কথা বলতেন।

বাবার মৃত্যুর পর সিরিল, বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনোপলে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি রাজকীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন এবং বিশিষ্ট শিক্ষকদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি প্রাচ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত গির্জা হাগিয়া সোফিয়ার লাইব্রেরিয়ান হয়েছিলেন আর পরে দর্শনবিদ্যার অধ্যাপক হয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার জন্য সিরিলকে দার্শনিক নাম দেওয়া হয়।

এর মধ্যে মেথোডিয়াস তার বাবার পেশা বেছে নেন অর্থাৎ রাজনৈতিক শাসক হন। তিনি বাইজেনটাইন জেলার সীমান্তের একটা এলাকার আরকন (গভর্নর) নিযুক্ত হন, যেখানে অনেক স্লাভভাষী লোকেরা বাস করত। কিন্তু, তিনি এশিয়া মাইনরের বিথেনিয়ার একটা মঠে চলে যান। পরে সা.কা. ৮৫৫ সালে সিরিল তার কাছে চলে আসেন।

সাধারণ কাল ৮৬০ সালে কনস্টানটিনোপলের বিশপ দুই ভাইকে বিদেশে একটা দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তিনি তাদেরকে কৃষ্ণ সাগরের উত্তর-পূর্ব তীরে বসবাসরত কাজার গোত্রের লোকেদের কাছে পাঠান, যারা তখনও ইসলাম, যিহুদি ও খ্রীষ্টধর্মের মধ্যে কোন্‌টা বেছে নেবেন, তা নিয়ে দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। সেখানে যাবার পথে কিছু সময়ের জন্য সিরিল ক্রাইমিয়ার কারসেনিজে থাকেন। কিছু পণ্ডিতরা মনে করেন যে এখানেই তিনি ইব্রীয় ও শমরীয় ভাষা শিখেছিলেন এবং কাজার গোত্রের লোকেদের ভাষায় ইব্রীয় ব্যাকরণ অনুবাদ করেছিলেন।

মোরাভিয়া থেকে ডাক আসে

সাধারণ কাল ৮৬২ সালে মোরাভিয়ার (আজকের দিনে পূর্ব চেকিয়া, পশ্চিম স্লোভাকিয়া এবং পশ্চিম হাঙ্গেরি) যুবরাজ রোসটিস্লাভ, বাইজেনটাইনের সম্রাট মাইকেল ৩য় এর কাছে একটা অনুরোধ করে পাঠান, যা একেবারে শুরুতে বলা হয়েছে। তিনি শাস্ত্রে অভিজ্ঞ কিছু শিক্ষকদের পাঠাতে অনুরোধ করেন। মোরাভিয়াতে ইতিমধ্যেই ফ্রাংকিশ রাজ্য (এখন জার্মানি ও অস্ট্রিয়া) থেকে মিশনারিরা এসেছিলেন আর তাই মোরাভিয়ার স্লাভভাষী অধিবাসীরা তাদের কাছ থেকে গির্জার শিক্ষাগুলো জেনেছিলেন। কিন্তু, এই লোকেদের ওপর জার্মানির উপজাতিগুলোর রাজনৈতিক ও গির্জার প্রভাব সম্বন্ধে রোসটিস্লাভ চিন্তিত ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন যে কনস্টানটিনোপলের সঙ্গে ধর্মীয় বন্ধন তার জাতিকে অন্য জাতির রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব থেকে স্বাধীন রাখবে।

তাই, মেথোডিয়াস ও সিরিলকে সম্রাট মোরাভিয়াতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। জ্ঞান, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ভাষার দিক দিয়ে পারদর্শী দুই ভাই এই কাজ করার জন্য একেবারে উপযুক্ত ছিলেন। নবম শতাব্দীর একজন জীবনী লেখক আমাদেরকে বলেন যে, তাদেরকে মোরাভিয়ায় পাঠানোর ব্যাপারে সম্রাট যুক্তি দেখিয়েছিলেন: “আপনারা দুজনেই থিষলনীকীর লোক আর থিষলনীকীর সবাই শুদ্ধ স্লাভ ভাষায় কথা বলে।”

স্লাভ ভাষার বর্ণমালার উৎপত্তি ও বাইবেল অনুবাদ

মোরাভিয়ায় রওনা হওয়ার কয়েক মাস আগে সিরিল তার কাজের জন্য প্রস্তুতি নেন ও স্লাভ ভাষার জন্য লিখিত মুদ্রাক্ষর প্রস্তুত করেন। কথিত আছে যে তিনি বিভিন্ন শব্দের উচ্চারণ শোনায় খুবই পারদর্শী ছিলেন। তাই, গ্রিক ও ইব্রীয় অক্ষর ব্যবহার করে তিনি স্লাভনিক ভাষার প্রত্যেকটা উচ্চারণের জন্য একটা করে অক্ষর তৈরি করেছিলেন। * কিছু গবেষকরা মনে করেন যে, এই বর্ণমালার ভিত তৈরি করার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বছর সময় নিয়েছিলেন। আর সিরিল যে বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিলেন সেগুলোর সঠিক রূপ নিয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে।—“সিরিলিক অথবা গ্ল্যাগোলিটিক?” বাক্সটা দেখুন।

