সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মানব দুর্বলতাকে জয় করা

মানব দুর্বলতাকে জয় করা

মানব দুর্বলতাকে জয় করা

“মাংসের ভাব মৃত্যু।”রোমীয় ৮:৬.

১. কেউ কেউ মানুষের শরীরকে কী বলে মনে করেন আর কোন্‌ প্রশ্নটা বিবেচনা করা দরকার?

 “আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৪) গীতরচক দায়ূদ যখন যিহোবার অনেক সৃষ্টির মধ্যে একটা সৃষ্টি অর্থাৎ মানুষের শরীর নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন তখন এই গান গেয়েছিলেন। কিন্তু, কিছু কিছু ধর্মের গুরুরা মানুষের শরীর নিয়ে এইরকম গভীরভাবে চিন্তা করে যিহোবার প্রশংসা করেন না, বরং তারা মানুষের শরীরকে পাপের ওত পাতার জায়গা ও হাতিয়ার বলে মনে করেন। মানুষের শরীরকে ‘অজ্ঞতার ছদ্মবেশ, বদভ্যাসের মূল ভিত্তি, ক্ষয়ের শৃঙ্খল, অন্ধকার খাঁচা, জীবন্ত লাশ’ বলা হয়ে থাকে। এটা ঠিক যে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমার মাংসে, উত্তম কিছুই বাস করে না।” (রোমীয় ৭:১৮) কিন্তু, তার মানে কি এই যে আমরা এক পাপী শরীরের মধ্যে অসহায়ের মতো আটকা পড়ে গেছি?

২. (ক) “মাংসের ভাব” মানে কী? (খ) মানুষ ঈশ্বরকে খুশি করতে চায় বলে ‘মাংস’ ও “আত্মার” মধ্যে কোন্‌ লড়াই চলতে থাকে?

বিদ্রোহী আদমের পাপী বংশধর হিসেবে মানুষের অসিদ্ধ অবস্থাকে বোঝানোর জন্য বাইবেলে কখনও কখনও ‘মাংস’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। (ইফিষীয় ২:৩; গীতসংহিতা ৫১:৫; রোমীয় ৫:১২) আদমের কাছ থেকে পাওয়া উত্তরাধিকার আমাদের ‘মাংসে দুর্ব্বলতা’ নিয়ে এসেছে। (রোমীয় ৬:১৯) আর পৌল সতর্ক করেছিলেন: “মাংসের ভাব মৃত্যু।” (রোমীয় ৮:৬) “মাংসের ভাব” বলতে অসিদ্ধ মাংসের আকাঙ্ক্ষাগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও চালিত হওয়া বোঝায়। (১ যোহন ২:১৬) তাই, ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করায় আমাদের আধ্যাত্মিকতা এবং পাপী স্বভাবের মধ্যে সবসময় লড়াই চলতে থাকে। এই পাপী স্বভাব “মাংসের কার্য্য সকল” করার জন্য সবসময় আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। (গালাতীয় ৫:১৭-২৩; ১ পিতর ২:১১) পৌল তার মধ্যে চলতে থাকা এই যন্ত্রণাদায়ক লড়াইয়ের কথা বলার পর বলেছিলেন: “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?” (রোমীয় ৭:২৪) পৌলকে কি নিরুপায়ভাবে প্রলোভনে পড়তে হয়েছিল? এর উত্তরে বাইবেল জোরের সঙ্গে না বলে!

প্রলোভন ও পাপের অস্তিত্ব

৩. পাপ ও প্রলোভনকে অনেকেই কীভাবে দেখে কিন্তু বাইবেল কীভাবে এইরকম মনোভাবের বিরুদ্ধে সাবধান করে?

পাপ বলে যে কিছু আছে তা আজকে অনেকেই মেনে নিতে চায় না। কেউ কেউ পাপকে হালকাভাবে নেয় ও বলে যে এটা প্রাচীনকালের একটা শব্দ, যা মানুষের দুর্বলতাগুলোকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। তারা স্বীকার করে না যে “আমাদের সকলকেই খ্রীষ্টের বিচারাসনের সম্মুখে প্রত্যক্ষ হইতে হইবে, যেন সৎকার্য্য হউক, কি অসৎকার্য্য হউক, প্রত্যেক জন আপনার কৃত কার্য্য অনুসারে দেহ দ্বারা উপার্জ্জিত ফল পায়।” (২ করিন্থীয় ৫:১০) কেউ কেউ হয়তো অতি সহজেই বলে থাকে: “আমি প্রলোভন ছাড়া অন্য সব কিছুকে প্রতিরোধ করতে পারি!” কেউ কেউ এমন এক সমাজব্যবস্থায় বাস করে যেখানে লোকেরা এখনই তাদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতে চায় তা সে খাবার, যৌনতা, আনন্দফূর্তি বা কোন কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রেই হোক। তারা শুধু সেগুলো চায়ই না, এখনই তা চায়! (লূক ১৫:১২) এখনকার আনন্দের পরেও যে ভবিষ্যতে এক ‘প্রকৃত জীবনের’ আনন্দ আছে তা তারা দেখে না। (১ তীমথিয় ৬:১৯) কিন্তু, বাইবেল আমাদেরকে গভীরভাবে চিন্তা করতে এবং দূরদর্শী হতে অর্থাৎ যা কিছু আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে বা অন্য কোনভাবে ক্ষতি করতে পারে, তা এড়িয়ে চলতে শেখায়। ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা একটা নীতিবাক্য বলে: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়; কিন্তু অবোধেরা অগ্রে যাইয়া দণ্ড পায়।”—হিতোপদেশ ২৭:১২.

৪. ১ করিন্থীয় ১০:১২, ১৩ পদে লেখা কোন্‌ পরামর্শ পৌল দিয়েছিলেন?

করিন্থ শহর অনৈতিকতার জন্য কুখ্যাত ছিল আর পৌল যখন সেই শহরে বসবাসকারী খ্রীষ্টানদের চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি প্রলোভন ও পাপের ক্ষমতার বিরুদ্ধে বাস্তবসম্মত উপায়ে সাবধান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়। মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা [“প্রলোভন,” NW] তোমাদের প্রতি ঘটে নাই; আর ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা [“প্রলোভন,” NW] ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার [“প্রলোভনের,” NW] সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” (১ করিন্থীয় ১০:১২, ১৩) যুবক, বৃদ্ধ, পুরুষ বা মহিলা আমরা সবাই স্কুলে, কাজের জায়গায় বা অন্য কোন জায়গায় বিভিন্ন প্রলোভনের মুখে পড়ি। তাই, আসুন আমরা পৌলের কথাগুলো পরীক্ষা করে দেখি যে, আমাদের জন্য এগুলো কী অর্থ রাখে।

নিজের ওপর খুব বেশি আস্থা রাখবেন না

৫. নিজের ওপর খুব বেশি আস্থা রাখা কেন ঝুঁকিপূর্ণ?

পৌল বলেন: “যে মনে করে আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।” নিজেদের নৈতিক মনোবলের ওপর খুব বেশি আস্থা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। এটা দেখায় যে পাপের প্রকৃতি ও ক্ষমতা সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। মোশি, দায়ূদ, শলোমন ও প্রেরিত পিতরের মতো লোকেরা যদি পাপ করে থাকেন, তাহলে আমাদের কি মনে করা উচিত যে আমরা পাপ করব না? (গণনাপুস্তক ২০:২-১৩; ২ শমূয়েল ১১:১-২৭; ১ রাজাবলি ১১:১-৬; মথি ২৬:৬৯-৭৫) হিতোপদেশ ১৪:১৬ পদ বলে: “জ্ঞানবান ভয় করিয়া মন্দ হইতে সরিয়া যায়; কিন্তু হীনবুদ্ধি অভিমানী ও দুঃসাহসী।” এছাড়াও, যীশু বলেছিলেন: “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।” (মথি ২৬:৪১) যেহেতু প্রতিটা অসিদ্ধ মানুষের মধ্যেই খারাপ বিষয়ের প্রতি আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তাই আমাদের পৌলের সাবধানবাণীর প্রতি ভালভাবে মন দেওয়া এবং প্রলোভনকে প্রতিরোধ করা দরকার নতুবা আমরা যে কোন সময় পড়ে যেতে পারি।—যিরমিয় ১৭:৯.

৬. প্রলোভনের জন্য কখন ও কীভাবে আমাদের তৈরি হওয়া উচিত?