একই সময়ে বাইবেল অনুবাদ দ্রুতগতিতে করার জন্য সিরিল এক কার্যক্রম চালু করেছিলেন। পরম্পরাগত রীতি অনুসারে, নতুন তৈরি বর্ণমালা ব্যবহার করে তিনি যোহনের সুসমাচারের প্রথম বাক্যাংশটা গ্রিক থেকে স্লাভনিক ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন: “আদিতে বাক্য ছিলেন . . .।” সিরিল চারটে সুসমাচার, পৌলের চিঠিগুলো এবং গীতসংহিতা বই অনুবাদ করেছিলেন।

তিনি কি একাই তা করেছিলেন? খুব সম্ভবত মেথোডিয়াস তার কাজে সাহায্য করেছিলেন। এছাড়াও, কেমব্রিজ মধ্যযুগের ইতিহাস (ইংরেজি) বইটা বলে: “খুব সম্ভবত অন্যরা [সিরিলকে] সাহায্য করেছিলেন। আর নিশ্চয়ই স্লাভিক লোকেরা যারা গ্রিক ভাষায় পড়াশোনা করেছেন তারা তাকে সাহায্য করেছিলেন। আমরা যদি পুরনো অনুবাদগুলো পরীক্ষা করে দেখি, . . . তাহলে আমরা জোরালো প্রমাণ পাই যে উচ্চমানের স্লাভনিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে আর এর থেকেই বোঝা যায় যে, যারা তাকে সাহায্য করেছিলেন তারা নিশ্চয়ই স্লাভভাষী ছিলেন।” বাইবেলের বাকি অংশ মেথোডিয়াস অনুবাদ করেছিলেন, যা আমরা এখন দেখব।

“বাজপাখি দেখলে রুক পাখিরা যেমন দল বেঁধে” আক্রমণ করে

সাধারণ কাল ৮৬৩ সালে সিরিল ও মেথোডিয়াস মোরাভিয়াতে তাদের কাজ শুরু করেছিলেন আর সেখানকার লোকেরা তাদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। বাইবেলের এবং গির্জার গণপ্রার্থনা অনুবাদ করা ছাড়াও সেখানকার এক দল লোকেদেরকে নতুন উদ্ভাবিত স্লাভনিক বর্ণমালা শেখানোও তাদের কাজ ছিল।

কিন্তু, এই কাজ এত সহজ ছিল না। স্লাভনিক ভাষা ব্যবহার করায় মোরাভিয়ার ফ্রাংকিশ যাজকরা তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। তারা তিন ভাষা সম্বলিত একটা তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। তারা মনে করতেন যে উপাসনার জন্য শুধু ল্যাটিন, গ্রিক ও ইব্রীয় ভাষা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু সিরিল ও মেথোডিয়াস তাদের উদ্ভাবিত নতুন লেখ্য ভাষায় পোপের সমর্থন পাওয়ার জন্য সা.কা. ৮৬৭ সালে রোমের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

রোমে যাবার পথে, ভেনিসে তিন ভাষার মতবাদে বিশ্বাসী এক দল ল্যাটিন যাজকদের সঙ্গে সিরিল ও মেথোডিয়াসের দেখা হয়। মধ্যযুগের একজন লেখক যিনি সিরিলের জীবনী লিখেছেন তার কাছ থেকে জানা যায় “বাজপাখি দেখলে রুক পাখিরা যেমন দল বেঁধে” আক্রমণ করে, সেখানকার বিশপ, যাজক ও পাদরিরা তাদের ওপর ঠিক সেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেই বর্ণনা অনুসারে, ১ করিন্থীয় ১৪:৮, ৯ পদের কথা উল্লেখ করে সিরিল তাদেরকে সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন: “বস্তুতঃ তূরীর ধ্বনি যদি অস্পষ্ট হয়, তবে কে যুদ্ধের জন্য সুসজ্জ হইবে? তেমনি তোমরা যদি জিহ্বা দ্বারা, যাহা সহজে বুঝা যায়, এমন কথা না বল, তবে কি বলা হইতেছে, তাহা কিসে জানা যাইবে? বরঞ্চ তোমাদের কথা আকাশকেই বলা হইবে।”

শেষ পর্যন্ত দুভাই যখন রোমে গিয়ে পৌঁছান, তখন পোপ আদ্রিয়ান ২য় তাদেরকে স্লাভনিক ভাষা ব্যবহার করার অনুমতি দেন। আর কয়েক মাস পর রোমে থাকতেই সিরিল খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুমাসেরও কম সময়ের মধ্যে মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

মেথোডিয়াসকে পোপ আদ্রিয়ান ২য় মোরাভিয়ায় ও নিট্রা শহর, যেটা এখন স্লোভাকিয়া সেখানে গিয়ে কাজ করার জন্য উৎসাহ দেন। পোপ ওই এলাকায় তার প্রভাব আরও জোরালো করার জন্য মেথোডিয়াসকে স্লাভনিক ভাষা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে চিঠি পাঠান এবং তাকে ওখানকার আর্চবিশপ নিযুক্ত করেন। কিন্তু, সা.কা. ৮৭০ সালে নিট্রার রাজকুমার স্ভাটোপ্লাকের সাহায্যে ফ্রাংকিশ বিশপ হারমেনরিক, মেথোডিয়াসকে গ্রেপ্তার করেন। দক্ষিণপূর্ব জার্মানির এক মঠে তাকে প্রায় আড়াই বছর আটকে রাখা হয়। পোপ আদ্রিয়ান ২য় এর পরে পোপ জন ৮ম এসে মেথোডিয়াসকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন, আবার তাকে আগের এলাকার বিশপ হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং উপাসনায় স্লাভনিক ভাষা ব্যবহার করার অনুমতি দেন ও সবাইকে তা জানিয়ে দেন।

কিন্তু, ফ্রাংকিশ যাজকদের কাছ থেকে বিরোধিতা আসতেই থাকে। মেথোডিয়াস তার বিরুদ্ধে আনা যাজকদের অভিযোগগুলোকে খণ্ডন করে সফলভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন ও শেষ পর্যন্ত পোপ জন ৮ম এর মুদ্রাঙ্কিত নির্দেশপত্রও লাভ করেন, যাতে লেখা ছিল যে গির্জায় স্লাভনিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে। বর্তমান পোপ জন পল ২য় স্বীকার করেছেন যে মেথোডিয়াস অনেক জায়গায় “ভ্রমণ করেছেন, অনেক অভাবে পড়েছেন, দুঃখকষ্ট, শত্রুতা ও তাড়নার মুখোমুখি হয়েছেন, . . . এমনকি নিষ্ঠুর কারাবরণও করেছেন।” আর দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, রোমকে সমর্থন করেন এমন অনেক বিশপ ও যুবরাজরা তাকে অত্যাচার করেছেন।

পুরো বাইবেল অনুবাদ করা হয়

প্রচণ্ড বাধা সত্ত্বেও, কয়েকজন শর্টহ্যান্ড লেখকের সাহায্যে মেথোডিয়াস বাইবেলের বাকি অংশ স্লাভনিক ভাষায় অনুবাদ করেন। কথিত আছে যে, মাত্র আট মাসের মধ্যেই তিনি এত বড় কাজ শেষ করে ফেলেন। কিন্তু, ম্যাকাবিদের লেখা যে বইগুলো নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সেগুলো তিনি অনুবাদ করেননি।

সিরিল ও মেথোডিয়াসের অনুবাদের গুণগত মান একেবারে নিখুঁতভাবে যাচাই করা আজকে সম্ভব না। তারা যে সময়ে অনুবাদ করেছিলেন সেই সময়ের মাত্র কয়েকটা পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি আজকে রয়েছে। আগের ওই অসাধারণ নমুনাগুলো পরীক্ষা করে ভাষাবিদরা লক্ষ্য করেছেন যে, ওই অনুবাদটা সঠিক ছিল ও তাতে স্বাভাবিক ও সহজ সরল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল। আমাদের স্লাভিক বাইবেল (ইংরেজি) বলে যে, দুই ভাইকে “অনেক নতুন নতুন শব্দ ও অভিব্যক্তি সৃষ্টি করতে হয়েছিল। . . . আর অবাক হওয়ার মতো বিষয় হল যে তারা নিখুঁতভাবে সমস্ত কাজ করেছিলেন [এবং] স্লাভিক ভাষার অভিধানে অনেক অনেক শব্দ উপহার দিয়েছেন।”

স্থায়ী উত্তরাধিকার

সাধারণ কাল ৮৮৫ সালে মেথোডিয়াস মারা যাবার পর ফ্রাংকিশ বিরোধীরা তার শিষ্যদের মোরাভিয়া থেকে বের করে দিয়েছিল। তারা বোহেমিয়া, দক্ষিণ পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়াতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এভাবেই সিরিল ও মেথোডিয়াসের কাজ বন্ধ না হয়ে বরং চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। যে স্লাভনিক ভাষাকে দুভাই লেখ্য ও আরও স্থায়ী এক রূপ দিয়েছিলেন, তা অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, আরও উন্নত হয় এবং পরে এর থেকে আরও অনেক ভাষা হয়। আজকে, স্লাভিক গোত্রে প্রায় ১৩টা আলাদা আলাদা ভাষা ও অনেক আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে।