অপ্রত্যাশিতভাবে আসতে পারে এমন সমস্যার জন্য আগে থেকে তৈরি থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। রাজা আসা বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শান্তির সময়ই উপযুক্ত সময়। (২ বংশাবলি ১৪:২, ৬, ৭) তিনি জানতেন যে আক্রমণের মুহূর্তে তৈরি হওয়ার জন্য সময় পাওয়া যাবে না। একইভাবে, যখন প্রলোভন আসবে তখন কী করতে হবে, তা আগেই নির্ঝঞ্ঝাট সময়ে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করা সবচেয়ে ভাল। (গীতসংহিতা ৬৩:৬) দানিয়েল এবং তার ঈশ্বর-ভয়শীল বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তারা যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন আর রাজার খাবারদাবার খাওয়ার জন্য তাদেরকে চাপ দেওয়ার আগেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এইজন্য তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এবং অশুচি খাবার খাননি। (দানিয়েল ১:৮) প্রলুব্ধ করে এমন অবস্থা আসার আগেই আসুন আমরা নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকার সংকল্পকে অটল করি। তবেই আমরা পাপকে প্রতিরোধ করতে পারব।

৭. অন্যেরা সফলভাবে প্রলোভনকে প্রতিরোধ করেছেন জানা কেন সান্ত্বনাদায়ক?

পৌলের কথাগুলো থেকে আমরা কতই না সান্ত্বনা পাই, যিনি বলেছিলেন: “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য প্রলোভন তোমাদের প্রতি ঘটে নাই”! (১ করিন্থীয় ১০:১৩) প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা বিশ্বাসে অটল থাকিয়া [দিয়াবলকে] প্রতিরোধ কর; তোমরা জান, জগতে অবস্থিত তোমাদের ভ্রাতৃবর্গেও সেই প্রকার নানা দুঃখভোগ সম্পন্ন হইতেছে।” (১ পিতর ৫:৯) হ্যাঁ, অন্যরাও একইরকম প্রলোভনে পড়েছেন এবং ঈশ্বরের সাহায্যে তা কাটিয়েও উঠেছেন আর আমরাও তা করতে পারি। যেহেতু আমরা নৈতিক দিক দিয়ে কলুষিত এক জগতে বাস করছি, তাই সত্য খ্রীষ্টান হিসেবে আমরা আশা করতে পারি যে, আজ হোক বা কাল হোক আমাদের প্রলোভনে পড়তে হবে। তাহলে, এখন প্রশ্ন আসে যে কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে মানব দুবর্লতা ও পাপের প্রলোভনকে আমরা জয় করতে পারব?

আমরা প্রলোভনকে প্রতিরোধ করতে পারি!

৮. প্রলোভনে পড়া এড়িয়ে চলার একটা প্রধান উপায় কী?

‘পাপের দাস না’ হওয়ার একটা প্রধান উপায় হল যখনই সম্ভব প্রলোভনে পড়া এড়িয়ে চলা। (রোমীয় ৬:৬) হিতোপদেশ ৪:১৪, ১৫ পদ আমাদের পরামর্শ দেয়: “দুর্জ্জনদের মার্গে প্রবেশ করিও না, দুর্বৃত্তদের পথে চলিও না, তাহা ছাড়, তাহার নিকট দিয়া যাইও না; তাহা হইতে বিমুখ হইয়া অগ্রসর হও।” আমরা সাধারণত আগে থেকেই জানি যে কোন্‌ পরিস্থিতিগুলো পাপের পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই, খ্রীষ্টান হিসেবে আমাদের “অগ্রসর” হতে হবে অর্থাৎ এমন কোন ব্যক্তি, বিষয়বস্তু ও জায়গা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে, যা কিনা আমাদের মধ্যে খারাপ ইচ্ছা জাগাতে পারে এবং কামনার আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে।

৯. প্রলোভনে ফেলতে পারে এমন পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে শাস্ত্রে কীভাবে জোর দেওয়া হয়েছে?

প্রলোভনে ফেলতে পারে এমন পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাওয়া হল প্রলোভনকে জয় করার আরেকটা প্রধান উপায়। পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা ব্যভিচার হইতে পলায়ন কর।” (১ করিন্থীয় ৬:১৮) তিনি আরও লিখেছিলেন: “প্রতিমাপূজা হইতে পলায়ন কর।” (১ করিন্থীয় ১০:১৪) এছাড়াও প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে ধনী হওয়ার আকুল আকাঙ্ক্ষা ও সেইসঙ্গে “যৌবনকালের অভিলাষ হইতে” পালাতে বলেছিলেন।—২ তীমথিয় ২:২২; ১ তীমথিয় ৬:৯-১১.