এছাড়া, বাইবেল অনুবাদের জন্য সিরিল ও মেথোডিয়াসের নির্ভীক প্রচেষ্টার জন্যই আজকে স্লাভিক গোত্রের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত বাইবেল পাওয়া যাচ্ছে। যে লক্ষ লক্ষ লোকেরা এই ভাষাগুলোতে কথা বলেন, তারা তাদের মাতৃভাষায় ঈশ্বরের বাক্য পেয়ে খুবই উপকার লাভ করেন। তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও, এই কথাগুলো কত সত্য: “আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে”!—যিশাইয় ৪০:৮.

[পাদটীকাগুলো]

^ পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপে স্লাভ ভাষাগুলোতে কথা বলা হয় আর এই গোত্রের মধ্যে রুশ, ইউক্রেনিয়ান, সার্বিয়ান, পোলিশ, চেক, বুলগেরিয়ান ও এইরকম আরও অন্যান্য ভাষা রয়েছে।

^ এই প্রবন্ধে ব্যবহৃত “স্লাভনিক” শব্দটা স্লাভিক আঞ্চলিক ভাষাকে বোঝায়, যা সিরিল ও মেথোডিয়াস তাদের কাজে ও সাহিত্যকর্মে ব্যবহার করেছিলেন। আজকে কেউ কেউ “পুরনো স্লাভনিক” অথবা “গির্জার পুরনো স্লাভনিক” শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকেন। ভাষাবিদরা মনে করেন যে সা.কা. নবম শতাব্দীতে স্লাভভাষী লোকেরা শুধু একটা ভাষাতেই কথা বলত না।

[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

সিরিলিক নাকি গ্ল্যাগোলিটিক?

সিরিল যে বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিলেন তার গঠন নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই কারণ তা কোন্‌ বর্ণমালা ছিল সেই বিষয়ে ভাষাবিদরা নিশ্চিত নন। সিরিলিক বর্ণমালা মূলত গ্রিক বর্ণমালার ওপর ভিত্তি করেই ছিল। তবে এর সঙ্গে কম করে হলেও আরও বারটা অক্ষর যোগ করা হয়েছিল, যেগুলো স্লাভনিক উচ্চারণের প্রতীকরূপে ব্যবহার করা হতো আর গ্রিক ভাষার বর্ণমালায় এগুলো পাওয়া যায়নি। কিন্তু, প্রাচীনকালের কিছু স্লাভনিক পাণ্ডুলিপিতে একেবারে ভিন্ন একটা লিপি ব্যবহার করা হয়, যা গ্ল্যাগোলিটিক নামে পরিচিত আর অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করেন যে এটা সিরিল উদ্ভাবন করেছিলেন। গ্ল্যাগোলিটিকের কয়েকটা অক্ষর কারসিভ্‌ গ্রিক অথবা ইব্রীয় ভাষা থেকে এসেছে। আর কিছু কিছু অক্ষর মধ্যযুগের বিশেষ চিহ্নগুলো থেকে এসেছে, যে চিহ্নগুলো দিয়ে বিভিন্ন বর্ণের উচ্চারণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিন্তু, বেশির ভাগ অক্ষরই আদিম এবং জটিল। গ্ল্যাগোলিটিক একেবারেই আলাদা এবং আদিম। তবে সিরিলের উদ্ভাবিত বর্ণমালা থেকেই আজকের দিনে ২২টা ভাষা ছাড়াও রুশ, ইউক্রেনিয়ান, সার্বিয়ান, বুলগেরিয়ান ও মেসিডোনিয়ান ভাষার বর্ণমালা তৈরি হয়েছে।

[Artwork—Cyrillic and Glagolitic characters]

[৩১ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

বালটিক সাগর

(পোল্যান্ড)

বোহেমিয়া (চেকিয়া)

মোরাভিয়া (ই. চেকিয়া, প. স্লোভাকিয়া, প. হাঙ্গারি)

নিট্রা

পূর্ব ফ্রাংকিশ রাজ্য (জার্মানি ও অস্ট্রিয়া)

ইতালি

ভেনিস

রোম

ভূমধ্যসাগর

বুলগেরিয়া

গ্রিস

থিষলনীকী

(ক্রাইমিয়া)

কৃষ্ণ সাগর

বিথেনিয়া

কনস্টানটিনোপল (ইস্তানবুল)

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৫৮১ সাল থেকে সিরিলিক বর্ণমালা দিয়ে স্লাভ বাইবেল

[সৌজন্যে]

বাইবেল: Narodna in univerzitetna knjiz̆nica-Slovenija-Ljubljana