১০. প্রলোভন থেকে পালিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব সম্বন্ধে দুটো বিপরীত উদাহরণ কী দেখায়?

১০ ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের কথা চিন্তা করুন। রাজপ্রাসাদের ছাদ থেকে তিনি একজন সুন্দরী মহিলাকে স্নান করতে দেখে তার দিকে তাকিয়েছিলেন আর এর ফলে তার মনে খারাপ ইচ্ছা বাসা বেঁধেছিল। তার ছাদ থেকে চলে আসা এবং প্রলোভনের সামনে থেকে পালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। তা না করে তিনি ওই মহিলা অর্থাৎ বৎশেবার খোঁজখবর নিয়েছিলেন আর এর পরিণতি হয়েছিল খুবই খারাপ। (২ শমূয়েল ১১:১–১২:২৩) অন্যদিকে, যোষেফ কী করেছিলেন যখন তার মালিকের চরিত্রহীনা স্ত্রী তাকে তার সঙ্গে ব্যভিচার করতে বলেছিল? বিবরণ বলে: “সে দিন দিন যোষেফকে সেই কথা কহিলেও তিনি তাহার সহিত শয়ন করিতে কিম্বা সঙ্গে থাকিতে তাহার কথায় সম্মত হইতেন না।” তখনও মোশির ব্যবস্থা দেওয়া হয়নি কিন্তু তবুও যোষেফ তাকে বলেছিলেন: “আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?” একদিন সে যোষেফকে ধরে বলেছিল: “আমার সহিত শয়ন কর।” যোষেফ কি সেখানে থেকে তাকে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন? না। তিনি “বাহিরে পলাইয়া” গিয়েছিলেন। যৌনতার প্রলোভন তাকে দুর্বল করে দিক সেই সুযোগ যোষেফ দেননি। তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন!—আদিপুস্তক ৩৯:৭-১৬.

১১. বার বার আমরা যদি প্রলোভনে পড়ি, তাহলে হয়তো কী করা সম্ভব?

১১ পালিয়ে যাওয়াকে কখনও কখনও কাপুরুষের কাজ বলে মনে করা হয় কিন্তু প্রলোভনে ফেলতে পারে এমন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াই হল বুদ্ধিমানের কাজ। আমরা হয়তো আমাদের কাজের জায়গায় বার বার প্রলোভনে পড়ি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আমরা হয়তো ওই কাজ ছাড়তে পারি না। তবে প্রলোভনে ফেলতে পারে এমন পরিস্থিতি থেকে অন্য উপায়ে আমরা নিজেদের সরিয়ে নিতে পারি। যে কোন খারাপ বিষয় থেকে আমাদের পালিয়ে যাওয়া দরকার আর যা সঠিক শুধু তা-ই করার দৃঢ় সংকল্প আমাদের নেওয়া উচিত। (আমোষ ৫:১৫) কোন কোন জায়গায় প্রলোভন থেকে পালানোর মানে হবে ইন্টারনেটের অশ্লীল সাইটগুলো এবং চিত্তবিনোদনের আপত্তিকর জায়গায় যাওয়া এড়িয়ে চলা। শুধু তাই নয়, এর মানে হবে অশ্লীল পত্রপত্রিকা ফেলে দেওয়া বা নতুন বন্ধুদের খোঁজা, যারা ঈশ্বরকে ভালবাসেন ও আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন। (হিতোপদেশ ১৩:২০) যা কিছুই আমাদেরকে পাপ করতে প্রলুব্ধ করুক না কেন, আমরা যদি সেগুলো থেকে সরে আসি, তাহলেই আমরা বুদ্ধিমান।—রোমীয় ১২:৯.

প্রার্থনা যেভাবে সাহায্য করতে পারে

১২. আমরা যখন প্রার্থনা করি যে “আমাদিগকে প্রলোভনে আনিও না” তখন আমরা আসলে কী চাই?

১২ পৌল এই উৎসাহজনক আশ্বাস দেন: “ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত প্রলোভন ঘটিতে দিবেন না, বরং প্রলোভনের সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” (১ করিন্থীয় ১০:১৩) একটা উপায়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন আর তা হল, প্রলোভনকে মোকাবিলা করার সাহায্য চেয়ে আমরা যিহোবার কাছে যে প্রার্থনা করি তিনি তার উত্তর দেন। যীশু খ্রীষ্ট আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “আমাদিগকে পরীক্ষাতে [“প্রলোভনে,” NW] আনিও না, কিন্তু মন্দ হইতে রক্ষা কর।” (মথি ৬:১৩) অন্তর থেকে করা এইরকম প্রার্থনা শুনে যিহোবা কখনোই আমাদেরকে প্রলোভনের মধ্যে ছেড়ে দেবেন না; তিনি আমাদেরকে শয়তান ও তার চাতুরীগুলো থেকে রক্ষা করবেন। (ইফিষীয় ৬:১১, পাদটীকা, NW) প্রলোভনগুলো চেনার জন্য সাহায্য করতে এবং সেগুলোকে প্রতিরোধ করার মতো শক্তি চেয়ে ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। প্রলোভনে পড়ে আমরা যাতে পাপ না করে ফেলি তার জন্য আমরা যদি তাঁর কাছে মিনতি জানাই, তাহলে তিনি আমাদেরকে সাহায্য করবেন যাতে আমরা “মন্দ” অর্থাৎ শয়তানের হাতে ধরা না পড়ি।

১৩. যখন একটা প্রলোভন বার বার আমাদের সামনে আসতে থাকে তখন আমাদের কী করা উচিত?

১৩ একটা প্রলোভন যখন বার বার আমাদের সামনে আসতে থাকে তখন বিশেষ করে অন্তর থেকে আমাদের প্রার্থনা করা দরকার। কিছু প্রলোভনের জন্য হয়তো আমাদের মনের মধ্যে কঠিন লড়াই চলতে পারে। অর্থাৎ, আমাদের চিন্তাভাবনা ও মনোভাবের সঙ্গে আমাদের লড়াই চলতে থাকে, যা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে আমরা বাস্তবে কতটা দুর্বল। (গীতসংহিতা ৫১:৫) উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আমাদের আগের কিছু খারাপ অভ্যাসের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আমরা যদি মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করি, তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা যদি আবারও সেই অভ্যাসগুলোতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হই, তাহলেই বা কী? এইরকম চিন্তাগুলোকে চাপা না দিয়ে প্রার্থনায় যিহোবাকে তা জানান, দরকার হলে বার বার তা করুন। (গীতসংহিতা ৫৫:২২) তাঁর বাক্য ও পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমে তিনি অশুচি আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ আমাদের মনকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারেন।—গীতসংহিতা ১৯:৮, ৯.

১৪. প্রলোভন কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা করা কেন জরুরি?

১৪ গেৎশিমানী বাগানে যীশু তাঁর প্রেরিতদের ঘুম ঘুম ভাব দেখে তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় [“প্রলোভনে,” NW] না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।” (মথি ২৬:৪১) প্রলোভন কাটিয়ে ওঠার একটা উপায় হল কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে প্রলোভন আসতে পারে সেই সম্বন্ধে সজাগ থাকা এবং তা কতটা সূক্ষ্মভাবে আসে তা জানা। এছাড়াও প্রলোভন আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রার্থনা করা খুবই জরুরি, যাতে আমরা এর সঙ্গে লড়াই করার জন্য আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তৈরি থাকতে পারি। কারণ প্রলোভন সেসব দিক থেকেই আসে যে দিক দিয়ে আমরা দুর্বল আর তাই এটাকে আমরা একা প্রতিরোধ করতে পারি না। এর জন্য প্রার্থনা করা জরুরি কারণ ঈশ্বর যে শক্তি দেন, তা আমাদেরকে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) এছাড়াও আমাদের হয়তো ‘মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গের’ কাছ থেকে আধ্যাত্মিক সাহায্য এবং তাদের প্রার্থনার দরকার হবে।—যাকোব ৫:১৩-১৮.

প্রলোভনকে সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ করা

১৫. প্রলোভনকে প্রতিরোধ করার সঙ্গে কী জড়িত?

১৫ যখনই সম্ভব প্রলোভনকে এড়িয়ে চলা ছাড়াও আমাদের এটাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা সরে যায় বা পরিস্থিতি বদলে যায়। শয়তান যখন যীশুকে প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করেছিল তখন তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত শয়তানকে প্রতিরোধ করেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সে চলে গিয়েছিল। (মথি ৪:১-১১) শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।” (যাকোব ৪:৭) ঈশ্বরের বাক্য পড়ে মনকে শক্তিশালী করে এবং ঈশ্বরের মানদণ্ডগুলো মেনে চলার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা শুরু হয়। বাইবেলের যে পদগুলো আমাদের নির্দিষ্ট দুর্বলতা সম্বন্ধে তুলে ধরে সেগুলো মনে রেখে ও সেগুলো নিয়ে ধ্যান করে আমরা উপকার পাব। যখন প্রলোভন আসে তখন একজন অভিজ্ঞ খ্রীষ্টানকে, হয়তো একজন প্রাচীনকে মনের কথা খুলে বলা ও তার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।—হিতোপদেশ ২২:১৭.

১৬. কীভাবে আমরা নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকতে পারি?

১৬ শাস্ত্র আমাদেরকে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে পরামর্শ দেয়। (ইফিষীয় ৪:২৪) এর মানে হল যিহোবাকে সুযোগ দেওয়া, যাতে তিনি আমাদের গঠন করতে ও বদলাতে পারেন। পৌল তার সহকর্মী তীমথিয়কে লেখার সময় বলেছিলেন: “ধার্ম্মিকতা, ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর। বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর; অনন্ত জীবন ধরিয়া রাখ; তাহারই নিমিত্ত তুমি আহূত হইয়াছ।” (১ তীমথিয় ৬:১১, ১২) আমরা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে ভালভাবে জানার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করে এবং তাঁর চাহিদাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চলার মাধ্যমে ‘ধার্ম্মিকতা অনুধাবন’ করতে পারি। সুসমাচার প্রচার ও সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার মতো খ্রীষ্টীয় কাজগুলো করাও জরুরি। ঈশ্বরের আরও কাছে আসলে এবং তিনি যে আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো করেছেন তার থেকে পূর্ণ উপকার নিলে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আরও পরিপক্ব হব এবং নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকতে পারব।—যাকোব ৪:৮.

১৭. কীভাবে আমরা জানি যে প্রলোভনের সময় ঈশ্বর আমাদের ছেড়ে দেবেন না?

১৭ পৌল আমাদের আশ্বাস দেন যে, ঈশ্বর আমাদের যতটুকু শক্তি দিয়েছেন তার অতিরিক্ত প্রলোভন কখনোই আমাদের ওপর আসবে না। যিহোবা ‘রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন আমরা সহ্য করিতে পারি।’ (১ করিন্থীয় ১০:১৩) আসলে, আমরা যদি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে চলি, তাহলে তিনি আমাদের ওপর কোন প্রলোভনকে এমন চাপ সৃষ্টি করতে দেবেন না যার ফলে বিশ্বস্ততা রক্ষা করার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তির অভাব দেখা দেয়। তিনি চান যে তাঁর চোখে যা খারাপ, তা করার প্রলোভনকে আমরা যেন সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধ করতে পারি। এছাড়াও আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারি: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।”—ইব্রীয় ১৩:৫.

১৮. মানব দুর্বলতাকে জয় করার ব্যাপারে কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?

১৮ মানব দুর্বলতার বিরুদ্ধে পৌল যে লড়াই করেছিলেন তার পরিণতি সম্বন্ধে তিনি অনিশ্চিত ছিলেন না। তিনি নিজেকে তার মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর কাছে দুঃখী বা অসহায় বলে মনে করেননি। বরং তিনি বলেছিলেন: “আমি এরূপে দৌড়িতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না। বরং আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।” (১ করিন্থীয় ৯:২৬, ২৭) একইভাবে, আমরাও অসিদ্ধ মাংসের বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে পারব। বাইবেল, বাইবেলের প্রকাশনাদি, খ্রীষ্টীয় সভাগুলো এবং অভিজ্ঞ খ্রীষ্টান ভাইবোনদের মাধ্যমে আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা সবসময় তা মনে করিয়ে দেন, যা সৎ পথে চলার জন্য আমাদের সাহায্য করে। তাঁর সাহায্যে আমরা মানব দুর্বলতাকে জয় করতে পারি!

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• “মাংসের ভাব” মানে কী?

• আমরা কীভাবে প্রলোভনের জন্য তৈরি থাকতে পারি?

• প্রলোভন মোকাবিলা করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

• প্রলোভন মোকাবিলা করায় প্রার্থনার ভূমিকা কী?

• আমরা কীভাবে জানি যে মানব দুর্বলতাকে জয় করা সম্ভব?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বাইবেল শেখায় না যে আমরা আমাদের মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর কাছে অসহায়

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রলোভনের সামনে থেকে পালানো হল পাপ এড়ানোর একটা প্রধান উপায়